আর্কাইভপ্রচ্ছদ রচনাপ্রবন্ধ

বিশ শতকের বিপ্লব-ধারণা পতন-অভ্যুদয় : বন্ধুর পথযাত্রা : মফিদুল হক

আবার পড়ি : মফিদুল হকের প্রবন্ধ

বিশ শতকের সূচনা হয়েছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিবেশে। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশু কোনও শঙ্কা বা স্বপ্ন, স্ব-স্ব অবস্থান অনুযায়ী, বিশ্ববাসীর সামনে তেমনভাবে ছিল না। উনিশ শতকে উন্নত বিশ্বে, ইউরোপে আমেরিকায়, শিল্পবিপ্লবের পথ বেয়ে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আপন ভিত মজবুত করে তুলছিল তার পাশাপাশি সংঘবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণিও তাদের লড়াই-সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করছিল। পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো পর্যালোচনা করে এর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে সাম্যবাদী আদর্শ ও শক্তির প্রসারের বিপ্লবী সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন কার্ল মার্কস ও তাঁর সতীর্থরা। সমাজকাঠামো বিষয়ে নিবিড় পাঠের পাশাপাশি বাস্তব কাজের সঙ্গে ছিল কার্ল মার্কসের সম্পৃক্তি। স্মরণ করা যেতে পারে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, দার্শনিকেরা কেবল দুনিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন, আসল কথা হচ্ছে একে পাল্টে দেওয়া। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের বিশেষ প্রসার আমরা লক্ষ করি। এই প্রয়াস থেকে নতুন ধরনের ব্যক্তি ও সামাজিক শক্তির উত্থান আমরা দেখতে পাই যাদের অভিহিত করা হচ্ছিল ‘বিপ্লবী’ হিসেবে এবং যাঁরা সমাজের আমূল পরিবর্তন তথা বিপ্লব-সাধনে ব্রতী ছিলেন। কার্ল মার্কসের সমকালের প্রধান দুই বিপ্লব প্রয়াস, ১৮৪৮ সালের বিপ্লব এবং ১৮৭১ সালের প্যারি-কমিউন, পর্যবসিত হয়েছিল ব্যর্থতায়, দেশ-জাতি ছাপিয়ে শ্রমিক শ্রেণির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে প্রথম আন্তর্জাতিক (১৮৬৪-৭৩) তার ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল না। বিশ শতকের সূচনার সতেরো বছর আগে মার্কসের প্রয়াণ ঘটে এবং তার প্রভাব মনে হচ্ছিল তেমন সুদূরপ্রসারী হয়নি। যে ব্রিটেনে তিনি জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়েছিলেন সেখানে তিনি তখন প্রায় বিস্মৃত। তাঁর উপস্থিতি কিছুটা সবল ছিল জার্মানিতে, আর জার-শাসিত রুশ দেশে নিগৃহীত রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিল মার্কসের রচনা অধ্যয়নের বিশেষ প্রবণতা।

অন্যদিকে শতাব্দীর সূচনায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। ব্রিটানিয়া রুলস দা ওয়েভস এই ছিল প্রচলিত আপ্তবাক্য। বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের শরিকানায় ব্রিটেন ছাড়াও ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি শক্তিমান ইউরোপীয় দেশেরও ছিল অংশভাগ। পদানত জাতিসমূহের ওপর প্রভু দেশের আধিপত্য ছিল প্রায় নিরংকুশ। কেননা রাজনৈতিক এই আধিপত্যের সঙ্গে অটুটভাবে যুক্ত ছিল অর্থনৈতিক ও ভাবাদর্শগত আধিপত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা-সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে ছিল এই প্রাধান্য। এ-ভাবেই শুরু হয়েছিল বিশ শতকের যাত্রা, ইউরোপে বিপ্লব-প্রয়াসে যখন ভাটার সময়, আর ঔপনিবেশিক বিশ্বে বিরাজ করছে গভীর অন্ধকার।

অচিরে পুঁজিবাদী বিশ্বে দেখা দেয় বিপ্লবী পরিবর্তন এবং ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব জš§ দেয় নতুন সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার। শান্ত নিস্তরঙ্গ সমাজে বড় ধরনের সঙ্কট ডেকে এনেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তারই ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লব। শুরু হয় বিশ শতকের বৈপ্লবিক অভিযাত্রা। বিশাল মাপের সামাজিক রাষ্ট্রিক পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে অপ্রত্যাশিতভাব, যেমন ছিল ১৯১৭ সালের রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কিংবা ১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিলোপ। প্রখ্যাত মার্কসবাদী ঐতিহাসিক, বিশ শতকের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নিবিড় পর্যবেক্ষক, এরিক হবসবাম শতকের ইতিহাস-পর্যালোচনা গ্রন্থের নামকরণ করেছিলেন অমব ড়ভ ঊীঃৎবসব এবং উপশিরোনাম দিয়েছিলেন Age of Extreme । তাঁর ভাষ্য মতে বিশ শতকের প্রকৃত যাত্রা শুরু হয় ১৯১৪ সালে এবং এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৯১-তে এসে। সাম্রাজ্যের যুগ বা The Short Twentieth Century-এর সমাপ্তি ঘটেছিল বিশ শতকের সূচনায়, কিছুটা বিলম্বে, এবং যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে শতকের পরবর্তী অভিযাত্রা চলে তারও পরিসমাপ্তি ঘটে অকালে, ১৯৯১ সালে, সে-কারণেই ঐতিহাসিক বিচারে বাস্তব সাল-গণনার চাইতে হ্রস্বতর হয়েছে এই শতক বিবেচনা।১

বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনাবিন্দু হিসেবে ১৯১৪ থেকে এরিক হবসবাম শতাব্দীর কালগণনা শুরু করলেও ঔপনিবেশিক বাংলায় এর আগেই আমরা দেখি ভিন্নতর বৈপ্লবিক আলোড়ন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ কাঁপিয়ে দেয় বঙ্গভূমি। শতাব্দীর সূচনায় ভারতীয় তথা বঙ্গীয় সমাজও ছিল শান্ত নিস্তরঙ্গ, প্রায় দেড়শত বছরের ব্রিটিশ শাসন ঔপনিবেশিকতাকে বিধির বিধানতুল্য করে তুলেছিল এবং আত্মসচেতনতা ও আত্মমর্যাদাহীন বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত জাতির সামনে দেশচিত্র ও দেশভাবনা বলে বিশেষ কিছু ছিল না। ১৯০২ সালের সামাজিক অবস্থার একটি পরিচয় মেলে যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় প্রণীত বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন:

তখন পথঘাটে, রেলে, স্টিমারে, ট্রামে, গয়নার নৌকায় দেশপ্রেমী লোকের দেশের বা দশের কথা বা আলোচনা শোনা যেত না। একসঙ্গে কিছু লোক জমা হলে আলোচনা উঠত―কার বাপের শ্রাদ্ধে ক’মণ দই হয়েছিল, নেমন্তন্ন বাড়িতে মাছের তেমন প্রাচুর্য ছিল কিনা, অথবা খেঁদির বিয়েতে খেঁদির বাপের কাছে এত ভরি সোনা চাওয়া কি ঠিক হয়েছে ইত্যাদি। আমাদের একটি দেশ আছে, তার প্রতি আমাদের একটা কর্তব্য আছে তা নিয়ে তখন কখনও কথা হতো না।২

ঔপনিবেশিক বাংলার নিস্তরঙ্গ জীবনে প্রবল আলোড়ন বয়ে এনেছিল ১৯০৫ সালে বড়লাট লর্ড কার্জনের বঙ্গবিভাজন প্রয়াস। বঙ্গভঙ্গ রদ করতে যে প্রবল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার একদিকে ছিল বিপ্লবী ধারা এবং অপরদিকে অভিনব এক জনজাগরণ, সেটা ‘বিপ্লবী’ হিসেবে চিহ্নিত না হলেও তাৎপর্যে ছিল সুদূরপ্রসারী ও ব্যতিক্রমী। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তরুণ সমাজের একাংশের মধ্যে যে সশস্ত্র প্রতিরোধ চেতনা দানা বেঁধে ওঠে, সেটা রূপ লাভ করেছিল অনুশীলন সমিতিতে এবং জš§ দিয়েছিল অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার। এই সংগ্রামীরা ব্রিটিশদের চোখে ছিলেন সন্ত্রাসবাদী এবং দেশবাসীর দৃষ্টিতে বিপ্লবী। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন সমাজে যে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তাকেও শনাক্ত করা যায় ‘বিপ্লব’ হিসেবে, যদিও সচরাচর আমরা তেমনটা করি না। আমরা দেখেছি এরিক হবসবামের ঐতিহাসিক বিচারে বিশ শতক শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালে, পক্ষান্তরে বাঙালি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক বিনয় সরকারের বিবেচনায় বঙ্গে বিশ শতকের প্রকৃত সূচনা ঘটেছিল ১৯০৪ সালে। তিনি বলেছিলেন, ‘বাঙালির বাচ্চা আমি―বাঙালির চোখে দুনিয়া দেখি। আমার কাছে ১৯০৫ হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর প্রথম বৎসর। এই সময় শুরু হয় গৌরবময় বঙ্গবিপ্লব।’৩

বিনয় সরকার যে সামাজিক আলোড়নকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিলেন পরবর্তী সমাজবিদরা তা বিপ্লব রূপে গণ্য করেননি, বরং আদিতে সশস্ত্র সংগ্রামীরাই পরিচিত হয়েছেন ‘বিপ্লবী’ হিসেবে এবং তাদের গোষ্ঠীগত, আর অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, সাহসিকতা ও আত্মদান এবং বিপ্লব দমনে সরকারের নিষ্ঠুরতা জাতিচিত্তে এই যুবকদের আসন স্থায়ী করে দিয়েছিল। অরবিন্দ থেকে ক্ষুদিরাম, বহু ব্যক্তিমানুষের অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলার এই চরমপন্থি বিপ্লবী যুগ। তবে আদিপর্বের এই বিপ্লবীদের চেতনায় বড় সমস্যা ছিল তাদের ভারতীয়ত্বের ধারণার নির্মাণ বা কনসট্রাকশনে, যে-ধারণা আপন ইতিহাসের উৎস ও প্রেরণা হিসেবে হিন্দু-ভারতের গণ্ডিতে বাঁধা পড়েছিল। অনুশীলন সমিতির সদস্যদের দীক্ষা দেওয়া হতো সাধারণত কোনও মন্দিরে অথবা কালীমূর্তির সামনে। দীক্ষাদান প্রণালী ছিল নিম্নরূপ:

আগের দিন এক বেলা হবিষ্যান্ন ভোজন করে, সংযমী হয়ে, পরদিন ভোরে স্নান করে দীক্ষাগ্রহণ করতে হতো। দেবীর সামনে ধূপ-দীপ, নৈবেদ্য সাজিয়ে, বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে যজ্ঞ করতে হতো। পরে প্রত্যানীঢ় আসনে বসে (বাম হাঁটু গেড়ে শিকারোদ্যত সিংহের প্রতীক) মাথায় গীতা স্থাপন করা হতো। গুরু শিষ্যের মাথায় অসি রেখে দক্ষিণ পাশে দণ্ডায়মান থাকতেন। শিষ্য যজ্ঞাগ্নির সামনে দুই হাতে প্রতিজ্ঞাপত্র ধরে প্রতিজ্ঞা পাঠ করতেন।৪

স্পষ্টতই এমন রীতি অনুসারী অনুশীলন কিংবা যুগান্তরের মতো সশস্ত্র  বিপ্লবী দলে মুসলিম সমাজের অংশীদারিত্বের কোনও অবকাশ ছিল না, সেই ভাবনাও দলপতিদের মধ্যে দেখা দেয়নি। উনিশ শতকের ইতালির রাজনৈতিক ইতিহাসের দুই বিপ্লবী নায়ক গ্যারিবল্ডি ও মাৎসিনি দ্বারা বাংলার                  বিপ্লবীরা বিশেষ অনুপ্রাণিত বোধ করেছিলেন। বিপ্লবীদের অবশ্যপাঠ্য বইয়ের তালিকাতে ছিল রানাপ্রতাপ সিং, মহারাজ নন্দকুমার, আনন্দমঠ, জালিয়াত ক্লাইভ, দেবী চৌধুরানী, শিখের বলীদান ইত্যাদি গ্রন্থ। সমাজবিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ বিশেষ ছিল না, সামাজিক ইতিহাসের একমাত্র বই ছিল সখারাম গণেশ দেউস্করের ‘দেশের কথা।’৫

