আর্কাইভকবিতা

ছড়া

আখতার হুসেন

একগুচ্ছ নীতিমূলক ছড়া

১.

হোক না সে বই ক্ষুদ্র যতই

ক্ষীণ কলেবর,

থাকে যদি সার ছোটো সে আধার

বিশাল সাগর।

২.

নিজের কথা ফলাও করে

নিজেই যারা বলে,

তাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার

ভাববে পলে পলে।

৩.

অস্ত্রের জয় চিরস্থায়ী নয়

ধসে পড়ে দু দিন পরে,

প্রজ্ঞার বলে আসে যেই জয়

অমর যে তাকে করে।

৪.

ওপরে যদি উঠতেই চাও

ধাপে ধাপে ওঠা ভালো,

এক লাফে কিছু করতে গেলেই

দেখবেই চোখে কালো।

৫.

ছল-চাতুরি করে তুমি

বড় হতে পারো,

মনের ভালোবাসা তুমি

পাবে নাকো কারো।

৬.

যা-কিছু করো, যতো-কিছু করো

সাধনা তোমার চাই,

স্বপ্নের সৌধ গড়া তো যায় না

সাধনা ছাড়া যে ভাই!

৭.

প্রশ্ন করো, প্রশ্ন করো

প্রশ্ন করতে শেখো,

প্রশ্ন করতে ভয় পেয়ো না;

ও-মনে সাহস রেখো।

৮.

যুদ্ধ শুধুই ধ্বংস করে না

শিক্ষাও দেয় নিয়ত অপার,

ধ্বংসের খেলা তবুও থামে না;

শান্তির দাবি হোক দুর্বার।

৯.

শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারো তুমি

কোনো অন্যায় করে,

কিন্তু প্রকৃতি শাস্তি দেবেই

দু দিন আগে বা পরে।

১০.

তোমার বিবেক যদি

তোমাকে চালনা করে

সততা তোমাকে পথ

দেখাবেই হাত ধরে।

১১.

জ্ঞানী-গুণীদের অহংকার শোভা পায় না

বিনয়ে তাঁরা থাকুন অবনত,

অহংকারে অন্ধ হলেই তাঁরা

হারান তাঁদের আসল জীবন ব্রত।

১২.

তুমিই তো সেই সেরা শিক্ষক

যে তুমি নিয়ত দিবারাত্র,

পড়ানোর চেয়ে পড়ো বেশি বেশি

সদাই নিজেকে ভাবো ছাত্র।

১৩.

প্রকৃতির চেয়ে প্রিয় কিছু নেই

প্রকৃতিকে ভালোবাসো,

তাহলে তোমাকে করবে শ্রদ্ধা

ছোট্ট সে এক ঘাসও।

১৪.

অনুতপ্ত নয় যে মোটেও

ছোট অপরাধ করে,

বড় অপরাধ করে অনায়াসে

দু দিন আগে বা পরে।

১৫.

যারা চুরি করে দু-পকেট ভরে

ঘোর অপরাধী তারা,

তাদের চেয়েও বড় অপরাধী

চোরকে ধরে না যারা।

…………………………………

দন্ত্যস রওশন

খাওয়া

কিল খাই

ঢিল খাই।

হাওয়া খাই

ধাওয়া খাই।

চাটি খাই

লাঠি খাই।

বড় মিয়ার ঝাড়ি খাই

ফাটা বাঁশের বাড়ি খাই।

ধমক খাই

চমক খাই।

ঠেলা খাই

ঢেলা খাই।

ধরা খাই

পড়া খাই।

লাল ষাঁড়ের গুঁতা খাই

চরকা বুড়ির সুতা খাই।

গোল খাই

দোল খাই।

বকা খাই

ঝকা খাই।

মাথা খাই

জাতা খাই।

পেটে কোন খাওয়া নাই

ঘুরে ঘুরে হাওয়া খাই।

…………………………

রাশেদ রউফ

কাঁদছে মানবতা

মসজিদে সব কোরান শরিফ পরান ভরে পড়ে

কেউ শুনে যায়, কেউ বুনে যায় কেউ বা আমল করে।

চার্চে পড়ে শোনানো হয় পবিত্র বাইবেল―

শাণিত হন ছোট্ট থেকে উচ্চ জেনারেল।

বেদমন্ত্র ধ্বনিত হয় প্রতিটি মন্দিরে

কাঁসর ঘণ্টা বাজানো হয় ছন্দে ধীরে ধীরে।

ত্রিপিটকের শব্দে জাগে বৌদ্ধ বিহার জানি-

প্রচার চলে অহিংসা ও মানবতার বাণী।

লক্ষ কোটি মানুষ শোনেন ধর্মগ্রন্থ সব―

শুনেও কেউ মর্মকথা করেন অনুভব?

কে থাকে আজ সহিষ্ণু আর কে করে সম্মান

দুনিয়াব্যাপী খুনিরা সব চালায় মেশিনগান।

গাজার শরীর হাজার লোকের রক্তে রক্তে ভাসে

ইসরাইলের দানবগুলো মানব মেরে হাসে।

চালায় ওরা বিমান হামলা কে শোনে কার কথা

নারী শিশুর সঙ্গে এখন কাঁদছে মানবতা।

……………………………….

তপন বাগচী

চাই না যুদ্ধ

গাজায় যারা মারছে বোমা

মানুষ বলো তারা কি ?

যুদ্ধ দেখি বয়েই চলে―

পায় না বিবেক নাড়া কি!

