আবিদ আনোয়ার
প্রকরণসিদ্ধ বাংলা হাইকু
১.
চৈতী ঢল :
হা-মুখ ফাটলেরা
খাচ্ছে জল
২.
কৃষ্ণ নন
বাঁশি কী বলে জানে
রাধার মন
৩.
চরাঞ্চল
নদীর কঙ্কাল
নিহত জল
৪.
ঝিনুক চলে
মুক্তো বুকে নিয়ে
আবিল জলে
৫.
তোমার মন
অজানা ভাণ্ডারে
গুপ্তধন
৬.
নষ্ট নীড়
নিপাট খড়কুটো
গহিনে চিড়
৭.
পলকহারা
আমাকে চেয়ে দেখে
সন্ধ্যাতারা
৮.
খাচ্ছি পাক
শুনছি সারাবেলা
নিশির ডাক
৯.
অন্ধ চোখ
বেড়ায় ঘুরে-ঘুরে
কল্পলোক
১০.
ছল-চাতুরি
প্রেমের ফাঁকে-ফাঁকে
প্রমিত চুরি
১১.
কোদালে মেঘ
পূর্ণ বিশ্রামে
বায়ুর বেগ
১২.
প্রেমের রীতি
শিখতে লাগে না তো
আফ্রোদিতি
১৩.
হা-মুখ ছানা:
মা-পাখি ভুলে যায়
নিজের খানা
১৪.
পরানপাখি
পালাতে উন্মুখ
বুঝিয়ে রাখি
১৫.
কল্পলোক
দেখার চশমাই
তৃতীয় চোখ
১৬.
গর্ভপাত
জন্ম না-নিতেই
মরণাঘাত
১৭.
সাবমেরিন
জলের সন্ত্রাসী
ধাতব মীন
১৮.
ধর্ষকামী
স্বভাবে আগ্রাসী
হোক সে স্বামী
১৯.
তৃপ্ত বুক
পর্ণকুটিরেই
স্বর্গসুখ
২০.
থামাও খাঁই
কাফনে কারও কোনও
পকেট নাই
===========================
নাসরীন নঈম
আমি বকুল
মধ্যরাতের শহর পচন সুতায় ঝুলছে
দিয়াবাড়ি যাব দুজনে হাত ধরে
ঘাসফড়িং হবো।
কোলকাতার দক্ষিণাপনে সিঁড়িতে বসে
রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনা পর্বের গানগুলো শুনবো
ফিরে এসে মাওয়া ঘাটে শর্ষে ইলিশ দিয়ে ভাত
মাখাবো মজা করে তারপর
বলধা গার্ডেনের নিরিবিলি আবহে পাশাপাশি
বসে আকাশ-পাতাল ভাববো আপন মনে।
উড়ে আসে ঝড়বাদলের লুপ্ত কথা
তাকিয়ে দেখি সম্মুখেই বাল্যকাল মোমের আলোর মতো নশ্বরতা।
কাকে যেন আকুল কামনা করেছিলাম একদিন
মনের ঘরে
আবছা মুখের জোয়ার ভাটা নাকি আমার চোখের ভুল।
তুমি কি বালক শুনতে পাচ্ছো তুমি ছিলে ভুল
আমি বকুল।
=====================================
সোহরাব পাশা
সন্ধের পাখিগুলি
মানুষের মুগ্ধতার গল্প খুব ছোট
রাত্রির চোখে নেই রংধনু বৃষ্টি
জ্যোৎস্নার টুকরো ছায়া তার মেঘময়
স্বপ্নকাল
ঘুমিয়ে পড়লে নিজের ছায়াও জেগে থাকে না
পাশে
নির্ভুল বোঝে না তো কেউ হৃৎপিণ্ডের মাতৃভাষা
ছোট ছোট ভুল গল্পে নিমগ্ন জীবন
সংশয়ের তীব্র কুয়াশায় ডেকে ওঠে প্রিয় মুখ
অন্যদের অন্ধকার বাড়ি
মনে সুবাস নেই বলেই নিয়ত মানুষ
গোলাপের কাছে যায়
বাসনার প্রিয় গোলাপ ফোটে অন্যদের
নিষিদ্ধ বাগানে
বেদনার কাঁটা রেখে হাতে
পাতাসুদ্ধ ঝরে যায় ;
ফুলেরা ধারণ করে না ভালোবাসার ঘ্রাণ
জন্মান্ধ ভালোবাসায় চোখ ফেরাতে পারে না
গন্ধবিভোর ব্যাকুল বিনয়ী মানুষ।
======================================
তমিজ উদ্দীন লোদী
মা মা গন্ধের জন্য
আমাদের বাড়িতে হাস্নাহেনা আর ছাতিমের গন্ধ যুগপৎ ভেসে বেড়াত
সন্ধ্যারাত্রিতে আমি ঘুমিয়ে পড়লেও এই ঘ্রাণ এসে ঘাঁই মারতো নাসারন্ধ্রে ও মস্তিষ্কে
মনে হতো স্বর্গ নেমে এসেছে আমার ঘরে, বিছানায়।
আর এসব ছাপিয়ে একটা মা মা গন্ধ ঘুরে বেড়াত আশেপাশে।
আমি টের পেতাম মা আছেন খুব কাছাকাছি নানা কাজের ছুঁতায় তিনি উঁকি মেরে যেতেন আমার দরজায়।
আমি হাসতাম আর ভাবতাম মায়ের যে কত ছল!
