আর্কাইভগল্প

জাদুবাস্তব গল্প : দাগ : মাহবুব ময়ূখ রিশাদ

কুয়াশা এলেই কি শীতের হাওয়া মৃদু দোলা দিতে শুরু করে ? নাকি হাওয়া এসে চোখের পাতায়, নাকে-কানে, মুখে পরশ বুলিয়ে দেওয়ার পর কুয়াশা আসে ? মাঝরাতে বাড়ি ফেরার পথে আধহাত দূরত্বের কিছু চোখে না-পড়ায়, মনসুরের মনে হলো চলে এসেছে শীত। কুয়াশায় ডুবে যাওয়ার আগে ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি দেখে সে বিস্মিত হলো। আচমকা কাঁপুনিটা গিয়ে লাগল পাঁজরে। একটা সোয়েটার নিয়ে বের হলে রক্ষা হতো খানিকটা। কোনওমতে বাসায় ফিরে মানসুরাকে বলল, শীত তো চলে আসছে। কম্বল রোদে দিতে পারছিলা ?

মানসুরা বলল, দিন দুনিয়ার খবর রাখতে হয় কিছু। দু দিন ধরে যে আকাশে মেঘ, বৃষ্টি পড়বে পড়বে অবস্থা সেই খবর রাখো ?

মনসুর বলল, তাই বলো। এজন্যই হুট করে শীতটা নামল। একদমই বুঝি নাই। বাসায় আসতে গিয়া তো আমার দফারফা।

দুজনের রাতের এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের এক মাস পরও যখন মনসুরাবাদের আকাশ থেকে মেঘ সরার নামগন্ধ দেখা গেল না তখন মহল্লায় এই নিয়ে শুরু হলো কথাবার্তা।

এর ভেতরেই মনসুর একদল পাখিকে মেঘের ভেতর হারিয়ে যেতে দেখল। আবার কখনও ওদের ছাদের কাছাকাছি নেমে এসে, কিছুক্ষণ থেকে আবার সেই মেঘের ভেতরে ডুবসাঁতার, যেন এক মেঘ থেকে আরেক মেঘে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

মনসুর একদিন আড্ডায় কথাটা তুলল। পাখিগুলো চোখে পড়ছে কারও ? কেমন জানি বাঘের মতো দেখতে। ডোরাকাটা।

মনসুরের কথা শেষ না হতেই মেঘগুলো ঘন হয়ে বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করলে মানুষ এদিক-সেদিক ছুটে পালাল। অন্যদের উত্তর না শুনেই মনসুর ভাবল, এমন বৃষ্টিতে সে রাস্তায় না নেমে আর কোথায় যাবে ? তাই সে আড্ডা থেকে বের হলো। কিছুদূর হাঁটার পর দেখতে পেল, পথটা তার সঙ্গে একা হাঁটছে। এমনকি কোনও রিকশা নেই, পথের কুকুরগুলো পর্যন্ত পাশে নেই।

দূরে দেখতে পেল নিজের বাসা। তুমুল বৃষ্টির ভেতরেই তার মনে হলো, মানসুরা বাসার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর ছুটতে শুরু করল মনসুর। বাকি সবাই গেল কোথায় ? টের পেল, শীতের সময়ে এই জলযাপনে তার ঠান্ডা লাগছে না। বরং গরম লাগছে, ইচ্ছে হচ্ছে সোয়েটারটা খুলে ফেলতে। বাসার কাছে গিয়ে তার মনে হওয়ার সত্যতা পেল। মানসুরা নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজছে। তাকে ঘিরে রেখেছে ঐ ডোরাকাটা পাখির দল। তারাও প্রকৃতিজলে নিজেদের ভিজিয়ে নিচ্ছে। পাখিগুলোকে এই প্রথম কাছ থেকে দেখতে পেয়ে মনসুরের বিস্ময় বাড়ল। পরক্ষণেই সে পাখিদের থেকে চোখ ফেরাল তার দয়িতার দিকে।

মানসুরার ছড়িয়ে রাখা দু হাত সঙ্গে সঙ্গে মনসুরকে ফিরিয়ে নিল বহুকাল আগের এক বনজ সন্ধ্যায়। সেদিনও এমন বৃষ্টিতে প্রকৃতি তাদেরকে নির্জনতার এক বর দিয়েছিল। মনসুর চিৎকার করে বলল, তোমার মনে আছে সে কথা ?

