অনুবাদ গল্পআর্কাইভবিশ্বসাহিত্য

অনুবাদ গল্প : প্রভুর আয়না : বেন ওকরি

বিশ্বসাহিত্য : অনুবাদ গল্প

মূল : বেন ওকরি

বাংলা অনুবাদ : মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ

[বেন ওকরি নাইজেরিয়ার মিন্না শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যজগতে প্রকাশ ঘটলেও ক্রমে একাধারে একজন সফল ঔপন্যসিক, গল্পকার, নাট্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাসটির নাম The Famished Road। এই উপন্যাসের জন্য তাঁকে ১৯৯১ সনে ম্যান বুকার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।]

আয়নাটি সম্পর্কে আমি প্রথম শুনি হ্যাম্পস্টেডের রোসিক্রুশিয়ানদের একটি আলোচনা সভায়। সেটিতে আমাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন অন্য এক সভায় দেখা হওয়া একজন ডাক্তার। তিনি ছিলেন একজন গোছানো চেহারার মানুষ, ঈগলের মতো চোখ ও যথাযথ আচরণের অধিকারী। সবকিছুতেই তিনি নির্ভুলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

ডাক্তার ও আমি ইতিহাসের সমান্তরাল স্রোত নিয়ে কথা বলেছিলাম। আবিষ্কার করেছিলাম যে আমাদের দুজনেই অনেক রহস্যময় ঐতিহাসিক ঘটনার বিকল্প ব্যাখ্যা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। তবে আমার বিশ্বাস সেদিন আমি কাকতালীয়ভাবে রোসিক্রুশিয়ান ও তাদের কিংবদন্তীর বাস্তবতা নিয়ে প্রসঙ্গ তুলেছিলাম।

‘বর্তমানে অনেক দল আছে যারা নিজেদেরকে রোসিক্রুশিয়ান হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে,’ তিনি বলেছিলেন।

‘কিন্তু আসল দল কোনটি ?’

‘আসল সত্য কী ?’

‘কোন বিষয়ে ?’

‘ঠিক। সত্য হলো একই সঙ্গে এক ও বহুমাত্রিক। চূড়ান্ত সত্যের দিকে যাওয়ার যতগুলো পথ আছে, ততজন রোসিক্রশিয়ান আছে।’

বিষয়টি নিয়ে আমি যখন গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন :

‘আমাদের পরবর্তী সভায় আসুন না আপনি ?’

‘আমাদের ?’

‘হ্যাঁ। বিষয়টি আপনাকে আকর্ষণ করবে।’

তার কথা বলার সময়ে আমি এক ধরনের শিহরণ অনুভব করেছিলাম, যা কোনও মানুষ কোনও কঠিন রহস্য সমাধান করার সময়ে অনুভব করে থাকে।

‘আপনি কি বলতে চাচ্ছেন…’

‘বিষয়টি নিয়ে সবার সামনে আর কিছু বলবেন না,’ তিনি বললেন।

তারপর তিনি একটা ছোট প্যাডে একটা ঠিকানা লিখলেন এবং রহস্যময় হাসি দিয়ে আলোচনা থামিয়ে দিলেন। তারপর চলে যাওয়া শুরু করলেন, কিন্তু ফিরে এলেন আমাকে যথাযথ নির্দেশাবলি দেওয়ার জন্যে।

‘আপনাকে আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই কাজ করতে হবে, নতুবা আপনাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না,’ তিনি বললেন।

আমাকে বিশ্বাস করার জন্যে তাকে ধন্যবাদ দিলাম। তিনি একজন আগন্তুককে একটা আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ করছিলেন, যেটির নির্বাচন তাকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে করতে হচ্ছিল।  আমি সম্মানিতবোধ করলাম। আমাদের পাশেই একদল মানুষ আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিল।

ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন, এবং পরের মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলেন। তার চলে যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে রোসিক্রুশিয়ানদের সম্পর্কে আমি যে অদ্ভুত কথাগুলো শুনেছিলাম তার খুবই মিল ছিল।

আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল কোনও শনিবারের বিকালের প্রথম ঘণ্টায়। আমি আন্ডারগ্রাউন্ডে চড়ে বসলাম। হ্যাম্পস্টেডে সেটি ছিল একটি চমৎকার সেপ্টেম্বরের দিন। সুন্দর আলো বিচগাছগুলোর ওপরে এসে পড়ছিল। এক ধরনের নাগরিক রহস্যময়তার বোধ নিয়ে আমি বড় পুরনো নির্জন বাসাগুলোকে অতিক্রম করে হ্যাম্পস্টেড পাহাড়ে পৌঁছলাম। করবী ও হাতিশুঁড় ফুলগুলো তখন নির্জন পথের ধারে ফুটেছিল।

বাড়িটি ছিল পাহাড়ের পাদদেশে। সেটি ছিল সাদারঙের, যেটার ছাদ গৈরিক রঙের টালি-ছাওয়া ছিল। বাড়িটির দেয়ালের গায়ে ছিল আঙুরলতা। মনে হচ্ছিল সেটি অন্তত শতবর্ষের পুরনো।

দরজার বেল কাজ করার কোনও সাক্ষ্য দিল না। কেবল আমি যখন ভেতরের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে অন্য কোনও উপায় খুঁজতে লাগলাম, তখন হঠাৎ করে দরজাটি খুলে গেল। সেটির কব্জাগুলোতে তেল দেওয়ার দরকার ছিল। আমি দরজাগুলোর পেছনে আরও দরজা এবং ভেতরের কক্ষগুলোর প্রমাণ পেলাম।

একজন দাড়িওয়ালা ও কঠিন দৃষ্টির মানুষ সবজান্তা ভাব নিয়ে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালেন। যখন আমি কিছুই বললাম না, তখন তিনি দরজা বন্ধ করতে শুরু করলেন। নিজেকে আমার একজন অদৃশ্য মানুষ বলে মনে হলো।

‘আমি প্রত্যাশিত,’ আমি বললাম।

‘আমরা সকলেই কোথাও না কোথাও প্রত্যাশিত,’ তিনি হাসিমুখে বললেন।

‘আমি এখানে প্রত্যাশিত।’

‘প্রত্যাশা খুবই বিপজ্জনক।’

এই মন্তব্য মুহূর্তের জন্যে আমাকে নীরব করে দিল।

‘কার দ্বারা ?’

‘জ্বি ?’

‘কে আপনাকে প্রত্যাশা করছে ?’

‘যিনি আমাকে এই আমন্ত্রণটি দিয়েছেন। একজন ডাক্তার।’

‘তার নাম কী ?’

‘তিনি আমাকে তার নাম বলেননি।’

‘কীভাবে করেছিলেন, আমি কি জানতে পারি ?’

‘কী করেছিলেন ?’

‘আমন্ত্রণ।’

‘কথা বলে।’

‘সন্তোষজনক উত্তর নয়,’ আমার দিকে অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন।

আমার মনে হলো কেউ একজন আমাকে ছুড়ে ফেলে দিল। আমন্ত্রণের বিষয়টি, আমি মনে করতে পারলাম যে সরলই ছিল। আমাকে বলা হয়েছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হতে। বলা হয়েছিল দরজার বেল বাজাতে। তারপর বলা হয়েছিল বলতে যে আমি প্রতাশিত। এর বাইরে আর কিছুই ছিল না।

সবজান্তা মানুষটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি নিজের বাস্তবতাকে সন্দেহ করা শুরু করি। তিনি ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন এমনভাবে যে, তিনি কোনওকিছুর জন্যেই অপেক্ষা করছেন না। আমি নিজের স্মৃতির ভেতরে আবার তন্ন তন্ন করে খোঁজ করলাম। আমি কী ভুলে গিয়েছি ? তখনই আমার মনে হলো যে ডাক্তার আমাকে গোলাপ নিয়ে যাবার বিষয়ে কিছু বলেছিলেন। সেটি আমি তখন শুনিনি। পরে শুনেছিলাম।

আমি সঙ্গে করে গোলাপ এনেছিলাম, কিন্তু কখনই ভাবিনি যে কেউ একজন আশা করবে আমাকে আলোচনা সভায় ঢুকতে দেওয়ার আগে আমি সেটি তার কাছে উপস্থাপন করব। খুব নম্রভাবে আমি আমার কোটের ভেতরের পকেট থেকে হালকা চেপ্টা হয়ে যাওয়া গোলাপটি বের করলাম এবং পরীক্ষাচ্ছলে বর্ষীয়ান মানুষটিকে দিলাম। তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং উজ্জ্বল হলেন।

