আর্কাইভগল্প

গল্প : কিচ্ছা-পরস্তাবেরা যেইকালে নিরুদ্দেশে গিয়েছিল : আকিমুন রহমান

এক. ব্যাঙ্গমা পক্ষী

সে এক তেপান্তর ছিল। নিত্য নিরন্তর ধু ধু হু হু হাওয়া বয়ে যেতে থাকা সেই তেপান্তরের যতদূরে তাকানো যায়, সবটা তল্লাট ফাঁকা, হা হা। কোনওদিকেই একটা কোনও ঝোপ-ঝাপড়া পর্যন্ত নজরে আসে না। অথচ তেপান্তরের ঠিক মধ্যিখানে ঘটে আছে এক অন্য ব্যাপার। সেখানে খাড়া হয়ে আছে একলা এক বৃক্ষ। নিরালা এক মহানিম বৃক্ষ। কখন, কোন আদিকালে যে সে মাটি ফুঁড়ে মাথা উঁচিয়েছে, সেই খোঁজ কেউ জানে না। তারপর সেই মহাদূরের কাল থেকে এই এখন পর্যন্ত সে, সেখানেই আছে। আছে লয়-ক্ষয়হীন। আছে তাগড়া জ্যাতা-তাজা, ঋজু আর জোয়ান। চিরকাল ধরে ওই একই রকম। কোনও জরা-ধুকুন্তী, আধি-ব্যাধির যাতনা তাকে ছোঁয়ার সাহস করে উঠতে পারে নাই কোনওদিন। তেপান্তরের সমস্তটা চরাচরে একা সেই মহানিম গাছ। আছে, আছেই।

আর কী আশ্চর্য! তার যে ডালপালা―তারা যে উঁচিয়ে গেছে কোন উঁচুতে কোন ওপরে―তার হদিশ করার সাধ্য কারও নাই। চৈত্র মাসে মাসে সেই সব ডালে ফুল ফোটে। ক্ষুদে ক্ষুদে নীল নীল ফুল। সবুজে-নীলে, হাওয়ায়―সুগন্ধে তখন পুরা তেপান্তরের সবখানি ঝমঝম করতে থাকে। ঝমঝম ঝমঝম সুবাস, বেজে বেজে যেতে থাকে।

আজকে তিন বচ্ছর হয়, বছরের চৈত্রমাসের এক দুপুরের বেলায় দেখা যায়, দিগন্তের অগ্নিকোণ থেকে উড়ে আসছে এক ব্যাঙ্গমা পক্ষী। আসছে সেই মহানিম বৃক্ষের দিকে। চৈতমাইস্যা দুপুরের তুক্ষার রোদেরে নিজ অঙ্গে মাখাতে মাখাতে, উড়ে উড়ে উড়ে আসতে থাকে সে। পক্ষী কিনা ওই বিরিক্ষির দিকেই আসতে থাকে, কিন্তু তার চোখ পড়ে থাকে ঈশান কোণের দিকে। কিছু কি দেখা যায় সেই দিকে! একটা কোনও কালো ছোপ, একটা কোনও উড়ন্ত-ভাসন্ত-নড়ত্ব―কোনও একটা কিছু, যেন একটা পক্ব-বাত্তি একটা কইচ্চা পাতার মতন কিছু! উড়তে দেখা যায় সেইটা ? নজরে কি পড়ে ?

নাহ! কিচ্ছু চক্ষে পড়ে না। তার অক্ষির সম্মুক্ষে, যেমনকার শূন্য ঈশান কোণ তেমন শূন্যই পড়ে থাকে। আর খাঁখাঁ করতে থাকে। সেই খাঁখাঁ-কে দেখতে দেখতে উড়ন্ত পক্ষীর মন আর ডানা হায় হায় মাতম শুরু করে। আর যেন সেই উড়ন্ত দশাতেই, দমকে দমকে, ব্যাঙ্গমার শরীরটা শুকায়ে চৌচির হয়ে উঠতে থাকে। আহ! তাও সে চলা থামায় না।

 চলা বন্ধ করার উপায় কি ব্যাঙ্গমা পক্ষীর আছে! তাকে যে নিজের শরীরখানারে মহানিম বিরিক্ষির নিকটে নিয়ে যেতে হবে। হবেই। তারপর সেই শরীরটারে, সেই বিরিক্ষির যে-কোনও একটা ঠাইল্লার ওপরে, ফেলে দিতে হবে। অমন নিরুপায় হালে নিজেকে যাতনার মধ্যে ফেলে দেওয়ার নামই তো অপেক্ষা। সেই অপেক্ষাই শুরু করবে সে।

 মহানিমের ডালে, সূর্যাস্তের লগন পর্যন্ত, নিজেকে, থিতু রাখতে হবে তাকে। আর, অপেক্ষা করতে হবে। ঈশান কোণের দিকে চক্ষুকে ঝেটকে ফেলে দিয়ে, অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা করতে করতে, তার অন্তর যদি, নিরাশায় নিরাশায় থুবড়া-মুবড়া হতে হতে তেবড়ে-দুমড়ে গুলটি পাকায়ে যেতে থাকে, তো যাবে। যাবে।

আজকা তিন বচ্ছর হয়, ব্যাঙ্গমা পক্ষী এমত হায় হায়কে নিজের ভেতরে বইতে বইতে, মহানিম গাছের কোনও একটা ডালে এসে আসন নেয়। আজকা তিন বচ্ছর, এইই করে চলছে সে। ফি বচ্ছর এই চৈত্রমাসের শেষ বিষ্যুদবারের কঠিন দুপুরের কালে, তারে এই বিরিক্ষির কাছে এসে পৌঁছাতেই হয়। তারপর গাছের কোনও একটা ডালে নিজেকে বসিয়ে নিয়ে, চোখ মেলে রাখতে হয় ঈশান কোণের দিকে। তিন বছর আগে একদিন, তার যে সখী ব্যাঙ্গমি পক্ষিণী, সে ওই ঈশান কোণ বরাবর উড়ে গেছে। কোন নিরুদ্দেশের দিকে সে উড়ে গেছে, সেই কথা সঠিকভাবে ব্যাঙ্গমা পক্ষী জানে না। শুধু জানে, ওই কোণ ধরে ব্যাঙ্গমি গেছে এক বস্তুর সন্ধানে। যেমন সে নিজে গেছে অগ্নিকোণ ধরে। সেও গেছে সেই একই বস্তুর খোঁজে।

এই সেই মহানিম বিরিক্ষি। এইখান থেকেই তারা দুইজনা দুই দিকে যাত্রা করেছিল, সেই তিন বচ্ছর আগে। যাত্রা করার আগে তারা এইমতে কড়ার―ওয়াদা করেছিল যে, সেই বস্তুর সন্ধান তারা পাক বা না পাক, কিন্তু সামনের বচ্ছরের চৈত্রমাসের শেষ বিষ্যুদবারের দিনে তারা এইখানে এসে মিলিত হবে। হবেই।

তারপর বচ্ছরের হিসাবে বচ্ছর যায়, ব্যাঙ্গমা পক্ষী যথাসময়ে এসে এই তেপান্তরের মহানিম বৃক্ষে আসন নিলে কী, সখী ব্যাঙ্গমির কোনও খোঁজ নাই। আসে না সে। আসে নাই। সে কি তার শপথেরে বিস্মরণ পেয়েছে ? নাকি যেই বস্তুর তল্লাশে সে গেছে, সেই বস্তুরে খুঁজতে খুঁজতে ব্যাঙ্গমি নিজেই নিখোঁজ! সেই ভেদের খবর ব্যাঙ্গমা পক্ষীরে কে এনে দেবে! এক হতে পারে ব্যাঙ্গমা পক্ষী স্বয়ং ছুট দিতে পারে ঈশান কোণের দিকে। কিন্তু তাতে যে কিরা-কসম ভঙ্গের দায়ে পড়তে হয় তারে! ওই দিকে তার তো উড়াল দেওয়ার কথা নাই। তাহলে কেমনে সে ওটা করে! 

