আর্কাইভপ্রচ্ছদ রচনা

চমকপ্রদ সাক্ষাৎকারসমূহ এবং মহৎ শিল্প : এমদাদ রহমানের সৃষ্টিকল্প : দীপেন ভট্টাচার্য

প্রচ্ছদ রচনা : শব্দঘর নির্বাচিত সেরা বই ২০২৩―অনূদিত গ্রন্থ

সুহৃদ সাহিত্যবিদ এমদাদ রহমানের নৈঃশব্দ্যের সংলাপ শব্দঘর-এর বর্ষসেরা অনুবাদসাহিত্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বিশেষ আনন্দের সংবাদ। এমদাদ রহমান একজন আশ্চর্য মানুষ, বহু বছর ধরে, বহু ত্যাগের মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্যসেবায় ব্রতী থেকেছেন। তাঁর সাহিত্য আলোচনা ও বিশ্লেষণ আমাদেরকে কীভাবে সমৃদ্ধ করছে তার সাক্ষর গল্পপাঠ ওয়েবজিনের পাতায় রয়েছে। তাঁকে অভিনন্দন। অন্যদিকে বর্তমান বাংলা সাহিত্য নির্মাণে শব্দঘর পত্রিকা অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করছে, মানোত্তীর্ণ সাহিত্যকে বৃহত্তর পাঠক-সমাজের কাছে উপস্থাপন করতে এই পত্রিকাটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্ষসেরা অনুবাদটিও এর প্রমাণ। শব্দঘরকেও এর জন্য অভিবাদন।        

একটি সাক্ষাৎকার কি চমকপ্রদ হতে পারে ? গোয়েন্দা কাহিনির মতো ? যেখানে পাঠক পরবর্তী বাক্যটির জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবেন। ভাববেন, ‘বাহ, এটা তো জানা ছিল না! দেখি লেখক আর কী বলেন ?’ যখন ইতালো কালভিনো বলছেন, ‘…মেলভিল। তাঁর একটি উৎকৃষ্ট উপন্যাস, বেনিতো সেরেনো, এমনকি মবি ডিক-এর চেয়েও মূল্যবান,’ আমি ভাবি তা কি হতে পারে ? হেরমান মেলভিলকে চিনিই শুধু মবি ডিক দিয়ে। এই যে নতুন একটা জিনিস, নতুন একটা বইয়ের নাম যা কিনা মবি ডিক-কে টেক্কা দিতে পারে, এই সামান্য নতুন জ্ঞানটুকু একটা অপ্রত্যাশিত আলোকে আমাদেরকে উদ্ভাসিত করে। তারপর যখন পড়ি কালভিনো পছন্দ করেন সুইডেন ও জাপানের ছবি, তখন আপন মনে মাথা দোলাই, বলি, ‘বাহ! আমারও পছন্দ তো এরকম।’ এমদাদ রহমান-এর অনুবাদে কালভিনো বলছেন, ওই দেশগুলোর ছবিগুলো হলো নিস্পৃহ ও বহূদূরবর্তী। সত্যি, এই দুটি বিশেষণ যথার্থ অর্থে বহু জাপানি ও সুইডিশ ছবির আবহ বর্ণনা করে। আমি কালভিনোর সঙ্গে আরও একাত্মতা অনুভব করি। কাজুও ইশিগুরো যখন বলছেন লিওনার্ড কোহেন ও বব ডিলানের সংগীতের আবেশে তিনি গড়ে তুলতে চান তাঁর উপন্যাস, ভাবি এঁদের গানে আমিও সম্মোহিত, নিশ্চয়ই ইশিগুরোর সৃষ্টিতে আমি বিভোর হব। হোসে সারামাগো থেকে উমবের্তো একো যখন টমাস মানের ম্যাজিক মাউনটেন উপন্যাসটির অত্যাশ্চর্য প্রভাবের কথা বলেন তখন আমরা পরবর্তী পাঠের জন্য দিকনির্দেশনা পাই।    