‘মনে হচ্ছে আপনি এখানে প্রত্যাশিত,’ তিনি বললেন, এবং আমাকে পাশের এলাকার দিকে এগিয়ে দিলেন।

বর্ষীয়ান মানুষটি আমাকে একটা কক্ষে নিয়ে গেলেন, যেটি ছিল অন্য কোনও শতাব্দীর, পুরনো বইপুস্তকে ভর্তি। দেয়ালের গায়ে খোদাই করা একটি লেখা Christian Rosenkreutz ঝুলছিল। একটা একাকী মস্তকের খুলি দিয়ে ঘরের একটি সম্প্রসারিত স্থানকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। মরিচা পরা জাদুর সরঞ্জামগুলো উনুনের তাকের পাশে রাখা ছিল। আমি কালো হাতলসহ একটা তরবারি, ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া একটা জাদুদণ্ড, একটা কালো টুপি এবং একজোড়া ক্যালিপার একটা সাইড-টেবিলের ওপরে দেখতে পেলাম। একটা মুগ্ধকারী আকর্ষণ ছিল সেগুলোর। জ্যোতিষশাস্ত্র ও কাব্বালার প্রাচীন বই, জ্যাকব বোহেমি ও পারাসেলাস-এর বইগুলো তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল বুকশেলফগুলো থেকে।

কক্ষটির চেয়ারে বৃত্তাকারে বসেছিলেন তেরোজন গুরু-ভাই। যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি একটা রাজকীয় উঁচু চেয়ারে বসেছিলেন, সভার মাথায়। তার সামনে ছিল একটা আসল মেহগনি কাঠের তৈরি টেবিল। সেটার ওপরে ছিল ভারী চামড়া দিয়ে বাঁধা একটা বাইবেল, Fama Fraternitatis এবং একটা অ্যাস্ট্রোলেইব।

তাকে দেখে মনে হলো না তিনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। আমিও তাকে ভালোভাবে চিনতে পারলাম না। তিনি সোনার কীলক লাগানো একটা কালো পোশাকে ঢাকা ছিলেন। তার গলা থেকে মণিমুক্তা ঝুলছিল। আমি একটা সোনালি গ্লোব দেখতে পেলাম, যেটার ওপরে একটা ক্রুশ লাগানো ছিল। তার চারপাশে একটা মধ্যযুগীয় পরিবেশ বিরাজ করছিল এবং তার অঙ্গভঙ্গি মাপা ও নাটুকে ধরনের ছিল। তিনি এই শাখাটির পুরোহিত ছিলেন।

আমাকে সংক্ষেপে অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। সবাই মনে করল আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। এই পরিবেশে আমি দুটি পরস্পরবিরোধী অনুভূতির মুখোমুখি হলাম। অনুভব করলাম আমি একটা সময়-পরিভ্রমণের (time travel) অভিযাত্রী হয়েছি, এবং একই সঙ্গে এটাও অনুভব করলাম যে আমি একটা অন্ধকার সাগরের তলদেশে আছি।

বক্তৃতাটি ছিল একটা আয়না সম্পর্কে। আয়নাটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ফ্রেডরিক হকলেই, উনিশ শতকের একজন জাদুবিদ। তিনি লন্ডনের ল্যাম্বেথে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জীবন অস্পষ্টতায় পরিপূর্ণ ছিল, যা ইতিহাস পছন্দ করে না। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন হক্সটনে, এবং পরবর্তীকালে কোভেন্ট গার্ডেনে অতিপ্রাকৃত বিষয়ক বইপুস্তক বিক্রি করতেন। সম্ভবত এগুলোই ভবিষ্যৎ বলতে পারার শিল্পের প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল।

১৮৮৪ সালে, ত্রিশ বছর এই শিল্প অনুশীলন করার পর, হকলেই একটা বিশাল আয়না তৈরি করেছিলেন। তিনি এটা তার আত্মার পথপ্রদর্শকের নামে উৎসর্গ করেন, যিনি শুধু তার নামের আদ্যক্ষর ঈ.অ দ্বারা পরিচিত ছিলেন। তার এই উৎসর্গের উদ্দেশ্য ছিল অস্তিত্বের রহস্যময়তা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আধ্যাত্মিক প্রশ্নের উত্তর লাভ করা। প্রতি মঙ্গলবারে তিনি নিজেকে এই গোপনীয় কাজে নিয়োজিত রাখতেন।

