আর্কাইভকবিতা

কবিতা

নাসির আহমেদ

তোমাকে বিস্ময় লাগে

(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে)

পদ্মপাতা ভাসমান অথই দিঘির জলে, দেখি

সাপ আর পদ্মফুল খেলা করে কবির সত্তায়!

মনে পড়ে পদ্মগোখরো হিংসা নয় প্রেম

অথচ হৃদয়ে বাজে অগ্নিবীণা তোমার দ্রোহের!

মৃত্যুক্ষুধা কী ভীষণ বিষণ্নতায় ভ্রাম্যমাণ

তুমি তো বাঁধনহারা নতুনের গানে উন্মাতাল!

মৃত্যুঞ্জয়ী তুমি প্রেমে আর দ্রোহে নিত্য চিরকাল।

তাই তো হাসতে পারো আগুনে বসেও পুষ্পহাসি!

গভীর বিরহে তপ্ত অশ্রুর ভেতরে তুমি আছো

ক্রোধের বিষের বাঁশি সুর হয়ে বাজো দুঃসময়ে।

মহান সাধক তুমি নিজেরই ভবিষ্যৎ সুফিধ্যানে জানা!

অকালে থামবে বাঁশি থামার আগেই বলে গেছো!

বাঁশের বাঁশরী আর রণতূর্য একসঙ্গে কী করে বাজালে!

দ্রোহের আগুনজ্বলা হৃদয়েও এত প্রেম, এত অভিমান!

চিরবঞ্চিতের পাশে আশাজাগানিয়া গান তুমি

প্রতারক ধর্মচোর উৎকণ্ঠ তোমার ভয়ে আজও কেঁপে ওঠে।

দোলনচাঁপার গন্ধে দখিনা বাতাসে আজও আসে

মানবিক সেই প্রেম গানের খেয়ায় ভেসে ভেসে,

যে প্রেমে মহান তুমি সর্বধর্মে শ্রদ্ধা অফুরান

নারী ও প্রকৃতি ভক্ত তোমার কণ্ঠেই তাই

গজল ও আগমনী গান!

জীবনের শেষ লেখা ‘কবির মুক্তি’তে তুমি আছো

মানবমুক্তিতে তুমি চির প্রেরণার অনির্বাণ বাতিঘর!

…………………………..

হাসান হাফিজ

ফিলিস্তিন : বিপ্লবের পরম্পরা

রক্তপায়ী পশুদের নৃশংস চারণভূমি কেন তুমি ফিলিস্তিন!

মানবতা যেখানে নিহত হচ্ছে নির্বিচারে প্রতিদিন প্রতি পল

দীর্ঘশ্বাস অশ্রু কান্না শিশু ও নারীর রক্তে ভেসে যাওয়া জনপদ

রুখে তুমি দাঁড়াচ্ছ অনন্ত জেদ স্বপ্ন আর প্রত্যয়ে সাহসে

ফিলিস্তিন তুমি হচ্ছো প্রকৃতই অমিত শক্তির দ্যুতি জ্বলন্ত প্রতীক

বিশ্বের বিবেক নীতি নৈতিকতা নিত্যদিন লাঞ্ছিত যেখানে

জালিমের দম্ভশক্তি আস্ফালন প্রকাশ্য ও প্রবল যেখানে

রক্তের অক্ষরে লেখা অদম্য অপরাজেয় বীরের জননী তুমি

কোনোদিনই আপস করার নও মাথা নোয়াবারও তুমি নও

চাই দৃঢ় প্রতিশোধ একই সঙ্গে জিগীষা ও ইস্পাতকঠিন ঐক্য

ছিনিয়ে আনতে হবে বজ্রচেরা আলো মুক্তি প্রতীক্ষিত লালভোর

আরো প্রাণ আরো স্বপ্ন অগণন রুধিরের স্রোতধারা মিলে

সুনিশ্চিত করবেই জানি ঐকতান মনুষ্যত্ব পুষ্পের বিকাশ

জীবনের জয়গান আবারও ছন্দিত ঝঙ্কৃত হবে সত্য ও সুন্দরে

ভগ্নস্তূপে পুনর্বার জেগে উঠবে বীরকন্যা ফিলিস্তিন মহিমা তোমার…

…………………………….

মাহমুদ কামাল

সেই ভূমিকায় খুনি

কত সহজেই মৃত্যুর হাতছানি

ঘরের ভেতরে রয়েছি তবুও জানি

মূল্যহীন এই জীবনের টুঁটি চেপে

মধ্যপ্রাচ্য কথা বলে মেপে মেপে

দুপুর ক্রমশ ঢেকে যায় নীল বিষে

সুবিধাভোগীরা একাকার মিলেমিশে

সহসা রোদের দেখা মিলবে না ভাই

ধর্ম আমাকে সুরক্ষা দেবে না, তাই

মানুষ এবং মানুষের কথা বলি

পেছনে তাকাও দিনগুলি রাতগুলি

মনে কি পড়ে না মৃত্যুশিবির দিনের

মনে কি পড়ে না নাৎসি এন্টি-ম্যানের

আজ তোমরাই সেই ভূমিকায় খুনি

মৃত্যুর মুখে আমরা ফিলিস্তিনি।

…………………………..

