ক্রোড়পত্র : বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনটি বই
স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা। ৬ দফার প্রণেতা। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। যাঁর বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে বুলেটের সামনে বুক পেতেছে দেশের মানষ। বাংলার মাটি ও মানুষ যাঁর অস্তিত্বের অভিজ্ঞান। সেই বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হওয়ার মতো কঠিন কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন আশফাকুজ্জামান।
আশফাকুজ্জামানের বঙ্গবন্ধু বাংলার জোছনা ও রোদ্দুর গবেষণাগ্রন্থের প্রবেশ ছোট শিশুর আধো কথার মতো মিষ্টি। ছেলেবেলার ছড়ার মতো বর্ণনা। ‘তিনি থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে, যত দিন সূর্য উঠবে পূর্ব দিকে, নোনাজলে উত্তাল হবে সাগর, নীলগগনে জ্বলবে তারা, মৌসুমি হাওয়ায় থাকবে মেঘের ভেলা, ততদিন থাকবেন তিনি কবির কবিতায়, শিল্পীর ক্যানভাসে, লেখকের ভাষায়, স্থপতির ভাস্কর্যে, গায়কের কণ্ঠে আর ইতিহাসের পাতায়।’
নিকানো পথের মতো আমাকে টেনেছে গ্রন্থের অভ্যন্তরে। গ্রন্থটি ১১টি পর্ব এবং ১১১টি অনুপর্বে বিভাজিত। কিন্তু লেখকের অপূর্ব উপস্থাপন শৈলিতে বইটি যেন একটি অখণ্ড কবিতা হয়ে উঠেছে। যার তুলনা দিঘির জলে ঠিকরে পড়া আলো। নীল সরোবরে পদ্ম।
আশফাকুজ্জামান তাঁর লেখায় বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রত্যেক ঘটনা সহজ করে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মৌল উপজীব্য বঙ্গবন্ধু। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো এমনভাবে সাজিয়েছেন, যেন ইতিহাসের তথ্য অবিকৃত থাকে। আবার তথ্যে গ্রন্থটি ভারাক্রান্ত না হয়। ইতিহাসের খুব কাছে থেকে তিনি ঘটনাগুলো নিয়েছেন। যথার্থ ঐতিহাসিক রস সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন। এখানেই লেখকের শতভাগ সাফল্য।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু অনিবার্য। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর সময় থেকে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত হয়েছে বিশাল সাহিত্যসম্ভার ও গবেষণা। আশফাকুজ্জামান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সচেতন দেশপ্রেমিক। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলার জোছনা ও রোদ্দুর গ্রন্থটি তাঁর এমন একটি অনন্য রচনা।
এখানে যেমন আছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর ও পারিবারিক জীবন, তেমনি আছে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ সংগ্রাম। আছে জেলজীবনের দুঃসহ পীড়ন ও যন্ত্রণার কথা। বাংলাদেশ সৃষ্টির পটভূমি ও বিস্তার। বাংলাদেশ নিয়ে গভীর যড়যন্ত্র, এবং ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় যারা আলোর পথে ছিলেন গ্রন্থে তাঁদের কথাও এসেছে। টুঙ্গিপাড়ার এক গাঁয়ের খোকা থেকে তিনি হয়েছেন মুজিব ভাই, শেখ সাহেব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা। আবার ছাত্রনেতা থেকে স্বাধিকার আন্দোলন বইয়ে বাদ পড়েনি প্রায় কিছুই।
