আর্কাইভগল্প

গল্প : ঋদ্ধ ও তপস্বিনী কাননবালা : শাহনাজ মুন্নী

কাননবালার কথা

বলতে দ্বিধা নেই, একটা দুর্বল ভঙ্গুর মুহূর্তে আগপিছ না ভেবেই ঋদ্ধকে আমি প্রচণ্ডভাবে কামনা করেছিলাম। রক্তে মাংসে ত্বকে হাড়ে মজ্জায় দেহে আশ্লেষে যেভাবে মানুষ ঘোর  পিপাসায় তৃষ্ণার জল চায়, দীর্ঘ খরায় আকুল হয়ে বৃষ্টিকে চায়, তেমনভাবে। প্রথম যেদিন সে এসেছিল এক গোধূলিবেলায়, অধ্যাপক সাহেবের পিছু পিছু কচি কলাপাতার মত কোমল, একটা লাজুক হরিণ শাবকের মতো ভীরু পায়ে আমাদের তপোবনে। তার চশমা পরা চঞ্চল চোখে, দাড়ি গোঁফ কামানো সবুজ নবীন মুখায়ববে জ্ঞান অর্জনের ব্যাকুলতা। তার দৃঢ় দেহভঙ্গিমায় পৃথিবী জয়ের সুপ্ত আকাক্সক্ষা। চুলের ভাঁজে, পোশাকের স্টাইলে যুগপৎ তারুণ্য, বুদ্ধিমত্তা ও গ্রামীণ সারল্যের ছাপ। 

অধ্যাপক সাহেব তাঁর স্বভাবসুলভ মৃদু হাস্য সহযোগে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর নতুন ছাত্রের সঙ্গে। আমি তখন সবে স্নান সেরে ভেজা চুল পিঠে ছেড়ে শুভ্র পোশাকে তানপুরা হাতে প্রাত্যহিক সান্ধ্য রেওয়াজে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অধ্যাপকের কথায় মাথাটা সামান্য ঝাঁকিয়ে মৃদু হেসে আমি স্বাগত জানালাম তাকে।

চোখে সংকোচ বিজড়িত বিস্ময় নিয়ে সেও হাত দুটি জোড় করে ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসি ধরে রেখে রীতিমাফিক নিঃশব্দ সম্মান জানাল আমাকে।  

অধ্যাপকের সঙ্গে জীবন শুরু করার পর থেকেই দেখছি, প্রতি বছর শরৎকালে এমন দিব্যকান্তি তরুণ যুবারা আমাদের তপোবনে আসে গুরুর সঙ্গে নিভৃতে এক মনে বিদ্যাসাধনা করতে। মোক্ষ লাভ হলে পরের শরতে তারা নিজ নিজ কর্মে ফিরে যায়।

পরের পালায় আবার কোনও নতুন ছাত্র আসে। এ এক শুভ চক্র। অধ্যয়নের। নিখাদ জ্ঞানসাধনার ।   

এই তপোবনে সহৃদয় অধ্যাপক সনে থাকি আমি কাননবালা। ভোলাভালা এক তপস্বিনী, তবে আমার সাধনা একমাত্র সংগীতকে ঘিরে। অধ্যাপক সাহেব বরাবরই সঙ্গীতপ্রিয়, অত্যন্ত সমঝদার, বোদ্ধা। তবে কণ্ঠে তেমন সুর নেই বলে তিনি নিজে গান করেন না। প্রাণ ভরে চক্ষু মুদে কান খুলে তিনি নিবিষ্ট হয়ে শোনেন। মাথা নেড়ে মনোহর বাক্যে তারিফ করেন। আমি তার অতি প্রিয় ভালবাসার গানের পাখি। না, তিনি আমাকে খাঁচায় বন্দি করেননি। আমি নিজেই মনের আনন্দে তার জ্ঞানসাধনায় মুগ্ধ হয়ে, স্বেচ্ছায় তাঁর পোষ্য হয়েছি। তিনিও এক সাধক তবে জ্ঞানই তার আরাধ্য। জীবনের অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করতে তিনি ভালোবাসেন। গুণমুগ্ধ ভক্ত ছাত্র শিষ্য পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে তিনি সবিশেষ পছন্দ করেন। শিষ্যরাও ধন্য হয় সাধুসঙ্গে গুরুগৃহ বাসে।         