রেহমান সিদ্দিক

চীনের বাঁশির সুর

(বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে)

চীনের বাঁশির সুর শান্ত করে আমার এ মন                                              

চোখ বুজে, কান পেতে শুনি সুধা-সুরের বর্ষণ              

কে বাজায়? আমার মতোই যার দুঃখ আছে, সে কি?

তার নাম সারাক্ষণ মনের খাতায় আঁকি, লিখি               

পূর্বপুরুষের নামে সে বাজায় সকালের রাগ                

ডেকে আনে শান্তভাব, মুছে দেয় অতীতের দাগ           

মন থেকে সরে যায় সব ক্লান্তি দূর থেকে দূরে              

দুঃখদের ভোলে আহা এইভাবে মল্লারের সুরে                                     

বাজে সুখে মনবাঁশি-প্রতিধ্বনি পাহাড়ের ঢালে               

সবুজের সাথে বলে হৃদিকথা সায়াহ্নের কালে  

উড়ে আসে বকমেঘ ডানা মেলে হঠাৎ নিকটে                

বৃষ্টি হয়ে ঝরে মাঠে, ঘাটে আর হৃদয়ের তটে            

এই সুর পৌঁছে যায় খুব দ্রুত-ঘুমে, জাগরণে                                 

বাজনাটা গাঁথে গিয়ে অগণন মানুষের মনে             

………………………

আইউব সৈয়দ

যুদ্ধময় প্রতিজ্ঞা

প্রবীণ  আলোর মতো

ঝলসে ওঠে স্মৃতিভুক্ত চিৎকার, মুক্তিকামী প্রতিবিম্ব

পুঁতে ফেলা গণতন্ত্রে দুষণে দুঃসহে ক্লান্ত।

ক্ষেপণ করা আঁতেলপনা

চিরায়ত দর্শনেতে থেঁতলে যায় গাজার স্বপ্ন;

ক্রমাগত দাউ দাউ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে

মানবমুক্তির গান আর রক্তপাতে খলখলে হাসছে

উলঙ্গ উপকণ্ঠ। সেই সাথে মাটির নাভি ছোঁয়ানো মৃতদেহ

জায়নামাজে আর্তনাদরত।

ওহ! যেনবা বিরামহীন রক্তবয়ান যুদ্ধনীতি।

এই আবেগী বিষয়

মেঘের ঔরসে ভিড় করে বিশ্ব জনপদে, বাজি রাখে

মিসাইলে; বৃষ্টিঝরা অন্ধকারে ঘোষিত করে

শতাব্দীর মূল দাবি― শিশুর বাচনভঙ্গি,

অপেক্ষা নয় তবে বৃষ্টির বারুদ হয়ে বিস্ফোরণে ছেয়ে যাবে

প্রিয় মাতৃভূমিতে।

তারপর রৌদ্রময় রথে এনে দেবে

অনুগত অধিকারের স্বরচিত মধুময় ভোর…

…………………………..

তমিজ উদ্দীন লোদী

ফিলিস্তিন জ্বলে উঠছে বিশ্বময়

ফিলিস্তিন আজ শুধু এক ভূখণ্ড নয়― 

এক জ্বলন্ত শব্দ, এক প্রতিরোধের নাম, 

বুকের গহিনে ধ্বংসস্তূপের গল্প, 

তবু মুখে তার জয়ধ্বনি অদম্য। 

নীলাকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠে, 

কিন্তু তার নিচে লাল হয় ইস্পাতের গান, 

শিশুর হাসি আর মায়ের চোখের জলে 

মিশে যায় বিশ্বের বিবেকের ক্রন্দন। 

প্যারিসের দেয়ালে, লন্ডনের পথে, 

ঢাকার মিছিলে―

একই স্লোগান: “ফিলিস্তিন মুক্ত হোক!”

রক্তের রঙ আজ ছড়িয়েছে মানচিত্রে। 

সাম্রাজ্য ভাঙে, শাসন টলে, 

ট্যাঙ্কের গর্জনে ডুবে যায় সত্য, 

তবু ফিলিস্তিনের জ্যোতি নিভে যায় না, 

কারণ পৃথিবীর হৃদয় আজ তার সাথে। 

জ্বলে উঠো, জ্বলে উঠো, হে মাটি! 

তোমার লড়াই আজ সীমানা পেরিয়েছে― 

বিশ্বময় জাগরণের আগুনে 

ফিলিস্তিন আজ এক জ্বলন্ত কবিতা।

………………………

আমিনুল ইসলাম

মই

স্বপ্নের মই বেয়ে ওপরে উঠেছে মতিন

যদিও সেটা নীল আকাশ নয়,

তবু বিচ্ছিন্ন হয়েছে মই হতে

কিন্তু কখন যে বিচ্ছিন্ন হয়েছে,

খেয়াল করার খেয়াল ছিল না;

তার বাসনা―এখন একবার সেই

স্বপ্নের গোড়ায় ফিরে যাবে; কিন্তু

উঁকি দিলে মইটা চোখে আসে না;

চোখ ভরে উঠে আসে নতুন স্বপ্নের সিঁড়ি!

