
ঋষি
স্বপ্ন দিয়ে যারে গর্বিত করেছি সে এখন অশোকের চিহ্ন
তবু ইচ্ছে হয়―যদি কখনও পেয়ে যাই লাগাতার সুরমা ঢেউ
কাক্সিক্ষত বাতুলতায়
ঋষিকে বলি―আমি তো জলের কন্যা নই যে আকাশে উড়াব সবুজ উঠান
নতুন প্রজাপতি ছুঁতে গিয়ে দেখি অভিধায় একটা রন্ধ্র আঁকা
চেতনায় তুমি হয়তো নিরাই হতে, অথচ―
খেলছো পাশার শব্দ নিয়ে জীবনের মাকড়সায়
মজ্জায় খুঁজে দেখি বিকল্প শরীর
হাতে লজ্জা খুলি, নিন্দা খুলি―কত পথ দেখি পরে পরে
পথের নিদ্রায় কণ্ঠ তুলে বলি এখনও আমার প্রস্থানেই মধু

নন্দিত নাবিক এবং মাতাল জাহাজ
শুধু একবার ছোঁবো―
এই অনুভবে কেটে গেছে কত দিন; দুপুরের
সোনারোদ দেখিনি হে
শুধু একবার ছোঁবো―
মাঘের বৃষ্টিতে ভিজে তারপর নেহাত দুজনে
হব একজোড়া ঠোঁট
শুধু একবার ছোঁবো―
জীবনের প্রতিদিন হয়ে যাবে দারুণ বসন্ত
প্রতিরাত শরতের
শুধু একবার ছোঁবো―
অমৃতের স্বাদ পাবে শরীরের প্রতি কোষ; চাঁদ
গজাবে মাথার ছাদে
শুধু একবার ছোঁবো―
নেশার সাগরে তুমি হবে মাতাল জাহাজ; আমি
যার নন্দিত নাবিক

কাঁপন
যা হয় অভূতপূর্ব, কখনও রাজি থাকি, কখনও অনুবাদ হয় স্মৃতির কাঁপনে
যুদ্ধ, হাসি―সবই অন্ধের লণ্ঠন
আমার শ্রমে কতবার কুড়িয়ে নিয়েছি ঘন উৎসব
ফুল দেখে হাত রাখি―ঘন হয়ে ওঠে শব্দের পাঠশালা
তাতে সাফল্য… ?
স্রোতের উল্লোলে খুঁজে নিই শিশুমুখ, দীর্ঘ পথে তার লক্ষণ চিহ্নগুলো
যেন সুর পেয়ে যায়

পরে একদিন সে আমার বন্ধু থাকে
এই যে ওঙ্কার শুনছেন আপনারা, সবই কিন্তু
গতকাল ভোরের…
হাঁটার সময় আঙুলের ছায়া মাপি, ছায়া দেখে-দেখে হেঁটে যাই স্মৃতির দুয়ারে
বিশটি আঙুল ওখানে রাখা; সন্তানের প্রথম চুম্বন আর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের আদর
সবই যেন কুয়াশার আড়ালে
ভোরে খুব বৃষ্টি হলো―রাস্তায় নদীর সমানই জল, জল ছুঁয়ে দেখি
কাচের সংসারে খেলা করছে অন্য এক বিড়াল
তার হাতের রং কখনও শাদা, কখনও কেঁপে কেঁপে বলে
―পাতাগুলোর রং সবুজ থাকে প্রথমে, পরে একদিন
সে আমার বন্ধু থাকে…

হৃদয়ের দুই ফ্ল্যাট জুড়ে
চারিদিকে কেবলই দুঃসংবাদ
আপাতত কোনও শুভবার্তার শিরোনাম নেই কোথাও
মৃত কোনও শৈবাল পাহাড়ে মুখ গুঁজে পড়ে আছে প্রদীপ্ত জীবন
নিঃসঙ্গ নাবিক হয়ে দাঁড় টানা সুদীর্ঘ যাত্রায়, চিরচেনা প্রিয়তর
মুখগুলো পাথর মূর্তির চোখে চেয়ে যাই উদাস, নির্বাক
আর মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পৃথিবীর কপাট খুলে হারাই কোথাও
নদীর একাকিত্ব আর রাত্রির তমসায়, প্রিয় উদ্যানের দেহ থেকে
নিরিবিলি হারিয়ে যায় সুরভিত নির্যাস, রাত্রির শরীর জুড়ে চুপচাপ
বসে থাকি অসহায় আর এভাবেই একা একা কষ্টের সিরিজ দু হাতে সাজাই
বাজুভাঙা হৃদয়ের দুই ফ্ল্যাট জুড়ে…

নয় সেপ্টেম্বর ২০০৯ ও ষোলো
ষোলো―বাসাটার বয়স চারশ বা পাঁচশ বছর হবে
চারধারে ঠান্ডা, কাঁপা কাঁপা দেয়াল আর
টিনের শব্দ―অনেক বয়স তার দৃষ্টিতে, বড় মায়া তার জল
ও গন্ধে
তবু স্বপ্ন দেখি আর শব্দ করি অন্য ঘরে…
ষোলো―তুমি কি শুনতে পাচ্ছ―তোমার কোলে মাথা রাখিনি
আজ কত দিন! বৃষ্টির শব্দ আর গাড়ির হর্ন কোনও কিছুই
আর ছুঁতে পারে না আমার আঙুল, অশ্রু ভরে আকাশ
দেখি―শুধু আকাশটাই তোমার মতো
হাসি হাসি শব্দে ছুঁয়ে দেখি তার শরীর, গন্ধ―জলের দিকে চোখ
ফেরাই, মাছের নড়াচড়া দেখে মনে আসে―আমাদের
সংসার সবখানেই এলোমেলো করা শব্দ
―এমত আরও অনেক বছর
পাতা কুড়াতে হবে ভুল ঠিকানায়…
——————
সচিত্রকরণ : নাজিব তারেক