আবিদ আনোয়ার
[জাপানী ক্ষুদ্র কবিতা ‘হাইকু’র অনুকরণে অনেকেই বাংলা ভাষায় এর চর্চা করেছেন। কিন্তু ৫-৭-৫ মাত্রার পঙ্ক্তিবিন্যাসের কথা মুখে-মুখে বললেও ২০০৪ সালের আগে বাংলা ভাষার কোনও কবি প্রকরণসিদ্ধ হাইকু লিখতে পারেননি। কেউ কেউ স্বরবৃত্তীয় ৫-৭-৫ মাত্রায় লেখার চেষ্টা করেছেন যা ত্রুটিপূর্ণ ধ্বনিবিন্যাসের কারণে ব্যর্থতার উদাহরণ হয়ে আছে। ২০০৪ সালে ‘বাংলায় হাইকু রচনা: ধ্বনিতাত্ত্বিক সমস্যা ও একটি প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আমার নিবন্ধ সংবাদ সাময়িকীতে প্রকাশের পর এবং ২০০৫ সালে এটি আমার চিত্রকল্প ও বিচিত্র গদ্য নামের বইতে গ্রন্থিত হওয়ার পর আমাকে উৎসর্গ করে তরুণ কবি দুলাল বিশ^াস প্রকরণসিদ্ধ ৩১০ হাইকুুর একটি সংকলন প্রকাশ করেন। এর পর আশির দশকের বিশিষ্ট কবি রহিমা আখতার কল্পনা আমার প্রদর্শিত প্রকরণে অজস্র হাইকু লিখেছেন। তিনি তাঁর সংকলনের ‘প্রাক-কথন’-এ আমার প্রস্তাবনা বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকরণসিদ্ধ হাইকু রচনায় একে-একে এগিয়ে এসেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক তপন বাগচী, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, জ্যোতির্ময় সেন এবং আরও অনেকে; পশ্চিমবঙ্গেরও কেউ কেউ। তাঁদের সম্মিলিত চর্চায় আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই সত্য যে, হাইকু’র ৫-৭-৫ মাত্রা অবশ্যই মাত্রাবৃৃত্তীয় চালের হতে হবে, যা আমার ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখিয়েছিলাম। সঠিক প্রকরণ নির্ধারণ করতে আমি নিজে হাইকু লিখেছি কমই। এখন এর চর্চা বাড়িয়েছি। তা থেকে এই এক ডজন]
১.
শাওন রাত
বিরহে বিষ ঢালে
বৃষ্টিপাত
২.
করাতকল
শোনে না কাঁদে কত
বনাঞ্চল
৩.
নীল আকাশ
মিগের মেঘালিতে
ছড়ায় ত্রাস
৪.
শিমুল গাছে
শকুন ডানা ঝাড়ে
ফুলের কাছে
৫.
করব কী যে :
আমার দংশক
বেহুলা নিজে
৬.
সন্ধ্যাদীপ
দেয়ালে ছায়া ফেলে
বিপ্রতীপ
৭.
আলোর মুখ
দেখে না শিউলিরা
ঝরেই সুখ
৮.
চিত্রকলা
রেখা ও রঙ দিয়ে
কত কি বলা
৯.
গোধূলিকাল
আলোর সাথে কালো
তাই সে লাল
১০.
শরীর পুঁজি
কেড়েছে মহামারি
রুটি ও রুজি
১১.
খল-যাজক
শোভিত জোব্বায়
বগলে বক
১২.
কী অদ্ভূত
শরিষাগাছে থাকে
সত্য ভূত
————-