
বুড়োটির আশ্চর্য চেহারা।
বিশেষত তার চোখ। চুলও আজব, মনে হয় তাতে কয়েকটি মাকড়সা বাসা বেঁধেছে। দোমড়ানো পা দুটো বিশেষ কায়দায় বাঁকিয়ে একটা নির্দিষ্ট স্থানে সে বসে, পা দুটো এমন বাঁকানো, বোধ হয়, তাতে হাড় নেই, অনেকটা সাপের মতো ঊরুর গর্তে সেঁধিয়ে থাকে।
আহা বিকলাঙ্গ! এজন্যে যে কারও মায়া হতে পারে।
সবচেয়ে আশ্চর্য, তার কেনা জায়গাটি। শীত, প্রখর রৌদ্রতাপ, ঘোরবৃষ্টি কিছুই তাকে এ জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। সামনে বাটি, নিঃশব্দে বসে থাকে। তাকে কেউ কোনওদিন কথা বলতে দেখেনি।
নঈম বিপরীতদিকের রেস্তোরাঁয় বসে চা খায়।
খুব ভোরে অনেকটা পথ হেঁটে এখানে এসে এক কাপ চা খাওয়া নঈমের একমাত্র শৌখিনতা। এই শহরে সে হাজারো ভিখিরি দেখেছে, কারও পেট ফুঁড়ে তুলো বেরোচ্ছে, কেউ চতুর্খণ্ডিত হয়ে শুধু দেহ-টুকরো নিয়ে গড়িয়ে চলেছে। এই সব বিষয় নঈমের মধ্যে নতুন কোনও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয় না। সে তুলনায় এর কষ্ট তো মামুলিই। চায়ে টান দিতে দিতে অনেক মামুলি জিনিসও দেখা হয়ে যায়। রাস্তাঘাট, মানুষের হলাহল, বিচ্ছিরি ভিড়।
ভোরের শহরে নির্জনতা থাকে, মনে হয়, আসমান থেকে সারা রাত ধরে পবিত্রতা ঝরে পড়েছে। বিষয়টি শীতকালে আরও প্রকট হয়ে ধরা পড়ে।
কুয়াশা ভাঙতে ভাঙতে নঈম কম্পিত দেহে এখানে এসে দেখে, রেস্তোরাঁর ঝাপ ওপর দিকে উঠছে, সবাই জানে, সে এই দোকানের প্রথম কাস্টমার। পয়সা দিলেও না দিলেও এদের সঙ্গে তার অদ্ভুত হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে। যেদিন পয়সা থাকে না, সেদিন সে জমিয়ে গল্প করে, উচ্চকিত স্বরে এমন হাসির গল্প শুরু করে যে, বেঁটে ম্যানেজার তাকে চায়ের সঙ্গে একটা রুটিও বাড়তি দিতে বলে, ম্যালা হইছে, এইবার থামেন, পয়সা আরেক দিন দিয়েন।
যা হোক, কথা হচ্ছিল বুড়োকে নিয়ে। শহর জেগে ওঠার আগে চায়ে প্রথম চুমুক দেবার পরই শূন্য রাস্তা পেরিয়ে নঈমের চোখ ওপারে চলে যায়। দেখে, বৃদ্ধটি ঠায় বসে আছে। প্রথম দিকে বিষয়টা তার কাছে নিতান্ত স্বাভাবিক ছিল। এক সময় বৃদ্ধের নির্জনতা, প্রস্তরমূর্তির মতো বসে থাকা, তার চুল, পায়ের কিম্ভূত ভাঁজ তাকে কৌতূহলী করে তোলে। সে বিকলাঙ্গ, কে তাকে রোজ এখানে বসিয়ে যায় ? কাকভোরে, কী রাত্তিরে, কখনওই তাকে এ জায়গা থেকে কেউ নড়তে দেখেনি। এ নিয়ে সে প্রশ্ন করে রেস্তোরাঁর লোকজনকে। একজন বিকলাঙ্গ ভিখিরি কোথায় থাকে, তার কে আছে, অত সব লক্ষ করার মতন সময় তাদের নেই। তারা অবশ্য এটা স্বীকার করে, বৃদ্ধকে কখনওই তারা স্থানচ্যুত হতে দেখেনি।
এরপর বুড়োর ওপর থেকে কৌতূহল সরে গিয়ে জীবনের আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার চিন্তা কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। যেমন, এরপর আমি কীভাবে বাঁচবো, আমার ভবিষ্যৎ কী ? নঈমের কাছে চিরকাল বর্তমানটাই আসল। সকাল হবে, একভাবে-না-একভাবে খাদ্য জুটে যাবে। এক আবাসস্থলের আয়ু ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর অন্য দরজা খুলে যাবে। জমিয়ে কথা বলার ক্ষমতা থাকায় সে নিখরচায় নানাভাবে জীবনযাপন করে এসেছে। কিন্তু সেদিন পার্কের বেঞ্চে শুয়ে এক হাস্যোজ্জ্বল দম্পতিকে তাদের দুরন্ত বাচ্চার পেছনে ছুটতে দেখে নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক বোধের জন্ম হলো। মনে হলো, মাথার ওপরের আকাশটা বড় সংক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে, হঠাৎ তার মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেল।
চায়ের কাপ থেকে জোরসে ধোঁয়া উঠছে, তার ভাপে নঈমের মুখে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। স্থির জল হিম হয়ে যায়। নঈম এক দৃষ্টিতে দেখে টেবিলের ওপর থেঁতলে থাকা কালো কালো ছোপগুলো কখনও মানুষের চোখ, কখনও তেলাপোকা, কখনও অর্থহীন বিন্দুতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
মনডা খারাপ ? গামছা দিয়ে হাত মুছে পুরোনো বেয়ারা সামনে এসে দাঁড়ায়। তার গায়ের নুন-মরিচের গন্ধ অকস্মাৎ দুঃসহ ঠেকে। নঈম মাথা তোলে, মনটারে ভাই খুঁইজা পাইতেছি না। একটু দ্যাখো তো ভাই, গত সন্ধ্যায় এই দোকানের কোনওখানে ফালায়া গেছি কি না ?
হা হা হেসে ওঠে বেয়ারা, একখান রুটি দেই ? খিদা পেটে সব আন্ধার লাগে, হ্যার লাইগ্যাই খুঁইজা পাইতাছেন না।
তাহলে তো মুশকিল হইলো। নঈম ভরা কাপ তুলে ধরে, এইটারে আবার গরম কইরা দিতে হয়।
এরপর চোখে পড়ে বৃদ্ধের চোখ, সবে কুয়াশা কাটতে শুরু করেছে, রাস্তায় চলতে শুরু করেছে দুয়েকটা যানবাহন। দেখে, সরু রাস্তার ওপারটায় বসে বৃদ্ধ স্থির চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিষয়টাকে আমল না দিয়ে সে সেই সব রমণীর ছবি চোখের সামনে আনে, যাদের হিলের শব্দে দামি সিঁড়িগুলো উচ্চকিত হয়ে ওঠে। চায়ে শেষ চুমুক দিতেই আবার চোখ যায়, দেখে বৃদ্ধ চেয়ে আছে, এমন নিঃসাড় তার চাহনি, যেন মাথার ওপর বাজ পড়ে মারা গেছে সে। নঈম অস্বস্তিবোধ করে।
রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে সে হিম হাত পকেটে ঢোকায়, এরপর হনহন হাঁটা দেয় প্রতিদিনের শহরের গহ্বরে।
শীত পড়ে লাফাচ্ছে রঙবাজ আলো।
হাঁটতে হাঁটতে নঈম টের পায় অনেক রাত। ঘনিয়ে আসছে স্তব্ধতা। এসবের মধ্যেই সরগরম একটি হোটেলের আলো এবং ব্যান্ডের শব্দ।
পানবিড়িঅলা প্রশ্ন করে, বাড়িত যাইবেন না ? সে পাশের টুলে বসে পকেট থেকে বের করে জমিয়ে রাখা সিগারেটের খণ্ডাংশ, টান দিতে গিয়ে টের পায় কেমন ড্যাম্প, ম্যাদা মেরে গেছে। জুত করতে না পেরে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিড়িঅলাকে ভজাতে সে একটা গল্প ফাঁদে, ধানমন্ডিতে বাস করতো এক মস্ত ধনী লোক। এক সময় সে বড়ই গরিব আছিলো, কাগজ কুড়ায়া খাইতো, পাতা কুড়ায়া খাইতো, একদিন সে শুরু করল পানবিড়ির ব্যবসা―
সিঁড়ির ওপর থেকে ধেয়ে আসছে ঘ্রাণ।
দুজনের মাথা একসঙ্গে ঘোরে।
নেমে আসছে কেউ।
মেয়েটির ঝলমলে পোশাক দেখে বিড়িঅলার একটা চোখ ছোট হয়ে যায়। রাতের শহরে এ এক মামুলি দৃশ্য। মেয়েটি টলতে টলতে নিচে এসে দাঁড়ায়। নঈম চোখ নামাতে গিয়ে দেখে, ফুটপাথে এসে সে চিৎকার করে বলছে, আমার ড্রাইভার ?
পানঅলা দাঁত বিস্তৃত করে, এইহানে কুনু গাড়ি আছিলো না।
তখন থেকেই মেয়েটি কাঁদছে। রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে হাতড়ে হাতড়ে তার হারিয়ে যাওয়া গাড়ি খুঁজতে থাকে। এরপর ফুটপাথে বসে হড়হড় করে বমি উগড়ে দেয়।
নঈম স্কুটার ডেকে মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে বসে। এমন নিস্তেজ তার দেহ, মনে হয়, এক্ষুণি দম বন্ধ হয়ে যাবে।
শাঁই শাঁই বেগে নিস্তব্ধ শহর ফুঁড়ে স্কুটার ছুটতে থাকে। গত রাতে নঈম স্বপ্নে দেখেছিল আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের। এই স্বপ্ন এই পৃথিবীর সবাই একবার হলেও দেখে, কী চাইবে সে ভাবতে ভাবতেই দৈত্যটি উধাও হয়ে গিয়েছিল। আজ তার পাশে ঝলমলে রমণী! কী ঝিকমিক! কী বর্ণচ্ছটা! এ সেই দৈত্যেরই কাজ বৈকি, এর সঙ্গে চলে অভিজাত পুরুষেরা। ড্রাইভার উধাও হওয়ার সুযোগে কী অনায়াসে তার পাশে বসার সুযোগ পাওয়া গেল।
মেয়েটি থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠছে, ওরা আমাকে এইভাবে অপমান করল… কী বিচ্ছিরি, কী নোংরা…।
আপনি কোথায় যাবেন ?
নঈমের এই প্রশ্নে মেয়েটি ফণা তোলে, আপনি কে ?
আমি আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।
মেয়েটির যেন হুঁশ হয়, আমার গাড়ি ? এই ড্রাইভার থামো, শাঁ শাঁ শব্দ থামিয়ে স্কুটারটা থেমে যায়। মেয়েটি ঠান্ডা গলায় বলে, নেমে যান।
এত রাতে এমন বিদঘুটে জায়গায় আমি নেমে কী করব ? নঈম বিচলিত হয়ে পড়ে। নেমে যাবেন, না চিৎকার করব ? মেয়েটির ঝাঁঝালো স্বরে একলাফে নঈম স্কুটার থেকে নামে, ততক্ষণে মেয়েটি আবার ঢলে পড়েছে, স্কুটার স্টার্ট দিলে নঈম শোনে হুল ফোটানো কটি শব্দ, যত্তোসব লোভী মাংসখেকোর দল।
রেস্তোরাঁর ডালপুরি সবে যখন গরম তেলে ঢোল হয়ে উঠছে, সর্বগ্রাসী খিদে ভর করছে নঈমের পেটে, তখন গত রাতের ঘটনাটিকে তার স্বপ্ন বলেই ভ্রম হয়। চর্মসার বৃদ্ধের পাথর চোখ আজকেও তাকে বিদ্ধ করছে। বাজি ধরে সে তার সমান্তরালে তাকিয়ে থাকার ব্রত গ্রহণ করে। না, সেই চাহনিতে কিচ্ছু নেই, না ঘৃণা, না রাগ, না অন্য কোনও অনুভূতি। নঈমের দৃষ্টি সরে যায় পাশের আস্তাকুঁড়ে। কয়েকটি কাক হুল্লোড় করে কিছু খাচ্ছে। তার শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে ওঠে, যত্তোসব লোভী―।
মধ্যরাতে অমন একটি আরব্য রজনীর কন্যা কাঁদছিল। আমার জীবনেও আছে, নঈমের ভেতরে অস্ফুট আর্তনাদ ওঠে, একা খালি ঘরে পরিচারিকাটি আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে বাবা পর্যন্ত ডেকেছিল। তখুনি বৃদ্ধের চোখে শ্লেষ ফুটে ওঠে, রিকশা-গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে সেই শ্লেষ প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে, কাঁপতে কাঁপতে নঈম তার উদ্দেশে খালি কাপ ছুড়ে মারে।
পার্কের বেঞ্চের বুনো মশাগুলোকে আজ রক্তের নেশায় পেয়েছে। বেঞ্চে শুয়ে সারারাত নঈম ঘুমোয় না। অন্যদিন হলে অসাড় দেহ নিয়ে নিশ্চিন্তে মনকে পাচার করে দিত ঘুমের তলায়। আজ খণ্ডবিখণ্ড দেহমন থরথর কেঁপে ওঠে। ফ্লাওয়ার মিলের চাকরিটা গেছে, তার আরেকটা কাজ চাই, এই কিলবিল দাড়ি, তেলচিটে ময়লা সোয়েটারের তলা থেকে বেরিয়ে আরেকবার যদি বাঁচা যায়! হাঁটতে হাঁটতে সেই হোটেলের সামনে আসে নঈম।
পানবিড়িঅলা বড় মৌজ করে হাসে, কাইল রাইতভর জবর খেইল হইছে বুঝি ? এতদিন আমি তো মনে করতাম আপনের মেশিন নাই।
সে ছিনতাইকারীর ভঙ্গিতে একটানে ওখান থেকে তুলে নেয় সিগারেটের প্যাকেট, তারপর প্যাকেট থেকে দ্রুত একটা সিগারেট বের করে ক্রুদ্ধ টান দিয়ে চেয়ে থাকে হোটেলের সিঁড়ির দিকে।
বিড়িঅলা কেমন হকচকিয়ে যায়, মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে ঢোক গিলতে গিলতে বলে, নারীবল হইলো বড় বল!
সমস্ত শহর স্তব্ধ। পানবিড়িঅলাও দোকান গুটিয়ে চলে গেছে। টাটানি ধরেছে নঈমের পায়ে, এক এক করে নেমে গেছে হোটেলের অন্য সদস্যরা। নঈম বিমর্ষ চোখে অপেক্ষা করে, নাহ আজ সেই মেয়েটা আসেনি। একসময় তার হুঁশ হয়, এর আগেও তো সে মেয়েদের এখান থেকে নামতে দেখেছে। অবশ্য একে দেখেনি, কী রকম আলুথালু ক্রন্দনরত। তাতে কী। এ-কী হয়েছে তার ?
পরদিন রেস্তোরাঁ ম্যানেজার বলে, একটা কিছু কাম করেন ভাই, আমরাও তো আর বাকি পারতাছি না। চোখ যায় বৃদ্ধের দিকে, মনে পড়ে তার এক লেখক বন্ধু একদিন একটা অদ্ভুত গল্প বলেছিল, একজোড়া মৃতের মতো চোখ একজন লোককে হত্যাকাণ্ডের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এ কী অদ্ভুত মনোবিকলন শুরু হলো ? ম্যানেজার বলে, আপনি ভদ্দরলোক মানুষ। আপনের নিজের স্বার্থেই কইতাছি, এই ফকিরের বেশ ছাড়েন, কিছু একটা করেন।
এই ভিখিরির চোখ তাকে ক্রমশ বিপন্ন করে তুলছে। এ যেন নিষ্ক্রিয়ভাবে তার পাপ, তার দৈন্যের দিকে চেয়ে থাকা। সে রেস্তোরাঁ ছেড়ে রাস্তা পার হয়ে ধীর পায়ে বৃদ্ধের সামনে এসে দাঁড়ায়, এ কি সত্যিই তার আসল চোখ, না কি সে অন্ধ ?
বৃদ্ধের চোখের দিকে স্থির চোখ মেলে দিয়ে সে নিশ্চিত হয়, হ্যাঁ, এই তো স্পষ্ট তার দিকে তাকিয়ে আছে। এতদিন এই চোখে কিছু ছিল না, দিন দিন যেন জমা হচ্ছে শ্লেষ। সে প্রশ্ন করে, কী দেখেন আমার মধ্যে ?
বৃদ্ধ মাথা নামিয়ে নেয়।
কী দেখেন ? সশব্দে চেঁচিয়ে ওঠে নঈম, রাস্তায় এত লোক, এত মানুষ আসে রেস্তোরাঁয়, তাদেরকে আপনের চোক্ষে পড়ে না ?
যেন বদ্ধ দেয়ালে আছাড় খেয়ে শব্দগুলো ফিরে আসে। বৃদ্ধের পৌষ-চৌচির চামড়ায় জমে ভয়। নঈমের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সে হতচকিত চোখে তাকায় সামনের সাদা বাটিটির দিকে, যেখানে এইমাত্র টং শব্দে লাফিয়ে উঠল চকচকে কাঁচা একটা টাকা। রাতে পার্ক ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে নঈম বাঁচবার পথ খোঁজে, আমি কে ? আমার উৎস কী ? এইসব ভাবনার ওপর ঘুটঘুটে কুয়াশা পড়তে থাকে। একসময় টের পায়, সে এসে দাঁড়িয়েছে সেই হোটেলের সামনে। আজ বহুদিন পর তার ময়লা পোশাক আর আচাভুয়ো আকৃতি তাকে বিব্রত করে। যাহোক, এসব ভাবনা থেকে বেরুনোর জন্য সে পানঅলার কাছে একটি সিগ্রেট চায়।
আইজ খাবলা দিয়া নিলেন না ? পানবিড়িঅলা ভ্রƒ কুঁচকে তাকায়, আপনের হইছে কী ? আরে গোশত তো সব একই। ওই মাতাল বেডির পিছে লাগছেন ক্যান ?
রাত গভীর হয়। বেঞ্চে বসতে বসতে পায়ের গিঁট ফুলে উঠতে থাকে। পানবিড়িঅলা তাকে পাগল ঠাউরে চলে যায়। শীতে হাড়গোড়ের মধ্যে কুঁচি কুঁচি বরফ জমে, তার চোখে ঢুলুঢুলু ঘুম নামে। টহল পুলিশ হেঁকে প্রশ্ন করে, কি বাড়িঘর নাই ?
সে মাথা নেড়ে বলে, না।
মতলব কী ?
কিছু না।
পকেটে আছে কিছু ?
সে দু হাতে পকেটের জিভ উল্টে দেয়।
যাহ শালা ফুটো। বলতে বলতে পুলিশ চলে যায়।
এরপরেই ঝলমলিয়ে নামে সেই মেয়ে।
রাতের আলোয় তাকে অবিকল পরি বলে মনে হয়। সটান দাঁড়িয়ে যায় নঈম। মেয়েটির পেছনে ছোটার আগেই সে দেখে উড়তে উড়তে মেয়েটি সোডিয়াম বাতির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে চেপে বসেছে। অস্পষ্ট আলোয় দেখা যায়, গাড়িতে বসে আছে গাবদাগোবদা একজন পুরুষ।
রাতের মৃত শহরকে মটরদানার মতো গুঁড়িয়ে সবেগে ছুটতে থাকে চাকা।
অবসন্ন দেহে টলতে টলতে, যেন সাত পেগ গিলেছে, এমন বোধ তাড়িত নঈম অনেক পথ, অনেক জঙ্গল হেঁটে দেখে, পৃথিবী বৃত্তাকার। সে এসে দাঁড়িয়েছে তার চিরচেনা সকালের রেস্তোরাঁর সামনে। বৃদ্ধ যেখানটায় দিন-রাত বসে থাকে, সেখানে ছেঁড়া কম্বল আর উসকো কাপড় স্তূপ করা। তার পায়ের শব্দ শুনে শোয়া থেকে যেন আবর্জনা ফুঁড়ে উঠে বসল বৃদ্ধ, আলখেল্লার স্তূপে শুধু তার মুখটাই দেখা যাচ্ছিল। চোখ দুটো ভিন্ন, এই চোখে আজ রাতে অনেক মায়া। সবচেয়ে আশ্চর্য, বৃদ্ধটি দাঁড়িয়েছে, তার সতেজ দুটো পা দেখে নঈম স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই উপুড় হয়ে বৃদ্ধটি আর কাউকে যেন ঠেলা দেয়।
কাপড়ের স্তূপে কেউ কঁকিয়ে উঠল। লম্বা বাতির নিচে তার মুখ স্পষ্ট হলে নঈম এবার বোকা হয়ে যায়।
আরেকজন বৃদ্ধ এবং দুজনের মুখ হুবহু এক, তবে এর স্থির চোখ দেখে নঈম নিশ্চিত হয়, এই-ই আসল বৃদ্ধ।
আপনারা কে ? ভয় কাটাতে নঈমের স্বর কর্কশ হয়ে ওঠে।
হতচকিত পাথরচোখো বৃদ্ধ ছেঁড়া কাপড় ফুঁড়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মেরুদণ্ডে টাটানি লাগতেই চাপাগলায় কঁকিয়ে ওঠে, এই পা দুটোই কি বিচিত্র কায়দায় ঊরুর নিচে লটকেপটকে থাকত। মায়াবী চোখের বৃদ্ধ বলে, আমরা যমজ ভাই, এরে পুলিশে বেদম মারছে, অনেক দূর থাইক্যা খবর পায়া দেখতে আইছি।
তাইতেই বুঝি আসল দুইডা ঠ্যাংয়ের হদিস পাওয়া গেল ? নঈমের আকস্মিক ঠাট্টা আরও করুণ করে তোলে আহত বৃদ্ধের মুখ। রাত বাহিত শীতের বাতাসে দুজন কাঁপতে কাঁপতে কাঁথার নিচে গিয়ে বসে। যেন নঈম মহাত্রাণকর্তা, এইভাবে ওরা নঈমের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
আমার ঘুমন্ত মার বালিশের তলা থেকে টাকা চুরি করে আমি সারা শহরে হুহু চক্কর খেয়েছি। পরে জেনেছিলাম সে তখন মৃত ছিল, ভাবতেই নঈমের ভেতর থেকে কান্না ঠেলে ওঠে। সে মুখ ঢেকে বসে পড়ে, তার বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে যমজ বৃদ্ধ কানাকানি করে, শীতের কুয়াশায় কী সব ফিসফিস, কী সব তরঙ্গ, এরা যেন রূপকথার ব্যঙ্গমা। এইভাবে নঈমকে যেন কোনও পথের ইঙ্গিত করে, ‘দুইবার না পারিলে দেখো তিনবার।’
এদের অস্পষ্ট কথার ভেতর থেকে হঠাৎ এই কথাগুলোই সূত্র হয়ে ওঠে।
নঈম আর দাঁড়ায় না, এই উসকো আজব বৃদ্ধদের পেছনে ফেলে চিন্তামগ্ন হাঁটতে থাকে।
বুনো মশা অসাড় চামড়া ঠুকে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নিজেকে শাণিত করতে হবে, হুম চৌকস, খুলে ফেলতে হবে আলখেল্লা, যেন জ্বরগ্রস্ত নঈম বিড়বিড় করে। ‘দেখো তিনবার’ কিসের ইঙ্গিত ? ওই রেস্তোরাঁ, জঘন্য ডালপুরি, চা-টাও কেমন, যেন মাড়ের সঙ্গে চিনিযুক্ত লবণ মেশানো, আর এই কাউয়ার জীবন।
ইউরেকা! সে ওই মেয়েটিকে পাকড়াও করতে দুবার চেষ্টা করেছে তবে কি তৃতীয়বারে চেষ্টায় সফল হবে ? নঈমের শিরদাঁড়া টান টান হয়ে ওঠে, পৃথিবীটা অলৌকিক সন্দেহ নেই। এই যে আমি মানুষ, কোত্থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছি, পেটে ন মাস কীভাবে বাঁচলাম, আকার নিলাম, এই যে হাঁটছি, একদিন মরে যাব, সমুদ্র, সৌরজগৎ সব অলৌকিক। সৃষ্টিকর্তা আছে মানলাম, তাকে কে সৃষ্টি করেছে ?
এসব প্রশ্ন করতে নেই। নঈম জ্যাকেটের বোতাম লাগিয়ে হাঁটতে থাকে। ঠিক আছে, করলাম না, তবে আমার জীবনের পথ খুলে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই পুণ্য কিছু করেছিলাম, নঈম নিয়তি এবং ভাগ্যে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
আমার সামনে কী অপেক্ষা করছে ? ট্রাফিক পয়েন্ট পার হয়ে নঈম ভাবতে থাকে, চিচিং ফাঁক! আমি আলিবাবার মতন সংযত আচরণ করব, লোভ প্রকাশ করব না, ভালোমানুষিটাই এখানে প্রধান অস্ত্র। মোটকথা ওই ছদ্মবেশী রূপসীকে, যে আমার সামনে বারবনিতার বেশ ধরেছে, তাকে কব্জা এবং জয় করা এখন প্রধান কাজ।
ঈস্, শীতে জান ফেটে যাচ্ছে!
যেন প্রজ্বলিত অগ্নি, দাউদাউ অগ্নিশিখা, দীর্ঘ রাত ধরে অপেক্ষার পর সিঁড়ি বেয়ে মেয়েটিকে নামতে দেখে নঈমের তা-ই মনে হয়। সৃষ্টিকর্তা, আজও প্রথম দিনের মতো ওর পাশে কেউ নেই। রেস্তোরাঁর বিনে পয়সার পাট চুকে যাওয়া, যমজ বৃদ্ধের ফিসফিস, আচ্ছন্নের মতো বারংবার তার এই হোটেলের সামনেই পাক খেয়ে পড়া―এসবের গভীরে নিশ্চয়ই কোনও গূঢ় অর্থ আছে। নিজের ভেতর এই চিন্তা প্রশ্রয় পেলে একেবারে লাগামহীন হয়ে ওঠে, নিশ্চয়ই বড় কিছু প্রাপ্তির ইঙ্গিত এ, বিস্ময়ের কিছু হবে না যদি সেটা হয় রাজকন্যা আর রাজত্বের―।
বেশি হয়ে যাচ্ছে, নিজেকে বিন্যস্ত করতে নঈম বিপরীত ভাবনা ভাবে, এ তো স্রেফ পতিতা। রাজকন্যা! কল্পনাটা হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে না ?