কিছু না বলে হাসল মানসুরা। শেষ কবে এমন কোমলতা নিয়ে কথা হয়েছে, তা আর মনে করতে পারল না। কিছুক্ষণের ভেতরে বৃষ্টিতে চুম্বনের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল। চুম্বনের সাক্ষী ডোরাকাটা পাখিগুলোকে আর চোখে পড়ল না মনসুরের।

গল্পটা শুরু হলো সেখানেই।                         

ঠিকানা সংক্ষেপ : ১৩/বি মনসুরাবাদ।

তেরো বছর আগের একদিন বাদ মাগরিব আচমকাই রক্তক্ষরণ শুরু হলো মানসুরার। রক্তে সালোয়ার প্রায় পুরোটা লাল হয়ে উঠতে শুরু করলে, ব্যথার তীব্রতাও বাড়তে থাকল তার। তড়পানো দেখে মনসুরের ছোট ভাই শামসুর পেল ভয়। সে-ই দ্রুত তাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেল। মনসুর তখন বাড়িতে ছিল না। রেলগেটের বাজারে সে বন্ধুদের সাথে তাস পিটোচ্ছিল। কেউ না কেউ মনসুরকে খবর পৌঁছে দিয়ে থাকবে, তাই চিকিৎসক তাকে খোঁজার পূর্বমুহূর্তে সে হাজির হতে পারল। দৌড়ে আসায় হাঁপাচ্ছিল বেশ।

চিকিৎসকের কণ্ঠ তাকে জানাল, এখন সিজার না করলে বাচ্চা তো বটেই মাকেও বাঁচানো সম্ভব না। তাই সে যেন একটি কাগজে অপারেশনের জন্য সম্মতির স্বাক্ষর করে দেয়। হতবিহ্বল মনসুর আর কী করবে ? তার স্বাক্ষরের পরই মানসুরাকে ওটির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো।

 সিনেমার সূত্রমতে ওটির দরজায় লাল বাতি জ্বলতে না দেখে মনসুরের বিভ্রম হলো―আসলেই কি মানসুরাকে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ? নাকি এখনও সে রেলগেটের বাজারে বসে বন্ধুদের সাথে তাস খেলছে ? তাকে বিভ্রম থেকে টেনে বের করল শামসুর।

ভাই, ভাবির পেটে বাচ্চাটা আসলো কবে ? একদিনও খেয়াল করলাম না, শুনলাম না।

তুই চোখের ডাক্তার দেখা, স্বাভাবিকতায় ফিরে এসে মনসুর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কথাটা বলল। কণ্ঠের সেই স্বাভাবিকতা বেশিক্ষণ থাকল না। তাকে ভেতরে ডেকে নিল ডাক্তার। বাচ্চাকে হাতে তুলে দিল। এরপরেই সে যেন আবার ফিরে গেল রেললাইনের আড্ডায়। দেখতে পেল, একটা ট্রেন চলে যাচ্ছে, মানুষ ঝুলছে, দুলছে, ধুলো উড়ছে আর ভূগর্ভ ফুঁড়ে কোথা থেকে একটা হরিণ এসে আচমকা চলন্ত যন্ত্রদানবের নিচে কাটা পড়ল। আর শুরু হলো মানুষের হুড়োহুড়ি। দুদ্দাড় করে ছুটে গিয়ে অনেকেই হরিণ শরীরের অংশ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল―হরিণের মাংস খাওয়ার সুযোগ যে মেলে কালেভদ্রে। মনসুরের বন্ধুরাও আড্ডা ছেড়ে হরিণের পিছে। কিন্তু তার যাওয়ার সুযোগ নেই।

 কোলে এক মিনিটের ছোট বাচ্চা যার হাত-পা মিলিয়ে মোট আঙুল সংখ্যা ২৪, মাথাটাও সামান্য বড়, চোখদুটো ফুটে আছে মটরের দানার মতো, গায়ের রং বিষণ্ন লাল। মনসুরকে কে যেন বলে আজান দিতে। বাচ্চা হলে আজান দিতে হয়, এই কথাটি তার মনে ছিল না। মুমুর যেদিন জন্ম হয় সেদিনও তাকে একইভাবে বলা হয়েছিল আজান দিতে। কোলে মুমু কাঁদছিল, লেবার টেবিলে মানসুরা হাসছিল, জলে ভিজছিল চোখ আর গাল। পূর্বে এমন অভিজ্ঞতা থাকলেও মনসুরের মস্তিষ্ক থেকে অভিজ্ঞতা অশ্রুর মতো গড়িয়ে পড়ল।

