আর্কাইভগল্পপ্রচ্ছদ রচনা

ছায়ার অন্ধকার : সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

বিশেষ গল্পসংখ্যা ২০২২ : ভারতের গল্প

অপু ভালো করে নিজেকে দেখল। বাবুলাল বাটিছাট দিয়েছে। ফলে মুখটা আরও ক্যাবলার মতো লাগছে। এতই ক্যাবলা যে সেলুনের আয়না পর্যন্ত হাসি চাপতে পারছে না। বাবুলাল মিটিমিটি হাসছে। হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এই-যে অপুকে আরও ক্যাবলার মতো লাগছে, তাতে সে খুশি। বলল, ‘চুলকাটা পছন্দ হয়েছে, অপুদা ?’

অপু মাথা চুলকে বলল, ‘বেড়ে হয়েছে। ফাটিয়ে দিয়েছ বাবুলাল।’

অপু মহাত্মাগান্ধি রোড মেট্রোকে পাশ কাটিয়ে ফুটপাথ ধরে সেন্ট্রাল মেট্রোর দিকে হাঁটছিল। চুল কাটার কায়দায় গালদুটো আরও ফোলা লাগছে। ফোলা গালে অপুকে বেশ সুখী সুখী মনে হয়। যদিও সুখ বিষয়টা সম্বন্ধে অপুর খুব কিছু ধারণা নেই। তো সেন্ট্রাল মেট্রোর প্রথম গেটের সামনে পরমা দাঁড়িয়ে বিরক্ত মুখে ঘড়ি দেখছিল। অপুকে দেখে বলল, ‘ইশ, কী খারাপ চুল কেটেছিস। এভাবে কেউ চুল কাটে ? গাধা।’

‘আমি গাধা নাকি চুল কাটায় মুখে গাধা গাধা ভাব এসেছে ?’

‘দুটোই। তুইও মস্ত বড় গাধা। তোর নাম হওয়া উচিত অপুকুমার গাধা। মানে গাধা হবে পদবি।’

অপু হাসল। হাসিটাও পরমার পছন্দ হলো না। বলল, ‘শালা হাসতেও পারিস না ঠিকঠাক। তোর কী হবে বলত ? নার্ভাস, অর্ডিনারি গ্র্যাজুয়েট, বলিয়ে-কইয়ে নোস, আনস্মার্ট, দেখতে ভালো নয়, হাবাটাইপ, সারাজীবন লোকজন পেছনে লাগল, তোকে নিয়ে মজা করল আর তুই সহ্য করে গেলি। উফ! কী যে হবে তোর’!

‘আমিও সেটাই ভাবছি বুঝলি। কী যে হবে আমার! কবে থেকে ভেবে চলেছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে, অ্যাকাউন্টেন্সির রেজাল্ট দেখে, আরও সব কত কিছু দেখে।’

‘ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছিস অপু ?’

‘হু। বড়বাজারের ব্যবসায়ীর গদি, ওষুধের দোকানে বসার জন্য, রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হওয়ার। মানে যা পাচ্ছি দিচ্ছি।’

‘কম্পিউটার ঠিকঠাক জানিস না তো এখনও ? কলেজে তো ধ্যাড়াতি।’

‘ট্যালি শিখেছিলাম। অ্যাকাউন্টসের কাজ হয় না ট্যালিতে, সেই ট্যালি। কিন্তু এখন আর মনে নেই। গ্র্যাজুয়েশনের চার বছর হয়ে গেল।’      

‘এখন কি বাইক চালাতে পারিস অপু ? অন্তত খাবার ডেলিভারির কাজ করতে পারবি।’

‘পারি না। তোর মনে নেই, কলেজের জি-এস প্রীতমদার বাইক চালাতে গিয়ে কলেজস্ট্রিটে ট্রামের পেছনে গিয়ে মেরেছিলাম ?’