আমার সকাল শুরু হয় সূর্য ওঠারও বহু আগে রাগ ভৈরব বা রামকেলী দিয়ে। তারপর একে এক হিন্দোল কোমল রিষাভ আশাবরীর সুর ছুঁয়ে অবগাহন শেষে আমি বিশ্রামে যাই।

অধ্যাপক সাহেব আমাকে দৈনন্দিন সংসারকার্য থেকে বহু আগেই রেহাই দিয়েছেন, ফলে সংগীত সাধনায় নিজেকে নিঃশেষে উজাড় করে দিতে পেরেছি আমি। আমার দুপুর কাটে বৃন্দাবনী রাগে, গোধূলীতে রাগ মধুবন্তীর চর্চা করি, সন্ধ্যায় ইমন কল্যাণ, সন্ধ্যা বিলম্বিত হলে ঝিঁঝিঁট বা কলাবতী রাগে গলা সাধি।

শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি আমার ও অধ্যাপক সাহেবের প্রভূত দুর্বলতা আছে। এইখানে আমাদের পরম মিল, তবে আমাদের অমিলও প্রচুর। আমি যদি রোদ হই তিনি বৃষ্টি, একজন শান্ত দিঘি হলে অন্যজন চঞ্চল ঝর্না।  

এইসব মিল অমিল নিয়ে আমাদের জীবন বয়ে যাচ্ছিল ধীর শান্ত মন্দাক্রান্তা লয়ে।

অধ্যাপক সাহেব আমার প্রতি আসক্ত ছিলেন। তাঁর প্রতি আমার এক ধরনের নির্ভরতা ছিল, আমার গান শুনে তিনি মুগ্ধ হতেন, সেই মুগ্ধতা আমাকে আনন্দিত ও আপ্লুত করত। আমাদের জীবন ছিল কঠোর নিয়মের আবর্তে বাঁধা। আমার প্রতিদিনের রেওয়াজ, তাঁর একাগ্র চিত্তে জ্ঞান অনুসন্ধান, কোথাও এতটুকু নিয়মের ব্যত্যয় নেই। সব যেন এক সুরে এক তারে বাঁধা। ছন্দময়। কোথায়ও ছন্দপতনের এতটুকু অবকাশ নাই।

অধ্যাপক সাহেব বলতেন, ‘জীবন প্রকৃতপক্ষে ছন্দোবদ্ধ, প্রকৃতিও দেখো কী সুন্দর ছন্দে বাঁধা। সবই ঘটে নিয়ম মেনে, সময় মেনে। অলিখিত কিন্তু অনিবার্য। মানুষই সেই কালপ্রিট, যারা ছন্দ ভেঙে বিশৃঙ্খলতা তৈরি করে।’

সাধারণত আমি অধ্যাপকের কথায় দ্বিমত প্রকাশ করি না, তিনি যা বলেন বিনা প্রশ্নে মেনে নিই।

আজ যে কী হলো!

আমি তাঁর পাশে হাঁটতে হাঁটতে মৃদু কণ্ঠে বললাম, ‘এত বেশি নিয়মশৃঙ্খলা মানুষের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট করে দেয় না কি ? অনেক সময় নিয়মের দাস বানিয়ে ফেলে! তাই নয় কি ?’ 

অধ্যাপক সাহেব একটু থমকালেন। হয়তো আমার কাছ থেকে পাল্টা প্রশ্ন আশা করেননি। তারপর কপাল কুঁচকে  বললেন,

‘কেন ? নিয়মকে কি তোমার নিগড় মনে হয় ?’

আমি একটু অস্বস্তি নিয়ে বলি, ‘তা না। তবে যে কোনও নিয়ম আপনাকে একটা বাঁধাধরা ছকে তো বেঁধে ফেলে… আপনা থেকে আর কিছু করার তখন উপায় থাকে না…’ 

‘শোনো, তুমি নিয়মের দাস হলে হবে না, নিয়মকে তোমার দাস হতে হবে …’

‘নিয়ম ভেঙেই কিন্তু অনেক সময় নতুন কিছু তৈরি হয়…’

আমি বলি। অধ্যাপক হাসেন, ‘প্রথমে তোমার নিয়ম জানতে হবে। তাকে মান্যতা দিতে হবে, তারপর না ভাঙাভাঙি, না জেনে ভাঙবে কীভাবে ?’

