
পাকিস্তানের আজাদি দিবসকে সামনে রেখে আর্মি হেডকোয়ার্টারের অফিসার্স মেসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সেনা কর্মকর্তারা আজ বিশেষ ভোজ উৎসবে মিলিত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রমিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, বিশেষভাবে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের নেতৃবৃন্দ, যারা ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করেছেন এবং অতন্দ্র প্রহরীর মতো সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছেন।
তখনও আলোচনা-আড্ডা জমে ওঠেনি। কেবল এক কোণে জেনারেল, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুদৃশ্য কাচের গ্লাসে ছোট ছোট চুমুকের সঙ্গে নিকট অতীতের ব্যর্থতা-সফলতা নিয়ে কথা বলছিলেন।
শুকরিয়া রবের, কসম এই শরাবের, সেদিন যদি আমরা চট্টগ্রাম রক্ষা না করতে পারতাম তাহলে আজ এই আসরে আমাদের একসঙ্গে থাকা হতো না।
ঠিক বলেছো ইয়ার, চট্টগ্রাম বন্দর তাদের দখলে চলে গেলে অস্ত্র আর রসদের জোগান বন্ধ হয়ে যেত। চট্টগ্রাম হাতছাড়া হলে বাইরে থেকে সাহায্য আসার পথও বন্ধ হয়ে যেত। শুভপুর পর্যন্ত তো দখল প্রায় নিয়েই ফেলেছিল, ইকবাল শফির এত বড় সেনাদলকে কুমিরায় নাস্তানাবুদ করে দেয় এক অখ্যাত ক্যাপ্টেনের দল। আমাদের ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে তা-ও আবার ক্যাপ্টেন নিজে নয়, তার এক সুবেদারের কমান্ডে পরিচালিত কোম্পানি।
চট্টগ্রাম যুদ্ধে আমাদের হারাতে হয়েছে অনেক। ওই ক্যাপ্টেনটা শুরু করেছিল ভালোভাবে, কিন্তু যাকে সে ভরসা করেছিল, সে কেন যে কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। শুরুটা তো সে ভালোই করেছিল, তার কমান্ডিং অফিসারকে খুন করে ফেলে। বাস্টার্ডটা বোধহয় ভয় পেয়ে পিছে সরে গিয়েছিল।
তুমি কি জিয়ার কথা বলছো, সে তো চৌকস অফিসার, আমার সঙ্গে কাজ করেছে। ইন্টিলিজেন্স অফিসার হিসেবে খ্যাতি আছে।
হ্যাঁ, তার কথাই। যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি হয়তো সে ওইভাবে ভেবেছিল। তবে চট্টগ্রামমুখী ইপিআর সৈন্যরা যারা ক্যাপ্টেনের নির্দেশে শহরে প্রবেশ করছিল, জিয়া তাদেরকে ব্রিজের এপারেই থামিয়ে দেয়। সেটা না করে যদি সে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে আসত, যদি একযোগে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করত, তাহলে আমাদের পতন ছিল অনিবার্য।
কর্মকর্তাদের মধ্যে সিনিয়র, একজন মেজর জেনারেল তার অফিসারদের এইসব সরলীকৃত বক্তব্য শুনছিলেন।
মনে মনে তিনি বললেন, বাকোয়াস।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত এবং পাত্র-পাত্রীর উপস্থিতি যা-ই থাক, চূড়ান্ত ফলাফলে চট্টগ্রাম বিজয় তাদেরই হতো, এই সহজ বিষয়টাকে এই গাধা অফিসারগুলো ভাবতে পারছে না কেন ?
