ইমতিয়ার শামীম : পুতুলনাচের সারিন্দা
গল্পসংখ্যা ২০২৩
এখন, এই স্কুলের মাঠের কোণে খানিকটা হেলে-পড়া জন্মবৃত্তান্তবিহীন বড় জামগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পরিতৃপ্তির মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আকমল সরকারের চোখমুখ আর কানের লতি জুড়ে। কিন্তু মৃদু হাসির কি আর এত দূর ছড়িয়ে পড়ার শক্তি আছে! তবু তিনি স্পষ্ট অনুভব করেন, এক অথবা একশটা মৃদু হাসি কীভাবে যেন ফুটে উঠল চোখমুখ আর কানে। আবার কী দ্রুতই না গুটিয়ে নিলো নিজেকে।
সড়ক দিয়ে বাইকে করে দুধের ভাঁড় নিয়ে যেতে যেতে সেই হাসি অবশ্যি দেখতে পায় না বন্যাকান্দির মিজান। তবে স্যারকে দেখে তার দাঁড়াতে ইচ্ছে করে এবং সালাম দেওয়ার তাগিদও জাগে। বছরপাঁচেক হয়ে গেছে, স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়েছে সে; কবে কোন্ যুগে এমএ পাস করে এই আকমল সরকারের মতো ধুঁকে ধুঁকে একটা চাকরিবাকরি করবে, তার কোনও ঠিক আছে নাকি! এই আকমল স্যার একদিন নিজেই বলেছিলেন, এম এ পাসের বছরতিনেক পরে চাকরি জুটেছে তার, তাও কত তদবির করে। তো মিজানের কি আর অত দিন ধরে টাকাপয়সা খরচ করার উপায় আছে! সে তাই বাপের সঙ্গে দুধ বিক্রি আর ঘি তৈরির ব্যবসায় নেমে গেছে। তবে রাস্তাঘাটে দেখা হলে আকমল স্যারকে সালাম দিতে ভালোই লাগে। যদিও স্যার কখনও উত্তর নেন, কখনও নেন না। ওসব মিজান গায়ে মাখে না।
উত্তর দিক বা না দিক, আরও ১০ জন বয়সী, মুরুব্বি মানুষের মতো, আরও ১০-২০ জন শিক্ষকের মতো আকমল সরকারও খেয়াল করেন, ঝরে পড়া হোক, টেসে যাওয়া হোক আর গোপাল বড় সুবোধ মার্কা হোক, নতুন-পুরানো ছাত্র-ছাত্রীরা সালামটা ঠিকমতো দিলো কি না। আদবকায়দাটা জারি রেখেছে কি না। যদিও ওই পর্যন্তই। সালাম না দিলে তিনি কীইবা আর করতে পারেন! মনে মনে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। বড় জোর সুবিধাজনক কোনও সময় এলে সেটা নিয়ে ক্ষোভ কিংবা অনুযোগ একটা কিছু করতে পারেন খুবই বিশ^স্ত কারও কাছে। কিংবা গোটা ব্যাপারটা চেপেও যেতে পারেন, উল্টো তারই মানহানি হতে পারে ভেবে। তবে, এখন, এত দূর থেকে মিজানকে তিনি আসলে খেয়াল করা দূরে থাক, চিনতেই পারেন না ভালো করে। তাছাড়া মিজান তার ধারেকাছে থাকলেও আজ বোধহয় তার দিকে তিনি ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে পারতেন না। খুব বেশিক্ষণ হয়নি, এই একটু আগেই তিনি জানতে পেরেছেন, সহকারী পোলিং অফিসার হয়ে তাকে যেতে হবে হাটিকুমরুল স্কুলের ভোটকেন্দ্রে। এইসব দায়িত্ব অবশ্য তেমন বড় কিছু নয়; টাকাপয়সাও যে বেশি কিছু পাওয়া যায়, সেরকমও না। উপরন্তু কখনও কখনও নাকি এমন সব ঝক্কিও পোহাতে হয় যে, অবস্থাই কেরোসিন হয়ে যায়। কেরোসিনের মতো ভয়ানক দরকারি একটা পদার্থকে মানুষজন কেন যে মানুষের দুরাবস্থার সঙ্গে এক করে দেখে, সেটা অনেক ভেবেও আকমল সরকার এখনও ঠাহর করতে পারেননি। তবে কথা হলো এই যে, চাকরির বয়স তার বলতে গেলে এক দশক হতে চলল, কিন্তু এখনও কোনও নির্বাচনে কোনও দায়িত্বই পেলেন না, এই আক্ষেপ তার অনেক―অনেক দিনের। এমপি ইলেকশন তো বটেই, চোখের সামনে এই কয় বছরে চেয়ারম্যান-মেম্বার ইলেকশনের মতো কতগুলো হুরা-জুরা ভোট হয়ে গেছে, অথচ একবারও তাকে কোনও জায়গায় কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয় নাই। তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই গত বছরখানেক আগে যোগ দেওয়া ফিনফিনে পাতলা আর খাটো শরীরের রুখশানা নামের নতুন শিক্ষকটিও একবার উপনির্বাচনের কেন্দ্রে গিয়েছিল। অথচ তার ভাগ্যে কি না এই শিঁকা ছিড়তে এতদিন লেগে গেল!