কেন সাহিত্য ? অর্থাৎ বর্তমানের ডামাডোলে সাহিত্য পড়ে লাভই বা কী, আর পড়ার সময়টাই বা কোথায় ? আর সাহিত্য যদি তাও পড়া যায়, সাহিত্যস্রষ্টাদের সম্পর্কে জেনে আমাদের―যারা নিতান্তই পাঠক― তাদের কী লাভ ? এই প্রশ্নগুলো অপ্রাসঙ্গিক নয়। যাদের আগ্রহ গল্প, উপন্যাস, কবিতা নিয়ে, যারা কালো ছাপার অক্ষরের বাঁধুনিতে সম্মোহিত হতে চান তাঁদের কাছে এর উত্তর স্পষ্ট। সাহিত্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে। রূপক, উপমা, যোগাযোগ ইত্যাদি বুঝতে গিয়ে আমাদের যৌক্তিক চিন্তাশক্তি বাড়ায়। অন্য মানুষের, অন্য সংস্কৃতির প্রতি সংবেদী হতে শেখায়। কিন্তু এই উদ্দেশ্যগুলো মাথায় রেখে কেউ গল্প বা কবিতা পড়েন না, তবে যখন পড়েন তখন তিনি সম্মোহিত হতে চান। কারামাজাভ ভ্রাতৃসমূহ উপন্যাসে দস্তয়েভস্কি যে বিরাট মাকড়সার জাল বিস্তৃত করেছিলেন, তার ঘোরপ্যাঁচে পাঠক অসহায় পতঙ্গের মতো আটকা পড়েন, পঠনের মধ্যেই যেন সমাধিলাভ করেন। লেখকের জন্যও ব্যাপারটা এরকম। ইতালো কালভিনো বলছেন লেখার সময় তিনি হয়ে যান ঘোরগ্রস্ত, যেন সমাধিলাভ করেন। সফল কাহিনির অনুরণন এমনই, বাক্যের পরে বাক্যের গঠনে নির্মিত যে জাদুকরি প্রাসাদ তার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আমরা নিজেদের আমিত্ব হারিয়ে বিলীন হয়ে যাই। সফল চলচ্চিত্র আমাদের কিছুক্ষণের জন্য বিশ্বাস করাতে পারে যে পর্দায় যা দেখছি তা সত্য, কিন্তু সে বিশ্বাস চুরমার হয়ে যায় যদি মুহূর্তখানেকের জন্য আমরা স্মরণ করি পুরোটাই অভিনয়, বাস্তব নয়। কিন্তু অক্ষরের মধ্যে সেই দ্বন্দ্ব নেই। লেখক যা লিখবেন তাই বাস্তব, তা যতই কাল্পনিক হোক। হারুকি মুরাকামি-র এ ওয়াইন্ডআপ বার্ড ক্রনিক্যাল পড়তে পড়তে আমার এমনই সম্মোহন হয়েছিল, প্রতি রাতে স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন, আর দিনের বেলা একবার হ্যালুসিনেশন হয়েছিল। লেখক ও পাঠকের এই যুগপৎ যে সম্মোহন তার মধ্যেই রচিত হয় মহৎ কর্ম।

