আর্কাইভভাষা গবেষণা

শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু : মানবর্দ্ধন পাল

ভাষা-গবেষণা ধারাবাহিক

চৌদ্দতম পর্ব

[প্রাচীন ভারতীয় আলঙ্কারিকেরা শব্দকে ‘ব্রহ্ম’ জ্ঞান করেছেন―শব্দ যেন ঈশ্বরতুল্য। পাশ্চাত্যের মালার্মেসহ নন্দনতাত্ত্বিক কাব্য-সমালোচকদেরও বিশ্বাস, শব্দই কবিতা। যা-ই হোক, শব্দের মাহাত্ম্য বহুবর্ণিল ও বহুমাত্রিক। বাংলা ভাষার বৃহদায়তন অভিধানগুলোর পাতায় দৃষ্টি দিলেই তা প্রতিভাত হয়। আগুনের যেমন আছে অসংখ্য গুণ, তেমনই ভাষার প্রায় প্রতিটি শব্দেরও আছে অজস্র অর্থের সম্ভার। কালস্রোতে ও জীবনের প্রয়োজনে জীবন্ত ভাষায় আসে নতুন শব্দ, তা বিবর্তিতও হয়। পুরনো শব্দ অচল মুদ্রার মতো ব্যবহার-অযোগ্য হয়ে মণি-কাঞ্চনরূপে ঠাঁই নেয় অভিধানের সিন্দুকে।

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সমুদ্রসম―মধুসূদনের ভাষায় : ‘ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’। বৈঠকি মেজাজে, সরস আড্ডার ভঙ্গিতে লেখা এই ‘শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু’। ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক―সবকিছু মিলিয়ে শব্দের ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্য-সৌগন্ধ এবং অন্তর্গত আনন্দধারার ছিটেফোঁটা ভাষিক রূপ এই ‘শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু’ ধারাবাহিক।]

মঙ্গল

তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল কর

মলিন মর্ম মোছায়ে।

তব, পুণ্য-কিরণ দিয়ে যাক,

মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।

          ―রজনীকান্ত সেন

মঙ্গল শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে। কিন্তু নিতান্ত সুপরিচিত শব্দ। এর অর্থ সর্বজনবোধ্য এবং আম-বাঙালির আটপৌরে ব্যবহারের মধ্যে শব্দটি প্রতিনিয়ত সচল। তবু অভিধানের আশ্রয় নিয়ে মঙ্গল শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেওয়া যাক। হাবিবুর রহমানের যথাশব্দ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়ের বাংলা সমার্থশব্দকোষ থেকে জানা যায়, মঙ্গল শব্দের অর্থ নিম্নরূপ : শুভ, কল্যাণ, ঋদ্ধি, হিত, ক্ষেম, ভদ্র, ভবিক, অরিষ্ট, অভ্যুদয়, শিব, যোগক্ষেম, নিঃশ্রেয়স, শম, কুশল। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধান এবং হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ-এ জানা-অজানা-অল্পজানা আরও কিছু অর্থ পাওয়া যায়। এগুলো নিম্নরূপ : সুলক্ষণযুক্ত, মাহাত্ম্য, আশীর্বচন, হিতাশংসন, কল্যাণকর দ্রব্য, বিবাহাদির আভ্যুদয়িক কর্ম, হিতকর গ্রন্থ, চিরপ্রচলিত আচার, শুভক্ষণ ইত্যাদি।

কয়েকটি উদাহরণ :

বুলিল মঙ্গলবাদ্য বাজা বিশেষ। (বাহরাম খাঁ, ১৬৫০)।

মঙ্গল আসিয়া তবে চরণ বন্দিলা। (সৈয়দ সুলতান, ১৭০০)।

আশিস-বারির মঙ্গলঝারি। (নজরুল, ২৯২৪)।

এ আদর্শ মানুষের সর্ব্ববিধ মঙ্গলসাধনাকে ব্যাপক এবং বৃহত্তর মঙ্গলের সাধনায় নিয়োজিত…। (এস ওয়াজেদ আলী, ১৯৪৩)।

মঙ্গলসুধার মত অজস্র ধারায় নামবে বৃষ্টি। (আলাউদ্দিন আল আজাদ, ১৯৫৪)।

মঙ্গলকুলোয় ধান্য ধরে আছে সারা গ্রামবাসী। (আল মাহমুদ, ১৯৬৬)।

নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে একটা মঙ্গলাকাক্সক্ষা… কাজ করে। (আবু সয়ীদ আইয়ুব, ১৯৭৩)।

