আর্কাইভগল্প

গল্প : একটি গা ছমছমে গপ্পো : স্বপ্নময় চক্রবর্তী

পাড়ায় সচিত্র পোস্টার এবং ফেস্টুন পড়ে গেছে। আসন্ন দুর্গাপূজা, দীপাবলী, গোবর্ধন পূজা, ছটপূজা, ভাইফোঁটা, কাঁকড়া চতুর্দশীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ছনিপাল ও মনিপাল। দুটি ছবিও পাশাপাশি। ছনিবাবু ও মনিবাবু। ছবিতে শুধু মুখ। ছনিবাবুর গোঁফ আছে, মনিবাবুর গোঁফ নাই। এমনিতে দুজনের মুখের বেশ মিল আছে। আর শরীরটা তো একই রকম। একই রকম বুক ধুকপুকুনি, একই রকম পেটে গ্যাস, দুজনের একসঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, আবার একই সঙ্গে পেট খারাপ হয়। পেট খারাপ হলে দুজনেই কাঁচকলা সেদ্ধ দিয়ে ভাত খায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দুজনই ইসবগুলের ভুষি খায়, এবং প্রায়শই কাজ হয়। হিসু হলুদ হলে দুজনেই বেশি জল খায়, কারণ দুজনেরই একসঙ্গে হলুদ হিসু হয়। কিন্তু দুজনের একসঙ্গে মাথা ধরে না। কখনও একই সঙ্গে মাথা ধরে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আলাদাভাবে মাথা ধরে। দুজনেই একই সঙ্গে অনিদ্রায় ভোগে না। পাড়ার ছেলে ভ্যাংচাকে পুলিশ ধরে লকআপে ঢোকালে ছনি খুব খুশি হয়। রাতে ভালো ঘুম হয়। কিন্তু মনির ঘুম হয় না। কিম্বা প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন আর দশটা ফাইটার প্লেন কিনব, পাকিস্তানের বাপের নাম ভুলিয়ে দেব, ছনি পাল গোঁফে তা দেয়, মনিপাল বলে আবার কাটমানি খাওয়ার ধান্ধা। ছনিপাল বলে কাটমানি! ভূতের মুখে রামনাম শুনি। কাটমানিকে তোরা কোন পর্যায়ে উঠিয়েছিস। এখন বার্থ সার্টিফিকেট থেকে ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত ঘুষ। কোনও চাকরি, সেটা যা হোক, ঘুষছাড়া হয় না। কাটমানি শোনাচ্ছিস ?

ওরা এরকম ঝগড়া করলে ওদের বউ বলত―কেন খামাখা ঝগড়া করছো এখন, ভুলে যাও কেন, এটা টিভির টক শো নয়, ঘণ্টাখানেক সঙ্গে ভুবন নয়। এটা বাড়ি। বাবুসোনা এখন মন দিয়ে অনলাইনে গেম খেলছে। এখন ওকে ডিসটার্ব কোরো না। ও, বলা হয়নি, ওদের দুজনের একটাই বউ। বিয়ের সময় খুব ঝামেলা হয়েছিল।