না, না, এ ঠিক সেই ছকেও পড়ছে না, নঈম ফের আশাবাদী হয়ে ওঠে, সে কাঁদছিল, পতিতারা কি কখনও অপমানিত হয়ে কাঁদে ?
টলতে টলতে মেয়েটি যেন মহারাত্রির উদ্দেশে চেঁচিয়ে ওঠে, ড্রাইভার!
পানবিড়িঅলা দাঁত কেলিয়ে বলে, শালীর আলগা ফুটানি, মাইনষের গাড়িত চইড়া খাইস্লত খারাপ হয়া গেছে, কুনুদিন নিজের গাড়ি দেখলাম না, ডাক কী!
ত্বরিত গতিতে নঈম তার হাত চেপে ধরতেই মেয়েটি কাতর কণ্ঠে বলে, আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন ?
স্কুটার শাঁই শাঁই বেগে ছুটতে থাকে।
থেকে থেকে যেন-বা ঘুমের মধ্যে হেসে উঠছে মেয়েটি। এত সজ্জা, আসল রূপ আবিষ্কার করাই দুষ্কর, তবু ঝকমকে, অনেকটা পরির মতো, ওর মাংসল নেশালু শরীরের স্পর্শে নঈমের হিম লোমকূপগুলো হঠাৎ করেই কেমন গনগনে হয়ে ওঠে। স্কুটার থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মেয়েটি বলে, ধন্যবাদ।
গলির মুখে অন্ধকার, নিচে বাতিভাঙা কাচের টুকরো জুতোর নিচে কচকচ করে ওঠে। হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটি গলির শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ায়।
মোহগ্রস্তের মতো তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে নঈম অনুভব করে, সে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই, মেয়েটি যেখানে দাঁড়িয়েছে, তার সামনে মামুলি কোনও বাড়ি নেই। যেন ভগ্ন রাজপ্রাসাদ। কেঁপে উঠে মেয়েটি সারসের মতো গলা বাড়ায়, এই যা, আপনি অ্যাদ্দুর এসেছেন! শোনেন, অনেক উপকার করেছেন আমার, আমি আপনার ক্ষতি চাই না, ওই লোভী পুরুষগুলোর মতো আচরণ করবেন না। বিদায় হোন।
নঈমের রক্তস্রোত প্রবল হয়, নিশ্চয়ই এর নিচেই গুপ্তধন! মেয়েটি তাকে বাধা না দিলেই ব্যাপারটা হতাশার হতো, তাহলে ‘দুইবার না পারিলে’ এর কোনও অর্থই থাকত না, বাকি বিষয়টি এখন তাকেই অর্জন করতে হবে। সে বলে, আপনি অসুস্থ, আমি আপনাকে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।
মেয়েটির চোখ কেমন ডাগর হয়ে ওঠে, নায়ক!