এক চুমুকেই তিনি গ্লাসটা শেষ করলেও, গাধাগুলোর উপর উষ্মা প্রকাশের ভাষা হিসেবে তিনি খালি গ্লাসটা খট করে একটা টেবিলের ওপর রাখলেন। বললেন, অফিসার্স, ক্যাজুয়ালটি হতেই পারে। চূড়ান্ত বিচারে তো আমরাই জিততাম এবং জিতেছিও। আমাদের অনেক সাবধানতা ছিল। আমরা ঢাকায় যখন তাদের জীবন্ত কাবাব বানাচ্ছি, তখন চট্টগ্রামের বিদ্রোহীরা ঘুম ভেঙে জেগেছে মাত্র। মেজর জিয়া আগ্রাবাদে বাধাগ্রস্ত হয়ে ফিরে না এলে তাকে আদর করে ঘুম পাড়াতে বন্দরে অপেক্ষা করছিল ঘাতক সৈন্য। অফকোর্স হি ইজ লাকি। হি কেম ব্যাক অ্যান্ড কিলড জানজুয়া অ্যান্ড আদারস। পতেঙ্গা এয়ারবেস, নেভাল বেসে আমাদের সৈন্যরা মজুত ছিল। আমরা তো জিততামই। কথা বলতে বলতে জেনারেল অফিসারদের চোখের দিকে তাকালেন। অফিসাররা সমস্বরে বললেন, ইয়েস স্যার।
আজ সামরিক কর্মকর্তারা খোশ মেজাজে আছেন। পূর্ব পাকিস্তান তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে ব্যাঘ্রপিতা জেনারেল নিয়াজি আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তিনি এসেই পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ফিরে গেলেন পেশোয়ার। লে. জেনারেল টিক্কা খানকে চিফ মার্শালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি কেবল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়াজি পূর্ব পাকিস্তানকে ২টি সামরিক অঞ্চলের পরিবর্তে ৩টি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করেন। তিন অঞ্চলের জন্য তিনজন জিওসি কে দায়িত্ব দেন।
এই বাঙাল মুলুকে তিনি এর আগেও একবার এসেছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের একজন নবীন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বার্মা সীমান্তে টেকনাফে জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন। তখন ঢাকা সেনানিবাস, কুমিল্লা সেনানিবাসে তিনি স্বল্পকাল অবস্থান করেছিলেন। তখনকার ঢাকা আর আজকের ঢাকার অনেক পরিবর্তন। তখন ঢাকা ছিল চারদিকে সবুজ পাতার আচ্ছাদনে ঘোমটা দেওয়া। ঢাকা ঘোমটা খুলতে শুরু করেছে। ঢাকায় আজকাল অনেক দালানকোঠা উঠেছে।
জেনারেল নিয়াজি খাদিম হোসেন রাজার ওপর সন্তুষ্ট হলেন না। প্রদেশব্যাপী বাঙালিদের প্রতিরোধ করার সংবাদে তিনি মনে মনে ক্ষিপ্ত হন। বললেন, ম্যাঁয় এই হারামজাদি কৌম কি নাসাল বদল দুংগা। ইয়ে মুজে কেয়া সমঝাতে হায়। (আমি এই বেজন্মা জাতির চেহারা বদলে দেব। এরা আমাকে কী ভেবেছে ?)