আসলে ভাষা বা শব্দের কোনও ধর্মবর্ণ ও জাতপাত নেই। শব্দের আছে ভাষাগোষ্ঠী, বিবর্তন ও এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় আত্তীকরণ। সংস্কৃত, আরবি, পালি ইত্যাদি ভাষায় বিশেষ-বিশেষ ধর্মগ্রন্থ রচিত হলেও এগুলো কোনও ধর্মীয় ভাষা নয়। নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ভাষা নেই। ভাষা সর্বকালে ও সর্বত্রই সম্প্রদায় ও ধর্মনিরপেক্ষ। ভাষা, জীবিত বা মৃত যা-ই হোক, তা ধর্ম-নির্বিশেষে বিশ্বমানবের।

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের অমর রচনাবলিতে অসংখ্যবার বহু স্থানে মঙ্গল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে,  রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনা পর্যায়ের গান : আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর…। এবং সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে/ শোন শোন পিতা/ কহো কানে কানে/ শোনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা। নজরুলের করিতায় আছে : যে-আলোক লভি দেউলে দেউলে মঙ্গল-দীপ জ্বলে। (১৯২৪)। নাসিরউদ্দিনের সওগাত পত্রিকায়ও লেখা হয়েছে এমন বাক্য : মঙ্গলসাধিকারূপে পবিত্র ইসলাম ও খেলাফতের সেবা। (১৯২৬)।

অর্থভেদে অভিধানে মঙ্গল শব্দটির পাঁচটি ভুক্তি পাওয়া যায়। এগুলো নিম্নরূপ :

মঙ্গল : পদে বিশেষ্য। অর্থ―শুভ, কল্যাণ। মঙ্গল করিব সব দেবের সমাজ। (মালাধর বসু, ১৫০০)। প্রভু বোলে গাও কিছু কৃষ্ণের মঙ্গল।  (বৃন্দাবন দাস, ২৫৮০, গুণগান অর্থে)। মঙ্গল তোমার নাম, মঙ্গল তোমার ধাম, মঙ্গল তোমার কার্য্য তুমি মঙ্গলনিধান। (ব্রহ্মসঙ্গীত, ১৮৫০)।

মঙ্গল : পদে বিশেষ্য। অর্থ―সংগীতের রাগবিশেষ। রাগিণী মঙ্গল।। কুন্দশেখর।। (বড়ু চণ্ডীদাস, ১৪৫০)। কাফি ঠাটের একটি রাগিণীর নাম মঙ্গল গুঞ্জরী।

মঙ্গল : পদে বিশেষ্য। সপ্তাহের অন্যতম দিন অর্থে। শনি মঙ্গলবার জাগাবে নিশাবাতি। (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ১৬০০)।

মঙ্গল : পদে বিশেষ্য। সৌরজগতের একটি গ্রহের নাম। মঙ্গল আসিয়া তবে চরণ বন্দিলা। (সৈয়দ সুলতান, ১৭০০)।

মঙ্গল : পদে বিশেষ্য। হিতকর গ্রন্থ অর্থে। রচিল মুকুন্দ কবি, নূতন মঙ্গল। (কবিকঙ্কণ চণ্ডী, ১৬০০)। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত মঙ্গলকাব্যগুলো এই অর্থের অন্তর্ভুক্ত।

আমরা যেভাবেই চিন্তা করি না কেন, বাংলা ভাষার শব্দসম্ভার নিয়ে যত উন্নাসিক হই না কেন, ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস কারও পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ইতিহাসের নিয়মেই ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষার ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সংস্কৃত ও প্রাকৃত হয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব। বিগত সাতপুরুষ আগের মানবজিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে যেমন বজায় থাকে, তেমনই ভাষায়ও তা লক্ষ করা যায়। শব্দের মধ্যে তা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। তাই একই ভাষাগোষ্ঠীর পূর্ববর্তী ভাষার কোনও-কোনও শব্দ পরবর্তী ভাষায় স্থান করে নেয়―কখনও বানান ও উচ্চারণে অবিকৃত অবস্থায় আবার কখনও পরিবর্তিত রূপে। সংস্কৃত শব্দের অপরিবর্তিত রূপের শব্দগুলোকে বাংলা ব্যাকরণে আমরা তৎসম শব্দ আর পরিবর্তিত শব্দগুলোকে বলি তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার অধিকাংশ শব্দই, শিকড়-সন্ধান করলে, সংস্কৃত বা সংস্কৃতানুগ। জাতকুল বিচার করে শব্দের প্রয়োগ জীবন্ত ভাষার গতিকে অবরুদ্ধ করে দেয়। কোনও ভাষার ক্ষেত্রে ছুঁৎমার্গ বাঞ্ছনীয় নয়। এক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের বহুলপঠিত বাঙ্গালা ভাষা প্রবন্ধের বক্তব্যটি মুক্তমনা সকলের জন্য সর্বমান্য বলে মনে করি। তিনি লিখেছেন : বলিবার কথাগুলি পরিস্ফুট করিয়া বলিতে হইবে―যতটুকু বলিবার আছে, সবটুকু বলিবে―তজ্জন্য ইংরেজি, ফারসি, আরবি, সংস্কৃত, গ্রাম্য, বন্য, যে ভাষার শব্দ প্রয়োজন, তাহা গ্রহণ করিবে, অশ্লীল ভিন্ন কাহাকেও ছাড়িবে না।…

