
নাসির আহমেদ
গোলকধাঁধায়
কোনও কোনও রাত্রি কাটে বিদীর্ণ তৃষ্ণায়!
অথচ স্নায়ুতে বাজে অন্তহীন বৃষ্টির কোরাস।
বাস্তবে জলের ফোঁটা বাইরে কোথাও নেই
ধুধু খরা। চৌচির সমস্ত চরাচর!
এত তাপ! এত অগ্নি নেভাবো কী করে!
গ্রীষ্মের দরোজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে
যেন সর্বোচ্চ দহন। এমন নিঃসঙ্গ আর তৃষ্ণাদীর্ণ রাত
কোনও কোনও হৃদয়কে চৈত্রের মানচিত্র করে ফেলে!
বিদ্যুৎ চমকায় ঘন অন্ধকার রাত্রি চিরে,
তুমুল গর্জন মেঘে মেঘে, অথচ বর্ষণ নেই!
কোথায় যে কত দূরে আষাঢ়-শ্রাবণ!
ভবঘুরে বৃষ্টি থাকে কোথায় কখন, কেউ কি তা জানে ?
ক্লান্তিতে ভোরের দিকে যখন নেতিয়ে পড়ে চোখ
হঠাৎ রিমঝিম ছন্দে বেজে ওঠে নূপুরের ধ্বনি!
বস্তি থেকে রাজার প্রসাদ যেন একাকার সেই
বৃষ্টির নূপুর-নৃত্যে, সুরে! বৃষ্টি স্নায়ু জুড়ে।
গোলকধাঁধার মতো তুমুল বৃষ্টিতে সারারাত ভিজে ওঠে মন
অথচ শরীর পোড়ে তীব্র খরতাপে সারাক্ষণ!
…………………………..
দিলারা হাফিজ
বর্ষার শাদা ছড়ি
তখনও দুয়ার বন্ধ, মেঘ এসে খুলে দিলো দ্বার
জন্মান্ধ বালক, করস্পর্শে যাকে পেল―সে কি বর্ষা ?
প্রকৃতির এত রূপ, দেখেনি বালক, রিমিঝিমি―
নব এই তনুস্পর্শ―অনুরাগে―অদ্ভুত বিস্ময়ে―
জাগালো প্রণয়ে তাকে চিরবিরহী যক্ষের প্রাণে!
দিশেহারা এক তীব্র অনুভূতি-উৎস খুঁজে ফেরে
দৃষ্টিহীন চোখে সে যে, মূর্তিমান পহেলা আষাঢ়
ধরা দেয় শুভক্ষণে প্রণয়ের মেঘবার্তা নিয়ে―
মেঘকন্যা এক শিপ্রা নদীতীরে অপেক্ষায় থাকে
কাঁঠালিচাঁপায় মুগ্ধ বালক খোঁজে ঐ শাদা ছড়ি।
………………………………….