এই শ্লেষ গায়ে না মেখে নঈম মেয়েটির কম্পিত দেহ চেপে ধরে, আপনি পড়ে যাচ্ছেন। মেয়েটি নঈমের কাঁধে ভর করে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বিড়বিড় করে বলে, আমার ভেতরের সব আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছি, জ্বলেপুড়ে মর সব মাংসখেকো…।
তিনতলায় এসেই দরজায় নক করে। এক মরাটে বৃদ্ধা দরজা খুলে দেয়। ভাবলেশহীন চোখে নঈমের দিকে একবার তাকিয়ে সে ভেতরে চলে যায়।
সমস্ত ঘরে একটাই বিছানা, মেয়েটি যেন বাইজি, এমনভাবে মেঝের মধ্যে ছড়ানো নানারকম সাজ-পোশাক। ঘরে আর কোনও আসবাব নেই। মরচেপড়া দেয়াল, ছাদের নানা জায়গায় সুরকি উঠে গেছে, দেয়ালে কালচিটে অনেকগুলো ছবি।
মেয়েটি সারা ঘরে রহস্যের মতো পাক খায়, জানো, ভীষণ মাথা ধরেছে, ওই অসভ্যগুলো…
তুমি তবে কী ? সজোরে ওর কণ্ঠনালি চেপে ধরে নঈম, যেন পাতাল থেকে আর্তনাদ করে ওঠে সেদিনের লাঞ্ছিতা পরিচারিকা। নঈম ওকে ছেড়ে দিয়ে ঘামতে থাকে।
বিছানায় এলিয়ে পড়ে মেয়েটি। তুমি অন্যরকম। এখন পর্যন্ত, বিশ্বাস করো, তোমার মতলব বুঝছি না। তুমি আসলে কে ? পাশুটে আলোয় ঘন হয়ে ওঠে মেয়েটির চোখ।
এরপর যেন প্রাণ-উপচে ভেতরের সব দৈন্য বেরিয়ে পড়ে, আমি ভিখিরি, রাস্তার ওই ল্যাংড়া বৃদ্ধের চেয়েও আমার দশা করুণ।
মেয়েটি তার শিথিল গ্রীবা উত্থিত করে, আমি কী করতে পারি ? স্রেফ বিনে পয়সায় একবেলা এই দেহটাকে তোমার এখতিয়ারে ছেড়ে দিতে পারি, ফ্রি, বুঝতে পারছো, কী বলছি ? তাতে তোমার মৃত্যুই হবে, কঠিন অসুখ আছে এখানটায়, বলতে বলতে কুটকুট করে খুলে ফেলে হাতের নখ, যা-ই বলো, ভালো লেগেছে তোমাকে, নাছোড়বান্দার মতো অ্যাদ্দুর এসেছো, তুমি আগে স্পষ্ট করে আমাকে দেখো, হ্যাঁ, কিছু সম্পদ আমার আছে, যদি ছিনিয়ে নিতে পারো, তখুনি না হয় সিদ্ধান্ত নিয়ো…।
সম্পদ! নঈমের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, এই তো পথ বেরুচ্ছে, কিন্তু মেয়েটি মুখ থেকে চামড়া টেনে তুলছে কেন ?
এ আসল নয়, যেন বিড়বিড় করে উত্তর দেয় মেয়েটি, ওসব জায়গায় চলতে গেলে এটা না লাগালেই হয় না, এরপর আলগা ভুরু টেনে তোলে, ওর চেহারা ক্রমশ বুড়োটে হয়ে উঠছে, যেন দরজা খুলে দেওয়া বৃদ্ধার যমজ বোন।
এই নোংরা পোশাকগুলো খুলে ফেলি ? বলতে বলতে মেয়েটি হাসে, এইসব জঘন্য আড়ম্বর ?
তার পায়ের কাছে পোশাকগুলো লুটিয়ে পড়ে।
নঈম হাঁ করে সেই চামড়া কুঁচকে থাকা বিশাল দিগম্বরীর দিকে তাকায়। এবং সেটা আরও মর্মান্তিক অবস্থায় পৌঁছায় মেয়েটি যখন একটানে মাথা থেকে খুলে ফেলে তার স্বর্ণকেশ। সেই কেশ বালিশের ওপর এমনভাবে পড়ে থাকে, মনে হয়, একটি মৃত সুন্দরীর ছিন্ন মস্তক উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
নঈমের রক্ত চলাচল রুদ্ধ হয়ে যায়। সে দেখে, মেয়েটির টাকপড়া মাথায় ফিনফিনে ক গাছি চুল।
না, এ অন্য কেউ, অর্ধমৃতের মতো বিড়বিড় করে নঈম। মেয়েটি বিছানায় আছড়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে, বেচারা! কী লোভে যে কুকুরের মতো পেছন পেছন এসেছিল!
নঈম ক্রমশ পিছু হটতে থাকে।
পুনর্বার মেয়েটির প্রলম্বিত দেহ ঘাই দিয়ে উঠতে থাকলে, অন্ধ হাতে কপাট খুলে নঈম বাইরের অতল ঘুরঘুট্টি অন্ধকারের গহ্বরে নিজেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
কতক্ষণ ছুটেছে, বলতে পারে না। যখন শহরের আকাশ ফরসা হয়ে আসছে, নিজেকে সে আবিষ্কার করে সেই পুরোনো রেস্তোরাঁর সামনে। নঈম দেখে, ঝোলা কাঁধে যেন এখানকার পাট চিরকালের জন্য চুকিয়ে ভিখিরি বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। নঈমকে দেখে এই প্রথম সে কষ্ট করে হাসে। একসময় নিস্তব্ধ ভোরের পথ ধরে তার দেহ অজানা এক পথের দিকে মিলিয়ে যেতে থাকে।
সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