আমরা হাঁটছিলাম তপোবনের ভেতর গাছগাছালিতে ছাওয়া একটি নির্জন ও শান্ত পথে। পাখিরা নিজেদের ভাষায় কোলাহল করছিল, লম্বা ঘাসের ভেতর সর সর শব্দ তুলে বইছিল যাযাবর বাতাস। কোথাও হয়তো অগোচরে বনফুল ফুটেছিল, মৃদু মিষ্টি গন্ধ এসে ধাক্কা দিচ্ছিল নাকে।

অনাগত দিনের দূর বিস্তৃত পথের স্বপ্ন মাথায় নিয়ে হাঁটছিলাম আমরা। আমি আসলে ভাবছিলাম জীবনের বহুবিধ সংকট নিয়ে। যে স্বাধীন স্বচ্ছন্দ জীবন আমি সব সময় কামনা করেছি, তার কতটুকু পেয়েছি ? সম্পর্কের আনুগত্য স্বীকার করে যে নিরবচ্ছিন্ন সংগীতময় জীবন আমি যাপন করে যাচ্ছি তা ঠিক কতটা স্বাধীন কিংবা কতটা নন্দিত কারাগার ? 

অধ্যাপক সাহেবের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান আছে। কিন্তু যখন তার প্রেমে পড়েছিলাম তখন সেটিকে সমস্যা মনে হয়নি। বরং তাঁর স্নেহময় কর্তৃত্ব আমি মাথা নত করে সানন্দে মেনে নিয়েছিলাম। সংগীতজগতে তার অগাধ প্রতিপত্তি এবং জানাশোনা আমার প্রতিভা বিকাশে কাজে লেগেছিল। আমি তাঁকে নির্ভর করি। ভরসা করি। হয়তো ভালওবাসি। তবু আমাদের লোহার বাসরে সুতানলি সাপের মতো ঋদ্ধ কীভাবে ঢুকে পড়েছিল জানি না।

কিংবা আদৌ কি সে ঢুকেছিল ? নাকি পুরোটাই আমার অলীক কল্পনা ? আমার চোখের ঘোর, আমার রুদ্ধ প্রাণের অকারণ পুলক ?

আমাদের দুজনের দেখা প্রায় হতোই না। কথা তো আরও কম! অধ্যাপক সাহেব তাঁর আলাদা পাঠকক্ষে শিষ্যসাহচর্যে পাঠ অনুশীলনে বা গবেষণাকর্মে ব্যাপৃত থাকতেন। সেখানে কদাচিৎ আমার যাওয়া পড়ত। কেননা অধ্যয়নের একাগ্রতা বিঘ্নিত হলে তিনি বড্ড বিরক্ত হতেন।

এত দূরত্বের পরও কোন নিভৃত ক্ষণে জন্ম নিয়েছিল ওই সর্বনাশা বাসনা ? আমি জানি না। মনে পড়ে একবার অধ্যাপক সাহেবের কোনও এক প্রাক্তন ছাত্রীর সর্নিবন্ধ আমন্ত্রণে আমরা শহরতলীর একটা বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সংগীত পরিবেশনে অধ্যাপক সাহেবের সদয় অনুমতি ছিল। অনুষ্ঠানে ঋদ্ধও উপস্থিত ছিল দর্শকসারিতে স্তব্ধ নতমুখে। চলে আসার সময় যখন অধ্যাপক আর আমি অভ্যাগতদের বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছি। তখনি আমাদের দেখা হয় মুখোমুখি, বেশ কাছাকাছি। আর সেদিনই প্রথম তার কালো চোখের দিকে তাকিয়ে আমার সর্বাঙ্গে, পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীর জুড়ে যেন চকিতে একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল।

আমি সহসাই চোখ নামিয়ে নিলাম আর কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, এক পা পিছিয়ে এসে একটা টেবিলের কোনা ধরে কোন রকমে টাল সামলালাম।                    

সেই শুরু। তার তীব্র তীক্ষè চাহনি আমাকে যেন বল্লমের মতো এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে চিরে ফেলেছিল। কোথায় যেন পড়েছিলাম, ওই যে পূর্ণ চোখে তাকিয়ে থাকা, সেটাই সম্পর্কের বা প্রেমের বা মোহের বা আকর্ষণের স্ফুলিঙ্গ। দুজনের কেউই বিশেষভাবে কোনও কথা বলছে না, কিন্তু ওই না বলার মধ্যেই, ওই চোখে চোখ রাখার মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগের মতো কিছু একটা কম্পন বা স্পন্দন ঘটে যাচ্ছে। এই অতি সামান্য ঘটনা কিংবা অঘটনাতেই আমার এতদিনের নিরবচ্ছিন্ন সুরসাধনায় কেন যেন বিঘ্ন ঘটল। মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। সংগীত আর আমার মধ্যে সেই উজ্জ্বল মুগ্ধ দৃষ্টি যেন স্বচ্ছ স্ফটিকের দেয়ালের মতো অদৃশ্য বাধা তৈরি করল। ফলে পরদিন সকালের রেওয়াজে আমার এত সাধের পোষ মানা সুরগুলো কেমন যেন দূরে হারিয়ে যেতে থাকল।   