হাসান হাফিজ
উজ্জ্বল পাথেয়
সাঈদ সাঈদ বলে
বিদ্রোহের জয়ধ্বনি শুনেছে মানুষ
তেতে ওঠা জনপদে
জ্বলেছে বারুদ
হিংস্র পাশবিক সেই শাসনের
টুঁটি টিপে অবসান ঘটিয়েছে
লাখো লাখো নিরস্ত্র মানুষ।
চরাচরে শুনতে পাই
মুগ্ধ মুগ্ধ ডাক―
স্বৈরতন্ত্র ছিঁড়েখুঁড়ে বিধ্বস্ত বাতিল
মহা সেই কল্লোলের
স্মৃতি আজ প্রগতির উদ্ভাস নতুন
কত মুগ্ধ কত যে সাঈদ
জননীর বুকচেরা দীর্ঘশ্বাস
মিশে আছে আকাশে-বাতাসে
তারা জাগরণী মন্ত্র
অফুরন্ত অমøান পাথেয়
মৃত্যু হয়তো অনিবার্য
চারিদিকে ওত পেতে
ঘাতকেরা তৈরি হয়ে আছে
এই সত্য জানা ছিল
কিন্তু পথ সত্যপথ
প্রগতির হাতছানি দিয়েছে সহজ
সাড়া দিতে গিয়ে
মৃত্যুপথে দাঁড়িয়েছে সাহসী নির্ভীক।
পথে ছিল কাঁটা
রক্তচোখ অস্ত্রের ঝিলিক
প্রতিহিংসা দমন নিপীড়ন
হত্যা গুম পিশাচী উল্লাস
মুক্তি ছিল দূরবর্তী গ্রহের ঠিকানা
কোনোদিন স্পর্শ করা হয়তো যাবে না
এমন সংশয় দ্বিধা ভয়
জ্বলজ্বলে বাস্তবতা ছিল সর্বদাই
উদ্দীপিত তারুণ্য জোয়ারে
ভেসে গেছে, নিশ্চিহ্ন হয়েছে
মুগ্ধ আর সাঈদেরা
বিজয় সাহস আর নতুনের প্রগতির
স্বপ্ন আর প্রত্যয়ের
স্বাধীনতা শৃঙ্খল মুক্তির
জলন্ত প্রতীক হয়ে বাতিঘর হয়ে
চিনিয়েছে আলোর ঠিকানা
এই ঋণ প্রতিদিন
আমাদের হৃদয়ে জাগর
এই মুক্তি হঠিয়েছে আঁধার পিচ্ছিল
দানবীয় দুঃশাসন, অপচ্ছায়া ত্রাস।
……………………….
জাহিদ হায়দার
কবিতা-কোলাজ : ২
মধ্যদিনে কাকাতুয়ার সঙ্গে তোমার কথা বলা।
না ঘুমানো চোখ শূন্যতার ক্যানভাস।
শালিক, বৃষ্টিতে কার্নিশে ঝাপটায় পাখা।
অরণ্যের ছায়ায় সিংহের রাজকীয় আলস্য।
মধ্যরাতে বেড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা।
তপ্ত বালিতে মরুউটের খুরের আঘাত।
কৃষিমাঠে আগাছা পরিষ্কার করা কিষানির হাত।
প্রবল ঢেউয়ে নৌকার হাল ধরে থাকা মাঝির ঘাট।
স্টেশনে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা কিশোরের টাকা গোনা।
টাচফোনকে জীবন্ত করা আঙুলগুলির হতাশা।
কারও মাথার উপর পোপ বা হুজুরের হাত।
ক্যাকটাসে পানি দিয়ে সবুজের স্নিগ্ধতা দেখা গৃহিণীর।
এবং শরীরের উঁচুনিচু কাঠামোর মাপ নিতে যাওয়া গম্ভীর চোখের দর্জির।
সঙ্গ দাও, কেন তুমি অনুজ্জ্বল ঊর্ধ্বকমার বন্ধন।
তথ্যউপোসে পারমিতার নির্জন অস্থিরতা।
দৌড়াচ্ছে, সঙ্গে ছোটবড়ো চাকার বেঁচে থাকা। অজস্র শবযাত্রা।
ভাঙনের উচ্চারণ আর কবরভূমির পাশে বৃক্ষরোপণ।
সৈকতে স্বল্পতম কাপড় পরা। তুষার পাতের কোলাহল।
ভেড়ার পশমি উষ্ণতায় স্থবিরতা উপভোগ।
অতঃপর হিংসা জ্যামিতির প্রতি। যুদ্ধদিনে প্রেম হঠাৎ আত্মবাচক।
প্রগতিশীলতার আরশিতে চটা পারদ প্রশ্নবোধক।
নৈঃশব্দ্য আর চিৎকারে বার বার বালিঘড়ি দেখছে বয়স।
আধুনিকতার যৌন অধিকার নীলকান্তমণির দ্যুতিবিস্তার।
……………………..