কাজেই, বচ্ছরকার এই যে সাব্যস্ত-করা দিন; এই দিনে, শপথমতো সে এসে এই তেপান্তরের মহানিম গাছটাতে বসে। আর, ভাঙা অন্তর নিয়ে ঝুঁরতে থাকে ব্যাঙ্গমা পক্ষী। আশায় আশায় নিরাশায় নিরাশায় ঝুঁরে ঝুঁরে বেলা পার করে। ঈশান কোণ থেকে যার আসার কথা ছিল, সে আসে না। আসে না। ক্রমে দুপুর যায়, বৈকালেরেও কে জানি টেনে নিয়ে গিয়ে সেঁটে দেয় আন্ধারের ঘুটঘুট্টুা পেটরার ভিতরে! হায়! আর তো বসন্তী দিয়া থাকোনোর রাস্তা নাই!

তখন নিজ ভাঙা অন্তরখানারে ঠেলতে ঠেলতে আবার অগ্নিকোণের দিকে আগানোর চেষ্টা ধরে ব্যাঙ্গমা। চারদিকে কেমন যে থুপথুপা আন্ধার! আর কী ভীষণ থমথমা চুপচাপ যে সমস্তটা তেপান্তর! সেই সুমুর-সামুর নৈঃশব্দ্যে তখন শুধু একটা আওয়াজই উঠতে থাকে, ব্যাঙ্গমা পক্ষীর দুঃখী ডানার আওয়াজ! আওয়াজ উঠতে থাকে―থপর থপ থপর থপ থপর থপ। সে আওয়াজে এমনই ব্যথাজড়ানো থাকে; এমনই নিরুপায় অক্ষম ক্রোধ জড়ানো থাকে যে, আওয়াজের ধাক্কায় তেপান্তরের অন্তরসুদ্ধ কাঁপতে থাকে। আহা রে!

যেই বস্তুর সন্ধানে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি এমত হরদিশা হয়ে বচ্ছর-ভর পন্থে পন্থে ফেরে, সেই বস্তু কী বস্তু ?

কী সেই বস্তু ?

না! সে বড় এক তেলেসমাতির জিনিস! তারে হাত ধরা যায় না, অথচ সে আলিঙ্গন দিয়ে থাকে। তারে চক্ষে দেখা যায় না, অথচ সে অক্ষির গোচরে আনে―কত না বিষয়! আনে কত হাসি, কত না কান্দন। সেই বস্তু  নাগালে থাকে না, অথচ ওদিকে কিনা সে, নাগালের মধ্যেই চিরবিরাজ করে। এমনই তেলেসমাতিঅলা সেই বস্তু। সে ধরা দেয় না কদাপি, কিন্তু যেন ধরা সে দিয়েই আছে সর্বসময়।

এমনই আচরিত, জাদু-ঝমঝমা সেই বস্তু।

সেই যে বস্তু, কী তার নাম ? নাকি তার নাম নাই ?

আছে, আছে তার নাম।

তার নাম পরস্তাব-কথা। তারে তুমি কথা-পরণ কথা নামেও চিনে থাকতে পারো!

সেই পরস্তাব-কথার সন্ধানে ব্যাঙ্গমা পক্ষী আর তার সই ব্যাঙ্গমি আজ দুই ভিন্ন মুল্লুকে। পরস্তাব কথার সুলুক-সন্ধান করতে গিয়াই কিনা তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের এমত বিচ্ছেদ-দূরত্ব! এমত নিখোঁজ থাকার দিন!

এখন, কথা উঠতেই পারে যে, পরস্তাবেরে আবার খুঁজুন্তীর কী আছে! পরস্তাবে কোথায় বসত করে, সেই কথা কি লোকগণের অবিদিত আছে ?

না। অবিদিত নাই।

সর্বলোকেরই জানা আছে, পরস্তাবে থাকে ব্যাঙ্গমা পক্ষীকুলের মাথায়। থাকে লোকসকলের অন্তরে অন্তরে। আর থাকে সর্বমুখের বাক্যিতে বাক্যিতে! এমন হয়েই সে আছে চিরজীবন। এমন হয়ে সে চিরকালই থাকবে! তার আবার নিখোঁজ হওয়া কী ? কিচ্ছা-পরস্তাবে নিখোঁজ হইলো কবে ?

দুই. নিখোঁজ বিত্তান্ত

এ-কথা সত্য যে, মানুষের সংসারে ক্রমে ক্রমে অযুত নিযুত যুগ পার হয়ে গেছে, মনিষ্যিসকলে ক্রমে বুড়া থুত্থুরা হয়েছে ঠিক, কিন্তু তাদের মুখে মুখে লড়তে-চড়তে থাকা কিচ্ছাকথা-পরস্তাবের দেহে জরা-বালাই লাগার কোনও চিহ্ন কোনওদিন দেখা যায় নাই। তারা গোড়াতে যেমন জ্যাতা-জোয়ান ছিল, বরাবর অবিকল তেমনটা থেকেই তাদের জিয়ৎকাল পার করে চলছিল। 

 মনুষ্যলোকে অতিদূরের পরদাদির গুষ্ঠির পরে, ক্রমে দাদির গুষ্ঠি গত হয়ে গেছে। তার বাদে মাতা-পিতার গুষ্ঠিও নাই হয়ে গেছে। ক্রমে সংসারে-দুনিয়ায় এসেছে নয়া নয়া লোক। তারাও আবার বুড়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিচ্ছা-পরস্তাবদের অঙ্গে কোনও বিকার-বিনষ্টি আসে নাই! তারা কিছুমাত্র বুড়া-ত্থুত্থুরা, জরা-গুঁড়গুঁড়া হয় নাই। পুরানা আমলের মানুষের মুখে তারা যেমন তাগড়া-মোগড়া আয়ুধারী ছিল, নয়া জমানার লোকের মুখে মুখেও পরণ কথাকাহিনী-পরস্তাবদের তেমনই জুয়ানকি থইথই দশা নিয়েই বিরাজ করতে দেখা যাচ্ছিল।

