আর্কাইভকথাসাহিত্য

যে কথা তোমাকে বলতে পারিনি : মূল : ইয়োন ফসে : বাংলা অনুবাদ : রিটন খান

বিশ্বসাহিত্য : অনুবাদ গল্প

[ইয়োন ওলাভ ফসে (জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯) একজন নরওয়েজীয় লেখক এবং নাট্যকার। নরওয়ের হগসুন্ডে জন্ম। সাত বছর বয়সে একটি গুরুতর দুর্ঘটনা তাঁকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়; এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা তাঁর লেখাকেও প্রভাবিত করেছে। তিনি বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং তুলনামূলক সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীকালে সাহিত্যিক হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস, Raudt, svart (লোহিত, কৃষ্ণ) ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম নাটক Og aldri skal vi skiljast (আর আমরা কখনও আলাদা হব না) ১৯৯৪ সালে প্রদর্শিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল। ফসে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, শিশুতোষ বই, প্রবন্ধ এবং নাটক লিখেছেন। তাঁর রচনাগুলো চল্লিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০২৩ সালে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।]

এমন অনেক ঘটনা জীবনে ঘটে যা ভোলা যায় না, এমনকি আমার মতো বৃদ্ধ ব্যক্তির পক্ষেও নয়। জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই আমি দেখেছি, এবং প্রতিনিয়ত দেখব। যেগুলিকে আমি আলোর উদ্ভাসিত ছটা বলতেই পছন্দ করি। এই আলোর ছটা যা আমার ভেতরে ঢুকে গেছে সেটা খুবই গভীর। এর তাৎপর্য অনেক অথচ আমি ঠিক বুঝতে পারি না। এমন একটা অর্থ যার আসলে কোনও অর্থই নেই। সম্ভবত আলোর ছটার কোনও অর্থই হয় না। এখন আমি মৃত্যুপথযাত্রী, সেই বিষয়গুলিও আমার সঙ্গে হারিয়ে যাবে; কিন্তু এটা তেমন কোনও বড় ঘটনা নয়, কেননা সেগুলি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। অনেক দিন আগে, যখন এই ঘটনাগুলি ঘটেছিল তখন তারা দৃশ্যমান ছিল সময় ও মহাকালে। কোনও কোনও মুহূর্তে সময় ও মহাকাল মিশে যায়। এই আলোর ছটা প্রকাশিত হবার পরে বহুদিন কেটে গেছে। এই আলোর ছটাগুলি অনেক দিন হলো হারিয়ে গেছে। যেভাবে তুমিও হারিয়ে গেছো। আলোর-উদ্ভাসিত ছটার ভিতরে আমি তোমাকে দেখি। দেখি কিছু করতে, সে সবই চলে গেছে। সবকিছুই চলে গেছে। তুমি চলে গেছো। যে সময়ে এগুলি ঘটেছিল তাও চলে গেছে এবং খুব বেশি দিন নয় যখন আমিও চলে যাব। এমনই হয়। কিন্তু আমি দেখি একেবারে প্রথমবারের তোমাকে, দেখি তুমি হাঁটছো স্কুলের মাঠ পেরিয়ে। আমি তোমাকে তখন থেকেই লক্ষ্য করে এসেছি; দেখেছি তোমাকে স্কুলের মাঠ পেরিয়ে এমনভাবে হেঁটে যেতে যার মধ্যে কিছু একটা ছিল। যেভাবে চলতে, যে ভঙ্গিতে তুমি সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকতে তাতে অহং থাকলেও মনে হতো যেন তুমি লজ্জিত, আর তা লুকাতে চাইছো। আমি দেখেছিলাম তোমার কালো চুল এবং একটু