গত বছরখানেক হয় এই এক চিন্তা একটা মামদো ভূত হয়ে আকমল সরকারের কাঁধের দুই দিকে দুই ঠ্যাং ছড়িয়ে জেঁকে বসে ছিল। নামছিল না কিছুতেই। তার পর কয়েক মাস হয় সেটা ভয়ানক এক উদ্বেগের মতো খোঁচাচ্ছিল তাকে, আচ্ছা, যারা এই সব দায়দায়িত্ব ঠিকঠাক করে, তারা কি তাকে পছন্দ করে না ? দায়িত্ব তো অনেকেই পায়, আবার তাদের অনেকেই আছে যারা আবার সেই দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে দৌড়াদৌড়ি ছুটাছুটি করে। অথচ মুখিয়ে থাকলেও তিনি তাদের নজরে পড়লেন না এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও! আজব ব্যাপার! সপ্তাহখানেক তার ভাবনাটা এরকমই ছিল। কিন্তু তারপরেই চিন্তাটা আবার অন্যদিকে ঘূর্ণি তুলে ছুটতে শুরু করেছিল, আচ্ছা, তার নামটা কি আসলে তাদের স্কুলের হেডটিচার সরকারের লাল খাতায় তুলে দিয়েছে ? এটা ঠিক, বিকেল হলে প্রতিদিনই সে গাঁয়ের মোড়ে বাহাউল্লার চায়ের দোকানে যায়, সেখানে ঘন্টা দু-এক বসে, গল্পগুজব করে, চা-বিড়ি খায় আর কে না জানে, তখন যেসব কথাবার্তা হয়, সেসবের কোনও ভাও থাকে না, মাথা-মুণ্ডু কিছু থাকে না; আর লোকজন তো এটাও জানে, ওই বাহাউল্লা আবার রাজপথের আন্দোলনের দলের তিন নম্বর বাচ্চা। এদিকে দেশের যা অবস্থা, আকমল হোসেন তো বটেই, বাহাউল্লাও খুব টায়ে-টায়েই বোঝে যে, মুখটায় কেবল টোনা পরালে চলবে না, মোটা কাপড়ের গামছা দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে শক্ত করে। নইলে কবে কোনদিন গুম হয়ে যেতে হবে, কেউ জানে না। তখন পিরের দরবারে মানত করেও লাভ হবে না, ঋষি-সন্ন্যাসীর পা-ধোয়া জল খেয়েও কোনও কাজ হবে না।
তবে যা দিয়েই বেঁধে রাখা যাক, হাজার হোক চামড়ার ঠোঁট, তা দিয়ে একটা কথা বেরিয়ে যেতে কতক্ষণ ? আবার বেরিয়ে গেলে সে কথা কি আর ফিরিয়ে নেয়ার কোনও উপায় আছে ? বাহাউল্লার চামড়ার ঠোঁট ফসকেও সেরকম দু-চারটা কথাবার্তা বেরিয়ে পড়ে মাঝেমধ্যেই। আর কী তাজ্জব, সে কথা এতই খাপে খাপ লেগে যায় যে, কেউই তার প্রতিবাদ করতে পারে না, বরং হয় মাথা নেড়ে সায় দিতে হয়, না হয় হাসতেই হয় ক্রমাগত। তাহলে হতে পারে, ঘটনা এরকমই একটা কিছু ঘটেছিল। কুচুটে মানুষজন হয়তো বাহাউল্লার চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারা আকমল সরকারকেও রাজপথের আন্দোলনের দলের মানুষ ভেবে একটা ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছিল। তাতে