মা ভাবতেন এসব কিচ্ছুটিই টের পাচ্ছি না আমি
তাঁর স্নেহের বাৎসল্যের আঁচ এসে লাগতো গায়ে।
খুব শৈশবে বাবা গত হলে মা হলেন বাবা এবং মা
বাবার অভাব টের পেতে না পেতে মার্বেলের মতো গড়িয়ে গেলো শৈশব, দুরন্ত বালক বয়স
ফর্সা, সুন্দরী, গৌরবর্ণ মা ফুটে উঠতেন কলাপাতা শাড়ির ভেতর
সবুজ পাপড়ির ভেতর মা যেন শিশিরভেজা শাদা গোলাপ
মাদের কি যেতে হয়
মা আছেন, থাকবেন, চিরজীবী মানুষের মতো থাকবেন আশেপাশে
মা মা গন্ধের জন্য কেমন হাহাকার!
============================
সরকার মাসুদ
একজন হোমিও ডাক্তার ও তার পাখিগুচ্ছ
খাঁচার ভেতর কাটা বাঁশ, খড়, ফুটো করা হাঁড়ি
হোমিও ডাক্তার পাখিদের ঘর বানিয়ে রেখেছে
টুনিয়া-মুনিয়ারা সকালের দিকে খুব শব্দ করে
সারা দুপুর নাচানাচি করে―
বিকেল হতে না হতেই সব চুপচাপ!
আমি ওই পাখিদেরকে সকালবেলা দেখি
মুখোমুখি বসে হাসছে জোড়ায় জোড়ায়
গালে হাত রেখে বসে আছে বিকেলবেলা
দেখেছি কয়েক দিন পাখিরা তাদের চঞ্চল
চোখের জল মেয়েদের মতো
মুছলো গোপনে!
এক ফালি অস্তগামী আলো খাঁচার ওপর
পুকুরের জলে ভাসা মেঘের ছবি মনে আসে
ছোট পাখিদের অভিমান বড় দামি।
যারা ঝুঁটিমোরগের যুদ্ধ ভালোবাসে বনগ্রামে
চিল না ঈগল কে বেশি সুন্দর―
এই তর্কে যারা নামে, তারা এই পাখি ও তার
প্রতিপালকের সম্পর্ক বুঝবে না ।
তারা জানবে না অদৃশ্য ঝোপঝাড়ে
মুনিয়ারা ডানা ঝাপটালে কেন পৃথিবী
সুন্দর লাগে ; বৃষ্টি আসে ঝমঝম!
পাখিপালক ওই ডাক্তারকে আমি দেখিনি
তার ভারী চশমা পৃথিবীকে কতটা চিনেছে
তাও আমি জানি না ;
তবে জানি, পাখিপ্রেমী ওই লোক কোনো এক
সত্যকে চিনেছিল আমূল। আর তাই
সুনামী ডাক্তার তার রোগীদেরকে
প্রতিটি বড়ির সাথে মিশিয়ে দিতেন
ওই পোষা পাখিদের কলকাকলি!
একদিন সকালবেলা শুনি, ডাক্তার আর নেই!
আরেক দিন গলিপথে দাঁড়িয়ে
বিকেলবেলা দেখি , তার পাখিরা সবাই
চিত হয়ে মরে পড়ে আছে একসাথে!