পরমা খিলখিল করে হেসে উঠল। খুব মনে আছে সেদিনকার কথা। হাতের অনেকখানি কেটে গেছিল অপুর। পরমা লাল ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিল। আর তারপর চুলটা হাত দিয়ে ঘেঁটে দিয়েছিল একটু। এখন, চার বছর পরেও পরমার ইচ্ছে করল অপুর চুল ঘেঁটে দেয়।

কিন্তু ইচ্ছে করছে মানেই যে সেটা করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পরমা মানেহীন কোনওকিছুতে কঠোর অবিশ্বাসী। ফলে ইচ্ছে করলেও অপুর চুলে হাত দিল না। বলল, ‘তাহলে রোজগার করছিস কীভাবে ? মানে টাকাপয়সা আসছে কীভাবে ? আগে একটা কনসালটেন্সিতে কাজ পেয়েছিলি শুনেছিলাম। সেটা গেছে। তো এখন সারাদিন কী করিস ?’

‘এক বই বাঁধাইঅলার ওখানে কাজ করি।’

‘মানে কলেজস্ট্রিটের বই বাঁধাইয়ের কাজ ? তা বেশ। কিন্তু তাতে চলে অপু ? দু-একটা টিউশনিও তো করতে পারিস। মানে বাচ্চাদের পড়াবি।’

‘চেষ্টা করেছিলাম পরমা, আমাকে মানে না। চুল টানে, পেনসিল ছোড়ে। আমাকে তো জানিস। রাগ করতে পারি না তো, শাসনও না। অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছি, দিতে গেলেই ধ্যাড়াই। সিভিটাও আহামরি নয়। এখন এমএ পাশ করেও ডোমের চাকরির ইন্টারভিউ দেয়, দেখেছিস তো।’ 

পরমা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, ‘শোন আমার অফিস আছে। আমি সেকেন্ড হাফে ঢুকব বলেছি। তুই এক কাজ কর, আমার সঙ্গে ক্যাফে কফি ডে চল।’

‘সে তো এক কাপ কফির দাম বোধ হয় দুশো টাকা ? তাই না ?

‘টাকাটা তো আমি দেব। চল না।’

অপু পরমাকে না বলতে পারল না। কাকেই বা বলতে পেরেছে। জোর দিয়ে কিছুই কি বলেছে কোনওদিন ? এদিকে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি অপুর পছন্দের। শব্দ করে বৃষ্টি, শব্দ ছাড়া বৃষ্টি, সবরকমের বৃষ্টিই ভালো লাগার। অপুর কাছে ছাতা নেই। পরমা ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে দিল। অপু আগের মতো পরমার মাথায় ছাতা ধরল আর নিজে অর্ধেকটা ভিজতে লাগল।

একটা ছাগল ভিজে ভিজে বটপাতা চিবোচ্ছিল। অপু দাঁড়িয়ে পড়ল।

‘কী হলো আবার ? দাঁড়ালি কেন ?’

‘ছাগলটাকে দেখেছিস পরমা ?’

‘দেখছি তো। কেন ?’

‘নির্বোধের মতো মুখচোখ, ভিজে ভিজে পাতা চিবোচ্ছে, কদিন পরে তুলতুলে মাংস হয়ে প্লেটে উঠবে। আমার সঙ্গে মিল পাচ্ছিস পরমা ?’

‘তুই এতকিছু ভাবতে পারছিস যখন, তখন তুই মোটেই নির্বোধ। তোর যেটার অভাব, সেটা হলো কনফিডেন্স। আর অদ্ভুত একটা নির্লিপ্তি। কিছুই জোর দিয়ে চাই না, কোনওকিছুই আঁকড়ে ধরা নেই, জীবন যা দিচ্ছে, তাই নিয়েই তুই তুষ্ট। অথচ দ্যাখ, তুই আমার সঙ্গে কিন্তু ঠিকঠাক কথা বলিস, যতটা বলিস, গুছিয়ে বলিস, ধ্যাড়াস না। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে যে কী হয়! বিশেষ করে ইন্টারভিউ দিতে গেলে’!

