আর্কাইভগল্প

গল্প : তুই আবার আসিস : মঈন আহমেদ

চুমকি চিনতেই পারল না−লোকটা কে!

ডাঁশা মশাগুলো ভন ভন উৎসব করে তার উন্মুক্ত শরীরের যত্রতত্র কামড়াতে লাগল। পুরুষের হুলে কুঁকড়ে যাওয়া শরীরে মশার কামড় একসময় চুমকিকে আরও অসহ্য করে তোলে। নিজের যন্ত্রণাদগ্ধ শরীরকে পুনরায় পরনের কাপড়ে মুড়ে তেল চিটচিটে বালিশে মুখ লুকিয়ে ঘটনার আকস্মিকতার মর্ম উদ্ধার করার চেষ্টা করতে করতে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

সূর্য ডুবে গেলে অন্ধকার নামার আগ মুহূর্ত থেকে প্রতিদিন চারপাশটা কেমন গুমোট হয়ে যায়। চুমকির নীলাকাশ ক্রমান্বয়ে ধূসর হয়। প্রকৃতি মুখ ভার করে রাখে কোনও অবলা নারীর মতো বুকে অনেক না-বলা কথা নিয়ে। বাতাস বহে না। শালবনে পাতা নড়ে না। পচা পাতার ঘ্রাণে নাক ঝালাপালা করে।

চুমকির বাবা ট্রাক চালকের হেলপার ছিল। মালবোঝাই ট্রাক উল্টে মালের তলায় পড়ে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যেতে বেশি সময় নেয়নি। ময়নাতদন্তের পরে লাশ হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে পাশাপাশি লাগোয়া ছ খানা ঘরের নিকানো উঠানে আনা হয়েছিল। মুখটা এমনভাবে থেঁতলে গিয়েছিল যে চুমকির মা মানতেই পারছিল না―এটা তার দু সন্তানের বাপের নিথর দেহ। ফিরোজাকে যখন কাফন খুলে বাম বুকের পাঁজরের হাড়ে ফুটে থাকা কুচকুচে কালো আঁচিল দেখানো হলো তখন সে গগনচেরা বজ্রের মতো চিৎকার দিয়ে কেঁদে মাতম করেছিল।

উঠান তো নয়―এক চিলতে নিকানো-কুচানো লাল মাটি। বর্ষার বৃষ্টিতে থকথকে কাদায় পা পিছলায় আর চাঁদি-ফাটা রোদে ঠোকর খেয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলের চালটি ওঠে―লাল মাটির এমনই গুণ। সেই মাটির বুকে পা ছিতরে আলুথালু বসে আহাজারি করে। বিরামহীন কান্নার রোল, উঠানের দশ হাত নিচে খাড়ে বয়ে যাওয়া খালের-অবয়ব-নেওয়া শীতলক্ষ্যার সচল জলের উপর দিয়ে লুটোপুটি খেতে খেতে সাপের শিসের মতো সুর তুলে ঈশান কোণে চলে যায়। তার কান্নার উচ্চকণ্ঠের কাছে পাশে-বসা বুড়ি-মা আর নিকট প্রতিবেশীদের ক্রন্দনধ্বনি লবণবিহীন হয়ে পড়ে।

এই তো সেদিনের কথা। চুমকির দশ আর ছোটভাই রমিজ তখন মায়ের টইটম্বুর বুকে বাছুরের মতো গুঁতা মারতে শিখেছে―দুই পেরিয়েছে তার। নিকানো দাওয়ায় দপদপিয়ে হেঁটে বেড়ায়। তার জগৎটা তখনও এক চিলতে ভূমিতেই বিস্তৃত ছিল। তার বাবা সোলেমানকে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে মায়ের বুকে মুখ লুকাত। এক মুহূর্ত, তার পর লাফ দিয়ে চলে যেত মায়ের বুক ছেড়ে বাপের বুকে। তার এই আহ্লাদ সৃষ্টিকর্তার বোধহয় পছন্দ হয়নি। তাই তো এক খাবলা দিয়ে সোলেমানকে মাটিতে আছড়ে ঊর্ধ্বাকাশে ছুড়ে দিলেন―যাও বাছাধন, সৌরজগতে কোনও তারা বা নক্ষত্রের ঘাড় কামড়ে ঘুরে বেড়াও, ট্রাকের পিঠে চেপে প্রকৃতির বুকে অনেক দাপিয়েছো!