মহৎ সাহিত্যের এই সংজ্ঞায় অনেকেই তৃপ্ত হবেন না। অস্তিত্ববাদের এক শক্তিশালী প্রবক্তা আলবের কামু বলছেন, ‘শিল্প যখন সত্যকে ধারণ করে তখনই সে প্রকৃত হয়। হয়তো এই সত্য প্রকাশেই রয়েছে মহত্ত্ব।’ মানিক বন্দোপাধ্যায় ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে বলছেন, ‘তারপর ভেসে আসতো খালের ধারে, নদীর ধারে, বনের ধারে বসানো গ্রাম―চাষী, মাঝি, জেলে, তাঁতিদের পীড়িত ক্লিষ্ট মুখ। লেকের জনহীন স্তব্ধতা ধ্বনিত হতো ঝিঁঝির ডাকে, শেয়াল ডেকে পৃথিবীকে স্তব্ধতর করে দিতো, তারারা চোখ ঠারতো আকাশের হাজার ট্যারা চোখের মতো, কোনওদিন উঠতো চাঁদ। আর ওই মুখগুলো―মধ্যবিত্ত আর চাষাভূষো―ওই মুখগুলো আমার মধ্যে মুখর অনুভূতি হয়ে চেঁচাতো―ভাষা দাও―ভাষা দাও।’ এই ‘ভাষা দাও’-এর মধ্যে যে অকৃত্রিমতা আছে, যে সত্য রয়েছে, তা মানিকের সাহিত্যকে করেছে প্রকৃত, হয়তো মহৎ।

কামুর মতে সত্যকে প্রকাশ করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয়। তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, ‘অনড় সামাজিক বিধিগুলোকে উপহাস করার, হাস্যকর করে ফেলার মতো লেখাগুলো প্রচণ্ড হয়ে ওঠে, তখন লেখককে মুখ বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হয় কিংবা কারারুদ্ধ করা হয়, মনে করা হয় এভাবেই তাদের দমিয়ে দেওয়া যাবে।’ যুগে যুগে দেশে দেশে আমরা এর পুনরাবৃত্তি দেখেছি। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গের মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নে সাহিত্যে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে লেখকদের কারাবন্দি হতে হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ দিতে হয়েছে। অধুনা বাংলাদেশ বা ভারতেও এর অন্যথা হয়নি। এই প্রসঙ্গে পোলিশ-মার্কিন লেখক ইসাক বাশেভিস সিঙ্গার তাঁর সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘মানুষ যে মহত্তম জিনিসটি উপহার হিসেবে পেয়েছে তা হলো স্বাধীন ইচ্ছা, কিন্তু স্বাধীন ইচ্ছার ব্যবহারে আমরা সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ স্বাধীন ইচ্ছাই… জীবনকে অর্থহীন করার বদলে একটু হলেও মূল্য প্রদান করে, আমাদের বেঁচে থাকাটাও এই মূল্যের অন্তর্গত।’ মহৎ সাহিত্যসৃষ্টি বোধহয় এই স্বাধীন ইচ্ছার যথার্থ ব্যবহারের মধ্যেই নিহিত।

কিন্তু শুধুমাত্র সত্যকে অবলম্বন করে কি যুগোত্তীর্ণ সাহিত্য সৃষ্টি করা সম্ভব ? মহাবিশ্বের মাঝে মানুষের বিকাশে অজানাকে জানা যেমন অস্থিমজ্জায় প্রোথিত, তেমনই আর্ট সৃষ্টি করা আর আর্টকে উপভোগ করা তাঁর মনে নিমজ্জিত। সেই কবে ৫০,০০০ বছর আগে প্যালিওলিথিক যুগে গুহার আঁধারে মানুষ এঁকে গিয়েছে বুনো মহিষ আর ঘোড়া, তাদের আর্ট সৃষ্টির তাড়না সঞ্চালিত হয়েছে সময়কে অতিক্রম করে আমাদের মাঝে। এমদাদ রহমান-এর এই কাজটি সেই আদি তাড়নারই ফল। তবু সেটি খুবই ব্যক্তিগত একটি উদ্যোগ। অপার কৌতূহল, উদ্যম, মেধা, ও অধ্যবসায় ব্যতীত কাজটির সফলতা সম্ভব নয়। তাঁর ভাষান্তরের মধ্যে তিনি যেন ওপরের প্রশ্নটিই রেখেছেন―যাঁরা গল্প সৃষ্টি করেন কী তাড়নায় তাঁদের এই সৃষ্টি ? কী অনুপ্রেরণায় তাঁদের এই চালনা ? সেই চালনায় কি সৃষ্টি হচ্ছে কালোত্তীর্ণ কাহিনি ? মহৎ শিল্পসৃষ্টি সম্পর্কে কি তাঁদের কোনও বক্তব্য আছে ?