অপুর বলতে ইচ্ছে করল, ‘তুই আর বাকিরা এক নয় পরমা। কিন্তু বলল না। বলল, ‘তা না পরমা, আমি বলতে চাইছি ধর আমার মতো পড়াশোনায় ভালো নয়, দেখতে মোটামুটি, নার্ভাস, আন্ডার কনফিডেন্ট, কোনও কাজই ভালো করে পারে না, কেরিয়ার নেই, টাকা নেই, ফটাফট দু-চারটে ভাষায় কথা বলতে পারে না, মানে সবদিক থেকে অপদার্থ যাকে বলে আরকি, এরকম মানুষ তো পৃথিবীতে অনেক আছে। তো আমি বলতে চাইছি আমাদের হবেটা কী ? কী হবে আমাদের ? জীবন কি আমাদের কিচ্ছু নিজে থেকে দেবে না ? আমরা তো দৌড়োতেও পারি না। তাহলে ? আমরা কি কিছুই পাব না ?’                                                                 

পরমা কফির অর্ডার দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। অপু ওয়াশরুম থেকে এসে উল্টোদিকের চেয়ারে বসল। পরমার চোখ দুটো ভিজে ভিজে লাগছে। ঠাণ্ডা লেগে যায়নি তো ? অপু কিছু বলতে যাচ্ছিল, পরমা থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘তুই কি জানতে চাইলি তখন, জীবন নিজে থেকে তোকে কিছু দেবে কি না ? তোকে, মানে শুধু তোকে না তোদের ? মানে সাধারণের চোখে অপদার্থদের জীবন নিজে থেকে কিছু দেবে কিনা!’

‘সাধারণের চোখে অপদার্থ ? তোর চোখে নয় ? আমরা অপদার্থ ছাড়া আর কি পরমা ?’

‘দৌড়তে না পারলেই বুঝি অপদার্থ হয়ে যায় ?’      

‘ছাড় পরমা, অন্য কথা বল। গতমাসে তুই সিঙ্গাপুর গেছিলি শুনলাম ? অভিরূপের সঙ্গে দেখা হলো। ও বলল তোদের অফিসের প্রজেক্টে গেছিলি। ফেসবুকে যোগাযোগ আছে তো তোর অভিরূপের সঙ্গে ?’

‘শুধু অভিরূপ কেন, কলেজের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ আছে। তোর মতো নাকি। একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলি ফেসবুকে, সেটাও বোধহয় তোর ভাই খুলে দিয়েছিলো, পোস্টও তো কিছু করিস না। ফোন করলে, অর্ধেক সময় ফোন ধরিস না। যদিও বা ধরিস, হ্যাঁ-হুঁ-নাতে উত্তর দিস। কবে থেকে দেখা করতে চাইছি, সেটা এত বছর পর হলো ফাইনালি। যোগাযোগ রাখলে আমার মুখ থেকেই সব শুনতি, অভিরূপের মুখ থেকে এসব শুনতে হত না’।

‘আর বল, বিয়ে কবে করছিস পরমা ?’

‘তোর ভাই চাকরি পেয়ে গেছে অপু ? কাকিমা-কাকু কেমন আছেন ?’

‘ভাই তো চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালোর চলে গেছে। বারো লাখ সিটিসি। মা মেগা সিরিয়াল দেখছে, বাবা তাসের আড্ডায় যাচ্ছে, পেনশন পাচ্ছে, ভালোই আছে। শুধু বড় ছেলেটা কেন কোনও কম্মের নয় এটা বুঝতে পারছে না। তাও যদি আমি বখে যেতাম, নেশা করতাম, ভুলভাল কাজ করতাম, লোককে গর্ব করে বলতে পারত। গর্বের সঙ্গে হাল্কা দুঃখ মেশানো থাকত। কিন্তু আমি তো বখেও গেলাম না। মানে বখে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আমি একেবারে অপদার্থ।’