 বহু বহুকাল ধরে এমনটাই চলছিল বলে জগৎ-সংসারের সকলে ধরে নিয়েছিল যে, এই পরস্তাব-পরণকথারা যুগ-জনম-চিরকাল ধরে অমন ঠ্যাঁটা দিয়ে পড়ে-থাকা জ্যাতা-জুয়ানই থাকবে। এরা তো আর শরীর কাহিল-করার কোনও কর্মে থাকে না। আদতে তো তাদের দিয়ে কোনও সত্যকারের বাস্তবকর্ম করানো হয় নাই কোনওদিন। এরা সংসারের কোন কাজে লাগে ? কোনও কাজেই লাগে না। তবে অসময়ের-আপদের দিনের কথা আলাদা। সেই সব দিনে নিজেদের মন ফুরফুরা করানোর কোনও ঠেকা পড়লে, কিম্বা অন্তরটারে শান্তি-মুন্তি কিম্বা আশা-আহ্লাদে ভরে নেওয়ার কোনও অতি দরকার আসলে; লোকেরা এইসব পরস্তাব-পরণকথার সন্নিকট হয়। খুবই হয়। নিজেরে অন্তর-পোড়ানির ব্যামো থেকে নিস্তার-রেহাই দেওয়ার মাইনকা চিপায় পড়লে, কী পরানেরে শান্তিহালে খুশি দেওয়ার অতি দরকারে পড়লেই না এর কাছে আসে লোকে ? এইটুক ছাড়া আর তো কোনও কাজে লাগে না এরা! সেই কারণেই কিন্তু এই পরস্তাব সকলের কোনও লয়-ক্ষয় নাই। সেই কারণেই অমন বিলয়-অক্ষয়-জোয়ান রূপ নিয়ে এগুলায় বিরাজ করতে পারছে!  লোকে এমত বিশ^াসই নিজেদের অন্তরে ভরে নিয়েছিল।

তা থাকুক! এদের দিয়ে উদর-সামলান্তির কর্ম সম্পন্ন না-করা গেলে না-করা যাক, তবে অন্য একটা বিষম ঠেকার কালে কিন্তু, এগুলার কাছে এসে বসা গেলে উপকার পাওয়া যায়।

কেমন সেই উপকার ?

এই যেমন, গৃহস্থঘরের পোলাপানদের ঘুম-পাড়ান্তি বড় কোনও সোজা-মোজা কর্ম না। সেইটা বহুত এক ভেজালের কর্ম। গৃহস্থবাড়ির পোলাপানগুলার কী হয়, সকল সময়ে তারা কেবল চাউনি দিয়ে থাকতে চায়। সেইটা দিনের দুপুর হোক কী রাতের নিশুথি কালই হোক, তারা চায় কেবল চেয়ে থাকতে। দুনিয়াদারিতে কত কত জিনিসের চলাচলতি আছে। কত ব্যাঙের লাফ, ফড়িঙের ওড়া-বসা আছে। কত পটিপটি বিচির কালো-তুকথুকা হয়ে যাওয়া আছে। সেইগুলাও নিজ হাতের তালুতে নিজ মুখের থুতুতে ভিজায়ে রেখে রেখে, ফট-ফট্টাস করে করে ফুটাতে থাকার খেলা-খেইলও তো আছে। এত সব রেখে, ঘুম দেউন্তি যায় নিকি ?

এমত সব চিন্তায় তারা সর্বক্ষণই তাকে বলে, নিজের নিজের চোখর বন্ধ করার কথাটা তাদের মাথায় আসে না। তারা সবগুলিয়ে চায় কেবল জাগনা থাকতে। সর্বক্ষণ জাগনা থাকতে। এদিকে ঘরের বড়দের তো তেমন জাগনা থাকার ঠেকা নাই। তাদের চক্ষে নিদের কোনও সীমাসংখ্যা নাই। তারা কেবল নিদ-ঢুলুঢুলু হয়ে কোনওমতে ঝিমাতে থাকে।

 কিন্তু ঘরের গুঁড়াগাঁড়াগুলারে জাগনা রেখে তারা যে নিদ পাড়ে, সেই সাহস তো ঘরের বড়দের কোন ওজনের নাই! তাদের নিদ-যাউন্তির সময়টাতে, এই পোলাপাইনে না আবার কোন ঝামেলা বান্ধাইয়া ফালায়! কোন বিপদ না ঘটায়! এই ডরে না তাদের শরীর কম্প খেতে থাকে সর্বদা!

এই আজাবের কি কোনও নিদান নাই ?

কে বলে নাই নিদান নাই! আছে তো! সেইটার নিদানই হচ্ছে এই কিচ্ছাকথা-পরস্তাব-দাওয়াই! এই দাওয়াই নিয়ে, সন্ধ্যার কালে খালি একবার পোলাপানগুলার শিয়রের কাছে বসবা তুমি, দেখবা জাদু কারে বলে! ঘরের কোণের পিদিম খালি একটু অল্প মিটিরমিটির করেও সারবে না, কিচ্ছা নিদানগুণে পোলাপানগুলা কোন এক নিদ্রার দুনিয়ায় যে চলে যাবে! কেউই সেইটার হদিস দিতে পারবে না।

কাজেই, আছে কিচ্ছা-পরস্তাব-পরলকথা, থাকুক। তারা তাদের নিজের রকমে থাকুক লোকের মুখে মুখে! সমস্যা কী।

তো দিন যেতে যেতে অনেক দিন। ক্রমে মনুষ্যগণ স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয় যে, এইসব এই যে কিচ্ছা-পরস্তাব-পরণকথা; এইগুলা যেমন আছে, ঠিক তেমনই বিরাজ করবে দুনিয়ায়। বরাবর বিরাজ করবে। কোনও ক্ষয়-লয় পাবে না। হারান্তি যাবে না। ফুরাবে না। অকাজেরই তো জিনিস। কাজেই এরা যেমনে খুশি তেমনে পড়ে থাক। এদের থাকা-না-থাকা নিয়ে ভাবনা-ভোবনা করার কিছুই নাই। লোকেরা আবার অন্য আরেকটা বিষয়ও মনের ভেতওে গেঁথে নেয়।

কী সেই বিষয় ?

না! তারা ধরে নেয় যে, ওই যে কিচ্ছাসকল! এই সকলের একমাত্র মালিক-দখলদার ও স্বত্ববান হচ্ছে কেবল তারা নিজেরা। আর কেউ না। জগতে এর আর কোনও ভাগীদার নাই। কিন্তু সেইটা ছিল তাদের মস্ত এক ভুল বিশ^াস। বিধাতা কিন্তু পরস্তাব-কিচ্ছার একচ্ছত্র দখলদারী মনুষ্যসকলকেই দিয়ে রাখে নাই। অতি আদিতে বিধাতা করে কী, কিচ্ছার আধাখানা দেয় মনুষ্যের আদি পুরুষকে। দিয়ে বলে, ‘এরে কিন্তু অসমাদর কইরো না। করলে, দুনিয়া তাপোড়া তাপোড়া হবে। তোমারও দুর্গতির শেষ থাকবে না।’ কিচ্ছার বাকি আধখানা বিধাতা দেয় অন্য আরেক জাতিরে। তারা হলো পক্ষীকুলের শিরোমণি-পক্ষী ব্যাঙ্গমা জাতি। দেওয়ার সময়ে বিধাতা তাদের বলে, ‘মনুষ্যর যেই তিড়িংবিড়িং খাসলত, তারা এই অতি দামি সম্পদের মান রক্ষা করে চলবে, তেমন কিন্তু হবে না। কিন্তু তোমরা পারবা। সেই কারণে কথা-কিচ্ছা-পরস্তাবেরে রক্ষা দেওয়ার দায় তোমারে দিলাম। জগৎ তেনে কিচ্ছা-কথারে উধাও হইতে দিয়ো না। আমার বিশ^াসের মান রাইক্ষ পক্ষী।’