এটাও লক্ষণীয়, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিরোধের একজন যোদ্ধা হিসেবে জাতিচিত্তে স্থান পেয়েছেন আরও অনেক পরে। এমন কি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, যা কার্ল মার্কসের বিবেচনায় ছিল প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেই প্রতিরোধ কাহিনি বিশ শতকের গোড়াকার সশস্ত্র বিপ্লবী চিত্তে কোনও দাগ কাটেনি। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন বাংলায় প্রথম জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করে, বাৎসরিক সভা অনুষ্ঠান আর পিটিশন-আবেদন পেশের মধ্যে সীমিত রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের কর্মকাণ্ডের সঙ্কীর্ণ গণ্ডি ভেঙ্গে দেয় প্রবল এক  জাতীয় জাগরণ। দেশবাসীর দৃষ্টি পড়ে দেশের, সমাজের, মানুষের প্রতি এবং জাগরণের এক সার্বিক প্রয়াসে চঞ্চল হয়ে ওঠে সমাজ। এই জাগরণ ও আন্দোলন একান্তভাবে ছিল বঙ্গীয়, এর কর্ম-পরিচিতি ও কর্ম-উপাদানসমূহও ছিল দেশীয়, একান্তভাবে জাতীয়। বিলেতিবর্জন, স্বদেশী, স্বরাজ ও জাতীয় শিক্ষা এই চার ধারায় পরিচালিত আন্দোলন ছিল বি-ঔপনিবেশীকরণের ব্যাপক প্রয়াস। আন্দোলনে সারস্বত সমাজের অংশগ্রহণ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা একে কতক অনন্য চরিত্র দিয়েছিল। পাশ্চাত্য ধারায় নয়, আন্দোলনের একান্ত স্বদেশী রূপ অবলম্বন করে দেশজ ঐতিহ্য থেকে, এমন কি কতক ক্ষেত্রে ধর্মীয় অবয়বের ধর্মনিরপেক্ষ সর্বজনীনতা দানের উদ্যোগ এই আন্দোলনে লক্ষিত হয়েছিল। এর দুই উদাহরণ ছিল রাখীবন্ধন এবং অরন্ধন দিবস প্রবর্তন। আন্দোলনে আরেক ভূমিকা পালন করেছিল গান, সভা-সমাবেশে বক্তৃতার মতোই জনপ্রিয় ছিল সঙ্গীত পরিবেশন, যে-ক্ষেত্রে লোকসুরভিত্তিক রবিবাবুর গান স্বদেশিয়ানার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছিল। দুঃখজনক যে, রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ হিসেবে দেশজ প্রথারীতি আবিষ্কার ও অবলম্বনের এই ধারা পরবর্তীকালে আর বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। তবে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন যে স্বদেশী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হয়েছিল সেটা এর দেশজ চারিত্র্যের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রকাশ করে। দেশজ তথা সর্বজনীন হওয়ার তাগিদ থেকে স্বদেশী আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বিষয়টি অন্যতম প্রধান বিবেচ্য হিসেবে দেখা দেয়। এমনি ভাবনার বড় প্রতিফলন মিলবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেদারনাথ দাশগুপ্ত সম্পাদিত স্বল্পায়ু অথচ তাৎপর্যময় ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকায়, সেখানে তৃতীয় সংখ্যাতে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল ‘হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সদ্ভাববৃদ্ধির উপায় কি ?’ এবং জবাব দিয়েছিলেন মৌলভী সিরাজুল ইসলাম, নরেন্দ্রনাথ সেন, ব্যোমকেশ মুস্তফী ও রসিকমোহন চক্রবর্তী।৬ স্বদেশী যুগের সাহিত্যিক রূপায়ণ আমরা পাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ও কর্মে, আর এর বিপ্লবী ধারার প্রতিনিধিত্ব  করে অনুশীলন সমিতি।

দুই.

বঙ্গভঙ্গ রদ হয় ১৯১১ সালে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পরিসর বৃদ্ধির জন্য চলে নানা সংস্কার প্রচেষ্টা। ইতিমধ্যে মহাত্মা গান্ধী ভারতে প্রত্যাবর্তন করে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেন। ১৯২১ সালের অসহযোগ-খেলাফত আন্দোলন হিন্দু-মুসলিম মিলিত সংগ্রামের শক্তিময়তার পরিচয় দিলেও তা স্থায়ী রূপ পায়নি। অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রসার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে কিছুটা ভাটার টান সৃষ্টি করে এবং সশস্ত্র বিপ্লবী প্রয়াস নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে শক্তিক্ষয় ঘটায়। তবে এই বিপ্লবী ধারা একেবারে লুপ্ত হয়নি। ইতিমধ্যে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে ভারতের ও বাংলার রাজনীতিতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নতুন চিন্তা-চেতনা ক্রমে ঠাঁই করে নিতে থাকে এবং বিপ্লবের ধারণায় যোগ করে নতুন উপাদান। ক্রমে নতুন যুগের নতুন বিপ্লবী হিসেবে আবির্ভূত হলো সমাজতন্ত্রীরা, যাঁরা চাষি-মজদুরদের সংগঠিত করতে ব্রতী, তবে সশস্ত্র সংগ্রামেও পিছ-পা নন। আদি এই সমাজতান্ত্রিক প্রয়াসের এক উৎসাহী সদস্য ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