অপু হাসছিল। বেশ ঝকঝকে হাসি। অপদার্থ হওয়ায় নিজে বেশ মজা পেয়েছে যেন, যেন সবাইকে তার এই অপদার্থতা দিয়ে বিব্রত করতে পেরে খুব ভাল্লাগছে অপুর। পরমার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল এই অপদার্থতা অপুর ভান। অপুর অদ্ভুত গভীরতা আছে। সেই গভীরতায় নিজে ডুববে না বলেই সে অপদার্থ হয়ে থাকে। তবে এই বিষয়ে পরমা নিশ্চিত নয়। অপুর কোনও বিষয়েই পরমা নিশ্চিত নয়। 

বৃষ্টি বেড়েছে। অপু কফিতে চুমুক দিলো। গাঢ় ফেনা হয়েছে। চামচ দিয়ে ফেনা তুলে খেল খানিকটা। সেটাও পরমার পছন্দ নয়, মাথায় চাঁটি কষাল। পরমা নীল চুড়িদার পরেছে, চুল খোলা, দামি ঘড়ি পরেছে, ওড়নাটা এলোমেলো করে ফেলা। পরমাকে অগোছালোতে মানায় বেশি। সবচেয়ে বেশি মানায় যখন পরমা ক্লান্ত হয়, চোখের কোলে কালি পড়ে, তখন। এসব ভাবতে ভাবতে অপুর মনে হলো অনেক সময় চলে গেলো, পরমাকে জিজ্ঞেস করা হলো না ও দেখা কেন করতে চেয়েছে!

‘কেন দেখা করতে চাইলি এবার বলে ফেল পরমা। বিয়ে করছিস ? নেমন্তন্ন করবি ?’

‘আমার তো তোকে দেখতে ইচ্ছে করতে পারে অপু।

অপু হাসল। পরমা নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করল কিছুটা। বলল, ‘আচ্ছা জীবন যদি নিজে থেকে তোকে কিছু দেয়, তুই নিবি ?’

‘জীবন কি দিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে পরমা। জীবন যদি করুণা করে কিছু দেয়, নেব কেন ?’ 

‘তার মানে এই ক্যাবলা, নার্ভাস, অপদার্থ ছেলেটার আর কিচ্ছু না থাকলেও জেদ আছে, আত্মসম্মান আছে। তুই এখনও পাড়ার হোটেলে ভাত খাস, তাইনা ?’

‘হুঁ।’

‘কাকিমা-কাকুকে কষ্ট দিস। তোকে তো ওরা বলেনি যে তুই কম পয়সা রোজগার করিস বলে বাড়িতে খাবি না। ওরা এতে দুঃখ পায়, মানিস তো ? আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস অপু ? তোর ইগোটা, এটা মিথ্যে ইগো। তুই ভালোবাসা আর করুণা গুলিয়ে ফেলেছিস।’

অপু হাসছিল। হাসি দেখে পরমার গা জ্বালা করছে খুব। কান ফেটে যাচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত নার্ভাস-ক্যাবলা―যাদের কিছুই হওয়ার নেই, তেমন ইলেকট্রন-প্রোটন-বস্তু-অবস্তু-প্রাণ-অপ্রাণ মিলে পরমার কানের ভেতর ঢুকে পড়ছে। চেঁচিয়ে বলছে আমাদের কী হবে ? কী হবে আমাদের ? আমরা তো ঠিকঠাক কিচ্ছু পারি না। শহরে ছুটে বেড়ানো হাজার হাজার নেভানো-চোখের মানুষ, লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হওয়া মানুষ, ছুটতে ছুটতে হঠাৎ থেমে যাওয়া মানুষ বলছে আমরা যারা কিছুই পারি না, আমাদের কী হবে ? জীবন কি আমাদের কিচ্ছু দেবে না ?