… যদি কোন ধনবান ইংরেজের অর্থভাণ্ডারে হালি এবং বাদশাহী দুই প্রকার মোহর থাকে এবং সেই ইংরেজ যদি জাত্যাভিমানের বশ হইয়া বিবির মাথাওয়ালা মোহর রাখিয়া ফার্সি লেখা মোহরগুলি ফেলিয়া দেয় তবে সকলেই সেই ইংরেজকে ঘোরতর মূর্খ বলিবে। কিন্তু ভাবিয়া দেখিলে, এই পণ্ডিতেরা সেই মত মূর্খ।

তার

তার হাতে ছিল হাসির ফুলের হার

               কত রঙে রঙ-করা

মোর সাথে ছিল দুখের ফলের ভার

                অশ্রুর রসে ভরা ॥

                ―রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের এই গানের চরণের শুরুতে যে তার শব্দটি আছে এর অর্থ সবার জানা। এটি সর্বনাম পদ এবং নামপুরুষ। কিন্তু যখন বলা হয়, রান্না বেশ তার হয়েছে বা সে তার পেয়ে বাড়ি চলে গেছে অথবা তার যত সূক্ষ্ম হয়, সুর ততই চড়া হয়। উল্লিখিত তিনটি বাক্যের তার শব্দটি সর্বনাম পদ নয়, সমার্থকও নয়― ভিন্নার্থক এবং বিশেষ্য পদ। রান্নার তার  চনমনে স্বাদ অর্থে, পরের তার  টেলিগ্রাম বা তারবার্তা অর্থে এবং শেষের তার  ধাতব তন্তু বা সুতা অর্থে। তাই তার বাংলা ভাষায় বহু এবং বিচিত্র অর্থজ্ঞাপক।

শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক তার-এর অর্থবৈচিত্র্য ও ব্যাপকতা। তার মানে : স্বাদ, উচ্চগ্রাম, অতিক্রম, ধাতবরজ্জু (সোনা, রুপা, তামা, দস্তা, পিতল, লোহা ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত তার। তাছাড়া হতে পারে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, বিদ্যুৎ, বাদ্যযন্ত্র  ইত্যাদির তার), উত্তরণ, পার হওয়া, প্রণব, ওঁঙ্কার, বিশুদ্ধ, মুক্ত, লাবণ্য, উজ্জ্বলতা, নক্ষত্র, বানর সেনাপতি, দানব, ত্রাণ করা, নৌকার মধ্যস্থলে পাতবার তক্তা, একবচনে নামপুরুষের সর্বনাম পদ ইত্যাদি। এসব অর্থের  অধিকাংশই একালে আধুনিক বাংলা ভাষায় প্রয়োগ হয় না। তবে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় এগুলো ব্যবহার হতো ব্যাপকভাবেই। পরে তা আমরা উদাহরণসহ তুলে ধরব।

এখন লক্ষ করি ভুক্তিপ্রসঙ্গ। অর্থান্তরের ভিত্তিতে বিভিন্ন অভিধানে তার  শব্দটির চারটি থেকে আটটি ভুক্তি লক্ষ করা যায়। এগুলো নিম্নরূপ :

তার : পার হওয়া, অতিক্রম, উত্তর। হিন্দিতে উতার।

তার : পাক, গোঁফে তা দেওয়া। ঘন ঘন গোঁপে দেয় তার। (কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম)।

তার : সোনা, রুপা, তামা, পিতল, লোহা ইত্যাদি ধাতু থেকে তৈরি সুতো। বৈদ্যুতিক বা টেলিযোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত নানাবিধ তার। তাকে জরুরি তার করো বা পাঠাও। (জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস)। নষ্ট তার বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। (বর্তমান লেখক)। আনন্দে হৃদয় ভরি দেবঋষি বীণা ধরি,/ তারে তারে মিলাইয়া ঝংকার তুলিল। (বাদ্যযন্ত্রের তার অর্থে, দশমহাবিদ্যা)।

তার : সংস্কৃত শব্দ। বিশেষ্য পদ। খাঁটি মুক্তা, লাবণ্য, সৌন্দর্য, উজ্জ্বলতা। তাথে পরাইয়া মতি কৈল তার সম দ্যুতি, নখচিহ্ন সুধাংশু যেমন। (প্রাচীন কবি গিরিধর প্রণীত গীতগোবিন্দ)।