তার নামটা আটকে পড়েছিল লাল ফিতার মধ্যিখানে। আর এবার হয়তো ওই লাল ফিতাটা ঝরে পড়েছে কোনও উই পোকার মাস্তানিতে। সহকারী পোলিং অফিসার―এ আর তেমন কী আর! কিন্তু তার পরও তাকে ওই তালিকায় রাখা হয়েছে জেনে এখন মেরুদণ্ডটা খানিকটা সোজা করতে করতে এরকমই ভাবার চেষ্টা করেন আকমল সরকার―টাকাপয়সা তো আর তেমন কিছু পাওয়া যায় না এসব করে, ওই খানিকটা সম্মান বাড়ে আরকি। লোকজন তখন বুঝতে পারে, সরকারের মাতবর-লাঠিয়ালদের কাছে এ লোকটার বেশ গুরুত্ব-টুরুত্ব আছে―এই আর কি। তারপরও তাকে যে এতদিন একবারও এই দায়িত্বে দেয়া হয়নি, সেটা একটা চক্রান্ত ছাড়া আর কী-ইবা হতে পারে। নিজের মনের কাছে আকমল সরকার তো আর অস্বীকার করতে পারবেন না, ভয়ঙ্কর এক আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছিল তার ভেতরে, মানসম্মান নিয়েও নিশ্চয়ই টানাটানি বেঁধেছিল। কোথাকার কোন রুখশানা সুলতানা বছরখানেক আগে চাকরিতে ঢুকে পয়লা ঠেলাতেই সহকারী পোলিং অফিসার হয়ে গেল, অথচ তিনি এসবের নামগন্ধও শুকতে পারলেন না দশ-দশটা বছর পেরিয়ে গেলেও! এখন তো তার সরাসরি পোলিং অফিসারই হওয়ার কথা, অথচ তিনি কি না সহকারীও হতে পারলেন না!
এইসব গ্লানির ভারে মেরুদণ্ডটা যে একটু ঝুঁকে পড়েছিল, সেটা কি আর অস্বীকার করতে পারবেন আকমল সরকার। বাহাউল্লা তো একদিন ইয়ার্কিও করে বসল চা দিতে দিতে, ‘ও আল্লা― আপনে এহনো ভোটের কাজকামে ঢুকতে পারেন নাই ? বুঝতে পারছি, আপনার নাম এহনো দালালের পাকা খাতায় ওঠে নাই। নেন―নেন, একটু চা-বাতাসা খান…।’
আকমল সরকার তখন বোকার মতো হাসি দিয়েছিলেন। আর বাহাউল্লা তার গলাটাকে পুরো সিরিয়াস করে তুলেছিল, ‘হাইসেন না, হাইসেন না, লোকজন বলাবলি করে, আপনেরা প্রাইমারি স্কুলের টিচাররা সরকারের দালাল, আপনেরা একেকটা চর, আমার চায়ের দোকানে বইসা আমাগারে লোকজনের কথাবার্তা মাপেন; এদিক দেখতেছি, সরকারের দালালগারে পাকা খাতায় আপনের নামই ওঠে নাই! কী দালালি করেন, বলেন ? হোনেন, আপনেক ভালোবাসি, তাই কয়ে রাখি, দিনকাল এহন ভালো না মাস্টার, এহন হয় এসপার নয় ওসপার। রেজিম চেইঞ্জ হইলে আপনে তো বিপদে পইড়া যাবেন দেখতিছি।’
একেবারে এমএ পাস করেই না আকমল সরকার এই মাস্টারিতে ঢুকেছেন। কিন্তু তার পরও এই ‘রেজিম চেঞ্জ’ ব্যাপারটাকে ঠিক ধরতে পারেননি ওইদিন। চুপচাপ বসেছিলেন। অবশ্য ‘শুঁটকি আনু’ নড়েচড়ে বসেছিল, ‘কী কইলা তুমি ? রেজিম … রেজিম কী ?’