উন্নত পুঁজিবাদী দেশে যেখানে উৎপাদিকা শক্তির সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছে এবং উৎপাদন-শক্তির মালিক ও উৎপাদনের চাকা সচল রাখার শ্রমিকদের মধ্যে শ্রেণিদ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে, সেখানে ঘটবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, আর উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা সৃষ্টি করবে নতুন সভ্যতা, এমন প্রত্যাশা নিয়ে সংঘবদ্ধ আন্দোলন পরিচালনা করছিল ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীরা। এই নতুন ঘরানার বিপ্লবীরা তাত্ত্বিকভাবে ছিল একান্ত বলিষ্ঠ, তবে তাদের প্রত্যাশার বাইরে ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রথম ঘটলো রুশ দেশে, ১৯১৭ সালের অক্টোবরে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রাষ্ট্রাতীত চরিত্র এবং শ্রমিক শ্রেণির জাতিসীমা অতিক্রমকারী বোধ ও অবস্থান অক্টোবর বিপ্লবকে আন্তর্জাতিকতাবাদী করে তুলেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিপীড়িত মানুষের কাছে এই বিপ্লব ছিল বিশ্ববিপ্লবের ঘণ্টাধ্বনি, তাঁদের অনেকে তখন হাজির হয়েছিলেন মস্কোতে, পেত্রোগ্রাডে। বিপ্লবের নেতৃত্বের মধ্যে ছিল বিশ্ববিপ্লবের স্বপ্ন এবং এক দেশে সমাজতন্ত্র নির্মাণের বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয়সাধনের পথ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তবে সবচেয়ে যা তাৎপর্যময়, বিপ্লব অথবা বিপ্লবী সমাজগঠন বিষয়ে নানা চিন্তা, মত ও পথের দ্বন্দ্ব ও সহাবস্থান তখন ছিল স্বাভাবিক বাস্তব। রুশ বিপ্লবে বড় ভূমিকা ছিল বলশেভিকদের, তবে তার পাশাপাশি সোশ্যালিস্ট রেভলিউশনারী এবং মেনশেভিক, অ্যানার্কিস্ট ও অন্যান্য দল-উপদলেরও ছিল সম্পৃক্তি ও অবদান। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিজেকে যত সংহত করে তুলতে থাকে, রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একক পার্টিশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হয়, ততই মতাদর্শের বৈচিত্র্য হ্রাস পেয়ে ক্রমে তার বিলুপ্তি দশা ঘটে। বিশ্ববিপ্লবের প্রবক্তা লিও ত্রৎস্কি নির্বাসনে প্রেরিত হয়েও রেহাই পান না, মেক্সিকোতে তাঁকে জীবন বিসর্জন দিতে হয় স্ট্যালিন-প্রেরিত ঘাতকের হাতে। সোশ্যালিস্ট বিপ্লবীসহ অন্য সব দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং ‘সকল ক্ষমতা সোভিয়েতের হাতে’ এমনি দর্শন থেকে উদ্ভূত রাষ্ট্রশাসন ক্রমে এককভাবে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির করায়ত্ত হয় এবং পরিণামে পার্টিনেতৃত্ব তথা পলিটব্যুরোর শাসন এবং শেষাবধি পার্টিপ্রধানের একক ইচ্ছার বাহক হয়ে ওঠে বিশাল রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থা।

অক্টোবর বিপ্লবের পরপর বাঙালি বিপ্লবীদের কেউ কেউ উপস্থিত হয়েছিলেন রাশিয়ায়, এম. এন. রায়, অবনী চট্টোপাধ্যায়, সৌমেন ঠাকুর, গোলাম আম্বিয়া লোহানি, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদ দ্বারা এবং দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গঠনে অংশীদারিত্ব নিয়েছিলেন। বিপ্লবের গুরু ভ্লাদিমির লেনিনের সঙ্গে বিপ্লব বিষয়ে বাগ্বিতণ্ডা করতেও তাদের কেউ কেউ পিছ পা ছিলেন না। স্বদেশে ফিরে তাঁরা সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করে সমাজবিপ্লবের কাজ শুরু করতে ব্রতী হন। এই প্রয়াস তিরিশের দশক থেকে দানা বাঁধতে থাকে এবং ক্রমে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লব ধারণা হয়ে ওঠে বিপ্লবের প্রধান ধারা। রুশ দেশে শ্রমিক-কৃষকের রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস, কৃষিতে ব্যক্তি-মালিকানা বিলোপ ও যৌথ খামার প্রবর্তন, পুঁজিপতিদের উৎখাত করে কল-কারখানায় রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা, নারীর সম-অধিকারের স্বীকৃতি, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দুনিয়াব্যাপী ব্যাপক প্রভাব সঞ্চার করেছিল এবং উদ্বেলিত করেছিল বহু মানুষকে। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া হয়ে উঠেছিল বিশ্বের নিপীড়িতজনের স্বপ্নের দেশ, এ-জšে§র তীর্থভূমি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব চেতনা অর্জন করেছিল বিশ্বব্যাপী প্রসারতা।