আয়নাটি কীভাবে বিখ্যাত হয়েছিল তা এখনও ব্যাখ্যা করা কঠিন। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে হকলেই ও তার বন্ধুরা আয়নাটির ভেতরে অনেকবার তাকিয়েছিলেন। তারপর এটি মাদাম ব্ল্যাভেটস্কির হাতে আসে। সবশেষে এর মালিক হয় এই উচ্চ পরিষদ।

এক সময়ে গুজব ছিল যে আয়নার ভিশনগুলোর উৎস যতটা না আত্মিক পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, তার চেয়েও বেশি সম্পর্কিত ছিল আফিমের আরক ও ভিক্টোরিয়া যুগে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত আফিমের সঙ্গে। আরও গুজব ছিল যে আয়নাটা প্রকৃতপক্ষে মাদাম ব্ল্যাভেটস্কি হকলেইকে দিয়েছিলেন।

বইপুস্তকের একজন খুবই নিবেদিত সংগ্রহকারী হিসেবে হকলেই-এর বাসস্থানে ২০০০ ভলিউমের বেশি বই ছিল। তিনি ১৮৮৫ সালে বৃদ্ধত্ব ও ক্লান্তির কারণে মৃত্যুবরণ করেন। দুঃখজনক হলো জীবনের শেষদিকে তার দৃষ্টিশক্তি খুবই কমে গিয়েছিল।

কিন্তু হকলেইর জীবনের সত্যগুলোকে আয়নার রহস্য বের করার জন্যে বিবেচনা করা হয়নি।

এই পর্যন্ত বলে পুরোহিত থামলেন। তারপর বৃত্তাকারে বসা শ্মশ্রুমণ্ডিত জাদুবিদদের দিকে তাকালেন।

‘সত্য হলো হকলেই-এর আয়নার একটা ভীতিকর কাহিনি আছে,’ রুমাল দিয়ে নিজের মুখ মুছতে মুছতে তিনি বললেন। ‘এটাকে উচ্চ পরিষদ কর্তৃক একশত বছরের বেশি সময় ধরে একটা ভল্টের ভেতরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মাত্র দুইবার এটিকে বের করা হয়েছিল। এবার নিয়ে হলো তৃতীয়বার।’

পুরোহিতকে নার্ভাস মনে হলো। তিনি বৃত্তের একমাত্র নারীর দিকে তাকাতে লাগলেন, যার বয়স ছিল ষাটের একটু ওপরে। দেখতে সুন্দরী ও ভালো রুচির পোশাক পরেছিলেন তিনি। তিনি পুরোহিতের ওপরে সার্বক্ষণিক একটা দৃষ্টি রাখছিলেন এমনভাবে, যাতে মনে হচ্ছিল তিনি তাকে শক্তি জোগাচ্ছিলেন। যাতে পুরোহিতের নার্ভ ফেল না করে।

‘যে আয়না সম্পর্কে আমি কথা বলছি, সেটার একটা জঘন্য কুখ্যাতি আছে। আপাতভাবে প্রচুর প্রস্তুতি নেওয়ার পর কাউকে সেটির মধ্যে তাকাতে হয়।’

তিনি সামনের টেবিলের ওপরে রাখা গ্লাসের পানিতে চুমুক দিলেন।

‘বলা হয়ে থাকে যে আয়নার মধ্যে তাকানোর পর কেউ কেউ সেখানে নিজেদের প্রতিফলন নাও দেখতে পারে। এবং যদি সেটা হয়…’

তিনি আবার থামলেন।

‘…যদি সেটা হয় তাহলে দৃষ্টিপাতকারী পাগল হয়ে যেতে পারে। অথবা পরবর্তীক্ষণে সে মরে যেতে পারে।’

তিনি আবার লম্বা সময়ের জন্যে থামলেন। তারপর নিজের ওয়েস্টকোটের পকেট থেকে একটা পকেট-ঘড়ি বের করলেন এবং সেটির দিকে দীর্ঘ সময়ের জন্যে তাকিয়ে রইলেন। আপাত দৃষ্টিতে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি চিন্তার জগতে হারিয়ে গেছেন।

প্রায় মিনিটখানেক পর তিনি ঘড়িটাকে বন্ধ করলেন, এবং আমাদের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন প্রথমবারের মতো তিনি আমাদেরকে দেখছেন।

‘ইতিমধ্যেই দুটো বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমজন বিশ শতকের প্রথম দিকে আয়নার ভেতরে তাকানোর দুই দিন পর পাগল হয়ে গিয়েছিল।

তিনি আমাদের প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকালেন। তার মুখের প্রকাশ সামান্য অস্বাভাবিক ছিল।

‘তারপর তিরিশ বছর আগে সহকারী পুরোহিত একটা বিশেষ সম্মেলনে আয়নাটির ভেতরে তাকিয়েছিলেন। পরের দিন তিনি একটা রহস্যময় পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছিলেন। শবপরীক্ষকের প্রতিবেদনটিও মীমাংসাহীন ছিল। তাতে বলা হয়েছিল যে, তার হৃৎপিণ্ড হঠাৎ করেই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।’

তিনি আবার থামলেন। মনে হলো এবার তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার তাকানোর আতিশয্য এতই প্রখর ছিল যে আমি ঘামতে শুরু করলাম। আমি রুমাল বের করলাম মুখ মোছার জন্যে। কিন্তু যখন আমি সামনের দিকে নিচু হলাম, তখন দেখতে পেলাম যে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই, শূন্যতার ভেতরে তাকিয়ে আছেন।

‘আপনারা হয়ত অবাক হতে পারেন ভেবে যে, এই সত্যগুলো আপনাদেরকে আমি বলছি কেন। অনেক বছর ধরে কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে আয়নার কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। কোনও জিনিস তার সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি পেয়ে থাকে ভয়, কুসংস্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ হতে। আমরা যুক্তিবাদী মানুষ। আমরা বিজ্ঞানের যুগে বাস করি। এখন সময় এসেছে আয়নার থিওরি নিরীক্ষা করার।

কক্ষের পেছনদিক থেকে একটা হাঁফ ছাড়ার শব্দ পাওয়া গেল। কয়েকটা মুখ আমার দিকে ফিরল। আমি তাদেরকে নিশ্চিত করলাম যে শব্দটি অন্য কোথাও থেকে এসেছে।

‘আমার পরিকল্পনা দুই ধাপের। প্রথমে আমার বক্তৃতা উপস্থাপন করা, এবং তারপর একটা নির্দিষ্ট সময়ে, আমার ও আমার স্ত্রীর কঠোরতম তত্ত্বাবধানে, হকলেইর আয়নার মধ্যে তাকানো।

আমরা তার দিকে অস্পষ্টভাবে তাকালাম।

‘এবার সামনের সপ্তাহে আমরা ফলাফল জানব। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দর্শনের প্রাচীন শিল্পে আমি অংশগ্রহণ এবং হকলেইর স্পিরিট গাইড ঈ.অয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব, অথবা আমার নাম চিরকালের জন্যে সংযুক্ত হবে হকলেইর আয়নার ভয়ংকর কুখ্যাতির সঙ্গে।’

তিনি তার চশমা খুললেন, সেটিকে দক্ষতার সঙ্গে মুছলেন, আবার পরলেন, এবং আমাদের দিকে তাকালেন।

‘আপনাদের অনেকের মতো রহস্য নিয়ে আমার গভীর আগ্রহ আছে। কিন্তু আমিও একজন বিজ্ঞানের মানুষ। এবং বিজ্ঞানীরা জানা বিষয়ের সীমাগুলো পরখ করে দেখে।’

পুরোহিত তার বক্তৃতা শেষ করলেন এবং আন্তরিক প্রশংসা সেটিকে অনুসরণ করল। এই প্রশংসা সমবেত সবার নিরাভরণ মেজাজকে প্রতিফলিত করল। তারপর চূড়ান্ত আচার সম্পাদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো।

বাইরের কক্ষে কেক ও চায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চায়ের কাপ ও ছোট প্লেটগুলোতে কেক নিয়ে আমরা যুগে যুগে আয়নার কুখ্যাতি নিয়ে গল্পগুজব করলাম। আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম পুরোহিতের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে।

‘বক্তৃতাটি খুবই মুগ্ধকর ছিল,’ আমি বললাম, ‘কিন্তু আপনি কি আপনার স্বামী যে ঝুঁকি নিচ্ছেন, সে সম্পর্কে চিন্তিত নন ?’