‘তুমি কী বুঝবা ? আর মাছ মাইরা-কাইটা শুটকি বানাইতাছো, তাই বানাও। এইসব বোঝার দরকার নাই। মাস্টার ঠিকই বুঝতেছে।’― কড়া গলায় উত্তর দিয়েছিল বাহাউল্লা। কিন্তু তার পরও আনু কেমন বকের মতো ঘাড়-কাঁধ-মাথা বাঁকিয়ে আছে দেখে আবারও খেঁকি দিয়ে উঠেছিল বাহাউল্লা, ‘রেজিম―রেজিম চেঞ্জ, মানে সরকার বদলান আর কি। … কী, ঠিক কই নাই মাস্টার ভাই।’
‘হু, হু’―কোনওমতে মাথাটা নেড়েছিলেন আকমল সরকার। বাহাউল্লা যদি একবার বলত, ‘আপনেই বুঝায়া দ্যান মাস্টার’, তাহলেই তো যেত তার চাকা পাংচার হয়ে। সেটা না ঘটায় লম্বা করে শ^াস টেনে নিয়েছিলেন বুকের ভেতর। তাছাড়া সেই থেকে তার হাহাকারও আরও বেড়ে গিয়েছিল। এলাকার হাইস্কুলের বাংলার টিচার হাবিবুর রহমানের অবস্থা যায়-যায়। তিনি বিদায় নিলেই চেষ্টা-তদবির করার মতো একটা জায়গা হয়ে যায়। প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলের টিচারের খাতায় নাম লেখানো যায়। কিন্তু মাথার মধ্যে এই বিদ্যা নিয়ে তিনি কি আর পারবেন আরও দুই-দশজনের সঙ্গে টেক্কা দিতে ? তার ওপর আবার এই রেজিম চেঞ্জের খেলা!
এইরকম এক অস্থির সময়ে তিনি কী দিয়ে কী যে করেছেন, নিজেরও আর মনে নেই ভালো করে। তবে এইটা মনে আছে, হেডমাস্টারের বাজারঘাটও করে দিয়েছিলেন কয়েক দিন। অবশ্য আকমল সেটাকে খারাপ কিছু মনে করেন না, তোয়াজ বলেও মনে করেন না। কাছাকাছিই বাড়ি তাদের, আর হেডমাস্টার ব্যস্ত থাকেন বলে সব সময় বাজারঘাটও করতে পারেন না, অতএব আকমল যদি চোখের সামনে ভালো কিছু দেখে তার জন্যেও একআধটা কেনাকাটা করে ফেলেন, তাতে সমস্যা কী! একজনের বাজারে যতটুকু সময় লাগে, দুইজনের বাজারেও তো তাই লাগে। এইসব কোনও ঘটনা হলো ?
জন্মবৃত্তান্তহীন জামগাছটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে এইসব সিনেমার মতো দ্রুত ভাসতে না ভাসতেই মিলিয়ে গেল আকমল হোসেনের সামনে থেকে। তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরলেন তিনি সেইদিন।
দরজা খুলে আকমল সরকারকে ভেতরে নিয়ে পিছু পিছু এলেন সখিনা খাতুন। কেন এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা, সেটা জানার জন্যে অন্তরাত্মা তার ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু জানতে চাইলে লোকটার মনমর্জি পাল্টে যেতে পারে। তিনি তাই চুপচাপই থাকলেন। তবে এটাও জানা আছে তার, বেশিক্ষণ কিছু না জিগায়ে থাকলেও আকমল সরকারের মেজাজ খটখটিয়ে উঠতে পারে। অতএব কয়েক মিনিট পর আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন তিনি, ‘কিছু হইছে ?’
আকমল সরকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়ল, পাশের বাড়ি থেকে তখন সৈনিক ভাইদের অনুষ্ঠান ‘দুর্বার’ শুরু হওয়ার মিউজিক ভেসে আসছে। কান পেতে সেটাই যেন শোনার চেষ্টা করলেন তিনি। আর শুনতে শুনতে আরও কয়েকটা ভাঁজ ফেললেন কপালটাতে। মুখটাকেও গোমড়া বানিয়ে দুশ্চিন্তা ঢেলে বললেন, ‘হইবে আর কি! ওই পোলিং অফিসার বানায়ে দিলো আর কি। টেনশনের ব্যাপার না ?’
সখিনার একবার বলার ইচ্ছে হয়, ‘বানাইতেছিল না বইলাও তো আপনের দুশ্চিন্তার শেষ আছিল না।’ কিন্তু কিছুই বললেন না তিনি। বরং তিনিও উদ্বেগ ঢেলে দিলেন, ‘হে, টেনশনেরই তো। একটু আগে পার্টির লোকজন আসছিল। তারাও লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানায়ে গেছে।’
বলে তিনি ঘরের কোণে মিটসেফের ওপর রাখা ছোট একটা ফুলের তোড়া দেখান। আকমল সরকারের মুখে বিস্ময় ফুটে ওঠে, ‘পার্টির লোকজন আসছিল মানে ?’
‘আশ্চর্য, পার্টির লোকজন মানে পার্টির লোকজন। দ্যাশে পার্টি কি এহন দুই-দশটা আছে নাকি ? বোঝো না তুমি ?’
