আর্কাইভগল্প

শরীরে অনেক কাঁটা : জয়দীপ দে

গল্প

ক্যাজুয়েল্টি কাউন্টারের সামনে আসতেই এক ভদ্রলোক ডেকে উঠলেন, বদ্দা কেন আছন?

ভদ্রলোকের সঙ্গে আগের দিন পরিচয়। বেসমেন্টের টয়লেটের সামনে। কম বয়সি এক ছেলেকে টয়লেটে ঢুকিয়ে তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কথা বলছেন। কথা শেষে আমি বিনীতস্বরে জানতে চাইলাম, বদ্দার বাড়ি হন্ডে।

সে সূত্রে আলাপ।

২০ বছরের ভাতিজাকে নিয়ে এসেছেন। ব্লাড ক্যান্সারের পেশেন্ট। এ পর্যন্ত তারা মেনে নিয়েছিলেন। এখন ডাক্তার বলছে এপিএমএল গোছের ক্যান্সার। এটা যদি কমপ্লিকেটিভ হয় তাহলে কোনও চিকিৎসা নেই। এই চিন্তায় ভদ্রলোক অস্থির।

বললেন, দোয়া কইরেন ভাই, ভালো কিছু যেন আসে। এক্কেরে গুঁড়া পোয়া। এব ছর এইচএসসি দিছে। জিপিএ ৫ পাইছে।

মনটা বিষাদে ভরে গেল। সব ভুলে ওকেই সান্ত্বনা দিতে মন চাইল।

সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আবার দেখা। টেস্টের রেজাল্ট এসেছে। ডাক্তার রোগীর অবস্থা দেখে ভীষণ আশাবাদী। দুমাস চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যাবে। ভদ্রলোকের মুখ আনন্দে ঝলমল করছে।

ক্যাজুয়াল্টিতে দেখা হলো চট্টগ্রামের আরেক ভদ্রলোকের সঙ্গে। চারবার কেমো দেয়ার পরও তার স্ত্রীর অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। বাধ্য হয়ে ক্যাজুয়াল্টিতে এসেছেন। ডাক্তার বলছে ভরসা দেয়ার মতো কিছু নেই। তিনি টাটার অব্যবস্থাপনা নিয়ে খুব ক্ষুব্ধ। পাশেই বসেছিলেন মুর্শিদাবাদের এক ভদ্রলোক। ৮ মাসের সন্তানের চিকিৎসার জন্য তিন মাস ধরে পড়ে আছেন মুম্বাই। তিনি টাটার সেবায় আশাবাদী। লোয়ার পারেলে ৭০০ টাকা রোজে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তার প্রতিদিনের আয় ৭০০ টাকা নয়। জমি জিরাত বেচে এসেছেন।

একটু দূরে মেঝেতে লিকলিকে এক ছেলে মগে প্রোটিন পাউডার ঢেলে পানিতে গুলাচ্ছে। একাই এসেছে বাঁচার সংগ্রামে। ক্ষুধা পেলে কোলকুঁজা হয়ে বাইরে যায় নঙ্গরের খানা খেতে। ক্যাজুয়াল্টির সাময়িক আতিথ্য শেষ হলে খোলা আকাশ তাকে আশ্রয় দেবে ফুটপাথে।

২৫/২৬ বছরের এক তরুণী ফোলা ফোলা হাত দুটো নিয়ে স্কার্ফ মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সন্তর্পণে। হিন্দি ইংরেজি কিছুই জানে না। ইশারায় দিব্যি সারিয়ে নিচ্ছে ভাব বিনিময়। তার হাসি দেখলে মনে হয় তার মতো সুস্থ সবল মানুষ দুনিয়ায় দুটি নেই। অরুণাচলের বৃদ্ধ আমাকে দেখে হেসে কুটিকুটি। বাংলাদেশের মানুষ হিন্দি বলতে পারে তার ধারণায় ছিল না। পিঠে জীবাণুর ঘর বসতি নিয়ে বাংলাদেশ নামের বিস্ময়কর দেশটিতে যাওয়ার পথ জেনে নিচ্ছেন। আসামের এক যুবক কাছে এসে জানাল তারা ভাগ্যবান, তার বাবার ক্যন্সারটা ধরা পড়েছে আর্লি স্টেজে। কেটে ফেলে দিলেই ল্যাটা চুকে গেল। কেমো লাগবে না। আমি তার সঙ্গে হেসে হেসে বলি, সবাই ভালো থাকুক।