মেয়ে দেখতে গিয়ে কোনও মেয়ের নীল চোখ থাকলে মনির পছন্দ হতো না, কিন্তু ছনির পছন্দ হতো। ছনি বলত, নীল চোখ হলো খাঁটি আর্যদের চোখ। জার্মানদের চোখের মণি নীল। কিন্তু মনির আবার কালো চোখ পছন্দ। ও বলে, কালো চোখ দিঘির মতো। আমার কালো হরিণ চোখ পছন্দ। ছনির কোঁকড়া চুলের মেয়ে একেবারে পছন্দ নয়। ‘নারীচরিত্র’ নামে একটা বই পড়েছিল, ওখানে লেখা ছিল ‘কুঞ্চিত কেশ নারী কুলটা হইয়া থাকে’। আবার মনির কোঁকড়া চুলই ভালো লাগে। বাংলার বধূ বুকে তাঁর মধু, কুঞ্চিত কেশ দেখিতে সরেস। এটা মনিপালের নিজের রচনা। মনিপালের মধ্যে একটা কবি ভাব লুকোনো আছে। একটি ছড়া বা কবিতার বই তার অনুপ্রেরণা। ওখানে অনেক ভালো ভালো কবিতা আছে যেমন কুকুর করে ঘেউ, গরু করে হাম্বা, ভেড়া করে ভ্যা ভ্যা, মানব শিশু বামমা। আসলে সবাই ‘মা’কেই ডাকে, সবাই বলছে মামমা। কিম্বা কাক করে কা-কা পায়রা বকম। আসলে সবাই বলে বন্দেমাতরম। আসলে রোমান্টিক কোমল দেশপ্রেমিক হলেন মনিপাল। আর বলীয়ান দেশপ্রমিক হলেন ছনিপাল। তাই বলে ননিপাল ভীরু নন। ‘আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে ধরতে পারি’ মনিপালের খুব প্রিয় গান। মনিপালের আজ্ঞাবহ কিছু অস্ত্রধারী পোষ্য আছে। তা অবশ্য ছনিপালেরও আছে।

সে থাকগে। কথা হচ্ছিল ওদের বিয়ে নিয়ে। কত পাত্রী দেখা হলো। ছনির পছন্দ হয় তো মনির পছন্দ হয় না, আবার মনির হয়তো ছনির হয় না। ওদের মা বলে তোরা নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নে। কী রকম মেয়ে বিয়ে করবি। ঘটককে তেমন করেই বলব খুলে।

ওরা দুজনে টিভি শোয়ের মতো ঝগড়া করে। শেষ অবধি দুজনেই বলে, হে মাতাশ্রী, তুমি যা করার করো। তুমি যাকে পছন্দ করে এনে দেবে তাকেই বিয়ে করব।

এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন লেখক কি গাঁজা খেয়ে লিখছে নাকি গল্পটা ? দুজন কেন নিজেদের পছন্দমতো আলাদা আলাদা মেয়ে বিয়ে করছে না ? কী করে করবে ? কোনও উপায় নেই। বিয়ে না করলে আলাদা কথা। বিয়ে করলে ওদের দুজনকেই একসঙ্গে একই মেয়েকে বিয়ে করতে হতো। এবং তাই হলো। টোপর দুটি হলেও পাঞ্জাবি একটা, দর্জিকে দিয়ে বিশেষভাবে করানো। এমন পাঞ্জাবি, যার দুটি গলা। এমনিতে ওরা পাঞ্জাবি পরতে পারে না। পারা সম্ভব নয়। ওরা বুক খোলা হাওয়াই শার্ট পরে। নেতা হলে পাঞ্জাবি পরাই নিয়ম, কিন্তু ওদের উপায় ছিল না। কারণ, ছনি-মনির একটাই শরীর। কিন্তু দুটো মাথা। প্রকৃতির খেয়াল আর কি। এ ধরনের সন্তান খুব কম হয়। হলেও বাঁচে না। ওদের মায়ের ধারণা, ভগবানের অপার আশীর্বাদে এই বাচ্চাটা বেঁচেছে। মায়ের দুটো স্তন দুই মুখে পান করেছে ওরা। কত লোক দেখতে আসত। ঠং ঠং আওয়াজ হতো। ওর মা একটা রেকাবি রেখে দিয়েছিল। আর একটা মাথা বেশি হলে আর দেখতে হতো না। একেবারে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর হয়ে যেত। দুই মাথার কোনও দেবতার কথা জানা নেই। পাঁচ মাথার পঞ্চানন আছে। তিন মাথাও আছে। দুই মাথার মাহাত্ম্যই বা কম কী ? লোকে পূজাটুজা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ওদের বাবা ভাবল জ্যান্ত দেবতা হয়ে কী লাভ। ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে। জীবনটা এনজয় করা যাবে না। ওদের বাবা এই সার কথাটা বুঝেছিলেন, কারণ উনি তো মাঝে মাঝেই দেবতা সাজতেন। কাজ পত্তর না থাকলে সঙ সাজতেন। কালো রঙ মেখে, মুখে প্লাস্টিকের লাল হর্ন ঢুকিয়ে বুকে নারকেলের মালা লাগিয়ে মা কালী, কিম্বা গায়ে ছাই মেখে মাথায় নারকেলের ছোবড়ার জটা বানিয়ে শিব, কিম্বা মুখে নীল রঙ মেখে ঠ্যাং বেঁকিয়ে কৃষ্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ঝকমারিটা জানাই ছিল। ছেলেকে হয়তো সঙ সেজে বাইরে ঘুরতে হবে না, তবে দুমাথা নারায়ণ নাম দিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখে পয়সা রোজগারে কোনও মজাই পাবে না ছেলে। ছেলে, নাকি ছেলেরা ? গণ্ডগোল হয়ে যায় ছনি-মনির বাবার। ওদের একজোড়া জুতা হলেই চলে। কিন্তু মোজা দুটো, কিন্তু জামা একটা। বুক খোলা। একজন ঝাল ঝাল খাবার পছন্দ করে, অন্য জন মিষ্টি মিষ্টি। দুই ভিন্ন উৎস থেকে জমা হলেও খরচ হয় একই উৎস থেকে। দুজনের একজন যখন প্রাণায়াম করে তো অন্য জন ফুক ফুক করে বিড়ি খায়। এক ভাই রামায়ণ পড়ে তো অন্য ভাই কামায়ন পড়ে। দুভাইয়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভাড়ি সম্পর্ক। ভাব আর আড়ি মিলে ভাড়ি। কিম্বা টমি সম্পর্ক। টক আর মিষ্টি মিলে টমি। আলাদা টুপি কিন্তু একই জহর কোট। ও বলা হয়নি, ক্রমে ক্রমে ওরা জনপ্রিয়। ফলত সমাজসেবী এবং পরিণতিতে রাজনৈতিক নেতা। এবং নেতা হলে তো জহর কোট পরতেই হয়।