আকমল সরকার টের পান, তার এই নির্বাচনি দায়িত্ব পাওয়ার ব্যাপারটা তারা ইতিমধ্যেই জেনে গেছে। তাতে খানিকটা আশাহত হন তিনি। কিন্তু স্ত্রীর কথার মধ্যে থেকেই আবার তার টেনশন, উদ্বেগ ইত্যাদি প্রকাশের যুক্তি খুঁজে পান, ‘তাইলেই বোঝো, কেমন একটা সমস্যায় পইড়া গেলাম!’
কিন্তু সখিনা আর কথা বাড়ান না। আকমল সরকার ঘরের মধ্যে অনবরত পায়চারি করতে থাকেন। এখন একবার বাহাউল্লার দোকানে গিয়ে চা-বিস্কুট খেতে পারলে মাথার ভার কমে যেত। কিন্তু সেটা তো বোধহয় ঠিক হবে না। এত বড় একটা গুরুদায়িত্ব! এরকম দায়িত্ব পেলে নাকি পাবলিকের সঙ্গে কথাবার্তা, মেলামেশা কমিয়ে দিতে হয়। বাহাউল্লা তো এরকমই বলছিল আরেক দিন। তিনি অবশ্য তার কোনও কলিগকে সেরকম করতে দেখেননি। হেডমাস্টারও সেরকম কিছু কখনও বলেননি। শুধু নোটিশটা দিতে দিতে বলেছিলেন, ‘মিষ্টি খাওয়ান আকমল সাহেব’।
‘তোমাদের কাছে তো এইসব ডালভাত। তারপরও দেখি, খ্যাপ মাইরা টাকার খামটা নিয়াই সুড়ুৎ করে পকেটে ঢুকায়া ফেলো। আর আমার বেলা মিষ্টি খাওয়ান।’ মনে মনে রাগত স্বরে বলেছিলেন আকমল সরকার। যদিও মুখে একটা গদগদে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তবে সখিনার সামনে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেই কি, আর মুখটা ব্যাজার করে ফেললেই বা কি। তা ছাড়া অনেক চেষ্টা-তদবির করে কেবল এই বছরচারেক আগে সখিনার একটা ছেলে হয়েছে। সেই ছেলেকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। আকমল সরকারের মুখ হাসিতে ভরা থাকলেও সখিনার তা দেখার সময় নেই, শোকে-দুঃখে তিন ব্যাঁকা হয়ে পড়লেও তাকানোর সময় নেই। তারপরও সখিনার তো বোঝার কথা, সরকারের লোকজন বাড়ি পর্যন্ত এসে আসলে জানিয়ে গেল, সব কিছু যেন ঠিক মতোই করেন আকমল। হোক সেই হাটিকুমরুল ভোটকেন্দ্র, সেখানেও যেন কোনও এদিক-সেদিক না হয়। দূরের ভোটকেন্দ্র হলে কী হবে, ওলোটপালোট কিছু করলে এখানেও ভুগতে হবে তাকে।
তাহলে! ভারী ঝামেলাই হলো মনে হয়। এই সব দায়দায়িত্ব না পেলেই তো ভালো ছিল মনে হয়! তা হেডমাস্টারকে বললে তিনি হয়তো তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন―আর হয়তো কেন, নিশ্চয়ই পারবেন―কত কিসিমের মানুষজন যে কত কিসিমের ধান্ধা নিয়ে তার আশপাশে ঘুরঘুর করে, এক আকমল সরকার তার কলব্যাকড়ের কথা বললে তিনি আরও দশজনকে হাজির করতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু না করে দেওয়া ঠিক হবে কি ? আবারও দোমনা হয়ে পড়েন আকমল সরকার। গায়ে হাত পায়ে অন্তত একবার একটু নির্বাচনের দায়দায়িত্ব পালন করার সিলছাপ্পর নেয়া দরকার না ? তাহলে কি ধারে-কাছের কোনও ভোটকেন্দ্রের জন্যে চেষ্টাতদবির চালাবেন! সেটাই মনে হয় ভালো হবে―মুখচেনা পোলাপান কমবেশি সকলেই, মুখ খারাপ করুক, অন্তত ধাওয়া দেবে না, গায়ে হাত লাগাবে না। তাহলে সে চেষ্টা করাই ভালো মনে হয়। হেডমাস্টার আর সমিতির একাব্বর ভাইকে একটু ছাই দিয়ে ধরলে সেটা কি খুবই অসম্ভব ? আবার মনে হয়, হাটিকুমরুল এমন কী দূর আর! ভোর ছয়টায় বেরিয়ে নাশতা করে সাইকেল মেরে সোজা পাকা সড়ক দিয়ে এগোলেই তিনি সেখানে পৌঁছে যাবেন। খালি একটু নিশ্চিত হতে হবে, সাইকেল রাখার ভালো কোনও স্ট্যান্ড আছে কি না স্কুলটাতে।