বড় ও ঝুলে থাকা জ্যাকেট পরা তোমাকে। যখন প্রথম তোমাকে দেখি তখন আমার ভেতরে কিছু একটা আলোড়িত হয়ে থাকবে। অথচ নিশ্চিত করে জানি না সেটার অস্তিত্ব। আমি সত্যিই জানি না। এটা একেবারেই অর্থহীন। অবশ্যি তাতে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু বাস্তবিকই ঐ ধরনের আলোর উদ্ভাসিত ছটা থাকত তোমার আনাগোনায় যখন তুমি হেঁটে পার হয়ে যেতে স্কুলের মাঠ। হ্যাঁ; সেই স্কুলে সেই বছর এমনকি সেই সকালে যখন মধ্য-শরতের কোনও এক সময় প্রথম তুমি স্কুলে এলে। ঐখানে ঐ সময় যা ছিল তোমার চলনে তা আমার ভেতরে একেবারেই গেঁথে গিয়েছিল। সেটা শুধু আমার স্মৃতিতে নয়, আমার গোটা অস্তিত্বেই স্থান করে নিয়েছিল। সেই শরতের প্রথম সকালে যখন তুমি আধো আধো অন্ধকারে স্কুল মাঠ পেরিয়ে যাচ্ছিলে তখন তোমার চঞ্চলতায় আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছিল। হুঁ, তুমি হয়তো হাসবে! তোমাকে হাসতেই হবে। এর কোনও মানে হয় না, কিন্তু যা-ই দেখতে চাই তার দ্বারপ্রান্তে এসে আমি অনুভব করি এটা তুমিই, হেঁটে পার হচ্ছো স্কুল মাঠ শরতের কোনও এক সকালে। এটাই আমি দেখতে পাই আমার অন্তর্চক্ষু দিয়ে এবং সেটাই আমার কাছে পরিপূর্ণ অর্থ নিয়ে আসে। ক্যান্টিনের কোনও এক টেবিলে তোমাকে দেখি বসে আছো অনেকের মধ্যে, অথচ তারপরও তুমি একা। তুমি অনেকের সঙ্গে হয়েও নিজের মতো করে একাকী। তোমার কালো চুল নিয়ে টেবিলের কোথাও তুমি অনেকের মাঝে হয়েও একা। ঐখানেই সাধারণত তুমি বসতে। কতবার আমি সেখানে তোমাকে দেখেছি। এটাই সেই ক্ষণ যা আমি স্মরণ করতে পারি যে, তুমি বসে আছো আর আমি তোমাকে দেখছি। আর তোমার চোখে অদ্ভুত কিছু, তোমার চোখ তুলে তাকানোয় ছিল একটা বিশেষ কিছু যা আমি কোনওদিন বুঝে উঠতে পারিনি। তোমার চোখের সেই অদ্ভুত দৃষ্টি আমার ভেতরে সারা জীবনের জন্য আসন গেড়েছিল। আমি ঠিক জানি না আদতে সেটা কী ? তুমি বসে থেকেই চোখ তুলে চেয়ে দেখলে। তুমি বসে ছিলে আর তাকিয়ে দেখলে অথচ আমি যা বলছি তোমার ঐ দৃষ্টি সম্পর্কে তা নিতান্তই ভুল। এটা বোঝানো অসম্ভব; কী ছিল সেই দৃষ্টিতে। সেদিনের সেই সকালে তুমি বসেছিলে টেবিলের এক কোণে; ছিলে অনেকের মাঝে অথচ একা। তখন তোমার দৃষ্টিতে ছিল বোধের অতীত একটা কিছু। আমি ভুলতে পারি না কী তোমার চোখে আমি দেখেছিলাম। অনুভূতিটা আমার ভেতরে রয়ে গেছে। আমার সব কিছুর ভেতর। আমি যা দেখেছিলাম, আমি জানি না, কেন তা ভুলতে পারি না। অনুভূতিটা  আমি নিজের মধ্যে, আমার নিজের গভীরে বয়ে চলেছি। এটা আমার নিজের দৃষ্টির একটা অংশ হয়ে গেছে। কেননা যখনই দেখি, দেখি সেটাও যা তোমার দৃষ্টিতে। এটা এমন একটা ব্যাপার যা বোঝানো সম্ভব নয়। বিষয়টি এমন যা আসলে কিছুই বলে না এবং যার কোনও মানে নেই। কিন্তু যখন জীবনপ্রদীপ ফুরিয়ে আসছে, তখন মনে হয় তোমার চোখে যা দেখেছিলাম তা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল বিষয়। এটা ভুল শোনায়, হাস্যকর শোনায়, কেননা যাদের আমি ভালোবেসেছি, যা কিছু দেখেছি, যা কিছু ঘটেছে তার মধ্যে