অধ্যাপকের অভ্যস্ত কানে আমার সুরের এই সামান্য পতনও ধরা পড়তে সময় লাগল না। তিনি ভ্রƒ কুঞ্চন করলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।

২. ঋদ্ধের কথা

তপস্বিনী কাননবালার নাম আমি পূর্বেই শুনেছিলাম, তাঁর কণ্ঠের গানও শুনেছি আগেই। তবে স্বচক্ষে প্রথম গুরুগৃহে তাকে দেখি আমি। কী সুন্দর তার মুখখানি! আমার ধারণার চেয়েও অধিক স্নিগ্ধ তিনি, আমার স্বপ্নের চেয়ে বেশি সুন্দর, আমার ভাবনার চেয়েও কোমল তাঁর অভিব্যক্তি। রজনীগন্ধার ডালের মতো সতেজ মসৃণ তাঁর গ্রীবা। গভীর নিবিড় তাঁর দৃষ্টি। একজন পূর্ণাঙ্গ নারীর যেমন নিখুঁত হওয়া দরকার ঠিক তেমন সুষমামণ্ডিত তিনি, ঝকঝকে দ্যুতিময়, যেন জোসনায় ভেজা। তাঁর অপূর্ব মন্দ্রিত কণ্ঠস্বরে আকাশে ভেসে চলা মেঘেরাও যেন গলে যায়। তিনি আমার গুরুপত্নী, আমার নমস্য, একান্তই শ্রদ্ধাভাজন। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর রূপ ও অনন্য গুণের বর্ণনায় প্রায়ই আমার ভাষা সীমিত হয়ে পড়ে, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যায়, অথচ তুলিকা তার নামটা পর্যন্ত শুনতে চায় না। মুখ ঘুরিয়ে তো নেয়ই, পারলে তক্ষুনি কানে আঙ্গুল দেয়। মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, ‘রাখো তো, ওই মহিলার কথা আমি একদম শুনতে চাই না! কেমন ন্যাকা সেজে থাকে, নাঁকি সুরে কাঁপা গলায় গান গায়, যেন নুয়ে পড়া বনলতা! অসহ্য লাগে আমার!’

তুলিকা আমার বাগদত্তা। আমার প্রেমিকা। তার এমন রূঢ় বাক্যে আমি আহত হই। বোঝাবার চেষ্টা করি, ‘না, না, তুমি যেমন ভাবছো, উনি তেমন নয়, আমি তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি।’

‘কাছ থেকে! কত কাছে থেকে ? এই শোনো, ওনার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে। এইসব যোগিনী ডাকিনী টাইপের মহিলারা তোমাদের মতো সহজ সরল তরুণ যুবাদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে নানা রকম ভড়ং করে, জানো সেটা ? জানো ওরা মন্ত্র পড়ে পুরুষকে ভেড়া বনিয়ে ফেলতে পারে!’

বুঝতে পারি তুলিকার সন্দেহকাতর মন তার ঈর্ষামিশ্রিত বদ্ধ ধারণা থেকে, গভীর হীনম্মন্যতার বোধ থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসবে না। তুলিকার বিদ্বেষ এতই তীব্র ছিল যে সম্ভব হলে সে অধ্যাপকের তপোবনে আমার যাওয়াই নিষিদ্ধ ঘোষণা করত। তুলিকা অবশ্যই আমার জীবনে সেই নিষেধাজ্ঞা জারি করার করার ক্ষমতা রাখে।

তবে যৌথ জীবনের ভবিষ্যৎ পথ মসৃণ করতে আমার উচ্চতর সনদ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও সে বোঝে বৈকি। ফলে সে আমায় সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখে কিন্তু ওখানে যাবার পথ আটকায় না। 