আকমল সরকার একবার এদিকে, আরেকবার ওদিকে ভাবতে থাকেন। পাশের ঘরে ছেলেটা কেমন ক্যা ক্যা করে কাঁদতে থাকে। আজ আর অন্য কোনও দিনের মতো বংশের একমাত্র প্রদীপ বলে তার বিছানার দিকে দৌড়ান না তিনি। ঘরে তার তেমন কোনও জিনিসপত্র নেই। তবে বউ যখন আছে, ছেলেমেয়ে যখন আছে, তখন একটা বড় আয়নাও তো আছে। সেটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে নিজেই দেখতে থাকেন নানা কোণ থেকে। অনুভব করার চেষ্টা করেন কোন অবস্থানে দাঁড়ালে তাকে খুবই পাকাপোক্ত কমান্ডিং অফিসার মনে হয়।
তার পর দৈনিকই একটু-আধটু অস্থিরতার মুখোমুখি হতে থাকেন আকমল সরকার। সেদিন বাজার থেকে ফেরার সময় স্কুলেরই রিটায়ার্ড হেডমাস্টার ইসমাইল স্যারের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। নানা উপদেশ দিতে থাকেন তিনি আর ভোটকেন্দ্রে ১৯৭৭ সালের কী এক ভোটের সময় তাকে কী ভীষণ তিক্ত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল, তা নিয়ে গল্প করতে থাকেন। আকমল বৃদ্ধ মানুষটির অত আগের সেই ঘটনার কথা শোনেন আর ভেতরে ভেতরে ঘামেন।
আর কী তাজ্জব ঘটনা! এখন হেডমাস্টারও মাঝেমধ্যে শলাপরামর্শ করেন আকমল হোসেনের সঙ্গে। সেদিন স্কুল ছুটির পরও করছিলেন, বলছিলেন, ‘আমাদের কিন্তু ভোটের আগে একটা ছোটখাটো ট্রেনিং হবে আকমল সাহেব।’
‘কেন ? আমাদের আবার কিসের ট্রেনিং দেবে ?’
‘আহ্হা, উত্তেজিত হচ্ছেন কেন ? একটু নিয়মকানুন জানাবে না আপনাকে ? কীভাবে তদারকি করতে হবে, সেটা বুঝাতে হবে না ? ভোটের পর তো আপনারাই গুনেটুনে নেবেন। নেবেন না ? গোণাগুনির একটা নিয়ম আছে না ? সরকারি দলের পোলিং এজেন্ট থাকবে, বিরোধী দলেরও থাকবে। তাদের কোনও পক্ষ যদি ডিসপুট দেয় ? কী করবেন তখন ? এইসব ব্যাপার বুঝে নিতে হবে না ? কখন খাওয়াদাওয়া করবেন, রেস্ট নেবেন, কোন মাছ-মাংস খাবেন, তা দেখতে হবে না ?’
গলাটা একটু নিচে নামিয়ে বলেন তিনি, ‘এবারের ভোট কিন্তু অনেক কঠিন আকমল সাহেব। আপনি তো এর আগে এইসব কাজকর্ম একবারও করেন নাই, তাই ঠিক ধরতে পারতেছেন না।’
‘না, না, ধরতে পারব না কেন ? ধরতে পারতিছি তো। এবার ধড়পাকড়টা মনে হয় একটু বেশি।’
‘খালি ধরপাকড়! শোনেন, ধরপাকড় যেমন আছে, তেমনি ছাড়পাকড়ও আছে।’ বলে একটু থেমে কেমন রহস্যময় হাসি দিয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘আপনাদের তো এবার মনে হয় আগের রাত থেকেই ভোটকেন্দ্রে কাজ করতে হবে।’
‘মানে ? আগের রাত থেকেই ভোটকেন্দ্রে … তার মানে ?’
‘আরে, চিন্তা করছেন কেন ? ভোট যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে না ? শোনেন, এই সব নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। চিন্তা যাদের করার কথা, তারা ওসব অনেক আগেই চিন্তা করে রেখেছে। আপনি শুধু দেখবেন, যারা ভোট দিতে আসতেছে, তারা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে চলে যেতে পারে। শোনেন, একটা সহজ নীতি শিখায়ে দেই আপনাকে। নিজে কোনও দায়িত্ব নেবেন না, মানে, দায়িত্ব পালন করবেন, কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাবেন না। যা-ই ঘটুক, আপনার ওপরে পোলিং অফিসার আছে, প্রিসাইডিং অফিসার আছে―তারা যা বলবে, সেইটা চুপচাপ চোখ বুজে ফলো করবেন। আমরা সরকারি কর্মচারী, আমাদের কাজ ওপরের অফিসারের অর্ডার ফলো করা। কী বুঝলেন তো ?’