বাপে মরা মেয়ে চুমকি বুঝল না কী হারালো সে জীবনে―তখন বোঝার বয়স হয়নি, বুঝেছিল চার বছর পরে। তখন তো তার মনের তারল্য ঘন হয়নি, উদাসীন মস্তিষ্কও বোঝে না ভালোমন্দ কিছু। পেটে যখন ক্ষুধার জ্বালা চাড়া দেয় তখন রমিজের মতো চিৎকার করে কেঁদে উঠতে মন চায়। কারণ, রমিজ কেঁদে উঠলে তার মা, তার সবচেয়ে আপন মানুষ, ভরসার মানুষ মুখে ঠুসে দেয় মধুভাণ্ড―মাই। চোঁ চোঁ শব্দে তুলে টানতে থাকে মায়ের বুকের রস। তারপর টইটম্বুর ভরা-পেট নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যায় পরির দেশে, চোখ-ভরা স্বপ্ন নিয়ে! কত মায়ার সেই বুকের পরশ। কিন্তু, চুমকিকে শুষ্ক মুখে সহ্য করতে হয় জঠরের উপদ্রব।

মা ছিল যখন, তখন মায়ের কাছেও কেউ কেউ আসত রাতবিরেতে। কী জন্যে!

মা খাওয়া জুটাত―এভাবেই মা খাওয়া জুটাত। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নেতানো একশ টাকার ময়লা নোট দেখে বুঝেছিল চুমকি―তার প্রথম গতর খাটানোর উপার্জন!

সোলেমান মারা যাওয়ার পরে দুই-তিন দিন এ-বাড়ি ও-বাড়ি থেকে ডাল-ভর্তা-ভাত এসেছিল, ব্যস। তারপর আর আসেনি, কার এত আছে যে তাদের মুখে আহার জোগাবে। ট্রাকের মালিক মহানুভবতার অবতার। লাশের সঙ্গে একজনের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। সৎকারের জন্য। সেখান থেকে সাতশ টাকা হাতে পেয়েছিল চুমকির মা। একটা ব্লাউজ আর একটা পেটিকোট বানিয়েছিল একশ বিশ টাকা দিয়ে। পাঁচ কেজি চাল একশ টাকায় আর তেল-নুন আর কটা পান-পাতা কিনতে ষাট টাকা―এই তো একশ আশি টাকা ফুরিয়ে গেল। বাকি চারশ টাকার একশ টাকা হাতে রেখে তিনশ টাকা দিয়ে চারটা হাঁসের ছানা কিনেছিল এক হাটুরেকে দিয়ে, হাটের দিনে।

পাঁচ কেজি চাল প্রতিদিন এক মুঠ করে ফুটিয়ে সরিষার তেল আর লবণ দিয়ে মাখিয়ে খেয়ে থেকেছে এক মাস। মাঝে মাঝে কলমি, থানকুনি কুড়িয়ে এনে ভাজি করে নিয়েছে। আশেপাশে কোনও ডোবা নেই যে দুটা ডানকানা মাছ শাড়ির আঁচলে ছেঁকে তোলে। অথচ তিন পাশে শুধু পানি আর পানি। সে পানিতে যার-তার নামার অধিকার নাই।

সন্ধ্যা হলে রুপালি-খড়ির উপর সোনালি-বিচালি বিছানো ঝাঁপ ফেলে ঘুমিয়ে পড়ে। মা, মেয়ে আর নিজের পেট নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তা হয়। কোলের শিশুকে নিয়ে ভাবনা নাই চুমকির মা ফিরোজার। দুই বুকের উপান্তে যে প্রাণরস এখনও জমা হয় সেটা পান করে ঢেকুর তুলে ঘুমিয়ে পড়ে শিশুটি। ভাগ্যিস স্বামীটা বিয়ে করে এনে তক্তাপোষে শুইয়েছিল, সেই তক্তপোষে দু আঙুল পুরু তোষকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে এ-পাশ ও-পাশ করে ঘুমে-জাগরণে রাত কাবার হয়ে যায়।

 ফিরোজা কাঁথা সেলাই করতে পারে বেশ। শীত পড়ার সময় এ-বাড়ি ও-বাড়ি থেকে কাঁথা সেলাইয়ের কাজও পায়। একটা কাঁথা সেলাই করলে চল্লিশ টাকা পাওয়া যায়। মাসে চার পাঁচটা সেলাই করতে পারে তাতে চাল কেনার সংকুলান হয়।