গোলাম কিবরিয়া পিনু
ভ্রান্তিতে ভ্রাম্যমাণ
ভুল করেছি মস্ত বড় ভুল,
ভুল শোধরানোর সময় এখন নেই,
যতই ছিঁড়ি মাথারও চুল!
কী মারাত্মক ভুল করেছি ভুল!
ভ্রান্তিমূলক কোন মুলুকে
কার সাথে যে দিন কাটালাম ?
সে কি ছিল কেউটে ?
তবু কেন হলাম আমি তার নেউটে!
ভুল হয়েছে ফুল ফোটাতে আর পারিনি,
কুলও রক্ষাও হয়নি!
দুল পরালাম কাকে ?
চুল উড়ালাম যে বাতাসে ?
সে বাতাস কি আর সুস্থ ছিল ?
দুস্থ হলাম শুধু!
ভুলে ভুলে ভুট্টাখোরেরা খেয়ে নিল
ভূত ও ভবিষ্যৎ,
ভেলভেট পরা লোকেরাও হায়
ভেল্কিবাজি দেখিয়ে দিল,
ভেষজ উদ্ভিদ লুটে নিল!
ফসল ছাড়া আমি শুধু জমির চাষি হলাম!
ভুলে ভুলে কী সর্বনাশ!
এতটা হলো আত্মনাশ!
এখনও হায় ভ্রান্তিতে হই ভ্রাম্যমাণ!
…………………..
মাহমুদ কামাল
নতুন বাংলাদেশ
এত রক্ত! এত রক্ত!
রক্তস্ফীতি…
তবে কি রক্তের দাম কমে যাবে?
এক আসাদেই কেঁপে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ
নূর হোসেনের রক্তেই তো সাময়িকভাবে
গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল
আবু সাঈদের পথের নিশানায়
কত শত প্রাণ অবলীলাক্রমে
বঙ্গভবনের কাঁপন ধরালো
এত রক্ত! এত রক্ত!
রক্তস্ফীতি…
রক্তমূল্যেই আজ জেগে উঠেছে
নতুন বাংলাদেশ।
……………………………………..
রোকেয়া ইসলাম
বসন্তের অভিমানী গাতক
বসন্তের মধ্যদুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে বিকেলে
ঠিক তখুনি বারবাড়ির গাছের নিচে
এল এক অবিনাশী গাতক,
গলায় অনিঃশেষ সুর, হাতে প্রেমিক বাঁশি
তখন ভর বসন্ত, কুহু ডাকে কোকিল
প্রজাপতি উড়ে চলে ফুলে ফুলে
বাতাসে ভাসে ফুলেল সুবাস
ঘর-গেরস্থালি ছানাপোনার দানাপানি
স্বামীর নিত্য আহার্য পদে পদে সাজাই
গান আমাকে উতালা করে না
সুরও বিভোর করে না অবুঝ সবুজে
হঠাৎ নীল বাতাস কি কথা বলে মনে,
সুর তোলে শুদ্ধ পূরবীতে
কার বাঁশিতে ঝাঁপ দিতে আকুল হৃদয়
আনচান করে
কে সে গতকাল না আগামী
কাকে খুঁজি এই বহমান নিরেট সময়ে।
কাজ শেষে একটু অবসরে
নিরালায় দাঁড়াই দখিনের জানালায়
সুরহারা ছিন্ন বাঁশি পড়ে আছে ঝরাপাতায়
তুমি তবে এলে এ বসন্তে
আমি তবু দাঁড়িয়ে জৈষ্ঠ্যের চৌচির চরাচরে।
………………………….