তপোবনে ঢুকলেই একটা গভীর গোপন আনন্দ আমার মধ্যে খেলা করে। সৌম্য, শান্ত, জ্ঞানী ও স্নেহময় অধ্যাপকের সান্নিধ্য আমার ভালো লাগে। কাননবালা সাধারণত আড়ালেই থাকেন। কিন্তু আমি যেন শুনতে পাই পর্দার ওপাশে তার ধীর ছন্দময় পদচারণার মৃদৃ শব্দ, তার আঙ্গুলে বেজে ওঠা সেতারের টুংটাং, তাঁর অস্ফুট গুনগুন… তাঁর দুটি উজ্জ্বল কাজল টানা চোখের কথা মনে পড়ে, যেই চোখে ক্ষণিকের জন্য আমি আমার সমস্ত অস্তিত্ব ভুলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।      

কাননবালা কখনও কখনও অল্প সময়ের জন্য আসেন আমাদের পাঠকক্ষে। তখন তাঁর খোঁপা ঘিরে থাকা বেলি ফুলের সুবাসে অপরিসর কক্ষটি মোহিত হয়ে ওঠে। তাঁর দেহ ঘিরে আলোক বিচ্ছুরিত হয়। তিনি ভদ্রতাবশত জানতে চান, আমাদের গবেষণা কতদূর এগিয়েছে ?

আমি তাকে বিস্তারিত বলি। বলতে ভালো লাগে। হয়তো তাঁর শুনতেও ভালো লাগে। কিংবা লাগে না, তবু তিনি যে মনোযোগী শ্রোতার মতো কথা শোনেন তাতেই আমার মন কেমন যেন অজানা আনন্দে ভরে ওঠে। আমি তার কালো চোখে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ খুঁজি।

একবার আমরা অধ্যাপকের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে বনভোজনের আয়োজন করেছিলাম। শহরের বাইরে একটা ছোট্ট টিলার পাশে। অধ্যাপক সস্ত্রীক আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন সেই বনভোজনে। খাওয়া দাওয়া শেষে অধ্যাপক ঘাসের উপর বিছানো চাদরে শুয়ে বিশ্রাম নিতে চাইলেন। ওদিকে কাননবালার ছোট্ট বালিকার মতো হঠাৎ ইচ্ছা হলো টিলার উপরে উঠতে।

‘ঋদ্ধ তুমি ওর সঙ্গে যাও। পথ দেখিয়ে দিও।’

অধাপক আদেশ করলেন। কাননবালা শিশুর মতো উচ্ছ্বলতায় তার ছোট ছোট চঞ্চল পা ফেলে সামনে আর আমি চললাম তার পেছন পেছন, কখনও তাঁর পাশে পাশে। তাঁর চাঞ্চল্য, তাঁর উচ্ছ্বাস আমার ভারী ভাল লাগছিল। টিলাটা ছিল ঢালু, একটা জায়গায় গিয়ে থমকে যেতে হলো কাননবালাকে, আলগা মাটিতে পা রেখে উপরে ওঠার সাহস পাচ্ছিলেন না। আমি দুই লাফে তাঁকে পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে গেলাম। তারপর ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলাম তাঁর দিকে। এক মুহূর্ত দেরি না করে আমার হাতে নিজের হাতটা রাখলেন তিনি। গরম রুটির মতো নরম, উষ্ণ, ভেজা ভেজা তাঁর হাতের স্পর্শ চিরজীবনের মতো আমার হাতে যেন লেগে রইল। নামবার সময়ও কয়েকবার স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে হাত ধরে নামতে সাহায্য করলাম।

তাঁর এই সামান্য স্পর্শ আমার ভেতর অসামান্য শিহরণ জাগালো। এক অনাস্বাদিত আনন্দে আমি যেন ভেসে গেলাম। নিজের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো, আমি কি তবে কাননবালার প্রেমে পড়েছি ? না, না, তা কী করে হয়! বয়সের ব্যবধান, সম্পর্কের দূরত্ব তাছাড়া আমার আসল প্রেম তো তুলিকা। আমি বহু আগে থেকে তার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের দুই পরিবারের বোঝাপড়া ভালো। ভালোবাসার দাবিতে আমার ওপর খানিকটা কর্তৃত্ব ফলানো ছাড়া তুলিকার আচরণে আর কোনও ত্রুটি আমার চোখে পড়েনি। তুলিকার সঙ্গ, ওর পরামর্শ, ওর খুনসুটি, ওর অকারণ অভিমান কোনওটাই আমার অপছন্দ নয়। কিন্তু তারপরও কেন কাননবালার কথা ভাবলে, তাকে দেখলে এক অদ্ভুত ভাল লাগায় আমার মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ?  জানি, আমার ধরাছোঁয়ার জগতের বাইরে তাঁর অবস্থান, তারপরেও হয়তো তাঁকে একরকম ভালইবাসি, সেটা তিনি জানুন আর না জানুন। তিনি বাসুন বা নাই বাসুন।               