বিধবা হওয়ার পর স্বামীর লাশ উঠানে থাকতেই তার বুড়ো-মা ছুটে এসেছিল মেয়ের কষ্টের ভাগীদার হতে, আর ফিরে যায়নি। বুড়ির জন্য ছেলে যা মেয়েও তাই। তফাৎ একটু আছে―ছেলের ঘরে বউয়ের মুখ ঝামটার পরেও একমুঠো ভাত পাওয়া যায়, এখানে সেটার নিশ্চয়তা নাই। মেয়েও বিষয়টা বোঝে―একটা বাড়তি পেট চালানোর জ্বালা কতটুকু―তবু মা তো! পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় মাকে কিছু বলতে পারে না, তবে নিরলসভাবে ভাবতে হয় তাকে অনাগত জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য।

কাঁথা সেলাই করে মাসে একশ-দুশো টাকা আয়ে কি তিনটা জীবন চলে! ভিক্ষা নয়। কারও বাড়ির উঠান নিকিয়ে কারও বাড়ির একতাল মাছ কুটে দশটা-বিশটা টাকা, এক থালা ভাত পাওয়া যায়―তাও নিয়মিত না, ঘুম থেকে উঠে সকালে ভাগ্যটা প্রসন্ন থাকলে, কখনও-সখনো। এভাবে কি দিন গুজরান হয় ? হয় না, করতে হয়।

হাঁস চারটা ডেগি হয়েছে। ডিম পাড়ে। একটু বেলা করে খোঁয়াড় খুললে একটা-দুটা ডিম পাওয়া যায়। এটার আয়ে পান চিবানো যায় বেশ। পানের রসে পেট ভরে না তবে চিন্তার লাঘব হয়। হাঁসেদের খাওয়া দেওয়া লাগে না। ছাড়া পেলেই তারা তরতরিয়ে খাড়া বেয়ে থইথই জলে গিয়ে নামে। দশ বছর আগেও যেখানে ধানের খেতে সবুজ রং মেতে থাকত, বাতাসে দোলা দিত ধানের থোড়, সেখানে এখন পানি আর পানি। ফসলি জমিগুলোর উর্বর মাটি উপড়ে গভীর করে জল আটকে চাষ হয় মাছের―তেলাপিয়া, পাঙাসের।

মাঠ নাই, গরু নাই―গোবরও নাই। ঘুঁটে হয় না, শুকনো ডালও পাওয়া যায় না―ঝরা শালপাতার আগুনে হয় রান্নাবান্না। কিইবা আর রান্না, হয়ে যায় তাতে।

ভিটিপাড়ার দক্ষিণ প্রান্তে গৃহস্থ কাড়ি খাঁর টেকের পশ্চিম ধারের ছ খানা ঘরের একখানা ঘর ছিল চুমকির বাপের। বাপ মরার পর তার মা সেখান থেকে পাত্তাড়ি গুটিয়ে সিঁদুরে-মাটির টেকের উপরে উঠে এসেছে ভাঙা চালা উঠিয়ে―সঙ্গত কারণে। কাড়ি খাঁ আপত্তি করেননি। কাড়ি খাঁ শালবনের গাছ তো বিক্রি করতে পারেন না, কারণ, শালবন সরকারের। কিন্তু, ভাওয়াল রাজার গোমস্তার দেওয়া আট আনার পত্তনি দলিল উত্তরাধিকারসূত্রে তার কাছে আছে। এটাতেই তার অধিকার স্বীকার করে নিয়েছে গ্রামবাসী। সরকার মানে নাই, তবে জমি কেড়ে নিতেও আসে না বন বিভাগ। বনের গাছ বিক্রি না হোক খুঁটি কিনতে হয় না তার পরিবারের, আবার অধিকারও তো ফলানো যায়।

টেকের উত্তরে বয়ে চলে ক্ষীণ শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যার কাছে ব্রহ্মপুত্র নিজের নামের দাবি ছেড়ে দিয়েছে পাঁচ-সাত কিলোমিটার উজানে, আরও উত্তরপুবে। নদীটা দু কিলোমিটার পুবে বুক চিতিয়ে এখনও থল-থল করে। এখানে এসে তার কটি ক্ষীণ হয়ে গেছে। জলে মাছ নাই তবে কলকল ঢেউ থাকে নিরবধি। নদীটা আরও উত্তর পশ্চিমে গিয়ে যমুনাকে বিস্তীর্ণ করেছে।