পরমা ফিসফিস করে বলল, ‘আমি তোকে ভালোবাসি অপু। তুই কি আমার ভালোবাসা নিতে পারবি ?’ 

অপু পরমার ফিসফিস বোধহয় শুনতে পেল না! বা পেল! চোখ ঘুরিয়ে নিল। ক্যাফে কফি ডের কাচে বৃষ্টি পড়ছিল। শহরকে জলপরির মতো লাগছে। অপু বলল, ‘চল পরমা তোকে মেট্রোতে তুলে দিই। তোর অফিসের দেরি হয়ে যাবে।’

ওরা উঠে পড়ল। সারা শহরে অদ্ভুত মেঘেরা নেমে আসছে। চেঁচিয়ে বলছে, ‘আমি তোকে ভালোবাসি অপু। তুই কি আমার ভালোবাসা নিতে পারবি ?’   

তারপর খুব রাতে অপু বাবুলালের সেলুনে গেল। বাবুলাল জানে অপুদা কেন এসেছে। মাথাটা একেবারে গেছে অপুদার। চাকরি-বাকরি না পেলে পুরুষ মানুষের এই হয়! বাবুলাল বলল, ‘কতক্ষণ অপুদা ?’

‘পনেরো মিনিট।’

বাবুলাল সেলুন থেকে বেরিয়ে গেলো। সপ্তাহে দিন দুয়েক এমন হয় যে সেলুন বন্ধ করার আগে অপুদা আসে। তখন দশ-পনেরো মিনিটের জন্য অপুদাকে দোকান ছেড়ে দিতে হয়। অপুদা সেলুনের বড় আয়নায় শুধু নিজেকে দ্যাখে আর নিজের সঙ্গে কথা বলে। অপুদার নিজেকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে। এই আয়নার নাকি মন আছে। বাড়ির আয়নার মন নেই। বাবুলাল অপুদার নিজের সঙ্গে নিজের কথা আড়াল থেকে শুনেছে। খুব কিছু বুঝেছে, এমনটা নয়। তবে সে দশ মিনিটের জন্য সেলুন ছেড়ে দিতে আপত্তি করে না। অপুদা বিড়ির প্যাকেট দেয়।

অপু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখল। সেই একই রকম ক্যাবলা, গুছিয়ে কথা বলতে না পারা, ঘাবড়ে যাওয়া অপু। পৌরুষের অভাব ? অপু হেসে ফেলল। ভাবল, এই যে আমার কিছুই হবে না, এটা কি আমার অহংকার নাকি লজ্জা ? মনে হলো দুটোই। পরমার ভালোবাসার ফিসফিস মনে পড়ল। অপু আয়নার অপুকে বলল, ‘আমার তো কিচ্ছু হবে না, সারাজীবন একইরকম ধ্যাড়াব, সেলুনের আয়নায় নিজেকে নিজে দেখার চেষ্টা করব। কিন্তু তবু আমি পরমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছি। ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। অপদার্থর তো এটাই করা উচিত। তাই না ?’

অপুর প্রশ্নের উত্তর কেউ দিলো না। রাস্তায় বেরিয়ে বিধানসরণীর স্ট্রিট লাইটের আলোর নিচ দিয়ে ফিরতে ফিরতে অপু ছায়ার অন্ধকার টের পেল। আর একটা হুহু করা হাওয়া দিল। ফিসফিস করে নিজেকে বলল, ‘তোর যে কী হবে অপু।’

তারপর ট্রামলাইন আরও লম্বা হলো, শহরের আকাশ তারা মুছে দিল, অপুর চুল আবার বড় হলো আর বাবুলাল আবার বাটিছাট দিয়ে মিটিমিটি হাসল। অপু বলল, ‘বেড়ে চুল কেটেছ বাবুলাল। ফাটিয়ে দিয়েছ।’ 

কলকাতা থেকে

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button