৩. কাননবালার কথা

সেদিন ছিল এক অলস ছুটির দিন। ভক্ত শিষ্যদের ভিড় নেই, কোথাও যাবার তাড়া নেই। অধ্যাপক একটা আরামকেদারায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন। হঠাৎ হাতের বইটা সরিয়ে রেখে ঠান্ডা গলায় জানতে চাইলেন, ‘বিট্রেয়ার শব্দটার মানে জানো তো ?’

বাগানের ঝরা বকুল কুড়িয়ে এনে তাঁর পায়ের কাছে বসে একমনে মালা গাঁথছিলাম আমি। এমন প্রশ্ন শুনে একটু চমকেই গেলাম। মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, ‘হ্যাঁ, বিশ^াসঘাতক, কেন ?’

অধ্যাপক উঠে দাঁড়ালেন। যেন বাতাসে গন্ধ শুঁকলেন। তারপর বললেন, ‘বিশ^াস হারিয়ে যাবে, এমন কোনও কাজ তুমি তো করবে না কানন…’

অধ্যাপকের বলার ভঙ্গিতে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। উঠে এসে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। হাত রাখলাম কাঁধে।

‘এরকম কথা কেন বলছো, বুঝতে পারছি না…’

‘আমার মনে কেমন শঙ্কা হচ্ছে, মনে হচ্ছে তোমাকে বোধ হয় হারিয়ে ফেলব …’

অধ্যাপক সাহেব কেমন আকুল হয়ে বললেন, ‘আমাকে ছেড়ে যেও না কাননবালা। আমাকে কষ্ট দিও না।’

এতো মায়া হলো আমার যে দু হাত দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। 

অধ্যাপক কি তবে আমার পরিকল্পনা টের পেয়ে গেল ? কিন্তু তাই বা কীভাবে সম্ভব ? এই ছক তো আমি সম্পূর্ণ একাই কেটেছি। এ স্বপ্ন তো আমি একাই দেখেছি। এমনকি যাকে নিয়ে এই আকাশকুসুম সাজিয়েছি তাকেও এখন পর্যন্ত তেমন করে বলিনি কিছুই। আসলে আসছে মাসে লখনৌতে একটা সঙ্গীত সম্মেলনে যাচ্ছি আমি। একাই। অধ্যাপকেরও যাবার আমন্ত্রণ ছিল কিন্তু বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষাসংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজে তিনি আটকে গেছেন। জানতে পেরেছি, একই সময়ে কলকাতায় একটা সেমিনারে যাবে ঋদ্ধ। একটা ভিনদেশে ভ্রমণের ছলে সবার চোখের অন্তরালে কয়েকটা দিন ওর সঙ্গে একান্তে কাটানোর জন্য আমার ভ্রƒপল্লবে একটা ডাক দেওয়াই যথেষ্ট। আমি স্বপ্ন সাজাচ্ছিলাম নিজের মনে, গোপন নিষিদ্ধ আনন্দের আহ্বানে। আমার লোভী মন তো শুধু তার একটু সান্নিধ্যই চাইছিল। সমাজ সংসার সব পেছনে ফেলে কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে, হৃদয় দিয়ে হৃদয় অনুভব, এতে যদি পাই তার খানিকটা সংস্পর্শ, পাই যদি কিছু সংবেদী স্মারক অভিজ্ঞান। কারও তো তাতে কোনও ক্ষতি নেই। নিজেদের চেনা গণ্ডিতে ফিরে আমরা ফের না হয় ফিরে যাব যার যার আগের ভূমিকায়। শুনে মনে হতে পারে, দুজনে হয়তো যুক্তি করে এই পরিকল্পনা সাজিয়েছি। কিন্তু আদতে এই ভাবনার কোনও অংশীদার ছিল না। এটা শুধু আমারই রচিত একক স্বপ্ন ছিল। যে স্বপ্ন আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, কিংবা সত্যিই যদি তেমন কিছু ঘটে, তবে তার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে আমার কোনও চিন্তাই ছিল না। নিজের রচিত মধুচাকে মধুর ভাবনায় নিজেই আকণ্ঠ ডুবেছিলাম। 