জেনারেল দপ্তরের কাজ বুঝে নেওয়ার আগ্রহ দেখান না। খাদিমকে বললেন, লাড়কি কাহা ? তিনি সুন্দরী বাঙালি ললনাদের সন্ধান করেন।
স্বেচ্ছায় ধরা না দেওয়া বাঙালি সুন্দরীদের না পেয়ে তিনি আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলেন, আমি আমাদের সৈন্যদের ছেড়ে দেব এদের নারীদের উপর। তারা সন্তান উৎপাদন করবে। পরের প্রজন্ম নতুন চেহারায় নতুন জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে।
সেনা কর্মকর্তাদের পানপাত্রগুলো পুনর্বার পূর্ণ করে দিয়ে যায় উর্দি পরা খানসামা। এই অমৃত সহজে তাদের কাবু করতে পারে না। বিশিষ্ট অতিথিদের সবাই এখনও এসে পৌঁছায়নি। মোলাকাত পর্ব শুরু হবার আগ পর্যন্ত অমৃতের স্বাদ গ্রহণে অসুবিধা নেই। অনেক দিন পর আজ তারা একত্র হয়েছে আজাদি দিবসকে সামনে রেখে। প্রাণ খুলে তারা আজ তাদের সফলতা-ব্যর্থতার কথাগুলো বলছেন, ব্যর্থতার কারণগুলোও বিশ্লেষণ করছেন। চট্টগ্রাম যুদ্ধে বিজয়ী অধিনায়করা আজ এখানে আছেন, চট্টগ্রামের আলোচনাটা জমে উঠেছে সে কারণেই।
একজন জেনারেল সদর দরজার দিকে ইশারা করলেন, সবুর খানসাব তসরিফ লে আয়া।
জেনারেলের দৃষ্টিকে অনুসরণ করে সবার দৃষ্টি সবুর খানের দিকে চলে যায়। তিনি আইয়ুব মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান।
খুলনা অঞ্চলের অধিনায়ক অমৃত জলে একটা দীর্ঘ চুমুক দিয়ে বললেন, আপনারা কি জানেন যে তিনি নারীসঙ্গ অপছন্দকারী একজন মানুষ।
একজন ব্রিগেডিয়ার বললেন, আমাদের চেয়ে ভালো জানে খুবসুরাত বালক।
ওহ! ব্রিগেডিয়ার! হি-ইজ অ্যা এনিমি অব ইসলাম। ড়ু ইউ নো দ্যা হিস্ট্রি অব প্রফেট লুত, ন্যারেটড ইন দ্যা হোলি কোরআন ? বললেন জেনারেল।
সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন। একজন কর্নেল বললেন, আই নো স্যার।
জেনারেল বললেন, তাহলে বলো।
কর্নেল বললেন, নবি লুত-এর কওমের লোকেরা নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। সে কারণে তারা আল্লাহর লা’নত প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাদের ওপর বিকট শব্দধ্বনি দিয়ে অমোঘ আজাব দিলেন, বড় বড় পাথরের বৃষ্টিবর্ষণ করলেন, ভূমি উল্টে দিয়ে জনপদকে নিশ্চিহ্ন করলেন, সেখানে সৃষ্টি হলো অভিশপ্ত হ্রদ। তাতে লবণ ও এক প্রকার তেল জমা হলো, যার ফলে মাছ বা কোনও জলজ প্রাণি সেখানে বাঁচে না। সেই হ্রদের নাম হলো ডেড সি, লুত সাগরও বলে স্থানীয়রা। তার স্পেসিফিক গ্রাভিটি এত বেশি যে কোনও বস্তু বা মানুষ কিছুই ডোবে না।
তখন অনেকেই হইচই করে ওঠে। স্যার, এটা তো জর্ডানে। আমরা গিয়েছি। ওখানে চিত-সাঁতার কেটেছি। দ্যাট ওয়াজ অ্যামেজিং।
জেনারেল বললেন, নো, নো। নাউ এ ডেজ, দিস ইজ অ্যামেজিং! বাট ইট ওয়াজ এ কার্স ফর দৌজ পিপল।
একজন জেনারেল টিপ্পনী কাটলেন। অলমাইটি আল্লাহ সেভড পাকিস্তান আর্মি। দে হ্যাভ নো সাচ ব্যাড হ্যাবিট।
আরেক জেনারেল গ্লাসে চুমুক দেবার আগে রসিয়ে রসিয়ে বললেন, হোয়াই দে উইল বি ইউজড টু উইদ ব্যাকহোল, হোয়েন ডেলিসিয়াস ফ্রন্ট সাইড ইজ এভেইলেবল।
তার কথায় হেসে ওঠেন সবাই।
হল রুমে প্রবেশ করলেন চট্টগ্রামের এফ কে সিÑ ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট। তার গৌর বর্ণের দীর্ঘ শরীর। রাজপুরুষের মতো তার গ্রীবাভঙ্গি। তার শরীরে শোভা পাচ্ছে অভিজাত বিলেতি পোশাক। মাথায় লিয়াকত আলি মডেলের ক্যাপ। তার পদক্ষেপের মধ্যেই দর্পিত ক্ষমতার অহংকার ফুটে ওঠে।
বড় জেনারেল বললেন, হি ওয়াজ প্রেসিডেন্ট ফর ওয়ান ডে।
সবাই সমস্বরে বললেন, ফানি! হাউ কাম স্যার ?