তার : সংস্কৃত তালু থেকে তার। স্বাদ গ্রহণের স্থান, আস্বাদেন্দ্রিয়, রসনা, জিহ্বা। সুস্বাদ (সু-তার) > তাল > তার। সংসার রাঙ্গাফলে ভুলিব না আর,/ খাইয়ে দেখেছি তাহে কিছুই নাহি সুতার,/ সে যে পূরিত গরলে, খাইলে কুফল ফলে। (রাম দত্তের গান)। একবার রসনায় যে পেয়েছে তার,/ আর কিছু মুখে ভাল নাহি লাগে তার। এই উদ্ধৃতির প্রথম তার অর্থ স্বাদ, দ্বিতীয় তার অর্থ নামপুরুষের সর্বনাম পদ। (ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত)। সুধা চেয়ে মিষ্টতার তার। (রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়)।

তার : বিশেষ্য পদ। নৌকার মাঝখানে বিছানোর তক্তাবিশেষ, দাঁড়া। চব্বিশ পরগনার আঞ্চলিক শব্দ।

তার : ক্রিয়াপদ। উচ্চারণ তারো। ত্রাণ কর, রক্ষা কর। তার পিতৃলোকে। (ধর্ম্মমঙ্গল, ঘনরাম চক্রবর্তী)। তনয়ে তার তারিণী। (রাম দত্তের গান)। সেসব আচার্য্য হইয়া তারিলা জগত। (চৈতন্যচরিতামৃত)।

তার : তদ্ভব শব্দ। সংস্কৃত তদ্ > তৎ > তার। নামপুরুষে সর্বনাম পদের একবচন। ভিন্ন বুৎপত্তিতে : তাসাম্ > তাহাম্ > তাম্ > তান্ > তার। সম্ভ্রমার্থে তাঁহার থেকে তাঁর। যার মা আনন্দময়ী তার কিবা নিরানন্দ ?/ তবে মা মা করে রোগে শোকে পাপে তাপে কেন কাঁদ ? (ব্রহ্মসঙ্গীত)। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তার সর্বনাম পদটি তানার বা তেনার হয়ে যায়। বহুবচনে তেনারা। জনৈক নেত্রীর বক্তৃতায় তা সবিশেষ লক্ষ করা গেছে। সিলেট অঞ্চলে তা সম্ভ্রমার্থে হয় তানির।

বিশ শতকে বেতারযন্ত্র আবিষ্কারের পর তারযন্ত্রের গুরুত্ব কমে গেছে। টেলিগ্রাফ, টেলিগ্রাম, তারবার্তার যুগ এখন আর নেই। সেকালে টেলিগ্রাফ অফিসের কর্মকর্তাদের বলা হতো তারবাবু। খুব সম্মানিত সম্বোধন। এখনকার আন্তর্জালিক যুগে বেতারে-ইথারে সমস্ত যোগাযোগ সম্পন্ন হয়। যোগাযোগের তারযন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে―নেই তারবাবুরা। কিন্তু সংস্কৃতি অঙ্গনের সংগীতশিল্পীদের তারযন্ত্র টিকে আছে―একতারা থেকে সেতার, তানপুরা থেকে বেহালা, এস্রাজ থেকে বিদ্যুৎবীণা। একালে নতুন করে অনেক দেশের সীমান্ত-প্রতিরক্ষায় পোঁতা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। তারবাবুরা আকাশের তারা হয়েছে। তারস্বরে চিৎকার করলেও তারা শুনবে না। কিন্তু তারবাবুদের নিয়ে রম্যগল্পটি এখনও হাসির খোরাক হয়ে বেঁচে আছে বাঙালির জীবনে। সেটি বলেই শেষ করি এ পর্ব :

তারের মাধ্যমে সব জিনিস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো যায়―এমন কথা শুনে এক কৃষক শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর জন্য একটি দইয়ের পাতিল নিয়ে গেল তারবাবুর কাছে। তিনি তো ভেতরে ভেতরে বেজায় খুশি। তারবাবু দইয়ের পাতিল ও পাঠানোর খরচ রেখে কৃষককে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু সপ্তাহ যায়, মাস যায়―দই তো আর পৌঁছে না! একদিন কৃষক এসে তারবাবুকে জিজ্ঞেস করল―দই এত দিনেও পৌঁছাল না কেন ? দই কি আপনি পাঠাননি ?

তারবাবুর উত্তর―আমি তো সঙ্গে সঙ্গেই তারে দইয়ের পাতিল পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ওদিক থেকে একজন তার বৃদ্ধ শ্বশুরের জন্য একটি লাঠি পাঠিয়েছিল। দুঃখজনক খবর এই যে, মাঝপথে সেই চলন্ত লাঠির আঘাতে পাতিল ভেঙে চুরমার!

[চলবে]

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button