শুধুমাত্র সত্য―তা নারী-পুরুষ রোমান্টিকতা বা দ্বন্দ্বই হোক, দারিদ্র্যের বঞ্চনা কিংবা শ্রেণিসংগ্রামই হোক বা ব্যক্তিমানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মিথস্ক্রিয়াই হোক, বা জীবনের অ্যাবসার্ড দিকই হোক―শুধু সেটুকু দিয়ে মহৎ শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয় না। সেটুকু দিয়ে যা হয় তা হলো ডকুমেন্টারি শিল্প। সত্যকে মহৎ শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাঠামো দরকার। কালভিনো বলছেন, ‘বিশেষ সূক্ষ্মতা ও সুস্পষ্ট কাঠামো ছাড়া উপন্যাস অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে’, এই প্রসঙ্গে ইফ অন অ্যা উইন্টার্স নাইট অ্যা ট্র্যাভেলার উপন্যাসের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি, যে উপন্যাসের নির্মাণরীতি সত্যিই জটিল। তিনি এটাও বলেছেন নির্মাণরীতি লেখকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পাঠকের কাছে নয়, পাঠকের কাজ হলো বই পড়ে আনন্দ পাওয়া। 

আবার ফিরে আসি আমার পূর্বতন প্রশ্নে। বই পড়ে চমক লাগতে পারে, কিন্তু সাক্ষাৎকার পড়ার অনুপ্রেরণা কী ? এমদাদ রহমান সাহিত্যিক, নিজে গল্প লেখেন, তবু তিনি বছরের পর বছর শ্রমের একাগ্রতায় বিশ্বসাহিত্যের বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার অনুবাদ করলেন। তিনি এটা করেছেন, কারণ এই সাক্ষাৎকারগুলোর মধ্যে মুক্তো ছড়ানো আছে। যেমন ধরুন গুন্টার গ্রাস বলছেন, ‘লেখকের সঙ্গে আঁকার সম্পর্ক নিবিড়, লেখার সঙ্গে চিত্রকল্পের অনন্য যোগাযোগ।’ তাঁর কলকাতা নিয়ে বই শো ইয়োর টাং-এ (জিভ কাটো লজ্জায়) তিনি বলছেন, ‘ড্রয়িং ছাড়া কলকাতার জ্বলজ্যান্ত জীবনকে কোনওভাবেই বইয়ে আনতে পারতাম না। কলকাতার অকল্পনীয় দারিদ্র্য দর্শনার্থীকে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে যেখানে ভাষাও বোবা হয়ে পড়বে।’ এই একটি কথায় আমার বহু কিছু মনে পড়ল। বহু বিখ্যাত লেখক হাতের লেখার পাশে তাঁদের চরিত্রদের রূপ দিতে ছবি আঁকতেন। দস্তয়েভস্কি অপরাধ ও শাস্তি লিখতে গিয়ে রাস্কলনিকভকে এঁকেছেন, জেমস জয়েস এঁকেছেন ইউলিসিসের লিওপল্ড ব্লুম-এর কার্টুন, নবোকভ কাফকা-র মেটামরফসিস পড়ার সময় গ্রেগর সামসার কীটে পরিণত হবার ঘটনা তেলাপোকার মতো কিছু একটা এঁকে বুঝতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ এঁকেছেন আত্মপ্রতিকৃতি―মহাবিশ্বের মধ্যে জীবনদেবতার সন্ধানে, কবিতার লাইনে কাটাকুটি করে গড়ে তুলেছেন বিমূর্ত শিল্প। এই চিত্রকর সারিতে স্থান পেয়েছেন এডগার পো, কিপলিং, বোদলেয়ার, লোরকা, ফকনার। পাঠকের কাছে সেই চিত্রগুলো পৌঁছায়নি, তাই পাঠককে ছাপার অক্ষর থেকে কল্পনা করে নিতে হবে আন্না কারেনিনা কেমন দেখতে হবেন, কিংবা রক্তকরবীর নন্দিনী।