জেনারেল বললেন, নো ফানি। হি ওয়াজ স্পিকার। প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে গেলে সাংবিধানিক অধিকার বলেই স্পিকার প্রেসিডেন্ট হন।
ও! উত্তর শুনে হতাশ হলেন উৎসাহী অফিসারবৃন্দ।
চট্টগ্রাম থেকে যোগ দেওয়া জেনারেল বললেন, এফকেসি আমার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে হিন্দু উৎখাতের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তাদের সম্পদ নিজের অধিকারে নিয়ে এসেছেন। আমাদের এরকম বুকের পাটাঅলা নেতার দরকার। নিষ্ঠুরতায় তিনি শ্রেষ্ঠ, তার দুই পুত্র সালাউদ্দিন ও গিয়াসউদ্দিন, তারাও নিষ্ঠুরতা ও হিংস্রতায় আদর্শ বিবেচিত হতে পারে। তারা তাদের ‘গুড হিল’ নামের বাড়িতে ‘টর্চার সেল’ খুলেছে। চট্টগ্রাম জেলার সকল সন্দেহভাজন ভারতীয় এজেন্ট আর পাকিস্তানের দুশমনদের ধরে ধরে এনে কঠিন শাস্তি দিচ্ছে। যাদের ধরে আনা হয়, তারা মৃত্যু থেকে খুব বেশি দূরে থাকে না, তারপর একসময় তাদেরকে মৃত্যুর ফেরেশতাকে উপহার দেয়া হয়। তারা এমন সব নির্যাতনের কৌশল রপ্ত করেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছেলেদেরকে সেসব শেখার জন্য তাদের গুড হিলের টর্চার কেন্দ্রে ট্রেনিংয়ে পাঠানো যেতে পারে।
বলেই জেনারেল অসীম উৎসাহ নিয়ে হাসতে থাকেন। তার হাসির সঙ্গে যোগ দিয়ে অন্য একজন জেনারেল মজা করে বললেন, তারা কি দোজখের প্রহরীদের অতিক্রম করেছে ?
চট্টগ্রাম জেনারেল তার অব্যাহত হাসির মধ্যেই বললেন, বললাম না, আমাদের ছেলেদেরও সেখানে ট্রেনিংয়ে পাঠানো যেতে পারে। দোজখের প্রহরীরা তো অনেক আগে থেকেই আমাদের ছেলেদের অনুসরণ করছে।
এবার সবাই একসঙ্গেই হাসিতে যোগ দেন। কিন্তু সে হাসি শেষ হবার আগেই চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার বলে উঠলেন, না না এখানেই শেষ নয়। চট্টগ্রামে টেলিগ্রাফ হিল রোডে একটা হোটেল আছে, ডালিম হোটেল। হিন্দু মালিক। শালাকো ভাগা দিয়া। এই হোটেলে ছাত্র সংঘের নেতারা টর্চার সেল করেছে। শহরে লুকিয়ে থাকা মুক্তি, আওয়ামী সাপোর্টার, হিন্দু―সবাইকে তারা ধরে ধরে নিয়ে আসে। তারপর টর্চার করে। এই টর্চারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নাই। ওরা এটাকে দোজখ বানিয়ে ফেলেছে। নগদ অর্থ ও সম্পদের বিনিময়ে অনেকে মুক্তি পায় কিন্তু তাদের কারও কারও চোখ নাই, হাত নাই, পা নাই।
ঢাকার কমান্ডিং অফিসার উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন, দ্যাটস্ গুড।
জেনারেল বললেন, এবার আমরা কাজের বিষয়ে কথা বলি। আমাদের আজকের কাজ হলো, সেনাবাহিনীর বাহিরে যে সব দেশপ্রেমিক সংগঠন কাজ করছে, তাদের সঙ্গে খোশগল্প করতে করতে তাদের কাজের ধরন জানা, তাদেরকে সহযোগিতা দেওয়া, সহযোগিতা নেওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলা। বিশেষ করে ভারতীয় দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আর কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে মতামত নেওয়া। আজাদি দিবসকে এবার জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করতে হবে, এ বিষয়েও কথা বলতে হবে। প্রফেসর গোলাম আযম সাহেব আর খাজা খয়ের সাহেবের পিস কমিটি চমৎকার কাজ করছে। রাজাকার ভালো কাজ করছে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেক গ্রামে রাজাকারের ইউনিট হয়েছে, তাদের জন্য অর্ডিনেন্স হয়েছে। আনসারকে তাদের সঙ্গে মার্জ করা হয়েছে। তারা নিয়মিত আধা সামরিক বাহিনীর মর্যাদা পাচ্ছে। আর কমিউনিস্ট এবং নাস্তিকগুলো, যারা গোপনে গা ঢাকা দিয়েছে অথবা ইউনিভার্সিটি, কলেজ, সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন চাকরিতে রং বদলে ঘাপটি মেরে আছে, পাকিস্তানের মাটি থেকে তাদের নাম-নিশানা মুছে ফেলার দায়িত্ব নিয়েছে আল বদরবাহিনী। তাদের নেতারাও এসে গেছেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, কাজেই তোমরা এবার খোশগল্পে যোগ দিতে পারো।
নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মুজাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট আবু তাহেরসহ আজকের বিশেষ আয়োজনে যোগ দিয়েছে আশরাফুজ্জামান, গোলাম সরওয়ার, খালেক মজুমদার, সাজ্জাদ খালেক, চৌধুরী মঈনুদ্দীন। তাদের সবাই আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতা।
তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তা পা বাড়ালেন। যাবার আগে একজন জেনারেল বললেন, বদরবাহিনী আর রাজাকারদের অতিরিক্ত দেশ সেবার কারণে আমাদের ফৌজরা নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া আর মাঝে মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে ছোটখাটো লড়াই করা ছাড়া সৈন্যদের তেমন কাজ থাকে না। তারা রাজাকার আলবদরদের ধরে আনা জেনানাদের নিয়ে মত্ত থাকে সারাক্ষণ। জেনানাদের সঙ্গে তারা অনেক নিষ্ঠুর আচরণও করে। সংখ্যায় বেশি পাওয়ার কারণে ওরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না।
বড় জেনারেল বললেন, হ্যাঁ, নিষ্ঠুরতা কমানোর জন্য তাদের বলা যায়। কিন্তু সন্তান উৎপাদনের কোনও বিকল্প নেই। তোমাদের বিগ জেনারেল তো ছাড়পত্র দিয়েছেনই, একটা নতুন পাকিস্তানি জাতি সৃষ্টি করতে হবে। তিনি তো বলেই দিয়েছেন, সৈন্যরা এখানে যুদ্ধ করবে আর মৌজ করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে ঝিলামের তীরে যাবে, এর কোনও প্রয়োজন নেই।
ছাত্র সংঘের নেতারা ক্রিম ও কালো রঙের চমৎকার প্রিন্স কোট গায়ে দিয়ে এসেছেন। তাদের পোশাক তাদেরকে আভিজাত্যের মর্যাদা দিয়েছে। তাদের মাথায় শোভা পাচ্ছে জাতির পিতার নামে ব্রান্ড করা জিন্নাহ ক্যাপ। তাদের সবারই সদ্য ছাঁট দেওয়া যুবক দাড়ি, তাদের প্রিন্স কোট, জিন্নাহ ক্যাপ তাদেরকে সেনা কর্মকর্তাদের চোখে সম্মানীয় করে রাখে।
