
কেউ কেউ
কেউ কেউ একটু আলাদা
ঠিক মেজেন্টা থোকার মাঝে হালকা ইয়োলো
তাকে চিনতে তাই সকাল লাগে না
বিকাল লাগে না
মিছিলের মাঝে একা; একজন―
যেমন হাত তুলে জাগিয়ে রাখে সবাইকে
কাঠবেড়ালি রোদ খাঁচা ছেড়ে বেরুলেই
চেনাজলে ওঠে ঘুর্ণন ফোটে তাপবাহ
বিদ্রোহ মানেই কখনও দেয়াল ভাঙ্গার কোরাস
কখনও আঠাল ঠোঁটের মাঝে
মুখ গুঁজে দেওয়া
কেউ কেউ সত্যি আলাদা
গ্রাম ছাড়া রাঙ্গা পথের উজানে
চেনা ভৈরবীতে অচিন অজানা।
— — —
ব্লাকবোর্ড
জীবন এক আশ্চর্য ব্লাকবোর্ড
সেখানে খড়িমাটি চালিয়ে তুমি যা খুশি লিখতে
আবার মুছে ফেলতেও পার―
জীবটাকে যদি ব্লাকবোর্ড ধর
এবং মানুষের মুখগুলো খড়িমাটি;
তবে―
আঁকো মোছো আঁকো মোছো…
এবং একসময়
তুমি নিজেই ডাস্টার হয়ে ওঠো
সমাজে খড়িমাটির চেয়ে ডাস্টার হওয়া
অনেক বেশি নিরাপদ।
— — —
মনেপড়ে
নৈঃশব্দকে ভেঙ্গে দিয়ে তুমি যেদিন জোছনা হয়ে আকাশ কাঁপালে,
আমি কিন্তু সেদিনই মেঘ নামিয়ে এনে ভিজেছিলাম শরৎবর্ষায়―
সেদিন তোমার গোপনে কতো দীর্ঘ হয়ে উড়েছিল সুখ
পাতায় পাতায় জমানো শিৎকারে চাপা পড়েছিল ভাদ্রের তীব্র নিঃশ্বাস
ডুবে যাওয়া রাতে কামিনীকে ম্লান করে জ্বলে উঠেছিল বীর্যের ঘ্রাণ
তোমার আঁচল খসানো দিনে কী অদ্ভুত সর্বনাশ নেমে এসেছিলো ঠোঁটের দাওয়ায়―
মনে পড়ে খুব মনে পড়ে
সময় এখন শুধু গুপ্তচর।
— — —
মেঘেদের পোড়া ছাই
নদীর আত্মায় কান পেতে শুনি ইলিশ-আলাপ
উড়ে যাওয়া সিগালের পাখায় নজর ছুঁড়ে দেখি মেঘেদের পোড়া ছাই
ভয়ংকর রাতের কার্পেটে একটি নক্ষত্র ছুঁড়ে খুঁজি তোমার কানফুল
বিস্তৃত নীলের বুকে কুয়াশায় মোড়া আধো লীণ সেই ষোড়শী মুখ
হায় পদ্মা হায় চেনা জলহাঁস হায় আমার যৌবনের পোড়া মাটি―
আমি ব্যর্থতার সিঁথান থেকে একটি দুপুর চুরি করে একপ্রস্থ ঘুমের আড়ালে লিখি আমার দিনলিপি; স্বপ্নভঙ্গের দীর্ঘ ইতিহাস
রোদ চুষে খেয়েছে মেঘ
অঝোর বর্ষায় গাড়ির উইন্ডোতে নিজ হাতে লিখছি তোমার নাম
একটু পরেই তা মুছে যাচ্ছে জলের তোড়ে
ধুয়ে যাওয়া মানে মুছে যাওয়া নয়
আমি তো তোমাকেই আঁকড়ে ধরে ভাসতে চেয়েছি চিরকাল
জলে ও স্থলে লিখতে চেয়েছি চেনা নাম একান্ত আবেগে
বিচ্ছেদের কী এমন শক্তি বলো কেঁড়ে নেয় পাতার বাঁধন; সূর্য-ধোয়া জল।
— — —
আলোর ফসিল
ছিঁড়ে গেছে সুঁতো
লাটাইমুক্ত ঘুড়িটার পিছনে ছুটছে কিছু বোধহীন মানুষ
অক্সিজেনের অভাবে নুয়ে পড়া কলমীর ডালে কফিনরঙ এঁকে দিচ্ছে দুপুরের রোদ
কর্মব্যস্ত শালিকের চোখ খুঁজছে বালিকাঘ্রাণ
আর ছন্দ-হারানো কবি দীঘল ঘাসের বুকে
শব্দরঙ; পৌষালী বুক
সুঁতো ছিড়ে স্মৃতিটা আকাশে
চালবাজ সময়েরা খেলছে এক্কাদোক্কা
সুস্হ নিঃশ্বাসের জন্য আর হাঁসফাঁস কত
চলো এবার হও মুখোমুখি
হয় ফিরিয়ে আনো ঘুড়ির অবয়ব না’হয় অস্তিত্ব থেকে মুছে ফেলো বর্ণময় মুহূর্তগুলো এবং হয়ে যাও কুৎসিত কলংক মাখা আলোর ফসিল।
— — —
মা আমার
তুমিতো জেগেই আছো।
তোমার সাথে রাতজাগা সেই প্রাচীন তক্ষক ঘোষণা দিচ্ছে প্রহরের, দু’একটা শিশির ভেজা শিমুল আর নিশাচর বাদুড় কী গভীর নৈপুণ্যে অন্ধকার কেটে কেটে তৈরি করছে সুড়ং, আলোর যানে চড়ে আবাবিল আসলেই পালাবে ওরা, পালাবে ধূসর।
তুমি জেগে আছো, জেগে আছো–
স্বপ্নের দূরন্ত ঘোড়ায় ওই বখতিয়ার আসে,
আসে তিতুমীর বাদল দীনেশ ক্ষুদিরাম, আসে
সালাম রফিক জব্বার এবং আসাদ আর সেইসব সাহসী কাফেলা; সামনে যার মতিউর, মুন্সী রউফ, মহিউদ্দিন, হামিদুর এবং অগুনিত দূরন্ত সাহস।
ও আমার দুখিনী সময়; মা আমার, বাংলা-বাংলা,
তোমার চোখের নীচে যে কালো দাগ জেগে;
সে তো নয় কেবল নিদ্রা হননের,
প্রিয় হারানোর শোকে সে আজও উদ্ভ্রান্ত উদাস
অশ্রুহীন চরাচরে।
বিজয় এলেই আমি তোমাকে খুঁজি।
আজও কি নিদারুণ শোকে ন্যূব্জ তুমি, ক্রমাগত ভেঙে পড়া, বিষণ্ন আল্পনায় সাজা তোমার অন্তর।
— — —
সচিত্রকরণ : রজত