থাক গে, কথা হচ্ছিল বিয়েটা নিয়ে। কন্যা দুটি মালা দান করেছিল দুটি গলায়। চার চোখ নয়, ছয় চোখের মিলন হয়েছিল। শুভদৃষ্টি হয়েছিল একবার ছনির সঙ্গে, একবার মনির সঙ্গে। ছনি-মনির ফুলশয্যা একই ফুল সাজানো পালঙ্কে। ওদের পুত্রসন্তানের নাম ছমছম। ছনি-মনি মিলিয়ে ছমছম। ছমছমকে নিয়ে দুজনই একই রকম স্বপ্ন দেখে। ছমছম বড় হয়ে বড় ডাক্তার হোক দুজনের কেউ চায় না। ছমছম বড় হয়ে বড় বিজ্ঞানী হোক চায় না, ইঞ্জিনিয়ার হোক চায় না। দুজনেই চায় ছমছম ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হোক। প্রধানমন্ত্রী যদি টার্গেট থাকে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী, নিদেনপক্ষে মৎস্যমন্ত্রী তো হওয়া যাবে।

অভ্যাসবশত শিশুশিক্ষার বাংলা বই নিয়ে এসেছিল ওদের মা। ছনি-মনি বইটাকে কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধন করে দিয়েছে। সদা সত্য কথা বলিবে কেটে দিয়েছে। কদাচ কুবাক্য বলিও না রেখে দিয়েছে। এরকম, মন্ত্রী হতে গেলে যা-যা করতে হয় আর কি। মন্ত্রীদের সবসময় মিঠে মিঠে কথা বলতে হয়। ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর’ রেখে দিয়েছে। চালাকি দ্বারা মহৎ কার্য হয় না সেটি দিয়েছে। যাই হোক, ছমছম চন্দ্রকলার মতো দিনে দিনে বাড়ছে। এ বার আমাদের গল্পের প্রথম দিকে চলে আসি, কেমন ?