এরকম বহু মুক্তো ছড়ানো এমদাদ রহমান-এর এই বইটিতে। মারিও ভার্গাস ইয়োসা বলছেন, ‘আমি লিখি কারণ লেখা হচ্ছে নিরানন্দের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি পদ্ধতি।’ কোরিয়ার লেখক হান কাঙ গভীর প্রশ্ন করছেন। বলছেন, ‘আমার কাছে লেখা হচ্ছে জীবন কী, মৃত্যু কী, আমি কে, এই প্রশ্নগুলো করে যাওয়া।’ মনে পড়ল হাসান আজিজুল হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘গুছিয়ে যখন লিখতে যাই, তখন অতলের ভেতর থেকে অনেক জিনিস উঠে আসে।’ অতল থেকে যা উঠে আসে তার বিশ্বজনীন হবার, মহৎ হবার সম্ভাবনা প্রচুর। আবু সয়ীদ আইয়ুবকে নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধে শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘তিনি (আইয়ুব) বিশ্বাস করেন যে মহৎ শিল্পের অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে এক প্রগাঢ় বিষাদ মাখানো শান্তি এনে দিতে পারে, এনে দিতে পারে কাক্সক্ষণীয় পরিবর্তন। শিল্পরচনা ও শিল্প-আস্বাদনটাই তখন হয়ে ওঠে এক আধ্যাত্মিক সাধনা। …এসব সাহিত্য বা শিল্প কি আমাদের কাছে নিছক সুখদায়ক বা তৃপ্তিদায়ক হয়ে দেখা দেয় ? সেইজন্যই তার সাধনা ? সে কি আমাদের কোনও নীতিবোধে ভরিয়ে দেয় ? তা কিন্তু নয়। মহৎ শিল্প এনে দেয় পরম প্রশান্তি আর পরম বিষাদবোধের মধ্য দিয়ে প্রসারিত এক জীবনবোধ, বিশ্ব আর ব্যক্তিকে নিয়ে যে জীবন। জীবন-জগৎকে যেভাবে আমি দেখতাম আগে। মহৎ শিল্পে অভিজ্ঞতার পর তার থেকে একটু হয়তো ভিন্নভাবে দেখতে শিখি তাকে। …সেই শিল্পই হয়ে ওঠে মহৎ… যা আমাদের এভাবে পালটে দিতে পারে।’

এমদাদ রহমান-এর এই বিস্তারিত প্রয়াস সেই মহৎ শিল্পের খোঁজেই, যা কিনা আমাদেরকে অনেক কিছুই ভিন্নভাবে দেখতে শেখাবে। কালভিনো যেমন ইফ অন অ্যা উইন্টার্স নাইট অ্যা ট্র্যাভেলার শুরু করেছিলেন পাঠককে অন্য সমস্ত চিন্তা দূর করে তার বই পড়ার আহ্বানে, টেলিভিশন থেকে দূরে থেকে, হয়তো বসে বা শুয়ে, পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে, আমিও তেমনি বলব এমদাদ রহমান-এর এই কাজটি আরাম করে পড়ুন, একাগ্রচিত্ত হয়ে পড়ুন; নৈঃশব্দ্যের এই সংলাপে যে অজস্র মণিমুক্তো ছড়িয়ে আছে সেগুলোকে কুড়িয়ে নিতে সাক্ষাৎকারগুলো পড়ুন। হয়তো অনেক কিছুই অন্যভাবে দেখা দেবে।

 লেখক : কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button