‘এটা খুব বড় ধরনের ঝুঁকি নয়,’ আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন।

‘কেন নয় ?’

‘কারণ আমি নিজে আয়নাটির মধ্যে তাকিয়েছি।‘

আমি পেছনের দিকে চলে এলাম অনিচ্ছাকৃত ভয়ের সঙ্গে।

‘আমি সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম,’ তিনি মৃদু হেসে বললেন তার কথার প্রতিক্রিয়া আমার মধ্যে দেখে।

‘তাই ? কী পূর্বসতর্কতা আপনি গ্রহণ করেছিলেন ?’

‘আমি নির্ধারিত প্রার্থনা করেছিলাম, আমার চারপাশ লাল মোমবাতি দিয়ে ঘিরেছিলাম, এবং যথাযথ সহায়তা কামনা করেছিলাম। এই কাজগুলো করার জন্যে কঠোর প্রস্তুতি নিতে হয়।’

‘কখন এটা হয়েছিল ?’

আমি ভাবছিলাম কতক্ষণ সময় লেগেছিল সেই ভয়ানক ঘটনাটি ঘটার জন্যে। তিনি আমার চিন্তা পড়লেন।

‘আমি আমাকেই আয়নার মধ্যে দেখেছিলাম।’

‘আচ্ছা।’

কিন্তু তার পরের মন্তব্য আমার মুখকে রক্তহীন করে দিল।

‘একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল সেটিকে নিয়ে।’

‘কী ?’

‘আমি একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনেছিলাম সেটির গভীর থেকে। তারপর আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে আয়নার মধ্যের মুখটি আমার ছিল না। সেটি ছিল কেউ একজন যে দেখতে আমার মতো। কেউ একজন যে আমার মুখের সঙ্গে নিজেকে মিলানোর চেষ্টা করছিল।’

আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কী বলা উচিত।

‘আমি জানতাম যে সেটি আমি নই। আয়নার ভেতরের মুখটি ছিল একটি মুখোশ। আমি তা সেটির চোখ দুটোতে দেখেছিলাম। সেগুলো আমার চোখ ছিল না। তারপর আমি কণ্ঠস্বর শুনেছিলাম।‘

‘কী বলেছিল সেটি ?’ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম।

‘কণ্ঠস্বরটি আমাকে বলেছিল : তোমার স্বামীকে বলো…’

এই সময়ে পুরোহিত আমাদের মাঝে এলেন।

‘যাবার সময় হয়েছে এখন,’ তিনি বললেন হাত দিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে।

‘আমি অবাক হলাম যে তিনি এখনও আমাকে চিনতে পারেননি। তাকে মনে হলো চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। আমি তার বক্তৃতার জন্যে অভিনন্দন জানালাম। একটা শূন্য দৃষ্টিতে তিনি বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন অযথাযথতা নিয়ে।

‘ওহ, এটা আপনি,’ তিনি উজ্জ্বল মুখে বললেন। ‘আমি খুশি হয়েছি যে আপনি আসতে পেরেছেন।’

আমরা সামান্য কথাবার্তা বললাম। তারপর হঠাৎ করে তিনি বললেন যে তাকে চলে যেতে হবে। স্ত্রীর হাত ধরে তিনি দরজার বাইরে চলে গেলেন, হাত নেড়ে।

তিরিশ মিনিট পর আমি হ্যাম্পস্টেড পাহাড়ে উঠছিলাম। কয়েকটা বইয়ের দোকানে আমি থামলাম। আলোচনার বিষয়গুলো  মন থেকে ছুড়ে ফেলতে পারছিলাম না। সে রাতে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম, যেখানে হকলেই আয়নার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে অনুরোধ করলেন : আমার মুখটি তাকে ধার দিতে। তিনি আমার মুখটি ছিঁড়ে ফেলছিলেন যখন আমি ঘুম থেকে উঠলাম।

পরের শনিবারে আমি হ্যাম্পস্টেডের সেই গোপন ঠিকানায় ফিরে গেলাম। আমি দুইবার বেল বাজালাম। তৃতীয় বেল বাজার পর দরজা খুলল, ঠিক যেন সংকেতের সঙ্গে। নতুন একটা গোলাপ গ্রহণ করে বর্ষীয়ান লোকটি আমাকে ভেতরের বৃত্তের দিকে এগিয়ে দিলেন।

একটা বিষন্ন পরিবেশ বিরাজ করছিল সেখানে। কেউই কিছুই বলল না আমাকে। পুরোহিত উঁচু কাউন্সিলের টেবিলে ছিলেন না। তার স্ত্রীও অনুপস্থিত ছিলেন। পুরোহিতের বসার জায়গায় একটা কালো গোলাপ ছিল।

আমাদেরকে ল্যাটিন ভাষার একটি প্রার্থনায় নিয়ে যাওয়া হলো। তারপর আমরা নীরবতার মধ্যে নিমজ্জিত হলাম। ফিউনারেলের এক ঘণ্টা পর সহকারী পুরোহিত দাঁড়ালেন এবং একটা হেঁয়ালিপূর্ণ বক্তৃতা দিলেন। তিনি সংখ্যা দিয়ে কথা বলছিলেন।

‘আমাদের পুরোহিত,’ তিনি বললেন, ‘নয় ছেড়ে দশে গিয়ে যোগদান করেছেন। তিনি ছিলেন পবিত্র চার। অনেক সময়ে আমরা বারোর দিকে তাকাই এবং একের ঐক্য হারিয়ে ফেলি। আমরা দুইতে বিভক্ত হয়ে যাই, সাত আর সেটির পুনর্মিলন ঘটাতে পারে না। তারপর পাঁচ-এর কাদায় আমাদেরকে নিক্ষেপ করা হয়।’

তার সুন্দর করে শেভ করা মস্তককে মনে হচ্ছিল ইস্টার আইল্যান্ডের মূর্তিগুলোর একটি। তার চোখ দুটো ঢাকা ছিল এবং তার মুখটি ছিল সাধুদের। গত সভায় আমি তাকে চিনতে পারিনি। তিনি থেমে থেমে নিকটদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের মতো আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

‘পৃথিবীকে আমরা বুঝে থাকি আমাদের মন দিয়ে। আমরা যখন পৃথিবীর আয়নার ভেতরে তাকাই, তখন আমরাই সেখান থেকে ফিরে তাকাই আগন্তুক হিসেবে,’

তিনি তার হাতের তালুকে একত্রিত করলেন। একটা ছোট্ট সোনার মিশরীয় প্রতীক তার গলায় ঝুলছিল, তার কালো নিমার ওপরে। তিনি পুরোহিতের টেবিলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ছোট পদক্ষেপে তিনি সেটির সামনে এলেন। তার কণ্ঠস্বর একটু উচ্চকিত হলো।

‘আমি উচ্চ পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা সবাই সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছেন যে হকলেইর আয়না ভল্টের ভেতরে ফিরিয়ে নেয়া হবে, আর কখনওই বের করা হবে না। আমাদের পুরোহিতই হবেন শেষ ব্যক্তি যিনি মালিকের আয়নাটির ভেতরে তাকিয়েছিলেন।’

এই সামান্য কথাগুলো বলতেই তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি সংগ্রাম করছিলেন কীভাবে তার ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করবেন। মনে হলো তিনি তা না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর মাথা নেড়ে তিনি মৃদু হাসলেন।

‘আমাদের পুরোহিত তার একটা ছোট বার্তা রেখে গেছেন। এটা শুধু পরিষদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে। এই সভার পর, পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বার্তাটি প্রদান করা হবে। এখনকার জন্যে ভাইয়েরা মনে রাখবেন যে, তিন-এর অমৃত থেকে পাঁচ-এর নির্যাস উঠে আসবে। সেটি সাত এর অনুরণনের সঙ্গে মিলে বাইশ এর রহস্যময়তায় উন্নীত হবে। তারপর আলোর শাখাপথগুলোতে আরোহণ করে সেগুলো সর্বদা উপস্থিত মালিকের সঙ্গে আমাদের পুনর্মিলন ঘটাবে, এক আলোর উজ্জ্বলতায়।’

তিনি তার বক্তৃতা শেষ করেই একটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন যেটি আমি আগে খেয়াল করিনি। দরজাটি ছিল একটি বইয়ের তাক। যখন সেটি তার পেছনে বন্ধ হয়ে গেল, তখন কেবল একটিমাত্র বইই নড়ল, যার লেখক ছিলেন করনেলিয়াস আগ্রিপ্পা।

এরপর কোনওরূপ চা অথবা কেক দেওয়া হলো না। আমরা যারা পরিদর্শক ছিলাম তারা নিজেদেরকে খুঁজে পেলাম সামনের উঠানের নুড়িগুলোর ওপরে, ম্লান হয়ে যাওয়া উইস্টেরিয়া ফুলগুলোর কাছে, যেগুলো সূর্যের আলোতে চিকমিক করছিল প্যাঁচাদের মতো।

কোনও কথা ছাড়াই আমরা হ্যাম্পস্টেডের ছড়িয়ে যাওয়া শাখাপথগুলো ধরে বের হয়ে চলে গেলাম।

ছয় মাস পরের এক সুন্দর রবিবারে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে হ্যাম্পস্টেড স্বাস্থ্যনিবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। সে ছিল একজন পেইন্টার এবং আমার মতোই আধিভৌতিক কল্পনা বিষয়ে আসক্ত ছিল। আমি তার কাছে আয়নার সেই অসম্ভাব্য গল্পটি গোপনে বলেছিলাম।

আমরা পাহাড়ের ললাটের ওপরে দাঁড়িয়েছিলাম। আকাশের বিস্তার আমাদেরকে চিন্তানিমগ্ন করেছিল। দূরে আমরা সংসদ ভবন দেখতে পাচ্ছিলাম। পাহাড়ের পাদদেশে শিশুরা গড়াগড়ি খাচ্ছিল।

শহরের দিকে তাকিয়ে থাকার সময়ে, আমার বন্ধু বলল :

‘আমাদেরকে যতটুকু শেখানো হয় পৃথিবীর বাস্তবতা তার চেয়েও অদ্ভুত।’

সে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তার সেদিনের পেইন্টিং-এর একটি মোটিফ বা নিদর্শনের খোঁজে।

আমি জগতের বিশালতা ও জাঁকজমকের দিকে তাকালাম। তার কিছুক্ষণ পর আমি পাহাড় থেকে নিচে নেমে এলাম এবং লেকের পাড়ের একটা বেঞ্চে বসলাম। আমি পানির ওপরে আকাশের রঙ পরিবর্তনের খেলা দেখতে লাগলাম।

আমি যখন বসেছিলাম তখন বেঞ্চটি ছিল খালি। খুব বেশিক্ষণ সেখানে থাকার আগেই কেউ একজন এসে বেঞ্চটিতে বসল। আমার পাশে। এই অনধিকার প্রবেশ আমাকে বিরক্ত করল, কিন্তু পরমুহূর্তেই হঠাৎ করে আমি একটা শান্তি-বোধের মুখোমুখি হলাম।

কে ছিল সেটা, তা খেয়াল না করে আমি লেকের পৃষ্ঠদেশের ওপরে তাকিয়ে রইলাম, এবং অবাক না হয়েই আবিষ্কার করলাম যে লেকটিও একটি আয়না। সেটির প্রতিফলনের দিকে তাকিয়ে, নির্মল প্রশান্তিতে হারিয়ে গিয়ে আমি অন্যজগতে চলে গেলাম।

‘সব জিনিসই আমাদের মুক্তির পথ বাতলে দেয়, যদি আমরা জানি সেগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়,’ লেকের ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর বলল, একটা ঝাঁকুনি দিয়ে আমাকে বর্তমানে ফিরিয়ে দিতে দিতে।

আমার চারপাশের বাতাস বদলে গেল। আমার আশেপাশে কেউই ছিল না। আমার পাশে যে লোকটি বসেছিল সেও চলে গিয়েছিল।

একটা বকের ছায়া খুব নিচু দিয়ে ধূসর-নীল পানির ওপর দিয়ে উড়ে গেল।

সচিত্রকরণ : কাব্য কারিম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button