আর্কাইভসম্পাদকীয়

সম্পাদকীয় : ঈদ-উৎসবে ছুটির সঙ্গী হোক ঈদসংখ্যা

একাদশ বর্ষ   চতুর্থ-পঞ্চম সংখ্যা   এপ্রিল-মে ২০২৪

নবতর প্রযুক্তির কারণে কি পাঠক-রুচির পরিবর্তন হয়ে গেছে ? নাকি প্রযুক্তির স্রোতে ভেসে আসা সস্তা,  অরুচিকর কিংবা রুচিশীল নানা মজাদার বিষয়-আশয় পাঠকের মনোযোগ ও সময় দখল করে নিচ্ছে ? পাঠ-রুচির পরিবর্তন নাকি সময়ের স্বল্পতার কারণে মূলধারার সাহিত্য পাঠে সময় কম পাচ্ছেন মগ্ন পাঠকগণও ? পাঠক-সংখ্যা কমে যাওয়া কিংবা বাড়ার পেছনে কী বেশি দায়ী ? এ ধরনের প্রশ্ন নিয়ে সাহিত্যিকমহলে তুমুল আলোচনা হয় আজকাল।

বইমেলার বই বিক্রির ট্রেন্ডও বেশ বদলে গেছে। যাদের ফেসবুকে পেজ-ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি এবং সেখানে যারা বছরজুড়ে সক্রিয়, নিজেদের সৃষ্ট সাহিত্যের কিছু কিছু অংশ প্রকাশ করে পাঠকমন আকৃষ্ট করছেন, করতে পারছেন কিংবা নতুন পাঠক সৃষ্টি করছেন, তাদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। নবপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী এ ধরনের নবীন পাঠককে আমরা একদম উড়িয়ে দিতে পারি না। এসব লেখককেও না। দেখা গেছে বছরব্যাপী ফেসবুকে সক্রিয় লেখকদের ঘিরে তরুণ পাঠকের জোয়ার আসে বইমেলায়। এই প্রবণতাও ইতিবাচক। পাঠক সৃষ্টি হচ্ছে তো! সুতরাং প্রযুক্তি বই পড়ার সময় কেড়ে নিলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ক্ষুরধার বইপোকা, বুকওয়ার্ম, বইপড়ুয়াও তৈরি করছে। পাঠক হিসেবে তাদের অবস্থান যে-স্তরেই থাকুক না কেন, পড়তে পড়তে পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। মনস্তাত্ত্বিকভাবেও প্রেষণার মধ্যে পরিবর্তন ঘটে যায় নিজেদের অজান্তেই। এমন একজন টিনএজ কিংবা তরুণ পাঠক ধীরে ধীরে মূলধারার সাহিত্য কিংবা বিশ্বসাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে, এভাবে সাহিত্যকে তাঁরা আপন করে নেওয়ার প্রণোদনা পেয়ে যায়। তখন অন্যান্য লেখকের ভালো বইয়ের খোঁজখবরও করে। তারপর নিজের জেগে ওঠার ভেতর দিয়ে বড় বড় লেখকের বই পাঠেও মগ্ন হতে পারে, হচ্ছেও।

সাহিত্য পাঠের নতুন মেরুকরণের এ সময়  ঈদসংখ্যাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটে ?

বহু ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি বছর। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো খ্যাতিমান লেখকদের তালিকা দেখে অনেকে ঈদসংখ্যা সংগ্রহ করেন। আবার ইতোমধ্যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ঈদসংখ্যাটি সংগ্রহের জন্যও অনেকে আগাম বুকিং করে ফেলেন। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, শব্দঘর ঈদসংখ্যা সংগ্রহ এবং পাঠের আগ্রহ আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিকরাও শব্দঘর-পরিবারের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। পাঠে মনোযোগ বাড়ানোর উপযোগী বিষয় ও রচনা, ফন্ট, লাইন-স্পেস, ছাপা, প্রচ্ছদ-অঙ্গসজ্জা সব মিলিয়ে শব্দঘর ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান অনন্য করতে পেরেছে বলে বিশ্বাস। বাংলাদেশ ও ভারতে তো বটেই, বিশ্বজুড়ে বাঙালি গুণীজনেরাও একই ধরনের কথা বলে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের।

প্রিয় পাঠক, এবার নিশ্চয়ই আমাদের আয়োজনের লেখকসূচি দেখে চমকে উঠবেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের পাশাপাশি কলকাতা এবং বিশ্বের নানা দেশের কীর্তিমান লেখকেরাও রয়েছেন সূচিতে।

চারটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস, একটি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস, একটি উপন্যাসিকাসহ দুটি ভ্রমণসাহিত্য, ২৩টি গল্প, ৩৫টি কবিতা প্রকাশিত হলো। অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য বিশ্বসাহিত্যের জমজমাট অনুবাদ বিভাগে থাকছে ৯টি গল্পের অনুবাদ এবং ২০২০ সালে নোবেলজয়ী কবি লুইস গ্লুকয়ের সাক্ষাৎকার ও তাঁর একগুচ্ছ কবিতার বাংলা অনুবাদ। থাকছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখক, কথাসাহিত্যিক দীপেন ভট্টাচার্যের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার।

ঈদ-উৎসবের ছুটিতে শব্দঘর-এর মতো যে কোনও প্রিয় ঈদসংখ্যা হোক আপনার পরম বন্ধু। সঙ্গী।

এবারও ঈদসংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ এবং অলঙ্করণ করেছেন বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমামসহ দেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীগণ। কাগজের উচ্চমূল্যের কারণে ঈদসংখ্যার মূল্যও বেড়ে গেল। আশা করি অনিচ্ছাকৃত এই মূল্যবৃদ্ধি পাঠক সহনশীল দৃষ্টিতে গ্রহণ করবেন। রয়েল সাইজের ৫৬ ফর্মার এই সংখ্যাটির মূল্য ৩০০ টাকা।

এবার শব্দঘর ঈদসংখ্যা আয়োজনে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। যাঁরা বিজ্ঞাপন সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভালোবাসা জানাচ্ছি।

লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং সকল শুভানুধ্যায়ীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button