ছনিপাল এবং মনিপাল দুজনই দুজনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। দুজনই দেশপ্রেমিক। দু’জন দুটি জমায়েতে পনেরই আগস্টে পতাকা উত্তোলন করতে যায়। একটা মুখ এক জায়গায় বলে, ভারতমাতা কী জয়, তখন অন্য মুখ চুপ থাকে। অন্য মুখ অন্য জায়গায় বলে বন্দেমাতরম। জয় বাংলা। আর একটা মুখ চুপ থাকে। কিন্তু দুই জায়গাতেই একই জোড়া হাত পতাকা ওঠায়। এইভাবে পতাকা ওঠাতে ওঠাতে, ছনি-মনিও উঠতে থাকে নেতাগিরির উপরের স্তরে। উঠতে উঠতে একসময় ভোটে দাঁড়াবার টিকিট পেয়ে যায়। কিন্তু দুজন পরস্পরের বিরোধী দল। একটার হলো লংকা চিহ্ন, অন্যটার ঘুঘু চিহ্ন। নির্বাচনী প্রচারে দুজনে একসঙ্গেই যায়। কী করা যাবে, দুজনেরই তো সাদা স্নিকার পরা পা। তবে দুটি মুখকে তো দু জায়গায় আলাদা আলাদা কথা বলতেই হবে। তবে কয়েকটা কথা দুটি মুখেরই এক। যেমন ‘উন্নয়ন’, ‘দেশভক্তি’, ‘ত্যাগ’, ‘এক নম্বর’ ইত্যাদি। প্রচার সভায় ছনি-মুখ মনিকে এবং মনির দলকে গালাগালি দেয়। মনি তখন চুপ থাকে। আবার মনি-মুখ গালাগাল দিলে ছনিমুখ চুপ। কিন্তু টেলিভিশনের টক শোতে একসঙ্গে কথা বলে। দুটি মুখই ভীষণ টকেটিভ। দুটি মুখই একসঙ্গে কথা বলে, কারওর কথা আলাদাভাবে বোঝা যায় না, উন্নয়ন, বিকাশ, দুর্নীতি, জনগণ, গণতন্ত্র, দেখে নেবো, ন্যায়বিচার, সততা সব এ ওর ঘাড়ে উঠে পড়ে, আর শব্দগুলি দলা পাকায়। ভোটের ফল বেরুল। ঘুঘু চিহ্নে ছনি জিতল, লঙ্কা চিহ্নে মনি হারল। বিধানসভায় ছনি ঘুঘুর দলে, মনি লঙ্কার দলে। দলের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে ছনি লঙ্কা দলের নিন্দা করে আবার স্নিকার পরা পা দুটি লঙ্কা দলের চেয়ারের দিকে গিয়ে ঘুঘু দলের নিন্দে করে আসে। এভাবেই বেশ চলছিল। দেশও এগোচ্ছিল। ভালোই ছিল ওরা। ভাগ্যিস ওর বাবা পাড়ার লোকের কথা শুনে ছনি-মনিকে সার্কাসে পাঠায়নি। একটা সার্কাসওলা বলেছিল দিয়ে দাও, দুই মুখে ছেলে খাবে। তুমিও কিছু টাকা পাবে। ভাগ্যিস তখন দেয়নি। দিলে কি আর এমন হতো! ছনি-মনির দিদি ভাইফোঁটা দিত। দুটো রেকাবিতে দুরকম খাওয়া। একটায় চপ, কাটলেট-ডেভিল, অন্যটায় সন্দেশ রসগোল্লা গজা। দুজনের দুরকম পছন্দ। দিদি দুই কপালে ফোঁটা দিয়ে বলত, রাজা হ। রাজা তো একজনই হয়, তাই ছনি জিজ্ঞাসা করত কাকে রাজা হতে আশীর্বাদ করলি ? মনিও। দিদি বলত, দুজনকেই। ছনি-মনির দিদি বলত, তোরা দুজনেই হবি দেখে নিস। ছনি-মনি দিনে দিনে প্রতিষ্ঠিত হতে লাগল। বিখ্যাত হতে লাগল, নানা কমিটির চেয়ারম্যান হতে লাগল। ফলে শত্রুও তৈরি হতে লাগল। দুজনেরই শত্রু তৈরি হলো। দুজনই বুঝতে পেরেছিল, তাই ছনি ওর গোঁফ কামিয়ে ফেলল যাতে ওকে সহজে আলাদা না করা যায়। ওদের মুখ অবশ্য একেবারে অবিকল নয়। কিছুটা আলাদা, কিন্তু আলাদা করা যায়।