রেজাউদ্দিন স্টালিন
বৃষ্টির বই
যে বাড়িতে কাব্যগ্রন্থ নেই
সে বাড়ির অতিথি হবো না
জানালায় জীবনানন্দ নেই
বনলতা সেন অভিমানে জানতে
চায় না―এতোদিন কোথায় ছিলেন
রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি
উঁকি দেয় না যে উঠোনে
শাওন রাতে যদি অবিরাম
স্মৃতিবৃষ্টি না হয়
নজরুল কোথায় যাবেন
বাংলার প্রতিটি বাড়ি হোক কবিতার আশ্চর্য প্রহর
যেতে যেতে দেখা হোক কালিদাসের যক্ষের সাথে
সে মেঘের পেছনে হেঁটে যাচ্ছে উজ্জয়নীপুর
হয়তো অলকা পত্রপল্লবের দরোজায় অপক্ষমাণ
দূরে কালীদহে স্রোতের ফণায় দুলছে বেহুলা সুন্দরী
যে বাড়ির পেছনে মাঠে মটরশুঁটির
ক্ষেতে জসীমউদ্দীন কখনও আসেনি
সে বাড়ির আতিথ্য নেবো না
বাংলার প্রতিটি উঠোন হোক সুলতানের ছবি
প্রতিটি জানালা হোক
জয়নুলের তুলি
সেই বাড়ি স্বপ্ন নয় বাস্তবের ব্রহ্মপুত্র
ডুবে যাক জলস্রোতে ঘাসের বিরহ
আমিও অতিথি হবো গা ভেজাবো
বৃষ্টির বিবিধ অক্ষরে
…………………………..
শাহীন রেজা
এক ঝড়ের রাতে
এক ঝড়ের রাতে মৃত্যু হবে আমার
কাঠের জানালায় আছড়ে পড়বে বজ্র আর টিনের চালে বাতাস ও বৃষ্টির মাতম
খই ভাজা শব্দে ডুবে যেতে যেতে আমার কণ্ঠ দিয়ে বেরুবে―আলহামদুলিল্লাহ
চলে যাওয়ার পথে
কাদা ও জলের মধ্যে খাবি খাবে আমার বিশ্বাস :
হিসাব নিকাশের মুহূর্তগুলো―
পুরু লেন্সের চশমায় প্রতিফলিত হবে অতীত; ফেলে আসা কর্ম এবং প্রতিশ্রুতি
তোমার নিরাভরণ মুখ, মসৃণ ঠোঁট আর মাতাল চাহনি আমাকে ছায়ার দিকে টানলেও আমি থেকে যাব সিহর; অচঞ্চল
মোহমুক্তির জোয়ারে ভেসে যাওয়া মুহূর্তের আনন্দ রাঙাবে সমস্ত সকাল আর রাতগুলো―
উড়ন্ত চিলের ঠিকানা জানে ফেরারি রোদ
আমি উড়তে উড়তে পৌঁছে যাব গোধূলিতে
একটু পরেই সন্ধ্যার অবসরে আমাকে কাছে টেনে নেবেন মহান আজরাইল
শার্সিতে ঝাঁপিয়ে পড়া মুগ্ধ মৌনতায়
আমিও আলিঙ্গনে লীন হব তাঁর সাথে
পরম শীতল গভীরতায়।
…………………….
নাসরীন জাহান
দ্বিধার শ্যাওলা
প্রতিদিন মনে হয়,
দ্বিধার শাওলা সরিয়ে সাঁতার পরিষ্কার করি,
কিন্তু,
রক্তের নহরের পর,
চুপচাপ দেখে যাওয়া দল,
আর রক্তের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া দল,
জটে জড়িয়েছিল
বন্যা এল,
বিভেদের ফিতে ভেঙে এক হয়েছিল এক আকাশের নীচে,
কার প্রতি কার পক্ষপাত কার পছন্দ বেদনার গান কার রক মিউজিক ?
অতীতকে ফেলে অথবা জড়িয়ে তারা কিন্তু মানুষ হয়ে এগিয়ে এসেছিল।
বৃষ্টি! বৃষ্টি!
এই যে টিএসসিতে মানুষের জন্য মানুষের মাদল,
বন্যা শেষ হলে কথা দিতে পার, আর কোনও
বিদ্বেষে যাবে না ?
