আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : স্বপন নাথ

দেয়াল

দূরে থাকা আনন্দের

পসরা তোমার চারপাশে

বিকট গন্ধ আমার সহায়

বিমুখ না-হও তুমি

আমি দূরে থাকি

তোমারই সুগন্ধ ছড়াতে

এই দূরে থাকা।

না-বোঝাই থেকে যায়

কে যে কী বলে, বুঝি না

সত্যি বাচিক কলার কাছে

তবে কি হারানো মানুষ

কী যে চায়, বলে যায় সান্ধ্য অলংকারে

হাতের মুঠোয় কে রাখে পৃথিবীর পানশালা

যুদ্ধক্ষেত্র বা বাগানবাড়ি অচেনা লাগে

দু পাশে ধরে রাখা নোনাজল ও হাওয়া

ঢেউ আর চঞ্চল রোদ দেখে মনে হয়

ঘুমায় চরাঞ্চল

অন্তত কর্কট পুথি শুনে

কী লক্ষণ দেখি

অজানা এক রহস্য গুহার মতো ভূমি।


ভুল সদাই

খেত জ্বালাও, পুতা জ্বালাও

জ্বালাও হিথান ঘর

মন পোড়াও, ধন পোড়াও,

পোড়াও চোখের জল

আন্ধা তোমার চোখের পুতি

বন্ধ রাখো সবই

নিজের দোষ কারে চাপাও

তুমি জন্মবন্দি

দখল করা স্বভাবদোষে

খুনের রশি টানো

পরের ভিটায় ইশান দিয়া

মিথ্যা সদাই করো।

দূরের পাখি

তুমি আমি যা পার হয়ে আসি

সেখানে ছিল এক পাখি

তাড়িত পাখিটি হারালো তার ঠোঁট

ধীরে ধীরে গলছে শীতল চিবুক

তবুও স্মৃতির ধানে

কারও কথা বলে

ফান্দের ডাহুক

নকল পিঞ্জিরায়

 যেখানে যেভাবে গায়, যে পথে গায়

 শোনা যায় আহত স্বর

গানগুলো হয়ে যায় দূরের পাখি।


ভাবাদর্শ

সবখানে আরোপিত ভাবাদর্শ, ভাষা, শব্দ ও ইজমের খেলা। কখনও শক্তি, কখনও কুতিয়ামি। কথামালার তরঙ্গে অবহেলা। মেরুদণ্ড ভাঙার পোস্টার সেঁটে দিয়ে মঞ্চ বাজিমাত। সারোদসুরে বাজে উদাসীনতার ঠুমরি :…। এর সাথে কোরাস সঙ্গীতের সমাবেশ। আহ-আ- আ-আহা! কোরাসের বাইরে থাকে অনেক কণ্ঠ। তাদের কণ্ঠ নিমজ্জনে―আপ্তবাক্যের দৃষ্টান্ত―কখনও বিস্কুট দৌড়, কখনও চকলেট দৌড়। হা দৌড়াতে থাকো,  পেছনে গন্ধ শুঁকে দৌড়াতে থাকো―‘একদিন তুমি দেখবে হিমালয়ের চূড়ায় বসে ধ্যান করছ!’ কী সুন্দর, সাম্মানিক কথা গো! … ধীরে ধীরে প্রস্থানপর্ব সমাগত! নিভু নিভু কিছু হাততালি, ছেঁড়া পাতার ফাঁকে উড়ন্ত রোদ্দুর। শাস্ত্রীয় ‘উদাসীন’ সঙ্গীতের তাল-সুরে, নীরবে কারা যেন চলে যায়। কেউ টের পায় না, চারপাশের পাখি, পঁচাঘরের টিকটিকি, বৃক্ষবাগান কেউ বলতে পারছে না―কে গেল, কে রইল। সকলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছে। মঙ্গল হোক!


অতীতভ্রমণ

কখনও অতীতে হাঁটার ইচ্ছায়

গাঙের কিনার ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছি

এরপর পাহাড়, টিলা পার হতে হতে

অগ্নিস্তূপের কাছাকাছি,

নদী আর টেরাকোটার মিলিত আঁচলে।

ধূসর মাটির চিহ্ন, হাঁড়ি, পাতিল,

হাড়ের টুকরো, কিছু গুঁড়ো ফসিল

নখরাঘাত দেখে মনে হলো

ভ্রমণ বিফল!

 চোখের জল মুছে বর্ণমালা,

সিলমোহর, পালকের দানা

দা, খুন্তি, শাবলের কোপ

কাটা কাটা দাগ এখনও মোছেনি,

বর্ষামঙ্গলে জিয়ল মাছের মতো

কিছু সুখ, কিছু খানকার সাঁতার

ও যে মৃত্যুসুখে চলে।

নেশা কামসুখে অতীত বিরতি 

কখনও লোভে লকলক করে

 শোনা যায় হারানো গোঙানি।


দাগ পরচা খতিয়ান

আলের ওপারে আল, উপর-নিচ-ডান-বায়ে

টুকরো টুকরো ছেঁড়া ছেঁড়া রোদ

গলে না বিশল্য-পাথর

গল্প এক শ্রুত সন্ধ্যায়- মৃগয়াকালে

শকুন্তলার আর্তবচন

 দোদুল্যমান এচকায় জরা ভ্রমণ

হামেশা কুসঙ্গমের পার্বণ;

ভীম ঝরনা থেকে ভেসে আসা

সকরুণ আর্তনাদ

আচমকা বল্লমের খোঁচা

কালমেঘে নিভে যায় আলো

শুনেছি শুধু ফসলভরা ঘরে

ঢোল পাখোয়াজ আর

ধানখলা দখলের যমকি ধমক

আবাদ ও খামারে আলিচারা মূলে

হত্যার নকশা

পরিপাট শল্যবিদ্যার অধঃক্ষেপ

অভিশপ্ত উত্তরাধিকারে

সাইত গিলে বঁরশিটোপ

আকাশের ধূসরতা, খুনচিহ্ন দূর থেকে আসা।


খপ্পর

 পাঁজরের তলে প্রজাপতি আঁঁকে

হাতে রাখে কোমল ধাতব

মাল্টিন্যাশনাল

 কোম্পানির খলইয়ের স্বপ্নে

মজা নেয় মঙ্গল

নীতিকথার দক্ষিণারঞ্জন,

নদী ভরাট কত শতাব্দীর ছল

রঙছটা বিভোরতা ডুবে আছে

নরম স্ক্রিনে

সকলই ডুবেছে, চোখে লাল নক্ষত্র

উঁইয়ের ঢিবি

বিশ^নগরে লাজহীন ভিখারি।

হাওয়া ভাঙা ছাতার নিচে

 দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে

প্রতিটি মগজ এখন হিংসার ভাণ্ডার

প্রতিটি হাত এখন অস্ত্র

প্রতিটি মুখ এখন দখল-দস্যু

প্রতিটি চোখ ধূর্ত টাউট

পথে পথে কালোমেঘের ভেলা

লিবারেল বাজারে পাতলা লেয়ার,

তবে কি নিরাপত্তার খুব প্রয়োজন

নিজেই অনিরাপদ ভীষণ

স্ববিরোধী যখন,

তবুও হাওয়া ভাঙা ছাতার নিচে

নিরাপদ ঘাটের খোঁজে।

—————-

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button