মনিকে খুন করার জন্য সুপারি কিলার নিয়োগ করা হলো। ঠিক তেমনটা ছনিকে খুন করার জন্যও। সুপারি কিলাররা আলাদাভাবে বিভ্রান্ত হলো। কারণ ওদের বলা হয়েছিল এক জনের গোঁফ আছে। অন্যজনের গোঁফ নেই। মারতে হলে মাথায় মারতে হবে। বুকে গুলি করলে দুজনেই মারা যাবে। তাহলে পয়সা পাবে না। তারপর সুপারি কিলারদের আরও বিশদভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু ইতিমধ্যে অন্য সমস্যা দেখা দিল। ছনি বলতে শুরু করল মনিদের বুলি। যেমন ছনি আগে বলত বিকাশ, এখন বলছে উন্নয়ন। আগে বলত ভ্রষ্টাচার, এখন বলছে দুর্নীতি। আগে বলত লাড্ডু, এখন বলছে আলুর চপ। আবার মনিও ছনির কথা বলছে। ছনি বলছে আমি আর ঘুঘু চিহ্নে নেই, লঙ্কা চিহ্নে। আবার ক’দিন পর ভুলেও যাচ্ছে। মনিও বলছে আমি আবার কবে লঙ্কা ছিলাম, আমি তো ঘুঘুই। ঘুঘুই বিকাশ করবে। কে সুস্থ, কে লঙ্কা গণ্ডগোল হয়ে গেল। ফলে সুপারি কিলার নিয়োগকর্তারা হতোদ্যম হয়ে গেল। ছনি-মনি নিজেদের পরিচয় ভুলে গেলে কী হবে, দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে নেয়, ওদের দুজনের সন্তান ছমছম কীভাবে আজীবন অনায়াসে জীবনযাপন করতে পারে। এরপর আরও কিছু কাল কেটে যায়। আরও কত পোস্টার লাগানো হয়, কত পোস্টার ছেঁড়া হয়। কত কবি ঘুঘুগান লিখল, কত কবি লঙ্কাস্তুতি করল, কত ঘুঘুর ডানা কাটা হলো, কত লঙ্কাক্ষেতে নুন আর চুন ঢালা হলো। আবার আর একটা নির্বাচন এসে গেল। এবারের নির্বাচনে ছনি লঙ্কা, মনি ঘুঘু। আগেরবার ছিল উল্টো। নির্বাচনের ফল বেরুল। কী আশ্চর্য। ঘুঘুদল, লঙ্কাদল কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়নি। কীভাবে যেন বেড়াল-ইঁদুর-বাঁধাকপি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেল। আবার হিসেবে দেখা যাচ্ছে লঙ্কা আর ঘুঘু মিলে বেড়াল-ইঁদুরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লঙ্কা ও ঘুঘু জোটবদ্ধ হয়ে গেল। লঙ্কা ও ঘুঘুর প্রথম অক্ষর মিলিয়ে এই নতুন জোটের নাম হলো লঘু। এবং এরাই সরকার গঠনের আহ্বান পেল।

যেহেতু ছনিমনি একই দেহে লঙ্কা ও ঘুঘু, তাই ছনি-মনিই সর্বেসর্বা হলো। দেশের চালক হলো।

এ বার ওরা দ্বৈত শপথ গ্রহণ করল। ওদের ছেলে ছমছমের তখন সত্যি গা ছমছম করছিল।

সচিত্রকরণ : শতাব্দী জাহিদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button