এই যে এই গৃহ্য কথাখানা, এটা কিন্তু আদিপুরুষে স্পষ্ট করেই জানত। কিন্তু এমনই বেভুলা তার চিত্ত যে, মউতের সঙ্গে মোকাবিলা করার আগে সে এই কথাখানা তার বংশের কাউরেই জানান্তি দিয়ে যেতে পারে নাই। সেই কারণে মনুষ্যরা মনে করত যে, এইসব অকাইম্মা কিচ্ছা-মিচ্ছাগুলা তাদের একারই জিনিস। তারা একাই এর ভাগীদার।

এমনটা মনে করে করেই দিন পার করতে থাকে তারা। দিন পার করতে থাকে। তার মধ্যে হঠাৎই একদিন, গৃহস্থসংসারের একজনে দেখে যে, কেমনে জানি আচমকাই একটা অশৈলীবৃত্তান্ত ঘটে আছে। বড় সর্বনাশা একখানা ব্যাপার ঘটে আছে দুনিয়ায়।

যে ওই সর্বনাশের বিষয়খানা টের পায়, সে হলো বাড়ির বুড়া মুরুব্বিজন। সংসারে সে বিশেষ কোনও খাটা-খাটুনি দিতে পারে না বলে, সংসার তাকে কদর করার ফুরসত পায় না। সমস্তটা দিন ওই বুড়াবেটি থাকে সংসারের মনোযোগের বাইরে। থাকে সমাদরহীন, কেউ না হয়ে। সমস্ত দিন কেউ তার ডাক শুনতে পায় না, কেউ তাকে তখন ডাকেও না।

তবে সন্ধ্যার পরপর দেখা যায় ভিন্ন ব্যাপার। সেই সময়ে বাড়িতে তাকে খুব দরকার পড়ে। ঘুমাতে না-চাওয়া পোলাপানদের তখন সামলান্তি দেওয়ার সাধ্যি থাকে না অন্য বড়দের। তারা বেয়াদ্দব পোলাপানগুলারে তালের পাঙ্খার ডাঁটা দিয়ে পিটান্তি দিতে থাকে। আর ভাবতে থাকে যে, এইমতেই তারা ওইগুলারে পুরা সয়সুস্থির বানায়ে ফেলবে। কিন্তু ওই ঔষধে কোনও ফলই ফলে না। বরং বেহিসাব অট্টরোল, কড়া চিক্কুর আর হাউরাউ কান্দনে পুরা বাড়িখানা তপ্ত তাওয়া হয়ে গবগবাতে থাকে। এমত পেরেশানি থেকে সংসারকে কে নিস্তার দেওয়ার হেটাম রাখে ? সেই হেটাম রাখে শুধু ওই বুড়াবেটি।

 বুড়াবেটি তখন ওই সাইনজা কাবাকাবাকে থামানোর জন্য আগায়ে আসে। রোজই সে নিজ কম্প-দেওয়া পাও দুইটাকে কোনওমতে লাঠির ভর দিয়ে দিয়ে আগায়ে আনে। এনে, নিজেকে ফেলে দেয় সে বিছানের এক কিনারে। তার বাদে ধীরমতে সে নিজের জবানখানাকে খোলে। আর তখন চক্ষের পলকে সবকয়টা ঠ্যাঁটা-মেঠা, নিদয়া পোলাপাইন কিনা হয়ে যেতে থাকে পুষ্কনির পানির মতন শীতল, নিরিবিলি, সয়সুস্থির।

এমনে এমনে চলতে থাকে অনেক অনেক দিন। চলতে চলতে এক সন্ধ্যার কালে বুড়াবেটি টের পায়, কেমন একটা গোলমালের ঘটনা যেন ঘটে আছে! রোজকার মতন সেই সন্ধ্যায়ও সে কিচ্ছা-বলুন্তির জন্য নিজের জবান খুলেছে ঠিকই; কিন্তু তার মুখ দেখো একটা কোনও কিচ্ছা-কথাকেই বাজায়ে তুলতে পারছে না! তার মন দেখো একটা কোনও কিচ্ছাকেই স্মরণে আনতে পারছে না। সে নিজের কাহিলের কাহিল দিল ও পরান দিয়ে, কিচ্ছাদের স্মরণে আনার চেষ্টা চালাতে থাকে। চালাতে থাকে। কিন্তু দেখে যে, সকলই সে বিস্মরণ পেয়েছে।

এইটা কী হলো! বেদিশা বুড়াবেটি রোজ রোজ কিচ্ছাশোনা গুঁড়াগাড়াদের কিচ্ছা মনে করার ফরমাশ দেয়। তারা জানায় যে, তাদেও কিচ্ছু মনে আসছে না। বুড়াবেটি তখন ঘরের কিচ্ছাজানা জোয়ানদের শরণাপন্ন হয়। সেই জোয়ানেরা বুড়াবেটির অপারগতাকে ঠেস-ধাক্কা-রগড় দিয়ে দিয়ে হাস্য-পরিহাসে ছলকাতে থাকে। ছলকাতে ছলকাতে নিজেদের স্মরণশক্তির তেজ জাহির করতে বসে তারা!

অ হো! এইটা কী আপদের ব্যাপার রে! জোয়ান কিচ্ছাওয়ালাদেরও দেখি একটা কোনও কিচ্ছা-পরস্তাবের একটা কোনও কথাও মুখে আসছে না! পেটে আছে কিন্তু মুখে আসে না―বিষয়টা তো তেমনও না। কিচ্ছা-পরস্তাবের নামনিশানাও দেখো তাদের মনের ভিতরে কী মাথার মধ্যে দেখা যায় না। সব যেন শূন্য, ধু ধু ফক্কা! এইটা কেমন ব্যাপার! এই ভেদেও মীমাংসা তারা তক্ষণ তক্ষণ করতে পারে না। তবে সকলের অন্তরটাই যেন কেমন একটু কু ডাক ডাকতে থাকে। মুখে তারা কেউই কিছু বলে না, কিন্তু তাদের মন চুপেচুপে কেমন যেন খচর-পচর খচর-পচর করতে থাকে। ঘরের সকল কয়জনেই একলগে পরস্তাবের কথাসকল বিস্মরণ পায় কীভাবে! এইটা কী ব্যাপার! ক্রমে রাত ঘন হয়ে আসতে থাকে। আস্তেসুস্তে ক্রমে লোকের চক্ষে নিদ্রার বাতাস এসে লাগতে থাকে। তারা মনের খচরমচর মনে নিয়েই নিজের অজানিতেই নিদ ঢলে যায়।