এ ছাড়াও বইটিতে আছে অভিভক্ত বাংলায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, দেশভাগ, দেশভাগের পর পূর্ববাংলায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামে ভাষা আন্দোলন, পঞ্চাশের দশকে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও ষড়যন্ত্র, পাকিস্তানে নয় মাস দুর্বিসহ বন্দি জীবন, পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি ও ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরা ইত্যাদি। অনেকের লেখা থেকে এ বিষয়গুলো পাওয়া যায়। কিন্তু আশফাকুজ্জামানের ন্যারেটিভ একেবারে অন্যরকম। তাঁর নান্দনিক উপস্থাপন সবাইকে মুগ্ধ করবে বলে মনে হয়। এছাড়া এ বইয়ের প্রতি পর্বের শিরোনামই আকর্ষণীয়। শিরোনামগুলো দেখলেই পড়তে ইচ্ছে করে। যেমন ‘সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো-রাতগুলো’ নামে একটি পর্ব আছে। এ পর্বের উপশিরোনাম হলো, ‘লারকানায় বুনোহাঁস শিকার, পূর্ব বাংলায় বেলুচিস্তানের কসাই, হৃদয়ে জন্ম নিল বাংলাদেশের মানচিত্র, ভুট্টোর কাছে ছিল ষড়যন্ত্রের কলকাঠি, সবুজ-পিঙ্গল বর্ণের হেলিকপ্টার, সেই ফোন-কলটি আর আসেনি, গভর্নর হাউসটি ছিল ষড়যন্ত্র ও হেঁয়ালির নাট্যমঞ্চ, ভুট্টো বাঙালির রক্ত দেখতে চেয়েছিলেন, এই দুনিয়ায় আমাদের আর দেখা হবে না, করাচি পৌঁছে প্রতারণামূলক ভাষণ’। একাত্তরের মার্চের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক এই শিরোনামগুলো এনেছেন।
ভুট্টোর কীভাবে লারকানার জমিদারবাড়িতে বাংলাদেশে যুদ্ধের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কেন বেলুচিস্তানের কসাই টিক্কা খানকে বাংলায় আনা হলো। এই যুদ্ধের মূল ষড়যন্ত্রকারী ভুট্টো ২৫ মার্চ পাকিস্তানে ফিরে যাননি। তিনি হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ছিলেন। সেখান থেকে গভীর রাতের জানালা দিয়ে বাঙালির রক্ত, মৃত্যু ও আগুন দেখেছিলেন। আবার বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের দিন তাঁর মাথার ওপর দিয়ে উড়ছিল পিঙ্গলবর্ণের হেলিকপ্টার। ওদিকে কামান-বন্দুক নিয়ে প্রস্তুত ছিল সেনাবাহিনী। এমন নানা বিষয় এখান থেকে জানা যায়।
অপূর্ব লেখকের গদ্য বলার ধরন। যেমন তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর দুর্বিসহ জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন―‘এগার শ মাইল দূরের পাকিস্তান। লায়ালপুর জেল। তীব্র গরম। বৈদ্যুতিক পাখাহীন ছোট্ট কুঠরি। জীবনের অনুষঙ্গ চার দেয়াল। একটি বিছানা ও দেয়ালের উঁচুতে ছোট্ট একটি জানালা। জানালা দিয়ে শুধু আকাশের একখণ্ড ভাসমান দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিদিন সূর্য ওঠে। সূর্য ডোবে। নেমে আসে অন্ধকার। আপন অন্তহীন ভাবনার রাজ্যে ডুবে থাকেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জানেন না কোথায় আছেন। জানার দরকারও নেই। শুধু জানেন পশ্চিম পাকিস্তানে আছেন। কেবল অপেক্ষা সেই মুহূর্তের জন্য, যখন হঠাৎ খুলে যাবে সেলের দরজা। জল্লাদ এসে দাঁড়াবে সামনে…।’
গ্রন্থটির প্রত্যেক পর্বের শুরুতে খ্যাতিমান কবিদের কবিতার পঙ্ক্তি দিয়েছেন লেখক। এ পঙ্ক্তিগুলো যেন উক্ত পর্বের আলোচ্য বিষয়ের অনুশিষ্ট। সারা পর্ব ধরে চলেছে উক্ত অনুশিষ্ট বিশ্লেষণ। লেখকের এ ভাবনা অনন্য। তদুপরি দক্ষ জেলে যেমন পানিতে জাল ছড়িয়ে দেন আবার এক টানে গুছিয়ে ফেলেন, তেমনি লেখক তার কথাগুলোকে অনুপর্বে-অনুপর্বে ছড়িয়ে দিয়ে একটানে মধুর উপস্থাপনায় গুছিয়ে এনে আবার অন্যত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন। এভাবে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তার প্রায় সব কিছুর একটা প্রামাণ্য দালিলিক বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন।