নারী-শিশু মেরে যারা

অট্টহাসি করছে

খুনের দায়ে তারা শুধুই

পাপের ঝুলি ভরছে।

বিশ্বমোড়ল চুপ করে আজ

দাঁড়িয়ে দূরে হাসছে

গাজার বুকে রক্তনদী

মানুষ সেথায় ভাসছে।

চাই না কোনও বারুদ জ¦লুক

চাই না কোথাও যুদ্ধ

মানবতার মন্ত্রে মানুষ

কখন হবে শুদ্ধ!

…………………………

জগলুল হায়দার

পয়লা কথা

এই কথাটাই প্রথম বলি

এই কথাটাই পয়লা,

যুদ্ধ মানে কবর শ্মশান

মানুষ পুড়ে কয়লা!

এই কথাটাই প্রথম শোনেন

এই কথাটাই পয়লা,

খুনের নেশা কাটবে মোছেন

মনের যতো ময়লা।

এই কথাটাই প্রথম রাখেন

এই কথাটাই পয়লা,

যুদ্ধে ক্ষতি বুঝুক পাদ্রি

মোল্লা পুরুত গয়লা!

যুদ্ধ মানে ধ্বংস

যুদ্ধ মানে ধ্বংস সেটা

আরবরা খুব জানে তো

আশি বছর ধইরা তারা

সেই তিতা জের টানে তো।

(তুমগো কামান ট্যাংকে তারা

পাথর দিয়াই লড়েছে

শুমার কইরা দ্যাখো কতো

হাজার হাজার মরেছে।

সেই মরণে তোমরা তাদের

ঠেকাইলা পিঠ দেয়ালে

তার প্রতিফল ঘটলো এটা

ভাইবা দ্যাখো খেয়ালে।)

আশির কথা বাসি কইরা

মজছো তো স্রেফ নগদে

বলছো ওরা―‘মানুষ পশু’

ধ্বংস কইরা ওগো দে।

কারেন্টে মার পানিতে মার

ব্লকেড দিয়া ফালা তো

মরুক রোগী শিশু নারী

হোক না করুণ হালাতও।

হুঁশে ফিরো এবং শুনো

সবার খুনই লোহিত

তাইলে নিজের যুদ্ধ ক্ষুধা

নিজেই করো রহিত।

নইলে ইটে-পাটকেলে তো

জ্বলবে আগুন পোড়াতে

এই সমস্যার সমাধানে

হাত দাও সব গোড়াতে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা

মানলে যাবে টিকে তো

নয় তোমাদের সাধের স্বপ্ন

হইব শেষে ফিকে তো।

হক কথা

ঘিন্নাগুলা সিন্দুকে যাক

হিংসারা হোক বন্দী

যুদ্ধ মানে বেশিরভাগই

অস্ত্র বেচার ফন্দী!

প্রীতিগুলা পাখা মেলুক

হাসুক আলোকনন্দী

হক কথা ভাই আদমি সবাই-

হোক মানবিক সন্ধি।

হিংসা নয়

যুদ্ধ কেবল ঠেকলে ফরজ

যুদ্ধ প্রথম চয়েজ নয়,

তাইলে এবার আলাপ চলুক

এইছাড়া আর নয়েজ নয়।

যুদ্ধ কেবল ঠেকলে ফরজ

যুদ্ধ প্রথম চয়েজ নয়

প্রেম প্রীতিকে পাশ-ঠেলে তাই

হিংসা ঘৃণার ভয়েজ নয়।

……………………………..

জুলফিকার শাহাদাৎ

ফিলিস্তিনিদের জন্য

চে

ইস্রাইলে এসে এবার একটু হাওয়া দে

হিটলারে যা রাখলো বাকি

তার বেদনায় জ্বলতে থাকি

মরছে শিশু ফিলিস্তিনে

দেখবে ওদের কে ?

চে

ইস্রাইলে এসে এবার একটু হাওয়া দে।

রানতিসি খুন, খুন ইয়াসিন

রক্তে ভাসে হামাস

তুই যদি ফের ফিরে এসে

একটি তুফান নামাস

সেই তুফানে ইহুদিদের

পা গুঁড়িয়ে দে

চে

ইস্রাইলে এসে এবার একটু হাওয়া দে।

ঘরের চালে পড়ছে বোমা

পড়ছে রকেট মাথায়

রক্ত আমার উল্কা হয়ে

বুকের ভেতর তাতায়

সেই রক্ত বিলিয়ে দিতে

সঙ্গে আমায় নে

চে

ইস্রাইলে এসে এবার একটু হাওয়া দে।

…………………………

মো. সৈয়দুল ইসলাম

ইসরায়েলি বর্বরতা

আকাশ থেকে বোমা ফেলে

করছে গাজা ধ্বংস,

নেতানিয়াহু হারামজাদা

কোন জালেমের বংশ।

রকেট হামলা বোমার আঘাতে

পুড়ছে বাড়ি গাড়ি,

মরছে শিশু হাজার হাজার

পুরুষ আরো নারী।

এদিক-ওদিক ছুটছে সবাই

প্রাণনাশেরই ভয়ে,

নির্মম নিষ্ঠুর এই বর্বরতা

কেমনে যাবে সয়ে।

বিশ্ব চোখ আজ অন্ধ বুঝি

দেখেনি করুণ দৃশ্য,

ইসরায়েলের বোমার আঘাতে

হয়েছে গাজা নিঃস্ব।

হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান

আমরা মানুষ শ্রেষ্ঠ,

মানুষ হয়ে মানুষ হত্যায়

করছি কাজ নিকৃষ্ট।

………………………

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button