সম্পত্তির ওপর ব্যক্তিগত অধিকার বিলোপ করে পরিকল্পিতভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজনির্মাণ প্রয়াস যখন পদানত নিপীড়িত মানুষদের উদ্বেলিত করছিল, পাশাপাশি ১৯২৯ সালে পশ্চিমা অর্থনীতিতে নেমে এসেছিল বিশাল ধস এবং অর্থনৈতিক মন্দার শিকার মানুষজন সমাজতন্ত্রের প্রতি নতুনভাবে আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিনের শাসন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু রূপ নিয়েছিল ১৯৩৪ সালে, লেনিনগ্রাদের পার্টি প্রধান কিরভ আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার সূত্র ধরে। কিন্তু লৌহবেড়াজালের অন্তরালের নিয়ন্ত্রিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সব খবর তো বাইরের দুনিয়ার পক্ষে জানার উপায় বিশেষ ছিল না, যেটুকু জানা যাচ্ছিল তা গোড়াতে অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, অথবা হলেও সেটা মেনে নিয়েছিলেন বৃহত্তর জনস্বার্থ-বিবেচনা থেকে। এই পটভূমিকায় ১৯৩০ সালে ভারতে রাজনীতি আবার উত্তাল হয়ে ওঠে মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলন ও নতুন করে সূচিত সত্যাগ্রহ ঘিরে। উপনিবেশবাদ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে যে অবসাদ নেমে এসেছিল তা কাটিয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে সমবেত করবার উপায় হিসেবে গান্ধী লবণের ওপর কর-আরোপের প্রতিবাদে প্রতীকী আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। সবরমতী আশ্রম থেকে ৬৮ জন সহযোগী নিয়ে তিনি পায়ে হেঁটে রওয়ানা হলেন ডান্ডির পথে, সেখানে সমুদ্র তীরে এক মুঠো লবণ হাতে তুলে প্রতিবাদ করবেন অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে, শান্তিপূর্ণভাবে, অসহযোগ করে। একই সময়ে চট্টগ্রামে একদল তরুণ স্কুল মাস্টার সূর্যকুমার সেনের নেতৃত্বে গোপন আরেক বিপ্লবী অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। প্রচণ্ড এক আঘাত হেনে দেশবাসীকে জাগাতে হবে, এমন এক চিন্তা থেকে ইতিপূর্বে পাঞ্জাবে ভগৎ সি-এর নেতৃত্বে তরুণ বিপ্লবীরা গঠন করেছিল হিন্দুস্থান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি এবং পাঞ্জাব বিধানসভায় বোমা হামলা করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরিণামে ভগৎ সিং-কে ফাঁসিতে জীবন দিতে হয়, কিন্তু এই আত্মদানের মধ্য দিয়ে তিনি অমর হয়ে আছেন প্রাণোৎসর্গকারী শহিদ হিসেবে। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা আরেক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূল পুলিশের অস্ত্রাগার আক্রমণ ও দখল করে, স্বল্পদিনের জন্য হলেও তাঁরা চট্টগ্রামকে মুক্ত ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেন, উত্তোলন করেন স্বাধীনতার পতাকা, এবং নবগঠিত এক ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির পক্ষে সর্বাধিনায়ক সূর্য সেন পাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা। সেই ঘোষণায় ব্যক্ত হয় :

ভারতবর্ষের জনসাধারণই ভারতের প্রকৃত অধিবাসী। ভারতের ভাগ্য নির্ধারণের মূল দায়িত্ব ভারতীয় জনগণের উপর। একটি বিদেশি সরকার ও বিদেশীয়দের দ্বারা জনসাধারণের সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলিবে না। আজ ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক বাহিনী অস্ত্রের মুখে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বিশ্বের কাছে ঘোষণা করিতেছে এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেস যে ভারতের স্বাধীনতার সংকল্প ঘোষণা করিয়াছে, তাহাকে বাস্তবে এইরূপে রূপায়িত করা হইবে।৭

চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের এই ঘোষণাকে বলা যায় নাগরিক অধিকারের সনদ বা সিটিজেনস ডিক্লারেশন, চার্টার হয়তো-বা তা নয়। পরাধীন ভারতে মুক্তির স্বপ্নে উদ্বেলিত তরুণদের জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য করা এ অভূতপূর্ব সশস্ত্র অভ্যুত্থান যে আয়ারল্যান্ডের মুক্তিসংগ্রামীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল তা আমরা জানি। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী আদর্শের প্রবেশ ও অধিষ্ঠান ভারতে তখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। বিচ্ছিন্নভাবে চলছিল সাম্যের আদর্শ বরণের চেষ্টা এবং এর কোনও সংহতি বা জোরদার উদ্যোগ তখনও দেখা যায় নি। ১৯২৯ সালের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সাম্যবাদী দল গঠনের প্রয়াসকে আরও বিলম্বিত করেছিল। এহেন পটভূমিকায় ঘটে চট্টগ্রামের বিপ্লবী অভ্যুত্থান, যার প্রভাব এত বিপুল হয়েছিল যে ঢাকার আত্মনিবেদিত কমিউনিস্ট নেতা জ্ঞান চক্রবর্তী, যদিও তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের অভিহিত করেছিলেন সন্ত্রাসবাদী হিসেবে, কিন্তু তাঁদের প্রতি সশ্রদ্ধভাবে লিখেছেন :

১৯৩০-৩৪ সাল, এই চার বছর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন অত্যন্ত প্রসার লাভ করে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০) হইতে শুরু করিয়া দার্জিলিং-এ লাটসাহেবকে লক্ষ্য করিয়া গুলি ছোঁড়া (১৯৩৪) পর্যন্ত কাজগুলির ভিতর দিয়া বাংলার যুবক বিপ্লবীরা যে অসাধারণ সাহস ও সাংগঠনিক কৃতিত্বের পরিচয় দেন, পদ্ধতির দিক দিয়া ভুল হইলেও তাহা যে-কোনো দেশের পক্ষে গৌরবের বিষয় হইতে পারে। এই কয় বৎসর ছিল সারা ভারতে এক বিপ্লবী অভ্যুত্থানের যুগ। সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ও কংগ্রেসী আন্দোলনের ভিতর দিয়া জনসাধারণের বিপ্লবী বিক্ষোভ ফাটিয়া পড়ে।৮

চট্টগ্রামের বিপ্লবী অভ্যুত্থানের কর্মের দিকটি সাধারণত আলোচনায় প্রাধান্য পায়, সেই কর্মযজ্ঞ ছিল অনেক তরুণের পরম আত্মদানে মণ্ডিত, কিন্তু ‘বিপ্লব’ ধারণায়, বিশেষভাবে সশস্ত্র বিপ্লব বিষয়ে প্রচলিত চিন্তায় এর অবদানের দিকটি প্রায়শ অনুল্লেখিত থাকে। ১৯০৫-১৯১৮ নাগাদ অনুশীলন-যুগান্তর পর্ব পেরিয়ে চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ এক নতুন বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি মেলে ধরেছিল। এর কতক প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নোক্তভাবে শনাক্ত করা যায়। প্রথমত, চট্টগ্রামের বিপ্লবী আয়োজন ধর্মীয় উৎস থেকে প্রেরণা গ্রহণে, অন্তত সাংগঠনিকভাবে, সম্পূর্ণ বিরত ছিল। ১৯১৪ সালে, নরেন ভট্টাচার্য, পরবর্তীকালের সাম্যবাদী বিপ্লবী এম. এন. রায়, যখন ‘মায়ের ডাক’ শীর্ষক প্রচারপত্র প্রণয়ন করেন তখন তিনি লেখেন:

আমাদের ধমনীতে আর্যরক্ত প্রবাহিত: দীন আমরা হইতে পারি, কিন্তু হীন কদাচ নই। আর্যদের কীর্তি স্মরণ করো: কান পাতিয়া শোনো দিগন্ত ব্যাপিয়া রব উঠিতেছে উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্যচরান্নিবোধত।৯

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের যে-সব ঘোষণা, বিবৃতি ও রচনা, সূর্য সেন প্রণীত ‘বিজয়া’, প্রীতিলতার ‘বিদায়বাণী’ ইত্যাদি পাওয়া যায়, সেখানে ধর্মীয় অনুষঙ্গ বিশেষ নেই। বরং প্রজাতান্ত্রিক বাহিনীর নামে প্রচারিত বিভিন্ন ঘোষণায় যেমন প্রকাশ পেয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, তেমনি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় কর্তব্যের কথা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, ‘তারা ত্রিশ কোটি জনসাধারণকে তাদের হিংস্র শোষণ নীতি দ্বারা নিপীড়িত করিয়াছে, তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সামান্যতম উšে§ষকেও নির্মূল করিতে এবং জাতি হিসাবে তাহাদের বৈশিষ্ট্য যাহাতে স্বীকৃত না হয় তাহার চেষ্টা করিয়াছে।’ আপন কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক বাহিনীর এই শাখা, জনসাধারণের নিকট পূর্ণ আনুগত্য ঘোষণা করিতেছে এবং এই আশা প্রকাশ করিতেছে যে, কর্তব্যে অবহেলা, কাপুরুষতা বা অমানুষিকতা দ্বারা কখনও জাতীয় মর্যাদা ও সম্মানের অবমাননা কেহ করিবেন  না।’১০

মাস্টারদার নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা আরও দুটি প্রভাবসম্পন্ন কাজ করেছিলেন। তার একটি তত বেশি প্রচার পায়নি, সেটি বিপ্লবী দলের সঙ্গে মুসলিম সমাজের নিবিড় সম্পৃক্তি গড়ে তোলা এবং দ্বিতীয়টি গোপন  বিপ্লবী দলে নারীদের সম্পৃক্তি, অংশগ্রহণে যা নারী সম্পর্কে পুরুষশাসিত সমাজের ধারণা একেবারে টলিয়ে দিয়েছিল। এই পর্ব ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মদান ও কল্পনা দত্তের সাহসিক ভূমিকার জন্য। সব মিলিয়ে বলা যায়, ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন ঔপনিবেশিক দেশে জাতীয় মুক্তির যে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালিত হয় এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন অর্জন করে, মুক্তিসংগ্রামে সেই ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি গঠনের পথিকৃৎ ছিল চট্টগ্রামের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি। তবে স্মরণে রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একান্ত বৈরী সময়ে তারা নিয়েছিলেন এই বিপ্লবী পদক্ষেপ, করো অথবা মরো নয়, তাঁদের পণ ছিল ডু অ্যান্ড ডাই, তারা সেই কর্তব্য সম্পাদন করেছিলেন এবং আলিঙ্গন করেছিলেন অবধারিত মৃত্যুকে।

তিন.

চল্লিশের দশকের গোড়ায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ বিকাশ লাভ করে। অনেক বাধা-বিপত্তি উজিয়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা শ্রমিক-কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন এবং জাতীয় আন্দোলনে নতুন উপাদান যুক্ত করেন। স্বদেশী যুগের সশস্ত্র বিপ্লবীদের কাছে কমিউনিস্ট মতাদর্শ বিশেষ আকর্ষণীয় বোধ হয়েছিল। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের বড় অংশ কারাগারে থেকে মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মুক্তির পর কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিবৃদ্ধি করেন। স্বদেশী সংগ্রামীদের বিপুলভাবে মার্কসবাদ বরণের ফলে ত্যাগী সদস্যদের অবদানে কমিউনিস্ট পার্টি জোরদার সংগঠনে পরিণত হয়।  মার্কসবাদী বিপ্লবী তত্ত্ব, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতা দ্বারা যা সমর্থিত, তাই ক্রমে হয়ে ওঠে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রধান বিপ্লবী ধারা। এই বিপ্লবচিন্তার সঙ্গে জাতীয় বাস্তবতার বড় ধরনের সংঘাত দেখা দেয় ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় যখন সোভিয়েত পার্টির অভিপ্রায় অনুযায়ী ‘জনযুদ্ধ’ নীতি গ্রহণ করে ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সহায়তার পদক্ষেপ গ্রহণ করে কমিউনিস্টরা। এমনি সংঘাত বারবারই দেখা দিয়েছে দেশীয় বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিকতাবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবী মতাদর্শের মধ্যে। উদাহরণত উল্লেখ করা যায় সুভাষ বসুর ‘আজাদ হিন্দ্ ফৌজের’ প্রসঙ্গ এবং ১৯৪৯ সালে বি.টি. রণদীভের নীতি অনুসারে পার্টির সশস্ত্র বিপ্লব ঘটাবার প্রয়াস।

স্মরণ করা দরকার, এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট শাসনের শক্তিময়তা দেশের অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্র-বিষয়ক বহু মতধারার অবস্থান ক্রমশ সঙ্কুচিত করে ফেলছিল। একক দেশে সমাজতন্ত্র নির্মাণ বিষয়ে বহু ধরনের তাত্ত্বিক আলোচনা ও ভিন্ন পথানুসন্ধানের অবকাশ বিশেষ রইল না। এরিক হবসবাম লিখেছিলেন,

So, in the generation after 1917, Bolshevism absorbed all other social-revolutionary traditions, or pushed them on the margin of radical movements. Before 1914 anarchism had been far more of a driving ideology of revolutionary activists than Marxism over large part of the world. By the 1930’s anarchism had ceased to exist as a significant political force outside Spain, even in Latin America, where the black-and-red had traditionally inspired more militants than the red flag.