আশফাকুজ্জামানের লেখায় শব্দ ব্যবহারে চটকদারিতা নেই। কচি পাতার মতো নরম শব্দ ব্যবহার করে ঝরঝর করে কথাগুলো বলে গেছেন। যেন আরব্য রজনীর হাজার গল্প―এক এক করে বলে গেছেন। কিন্তু শেষ হয়েও শেষ হয় না। তাই পরের রজনীতে আবার জড়ো হতে হয় শ্রোতা-পাঠককে। মা যেমন তার সন্তানকে তেতো ওষুধ খাওয়াতে ওষুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দেয়, লেখক তেমনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা তথ্য-উপাত্ত, সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাকে গল্পচ্ছলে বলে গেছেন নিরন্তর। সমস্ত অনুপর্ব যার সাক্ষী।
যতদূর জানি আশফাকুজ্জামান তাঁর জীবনের উন্মেষকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাবছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর মমত্ব, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দ্যোতনায় গ্রন্থটি মহাকাব্য হয়ে উঠেছে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা গবেষণা কোলাজ তৈরি করে চলেছেন বিশেষ মমত্বে ও যত্নে। তাই এ গ্রন্থটি লেখকের অস্তিত্বের অভিজ্ঞান। ডাহুক যেমন কণ্ঠ নিঃসৃত রক্তের উষ্ণ পরশে নতুন ডাহুক ফুটিয়ে তোলে, আশফাকুজ্জামানের এ গ্রন্থটিও তেমনি। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনপাঠ তাঁর লেখায় অনাবিল স্রোতধারার মতো অবাধ, নির্ঝরের মতো নির্মল, শ্যামল ক্ষেত্রের ওপর মুক্তাবর্ষী বর্ষার মতো অফুরন্ত। মহাকালের মতো অজস্র। তাঁর লেখায় বঙ্গবন্ধুর জীবনীর বিশেষ আকর্ষণ ও অনন্য আস্বাদ আছে―আছে অনির্বচনীয় আবেদন। মুক্তির অধরা আনন্দ আছে চরণে চরণে। শত শত আটপৌরে শব্দে লেখক গেঁথে গেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনগাথা। বঙ্গবন্ধু বাংলার জোছনা ও রোদ্দুর বইয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ভাবের গভীরতা, দেশ ও মানবের প্রতি মমত্ব এবং অনুভূতির তীক্ষèতা যেমন আছে, তেমনি পরাধীন জাতির শৃঙ্খলমুক্তির অভীপ্সা ও দেশজাতিকে ভালোবাসার পেলবতা উন্মোচিত। ফলে ইতিহাস খননে লেখকের নান্দনিক ঐশ্বর্য বিশেষ অভিধায় ভাস্বর। উপস্থাপনার স্বকীয়তায় ও স্বভাবে তিনি তুলেছেন তাঁর সব বোধ। আকাশ যেমন নীল হয়ে আকাশে ছড়িয়ে থাকে, তেমনি লেখকের অভিজ্ঞতা মনন চিন্তন জীবন্ত হয়ে ছড়িয়ে আছে গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে।
বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন অভিপ্সা, বৈদগ্ধ্য, উপলব্ধির বৈচিত্র্য, নান্দনিকতার নানা অনুষঙ্গ, জীবন সম্পর্কে সমর্থক সেন্টিমেন্ট, আত্মসন্ধান, মূল্যবোধ, নৈরাশ্য, একাকিত্ব, যন্ত্রণা, রক্তাক্ত মানস, টানাপোড়েন―সব মিলে তাঁর যে ঋদ্ধ জীবন ও সত্তা সেটা সন্ধানের সমগ্রতায় আশফাকুজ্জামান স্বতন্ত্র শিল্প অভিপ্রায়ে বিশিষ্ট।
বঙ্গবন্ধুর অনিকেত অস্তিত্বের সুতীব্র আর্তনাদ, আত্মদ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষরণের চিহ্ন এ গ্রন্থের শরীরে দীপ্যমান। লেখকের গবেষণার বীজমন্ত্র তার সমাজ সময় ও সমকালস্পর্শী জীবনাগ্রহে নিহিত― এখানেই আশফাকুজ্জামান শতভাগ স্বকীয়।