তার পরদিন থেকে দেখা যায় সমস্ত মুল্লুকে এক আজব ব্যাপার ঘটা শুরু হয়েছে। দেখা যায়, গাছে গাছে নিজ নিজ বাসায় সকল কাউয়াপক্ষী ডিম দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই ডিম ফেটে আর সন্ধ্যারাত্রির মতো মুলাম কৃষ্ণবরণের কোনও কাউয়ার ছাও মাথা জাগনা দিচ্ছে না। ডিমগুলা বাসায় বাসায় পড়ে থেকে থেকে, তারপর গুঁড়াগুঁড়া ঝুরঝুরা হয়ে হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। পৌষ-মাঘ মাস যেতে থাকে যেতে থাকে, একটা কোনও কোকিলাও কোনওদিকে গলা উঁচায় না।

পুকুরের ঘাটলার কিনারে কিনারে হেলেঞ্চার ঝাড় ভাসতে থাকে ঠিক, কিন্তু সেই ঝাড়ে আর একটা কোনও নয়া পুখরি জাগনা দেয় না। শুধু বাত্তি পাতারা দিনে দিনে হলদা মরা মরা হয়ে পড়ে থাকে। যেই বৌ-ঝিয়েরা হান্দেশ আর পাঁকন পিঠায় নকশা তোলার জন্য দশগ্রামের মধ্যে অতি গরিমার আসনখানা পেয়ে চলছিল, তারা দেখে চালের গোলা যতো তরিজুত করেই তারা গুছিয়ে নিক না কেন, তাদের আঙুল আর কোনও নকশা ফলাতে পারছে না। যত প্রকারে চেষ্টাই করে যাক তারা, কোনও নকশাই কোনও গোলায় ফুটে ওঠে না। চালের গোলা পড়ে থাকে ভেজা একটা পিণ্ডমাত্র হয়ে।

নগরে নগরে তখন দেখো গা কী এক হায় হায় মাতম শুরু হয়ে গেছে। রাজার জন্য যে গায়েন নিত্য নয়া নয়া পদ গড়ে দেয়, সে দেখে তার পালকের লেখনিখানার আগায় আর কোনও অক্ষর জাগনা দিচ্ছে না। দেয়ই না জাগনা। শুধু আগাখানা শুষ্ক জ্যৈষ্ঠমাসের মতো খরখর চোখে চেয়ে থাকে! যে মালিনী নিত্য ভোরে রাজকন্যার জন্য বিনাসুতায় পঞ্চপুষ্পের মালিকা গেঁথে আনে, সে দেখে, সকল কানন পুষ্পহীন। শাখায় শাখায় মরা পাতা শুধু কুঁকড়ে ঝুলে আছে।

যেই চারণ পথে পথে গীত ছড়ায়ে ছড়ায়ে শস্যক্ষেত্রের অন্তরে খুশি জাগায়ে চলতো, সে এখনও নিত্য আলপথ ধরে হাঁটে। কিন্তু তার কণ্ঠে আর কোনও গীত উথলে আসে না। তার লাউয়া কোনও বোল তোলে না। পাথর-স্তব্ধ হয়ে লাউয়া চারণের তবদা-খাওয়া হাতে পড়ে থাকে শুধু। গাঙের ঢেউয়ে কোনও ঝনাৎকার বাজে না। বুলবুলির গলায় শিস ওঠে না। হাওয়া ও পাতার ডাকাডাকি জাগে না আর। জাগে না।

এমনে এমনে যেতে থাকে দিন মাস বছর। প্রথম প্রথম লোকে খুব বেচইন বোধ করতে থাকে। অমন দমবন্ধ হয়ে থাকার দশাটা থেকে বেরুবার পথের সন্ধান করতে থাকে। কিন্তু কোথাও কোনও নিদান দেখে না তারা। মুক্তির পথ পায় না। তখন আর কী করে, মুখ বুজে বুজে সেই নিষ্ফলা দশাটাকেই সহ্য করে নেবার চেষ্টা চালাতে থাকে তারা। শেষে সয়ে যায় সবকিছু। ক্রমে কিনা লোকে অমন শ^াস আটকে যেতে থাকা জীবনেই নিজেদের খাপ খাওয়ায়ে নেয়। বাঁকাচোরা তেভঙ্গ এক রকমের ধুকধুকন্ত জীবন চলতে থাকে। ফুরাতে থাকে। শেষ হতে থাকে। আবার শুরু হতে থাকে।

তিন. সুলুক-সন্ধান কে জানে ? কে জানে!

এমত সর্বনাশেরও যে নিদান আছে, সেই কথা দুনিয়া তাবৎ জীবকুল ক্রমে বিশ^াস করতে ভুলে যায়। শুধু একজনের অন্তরের গহনে লুকানো থাকে একখানা টিমটিমা পিদিম। আশা ও বিশ^াসের পিদিম। সে-ই শুধু বিশ^াস করে, কথা-কিচ্ছা-পরস্তাবে হারান্তি গেছে সত্য; কিন্তু জান-পরান দিয়ে তার তল্লাশ চালালে, ঠিকই তার সন্ধান পাওয়া সম্ভব।

কে তার অন্তরে জিইয়ে রাখে অমন এক অসম্ভব আশা ?

যে রাখে, সে ব্যাঙ্গমা পক্ষীকুলের একমাত্র মুরুব্বিজন। পিতামহী ব্যাঙ্গমি। সমস্তটা জীবন সে নানামতে নানাজনেরে নিখোঁজ কিচ্ছাদের সুলুক-সন্ধানে পাঠানোর জন্য চেষ্টার কোনও শেষ রাখে নাই। কিন্তু তার কথাকে গ্রাহ্য করে, তেমন একজনও খাঁটি দিলের কাউরে সে খুঁজে পায় নাই। সকলেই তার অনুনয়-বিনয়রে আধামাধা কানে তুলেছে, তারপর সেটারে অতি বুড়া একজনের আজাইরা ফাঁপাকথা বলে উড়ায়ে দিয়ে নিজ নিজ কর্মে চলে গেছে। মনস্তাপে দগ্ধ হওয়া ছাড়া অতিবৃদ্ধ পিতামহীর আর কোনও সম্বল থাকে নাই। সে নিজেই যদি বেরিয়ে পড়তে পারত! আহা! সেই ভাগ্য তো বিধি তারে দেয় নাই। কোনও এক শ্রাবণ মাইস্যা তুফানের দিনে সে যখন পড়িমরি করে নিজ বৃক্ষকোটরের দিকে ফিরছিল, তখন আচমকা কঠিন একখানা ঠাটা এসে বাড়ি দেয় তারে। তারপর সে জানে বাঁচলেও চলচ্ছশক্তিটুকু একেবারেই খোয়ায়। হয়ে যায় চির তবদা খাওয়া! হয়ে যায় চির অচল একজন। হয়ে যায় এক বিফল জিন্দিগির ব্যাঙ্গমি পক্ষী।

নিখোঁজ কিচ্ছাদের সন্ধানে যাওয়ার জন্য পিতামহী ব্যাঙ্গমি জনে জনে মিনতি করে করে বিফল হতে থাকে। বিফল হতে হতে সে আশা খোয়াতে থাকে। আশা খোয়াতে খোয়াতে একদিন তার নজরে আসে যে, অই তো আছে তার একজন! আছে তো একজন। সে তো তার সকল কথারে মান্য করে। সকল কথারে গ্রাহ্য করে। সকল হুকুমই তো কায়মনোবাক্য দিয়ে পালুন্তির চেষ্টাটা করেই!