In short, to be a social revolutionary increasingly meant to be a follower of Lenin and the October revolution and increasingly a member or supporter of some Moscow-aligned Communist Party.

এই একই ঘরানার চিন্তা ঔপনিবেশিক ভারতেও দেখা যায়, যেখানে পার্টি-অনুমোদিত অথবা প্রশ্রয়প্রাপ্ত সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ব্যতীত অন্য দৃষ্টিভঙ্গির অস্বীকৃতি অথবা প্রান্তিকীকরণ ঘটে। এ-ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজবিকাশের স্বাদেশিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাবার প্রয়াস। যাঁরা এই চেষ্টা করেছেন তাঁদের চিন্তাকে নানাভাবে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে, চিন্তার সংঘাত পরিহার করে বিভিন্ন তকমা দিয়ে চিহ্নিত করে তাঁদের হেয় করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। মৌলিক চিন্তার গুরুত্ব অস্বীকার করবার শিকার হয়ে আছেন সমাজবিশ্লেষক অধ্যাপক বিনয় সরকার, বাংলায় মার্কসবাদী ও সমাজতাত্ত্বিক সাহিত্যের যিনি প্রথম অনুবাদক, অনেক ক্ষেত্রে অনুবাদ করেছেন মূল জার্মান থেকে, কিন্তু সমাজতন্ত্রী দার্শনিক হিসেবে তাঁর বিশেষ কল্কে মেলেনি। তিনি বলেছিলেন,

মার্কস-সাহিত্যের দুটো বড় বড় ক্লাসিক বই আমি বাংলায় তর্জমা করেছি। বোধহয়। এজন্য আমাকে লিখিয়ে- পড়িয়ে লোকেরা মার্কস-পন্থীরূপে বিবৃত করে। কিন্তু মার্কসের কয়েকটা মোটা-মোটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি সর্বদাই বকাবকি করে থাকি আর কলম চালিয়েছিও। মার্কস-প্রবর্তিত অর্থনৈতিক অদ্বৈতবাদের আমি কট্টর বিরোধী। মানুষের জীবনে, সভ্যতায় ও সংস্কৃতিতে অর্থকথা অন্যতম শক্তি বটে, কিন্তু একমাত্র শক্তি নয়। এই হলো আমার কথা।১২

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় ঢাকার অনিল রায়ের কথা, লীলা রায়ের জীবনসঙ্গী এই চিন্তাশীল বিপ্লবী ছিলেন বেঙ্গল ভলন্টিয়ার্স-এর প্রাণপুরুষ এবং পরে যোগ দেন নেতাজি সুভাষ বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকে। তাঁর সম্পর্কে সহকর্মী বিনয় কুমার নাগের মূল্যায়ন:

১৯৩৮-এর আগস্টে মুক্তি পাওয়ার পর নিরলস সাধনার মধ্য দিয়ে ডায়ালেকটিক যান্ত্রিকতার মার্কসীয় কারাগার থেকে মানুষের মনকে মুক্ত করে জীবনদর্শনের ক্ষেত্রে বস্তুসত্তা ও প্রাণসত্তার ঊর্ধ্বে reality-র চূড়ান্তরূপ নির্ণয়ে তিনি যেমন অদ্বৈত সত্তার প্রসঙ্গ অবতারণা করেন, তেমনি সমাজপরিবর্তনের ক্ষেত্রে কেবল অর্থনৈতিক বা জড়শক্তির নয়, বহুশক্তির (Plural Forces) প্রয়োগ সম্পর্কেও সকলকে অবহিত করেন।১৩

বাংলায় সমাজতান্ত্রিক ভাবনার কোনও পরিচয় গ্রহণকালে এখনও পার্টি-বৃত্তের বাইরে বিভিন্ন প্রবণতা সচরাচর বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এই দুর্বলতা ঐতিহাসিকভাবে সৃষ্ট হয়েছে এবং আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সাহিত্য ও দর্শনের দিকে নতুনভাবে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। অভিজ্ঞতার বিশ্বজনীনতার সঙ্গে চিন্তার স্বাদেশিকীকরণ এখন নতুন দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় ধস নেমে আসার অর্থ এই নয় যে, সমাজতান্ত্রিক চিন্তার অসাড়তা প্রমাণিত হয়েছে অথবা সাম্যের সমাজনির্মাণ প্রক্রিয়া তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। বরং বিপ্লবচিন্তা তথা মুক্তির পথে সমাজের রূপান্তর আজকের বাস্তবতায় অর্জন করেছে নতুন প্রাসঙ্গিকতা। এই বাস্তবতা বিচারকালে আমরা স্মরণ করতে পারি বিনয় সরকারের উক্তি। ১৯০৫ সালের বঙ্গবিপ্লবের ব্যাখ্যাকালে তিনি বিপ্লবের সংজ্ঞা প্রদান করেছিলেন নিমোক্তভাবে:

নয়া অবস্থার সৃষ্টি অথবা অবস্থা-পরিবর্তন হচ্ছে বিপ্লবের প্রাণ। বিপ্লবের কয়েকটা প্রধান পরিবর্তন আকারে, বহরে, পরিমাণে যথেষ্ট ভারী বা পুরু হওয়া চাই। তৃতীয়ত, পরিবর্তনগুলো বহুসংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজের ফলে সাধিত হওয়া চাই। আর চতুর্থত, পরিবর্তনগুলো সোজা দৃষ্টিতে যেন খানিকটা আকস্মিক বা হঠাৎ সাধিত হলো, এইরূপ ধারণা হওয়া চাই।১৪

