আর্কাইভসম্পাদকীয়

সম্পাদকীয় : ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়াদের বাংলা সাহিত্যপ্রীতি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে

দশম বর্ষ   একাদশ-দ্বাদশ সংখ্যা   নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০২৩

সাহিত্যচর্চা চলমান ধারা। সে ধারায় পথ চলতে চায় শব্দঘর-পরিবার। অগ্রজরা যে মূল্যবান সাহিত্যরত্ন রেখে গেছেন, সাহিত্যের ভূমিতে যে উর্বরতার সন্ধান দিয়ে গেছেন তা খুঁজে বের করা এবং বর্তমান প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা যে কোনও সাহিত্য পত্রিকার অন্যতম কাজ বলে মনে করি আমরা। সমকালের তরুণদের চলমান সাহিত্যচর্চার সঙ্গে ঐতিহ্যের সংযোগ ঘটানো আমাদের কর্মকৌশলের প্রধান উদ্দেশ্য। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে সব সৃষ্টিশীল সাহিত্যশস্যকণা আমরা তুলে ধরতে পারি বা পারব। তবে নির্মোহ আর নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধানে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। শব্দঘর-এর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বেশ কয়েকজন ক্ষুরধার বইপোকা বা বোদ্ধা পাঠক গুণগত মানের মননশীল এবং সৃজনশীল সাহিত্যের কথা আমাদের জানিয়ে থাকেন সারা দেশ থেকে। সিনিয়র শুভানুধ্যায়ী লেখকগণও। নিরপেক্ষভাবে আমরা তা তুলে ধরার চেষ্টা করি। চলতি সংখ্যায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি সৃজন-আলোয় উদ্ভাসিত কীর্তিমান পাঁচ সাহিত্যিককে। বয়সক্রমে তাঁরা হলেন কবি শামসুর রাহমান, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক, কবি বেলাল চৌধুরী ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁদের নিয়ে লিখেছেন যথাক্রমে : বিশ্বজিৎ ঘোষ, গার্গী রায়চৌধুরী, মৃত্তিকা লাবণি, ইয়াসমিন মাসহুদা ও মনি হায়দার।

উল্লিখিত কীর্তিমান পাঁচ সাহিত্যিকের মধ্যে বেঁচে আছেন কেবল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সমকালীন বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়া পাঠকদের ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধির কথা তিনি তুলে ধরেছেন যা এ সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। তরুণ কিংবা বড়দের সাহিত্যচর্চার বিষয়েও কিছু কথা বলেছেন। আমাদের কাছে তা অনুধানযোগ্য মনে হয়েছে। সাহিত্য-অনুরাগী সবাইকে ভাবতে হবে সমস্যা উত্তরণের জন্য। তিনি বলেছেন, …‘এখন যেসব বাঙালি ছেলে-মেয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ে তারা মনে করে ওটাই শ্রেষ্ঠ। তারা তাদের মাতৃভাষার দিকে তাকালে ধারণা পাল্টে যেতে পারত।

… লেখালেখিটা ঠিক কলাকৌশল নয়। এই শিল্পগুণ ভেতরে থাকতে হবে। তারপর নিরলস সাধনা করে যেতে হবে। খ্যাতির পিছনে ছুটে লাভ নেই। সময় বড় নিষ্ঠুর। সবাইকে সে আশ্রয় দিতে চায় না। যারা গেঁড়ে বসতে পারে তারাই পাবে সময়ের স্বীকৃতি।’

জেলায়-উপজেলায় বইয়ের দোকানগুলো উঠে যাচ্ছে বলে হাহাকার শোনা যায় ফেসবুকে। বিষয়টা কেবল উড়ো কথা নয়। শব্দঘর-এর অনুসন্ধানেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। সমস্যা উত্তরণে কী করা যায়? অভিজ্ঞজনের মতামত চাই আমরা।

কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তুমুল জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী (১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ Ñ ৫ অক্টোবর ২০২৩)। সংখ্যাটি আমরা উৎসর্গ করলাম এই প্রাণোচ্ছ্বল কবিকে।

বরাবরের মতো থাকছে বিশ্বসাহিত্য বিভাগ : কাব্যানুবাদ, অনূদিত গল্প, নভেলা ও দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের অনুবাদ।

ক্রোড়পত্রে থাকছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা তিনটি বইয়ের ওপর আলোচনা। বিশেষ রচনায় তুলে ধরা হয়েছে কবি সাজ্জাদ শরিফের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রীতিসম্মিলনীর কথা আর তাঁর কাব্যসত্তার স্বরূপ সন্ধান করেছেন কবি তুষার কবির। ‘পাঞ্জেরী-বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন : সমঝোতা স্বাক্ষর, নতুন যাত্রা’ নিয়েও থাকছে বিশেষ রচনা। কবিতা, গল্প, বরেণ্য সাহিত্যিকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, ভাষা-গবেষণা ধারাবাহিকের ১৩তম পর্ব, ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনাসহ আরও থাকছে বইকথা,  লিটলম্যাগ, ‘সেরা বাংলা সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ’ বিভাগও―এবার পেছনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন কথাসাহিতিক মাহমুদুল হক, নলিনী বেরা ও মোহিত কামাল।

শব্দঘর গল্পসংখ্যা ২০২৩ নিয়ে জাকিরুল জাকিরের সাহিত্য বিশ্লেষণ এই সংখ্যাকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে বলে আমরা মনে করছি। প্রচ্ছদ করেছেন যথারীতি অঙ্কন শিল্পী ও কথাসাহিত্যিক ধ্রুব এষ। বিশেষ কারণে এবার শব্দঘর নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যা ২০২৩ একত্রে প্রকাশ করা হলো। বিজ্ঞাপনদাতা লেখক-পাঠক শুভানুধ্যায়ী সবার জন্য রইল বিজয় দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button