ক্যাজুয়াল্টি জুড়ে শিশুদের আর্তনাদ। ৮/৯ বছরের এক ছেলে কোনওভাবে ক্যানলায় ইঞ্জেকশন ঢুকাতে দেবে না। ইঞ্জেকশন পুশের পর সে কোথাও বসতে রাজি নয়। তার ধারণা তাকে আবার ইঞ্জেজকশন দেয়া হবে। তার মা ঘটি উচ্চারণে তাকে শাসাচ্ছে। দেহের যন্ত্রণার কাছে শাসন তুচ্ছ।

একুরিয়ামের মাছগুলো যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে শিশুদের কান্না শুনে। পাশেই চায়ের দোকান। সেখানে দিনরাত দশ টাকার চা কফির সঙ্গে বিস্কুট কিংবা কেক বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বিক্রেতার এসবে কোনও বিকার নেই। হয়তো প্রথম দেখছি বলে মনটা ভারী ভারী লাগে। মনে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খায়, জীবনে সুস্থতা ছাড়া আর বড় কোনও চাওয়া থাকতে পারে না।

ধৈর্যের পরীক্ষা সেই ভোর থেকে রাত। জীবনবাদী মানুষগুলোর সংগ্রাম থেমে নেই। এমনকি বন্ধের দিনও। টাটা হসপিটাল রোগীদের পদচারণায় মুখর। কারও মুখের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কারও বুকচেরা। কারওবা পায়ে ব্যান্ডেজ। দুটি চেয়ার একসঙ্গে খালি পেলে নিস্তেজ মানুষগুলো শুয়ে পড়ে। কিন্তু কজনের ভাগ্যে চেয়ার জোটে? সিঁড়িতে মেঝেতে শুয়ে বসে থাকে অনেকে। ছোট বাচ্চাগুলোর কাতর দৃষ্টি দেখলে বিধাতাকে বড় নিষ্ঠুর মনে হয়। যেখানে যান লাইন আর লাইন। নিবু নিবু প্রদীপগুলো ঘাটে ঘাটে কেবল ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।