কয়েক দিন আগে মানসুরা বলেছিল, এবার ছেলে হলে নাম রাখবে মুগ্ধ আর মেয়ে হলে রুমু। কোলের মানুষটির দিকে তাকিয়ে মনসুর বুঝতে ব্যর্থ হলো কোন নামে সে শিশুটিকে ডাকবে। নাম নিয়ে দোটানার ভেতরেই বাচ্চাটি হালকা কেঁদে উঠে জোরের সঙ্গে শ্বাস নিতে শুরু করল। ওটি রুমের ঠিক বাইরে দাঁড়ানো মনসুরের হাত থেকে একজন নার্স বাচ্চাটিকে নিয়ে আবার তাকে আজান দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে ভেতরে চলে গেল। নার্সটি অপারেশন থিয়েটারের দরজা লাগিয়ে দেওয়ার আগে মৃদুস্বরে মনসুর জানতে চাইল, ওকে কি মুগ্ধ নামে ডাকা যাবে ? নার্স সেই প্রশ্নটি শুনতে পেল না। এরপর সবকিছু ১ মিনিটের জন্য স্তব্ধ হলে পাশে থাকা একজন অচেনা মানুষ তার ততোধিক অচেনা কণ্ঠ নিয়ে বলল, আপনাকেও অসুস্থ দেখাচ্ছে।

জবাব দিল না মনসুর। সে দেখতে পেল, রাজীব ব্যস্ত হয়ে হরিণের পা টেনে টেনে ছিঁড়ছে। সে জোরে ডাক দিল, রাজীব।

ওটির সামনে থাকা সুবেশী ভদ্রলোকটি বলল, আপনি আমার নাম জানেন ? 

আপনার নাম ?

হ্যাঁ, রাজীব বলে ডাকলেন। আমার নাম রাজীব।

রাজীব তো আমার বন্ধু। আমি ওরে ডাকছি।

আপনার সঙ্গে আর কেউ নেই ?

মনসুর ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করেও চেহারায় হতবিহ্বল ভাব কাটাতে ব্যর্থ হলো। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার চারপাশে তাকিয়ে বসার জায়গা খুঁজল। তবে কথা ও সন্ধান সমাপ্ত হওয়ার আগেই ওটি রুমের দরজা খুলে গেল, নার্সটি সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে বাচ্চাটিকে যাকে মুগ্ধ না রুমু নামে ডাকবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মনসুর―তাকে এনে বলল, আসুন আমার সঙ্গে। বাচ্চার অবস্থা ভালো নয়। এনআইসিইউতে নিতে হবে।

এনআইসিইউ ? পাশের রাজীব নামের ভদ্রলোকটি চমকে গিয়ে বলল। আর সেই একটি শব্দ ও শব্দের সঙ্গে মেশানো উৎকণ্ঠায় মনসুর অচেনা লোকটির প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করে একটা কিছু বলতে চাওয়ার পরই শামসুর এসে উপস্থিত হলো। শামসুরের পেছন থেকে সে দেখতে পেল ছোট্ট মুমুকেও। মুমু ছুটে এল কাছে। সেও তার ঠোঁট নড়াল কথা বলার জন্য।

তুই ওরে আনলি কেন ?

এটুকু বলেই মুমুর গাল খানিকটা টিপে দিয়ে মনসুর নার্সের পিছু পিছু যেতে থাকল। আর মনসুরের পেছনে ওরা।

এক ডাক্তার তাকে সর্বপ্রথম জানাল, তাদের ছেলে বাচ্চা হয়েছে।

বুঝল, বাচ্চাটিকে তাহলে তারা চাইলে মুগ্ধ নামেই ডাকতে পারবে।

ডাক্তার আরও বলল, একটা রোগের কথা চিন্তা করছে তারা। তবে সেটা কী এখনও বলা যাচ্ছে না; হাত-পা মিলিয়ে ২৪টা আঙুল, বড় মুখ, আর ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র শিশ্নটি চামড়ার নিচে ঢেকে থেকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতেই অস্বীকৃতি জানাচ্ছে আর অস্বীকৃতি জানানো কিংবা বাড়তি চারটি আঙুল নিয়ে জন্ম নেওয়া মুগ্ধ এটা অবশ্য চিকিৎসকদের মাধ্যমে তার বাবা-মাকে ঠিকই জানাতে পারে, একটা কিছু ঠিক নেই। মুমু ঐ সময়েই মুগ্ধের ভাষা বুঝে উঠতে না পারলেও দশ কি এগারো বছর পরই সে-ও বুঝতে পারবে পৃথিবীটা তাদের পরিবারের জন্য সেদিনের পর থেকেই বদলে গিয়েছিল।