জেনারেল ও অধস্তন অফিসারদের প্রায় সবারই মোচ আছে, কারও তীক্ষè ফলার মতো দুদিকে বিস্তৃত, মোচগুলো তাদের শৌর্য ও সাহসের প্রতীক। জেনারেলরা হাত বাড়িয়ে সৌহার্দ বিনিময় করেন আলবদর আর রাজাকার বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
পরিচয়ের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে, জেনারেলরা ঘুরে বেড়ান হল রুমে, ঘুরে বেড়ান অভ্যাগতরাও। কেবল এক অপার বিস্ময় নিয়ে বদর প্রধানের সান্নিধ্যে সময় কাটাতে থাকেন একজন জেনারেল। জেনারেলের বিস্ময়ের কারণ হলো, ভারতীয় দুষ্কৃতকারীগুলো, যাদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনী অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় পাঠিয়েছে, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে দিয়েছে যে বদরবাহিনী তার প্রধান তার সামনে দাঁড়িয়ে। জেনারেলদের মতো লাল সোনালি ব্যাজ তার কাঁধে নেই, তার মুখের অভিব্যক্তিতে একজন সৈনিকের যে কাঠিন্যের ছাপ থাকে, সে সবের কিছুই নেই। অথচ জেনারেল জানেন, এই বাহিনী এরই মধ্যে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী, ভারতীয় চরদের ধরে ধরে যে নিষ্ঠুর শাস্তি দিয়েছে, তার কোনও তুলনা চলে না। নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান ভাবছেন, পাকিস্তান হবে ইসলামের মহাজাগরণের দেশ, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহা নেয়ামতের দেশ। এ দেশকে নাপাক হিন্দুদের বিস্তার করা থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য এই দেশে উনারা এসেছেন ফেরেশতার রূপ ধরে, যারা পাঁচ হাজার বছর আগের হরপ্পা, মহেনজোদারোর মহান সভ্যতার উত্তরাধিকারী। মতিউর রহমানের ভাবনা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই ফেরেশতারা দেশের শত্রুদের বিনাশ করে একদিন ব্যারাকে ফিরে যাবেন। আজ তিনি বদরবাহিনীর প্রধান। তারপর একদিন মাওলানা আবুল আলা মওদুদী রহমাতুল্লিল আলামিনের প্রতিনিধি হিসেবে তার দলই এই দেশকে শাসন করবে আর কালক্রমে একদিন তিনিই হবেন এই দেশের প্রধান ব্যক্তি।
মতিউর রহমানের ভাবনাটি ছিল ঝড়ো বাতাসের মতো। তার ভাবনায় বাধা পড়ে যায় যখন জেনারেল একটা গ্লাস বাড়িয়ে ধরেন।
বরাবরই তার হাসিটি মৃদু, কিন্তু মধুর নয়, তিনি জানেনও তা। তবু আজ মৃদু হাসির সঙ্গে মধু যোগ করার চেষ্টা করে বললেন, আভি নেহি জেনারেল।
এ কথায় কী প্রমাণ করে, তিনি পরে কোনও এক সময়ে তার সঙ্গী হবেন অথবা এর প্রতি অনাসক্তির কারণে জেনারেলকে অপমান না করে ভদ্রভাবে বললেন, আভি নেহি।
জেনারেলও নাছোড়বান্দা। তিনি তার ভারী হাতটা নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘের এই ক্ষমতাধর মানুষটির কাঁধে রাখলেন।
বললেন, মাত ডরো।
জেনারেলের কথায় দ্যোতনা আছে, মহাকবি ইকবালের কবিতা তিনি আবৃত্তি করলেন মধুর ঝঙ্কারে―
হাম তু জিতে হ্যাঁয় কেহ দুনইয়া মে তেরা নাম রাহে
কাহি মুমকেন হায় কেহ সাকি নাহ রাহে, জান বাহে ?
মতিউর রহমান দিল বরাবর হাত রেখে প্রশংসা করলেন, বাহ! বাহ!