================================
জুয়েল মাজহার
মিনোতার
(পিকাসোর অমর চিত্রকর্ম ‘লা মিনোতারমাশি’ অবলম্বনে)
অনেক গোলকধাঁধা পার হয়ে এল মিনোতার
নিজেরই খেয়ালে একা
আধা-মানবের বেশে, অর্ধ্ব-ষণ্ডরূপে
হয়তো সে জানে কিবা আদৌ জানে না
সে তার নিজেরই পিতা, সন্তান নিজের
নিজের ভেতরে বসে, নিরুপায়, সে ছড়ায় নিজ রক্তবীজ
সে নিজে রচনা করে অবিরাম রণ-আয়োজন;
অদ্ভুত বাসনা তার কামে ও হননে ঢেউ তোলে
২.
পুরাণের বাইরে এসে সে এখন আঁকছে নিজেকে
অণ্ড-শিশ্ন, শিং-জিভে, খর-খুরে, কঠিন চোয়ালে
আপাতত গন্তব্য গের্নিকা। তারপর আরও-আরও
হিংসামেঘ জমা হবে তার করোটিতে
মিনোতার সবখানে যাবে আর দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড বাধাবে
৩.
সে চেয়েছে সব তার হোক
দেবী ও মানবী তাকে যোনি ও জঘন মেলে দিক
সে চেয়েছে অণ্ড তার ব্রহ্মাণ্ড ভরিয়ে দিক অফুরন্ত বীজে!
এসবের ফেনা থেকে যাতে
জন্ম নেয় অর্বুদ-অর্বুদ কোটি সংহারের কীট
৪.
সদা ঘোর অগ্নিমদ, সদাই বারুদ
কুঁতকুঁতে চোখজোড়া রিরংসার অহিফেনে বুঁদ;
দোজখের দু-খানি দুয়ার তাতে হা-কপাট খোলা
৫.
ঘোঁৎ-ঘোঁৎ, ঘোঁৎ-ঘোঁৎ … গুঁতো ও কামড় তার ভাষা
অন্য কোনও ভাষা তার নাই
৬.
রতি-রক্ত হননের তীব্র সুখ না-পেলে সে একদম মৃত;
সে চেয়েছে মুণ্ডমালা
সে চেয়েছে কিশোরীর-রমণীর
ছিঁড়ে নেওয়া, রক্তমাখা স্তন
ভয়-হ্রেষা-আর্তনাদ না হলে কি জমে তার মৃগয়া ও মদ ?
৭.
দ্যাখো দ্যাখো, পুরাণের পাতা থেকে মিনোতার এসেছে বেরিয়ে!
বেরিয়ে এসেছে তার কালচে ধূসর দৃঢ় চোয়াল-করোটি
তার দ্ইু চোখ যেন লিপ্সাঠাসা অতল গহ্বর
নাসারন্ধ্রে দোজখের দুইখানা চিমনি বসানো
৮.
হননবিকার-মত্ত, ক্ষমাহীন, ক্রূর
আদিম, পেশল এক দেহ নিয়ে এলো সে যখন
ঘোড়াটিকে শিং দিয়ে অতর্কিতে গাঁথল যখন
চারদিকে তীব্র হ্রেষা, আর্তনাদ উঠল যখন
মই বেয়ে একটি লোক পলায়ন-উদ্যত যখন
নির্ভয়া কিশোরী এসে এক হাতে তুলে ধরল মোম;
অন্য হাতে বাড়িয়ে ধরল ফুলতোড়া
তৎক্ষণাৎ থমকে গেল, টলে গেল, শিলীভূত হল মিনোতার
একটি জানালা থেকে অন্য দুই নওল কিশোরী দেখল কৌতুকে
দূরে এক ছোট নৌকা দুলছিল আবছায়া
… অগোচরে… কুয়াশায়…ঢেউয়ে..
=======================
মতিন রায়হান
বৃষ্টিসূত্রে রচিত পঙ্ক্তিমালা
বৃষ্টি এলে মন-ময়ূরের পাখা নাচে গমকে গমকে
বৃষ্টিসূত্রে তাকে তুলে নিই বুকে! বিজন সৈকতে
ডাকে বুঝি চোরাবালি! ঘোরলাগা ঝাউবনও
উসকে দেয় স্মৃতি; সবুজ পাহাড়গুলি যেন ভ্রমণের
নিত্য প্রণোদনাÑফেরি করে রাশি রাশি মেঘের
ঘুঙুর; পায়ে বাজে তারামাছ, শামুক ঝিনুক
আর রোদেপোড়া মীনের মেয়েরা; কী নাম
দেবে গো তার? সুস্বাদু শুঁটকি? প্রোটিনের গল্পে
কাঁদে ব্যক্তিগত মৎস্য-সমাচার! সমুদ্র-জাহাজ
ভাসে দূর কোনো বন্দরের টানে… কোথায়
রয়েছে আজ দূরগামী নাবিকের ছায়ামায়াপ্রেম!