আমরা আসলেই স্বস্তি থাকতে বুঝতেই পারি না স্বস্তির স্বস্তি কী ?
ফের এখন অসভ্যের চূড়ান্ত হচ্ছে।
আমি কিন্তু ভেসে যাওয়া সেই লাশ,
তোমাদের শস্যের পলি হয়ে ভেসে উঠেছি।
যার যায় সে বোঝে,
কেঁদে খানখান আমাকে হারিয়ে যাওয়া যারা, তাদের বিলাপের ওপরেই রাজনীতি নিয়ে কী কাপের ধোঁয়াই না উড়ছে!
আমার ওপর দারুণ ফসল হবে।
আনন্দে নাচবে আমার ওপর, আমি কিন্তু পলি,
চিৎকার করলেও আমার কান্না তোমাদের ধানের আনন্দের উচ্ছ্বাস কমতে দেবে না।
তুমি বিছিয়ে রেখেছ আঁচল, আমি তার খুঁটের পয়সা চুরি করেছি মা,
আমি অনেক রক্তের মধ্যে শুয়ে ছিলাম,
অনেক ঝড়ের মধ্যে বক ছিলাম,
মানুষের এত অসহ্য গর্জন আর নিতে পারছি না।
ওদের তুমি ছায়ায় দাঁড়াতে বলো মা,
ভরদুপুরে মাথার মধ্যে একটানা ঘুঘু ডেকে যায়।
…………………
কামরুজ্জামান
আমার প্রতীক্ষা
একটা অচেনা ছোট্ট রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে
জনশূন্য লবি, কেউ কারও জন্য নেই পথ চেয়ে
চড়ুই পায়রাগুলো হাওয়ায় ভর করে আসে নেমে
আহার সন্ধানে, খুঁটে খুঁটে তুলে নেয় শস্যকণা
প্রাচীন বৃক্ষের সবুজ পাতার ছায়া মায়া হয়ে
জড়িয়েছে আমাকে, আমি বসে আছি আমার প্রতীক্ষায়…
ফেলে আসা কত প্রিয় মুখ মুছে গ্যাছে স্মৃতি থেকে
আনন্দ বেদনা সুখ দুঃখ ভরা পদচিহ্নগুলো
কোথায় নিঃসঙ্গ একা পড়ে আছে অজনায়―
পরিচিত অপরিচিত অবয়বে ফুটে ওঠে যে হাসি কান্না
আড়াল থেকে প্রত্যক্ষ করি নিপুণ ইচ্ছায়,
কত বিদায়, আগমনে পূর্ণ শূন্য ক্ষুদ্র জীবন…
রঙ চায়ের পেয়ালা ওষ্ঠে স্পর্শ করে দেখি দূর থেকে
রিমঝিম শব্দের ছোট্ট লোকাল রেলগাড়ি আসে
কত নানাবিধ প্রয়োজন তৈরি হয়ে ওঠে অনুক্ষণ
কিছু ওঠানামার হাঁকডাকের চাঞ্চল্য বাড়ে কিচ্ছুক্ষণ…
সন্ধ্যা শেষে রাত্রি নামে, মৃদুমন্দ বায়ু ছুঁয়ে যায় তনুমন
বসে আছি একা, আরও একা হবো ছিন্ন করে সকল বন্ধন…
………………….
গুলতেকিন খান
এ কথা কেউ যেন-২
একটি রাত
মায়াবি হাত
এ গিরিখাত
বর্ষণ সন্ধ্যা
রজনীগন্ধা
ফুলের সুবাসে আসে তন্দ্রা
সবকিছু আজ পারে না হারাতে।
একটি ভুল
দিতে মাশুল
এ কারাগারে
থাকে এবারে
রজনীগন্ধা
ফুলগুলো যেন ভাঙে তন্দ্রা
এভাবে সে আর পারে না দাঁড়াতে।
হে নিঃসঙ্গতা
ঝরিয়ে পাতা
গাছের ডালে
থাকো সকালে
রজনীগন্ধা
ফুল নয় যে ধারালো ছুরি
কেউ যেন এটা পারে না জানতে।
………………………….