‘বুঝতেছি। কিন্তু আগের রাতেই সেন্টারে যাওয়া লাগবে ? এইটা কেমন কথা ?’
‘কথা বাড়াইতেছেন ক্যান ? আপনাকে ডাকতেও পারে, নাও পারে। আর থাকা লাগলে থাকবেন, অসুবিধা কী ? আপনার-আমার দায়িত্ব একটাই, সরকারের কথা শোনা, বুঝলেন তো ? নির্বাচন সুষ্ঠু হলো, নাকি হলো না, ওই সব নিয়ে সরকার-বিরোধী দল ক্যাঁচাল করুক। আমাদের কাজ একটাই নিজের ওপরের অফিসারের কমান্ডকে ফলো করা।’
‘বুঝলাম না। কমান্ড যদি ঠিক না হয়, যদি ভুল হয়―’
‘বললাম তো আকমল সাহেব, ওপরের অফিসার বলেন আর শিক্ষক বলেন, তাদের আদেশ টায়ে-টায়ে পালন করাই আমার আপনার কাজ। কোনটা ভুল হলো, কোনটা ভালো হলো, আমাদের তো অত কিছু বোঝার দরকার নাই।’
তা ঠিক, কী দরকার অত কিছু বোঝার ? মনে মনে নিজেকে বোঝান আকমল সরকার। তবু মনের খুঁতখুঁতে ভাব কাটে না। আজকাল বাহাউল্লার দোকানে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, তাই মাথা ধরা ভাবটাও ঠিকমতো কাটে না। যদিও প্রতিদিনই একবার সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান বেশ খানিকক্ষণ, তার পর ফের ফিরে আসেন শুরুর জায়গাটাতে। তখন হয়রান হওয়ার চোটে একটু ভালোই লাগে। এইভাবে একটু হাঁফাতে পারলে, ঘাম ঝরাতে পারলে দূরের আকাশটাকেও বেশ আপন আপন লাগে। তবে সকালে নয়, তিনি হাঁটেন বিকেল বেলা। হেডমাস্টারের কথাবার্তা শুনলেও হাঁসফাঁস ভাব একটু বেড়ে যায় তার। এদের সঙ্গেই তো তার বাস, এদের নিয়েই তো তার সমাজ। মাথা ধরলেও কিছু করার নেই―ওই জোরেশোরে হেঁটেহুটে একটু হাঁফানো ছাড়া।
তা সে কাজটাই এখন আকমল সরকার করেন প্রতিদিন। সেদিনও বিকেলবেলা সেটাই করতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বেশি দূরে যেতে পারলেন না, তার আগেই ধাওয়াধাওয়ি শুরু হলো। তিনি দিব্যি বুঝতে পারলেন, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা দরকার। বুঝতে বুঝতে ভীষণ এক তিক্ত স্বাদে মুখ মন ভরে গেল। নিরাপদ দূরত্ব খুঁজে নিলেন তিনি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একটু খোঁজ নিয়ে যা জানলেন, তাতে অবশ্য বেশ অবাকই লাগল। বিরোধী দলের সঙ্গে নয়, নিজেদের মধ্যেই ধাওয়াধাওয়ি করছে সরকারি দল! তা এ দলই হোক আর ও দলই হোক, কিংবা হোক না কেন দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দল―এইসবে তার কোনও দরকার নেই। ক্ষুদ্র একজন স্কুল মাস্টার তিনি। বেতন যা পান তাতে সংসার চলে না। এই সহকারী পোলিং অফিসার হয়ে যে দু-চারটা টাকা পাবেন, তাতে নিশ্চয়ই একটু উপকৃতই হবেন। অতএব কোনও দিকে তাকানোর দরকার নেই তার। কথা একটাই, আর হেডমাস্টার তা বলেও দিয়েছেন―তিনি যাবেন সুষ্ঠু ভোট করতে, আর সুষ্ঠু ভোট মানে তার ওপরের পদের মানুষটা যা বলবেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। তবে অনেক সময় নিয়ে একটু দেরি করে বাড়িতে ফিরতে গিয়েও একটু বিপত্তি হয়ে গেল। ছোট গলির মধ্যে ঢুকে পড়তে না পড়তেই পার্টির এক ছোকরার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আর সে নিজে থেকেই এগিয়ে এল, ‘মাস্টার সাহেব। ভোট-টোট ঠিকমতো নিয়েন, কলাম। দেখতেছেন তো, বিরোধী দল কিন্তু নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা চালাইতেছে। ষড়যন্ত্র করতেছে। আমরা কিন্তু নির্বাচন বানচাল হতে দেব না। আমরা চাই নিরাপদ ভোট, সুষ্ঠু ভোট।’
‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। ভোট তো সুষ্ঠু হতেই হবে।’
বলতে না বলতেই একটা পটকা নাকি গ্রেনেড নাকি একটা বোমা এসে আকমল সরকারের পায়ের ডগা ছুঁয়ে একটু সামনে গড়িয়ে গিয়েই বিস্ফোরিত হলো। ভাগ্য ভালো, আওয়াজটা শুনতে না শুনতেই তিনি শুয়ে পড়েছিলেন। আর শুয়ে থাকতে থাকতেই কখন যে আবার উঠে এক দৌড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন, সেটাও আর টের পাননি। সখিনাও যেন তৈরি হয়েই ছিলেন। আকমল সরকার দরজাটায় নক করার জন্যে আঙুল ঠেকানোর আগেই কপাটজোড়া খুলে গিয়েছিল আর কেউ টান মেরে ভেতরে টেনে নিয়েছিল তাকে। তখন আবারও একটা বোমা নাকি গ্রেনেড নাকি পটকা ফুটেছিল। সেটার শব্দ শুনতে শুনতে বুঝতে পেরেছিলেন আকমল সরকার, যত ভাবই দেখান না কেন, আসলে তিনি খুবই গরিব মানুষ। এত গরিব বলেই তো গ্রেনেড, বোমা আর পটকার আওয়াজের মধ্যেকার তফাৎটাও ঠিক করে ধরতে পারেন না। বাইরে মানুষের হইচই, চিৎকার, চেঁচামেচি ও ধাওয়াধাওয়ির আওয়াজে বাচ্চাটা মনে হচ্ছে কেমন যেন চুপসে গেছে। এহ্, ইলেকশনের আগে গাঁও-গেরামেও এখন তাহলে এমন গণ্ডগোল পাকাতে শুরু করেছে!
আকমল সরকার উদ্বিগ্ন সখিনার কণ্ঠ শুনতে পান, ‘এ কয়দিন যা হয় হউক, ইলেকশনের দিন এমুন গণ্ডগোল-টন্ডোগোল না হলিই হয়।’
‘কী যে কও, গণ্ডগোল হইব ক্যান ? শোনো, অনেক ফরেন ডেলিগেট আসছে।’― বলতে বলতেই স্ত্রীর ইংরেজি শব্দের ভান্ডার খুব বড় নয় ভেবে আকমল সরকার আবার বলেন, ‘মানে বিদেশ থেকে অনেকেই আসছে এই ভোট দেখতে। তারা কখন কোন কেন্দ্রে যাবে, কী রিপোর্ট দেবে না দেবে, এসবের মধ্যে কেউই গণ্ডগোল বাধাতে যাবে না। বুঝতে পারছ তো ?’
‘হ, কইছে আপনেক।’― নিজের অবস্থানেই অবিচল থাকেন সখিনা।
আর সখিনার এই অবিচল কণ্ঠটুকু আকমল সরকারকে কেমন কাঁপিয়ে তোলে। তাই তো, ফরেন ডেলিগেট মানে বিদেশি প্রতিনিধিদল এলেই কী, আর না এলেই কী! তাদের বলার বা কোনও কিছু করার ক্ষমতাই বা কতটুকু। তা যা হোক, তাদের কেউ অন্তত এইরকম ধাওয়াধাওয়ির মধ্যে ফুট্টুস করে মারা যাবেন না। কিন্তু তিনি বা তারা ? তিনি বা তারা তো মরেও যেতে পারেন! আকমল সরকার ভয়ঙ্কর ঘামতে থাকেন। আচ্ছা, এখন হেডমাস্টার তাকে বাদ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করতে পারবেন না ? কিংবা এমন তো কতজনেরই হয়, হঠাৎ করে ডেঙ্গু হয়ে যায়―ভোটের ঠিক আগের দিন, তেমন করে তার ডেঙ্গু ধরা পড়তে পারে না ? কেবলই এইসব ভাবেন আর ঘেমে চলেন আকমল সরকার।
সচিত্রকরণ : রজত