বুকের কিনারে বাজে চিনচিনে ব্যথা; এ জগৎ
যেন এক ব্যথার আধার! বাদ্য বাজে ঠমকে ঠমকে
বৃষ্টি এলে মন-ময়ূরের পাখা নাচে গমকে গমকে
============================
রওনক আফরোজ
কে, কখন?
কবে কে ছুঁয়েছিল শিশির মাখানো এই হাত
এক দ্বিধান্বিত ভোরে
এখনও কুয়াশায় গাঁথা সে উত্তাপ,
যদিও সূর্যটা দিগন্তে গেছে সরে।
জ্যোৎস্নার নির্ঝরে বিস্মরণের শয্যায়
উস্কে দিয়ে হৃৎপিণ্ডের নদী,
ঠোঁটে এঁকেছিল পরাবাস্তব চুম্বন
কে গেয়েছে অমরত্বের গান
কে জাগিয়েছে জাগতিক প্লাবন?
জ্বলতে, জ্বলতে, জ্বলে যায় নীলজোনাকি
তারাজাগা উৎসুক রাতের অমতে,
দিগ্ভ্রান্ত পাখির দলিত বিশ্বাস কাঁদে
কেউ তো বলেনি সেধে, যেও না মেঘেদের সঙ্গে
উত্তুরী বাতাসের পথে?
ঘুমের গভীর উপত্যকায় স্বপ্নফুল ফোটে-অজানা
অজস্র, অগোছালো;
কিছু চঞ্চল প্রজাপতি ওড়ে এলোমেলো,
কোন কবি সাজায় কবিতার প্রাণ নিখুঁত সতর্কতায়
কেন বাঁধো উদাসী নদীকে বাঁধের বিড়ম্বনায়?
=============================
সৌমনা দাশগুপ্ত
খসড়া খাতায় কাটাকুটি
কোনও পিনকোড নেই
বাতাসে শুধুই বুদ্বুদ
বৃষ্টির ভূমিকা লিখতে লিখতেই শুকিয়ে যাচ্ছে কুয়াশা
মেঘ থেকে ছিটকে ছিটকে ধাতুর মার্বেল
কড়িকাঠে ঝুলে আছে গাছ
গল্প বলতে বলতে থেমে গেছে গাছ
ফেরাস-ফেরিক কণা
গল্পের ভেতরে শুধু নুন আর ফেনা
তাহলে কি সমুদ্রের দিকে চলে গেল গাছ
ঘড়ির থেকে কাঁটা উপড়ে নেওয়ার পর
পড়ে থাকে জলেভেজা শাদা পাতা…
চিরল পাতার হিম…
ঝলসানো কথা। দাউদাউ ঘর
ও নিরেট, ও দেয়াল, শব্দে শব্দে গাঁথা
এত এত বিকিকিনি
কে কেনে, কে কেনে… কেন আমরাই…
ন্যাজ গুটিয়ে পালাচ্ছে বেড়াল
ন্যাজটিকে জানি, বেড়াল চিনি না
সবুজাভ চোখ, বিলোল কটাক্ষ তার
জুড়ে দ্যায় মশকরা
ডাস্টারে নাম লেখা আছে
মঞ্চের ধুলো ঝেড়ে মিঁয়াও মিঁয়াও…
সরটুকু খেয়ে গেল…
সুরকে ধুনছে ওই কে এক ধুনুরি…
ব্যজস্তূতির বনে হে দর্শক, তুমিও কি বসেছিলে দু-মিনিট
মিয়ানো আঁচল খুলে দেখালে ক্লিভেজ আর
ঝলসানো হাসির স্তবক
ওহে হরবোলা, স্বরে স্বরে ভরে যায় ঘর
ডুকরে উঠছে যত শেয়াল ও শকুনের দল
স্বর চুরি… স্বর চুরি…
হাহাকার উঠেছে পাড়ায়
মেঘে মেঘে চকমকি
হ্যাঁ হ্যাঁ, হ্যাঁ রে বাপু চকমকিই তো
তুমুল তুখোড় ঝিনচ্যাক
লালাপ্রসবিনী এক জিভ, চেটেপুটে খায় সব
মশকরা, থুতু ও ফুক্কুরি
…হাড়ের ভেতর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া চুষে নিল মজ্জার ক্কাথ
ঘুঙরি কাশির থেকে ঝমঝমে ডাক
ছড়িয়ে পড়ছে ফুটপাথে
এসবই একদিন ফুটে ওঠে হাতের রেখায়
চায়ের কাপের পাশে একলা বসেছে চিত্রকর
কন্টুরে কন্টুরে ভরা সারফেস, যেন
রিলিফ ম্যাপের থেকে ছুটে আসা কয়েকটি দাগ
পাকিয়ে পাকিয়ে উঠে গেল আকাশের দিকে