টেকের উপর থেকে নদী দেখা যায়। নদীর ওপারের তট ঘেঁষে সবুজের সমারোহ। বেশ মনোরম, চোখ জুড়ায়! তবে ঝড়ের দিনে বাতাস ধেয়ে আসে দৈত্যরূপে। তাণ্ডব চালায় দেদারসে। তছনছ করে শালবন।

নদীতে ইঞ্জিনবোটের চুঁইয়ে পড়া তেলের বিকট গন্ধে মাছ এখানে ঝাঁক বাঁধে না। পালতোলা নৌকারও আনাগোনা অবিরাম। কারণ পুব-দক্ষিণে আর দু কিলো জল ঠেললেই এককালের রমরমা প্রসিদ্ধ বরমী বন্দরে এখনও বেচাকেনা চলে প্রতাপ নিয়ে।

চুমকির মা পেটের দায়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টেকে উঠেছিল। বাসররাতের চৌকিটাও বিক্রি করে পেট পেলেছে কটা দিন। টেকের শালবনের পুব আর দক্ষিণজুড়ে মানুষের তৈরি বিল। পানি থাকে বারো মাস। শীত-গ্র্রীষ্মে হাঁটুজল আর বর্ষায় ডুবজল। সচল থাকে বিল সংবৎসর। সারা বর্ষায় পাঙাস নিয়ে বড় হইচই হয়। ট্রাকে করে ব্যাপারিরা জ্যান্ত মাছ নিয়ে যায় দূর দেশের বাজারে। বিলের পাঙাস শেষ হলে সপ্তায় সপ্তায় পানির উপরের স্তরের বিগহেড-সিলভারকার্প ধরা হয়। এরপর মধ্যম স্তরের বাংলা-মাছ যেমন ডান্ডি, গৈন্না, বাটা, কারফ্যুও ধরা হয়। তারপর পানি একদম কমে গেলে কাদাজলে তেলাপিয়া পাকড়াও চলে। পুকুরে জাল ফেললে বোকা-ভেদা আকারের তেলাপিয়ারা আত্মরক্ষার্থে মাথা মাটিতে গুঁজে দেয়। খাওয়া-পাগল বেকুব কোনও তেলাপিয়া ছাড়া সহজে তারা ধরা দেয় না জালে। মৃগেলগুলোও কৌশল জানে। জালের আভাস পেলে সটান মাটিতে বুক ঠেকিয়ে নিশ্চল শুয়ে থাকে, জাল চলে যায় তাদের পিঠ ঘেঁষে।

পুবের খাঁড়ি বেয়ে শালবনের ভিতর কোনও কোনও রাতে ঝুপড়ির ভিতর একজন এসে এক ঘণ্টা-দু ঘণ্টা কাটিয়ে যায়। ব্যবস্থা করতে পেরেছে ফিরোজা―একা একাই। ফিরোজার গায়ের রং তামাটে। রোদে পুড়ে হয়েছে আরও গাঢ়। কিন্তু গতরের বাঁধন দেখে লালা ঝরে পুরুষদের―সে সেটা বুঝতে পারে।

পুকুরপাড়ের কলমি তুলতে গিয়ে লালা-ঝরা পুরুষদের একজনকে খপ্পরে নিতে পেরেছে সে। কাছে টানতে পেরেছে। নিয়ে এসেছে একেবারে দাওয়ায়। তারপর ঝুপড়ির ভিতর―কোনও কোনও রাতে, কখনও দিনে। যেদিন পুরুষটা আসে তারপরের দিন পেট পুরে খায়―নিজে, মেয়ে ও বুড়িমা।

মাথা গোঁজার ঠাঁই তো আছে। কিন্তু, ভয়ও আছে―কোনও পুরুষ-সংস্পর্শের কাহিনি সমাজে রটলে লাঠিপেটা খেয়ে উচ্ছিষ্ট হতে হবে, তখন ঠাঁই পাওয়াই হবে দায়।

চলছিল কোনওরকম চুমকিদের। ভাই রমিজ টুপি মাথায় মক্তবে যায়। কোরান হেফজ করবে। মায়ের দুঃখ কতটুকু ঘুচবে জানে না, তবে তার মা নিশ্চিত বেহেস্তি-দরজা পাবে―ইব্রাহিম হুজুর বুঝিয়েছেন তাকে। চুমকির পড়া হলো না―ছড়া পড়তে শিখেছে; দুই আর দুইয়ে চার হয়―জানে।