তোমার চলনে কিছু একটা ছিল, ছিল তোমার আন্দোলিত দেহ সৌষ্ঠবে, যা ছিল আমার দেখা সবচেয়ে জ্বলজ্বলে ঘটনা, যা আমি প্রত্যক্ষ করেছি মধ্য শরতের কোনও এক সকালের শুরুতে যেদিন তুমি প্রথমবারের মতো স্কুলে এলে। এটা ভয়ঙ্কর অথবা বলা যেতে পারে অসম্ভব। এটা আরও অসম্ভব যে, সেই সকালে স্কুলের ক্যান্টিনের টেবিলের শেষ প্রান্তে অনেকের মধ্যে থেকেও তুমি ছিলে একা; তোমার সেই চাহনি নিয়ে তুমি বসেছিলে এবং চোখ তুলে তাকিয়েছিলে। এটা অসম্ভব। যা আমি দেখেছিলাম তোমার দৃষ্টিতে, যা হওয়া উচিত সবচেয়ে অর্থপূর্ণ একটা কিছু, কিন্তু এ জীবনে যত কিছু দেখেছি তার মধ্যে এটা সত্যিই ভীষণভাবে অর্থহীন। আমি নিশ্চিত তুমি যদি জানতে তাহলে বিব্রত বোধ করতে এবং আর কখনওই আমার সঙ্গে কথা বলতে না। এটা হতো খুবই অস্বস্তিকর। হয়তো তোমার পার্থিব আচরণে তোমার পার্থিব দৃষ্টিতে আমি তা লক্ষ্য করিনি, আমার উপস্থিতিতে তখন তোমার কেমন লাগত। সম্ভবত এমন কিছু যা তোমাকে নিশ্চল করে দিত বা এমন কিছু যা এমনিই উবে যেতে বাধ্য হতো। আমি নিশ্চিত তুমি সেরকমই ভাবতে যদি আমি তোমার শরীরের ভঙ্গি বর্ণনা করতাম সেই সকালে, আমার স্কুলে তোমার প্রথম সকালে, এক শরতের সকালে, একটা শীতল আধো আলোয় সামান্য বাতাসের সঙ্গে যখন তুমি আমার কাছে অর্থময় হয়ে দাঁড়ালে। তুমি সেটা বুঝতেও পারতে না আর আমার সঙ্গে থাকতেও পারতে না। যখন তুমি একাকী অন্যদের সঙ্গে বসেছিলে, সেই সকালে, তখন তোমার তাকানোয় অদ্ভুত যা কিছু ছিল তা আমার কাছে কী অর্থ প্রকাশ করেছিল যদি আমি তা বলতাম তুমি অনায়াসে আমাদের যাপিত জীবনের প্রতি ফিরে দেখতে পারতে না; এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেই জন্যই আমি তোমাকে তা বলিনি। অথবা সম্ভবত আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম যে সেটা তোমাকে দূরে ঠেলে রাখবে। সম্ভবত আমি তোমাকে বলতামই। আমি কখনওই তোমাকে বলিনি এমনকি সেই সময়ও নয়, যখন আমি তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম আর তুমি চলে গেলে। আমি শুনলাম তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস কমে আসতে, থেমে যেতে, শুনলাম তোমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে, অনেকক্ষণ ধরে  উধাও হয়ে থাকতে। তারপর তোমার চোখে প্রাণ দেখলাম, নিঃশ্বাস ফিরে আসতে শুনলাম এবং দেখলাম তা হারিয়ে যেতে। তারপর তোমার দম শেষ হয়ে গেল আর তখনই আমি দেখলাম ঘরময় বিচরণ করতে, যা ছিল তোমার দৃষ্টিতে, তোমার শরীরের ভঙ্গি সঙ্গে নিয়ে। আমি মুহূর্তের আলোর উদ্ভাসিত ছটায় দেখলাম তোমার অঙ্গভঙ্গি অব্যক্ত কোনও কিছুতে বদলে যেতে এবং অবশেষে হারিয়ে যেতে। আমি দেখলাম তোমার দৃষ্টি স্থির হয়ে যেতে, শেষবারের মতো দেখলাম তোমার চোখ। আমি তোমার চোখের পাতা বন্ধ করে দিলাম আর শুনলাম তোমার কণ্ঠস্বর, সেই কণ্ঠস্বর আমি বারেবারে শুনেছি, যেই কণ্ঠস্বরে তুমি কথা বলতে। আমৃত্যু সেই কণ্ঠস্বর আমি শুনে যাব, হয়তো সেটাও হারিয়ে যাবে একসময় আমার মৃত্যুর সঙ্গে।