মতিউর রহমান আসরের শেষ প্রান্তে ইসলামী ছাত্র সংঘের শীর্ষ নেতাদের দেখলেন, যারা এখন বদরবাহিনী আর রাজাকারের সংগঠক এবং কমান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, খালেক মজুমদার, কামারুজ্জামান, আশরাফুজ্জামান, মঈনুদ্দীন, আশরাফউদ্দিন সবাইকে তিনি দেখছেন। বেশ আছে তারা, আড্ডা জমিয়ে তুলেছে। কিন্তু অবাক ব্যাপার, তাদের কারও মাথার ওপরই টুপি দেখতে পান না। তাদের হাতে সুদৃশ্য পানীয়র গ্লাস। তিনি কিছুটা বিস্মিত হন এ কারণে যে তারা প্রকাশ্যে এ কাজটি না করলেও পারত। আর জেনারেলদের খুশি করতে অথবা একটা ছুতোয় শরীরটাকে আগেভাগে গরম করে নেওয়ার ব্যাপার হলে কিছু বলার নেই। তবে তার ভালো লাগে, যখন বুঝতে পারেন জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তারা টুপিগুলো তাদের প্রিন্স কোটের গোপন পকেটে হেফাজত করেছে।
দুদিন পরে মহান আজাদি দিবস। আজাদি দিবস উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য আজই তিনি একটা ড্রাফট করেছেন। ভালোই হতো নিয়ে এলে, জেনারেলের সঙ্গে একটু শেয়ার করতেন। মতিউর রহমান বিবৃতির ভাষাটা মনে করতে চেষ্টা করেন।
‘হিন্দুস্থানের ঘৃণ্য চক্রান্তের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তার প্রিয়ভূমি পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য ইমানদার মুসলমানদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন। গ্রাম-গঞ্জ-শহরে বন্দরে ঘাপটি মেরে থাকা পবিত্র ভূমির শত্রুদের খুঁজে বের করতে হবে। ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং বদরবাহিনীর চৌকস যোদ্ধারা ইমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে পাকিস্তানের বীর সেনাবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রুদের মোকাবিলা করছে। ব্রাহ্মণ্য সাম্রাজ্যবাদের দালালরা পূর্ব পাকিস্তানকে হিন্দুস্থানে অন্তর্ভুক্তির আন্দোলন করেছিল। তারা পাকিস্তানকে ‘আজিমপুরের গোরস্থান’ বলে স্লোগান দিয়েছিল। আজ তাদের স্থান পাক মাটিতে না হয়ে আগরতলা ও কলকাতার শ্মশানে হয়েছে।’
বিবৃতির কথা ভাবতে ভাবতে তার মনে হতে থাকে, বিবৃতি একটি আলংকারিক বিষয়। বিবৃতিতে কিছু হয় না। দরকার অ্যাকশন। ভারতের দালালদের খতম করতে হবে। আলবদরের চৌকস যোদ্ধাদের হাতেই তাদের মরণ হবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরাই বদরবাহিনীকে ট্রেনিং দিয়েছে। আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়, একটি প্রতিজ্ঞা। তথাকথিত মুক্তিবাহিনী যেখানে, আলবদর সেখানে। দুষ্কৃতকারী যেখানে, আলবদর সেখানে।
মতিউর রহমানের মানসপটে হঠাৎ করে ফটোফ্ল্যাশের মতো শহীদ আবদুল মালেকের মুখটা ভেসে ওঠে।
আবদুল মালেকের মৃত্যুর মুহূর্তটা কিছুতেই ভুলতে পারেন না মতিউর রহমান। শহীদ আবদুল মালেক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রির মেধাবী ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি তখন নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন। মতিউর রহমানের বড় আপনজন ছিলেন মালেক। বগুড়ার ধুনটে মালেকের বাড়ি। পাশাপাশি জেলার বাসিন্দা দুজন। সে কারণেও এক ধরনের টান অনুভব করতেন দুজনেই। সেদিন ছিল ১২ আগস্ট উনিশশ আটষট্টি সাল। টিএসসি-তে ‘সেকুলার এডুকেশন সিস্টেম’-এর ওপর আবদুল মালেক তার স্বাভাবিক বাচনিক কৌশলে উপস্থাপন করলেন ‘ইসলামিক এডুকেশন সিস্টেম ইন পাকিস্তান সাজেস্টেড বাই নুর খান।’ মালেক বললেন, কোরআন ও সুন্নাহর আলোকেই পরিচালিত করে পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা।