কে সে ?

সে হলো পিতামহী ব্যাঙ্গমা পক্ষীর নাতির নাতি, রক্তের এক আপনাজন। আর কেউ না যাক, তার বংশধর, এই যে নয়া জোয়ান, সে যে কিচ্ছার সুলুক সন্ধানে যাবেই যাবে, সেই বিশ^াস পিতামহীর আছে। তার অন্তর সেইটা বিশ^াস করে। তবে এই নয়া জোয়ান পক্ষীরে তো আচমকা ওই ভেদের কথাখানা বলে দিলেই হবে না। তাকে দিনে দিনে আদরে-মায়ায়, দরদে-মমতায় আগে নিজ অক্ষির মণি করে তুলতে হবে। তার বাদে শোনাতে হবে সেই দুক্ষের কথা। পিতামহী ব্যাঙ্গমি পক্ষী দিন গুনতে থাকে। আশায়-ভরসায় দিন পার করতে থাকে। আর, নাতির-নাতি এই নয়া জোয়ানেরে এই দিনদুনিয়ার হালচাল শেখাতে থাকে।

‘কী সু-খাসলতঅলা হইছে এই নয়া জুয়ানে!’ পিতামহী নিজ বংশধরের স্বভাবের সুগুণকে প্রত্যক্ষ করতে থাকে, আর সুখের কান্নায় উথলে উঠতে থাকে। ‘যা কিছু এরে শিক্ষা দিতে যাও, সকলই সেয় শিক্ষা করতাছে পটিপটি পরিপাটি মতে। আর বুড়া দাদির লেইগা এর দিলে কতো না মায়া! আহা! বিধি কী সোনার সন্তান দিছে, ব্যাঙ্গমা পক্ষীকুলেরে। বিধি অরে য্যান রাজ-রাজা বানায়!’ এইমতে নয়া জোয়ানেরে নানা কিছু শিক্ষা দিতে দিতে, সুখ আর আহ্লাদের কান্নায় ভরে উঠতে উঠতে, একদিন পিতামহী লক্ষ করে যে, তার আবাসের দরোজার মুখে কেমন একটা জানি শ্যামছায়া দণ্ডায়মান! বোবা এক ছায়া, খাড়া দিয়ে আছে তো আছেই।

কিসের ছায়া এটা ?

না না! ওটারে ছায়ার মতন দেখায় বটে, কিন্তু ওটা তো আদতে ছায়া না। ওটা হলো ডাক। অতি বুড়া পিতামহীর কায়া বদলানোর ডাক এসে হাজির হয়েছে। অই তো তার দোরগোড়াতেই থির দেহে খাড়া দিয়ে আছে সেই ডাক। এবার তবে যেতে হবে। যেতে হবেই। কিন্তু হায়! কিচ্ছা-পরস্তাবদের ফিরায়ে আনার জন্য তো কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে নাই পিতামহী! সেইটা করার হায় তো তার পালন করার কথা ছিল। করে নাই তো সে সেইটা। আহা! সংসার যে কতো কতো যুগ ধরে অচল-অসাড়-পাথর হয়ে পড়ে আছে! আহারে! এদিকে দেখো রে! তার হাতে যে আর একটা দণ্ডও নাই! তারে যে এক্ষণই মেলা করতে হবে। নিজের কায়াবদলখানা যে এক্ষণই সম্পন্ন করতে হবে!

তখন মরমর সেই মুরুব্বি কী করে ?

নিজের জান-পরান এক করে, নয়া জোয়ান নাতিকে সে ডাক দেয়। কাছে আসুক সে তবে এই এক্ষণ। তারপর পিতামহী করে কী, নিজের যেট্টুক সয়সম্পদ ছিল; তার সবই, নিজ নাতির ঘরের এই পুতির হাতে সোপর্দ করে। সয়সম্পদ বলতে আর তেমন কী! পরদাদির কিনা থাকার মধ্যে আছে―ডানায় লেপ্টে রাখার মতো দুই আঁজলা খররৌদ্র। চক্ষে গেঁথে রাখার জন্য আছে এই একটুখানি, কাজলা সুঘন মেঘ। আর আছে একখান পরস্তাবের আধাটা টুকরা!

একখানা পরস্তাবের আধাটা অংশ! এইটা কেমন বিত্তান্ত!

বাকি আধাটা কই ?

বাকি আধাটা নিরুদ্দেশ হয়ে আছে আজকা কত না যুগ-জনম ধরে!

না-জানি কোন সেই অগম মুল্লুকে গিয়ে, পলান্তি দিয়ে আছে কিচ্ছা-কথারা। না-জানি আছে তারা কোন না-জানি এক দেশে। তবে শোনা কথা এই যে, মানুষের সংসার থেকে পলান্তি দিয়ে কিচ্ছারা চলে গেছে এমন এক অচিন দেশে, যেইখানে বিফলতা রাজত্বি করে। সেই রাজত্বিতে এক মনিষ্যি বসত করে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পরস্তাবেরা আছে তার কাছে। বিফলতার দেশের এক ঘন-বিফলতা-লুপ্ত সেই মনিষ্যি।

 এই কথাটুকুই পক্ষীসমাজের সকলে জানে। এর বেশি আর কিচ্ছু জানে না তারা। সেই যে মনিষ্যি, সে কি পুরুষ মনিষ্যি, নাকি সে কোনও কন্যা ? হায় রে, কোথায় তার বাস! কী তার নাম, কই তার ধাম ? সে জিউতা আছে, না নাই ? সে এখন জিউতা না-থাকলে তাহলে নিখোঁজ পরস্তাবেরা এখন কার ঠাঁইয়ে আছে ? সেই সংবাদ ব্যাঙ্গমা পক্ষীকুলের চির অবিদিত। শুধু ভাসা ভাসা রকমে তারা জানে, বাকি আধাখান পরস্তাবে গিয়ে নিজেরে লুকায়ে নিয়েছে, কোনও এক মনিষ্যির কালো সিন্দুকের ভেতরে। আর অন্য অংশটা, এই তো, পরদাদির ঝাঁপির ভেতরে। ঘোলা হয়ে আসা সাদা রঙের একখান তেনা দিয়ে বান্ধা আছে সেইখানা।

‘সেই না আধাটা পরস্তাবেরে বিছরাইয়া আইন্নো ধন। আইন্না জোড়া মিলাইয়া দিয়ো।’ পিতামহী মিন্নতি দেয়। ছন্দে-বন্ধে বিনয় করে। ‘নাইলে সৃষ্টি-সংসারে কোনওদিন আর শান্তির লগে সুখের মিলনখানা ঘটবো না। বিচ্ছেদে বিচ্ছেদে ছন্নভন্ন যাইব সকলই। আর কোনওদিন হেলেঞ্চার ঝাড়ে কচি-পুখরি জাগনা দিব না! কোকিলায় ডাকুন্তি দেওনের তাকদ পাইব না। চারণে নিজ অন্তরের পয়াররে আর ফিরা পাইব না। হায় হায়। নয়া জোয়ান ব্যাঙ্গমা পক্ষী! কও রে ধন, যাইবা হেইটা বিছরাইয়া আনতে ? জবান দে ভাই! নাইলে যে মরতেও সাহস পামু না।’ পরদাদির চক্ষের জলে, জগতের মাঠ-পাতরা-ভূমি যেন স্যাতস্যাতা হয়ে যেতে থাকে। যেতে থাকে। তেমত অবস্থায় ব্যাঙ্গমা পক্ষী  নি নিজ দূর পরদাদিরে জবান না দিয়ে পারে! পারে না পারে না। সে তক্ষণ তক্ষণ জবান দেয় যে, যাবে সে। পঞ্চভূত সাক্ষী, যাবে ব্যাঙ্গমায়। বাকি আধাখানা পরস্তাবের খোঁজে যাবে। খুঁজে তারে সে ফিরায়ে আনবেই। কিচ্ছাকথা-পরস্তাবের জোড়া সে মেলাবেই। এই তো, এখনই মেলা দেবে সে! এই তো মেলা দিল ব্যাঙ্গমা পক্ষীয়ে!