পুরো একটা দিন অপেক্ষা করে কোনওমতে রেজিস্ট্রেশন করে যদি স্মার্ট কার্ডটা পেয়ে যান তবে ভাগ্য আপনার। কার্ডে ভরতে হবে ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। এরপর ওপিডিতে গিয়ে ফাইল জমা দিন। সেখানে ভীষণ ভিড়। ঘণ্টা তিনেক লেগে যাবে আপনার ডাক আসতে। মনিটরে সিরিয়াল ভেসে উঠবার পর যাবেন কাক্সিক্ষত কক্ষে। সেখানে ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর ডাক্তারের দেখা মিলবে। আপনার কল্পনায় যে শ্বেতশুভ্র কোনও প্রবীণ অধ্যাপকের চেহারা ভাসছে, তা বৃথা। কোনও নবীন চিকিৎসক খুবই তাড়ার মধ্যে আপনাকে মিনিট দুয়েক সময় দেবে। কারণ বাইরে লম্বা সিরিয়াল। সব কথা শুনতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে। এমনও হতে পারে খুশি মনে চেম্বারে ঢোকার পর দেখলেন আপনার সামনে ডাক্তার ছুটে যাচ্ছেন অন্য কোথাও। অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। ঘণ্টা খানেক পরে ফিরে আবার সেই তাড়া হুড়ো। কম্পিউটারে লিখে দিলেন এক গাদা টেস্টের কথা। ছোটখাটো টেস্টের স্লিপ ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে পাবেন। সিটি স্ক্যান বা পেট টেস্ট হলে এবার আবার নিচে আসুন। সিরিয়াল নিন। টেস্ট এন্ট্রি করুন। রিসিট নিয়ে ছুটুন কালেকশন সেন্টারে। সেখানে ঘণ্টা দুয়েকের ব্যাপার ডাক পাওয়া। সেম্পল নিয়ে সেটা আবার আপনাকে ধরিয়ে দেবে অন্য কোনও ভবনে ছুটে যেতে। বড় টেস্টের সিরিয়াল পেতে লেগে যেতে পারে সপ্তাহ খানেক। টেস্টের রিপোর্ট পেলে আবার ওপিডি। আবার ডাক্তার। আবার সিরিয়াল। কেমো বা রেডিয়েশন যা-ই হোক―প্রত্যেকটিতে মানুষের সারি। আপনার তাড়া বোঝার দায় নিয়ে কেউ বসে নেই। যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে তাহলে রুম যোগাড় আরেক ঝক্কি। ভারতীয়দের জন্য ওয়ার্ড থাকলেও বাংলাদেশিদের সে সুযোগ নেই। প্রাইভেট বা সেমি প্রাইভেট। প্রাইভেটের সিট ভাড়া ৮০০০, সেমিতে ৩৫০০। প্রতিদিন এটা ওটা লাগিয়ে বিল আসবে দ্বিগুণ।

পাক্কা এক সপ্তাহ এই ঝড়ের মধ্যে আছি। প্রথম যখন ডাক্তার বলল খারাপ কিছু হতে পারে, ধসে পড়েছিলাম ভেতরে ভেতরে। অবশ্য অন্য মন সবসময় সান্ত্বনা দিত। সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারের ধারণা ভুল হতে পারে। কত লোক ভারত থেকে ফিরে আসে হাসি মুখে। বলে, ধুৎ কিসসু হয়নি। বাংলাদেশের ডাক্তাররা আবার ট্রিটমেন্ট জানে নাকি।

ছোটবোনের জামাই জুলহাস বিজিবিতে চাকরি করে। খবর পেয়ে ছুটে এল।

চলেন ভাই বোম্বাই যাই। সব ঠিক হয়ে যাবে।

তার ভরসায় অচেনা শহরে আসা। প্রথম পাসপোর্ট করা।

টাটাতে এসে দেখা গেল বাংলাদেশি ডাক্তারের অনুমান সঠিক। ওপিডি ডাক্তার সব দেখে বললেন, দেশেই তো চিকিৎসা করাতে পারতেন। শুধু শুধু এখানে আসেন কেন?

ভগ্নিপতি জুলহাস কী যেন বলতে চাইছিল, তাকে থামিয়ে দিল।

চেম্বার থেকে বের হয়ে মনে হলো পুরো পৃথিবীটা দুলছে। একটা মন সবসময় অভয় দিত। সেও যেন ভয়ে গুটিয়ে গেল। খুব করে বউ আর মেয়েটার কথা মনে পড়ল। কী অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে আমি চলে যাব। কী করবে মরিয়ম কোলের বাচ্চাটা নিয়ে। পারবে মানুষ করতে। অযথা পয়সা খরচ করে আর কী হবে?

জুলহাসকে বললাম, চলো তাইলে দেশেই যাই।

জুলহাস চোখ দুটো বড় বড় করে হাত নাড়িয়ে বলল, মাথা খারাপ?