কিন্তু কমিউনিস্ট ও নব্য আইয়ামে জাহেলিয়ার সদস্যরা আবদুল মালেকের উপস্থাপিত যুক্তি মেনে নিতে পারে না। সেমিনার থেকে বেরিয়ে নিজের ফজলুল হক হলের দিকে যাওয়ার পথেই তিনি আক্রান্ত হন। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত আর ডান্ডা দিয়ে পেটাতে পেটাতে তাকে ধরাশায়ী করে। রক্তে ভেসে যায় সবুজ ঘাস। তিন দিন পর ১৫ আগস্ট আবদুল মালেক শহীদ হন। তার মৃত্যুর দৃশ্যটা তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। ধীরে ধীরে নিথর হয়ে আসছে তার শরীর। তার শিথিল হাত দুটো ধরে রেখেছেন মতিউর রহমান। তাকিয়ে আছেন চোখের দিকে। তখনও চোখের তারা মরে যায়নি আবদুল মালেকের। চোখের মণিতে মণিতে কি শেষ সংযোগ হয়েছিল তার সঙ্গে! চোখের ভাষায় কিছু কি বলেছিলেন তিনি ? কী বলতে চেয়েছিলেন আবদুল মালেক ? দুটো বিষয় হতে পারে। এক. ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা নয়, পাকিস্তানে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। দুই. এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে হবে।
শহীদ আবদুল মালেক কোনটির কথা বলেছিলেন ঠিক বুঝতে পারেননি সেদিন। কারণ তখন সময়টা ছিল তার মৃত্যুকালীন বিয়োগ ব্যথায় পূর্ণ। কিন্তু আজ কোথায় সেই নরাধম কমিউনিস্ট, ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুর আওলাদেরা ? তাদের পুঁজিবাদী স্বার্থরক্ষার পড়াশোনা ? আজ শহীদ আবদুল মালেকের ইচ্ছাপূরণ একই সঙ্গে প্রতিশোধ গ্রহণের দিন সমাগত। জেনে রাখ শয়তানের উপাসকরা, পুঁজিবাদ সে তো আত্মার অভিশাপ, সমাজতন্ত্র সে তো কারাগার, আল কোরআন দিচ্ছে ডাক, এসো ইসলামের পথে, এসো আলোর পথে।
আজ দিন এসেছে, শহীদ মালেকের পাকিস্তানে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার, আজ দিন এসেছে, হত্যাকাণ্ডের বিচার করার। এক হত্যাকাণ্ডের বদলা হবে শত শত, হাজার হাজার, যারা শিখিয়েছে আর যারা শিখেছে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার, তাদের সবার।
মতিউর রহমানের চোয়াল দুটো শক্ত হয়। প্রতিশোধের আগুন বুকের ভেতর ধিকি ধিকি জ্বলে ওঠে, চোখ দুটো হিংস্র শিকারি পশুর মতো তীক্ষè হয়ে ওঠে। মতিউর রহমান মনে মনে উচ্চারণ করেন, ইসলামি আন্দোলনের অন্যতম নায়ক একজন শহীদ আবদুল মালেকের হত্যার বদলা হিসেবে কাফের মুরতাদদের কতজনের শিরñেদ করব, সেটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
মতিউর রহমান শেখ মুজিবের সঙ্গে লাফালাফি করা শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কমিউনিস্ট, মুরতাদ সাংবাদিক, তথাকথিক প্রগতির ধ্বজাধারীদের তালিকার কথা ভাবেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন মুজাহিদের সঙ্গে, কাদেরের সঙ্গে, কাশেমের সঙ্গে, আশরাফ মইনুদ্দীনের সঙ্গে। সবার উপরে রাও ফরমান আলী। একটা একটা করে ধরা হবে আর খেয়ে ফেলা হবে। এরা শতমূলী বৃক্ষের মতো, একদিকে কাটলে আরেকদিকে গজায়, এদেরকে শেকড়-বাকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে।
সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