দেওয়ালের কান-মুখ আছে। কানে কথা শোনে আর মুখে কথা বলে বাতাসের সঙ্গে। এভাবেই কথা ছড়িয়ে পড়ে সমীরণে। না হয় শামসুরের ভাবির প্রেগন্যান্সি নিয়ে বলা সংশয়সূচক বাক্যটি কিংবা মুগ্ধের অতিরিক্ত চারটি আঙুলের খবর মুহূর্তেই বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে ? রাজীব, সজীব, নজীব, রাজীবের বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু, সজীবের বোনের ননদের ননদ, নজীবের ভাইয়ের শ্যালিকার প্রেমিক―এমন এমন জায়গায় কথাগুলো পৌঁছে গেল যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পোহাতে হলো। মনসুর আর মানসুরা নতমুখে সবার নানা ধরনের কৌতূহল দেখতে দেখতে একরাতে ক্লান্তবোধ করে বলল, কাল ডাক্তারকে বলে মুগ্ধকে নিয়ে চলে যাব। মনসুরাবাদেও আর থাকব না।

পরদিন অবশ্য চিকিৎসক নিজ থেকে এসে জানাল, আপনারা ওকে নিয়ে যেতে পারেন। সুস্থ আছে। তবে, ওর রোগের পুরো ব্যাপারটা আমরা ধরতে পারিনি। অনেক সময় জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না, সময়ে সেটা প্রকাশ পায়। আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং সময়ে সময়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

সময়ে সময়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি, ওভাবে প্রয়োজন পড়েনি।

 মুগ্ধ বড় হয়ে উঠছিল। বাড়তি চার আঙুল দিয়ে কী করবে কিংবা শরীরের তুলনায় খানিকটা বড় মাথাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা বুঝে উঠতে না পারলেও মুগ্ধ বড় হচ্ছিল।

মানসুরা তখনই মহল্লা ছাড়তে পারল না। নতুন বাসায় যাওয়া তো মুখের কথা নয়―যেখানে ওদের দুজনের বেড়ে ওঠা এই মহল্লাতেই। সবাই চেনে আর চেনার সূত্র ধরেই উটকো লোক, কাছের লোক, দূরের লোক―সবার ভিড় ঠেকাতে ব্যর্থ হলো ওরা। প্রথমে ভেবেছিল, মুগ্ধের অস্বাভাবিকতা হয়তো ওদের আগ্রহের কারণ। তার সঙ্গে আরেকটা প্রশ্নও যে ছিল, সেটা প্রথমে বুঝতে পারেনি।

একজন তো বলেই বসল, তোমার নাকি পেট ফুলে নাই ? তোমারে দেইখা নাকি বোঝা যাইত না ? আমিও তো মনে করো খেয়াল করি নাই। বিষয়টা হইলো কেমনে তাইলে ?

রক্ষা পেল না মনসুরও। মুগ্ধকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। তাসের আড্ডায় একদিন সে মনের গুরুভার কমানোর জন্য গিয়েই পড়ল ফ্যাসাদে।

রাজীব, সজীব কিংবা নজীবের কেউ একজন বলল, কোন জায়গায় মাগি লাগাইছিলি ? এই বাচ্চা তো ভাবির না। ভাবি তোর জন্য বিশাল একটা স্যাক্রিফাইস করল। কেমনে ভাবিরে ম্যানেজ করলি, বিষয়টা আমাদের শিখাইলে আমরাও মনে কর শান্তিতে কাজকাম করতে পারি।

এরপর আর কোনওদিন মনসুর সেখানে যায়নি। কয়েক মাস পর ওরা নতুন এলাকায় চলে গেল।

মুগ্ধ ওর দুই বছর বয়সে প্রথম হাঁটতে শুরু করল। প্রথম কথাও বলল তখন। শরীরের অস্বাভাবিক ভরের কারণে তাকে কোলে নেওয়াটা কঠিন হয়ে উঠেছিল অনেক দিন ধরেই। তাই মুগ্ধকে হাঁটতে দেখে প্রথমে খুশি হয়ে উঠল ওরা। পরে স্বস্তিবোধ ফিরে এলে বাসায় রান্না করা হলো পোলাও।

মুমু পোলাও খেয়ে প্রশ্ন করল, এই ভাতটাকে কী বলে ?

তখন মানসুরার খেয়াল হলো, এই বাড়িতে মুগ্ধের জন্মের পর ভালোমন্দ রান্না হয়নি। আর দাওয়াত তো তারা এড়িয়ে চলছে সেই থেকেই। আজকাল খুব কাছের স্বজন ছাড়া নিমন্ত্রণও মেলে না।

মুমুর নির্দোষ প্রশ্নে তাই মানসুরা দোষীবোধ করলে, সেই রাতেই বিষয়টা সে মনসুরকে জানাল। বলল, মুমুর খেয়াল রাখতে পারতেছি না আমরা। ওরে তো মানুষ করতে হবে। বড় হচ্ছে এখন।

 মনসুর সেই কথা শোনে কি শোনে না ঠিক বোঝা যায় না। সে কপাল কুঁচকে বিছানায় একটু হেলান দিল। পাশে ঘুমন্ত মুগ্ধ। চেহারা দেখে মনে হলো সমতল মাঠ। চোখ, কপাল আর গালের আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো নজরে পড়ল না।

মনসুর বলল, মুগ্ধের চেহারাটা কেমন দানবের মতো হয়ে যাচ্ছে না ?

তাকাল মানসুরাও। ওরা প্রতিদিন এভাবেই দেখে। এভাবেই কথা বলে। একই কথা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।

আজকেও তোমাকে কেউ কিছু বলছে ?

মনসুর জবাব দেওয়ার সুযোগ পেল না। তার আগে কেঁদে উঠল মুগ্ধ। বাম হাতের বুড়ো আঙুলের পাশের অতিরিক্ত আঙুলটি মুখে নিয়ে বামপাশে ফিরে শুতে চাইলেও নড়তে পারল না। শব্দ করে উঠল আবার। মানসুরা ছেলেকে দিক বদলাতে সাহায্য করতে করতে বলল, ছেলেটার গলায় জোর কি কমে যাচ্ছে ? ডাক্তার তো বলছিল, চোখের সমস্যা হতে পারে, গলার সমস্যার কথা বলে নাই।

ছেলে যদি সত্যি দানব হইতো, ওরে দিয়েই সবাইকে শায়েস্তা করে ফেলতাম।

ওদের কথার বিষয় এভাবে আবার বদলে গেল। রাতের পোলাওয়ের আনন্দ বিষণ্ন অন্ধকারের সঙ্গে মিশে গেছে পুরোপুরিই। দরজা দিয়ে ধীর পায়ে মুমু ঢুকে জানাল ওর ঘুম আসছে না। চুপচাপ মুগ্ধের পাশে নিজের জায়গা করে নিলে তিনজনের বিছানা ছোট হয়ে এল।

মুগ্ধের ছয় বছর বয়সে ওর ধরা পড়ল ডায়াবেটিস।

এর ভেতরে কথা বলতে শিখে গেছে টুকটাক। হাঁটতেও পারে। ধুপধাপ পড়ে গিয়ে ব্যথা পায় বটে, তবে সেটা কোন বাচ্চা পায় না ? ছোট ছোট বাক্যও সম্পূর্ণ বলতে পারে। দৃশ্যমান শারীরিক অসামঞ্জস্য ছাড়া ভালো কাটছিল দিন। বাজে কথাও আর গায়ে লাগত না ওদের কারও। বড় হয়েছে মুমুও। বাসা থেকে বারবার তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্কুলে যেন মুগ্ধকে নিয়ে খুব বেশি আলাপসালাপ না করে, সেটা করেনি কিন্তু বন্ধুরা যখন বাড়িতে আসতে চায় এড়িয়ে যেতে তো পারে না সব সময়। তাই মুমুর স্কুলেও মুগ্ধের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। যে বান্ধবী দিব্যি কেটে বলেছিল, কাউকে বলবে না, সে-ই সবার আগে ফোটালো হুল। তাই একটা সময় স্কুলে যেতে ইচ্ছা করত না।

এই সমস্যাগুলোও কাটিয়ে উঠছিল মুমু। সারাদিন ভাইকে নিয়ে বসে থাকে, খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে দেয়। মুমুকে দেখলেই মুগ্ধ হেসে কোলে ওঠার জন্য বাড়িয়ে দিত হাত। মুমু বেশিক্ষণ কোলে রাখতে পারত না। সেজন্য তার খারাপ লাগত। আর তাই চাইত সে-ও মোটা হবে আর মোটা হলে শক্তি হবে, ঠিকঠাক তখন সে মুগ্ধকে কোলে নিতে পারবে। সুন্দর সব ছবিসহ মনসুর অক্ষর চেনানোর দু-একটা বই কিনে দিয়েছে। আগ্রহ নিয়ে সেই বইগুলো নাড়াচাড়া করে মুগ্ধ আর তার চেয়েও বেশি আগ্রহ নিয়ে তাকে পড়াতে চেষ্টা করে মুমু।

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার খবরে সবচেয়ে বেশি বিচলিত হলো তাই মুমুই। শুনে এসেছে, মুগ্ধের আয়ু দীর্ঘ হবে না, তাই এখনই ডায়াবেটিস ? এমন হবে সে ভাবতে পারেনি। যেদিন খবরটা জানতে পারল, সে চুপচাপ চলে গেল ছাদে।

মনসুরাবাদের বাড়িটার কথা তার ওভাবে মনে নেই। তবে ছাদে এলে মনে পড়ে ও বাসার ছাদে দাঁড়ালে দৃষ্টি আটকাত না কোথাও। আর এখানে কেবল দালান আর দালান। মাঠ দেখা যেত, দেখা যেত রেললাইন, এখানে দেখা যায় পাশের বাড়ির রান্নাঘর, বারান্দায় ঝোলানো কাপড়। নিজের মতো সময় কাটাবে তার সুযোগও মেলে না। ড্যাবডেবে চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনেকেই। চাইলে গিলেও ফেলতে পারে।

এই তোমার ভাই নাকি প্রতিবন্ধী ? খুব কষ্ট তোমাদের, না ?

কথাটি বড় ভুল সময়ে বলা দেখেই বোধ হয় প্রথমবারের মতো কাউকে চড় মেরে বসল মুমু। প্রায় তার বয়সী এক ছেলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল কিছু মুহূর্ত। তারপর দুদ্দাড় করে ছুটে নেমে গেল নিচে। ছেলেটাকে আগেও দু-একবার দেখেছে বলে মনে হলো। ঠিক কোন বাড়ির মনে করতে পারল না। পশ্চিম দিকে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখল একজন।

সে চেঁচিয়ে বলল, এত দেমাক কীসের বেটি ? ভাই তো পাগল, বোনটাও যাইতেছে ঐ রাস্তায়। আরে বলি, বিয়েটা করবে কে এই মেয়েকে ?

নামছে সন্ধ্যা। অজস্র পাখি উড়ছে। আকাশে থাকার কথা পূর্ণ চাঁদ। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল কোনওমতে আটকে নিচে নেমে এল মুমু। তার চাঁদের মতো ভাইটার শরীরে কে এই দাগগুলো এঁকে দিল ? শুনেছিল, রোগটার নাম লরেন্স মুন না কী যেন। প্রায়ই তার মনে হতো নামটা এত অদ্ভুত কেন ?

মুমুর এই চড় মারার ঘটনা চাউর হলো বেশ। বাড়ির মালিক তার কুঞ্চিত ভুরু আর ফুলে থাকা ভুঁড়িসমেত সেই সন্ধ্যার পরের সন্ধ্যায় বিনয়ের মুখোশ পরে নিয়ে তাদেরকে বাসা ছাড়তে বলল।

মালপত্র ভ্যানগাড়িতে তোলার সময় মনসুর এবার কারেন্টের তারে বসা পাখিদের দেখতে পেল। ক্ষণিকের জন্য তার একবার মনে হলো, আচ্ছা এই পাখিগুলোকেই কি মনসুরাবাদে দেখা গিয়েছিল ?

নতুন মহল্লায় চক্রে কিছুটা পরিবর্তন এল। ইচ্ছা করেই শহরের উপকণ্ঠে চলে গেল ওরা। স্কুল বদলাতে হলো মুমুর। কুকথার ঝাপটা যেন এখানেও এসে না লাগে সেই ব্যাপারে সতর্ক ছিল সবাই। বুঝতে পেরেছিল, যতই অভ্যাস হয়ে উঠুক না কেন, অভ্যাসেরও ফাঁক থাকে। যে ফাঁক দিয়ে হাওয়া-বাতাস তো বটেই, মানুষও তাদের অনধিকারের নাকটা সহজে গলিয়ে দিতে পারে।

বয়সের সঙ্গে আড়ালে চলে যাচ্ছিল মুগ্ধের অস্বাভাবিকতা। সে টুকটাক পড়তে শিখে গেছে, একা একাই হাঁটতে শিখেছে, বলতে পারে পূর্ণাঙ্গ বাক্য স্পষ্টভাবে, নিজের হাতে খেতেও পারে, মাঝেমধ্যে বুদ্ধির ঝিলিক দেখিয়ে করে বসে কিছু প্রশ্নও।

যেমন একদিন বলল, আমি স্কুলে যাব না ?

যাবে বাবা, অবশ্যই যাবে।

বন্ধু হবে না ?

হবে বাবা, অবশ্যই হবে।

বাইরে যাব না ? আপুর মতো ?

কথাগুলো যেন আকাশে মিলিয়ে যায় জানালা গলে।

মুমু তাকে একদিন ছাদে নিয়ে গেল। নতুন বাসার ছাদটা দৃষ্টিবান্ধব।

মুগ্ধ বাসার পাশের একটা পার্ক দেখিয়ে বলল, ওখানে দেখি না, দেখি না কেন ? আমি যাব, যাব।

মুমু ও মানসুরা চুপি চুপি তাকে বাইরে নিয়ে গেল। মোটা মোটা পায়ে ধীরে ধীরে ওদের সঙ্গে হাঁটতে থাকল মুগ্ধ। আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে আবার ফিরিয়ে নিচ্ছিল চোখ। মুগ্ধের পায়ে মোজা, হাতের মুঠো মুমু ও মানসুরার হাতে, তাই ছয়টি আঙুল স্পষ্ট হয় না কারও কাছে। মোটকথা, শরীরের অস্বাভাবিক ভর, লালচে মুখ, ছোট চোখ ছাড়া দৃশ্যত মুগ্ধের অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে না।

 পার্কে ঢোকার মুখেই এক মধ্যবয়স্ক লোক এসে মুগ্ধের গাল টিপে দিয়ে বলল, বাহ! আপনার ছেলে তো বেশ গুল্লু। আর তাতেই হলো কাল। মুগ্ধের নয় বছরের জীবনে এমন প্রশংসা এবার প্রথম। তাই বাসায় ফিরে কাঁদতে কাঁদতে রান্না চড়ালো মানসুরা।

মনসুরকে বলতেই সে গম্ভীর হয়ে বলল, এভাবে বাইরে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হইলো ? তবে বেশিক্ষণ গম্ভীর থাকতে পারল না। শব্দ করে বলল, বোরহানিও কিনে আনি কী বলো ? অনেক দিন বোরহানি খাওয়া হয় না। মুমু নিজ ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। দ্রুতই বাজার করে ফিরল মনসুর।

পোলাওয়ের গন্ধে, কোরমার গন্ধে, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল হাজির হলো জানালায়। আর হতেই থাকল। তাদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠল চারপাশ। ঘটনা কী দেখতে আশপাশ থেকে হাজির হলো মানুষও। আর দুই-একজন জেনেও গেল মুগ্ধের বিষয়ে। সবাই মিলে ওকে দেখতে চাইলে শত শত পাখি জানালার গ্রিল গলে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ল। ডোরাকাটা শরীরের একটা পাখি মুগ্ধের কাঁধে গিয়ে বসে ডানা ঝাপটে যেন একটা কিছু আদেশ দিল। আর আগ্রহী সব মানুষকে নিমেষে খুবলে খেতে শুরু করল পাখির দল। ঘটনার আকস্মিকতায় বোবা বনে গেল সবাই। ফলে উপকণ্ঠের বাসাটিও ছাড়তে হলো মনসুরদের।

উপকণ্ঠের বাসাটি ছাড়ার নোটিশ পেয়ে মনসুর নতুন বাসা খুঁজতে শুরু করল। অফিস শেষ করে বাসা খোঁজার ঝক্কি নিতে গিয়ে সে টের পেল শহরে তাদের যাওয়ার জায়গা খুব বেশি বাকি নেই। এক ক্লান্ত রাতের শুরুতে মনসুর ফের মনসুরাবাদে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবটি মানসুরাকে দিলে মানসুরা সেটি নাকচ করে দেয়। আর তখন মনসুরের মনে নতুন একটি সম্ভাবনা উঁকি দিল।

বলল, পাখিগুলোর সাথে মুগ্ধের মনের মনে হয় কোনও যোগ আছে বুঝলা।

মানসুরার কাছে বিষয়টি হালে পানি পেল না।

এই সব আবজাব কথা বাদ দাও। এই যে ঘটনাটা ঘটল, এটা যে ছড়ায় নাই তাতে আল্লাহর কাছে শোকর করো। পারলে দুইটা রাকাত নফল নামাজ পইড়া নিয়ো।

মনসুর তাই চুপ হয়ে গেল। বেশিক্ষণ বিষয়টি নিয়ে ভাবার আগেই তার ঘুম চলে এলো। পরদিন মনসুরাবাদের কাছে আমিরাবাদ এলাকায় গিয়ে একটি বাসা সে অবশেষে ভাড়া নিতে পারল। নতুন বাসায় ভালো কাটছিল ওদের দিন।