নিজ সখারে বুঝি একলা ছাড়বে সখী ব্যাঙ্গমি পক্ষিনী! কোনওদিন না। আগুনে-পানিতে, হারুন্তি-জিতুন্তি সকল কিছুতে না তারা দোঁহে দোঁহাকার! এমনই না বিধির বিধান! তাইলে ব্যাঙ্গমার সঙ্গে সঙ্গে সেও পন্থে না নামে, কী প্রকারে ?

তখন অর্ধেক পরস্তাবেরে খুঁজে আনার জন্য ব্যাঙ্গমা পক্ষী যাত্রা করে অগ্নিকোণ বরাবর। আর তার সখী ব্যাঙ্গমি যায় ঈশান কোণ ধরে। কথা থাকে, আসছে বচ্ছরের চৈত্রমাসের শেষ-বেজোড় বিষ্যুদবারের কালে, ঘোর মধ্যাহ্নের বেলায়, তেপান্তরের এই বিরিক্ষির ডালে এসে তারা একে অন্যকে সাক্ষাৎ দেবে। জানাবে সর্ব সমাচার।

তার বাদে একে একে তিন তিনখানা বচ্ছর পার হয়ে যায়, চৈত্রমাসের শেষ বেজোড় বিষ্যুদবারের দিনে, ব্যাঙ্গমা পক্ষী ঠিক এসে হাজির হয় এই তেপান্তরে। কিন্তু ব্যাঙ্গমি পক্ষিণীর ফিরে আসা নাই। পুরোটা খাঁখাঁ দুপুরের কাল, নিজেকে, মহানিম বিরিক্ষির ডালে ফেলে রাখে ব্যাঙ্গমা পক্ষী। তারপর ডানা গুটিয়ে বসে থেকে থেকে থেকে ব্যাঙ্গমার আস্ত শরীরটাই হয়ে উঠতে থাকে নিরাশার মতো হিম। প্রতিবারই এমন হতে থাকে তার।  তখন ঈশান কোণের থেকে নিজের চোখ সরাতেই ভয় হতে থাকে। খুব বিষম ভয়। তাই সেই দিকে অপলক চেয়ে থাকে তার অক্ষিরা।  সেই দিকে শূন্যতা। সব ফাঁকা। সেইখানে কোনও একটা ছায়া ভেসে উঠতে দেখা যায় না।

চার. ব্যাঙ্গমি সখী

সেই তিন বচ্ছর আগের কথা। ঘোর চৈত্রমাসের তপদগা দিনে সখী ব্যাঙ্গমি পক্ষী উড়াল দেয় ঈশান কোণের দিকে। সখা ব্যাঙ্গমারে সে তখন, অর্ধেকখানা পরস্তাবেরে খুঁজে আনার জন্য, একা একলাই, যেতে দিতেই পারত।  নিজে সে তখন রয়ে যেতেই পারত নিজ গুষ্টির সকলের সঙ্গে। থাকতেই পারত সে আপনা মনমতো রকমে, আরামে-নিরলে। কারণ, অই যে নিখোঁজ কিচ্ছাদের সন্ধান করার ঠেকাটা, সেইটা ব্যাঙ্গমা সখার নিজ গুষ্টির একান্ত নিজস্ব ঠেকা। সখী ব্যাঙ্গমির গুষ্টির ভেজাল এটা না! তার গুষ্টিতে এমন কিছুর সন্ধান করতে যাওয়ার ঠেকা কখনও ছিল―এমত কথা ব্যাঙ্গমি কোনওদিন শোনে নাই।

তো, এই অন্যের বংশের ঠায়-ঠেকার কারবারে নিজেরে তার না-জড়ালেও হতো। তার জন্য কেউই ব্যাঙ্গমির কোনও দোষ ধরবে―এমত কোনও রাস্তা ছিল না। কেননা, সে, এই ব্যাঙ্গমি, সে কেবলই ব্যাঙ্গমা পক্ষীর সখীমাত্র, তাদের পরিণয় হয় নাই। হতেও বাকি আছে ঢের ঢের দিন। ব্যাঙ্গমা সখার পরদাদির অমন ঝটকা কায়াবদলের ব্যাপারখানা না এলে, হয়তো পরিণয় সত্ত্বরই ঘটে উঠত।

কিন্তু সেই মউতের অথবা কায়াবদলের কারণে পরিণয়ের দিন যে পিছালো, তা পিছালোই। তারে নিকট করে তোলার কোনও রাস্তা থাকল না। একে, মউতায় হচ্ছে বংশের মাথা। তার মরণের পরের আঠার মাস কাল কোনওপ্রকার সুখোৎসব করার বিধি―ব্যাঙ্গমা পক্ষীসমাজে নাই। করলে, আসমানি বালা আতকা নেমে এসে গুষ্টিরে ফালাফালা করে দেবে।

 তারপরে কী হবে ? হবে এই যে, জিন্দিগিতেও আর পক্ষীগণের কোনওজনে ডানা উঁচাবার তাকদ পাবে না। এমনই  বলে গেছে পিতিপুরুষেরা। সেই কথাই চিরদিন ধরে সকলে মান্য করে আসছে। মান্যই করে আসছে, কিন্তু তারে কোনওদিন যাচাই-বাছাই করতে আগায় নাই কোনওজনে। কে না জানে, বিশ^াসের উপরে আর কোনও কথাই চলতে পারে না!