শাহ্নাজ মুন্নী
একাকী মৌন সমাধি
ব্যক্তিগত মুক্তির বর্ষপূর্তি
আমি একাই উদযাপন করেছি
গ্লাসভর্তি সবুজ মদ
ফুল অফ চিয়ার, প্রসূন কুসুম বিহঙ্গম
চারপাশে সঙ্গোপনে বাতাসের তুমুল হাত তালি
আর উদাত্ত আকাশ গেয়েছে আমার পরিত্রাণের গান
বলেছি, দেখো আমি কোথাও নেই!
নামে বেনামে, সুনাম বা দুর্ণামে, সুরে বা সানাইয়ে
এই বিরল অবসরে কেবল নির্জনতাকে ভালবাসতে শিখেছি
নিভৃতে বানিয়েছি নিজের একাকী মৌন সমাধি।
সাদা ক্যানভাসে ছবি এঁেক গেছে নিঃস্ব আত্মাদের দীর্ঘশ্বাস
বিমূর্ত সেই চিত্রকলার অর্থ বুঝিনি
শুধু বুঝেছি, আমাদের চাওয়ার মতো করে
পৃথিবী পাল্টাবে না কোনও দিন।
…………………………..
সুমী শারমীন
অনিবার্য এপিটাফ
খুব নীরবে নিভৃতে কাঁদে
কবরের সবুজ ঘাস
এপিটাফ করে প্রহসন
প্রকৃতি করে প্রতিবাদ
তার বৈরী বাতাসে।
কিন্তু মানুষ হায়
বোঝে না হারিয়ে যাওয়া
মানুষের আর্তনাদ।
মানুষকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে
যে মহামানব রূপকথার
এঁকেছিল সবুজ মানচিত্র,
সে আজ মূর্তিমান
অব্যক্ত আঁধারের চালচিত্র।
ফুলেল শুভেচ্ছা, ফেস্টুনে
ঢেকে দেয় তার অবয়ব সবুজ ঘাসে।
অন্ধকার কবরে শুয়ে
নীল বেদনার কাছে
তার
অকুণ্ঠ আজীবন জিজ্ঞাসা
কী ছিল তার অপরাধ ?
……………………………….
আবদুর রাজ্জাক
তুমিও কি গাঙপাড়ে আমার হারানো কপিলা
জগতের এক একটি ক্রন্দন খুবই দীর্ঘ, আমি এক স্বপ্নদাস
লাল মেঘে একবিন্দু শিশিরকণা, যা খুব উজ্জ্বল―
আলতো করে ধরে রাখা উজ্জ্বল, আমি কি-না সেই ক্রন্দনের
অংশে হিয়ার সঙ্গে হিয়া বেঁধে থরথর রাইঘাস,
যাকে আমি মুগ্ধ করেছি, সে যেন রাগে ক্রোধে কূটাভাসে
ক্রমশ লাল হয়ে উঠেছে।
একজন শ্যামা মেয়ে আমাকে পরাস্ত করেছে, যার অনন্ত
বিলয়ের গতি আমাকে শায়িত করেছে,
ভালোবাসার নামে তাকে অতিশয় ক্ষুদ্র করেছি আর সান্ধ্যকালে
তার বুকে বপন করেছি চন্দনগন্ধ।
আমি কখনও সাপ দেখিনি, সাপের সঙ্গে ভালোবাসাও হয়নি,
তবু এক অসম ছোবল আমাকে বিষাক্ত করেছে অষ্ট চিহ্নে।
জবাকুসুমের বর্ণনায় তুমিও অভিরূপ, অদ্ভুত!
শশীবাক্য তুমিও কি ধূলি-মলিন দিবসে গাঙপাড়ে কপিলা ?
……………………….
সচিত্রকরণ : রজত