মুগ্ধের নতুন বাতিক হয়েছে। মুমুকে ছাড়া সে খাবার মুখে তোলে না। মুমু যতক্ষণ স্কুলে থাকে ততক্ষণ সে জানালার পাশে বসে থাকে; পাশেই নর্দমা, তাতে মুগ্ধের কিছু এসে যায় না।

মুগ্ধ একা একা টিভি ছাড়তে পারে, দেখতেও পারে। তার পছন্দের অনুষ্ঠান ওভাবে না থাকলেও স্ক্রিনে দৃষ্টি যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সেখানে ডুবেই থাকে। একবার একটা সিরিয়ালে বিয়ের একটি দৃশ্য দেখে তার চোখে এল অশ্রু।

মুমু সেদিন স্কুল থেকে ফিরে এলে, কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল। বলল, তুমি যাবা না। বিয়ে করবা না।

কথাটি শুনে মানসুরা আর মুমু দুজনেই হেসে ফেলে আর মুগ্ধ চোখে সব হারানোর বেদনা নিয়ে একবার করে দুজনের দিকে তাকাল, তারপর মাথা নিচু করে জানালার পাশে বসে পড়ল।

মুমু চিনতে শুরু করেছে নিজের মন ও শরীর। এসএসসি পরীক্ষাশেষে প্রায় সব বান্ধবীর প্রেম হয়ে গেল। কয়েকজন পেল চুমুর প্রাথমিক স্বাদও। কারও সঙ্গে খুব যে ঘনিষ্ঠতা আছে মুমুর তাও নয়। তাই বলে সবাই মিলে বেড়াতে গেলে তাকে ডাকবে না এমনও নয়। মুমুর ডাক পড়লে সে বের হয়। আড়চোখে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে কেউ তাকে বিশেষভাবে দেখছে কি না। নজরে কেউ এলে মুখটা অবচেতনেই হয়ে ওঠে গম্ভীর, হৃৎপিণ্ডের গতির এক্সিলেটরে পড়ে চাপ আর শুরু হয় ধুপধুপ, টুপধুপ, ধুপটুপ, ধুপধুপ।

এই ধুপধুপানির এক বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে পার্কের এক আড্ডায় যে যার প্রেমিকসহ এলে মুমু একার ভেতরে আরও একা হয়ে পড়ল। দেখতে পায়, ওর মতো আরেকটি ছেলেও একার ভেতরে একা হয়ে বসে আছে। একটু হেসে ওর দিকে এগিয়ে এলে মুমুও মৃদু হাসতে চেষ্টা করল। আর সেই হাসিতে ধুপধুপের ধুপ উড়ে পালাল।

কেমন আছো ? তোমার সঙ্গে বাংলা ম্যাডামের বাসায় পড়েছিলাম।

ধুপধুপের বাকি থাকা একা ধুপ এবার দৌড়ে পালাল।

ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার অনভ্যস্ততা ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারল না। ছেলেটিও ওভাবে পটু নয় মুখের কথায়। তবে হাতের কাজে হয়তো সে পিছিয়ে নেই। আচমকাই তার হাতটা এগিয়ে দিল মুমুর দিকে। আর সঙ্গে সঙ্গে পার্কের সবচেয়ে উঁচু অশ্বত্থ গাছের ডালে বসে থাকা ডোরাকাটা নাম-না-জানা পাখিটার ভেতর থেকে জন্ম নিল হাজার পাখি। তারস্বরে চেঁচাতে চেঁচাতে এসে ওরা ঠোকরে ঠোকরে লাল বানিয়ে ফেলল ছেলেটির হাত। আর রক্তশূন্য হতে থাকল মুমুর চেহারা। উড়ে যাওয়া ধুপ, পালিয়ে যাওয়া ধুপ, আড়ালে থাকা টুপ সব ফিরে এল একসঙ্গে। মুমুকে বলল, পালাও, পালাও …

বাসায় ঢুকে মুগ্ধকে দেখতে পেল তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। বিড়বিড় করে একটা কিছু বলছে। মা-বাবা কাউকে দেখতে না পেয়ে, সে মুগ্ধের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

কী করেছিস তুই ? কী করেছিস তুই ?

মুগ্ধ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল মুমুকে। বাঁধন আলগা করার চেষ্টায় না গিয়ে মুমু বলল, আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাব না তো পাগল। কোথাও যাব না। আমি ছাড়া তোর যে কেউ নাই, তা কি আর জানি না।

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button