‘আজকাল বড্ড আনমনা লাগে তোমাকে, মাঝে মাঝে দেখি যা আগে কখনও হয়নি, তাই হচ্ছে, তুমি সুর ভুল করছো,’

অধ্যাপক তীক্ষ্ন চোখে তাকান আমার দিকে। আমি বিব্রত ভঙ্গিতে হাসি, ‘নাহ্্্! কই ?… ওই তো একদিনই…’

‘সব সাধনাতেই মনঃসংযোগ আসল, আমি প্রায়ই বলি আমার ছাত্রদের, তোমাকেও বলি চঞ্চল মনকে সংযত করো। সংহত হও।’ অধ্যাপক তার স্বভাবসুলভ লেকচার দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করি তিনি কিছু সন্দেহ করছেন কিনা।

আমি যা ভাবছি, তার সবই তো মনে মনে। তিনি কি আমার মন পড়তে পারছেন ? দীর্ঘ সম্পর্কের অভিজ্ঞতায় তিনি কি শুধু চোখ দেখে আমার মনও পাঠ করতে শিখে গেছেন ? কিছু সময় নীরব কেটে যায়। আমি আবার কুড়িয়ে আনা বকুলের মালা গাঁথতে বসি। অধ্যাপক বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টান।

‘জানো তো আমি আমার সকল ছাত্রছাত্রীকে সন্তানবৎ দেখি।’

অধ্যাপক হঠাৎই বইটা পাশে সরিয়ে রেখে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলেন। আমি মাথা ঝাঁকাই।

‘হ্যাঁ, সে তো বুঝতে পারি। দেখি তো ওদের জন্য তোমার কত টান!’

’বিশেষ করে ঋদ্ধকে, বুঝলে আমার কেন যেন পুত্রবৎ মনে হয়। ওর প্রতি হৃদয়ের গভীরে আমি সেই রকম বাৎসল্য অনুভব করি। মনে হয় সময়মতো আমার পুত্র জন্মালে এতদিনে হয়তো ওর বয়সীই হতো।’

অধ্যাপকের গলা স্নেহে কোমল শোনায়। তাঁর প্রথম স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। আমাদের একত্রবাসেরও প্রায় চৌদ্দ বছর পেরোতে চলল সন্তানবিহীন। সঙ্গীতে মনপ্রাণ উজাড় করে দেওয়ার কারণেই কিনা জানি না, আমার মনে তেমনভাবে সন্তানতৃষ্ণা জাগেনি। অধ্যাপককেও কখনও এ ব্যাপারে আক্ষেপ করতে শুনিনি। কিন্তু আজকে তার কণ্ঠে এমন একটা হাহাকার ছিল যে আমি মালা গাঁথা বাদ দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।

অধ্যাপক একটু থেমে ভারী গলায় বললেন, ‘ঋদ্ধ যদি কখনও আমার বিশ^াস ভাঙার মতো কিছু করে তবে খুব কষ্ট পাব আমি। হৃদয়টা ভেঙ্গে যাবে।’     

৪. ঋদ্ধের কথা

‘কি, বিয়ের নেমন্তন্ন করতে এসেছো ?’

একটা সাদা শাড়ি পরে তপোবনের সবুজ পটভূমিকায় একরাশ কালো ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে বৈঠকখানার দরজায় হাসিমুখে এসে দাঁড়ালেন শ্রীমতি কাননবালা। পবিত্রতার একটা শুভ্র দীপ্তি যেন ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। আমি এক পা এগিয়ে তাঁর হাতে সোনালি ফিতায় মোড়ানো আমার ও তুলিকার শুভ বিবাহের আমন্ত্রণপত্রটা তুলে দিই।

বিয়ে নিয়ে আমার তেমন তাড়াহুড়া না থাকলেও তুলিকা আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না। আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্তে বরাবরই তুলিকার মতামতই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। দুই পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। অধ্যাপককে মৌখিকভাবে আগেই সব জানিয়েছিলাম। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে পত্র মারফত জানাতে আসা।

‘অনেক আশীর্বাদ, অনেক ভালোবাসা, শুভ কামনা তোমাদের জন্য।’

কাননববালা বললেন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে। আহা সেই শান্তি, কাজলমাখা গভীর দৃষ্টি তার।