তারপর থেকে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ইচ্ছে আছে মুম্বাইর আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর। জুলহাস খবর নিয়ে এসেছে ক্যান্সার রোগী ও তার সঙ্গের একজন যাত্রীর ট্রেন ভ্রমণ ফ্রি। মরেই তো যাব। যন্ত্রণা তো আছেই। জীবনটা একটু উপভোগ করে যাই।

উঠেছি গ্র্যান্ট রোডের এক হোটেলে। গুজরাটি মালিক। সব মিলিয়ে সস্তাই বলতে হয়। হোটেল না বলে সেমি-হাসপাতাল বলতে পারেন। প্রায় সবাই ক্যান্সারের রোগী কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজন। একটা বড় অংশ বাংলাদেশি। হোটেলের মালিক মুসলিম। এলাকাটাও মুসলিম অধ্যুষিত। তাই আমাদের জিহ্বা যেসব খাবার চায়, তার উপস্থিতি আকছার এখানে। হাসপাতাল থেকে বেশ দূর হওয়ার সত্ত্বেও লোকজন এখানে থাকে। এখানেই পরিচয় মতিন ভাইয়ের সঙ্গে। কাটিহারি কলেজের ইতিহাসের প্রফেসার। কোলন ক্যান্সার। সঙ্গে ১৬ বছরের ভাতিজাকে নিয়ে এসেছে। সে তাকে রেখে গেছে এলিফান্টা কেভ দেখতে। এর মধ্যে দুপুর থেকে ভদ্রলোকের অসহ্য পেট ব্যথা শুরু হয়। কোনও ঔষধেই কাজ দিচ্ছিল না। সন্ধ্যায় জুলহাস বলল, না, এভাবে হোটেলে ফেলে রাখা ঠিক হবে না ভাইজান। আমি বরং হাসপাতালে নিয়ে যাই।

চলো।

আপনি গিয়ে কী করবেন। নিজেই অসুস্থ মানুষ।

কথাটা শুনে একটা ধাক্কা খেলাম। আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম নিজের অসুস্থতার কথা। জুলহাস যেন ধাক্কা মেরে আমার সম্বিৎ ফিরিয়ে আনল।

কিছু তো করতে পারব না, তাও চলো। একা হোটেলে বসে কী করব।

হাসপাতালে যেতে যেতে রাত ৮টা বেজে গেল। রবিবার বলে ডাক্তার স্টাফ অর্ধেক। কিন্তু রোগীর ভিড় যথারীতি। নার্সরা তড়িঘড়ি করে রোগীকে দেখল। তারপর একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিল। জুলহাস কাগজপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করে। সব শেষে সে দাঁড়িয়ে পড়ল লাইনে। বিশাল লাইন। জুলহাসের যখন ডাক আসবে তখন আমি মতিন সাহেবের চেয়ার ঠেলে নিয়ে যাব ডাক্তারের চেম্বারে। ইমার্জেন্সিতেও যে লাইন হয় সে আমার ধারণায় ছিল না। জুলহাসকে দেখে বুঝতে পারলাম সহসা ডাক পড়বে না। আমি মুক্তমনে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। মতিন সাহেব ব্যথায় কুকড়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন।

চায়ের দোকানে পরিচয় হয়েছিল সৌমিক বাবুর সঙ্গে। তিনি আরেক বাংলাদেশি ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তার স্ত্রীর জন্য ইনজেকশন এনে দিতে হবে দিল্লি থেকে। চা চাইতে সেই সৌমিক বাবু অটোমেটিক মেশিনে এক কাপ করে দিলেন। তারপর সাফাই গাওয়ার সুরে বললেন, দোকানটা বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম রাতের শিফটটা আমি সামলে নেব। সারা রাত তো ঘুরে ঘুরে কাটাই।

তা এখানে এলেন কীভাবে?