বিনয় সরকারের চিন্তার আলোকে অতীত পর্যালোচনা করলে আমরা বিপ্লবী পরিবর্তনসমূহ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব, সেখানে আরও অনেক নায়কের দেখা পাব এবং আশাবাদী হতে পারব ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। বর্তমান ভোগবাদী পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিশ্বব্যাপী সর্বগ্রাসী থাবার কবল থেকে মানবতার পুনরুদ্ধারের জন্য যে বিপ্লব একান্ত প্রয়োজন সেই বিপ্লবের প্রত্যাশায় থাকা কেবল নয়, তেমনি পরিবর্তন সংঘটনেও বহু মানুষের সম্পৃক্তি এবং বহু মতের সম্মিলন ও সহাবস্থান নিশ্চয়ই আমরা দেখতে পাব।

শতাব্দীব্যাপী বিপ্লবী অভিযাত্রা পর্যালোচনার উপান্তে এসে আমরা স্মরণ করতে পারি স্বীয় আত্মজীবনীর পরিসমাপ্তিতে এরিক হবসবামের উক্তি। তিনি বেঁচেছিলেন দীর্ঘ বছর এবং জীবন সায়াহ্নে আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন:

Living for over eighty years of the twentieth century has been a natural lesson in the mutability of political power, empires and institutions. I have seen the total disappearance of the European colonial empires, not least the greatest of all, the British Empire, never larger and more powerful than in my childhood, when it pioneered the strategy of keeping order in places like Kurdistan and Afghanistan by arial bombardment. I have seen great world powers relegated to the minion divisions, the end of a German Empire that expected to rule for a thousand years and of a revolutionary power that expected to last for ever. I am unlikely to see the end of ‘American Century’, but it is a safe bet that some readers of this book will.”১৫

এরিক হবসবামের এমনি আশাবাদের সঙ্গে একমত না হয়ে পারা যায় না। তবে সেই সঙ্গে তাঁর গ্রন্থের পরিসমাপ্তির বক্তব্যও স্মরণ করতে হয়, আশাবাদের পাশাপাশি কর্তব্যের কথা উচ্চারণ করে তিনি লিখেছিলেন: Still, let us not disarm, even in unsatisfactory times. Social injustice still needs to be denounced and fought. The world will not get better on its own.

পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদের উক্তির পাশাপাশি আমাদের তো মনে পড়বে প্রাচ্যের ঋষি-কবির পঙ্ক্তি: ‘মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে,/ দিক-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা―/ তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর/ এখনি, অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা।’

এই তো মানবের মুক্তিসাধনা, যা শতক-ব্যাপী বিপ্লবী আন্দোলনের পতন-অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়েও অব্যাহত রেখেছে যাত্রা, নতুন সময়ে, নতুন ধারায়, অতীত থেকে প্রেরণা ও প্রত্যয় আহরণ করে, যে-প্রত্যয়ের অনিঃশেষ জোগানদাতা বাস্তব জীবন এবং সেই জীবনের বঞ্চনা ও দ্বন্দ্ব, বৈষম্য ও পীড়ন। অমানবিক সমাজবাস্তবতা পরিবর্তন করে মানবিক অধিকারসম্পন্ন মুক্ত স্বাধীন এবং সমতা ও সম্প্রীতিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যেমন মানুষের সহজাত, তেমনি স্বাভাবিক পীড়নমূলক বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য আকুতি ও সক্রিয়তা। কোন পথে মুক্তি সেটা হয়তো সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত হয়ে উঠবে না, কিন্তু মুক্তিপথের সন্ধান নিশ্চিতভাবে ধারণ করে সর্বজনীন বাসনা।

একবিংশ শতক নতুন বাস্তবতায় নতুন আলোকে বিপ্লব-ধারণার রূপান্তর ঘটাবে, সেই আস্থায় অবিচল থাকার অনেক কারণ তাই রয়েছে।

তথ্যসূত্র :

১.            দ্রষ্টব্য: বিশ শতকের বিপ্লবী পরিবর্তন বিষয়ে এরিক হবসবাম রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ: ক. Age of Extremes―The Short Twentieth Century, Viking-Peguin Books India, 1995, L. On the Edge of the New Century, The New Press, New York, 2000, M. Interesting Time- A Twentieth Century Life, Abacus, UK, 2002, N. Revolutionaries, Abacus, UK, 1999 Ges O. How To Change the World–Tales of Marx and Marxism, Abacus, UK, 2011.

২.           যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়―বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি, অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্স, কলকাতা: নিউ দিল্লি, ১৯৮৩

৩.          হরিদাস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ সম্পাদিত―বিনয় সরকারের বৈঠকে, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০০, পৃ. ১৯৯

৪.           পূরবী সেন ও বিনোদবিহারী দাস, বিপ্লবী প্রফুল্লকুমার সেনের জীবনালেখ্য ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু নথিপত্র, রিডার্স সার্ভিস, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ৩৩

৫.           দ্রষ্টব্য: Asok Kumar Ray, Party of Firebrand Revolutionaries, The Dacca Anushilan Samity―India, 1999

৬.          হীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সম্পাদক, বঙ্গভঙ্গে জিজ্ঞাসা ও জনমতÑ ভাণ্ডার সংকলন, নেতাজি ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ, কলকাতা ২০১২, পৃ. ৫৮-৬১

৭.           পূর্ণেন্দু দস্তিদার―স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৯, পৃ. ৯১

৮.          জ্ঞান চক্রবর্তী―ঢাকা জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অতীত যুগ, জাতীয় সহিত্য প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ১৫

৯.           সমরেন রায়―অশান্ত ব্রাহ্মণ, মানেবন্দ্রনাথ ও অগ্নিযুগ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৮৫, পৃ. ১৩২

১০.         পূর্ণেন্দু দস্তিদার―প্রাগুক্ত পৃ. ৯১-৯২

১১.         Eric Hobsbawm―Age of Extremes : The Short Twentieth Century, Viking, India, 1995, p.74

১২.         হরিদাস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ―বিনয় সরকারের বৈঠকে, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮০

১৩.        অজয় রায় প্রমুখ সম্পাদিত―লীলা নাগ: শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাহিত্য প্রকাশ, ২০০২, পৃ. ৩৭

১৪.         প্রাগুক্ত―পৃ. ২০০

১৫.        Eric Hobsbawm―Interesting Times : A Twentieth Century Life, Abacus, UK, 2002, p.-4.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button