গত শীতে যখন পাশের দেশে আমার সেমিনারে পেপার পড়তে যাবার কথা, তখন শুনেছিলাম তিনিও যাবেন সে দেশে আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসবে, যদিও আরেক শহরে, তবু ভেবেছিলাম তিনি আমাকে বলুন বা নাই বলুন  সুযোগ পেলে একবার যাব সেখানে, তাঁকে চমকে দিয়ে সম্ভব হলে দর্শক সারির প্রথম দিকে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকব। মঞ্চে তার স্নিগ্ধ জ্যোতি ঠিকরে বেরুবে। আর কে জানে হয়তো আমাকে দেখতে পেয়ে তিনি ক্ষণিকের জন্য থমকে যাবেন। হয়তো তারপর কিছুটা সময় তাকে একান্তে পাবো, শুধু দু চোখ ভরে দেখার জন্য। বিধাতা সহায় হলে যদি তিনি কৃপা করেন তাহলে হয়তো পাব তার অমূল্য উদার স্পর্শ। এই চিন্তাটা কেন যেন আমাকে প্রবল শিহরিত করেছিল। আমি একটা অলৌকিক কাল্পনিক আনন্দে নিজেই বিভোর হয়ে ছিলাম। ভাবছিলাম, যদি দূর দেশে নিরালায় সবার চোখের অগোচরে তার সঙ্গে মন খুলে দুটি কথা বলা যায় অথবা তার মনের কিছু কথা শোনা যায়! তাতে এ জগতে কারও তো কোনও ক্ষতি হতো না। কারও তাতে কিছুই আসত যেত না! কাননবালাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাব, সে দুঃসাহস আমার নেই। অধ্যাপকের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেব, এমন স্পর্ধাও করি না কখনও। তবু কি এক অদ্ভুত মোহ মায়া আমাকে কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরেছিল জানি না। এই অনুভব কি শুধুই একপাক্ষিক ছিল, তাও জানি না।       

‘আপনাকে কিন্তু বিয়েতে আসতেই হবে!’ আমি জোর দিয়ে বললাম।     

‘আসব। নিশ্চয়ই!’

স্মিতহাস্যে আস্তে করে বললেন তিনি। তারপর হঠাৎ জানতে চাইলেন, বিয়ের শাড়ি কেনা হয়েছে কিনা। কোথা থেকে কিনলাম, কেমন তার রং ? আমার স্যুট কোট তৈরিরও তত্ত্বতালাশ করলেন খুব আন্তরিক অভিভাবকের মতো।

৫.  কাননবালার কথা

যে কোনও সম্পর্কের মধ্যে একটা অদ্ভুত সুর, মায়া, টানের অনবদ্য রসায়ন থাকে। সম্পর্ক ধীরে ধীরে নির্মাণ করতে হয়, অনেকটা ইটের পরে ইট বসিয়ে দেয়াল তোলার মতো। পরিচর্যা করতে হয় ভালোবাসার রোদ জল আর মাটির অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে। সম্পর্ক যত্ন করে বুনতে হয় অদৃশ্য তন্তুতে মাকড়সার জালের মতো, সূক্ষ্ম কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত কৌশলে। যাতে অপরপক্ষ অনায়াসে তাতে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্ককে হয়ে উঠতে হয়, পারস্পরিক আগ্রহে, উপযুক্ত আবহাওয়ায়। 

ঋদ্ধ এবং আমার সম্পর্ক তো সেই অর্থে একটুও জমাট ব^াঁধেনি। বাঁধার পরিস্থিতিও কখনও তৈরি হয়নি। যা হয়েছে তা স্ফুলিঙ্গের মতো ফিনকি দিয়ে এক বিন্দু জ্বলে বাতাসে মিলিয়ে গেছে। যে সুর এতে ছিল তা শুধু আমার একার অন্তরেই বেজেছে, কোনওদিন প্রকাশিত হয়নি আর হবেও না। কিছু কথা হৃদয়েই জমিয়ে রাখাা ভালো, প্রকাশ পেলে এর সারল্য নষ্ট হয়।       

অধ্যাপক ঋদ্ধকে বিশ^াসঘাতক ভেবে কষ্ট পাক, সেটা আমি চাইনি কখনও।

সেবার এসব ভেবেই শেষ পর্যন্ত আয়োজকদের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে লখনৌ যাওয়া বাতিল করে দিয়েছিলাম। 

সচিত্রকরণ : শতাব্দী জাহিদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button