সবাই যেভাবে আসে, রোগী নিয়ে। সেই কুড়ি বছর আগে। তারপর এ ও ধরে বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য। রয়ে গেলাম। আগে তো বাঙালি রোগী পেলে ডাক্তাররা আমাকে ডেকে নিয়ে যেত ইন্টারপ্রেটরের কাজ করাতে। এখন সবাই বাংলা টুকটাক বুঝে, সমস্যা হয় না।

সৌমিক বাবু চমৎকার একটা মানুষ। তার সঙ্গে দারুণ আড্ডা জমল। আরিফ সাহেব এসেছে যশোর থেকে। তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে। দিল্লিতে নাকি মেডিসিনের দাম কম। আনাতে পারলে অনেকগুলো টাকা বেঁচে যাবে।

সৌমিক বোম্বের অলিগলি চেনে। সব তার জানা।

অনেকদিন তো থাকতে হবে মনে হচ্ছে। হোটেলে অনেক খরচ। একটা বাসা দেখে দিন না।

আমার কথা শুনে সৌমিক হাসলেন।

আপনার বুঝি এখানকার বিষয়ে কোনও ধারণা নেই।

মাত্র তো এলাম…

তাই বলুন। এখানকার সব বাসা এজেন্সির মাধ্যমে ভাড়া হয়। বাড়ির মালিকরা রিস্কে যেতে চায় না। তার উপর মিউনিসিপালটির হুজ্জোত। তাদের জন্য এজেন্সিই ভালো। সামনেই পাবেন অবনি ট্রাভেলস। এখানকার বেশির ভাগ বাসা অবনি বাবুর মাধ্যমে ভাড়া হয়। সামনের যে ভাতের হোটেল সেটাও তার।

হু। গিয়েছিলাম তার কাছে। যেসব বাসা দেখায় সেসবে তো থাকার অবস্থা নেই।

কী করবেন, একচেটিয়া বাসা। ভালো বাসা পেতে চাইলে একটু দূরে চলে যান।

কোথায়?

লোয়ার পেরেল কিংবা থানে। শানপাড়াও দেখতে পারেন।

থানেতে নাকি বাঘের উপদ্রবে দেখা দিয়েছে।

সব খবরই দেখি রাখেন।

পত্রিকায় পড়েছি।

থানে বিশাল এলাকা। আপনাকে বাঘে খাবে না, নিশ্চিত থাকেন। ট্রেনে যাবেন আসবেন― ভালো ব্যবস্থা।

কী বলব ভেবে পাই না। চা খেতে খেতে মতিন সাহেবকে দেখি।

সৌমিক অন্য কাস্টমারদের এটা ওটা দেয়। তার মধ্যে খুচরো খুচরো কথা বলে।

আরিফ মুচকি মুচকি হাসে আর উত্তর দেয়।

প্রথম দিন একটা জিনিস দেখে আমার খুব অবাক লাগল। আরিফ বলল।

সৌমিক কৌতূহলী হয়ে বলে, কী?

হামি ভাবার খোলা জায়গায় এত বড় বড় খেজুর গাছ হলো কী করে, উপরে তো ছাদ!

সৌমিক হো হো করে হেসে উঠল।

শহরের খেজুর গাছগুলো বোধহয় এমনই হয়। ছাদের নিচে বাড়ে। সূর্য না দেখেই ঋজু হয়ে বেড়ে ওঠে আকাশের পানে। শরীরে অনেক কাটা তো…

আরিফ খুব ভারী গলায় কথাগুলো বলল। আমার কানে বাজল। ‘শরীরে অনেক কাটা’ কথাগুলো ভেতরে ঘুরপাক খেতে লাগল। শরীরে অনেক কাটা নিয়ে আমিও তো ঘুরে বেড়াচ্ছি। মুন্নাভাই এমবিবিএসের মুম্বাই শহরে। নিজে রোগী হয়ে দিব্যি আরেক রোগীর সেবা দিচ্ছি। আমি ঋজু খেজুর গাছ। মনটা ভালো হয়ে যায় অনেক বিষাদের ভিড়ে।

ক্যাজুয়াল্টি হঠাৎ কান্নার আওয়াজে কেঁপে ওঠে। স্ট্রেচার নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়। আমি তো খেঁজুর গাছ। ছাঁদ ফুঁড়ে আকাশ দেখতে চাই।

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button