বাপ মরার চার বছরের মাথায় একদিন মা-ও ইহলীলা সাঙ্গ করে চলে গেল পরপারে। ডাক্তার সাহেব ঘোর আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু মায়ের উপায় ছিল না। সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে আধমরা মা ডাক্তারের পা ধরে পেট ফেলতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জীবনের মায়া ত্যাগ করল। কেউ এল না তার কাফন-দাফন করতে। কোনওরকম শালবনের এক কোনায় তাকে মাটি চাপা দেওয়া হলো।

ভাইকে বড় হুজুর মাদ্রাসায় আশ্রয় দিলেন―খাওয়া দিলেন, ঘুমানোর জায়গা দিলেন, হেফজ করার সুযোগ দিলেন কিন্তু পরার জন্য কাপড় দিতে পারলেন না।

চুমকি কই যায় এখন! বাড়ন্ত শরীরের মেয়েকে কেউ উঠান ঝাড়ু দিতেও ডাকে না। এমনি, তারা ভরা শীতের দুর্নিরীক্ষ্য এক মাঝরাতে কারও আলিঙ্গনে ঘুম কেটে যায়। তার কিশোর-বুক টিপে-চুষে নিঃশেষ করে দিচ্ছে কেউ। কে সে ? বুঝে ওঠার আগে কাপড়ের আবরণ শরীর থেকে খসে যায়। কী করবে সে ? চিৎকার দিতে গিয়েছিল। কিন্তু চিৎকার দিতে গিয়ে কঁকিয়ে ওঠে সে।

সেই যন্ত্রণার মাঝেও পুরুষটাকে চেনার চেষ্টা করল। তাকে যে চিনতে হবে! চুমকি পুরুষের ঘামের গন্ধ নিতে গিয়ে শরীর থেকে ভেজা মাটির সোঁদা ঘ্রাণ পেল।

না, না, না। কে আপনি ?

কোনও শব্দ নেই। শুধু লেহন আর মর্দন।

লোকটার দু হাত সমস্ত শরীরে বিচরণ করতে লাগল।

পারল না চুমকি। একসময় নেতিয়ে গেল অন্ধকারের গুহায়।

তারপর পুরুষটা চলে গেল নির্বিকার। বলে গেল না কিছুই!

নানি তো পাশেই ছিল। কোথায় গেল ?

ঘুমে চোখ কষা হয়ে আসে। নিজেকে ভীষণ নির্বোধ মনে হয়। একটা পুরুষ তাকে রমণ করে চলে গেল সে চিনতেই পারল না লোকটা কে ? পরিচয় জেনে নিতে পারলে তাকে নিজেই কোনও একদিন আহ্বান করতে পারত। সে কি আসবে আবার! হয়তো আসবে, হয়তো আসবে না আর।

ভোরে একশ টাকার ময়লা নোট মুঠোয় নিয়ে চুমকি ভাবল―এলেই ভালো!

নিজের শরীরটা পুরুষকে সঁপে দিয়েছিল ভোগ করার জন্য। তেমন জোরাজুরি করতে হয়নি পুরুষটার। তাই চুমকির মন বলছে, সে আসবে। সে আবারও আসবে!

অপেক্ষার পালা শুরু হলো!

লোকটা এল―তিন রাত পরের নিঝুম রাতে।

চুমকি তার কাছে নিবেদন করল নিজের শরীর। সামর্থ্যবান পুরুষটা চুমকির নরম শরীর দলিত মথিত করতে লাগল। চুমকির লালাসিক্ত পুরু ঠোঁট শুষে নিল নির্বিকার।

নে নে আরও নে, সব শুষে নে।

চুমকি নিজেকে মেলে দিয়ে শরীরের ভেতরে হুলের যন্ত্রণা  আস্বাদন করতে লাগল―বড্ড কষ্ট!

কতক্ষণ ? অনেকক্ষণ স্খলিত শরীরকে রমণ করল পুরুষটি। প্রবল আক্রোশে কোমল দেহে উপযর্ুুপরি হুল ফুটানোর পরে একসময় পুরুষটা শিথিল হয়ে নেতিয়ে পড়ে চুমকির উন্মুক্ত উত্তল উত্তম বুকের উপর।

দুই দেহ পৃথক হলে পুরুষটা অন্ধকারে চুপিসারে নিজের তহবন হাতিয়ে শরীরটা তাতে গলিয়ে ঝাপ সরিয়ে চলে গেল। চুমকি উত্তানশয়ানে ফুলে-ওঠা নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করতে করতে আপনমনে মিনমিন করতে থাকে―তুই আবার আসিস!

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button