 এই তো আছে আঠার মাসের এক ভেজাল। তারপরে আছে গুনে গুনে ছয় ছয়খানা ভরা চান্দের কাল পার করার বিধি। সকলে বলে, ওইটাই নাকি বিষম শনির কাল। এমনে পক্ষী-সংসারের রোজকার নিত্য কর্মক্রিয়ার সময়ে, এই শনির কাল মান্য করার তেমন একটা ঠেকা নাই। কিন্তু বিবাহের মতন পূর্ব-সপ্তজন্মের বন্ধনেরে, নয়া পুণ্য বন্ধন দিতে যাও যদি, তাইলে আঠার মাসের পরে, এই ছয় ছয়টা শনির কালেরে মানা চাই বটে। এইসব দিন পার করে-টরে, তবেই পাবে তুমি পরিণয় ঘটাবার কাল।

তার সখার সঙ্গে এমনে-তেমনে পরিণয় সম্পন্ন হওয়ার ভাগ্য যে তার হতো, সংসারের অবস্থা তো তেমন কথা বলছিল না! সখা ব্যাঙ্গমা যাচ্ছে তখন অর্ধেকখানা পরস্তাবেরে সন্ধান করতে, সেই সন্ধানের কর্মে কত ভরা চন্দ্রের কাল যাবে, কে তা বলতে পারে! ত্বরিৎও সেই কর্ম শেষ হতে পারে, আবার কিনা লেগে যেতে পারে অযুত অমাবস্যার পক্ষ।

তাহলে সেই অনিশ্চিতির দিন-দণ্ড-পক্ষ-মাসদের কীভাবে পার করবে ব্যাঙ্গমি পক্ষিণী ? সখার জন্য দিন গুনে গুনে শুধু ? কেবল কোনও-না-কোনও বৃক্ষশাখায় আসীন থেকে থেকে, পার করবে অপেক্ষার লগ্ন ? কেবল পন্থপানে চেয়ে চেয়ে নিজের দিবসকে ফুরাতে দেবে, আর রাত্রিকে আসতে দিতে থাকবে সে ? অমন অকম্মা জীবন! নিজ দেহের এমন নবীন কালে, নিজ পক্ষদুটার এমন তেজবান হয়ে থাকার কালে, সে কি কেবল বসুন্তী দিয়ে দিয়ে নিজেরে ধসায়ে দিতে থাকবে ? কদাপি নহে।

 অমন নিষ্ফলতাকে বরদাস্ত করার জন্য তার এই পক্ষিণী-জন্ম নয়। বরং সেও ঝাঁপিয়ে পড়বে নিরুদ্দেশের দিকে। সেই পথে যেতে যেতে নিজে যদি সে হারায়ে যায়, তো যাবে। যদি আধাখানা পরস্তাবেরে সে খুঁজে পায়, তো ফিরে সে আসবে। যদি না পায় তো, খুঁজে সে যেতেই থাকবে। আধাখানা পরস্তাবের সন্ধান করে করে যদি পার করে দিতে হয় তার বাকিটা আয়ুষ্কাল! তো দেবে সে সেটা। কিন্তু শুধু পথ চেয়ে থাকার অবমাননা, সে নিজেকে দিয়ে যেতে পারবে না। যাবে সেও, আধাখানা পরস্তাবের সন্ধানে। ব্যাঙ্গমা পক্ষীর সঙ্গে সঙ্গে, একই দণ্ডে, সেও রওনা দেবে।

তবে দুইজন যাবে দ্ইু পথে।

ব্যাঙ্গমা পক্ষী কোন মুল্লুকে যেতে চায় ?

ব্যাঙ্গমা পক্ষী চায় অগ্নিকোণের দিকে রওনা দিতে। সেইখানে যদি সে পরস্তাবের টুকরাটাকে পেয়ে যায় তো, ভালো কথা। নাইলে সাব্যস্ত হয় যে, অগ্নি কোণে তল্লাশ করে শেষ করে সে, অন্য আরেকখানা কোণের দুনিয়াতে যাবে। পরস্তাবেরে তন্নতন্ন করে বিছরান্তি দেবে। তারপর মাওলার যা মরজি। ভাগ্যে থাকলে পরস্তাবের টুকরাখানা তার হাতে আসবে, নাইলে নাই।

তবে ভরসার কথা এই, ওই সন্ধানকর্মে ব্যাঙ্গমা পক্ষী একলা যাচ্ছে না। সখী ব্যাঙ্গমিও তো যাচ্ছে ওই একই কর্মে! ব্যাঙ্গমা পক্ষীর কিসমতে যদি পাওয়ার কথাটা লেখা নাও থাকে, ব্যাঙ্গমির ভাগ্য হয়তো অতখানি বুরা নাও হতে পারে। হয়তো সে-ই খোঁজটা পাবে। হয়তো সে-ই উদ্ধার করে নিয়ে আসবে চির-অগোচর থাকা পরস্তাবেরে।

সখী ব্যাঙ্গমি কোনদিকে যাবে ?

যাবে সে ঈশান কোণের দুনিয়ায়। সেই দেশে নিজ বস্তুরে সে পেয়ে গেলো তো সকলের খুশ-কিসমত। কিন্তু যদি ঈশান কোণে বস্তুখানা না পায় সে ? তখন ? তখন ব্যাঙ্গমি সখী অন্য আরেক কোণেরে বিছরান্তি দিতে যাবে। সেই কোণের নাম বায়ু কোণ।

সত্য দিলে সন্ধান করলে কিনা দয়াল সাঁইয়েরও সন্ধান মিলে! আর দুই দুইটা ব্যাকুলা-পরাণীর অমন সন্ধানকর্ম বুঝি বিফলে যেতে পারে! বিফলে যাবে না। পরস্তাবের বাকিটুকুর খোঁজ তারা একজন না একজনে পাবেই।

এমত মীমাংসা নিয়ে দুইজনে দুই দুনিয়ার দিকে যাত্রা করে, সেই না কোন তিন বচ্ছর আগে। এই তিন বচ্ছরের মধ্যে একবারের জন্যও ব্যাঙ্গমি পক্ষিণী নিজ তেপান্তরের মহানিম বিরিক্ষির দিকে উড়ালটা দিয়ে উঠতে পারে নাই। যাত্রাকালে সাব্যস্ত করা কথাখানা সে রেখে উঠতে পারে নাই। কথা ছিল না, বচ্ছরকার চৈত মাইস্যা শেষ বিষ্যুদবাইরা দিবা দ্বিপ্রহরে মহানিম বিরিক্ষিতে গিয়ে উপস্থিত হতে হবেই ? এমনই কথা ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্গমি পক্ষিণী সেই কথা মান্য করতে পারে নাই। যায় নাই সে।

এই যে সে যায় নাই, কেনো সেইটা ?

যায় নাই, কারণ ধার্যমতে সাব্যস্ত করা দিনে গিয়ে হাজিরা দেওয়ার কোনও তাগাদা, এ যাবৎ কালে, ব্যাঙ্গমা পক্ষিণী পায় নাই। এমন কী সখা ব্যাঙ্গমাকে চক্ষের দেখাটা পর্যন্ত দেখে ওঠার কোনও বাঞ্ছা তার ভেতরে জাগনা দেয় নাই! সর্বক্ষণ কেবল তারে ঘিরে রেখেছে কেমন এক নেশা! কেবল মনে হয়েছে, শুধু চেয়ে থাকি, কেবল চেয়ে থাকি। কেবল মনে হয়েছে, একটুও না নড়ি। নড়া যাবে না, নড়া যাবে না! তাহলে তাকে হারিয়ে ফেলতে হবে। 

কিসের দিকে চেয়ে থাকার জন্য অমন তাগাদা তার ? সেই বৃত্তান্ত বলার আগে অন্য একটা কথা একটু বলে নেওয়া ভালো। 

(প্রথম ভাগের এখানেই সমাপ্তি)

সচিত্রকরণ : শতাব্দী জাহিদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button