কেউ তোমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে থাকবে। তুমি উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলেছিলে এবং পুনরায় বসে পড়লে। আমি মনে করতে পারি না কী নিয়ে ছিল সেই সভা এবং কী তুমি বলেছিলে, কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল। যখন তুমি দাঁড়ালে তোমার স্বর আর দেহ একাকার হয়ে গিয়েছিল এবং তোমার স্বরে কিছু একটা ছিল যা আমি তারপর থেকে নিজের মধ্যে সবসময়ই শুনতে পেয়েছি। আমি জানি না, তুমি কী বলেছিলে। আমি মনে করতে পারি না। এটা অর্থহীন, হুঁ তাই; যদিও তা বড় কোনও ব্যাপার না কিন্তু অবশ্যই সমবেত হয়েছিলাম এবং তুমি তোমার কালো চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বললে, আর অবশ্যই তোমার সেই কণ্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল, কিছু যা আমি নিজের ভিতরে সবসময়ই শুনতে পেয়েছি। আমি কখনওই তোমাকে বলিনি; আমি তোমাকে ঐ ব্যাপারগুলো বলতে পারি না। বলতে পারি না যা কিছু তুমি তারপরে বলেছো সেগুলি একই অর্থ প্রকাশ করে না, ঠিক যেমনটি সেদিনের স্কুলের সভায় দেওয়া তোমার বক্তৃতা। যা আমি মনে করতে পারি না। তোমাকে আমি দেখেছিলাম আগাম শরতের সকালে ঠান্ডা আধো আলোয় স্কুলের মাঠ পেরিয়ে হেঁটে যাবার সময়। তোমার শরীরের ভঙ্গিমায় কিছু একটা দেখেছিলাম যা আমি ভুলে যেতে পারি না। এবং আমরা যে স্কুলে ছিলাম তার সভাকক্ষে কোনও এক দুপুরে দেখেছিলাম  তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে, আর কিছু একটা শুনেছিলাম তোমার কণ্ঠস্বরে যা আমাকে কখনওই ছেড়ে যায়নি। এখন তুমি আর নেই। যখন তুমি চলে গেলে তখন তোমার শরীরের ভঙ্গিতে, তোমার চাহনিতে, তোমার স্বরে কিছু একটা ছিল যা আমার মধ্যে প্রবাহিত হয়ে ঘরটাকে ছেয়ে দিয়েছিল এবং ছেয়ে গিয়েছিল হাসপাতালের কামরার জানালার বাইরে অন্ধকারময় আকাশে। আমি জানি না সেটা কী ছিল। আমি তোমাকে অবশ্যই বলতাম না যদি আজ তুমি বেঁচে থাকতে, কেননা সেটা তোমার সবকিছুকে আরও জটিল করে তুলত। আর আমি যা চেয়েছিলাম তা হলো তোমার শরীর ঠিক সেই ভঙ্গিমায় প্রকাশিত হোক। যখন তুমি জেগে উঠলে, ভ্রান্ত ও অপরিচ্ছন্ন, যখন তুমি ছিলে সুখী, যখন তুমি রাগে ফেটে পড়ে আমাকে বললে ‘জঘন্য’, তখনও আমি চেয়েছি যা তোমার শরীর সত্যিই চায় তা প্রকাশ করুক। আমি তোমাকে বলতে চাইনি; বলতে চাইনি যে আমি নিজের মধ্যে আলোর উদ্ভাসিত ছটা (আমি তা বলতেই পছন্দ করি) নিয়ে ঘুরছিলাম; আমি ঘুরছিলাম যা তোমার দেহভঙ্গিমায় ছিল বা যা তোমার দেহকে আন্দোলিত করেছিল সেই দিন, সেই সকালে যখন তুমি স্কুলের মাঠ পার হচ্ছিলে। আমি কখনওই তোমাকে বলতে চাইনি কী দেখেছিলাম তোমার চোখে। তুমি সেভাবেই দেখেছো যেভাবে তোমাকে দেখতে হয়েছে। তখন তুমি দুশ্চিন্তা করনি এই কথা ভেবে যে আমি তোমার দৃষ্টিটাই আমার ভেতরে ধারণ করেছিলাম আর তোমার চোখেই দেখছিলাম সবকিছু। আমি তোমাকে সে কথা বলতে পারিনি। এবং বলতে পারিনি কীভাবে তোমার কণ্ঠস্বর আমার খুব গভীরে একটা স্থান করে নিয়েছিল। তখন তোমার কণ্ঠস্বরে কোনও রাগ খুঁজে পাইনি যেমনটি হয়তো এখন পেতাম। সবসময় তোমার মনের একটি অংশ আমাকে বলেছিল দিনের পর দিন যে, সবকিছুই অর্থহীন, সবকিছু জাহান্নামে যাক। তোমার কণ্ঠস্বর তোমার কাছেই যেন থাকে।

আমি কখনও তোমাকে বলিনি, তোমার কণ্ঠস্বর আমার অস্তিত্বের একটি অংশ হয়ে গেছে। এখন তুমি মৃত। এখন তোমার কোনও অস্তিত্ব নেই। এখন তোমার শরীর স্থির হয়ে গেছে, স্থির হয়ে গেছে তোমার চোখ, তোমার কণ্ঠস্বর। কিন্তু সেগুলো এখনও বেঁচে আছে, আমার মধ্যে, এখনও! আমার এখন আর মরণে ভয় নেই।

[নরওয়েজিয়ান ফিলিং ফর রিয়েল, নরওয়েজিয়ান গল্পসাহিত্যের একটি চমৎকার সংকলন। এই বইটি তিন খ্যাতিমান নরওয়েজিয়ান আলোচকের সম্পাদিত, যেখানে রয়েছে আঠাশজন লেখকের আঠাশটি গল্প, যা একটি অপরিচিত পৃথিবীর দরজা খুলে দেয়। সেখান থেকে ইয়োন ফসের ‘আই কুড নট টেল ইউ’ গল্পটির বাংলা অনুবাদ।]

সচিত্রকরণ : শতাব্দী জাহিদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button