আর্কাইভসম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়: বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী মূল্যবোধ উন্নত করতে পারে সাহিত্যও

দ্বাদশ বর্ষ   পঞ্চম-ষষ্ঠ সংখ্যা   মে-জুন ২০২৫

পবিত্র কুরআনে ‘কুরবানান’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এই আরবি শব্দটি ফারসি ও উর্দুতে ‘কুরবানি’ হিসেবে পরিচিত। এজন্যই কুরবানির ঈদকে ‘ঈদুল আজহা’ বলা হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রাণপ্রিয় শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে মক্কা নগরীর মিনায় মহান আল্লাহর দরবারে কুরবানি দেওয়ার যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের অনন্য ধর্মীয় দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পরীক্ষায় তিনি সফল হয়েছিলেন। কুরবানি শেষ করে তিনি দেখলেন পুত্রের জায়গায় অন্য একটি পশু জবাই হয়ে গেছে।

এজন্য কুরবানি মুসলমানদের একটি ধর্মীয় ইবাদত। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এই ইবাদত পালন করা হয়। পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কেবলই পশুকে নয়, মহান ইবাদতটির মাধ্যমে মনের পশুত্ব কুরবানি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ মানুষের মনে যে কুপ্রবৃত্তি আছে, যে অমানবিক পশুত্ব, হিংস্রতা-নির্মমতা রয়েছে তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে উন্নত জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে।

সাহিত্যে ‘ঈদুল আজহা সংখ্যা’ প্রকাশ করার উদ্দেশ্য কী ?

উদ্দেশ্য খুবই সহজ। পবিত্র ও উন্নত জীবনযাপন করতে গেলে মন উন্নত হতে হয়, মনের পশুত্ব, কালিমা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, খুনখারাবি থেকে মুক্ত থাকতে হয়।

সাহিত্যের মধ্য দিয়ে কি তা অর্জন করা সম্ভব ?

এক কথায় সম্ভব।

সাহিত্যে যাপিত জীবনের ঘটনা দেখার সুযোগ ঘটে।

নেতিবাচক ঘটনার ভেতর থেকে ইতিবাচক ঘটনাও মনকে আলোকিত করে। ধ্বংসাত্মক চিন্তা-ভাবনার ভিতর দিয়েও শুদ্ধ সুন্দর চিন্তার উদ্ভব ঘটে, খারাপের ভেতর থেকেও ভালোটা গ্রহণ করার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেতে পারে যে কোনও পাঠকের। ধর্মীয় অনুষদ পালনের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা উন্নত করতে পারে মননশীলতা ও সৃজনশীল সৃষ্টিজগৎ। আর এ কারণে শব্দঘর-এর পক্ষ থেকে ঈদ-উৎসবে বিশেষ সংখ্যা বের করা হয়।

এ সংখ্যার কি বিশেষ কোনও বৈশিষ্ট্য আছে ?

আছে। নিয়মিত সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি রয়েছে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী বিশেষ আয়োজন। যুদ্ধের মাধ্যমে এক দেশ আরেক দেশকে জোরজবরদস্তি দখল করার হীন মানসিকতা তৈরি হয়। দম্ভ, অহংকার, স্বার্থপরতা, অসম পুঁজিব্যবস্থা, ধর্মবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশে দেশে। মানব মানবকে হত্যা করে, ধ্বংস করে, ভূখণ্ডের পর ভূখণ্ড দখলের লিপ্সা যুগে যুগে ছিল, এখনও আছে, ভয়ানকভাবে আছে। কেবল ধ্বংসলীলা দেখছে না একই সঙ্গে বিশ্ববাসী দেখছে মানবনিধনের মহাতাণ্ডব। এসব নৃশংস ধ্বংসাত্মক ইনস্টিংক্ট বা প্রবৃত্তি থেকে মানুষকে শুদ্ধ করতে পারে মানবিক মূল্যবোধ, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, উন্নত ধর্মীয় চেতনাবোধ। সাহিত্যের মাধ্যমে তা কিছুটা হলেও অর্জন করা সম্ভব। এই সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, মুক্তগদ্য এবং বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ গল্প-কবিতার মধ্য দিয়েও যুদ্ধবিরোধী এবং বিশ্বজুড়ে মানবনিধনবিরোধী স্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। কবি-সাহিত্যিকদের প্রজ্ঞার আলো ঈদুল আজহার সংখ্যার মাধ্যমে পৌঁছে যাবে পাঠকের ঘরে ঘরে।

মে-জুন, ২০২৫ সংখ্যায় আরও থাকছে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল জন্মবার্ষিকী নিয়ে বিশেষ আয়োজন। সেরা বাংলা সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ বিভাগে থাকছে গল্প ও প্রবন্ধের অনুবাদ।

বরাবরের মতোই এ সংখ্যাটিরও প্রচ্ছদ করেছেন চিত্রকর ও কথাশিল্পী ধ্রুব এষ। সুপ্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও আড়ালের শুভানুধ্যায়ীদের ঈদ মোবারক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button