এসব হাতমকশো, খসড়া খাতায় কাটাকুটি, লিখে রাখতে হয়
এমন হঠাৎ করেই বলক আসে বারুদের বনে
======================
ভাগ্যধন বড়ুয়া
আলতা রাঙানো পথ
অনেক দিন পর কৃষ্ণচূড়ার আভা নগর নজরে, পড়ে থাকা ফুলে আলতা রাঙানো পথে এসেছিলে হঠাৎ, রক্তাভ সূর্যের সমতলে দাঁড়িয়ে কী যেন খুঁজেছিলে অরণ্য সমীপে, প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলে বনের সঙ্গে জীবনের বোঝাপড়ার বয়ান। জিলিপি পাহাড়ের শেষ বাঁকের কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ সাক্ষী কথোপকথনে, বুকের শুভ্র পায়রার উড়ান, শান্তির বাতাস প্রবাহিত দ্বৈততায়, আলিঙ্গনে উষ্ণ আবেশ, বৃক্ষশাখার শীর্ষদেশে তরঙ্গিত ঢেউ…
নবগঙ্গার গম্ভীর জলে আমিও দেখেছি মুখ, কার মুখ ভাসে জলের মুকুরে? আমারে নিয়ে চলো আনকা জলে, তরী হও ভেসে যাই…
==============================
ওবায়েদ আকাশ
অচল ঠ্যাঙের উপর দাঁড়ানো খেলা
ব্যথিত সত্যের গাঢ় উৎসবে দুলছে শহর
একদিন প্রতীক্ষার বাকরুদ্ধ ঝড়ে কোথাওবা উড়ে যাবো
একদিন নন্দিত অপেক্ষা ম্লান করে
বিহঙ্গ কান্নার যত ঘ্রাণহীন সময় পোহাবো
সেদিন জীবনে একবার শুধু তোমার আহ্বানে
কোনওই তো সাড়া দেবো না সুবোধ
তারপর আর কোনোদিন, কোনোদিন না যে!
মনে হবে অচল ঠ্যাঙের ওপর দাঁড়ানো খেলা
ক্ষণিক আহ্লাদ করে
আমাকে মুখর যত্নে নিয়ে গেছে চির অভিসারে
তোমার প্রতীক্ষাজুড়ে উদোম তরমুজের মতো বেদনার লাল
কিংবা বিরান বারান্দার শেষে শতাব্দী পুরনো ধুলা
যে যার অক্ষের বেশি কোথাও মগ্নতা রাখে নাই
তোমার অপেক্ষাজুড়ে শিশুদের শুভ্র কোলাহল
কিংবা পাঠশালার ধর্মীয় কোরাস এসে তোমাকে সরাতে চাইলেও
শুধু স্থিরতর প্রবাল প্রস্তর যেন তাড়াবে সময়
কতবার প্রতীক্ষাই করেছো জীবনÑ কাঁদাজল শুকোবার আগে
অবসিত সকল কারণÑ অতিদূর একাকী বৃক্ষের দিকে তাকাবার আগে
মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি হাজার সহস্রবারÑ যতবার
পাখিনীর বুকের কোরাসে কেবল প্রাণান্ত থাকে পাখিটার একান্ত শরীর
আজ শুধু আজ, কিংবা তারও বহু পরÑ কোনোদিন
সুদীর্ঘ অপেক্ষা তোমার পাবে না কোনোই উত্তর!
================================
হাসনাত শোয়েব
অর্ধেক রাত
একটা রাত, অর্ধেকটা ভাগ করে রাখি। লবণ দিয়ে জমিয়ে রাখি। অনেক দিন পর খুলে দেখব। একটি রাত, আহত হয়ে শুশ্রƒষার জন্য কাঁদছে। একটা রাত, কফিনের ভেতর ঢুকে যেতে যেতে উঁকি দিয়ে দেখে। কেউ ডাকবে, কেউ ডাকে না। একটা রাত, তুমুল জ্বরের ভেতর পুড়ে যাচ্ছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তুমি মুছে দিয়ে যাও। একটা রাত ঢুকে যাচ্ছে আরেকটা রাতের ভেতর। তার নিজস্ব ঘুমের ভেতর।
==========================
সচিত্রকরণ : রজত