মূলত আশফাকুজ্জামান তাঁর এ গ্রন্থে দেখিয়েছেন―বঙ্গবন্ধুর Doing ও Sufferings স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তিভূমি নির্মাণ করেছে। তাঁর কীর্তি, সক্রিয়তা আমাদেরকে বিস্মিত করে। মানবপ্রীতি সহৃদয়তা বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বের অভিজ্ঞান। তাঁর মর্ম দেশপ্রেম, ধর্ম মানবতা। তাঁর চারিত্রিক ঐশ্বর্য বিচিত্র, বহুধা বিভাজিত। তাঁর চরিত্র বিদ্রোহের, প্রতিবাদের, ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের, আমৃত্যু দেশপ্রেমের―এরই মধ্যে বিস্ময়ের জাগরণ, অকুতোভয়, অনন্ত মুক্তিপিয়াসী, ব্যক্তিত্বে অভূতপূর্ব, সংঘাতের অভিঘাতে জর্জরিত, অথচ তির্যক।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ধৈর্য, সংগ্রামশীলতা গাঢ়তর বর্ণবৈভব দান করেছে। সকল ভার তাঁর স্কন্ধে। তিনি সকল ঐশ্বর্যের অধিকারী। নিরবধি সংগ্রাম ও অন্তহীন যন্ত্রণার মধ্যে তিনি জয় করেছেন বাঙালির প্রতিটি অধিকার। আশফাকুজ্জামান এক এক করে উন্মোচন করেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের রোজনামচা। বঙ্গবন্ধু জীবনমুখী। জীবন পলাতক নন। ন্যায়-সত্য ও সংগ্রামী লাল সুতার ঘন বুনুনিতে তাঁর চরিত্রের আদল বোনা।
বাংলার জনগণের ওপরে বঙ্গবন্ধু যেন পদ্মের মতো। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা থেকে লেখক বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণতা দিয়েছেন। আমার জানামতে―আশফাকুজ্জামানের এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পরিপূর্ণ মানবাত্মার ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত পরিচয় ফুটে উঠেছে। তাঁর অন্তর্লোকে যে সমুদ্রমন্থন চলেছে, তারই ওগরানো বিষ পান করে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন নীলকণ্ঠ।
দেশকালের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর পশ্চাতে ছিল ইতিহাসের বিস্তৃতি। বঙ্গবন্ধুর স্বরূপকে লেখক তুলে এনেছেন ইতিহাসের বৃহত্তর পটে। বেদনাবিধুর কারাগারে বসে তাঁর চোখে বারবার ভেসে উঠেছে সৌন্দর্যহীন মাতৃভূমি। ইতিহাস চেতনা তাঁকে অতীত থেকে ভবিষ্যৎমুখী করেছে। বাংলার শহিদদের রক্ত-শোক তাঁর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পাক শাসকের দুষ্কর্মকে তিনি দেখেছেন বাংলার মাঠে চরা শকুনের প্রতীকে। বাংলার শোষণ বঞ্চনা বঙ্গবন্ধুকে কঠিন জীবন জিজ্ঞাসার সম্মুখীন করেছে। অত্যাচারের জ্বালা ভুলতে সংগ্রামের সঙ্গে তাঁর গেরস্থালি। কারাকক্ষের সংকীর্ণতার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা তাঁর জীবনে একটি ঢেউয়ের পরে সৃষ্টি হয়েছে আর একটি ঢেউয়ের, এমনিভাবে তাঁর চরিত্র পেয়েছে বেগবানতা।
লেখক অনেক কথা একসঙ্গে বলতে চেয়েছেন―তাই কখনও কখনও ধারাবাহিকতার অভাব পরিলক্ষিত হলেও শেষ পর্যন্ত সবটাই বলতে সক্ষম হয়েছেন। বইটি শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার মাটিতে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ঘটনাবলি আরও আসতে পারত।
কেউ কেউ হয়তো আছেন যে নিজের একটি বই থাকুক এমন ভাবনা থেকে বই লেখেন। কোনও সন্দেহ নেই আশফাকুজ্জামন শতভাগ পাঠকের কথা ভেবে বইটি লিখেছেন। বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে বইটি চিরন্তন হয়ে থাকবে।
এতক্ষণ আমার আলোচনা মূলত গঙ্গাজলে গঙ্গাস্নান। অর্থাৎ আশফাকুজ্জামানের বঙ্গবন্ধু বাংলার জোছনা ও রোদ্দুর গ্রন্থটি পাঠ করে সৃষ্ট উপলব্ধি ও বোধের নির্যাস। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি―তাতে গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে কোনও অতিশয়োক্তি বা বিকৃতি নেই। ফলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক স্বর্ণময় ঐতিহাসিক দলিল হয়ে টিকে থাকবে চিরকাল।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক