আর্কাইভগল্পপ্রচ্ছদ রচনা

আফসানা বেগম : ভাগাভাগি

গল্পসংখ্যা ২০২৩

রান্নাঘরের বড় একটা ছুরি আর কাচি হাতে নিয়ে ইমু যখন চিৎকার করে ডাকল, আমি হকচকিয়ে গেলাম। পাশের ঘর থেকে ছুটে গিয়ে দেখি নীলাভ সোফায় বসা। হাসিমুখে ট্যাবে কার্টুন দেখছে আর ইমুর রক্তচক্ষু আমার দিকে। দুই হাতে ছুরি-কাচি ঝুলছে, জোরে জোরে নিশ^াস নিচ্ছে। ইমুর মাথায় কী চলছে জানি না, আমি কোনওমতে বললাম, ক..কী, মানে, চেঁচাচ্ছ কেন ? কী বলতে চাও ?

ইমুর সঙ্গে আবার কথা বলব―এমনটা ভাবিনি। সংসারের সমস্ত কিছুর ব্যাপারে মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এমনকি শুকনো ময়লা ফেলার যে বিনটা গুলশান মার্কেট থেকে মাস চারেক আগে মাত্রাতিরিক্ত দাম দিয়ে কেনা হয়েছিল সেটার ব্যাপারেও। আমি ওটা ফেলে যাচ্ছি। ইমুর পছন্দ ছিল, তাই। ইমুর পছন্দ বা ভালোলাগার স্মৃতি আমি বাকি জীবন বহন করতে চাই না। কথা হলো, বিকেলের দিকে ট্রাক আসবে, যা যা আমার ভাগে পড়েছে, সেসব নিয়ে আমি আগেভাগে এ বাড়ি থেকে চলে যাব। ইমুকে এখনও কিছুই গোছাতে দেখিনি। বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে, হোম ওয়ার্ক করাচ্ছে নিশ্চিন্তে। সাধারণ আর পাঁচটা দিনের মতোই। ইমু বাড়িওলাকেও নোটিশ দিয়েছে কি না জানি না। বাড়ি ভাড়া দেওয়া বা তার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারটা ইমুই সামলাত। বাকি বিল-টিল যা দেয়ার আমি দিতাম। হঠাৎ জানতে আগ্রহ হয়, ইমু নিজের জন্য বাড়ি ভাড়া করেছে নাকি করেনি ? আগে জানতে চাইনি। চাওয়ার মতো সখ্যও আমাদের মধ্যে গত কয়েক দিনে ছিল না। নিজের জন্য বাসা ভাড়া করলে করেছে, না করলে করেনি। আমার কী করার আছে এতে ? নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে না যখন, তখন হয়তো এ মাসটা এখানেই থাকবে। বড় এই বাসার ভাড়াটা বেশি, এ মাসে ইমুকে বিলসহ গুনতে হবে। ছোট একটা বাসা দেখে চলে গেলেই পারত। কিন্তু আমার আগ বাড়িয়ে সে কথা বলা ঠিক হবে না। পথ আলাদা হয়ে গেছে, এখন ওকে অনুসরণ করা আর শোভন দেখায় না। আর কেনই বা আমি যাব ওর মতো একটা মেয়েকে এসব বুদ্ধিটুদ্ধি দিতে! 

কিন্তু আমার কী করার আছে, নীলাভ ছোট, সে শুধু তাকে নিয়ে থাকবে। নিরাপদ কোথাও থাকবে আর আমার থেকে দূরে থাকবে―এর সবই তো ইমুর সিদ্ধান্ত ছিল। হয়তো খানিকটা ভুল বললাম। সিদ্ধান্তটা ছিল আমারই। ইমু শুধু তা লুফে নিয়েছে। নিজে মুখে ডিভোর্সের কথা উচ্চারণ করেনি, যে ঘটনার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করছিল তা মেনে নেওয়ার ভান করেছে শুধু। মানুষ জানবে ডিভোর্সটা আমিই করছি, ইমু নয়, ইমু অত্যাচারিত বা প্রতারিত। ইমু অসহায়। আমি তাকে ডিভোর্স করে তার আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

তবে আমি করি বা সে, গতকাল, ২৯ জুলাই দুপুর দেড়টায় আমাদের ডিভোর্সটা হয়েই গেল।

ডিভোর্স পেপারে সই করার সময়ে ইমু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কি না জানি না। তবে সে যখন সই করছিল তখন আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এমনভাবে কলম চালাচ্ছিল, যেন কলম নয়, আস্ত ছুরি; চোখে তীব্র জিঘাংসা নিয়ে লাশ কাটছে। বিস্ফোরিত সেই চোখের কোণে দু ফোঁটা অশ্রুও জমে ছিল কেন যেন। অশ্রু জমে কাচের স্তরের মতো উঁচু হওয়া চোখ দেখে আমি ক্ষণিক বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। ইমু কি তবে আমাদের ডিভোর্সটা চায়নি! কিন্তু আমিই বা তাই বলে ছাড়ব কেন, আমি তো চেয়েছি! আমি বহুবার চেয়েছি যে ইমুর কাছে থেকে চলে যাই, পালিয়ে বাঁচি। নীলাভ মাঝখানে আছে দেখেই না দুজনে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করা। এখন নীলাভ বেশ খানিকটা বড়। তাকে বাড়িতে রেখে অফিসে যাওয়া ইমুর জন্য কঠিন হবে না। তাহলে আবার এই ন্যাকা কান্না কেন ?

ডিভোর্স ফাইল করার পরে তিন মাসের মধ্যে দু বার আমাদের আদালতে আসতে হয়েছে। ডিভোর্স ফাইল আমিই করেছি। ওরকম একটা মেয়ের সঙ্গে আমার মতো একটা ছেলে থাকবে কেন ? বাচ্চা আছে তাতে কী হয়েছে ? বাচ্চা থাকলেই কি তার জন্য সারা জীবন ভুল সম্পর্কে ঝুলে থাকতে হবে নাকি ? বাচ্চা থাকা মানে তার জন্য আত্মহত্যা স্বীকার করে নিতে হবে, এসব ফালতু সেন্টিমেন্টের ধার আমি ধারি না। যাক সেসব কথা। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দু-দু বার তাই আদালতের বারান্দায় ইমুর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়েও না আমার মতের পরিবর্তন হয়েছে, না ইমুর। আদালতের স্যাঁতসেতে গন্ধওলা উঁচু ছাদওলা ঘরে গম্ভীর একটা কণ্ঠ আমাদের দিকে তাকিয়ে জানতে চেয়েছে, আপনারা কি এখনও বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অটল আছেন ? এর মধ্যে আপনাদের মনের কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে ? আমি স্পষ্ট করে বলেছি, জি না। ইমুকে দেখেছি দু বারই মাথা ডানে বামে নাড়িয়েছে। গম্ভীর কণ্ঠটা তখন খানিক বিরক্তি নিয়ে বলে উঠেছে, দয়া করে মুখে উচ্চারণ করে বলুন, মানে, জানতে চাচ্ছি, এর মধ্যে আপনার চিন্তায় বা সিদ্ধান্তে কি কোনও পরিবর্তন এসেছে ? ইমু তখন ছোট্ট করে বলেছে, না।

সময় এগিয়েছে আর আমাদের সম্মতিতে আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হয়েছে।

‘এর মধ্যে’ বলতে আদালত যে সময়টার কথা বলেছিল, সেটা ছিল তিন মাস। দুজনেই জানি বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু একই বাড়িতে থাকছি―আর কোথায় যাব! আমি শোবার ঘরেই থেকে গেলাম, ইমু চলে গেল দ্বিতীয় আর তুলনামূলক ছোট শোবার ঘরটাতে। চৌদ্দশ বর্গফুটে ঘুরেফিরে আমাদের ডাইনিং টেবিলে দেখা, রান্নাঘরে দেখা। সরু করিডোর হয়ে বাঁক নিতে গিয়ে প্রায় মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি। তবু কেউ কাউকে যেন দেখতে পাই না। নির্ভুল আন্দাজে পাশ কাটিয়ে যাই। একেই বলে ইনভিজিবল ট্রিটমেন্ট। শরীরের দিকে চোখ যায়… সকালে দেখি ইমু তার প্রিয় নীল শাড়িটা পরেছে। অফিসে নিশ্চয়ই বিশেষ কোনও ব্যাপার আছে আজ ? জানতে চাওয়া হয় না। কোনও দিন খাবার টেবিল থেকে পানির বোতল নিতে এলে দেখি সকালের সিরিয়াল খাওয়ার তিনটা ছোট আর গর্তওলা লাল টুকটুকে বাটির গায়ে ইমু হাত বোলাচ্ছে। মনে হয় একটা হাত উঠে যায় গালের দিকে। যেহেতু আমরা কেউ কারও মুখের দিকে তাকাই না, তাই অনুমান করে বলতে পারি, হাতটা ওর গড়িয়ে পড়া অশ্রুই মুছে থাকবে। হাতের নড়াচড়াটা দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু ইমু কেন করছে ওরকম ? মাথা ঘামাই না। তবে কেন যেন দৃশ্যটা কয়েক দিন টানা খচখচ করে মনের মধ্যে।

ওই তিনটা বাটি একদিন আড়ং থেকে কিনে এনেছিল ইমু। জানতে চেয়েছিলাম, তিনটা বাটি কেউ কেনে ? তিন কেমন সংখ্যা বলো তো ? কিনলে কেনে ছয়টা বা ধরো, ডজন কেনে। কিংবা না হয় চারটাই কিনলে। তাই বলে তিনটা কেন কিনবে ? সে বলেছিল, বা রে, আমরা তিনজন মানুষ না বাড়িতে ? বাটিগুলো সকালে সিরিয়াল খাওয়ার জন্য দারুণ না ? তারপর মুচকি হেসে বলেছিল, অফিস থেকে বেরিয়ে হুট করে ঢুকলাম তো আড়ংয়ে, ব্যাগে আসলে টাকা ছিল না, দেখলাম যা ছিল তাতে অন্তত তিনটা তো কিনতেই পারি।

ইমু কি আমাদের তিনজনের একসঙ্গে বসে সিরিয়াল খাওয়া মিস করবে ? ওর মনে কষ্ট হলে আমি না হয় একটা বাটি নিয়ে গেলাম, তাহলে আমাকে আর মনে পড়ল না। আমি এই কদিন সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমার একটা সুতোও ফেলে যাব না। যতকিছুতে আমার ছোঁয়া বেশি, তা সরিয়ে নেব। যেন আমার সব স্মৃতি মুছে দিয়ে যেতে পারি। কিন্তু পারছি না। ডাইনিং টেবিল ইমু রাখবে। একদিন ওখানে বসে একটা ভাঙা ফুলদানি জোড়া দিয়েছিলাম সুপার গ্লু দিয়ে। টিউবের মুখ খুলতেই দু তিন ফোঁটা পড়েছিল টেবিলে। মুছতে গিয়ে ছড়িয়ে গেছিল আরও। টেবিলের মসৃণ শরীরে ওই উঁচু হয়ে থাকা সুপার গ্লুয়ের বসে থাকা পোটলা দেখে ইমুর সে কী রাগ! দিলে তো আমার সাধের টেবিলটার বারোটা বাজিয়ে ? এটা কি এমন জিনিস যে রোজ রোজ কিনব ? আমি চুপ। মুহূর্তে শক্ত হয়ে যাওয়া গ্লুয়ের ওপরে হাত বুলিয়ে ইমু বলেছিল, ইস কত দোকান ঘুরে টেবিলটা পছন্দ করেছিলাম… মনে আছে আমি কিছুই বলিনি, একমাত্র ‘স্যরি’ ছাড়া। জোড়া লেগে যাওয়া ভাঙা ফুলদানি হাতে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, ধুর ছাতা… এই সুপার গ্লু আবিষ্কার হলো কেন! শুনেছিলাম জন্মের সময়েও এমনই এক অকাণ্ড ঘটিয়ে এই জিনিস পৃথিবীতে এসেছিল। বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে চাচ্ছিলেন অন্য কিছু। বছরের পর বছরের অপেক্ষা ছিল। দিনের পর দিনের ব্যর্থতা তাকে এমনই হতাশ করেছিল যে একদিন ল্যাবরেটরির সমস্ত দ্রবণ ছুড়ে ভেঙে উলটে পালটে তিনি বাড়ি চলে এসেছিলেন। তারপর হতাশা খানিক কাটলে আবার ল্যাবরেটরিতে গিয়ে দেখেন সেখানকার সমস্ত কিছু একটার সঙ্গে আরেকটা আটকে গেছে; জন্মের আটকা। যা যা রাসায়নিক ছুড়ে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানী তাই দিয়ে তখন তৈরি হলো সুপার গ্লু। আগের ভাবনার এই সমস্ত আওড়াতে গিয়ে মনে পড়ে, প্রেম-ভালোবাসায় সুপার গ্লু থাকে না। বিয়ের পরে তো কোনও গ্লু-ই আর কাজ করে না। হায় হায়, থাকলে ইমুর সঙ্গে আজীবন আটকে থাকতে হতো!           

যা হোক, ইমু বাটির গায়ে হাত বুলিয়ে কাঁদছিল কেন ? পরে এক ডাক্তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ব্যাপারটা। বলল, আফটার অল ডিভোর্সের মতো একটা বিষয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে সে―রোলার কোস্টার ইমোশনাল স্টেট অফ মাইন্ড বলতে পারিস। মানে, এই হাসি এই কান্না, আবার এই রাগ এই মায়া―এরকম আর কী। সোজা কথায়, চাচ্ছে ডিভোর্স কিন্তু আগের সুন্দর সময়গুলোও মনের মধ্যে পুষে রাখছে। এটা অন্তত কিছুদিন তো চলবেই। বাদ দে। অত কান্না দেখলে চলে না। মানে, জীবনে তোকে আগে বাড়তে হবে না ? 

আমিও তা-ই চাই। জীবন আগে বাড়ুক। আবার অস্বীকারও করতে পারি না যে, নয় বছর ধরে দিনরাত একসঙ্গে থাকতে থাকতে সামনাসামনি থাকাটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি না থাকলেও হয়তো ইমুর মনে হতে পারে আমি পাশের ঘরেই আছি। আবার ইমু না থাকলেও আমার মনে হতে পারে ইমু অফিস থেকে ফিরে চা বানাতে রান্নাঘরের দিকে গেছে। কখনও আমি ভুল করে, ইমু… বলে একটা হাঁক দিয়েও বসতে পারি। এরকম একটা হ্যালুসিনেশনের মধ্যে হয়তো আমরা কিছুদিন থাকব―সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে… সম্পর্ক কি আসলে আইন দিয়ে বেঁধে শেষ করা যায় ? পৃথিবীর অনেক সম্পর্কেরই হয়তো সমাপ্তি আসে না। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ইতি টানতে হলে যা ঘটে তা হলো কেবল দৈনন্দিন যোগাযোগটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। প্রতিদিনের বিস্ময়, কৌতূহল, ভালোলাগা না-লাগার বিষয়ে তখন আর আমরা আলাপ করব না। চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় পা রেখে ইমু আর বলবে না, অ্যাই দেখো দেখো, অপরাজিতা ফুলে ভরে গেছে গাছটা! ডাবল পেটাল। সাইজও কিন্তু নরমালের চেয়ে বড়। একদিন চলো অপরাজিতার চা বানাই… আমি তখন অপরাজিতা থেকে চোখ সরিয়ে বলব―না, আজকে হঠাৎ চা এত ভালো হলো কী করে বলো তো ? মশলা দিয়ে বহুক্ষণ জ¦াল দিছো মনে হচ্ছে ? অফিস থেকে ফিরে দাঁতে দাঁত চিপে বলব না, দুপুরে তুমি তোমার ওই কলিগ রিয়নের সঙ্গে আড়ং ক্যাফেতে কী করতেছিলা বল তো ? ইমুও কটমট করে আমার দিকে তাকাবে না। জানতে চাইবে না, আচ্ছা! আমার পিছনে তাইলে গুপ্তচর লাগাইছো মনে হয় ?      

তবে আমাদের সব দিন এমন ছিল না। বিয়ের ঠিক আগে আর ঠিক পরে-পরে আমি যদি ইমুকে বলতাম, রাস্তার ওমুক মোড়ে আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি আসব জেনে সে তিন- চার ঘণ্টা পর্যন্ত সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত। শূন্য দৃষ্টিতে রাস্তার উলটোদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি যদি তাকে রাগ দেখিয়ে বলতাম, ওদিকে তাকায়ে কি ওই ছেলেটাকে দেখো ? আমার থেকে অনেক সুন্দর, তাই না ? ইমু থতমত খেয়ে যেত। বলত, স্যরি, আমি কিন্তু ওদিকে কাউকে দেখতেছিলাম না, এমনিই তাকায়ে ছিলাম। মানে, ওই যে দেখো ওদিকে ওই সাইনবোর্ডটার দিকে… ইমুর মুখ লাল হতো। আমি রাগে গজগজ করলেও সে চুপ থাকত।

আর এখনকার ইমুর হাতে এক বিন্দু সময় নেই আমার জন্য। এখন যদি বলি, প্রতিদিনই কোনও না কোনও কলিগের সঙ্গে তোমার আড়ং ক্যাফেতে যাইতে হবে কেন ? ইমু তেলেবেগুনে জ¦লে ওঠে। আমার দিকে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, আমার অফিস আড়ংয়ের বিল্ডিংয়ে, তাইলে আমি আর কোথায় যাব ?

আরে বাবা, আমি বলি প্রতিদিন একটা করে ছেলে ধইরা নিয়া যাইতে হবে কেন ?

আমার কলিগরা ছেলে হইলে আমি কী করব ? তাদের সঙ্গে খাইতে পারব না ? আচ্ছা, বলো তো, তোমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে এত সমস্যা কেন ?

সমস্যা কেন আমি ইমুকে বহুবার বুঝিয়ে বলেছি। তার ইউনিভার্সিটির বেশির ভাগ বন্ধুও ছেলে। এই ব্যাপারটা আমি বুঝি না। তারা নিজেদের মধ্যে তুই-তোকারি করে আলাপ করে। এই যেমন নিলয় নামে একটা ছেলে, কথা নেই বার্তা নেই দু দিন পরপর সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে এসে হাজির। তারপর সে কী ঢলাঢলি হাসাহাসি! আমি একদিন ইমুকে বললাম, এই নিলয়ের সঙ্গে যদি তুমি একটা লিফটে আটকা পড়ো তাহলে কী করবা ? সে বলল, কী আর করব, জোরে জোরে কাউকে ডাকব বাঁচানোর জন্য। বলে খুব হাসতে লাগল। আমি বললাম, হাসছো কেন ?

আর বোলো না, আমাদের অফিসের লিফটের দেয়ালে কী লেখা আছে জানো ? প্রথম লাইনে উপরে ওঠার দোয়া, দ্বিতীয় লাইনে নিচে নামার দোয়া, আর তৃতীয় লাইনে, লিফট আটকে গেলে কুদ্দুসের ফোন নম্বর।

কুদ্দুসের ফোন নম্বর মানে ?

মানে, লিফট আটকে গেলে আর দোয়া পড়ে লাভ নাই। কেউ উদ্ধার করবে না। তাই তখন ফোন করতে হবে কেয়ার টেকার কুদ্দুসকে, বলে ইমু হো হো করে হাসা শুরু করল।

তুমি কি সত্যিই কোনও দিন নিলয়ের সঙ্গে ওই লিফটে আটকা পড়ছিলা ?

না তো! এই কথা কেন বারবার বলতেছো বল তো ?

আমি বলতে চাচ্ছিলাম, লিফটের কথা বাদ দাও, একটা রুমে তুমি নিলয়ের সঙ্গে আটকা পড়লে সেক্স করতা না ?

ইয়া খোদা এইসব কী বলতেছো ? আমি তোমার সঙ্গে ম্যারিড, আর নিলয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে না, ওই যে তিতুন নাম। কিন্তু এই রকম একটা বিশ্রী চিন্তা তোমার মাথায় কী করে…

ইমুর মুখ ঘৃণায় এমন বিকৃত হয়ে যেত যে আমার মনে হতো আমাকে ঠাস করে একটা চড় মেরে ইমু সরে গেল। কিন্তু তারপরেও আমি কিছুতেই এরকম বিশ^াস থেকে বেরোতে পারি না যে, ইমু কারও সঙ্গে সেক্স করছে। কী করি কী করি! কিছুতেই নিজের মাথা থেকে এই চিন্তা বের করতে পারি না। ইমু যত ছেলের সঙ্গে মেশে, তার বন্ধু, তার কলিগ, এমনকি এই বিল্ডিংয়ের পাশের ফ্ল্যাটের মাঝবয়সী রশিদ সাহেব, আমাদের বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার মোহসিন―এদের প্রত্যেকের সঙ্গে কল্পনায় আমি ইমুকে শুয়ে থাকতে দেখি। আমি নিজে নিজেই জেনে যাই, ইমু এদের কারও না কারও সঙ্গে শুচ্ছেই! কিন্তু কেন, আমি থাকতে ইমুর এত ছেলের দরকার পড়ছে কেন, কিছুতেই নিজের ভিতরে উত্তর পাই না।

তোমার এত ছেলের দরকার পড়ে কেন, ইমু ?

তুমি না পাগল হয়ে গেছো! মাথার ট্রিটমেন্ট করাও। আমি বাঁচি না নিজের জ¦ালায় আর উনি আছেন… ছিঃ

ছিঃ কাকে বলো, ইমু ? ছিঃ তো বলব আমি। কীসের জ্বালা শুনি তোমার ? শরীরের ?

আমার চাকরি, প্রতি মাসে বোর্ড মিটিংয়ের সময়ে নতুন প্রেজেন্টেশন রেডি করা, বাচ্চা একদিকে রাত জাগায় ওদিকে সকালে উঠে অফিসে যাই, দেখো না ? বাচ্চা কাঁদলে তুমি তো টুক করে মাঝরাতে উঠে বসার ঘরের সোফায় গিয়ে ঘাপটি মারো। কোনও দিন ঘুম চোখে ওকে ফিডার বানিয়ে দেখো দেখি।

শোনো, এসব বলে তুমি আমার কথা ঘোরাচ্ছ।

ইমু এরপর আর কথা বলত না। কখনও বা যাবার সময়ে বিড়বিড় করে বলত, আচ্ছা, আমি বুঝি না তুমি মানসিক রোগের চিকিৎসা করাও না কেন, হুম ?

আমি পাগল, ইমু ? পাগল আমি ? একদিন এই বলতে বলতে ইমুর পিছনে দুরন্ত ষাঁড়ের মতো ছুটে গেছিলাম। কিন্তু আমি পৌঁছতে পৌঁছতেই ইমু মুখের ওপরে শোবার ঘরের দরজা আটকে দিয়েছিল। হাতের কাছে পেলে তখন ওকে আমি খুব দুমদাম লাগিয়ে দিতাম। দরজায় ধমাধম লাথি দিয়েছি, কাঠের ওপরে ধাক্কা দিতে দিতে হাতের তালু লাল করেছি। ইমু দরজা খোলেনি। দেড় বছরের বাচ্চার কান্নার রোল শোনা গেছে ধাক্কার জেরে। কান্না শুনে আমার মাথায় আরও বেশি রক্ত উঠে গেছে। ইমু ছিল আমার, একান্ত আমার। আর আজকে কিনা দেড় বছরের এই পুঁচকে বাচ্চা তাকে দখল করে ফেলেছে!

বারবার এরকমটা হবার পরে লক্ষ করেছি আমার অজান্তে ইমু কোন ভোরে উঠে কাজকর্ম সেরে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। আর ঘুম থেকে উঠে আমার বেশ বোকা বোকা লাগে। রাতের ঘুমে মাথাটাও ঠান্ডা হয় খানিক।  ভোরের শীতের মতো কিছুটা অপরাধবোধ জড়িয়ে ধরে তখন। তবে ইমুকে সেসব বলার সুযোগ পাই না। প্রতিবার লক্ষ করেছি ইমু এরকম একটা ঘটনার পরে বেশ কয়েক দিন মৌনীবাবা সেজে থাকে। কথা বলে না, আমাকে দেখতেও পায় না।

তারপর সংসারের বিচিত্র প্রয়োজনে ঠেকতে ঠেকতে একদিন যখন আবার ইমুর সঙ্গে কথাবার্তা স্বাভাবিক হয়ে আসে, সুন্দর কোনও বিকেলে জানতে চাই, আচ্ছা, ইমু, সেই যে প্রথম দিকে হাজার অপেক্ষা করালে, হাজার বাজে কথা বললেও তোমার হাসি মুখটা কখনও গোমড়া হতো না, সারা দিনের ঝগড়াঝাটির পরেও রাতে তোমার শরীর আমার জন্য তুমুল জেগে উঠত―কিন্তু এখন কেন এরকম হয় না বলো তো ?

ইমু আমার দিকে হতাশার চোখে তাকায়। ছয় সেকেন্ড চোখের পলক পড়ে না। তারপর ঠোঁটে বিরক্তির আভাস ফুটিয়ে দীর্ঘ শ^াস ছাড়ে। ওকে দেখলে মনে হয় এরকম অবান্তর কথার কী উত্তর দেবে জানে না কিংবা উত্তর দেয়াটাই তার জন্য অবান্তর বিষয়। তারপর অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে এক নাগাড়ে বলে, সংসারটা সাজালাম, চাকরি বাঁচিয়ে তাতে লেগে থাকলাম, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটলাম, তোমার মায়ের সেবা করার জন্য নিজের ঘোরাঘুরির শখ বিসর্জন দিলাম, তিনি আমার কোলের ওপরে মারা গেলেন, বাচ্চা নিলাম, পুরা প্রেগনেন্সি অফিস করলাম, তারপর দিনরাত জেগে বাচ্চা আর অফিস সামলালাম, তার ওপরে সংসারের বাজার-রান্না-গোছগাছ-মেহমানদারি এক তালে করে গেলাম―এত কিছুর মধ্যে দিয়ে যাবার পর তুমি আমার ভিতরে প্রথম দিনের সেই প্রেমিকা খোঁজো, আমার আচরণে সেই উদ্দাম প্রেম আশা করো, তোমার লজ্জা করে না ? আমাকে সিনেমার ক্যাটরিনা কাইফ পেয়েছো ?

আমি থতমত খেয়ে যাই ওর কথা শুনে কিন্তু সামলে নিয়ে ঠিকই বলি, কিন্তু এত এত মেন্টাল প্রেশার নিয়ে তুমি অন্য ছেলেদের সঙ্গে তো ঠিকই ক্যালাইতে পারো দেখি! তোমার কলিগদের সঙ্গে লাঞ্চের সময়ে তো তোমার হাসিঠাট্টার অভাব পড়ে না!

ওরা আমার সঙ্গে মানসিকভাবে কেবল বন্ধুত্বের বা সহকর্মীর সম্পর্কে আছে। তোমার মতো প্রেমিক বা স্বামী নয়। আমার কাজকে তারা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারে। আর তোমার আছে সংসারে সারাক্ষণ খালি ভুল ধরা, অতৃপ্তি। আমাকে ছোট করার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার যাবতীয় কৌশল তোমার জানা। সন্দেহের জন্য তুমি নোবেল প্রাইজ পাবা। আমাকে বউ না, সেক্সের একটা উপাদান ভাবো তুমি, এইটা আমি বুঝি।

তা এতই যখন বোঝ…

তো ?

এতই যখন বোঝো, তাইলে থাকো কেন আমার সঙ্গে ? ডিভোর্স করতে পারো না ?

এরকম কথাবার্তা আমাদের মধ্যে হয়েছিল বেশ কয়েকবার। বলা যায় কমবেশি বছরে দু-তিনবার হতো। আর তারপর ইমু কেন যেন ধীরে ধীরে আরও ধৈর্যশীল, আরও চুপচাপ হয়ে পড়ে। আমি যতবার তাকে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রশ্ন তুলি, সে হয়তো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। তার শীতল ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করলে সে তার চেয়েও হিমশীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়েই অন্য ঘরে চলে যেত। কোনও কোনও দিন, এরকম কোনও কথা কাটাকাটি হলে ইমু এমনকি আমার সঙ্গে শুতেও আসত না। আমি ঘুমানোর আগেই বাচ্চা নিয়ে পাশের ঘরে চলে যেত। একদিন এ নিয়ে বলাতে ইমু রাগে আগুন হয়ে গেল, সারা দিন হিউমিলিয়েশন আর রাত হলে শোয়া, তাই না ? ছিঃ

আমি বুঝি না এর মধ্যে ছিঃ বলার কী হলো। সাংসারিক তর্ক-বিতর্ক এক আর রাতে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে শোয়া আরেক। এই কথাটা ইনিয়ে বিনিয়ে বলাতে ইমু অবশ্য আমাকে একদিন পারভার্টেড বলে গালিও দিয়েছিল। তাও তো চিৎকার করত, তাও তো গালিগালাজ করত, কিন্তু মাস কয়েক হয়েছে একেবারে মুখে তালা। যদিওবা মুখ খোলে, টেলিফোনের রেকর্ডেড হুঁশিয়ারির মতো একই সুরে কিছু শব্দ উচ্চারণ করে। কণ্ঠে কোনও ওঠানামা নেই। আমার অস্থিরতা, চেঁচামেচি আর সন্দেহের বিপরীতে ইমু যেন পাথরপ্রায়! ইমুর নির্লিপ্ততা আমার জেদ দ্বিগুণ করে কখনও। আমি চিৎকার করে বলি, তুমি তো একটা কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার হতে পারবে, ইমু!

ইমু অদ্ভুত বৈপরীত্য গলায় এনে কথা বলে। শান্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, তোমাকে খুন করতে পারছি না, তুমি নীলাভের বাবা যে! জানি না কেন ওর ঠান্ডা গলা আমার গায়ে কাঁটা তুলে দেয়।                   

ইমু কি আমার ধৈর্য পরীক্ষা করছে ? যাক, ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত তাহলে আমি নিয়েই নিলাম। মনকে বোঝালাম, চেষ্টা করিনি, তা নয়। বেশ কয়েক বছর চেষ্টা তো করলাম। ডিভোর্স করে চলে যাব। ইমু বুঝুক ঠেলা। একটা বাচ্চা নিয়ে চাকরি করে একা এই শহরে টেকা কত কঠিন, বুঝুক এবারে। তিন কূলে কেউ থাকলেও না হয় কথা ছিল। ভাবতে ভাবতে লজ্জাও লাগল, সারা পৃথিবীর মধ্যে আমি একা এক দল আর ইমুই একমাত্র আমার প্রতিপক্ষ! আমাকে জিততে হবে। যে কোনও মূল্যে জিততে হবে।

ছেলের দায়িত্ব নেব না। নিতে গেলে ইমু আরও বেশি ঝামেলা করবে আমি জানি। বলবে, সে কী, সাত বছর হতে ওর ঢের দেরি! আমি বললে তুমি ওর সঙ্গে দেখা করতে পারবে, নয়তো নয়। তাই ওসব ঝামেলায় যাব না। বাচ্চার অসুখ-টসুখ, খাবারের বায়না, স্কুল থেকে আনা-নেওয়া―বুঝুক ঠেলা!

ডিভোর্স সাইন হওয়া পর্যন্ত এ বাড়িতেই ইমুর সঙ্গে থাকতে হবে ভেবে বিরক্তিতে মন বিষিয়ে গেল। মনকে বোঝালাম, নয় বছর যখন পেরেছি, আর না হয় তিনটা মাস। তার মধ্যেও একদিন দেখি এক কলিগ ইমুকে বেশ রাতে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল। দরজার এপাশ থেকেই শোনা গেল হাসাহাসি। গ্লিটারের প্রলেপে ঝলমলে মুখে ইমু চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকল। আমার দিকে দৃষ্টি পড়লে চোখ সরিয়ে নিল মুহূর্তেই। মুখে কী যেন সব আসছিল, তবে সামলে নিলাম… শালা! এই সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে আমি বরং তখন থেকে ভাগাভাগিতে মন দিলাম… টিভিটা আমি কিনেছিলাম। ফ্রিজের কিস্তি দিয়েছিল ইমু। ট্রেডমিল ইমুই ব্যবহার করত বেশি তবে কিনেছিলাম আমি। ওটার হ্যান্ডেলে তোয়ালে ঝোলানো ছাড়া তেমন ব্যবহার করিনি। ওটা ট্রাকে ওঠানো কঠিন হবে, ইমুর কাছেই থাক। ভারী বেডকভার আমারই কেনা, তবে ইমুর শোয়ার স্মৃতি মেশানো… থাক ওটা। প্রেশার কুকার, রাইস কুকার যদিও আমার কিনে আনা কিন্তু ইমুর তো লাগবে। আবার এত ভাবলেও চলে না। ওসব কি আমার লাগবে না ? নিজেই তো রেঁধে খাবো। চট করে অর্ডার দিয়ে একটা বউ পাওয়া যায় না। ইমুও হয়তো আমার ব্যাপারে এই ভেবেই খুশিতে আছে, ভাবছে, বুঝুক ঠেলা!

ডাইনিং টেবিলের চেয়ারগুলো আমার। টেবিল তুমি নাও, কিন্তু চেয়ারগুলো আমার―বলাতে ইমু দমে গেল। তারপর ঠোঁট জোড়া রেখেই মুখ বিস্তৃত করে হাসল সামান্য। এর মানে কী হতে পারে ? আমি কঞ্জুস ? নাকি, ঠিক আছে একই রকমের চেয়ার সে আবার কিনে নেবে। যা হোক, বেডকভার না নিই, খাটটা নেব। পছন্দ করে কিনেছিলাম। অন্য ঘরের খাটটা ইমুর জন্য রেখে গেলাম।

তিন দিন ধরে পই পই করে ভাগাভাগি করি। কখনও নিজেই সিদ্ধান্ত নিই, কখনও ইমুকে সুযোগ দিই। যা হোক, তেমন বিব্রতকর কিছু ঘটে না বলতে গেলে। বরং সবকিছু সূক্ষ্মভাবে শেষ হয়। তাই এখন ইমুর চিৎকার অযথা ভয় ধরায়। সামনে গিয়ে বলি, কী বলতে চাও ?

ইমু আমার হাতে ছুরিটা চালান করে। মানে, সে বাড়িয়ে ধরতেই আমার শরীরের রিফ্ল্যাক্স, হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিই। ইমুর হাতে রান্নাঘরের বড় কেচিটা ঝুলছে।

সবই তো ভাগাভাগি হলো, এবারে এটাকে কাটো। মাথার মাঝখান থেকে কাটা শুরু করবে। লম্বালম্বি।

ইমু কথাগুলো বলার সময়ে নীলাভের দিকে ইশারা করে। সে আমাদের দিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে টিভিতে মগ্ন। দুই হাতে তালি দিচ্ছে আর দেখছে। ইমু স্বভাবসুলভ নির্লিপ্ত গলায় বলে, কই, শুরু করো।

আমার বলতে ইচ্ছা করে, পাগল হয়ে গেছো নাকি! কিন্তু জানি না কেন বলতে পারি না। ছুরিটা হাত থেকে ফেলতেও পারি না। শরীর অসার হয়ে মনে হয় ছুরিটা হাতে আটকে গেছে, আর আজীবন আটকে থাকবে।

সচিত্রকরণ : শতাব্দী জাহিদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button