……………………..

ফকির ইলিয়াস

পতাকাবিহীন প্রভাতেরা

কিছু কিছু ভোর, পতাকা ছাড়াই নির্ধারণ করে নেয়

তাদের নিশানা। কিছু কিছু আলো, অন্ধকারকে

ভালোবাসবে বলে ক্রমশ এগিয়ে যায় হেরা-গন্তব্যে।

কিছু কিছু মানুষ দৌড়াবার কৌশল ভুলে দাঁড়িয়ে থাকে

বারুদের মুখোমুখি। হাসে এবং শিশুদের মুখে খাবার

তুলে দিতে দিতে, হাতে ধরে রাখে একটি মোমের শলাকা।

পৃথিবীতে বেদনাগ্রহের বাসিন্দারা জানে না, স্বাধীনতা

একটি শিকলের কালো টুকরোর নাম! এটি শাদা হলে

শান্তির পায়রাগুলো ওড়ার জন্য সমান আকাশ পেতো!

না, সেই সুযোগের পরিচ্ছেদ

                              জাতিপুঞ্জ এঁকে রাখতে পারেনি।

নিরাপত্তা পরিষদের ‘শান্তিকর্তা’রা উত্তোলন করতে

পারেননি গাজার অসহায় শিশুদের শবদেহের ওজন!

শাদা কাপড়ে মোড়া আমরা যে গোলাপদের

                          প্রতিদিন চিরবিদায় জানাই―

আত্মপ্রতারকের মুখোশের আড়ালে নিজেদের

লুকিয়ে রাখতে রাখতে

     মনে হয়, আমরাই যেন আমাজনের জঙ্গলে

                         পোড়া কোনো আণবিক ছাই!

………………………

মোস্তফা তারিকুল আহসান

হত্যাবিষয়ক ফুটনোট

প্রতিটি হত্যার রঙ আলাদা, আলাদা মৃত্যুরও রঙ, তুমি তাকে সহজে বর্ণনা করতে পারো না কবি; তোমার স্নায়ু ছিঁড়ে যেতে পারে, বিবমিষা হতে পারে, তুমি গুলিয়ে ফেলতে পারো সবকিছু হাজারো মৃত্যুর বিভীষিকা দেখে। জারা নামের মেয়েটি চিৎকার করে ডাকছে ওর বাবাকে, সে তার বিক্ষত চোখ নিয়ে বলছে, আপনারা দেখুন গাজায় কীভাবে মারা যাচ্ছি আমরা : জিবরান খুঁজছে তার মাকে, তার বুকটা ঝাঁঝরা হতে হতে থেমে গেছে অলৌকিকভাবে, কংক্রিটের স্তূপে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে সে আর খুঁজতে সাহস পায় না। নাফিস খোঁড়া পায়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা বাটি নিয়ে, একটু খাবারের আশায়, সে হত্যাযজ্ঞের সাথে মিশে এক শিল্পীর মডেল হয়েছে। তেল আবিব থেকে যে ক্ষেপণাস্ত্র  প্রতিদিন মানুষ হত্যা করতে আসে, তাদের লক্ষ্য জানো কবি ? এখন মানবতা অথবা সভ্যতাকে হত্যার প্রতিশব্দ ভাবতে পারো তুমি। না খেতে পেয়ে মরা শিশুরা হত্যার চেয়ে কম কষ্ট পায়নি জেনো; জীবিত বাকিদের ভূমধ্যসাগরে ডুবিয়ে মারার দরখাস্ত করো। পৃথিবী এ যাবৎ বয়সে এত সুষ্ঠুভাবে বাধাহীন হত্যা আগে কখনও দেখেনি। হত্যার পরিসংখ্যান করো; তুমি তো জানো, এই ভূমিতে সবাই মারা যাক সে বিষয়ে সব শেয়ালেরা একমত। তুমি খাতা-কলম নিয়ে ফুটনোট নাও, কত মানুষ কতভাবে হত্যা হলো, অথবা হবে। কোনও প্রার্থনার প্রযোজ্য নয় এখানে, শুধু ফুটনোট রাখো, কেউ যদি ভবিষ্যতে হিসাবটা নতুন করে নিতে পারে।

………………………

শোয়াইব জিবরান

বসন্ত আসছে, জেসমিন

ঋতু ও ইতিহাস চক্রাকারে ফেরে

তুমি জানো।

বসন্ত আসছে, জেসমিন।

সন্তান তোমার মারা গেছে বর্ষায়

ঝড় ও বজ্রপাতে।

আসছে শরতের সাদা সাদা মেঘে ফিরবে তারা

দুঃখ করো না।

তারা মিশে থাকবে হেমন্তের মাঠের শস্যের বাতাসে

তারা মিশে থাকবে শীতভোরের শিশিরকণায়

তারা ফুটবে শিমুল-পলাশের ডালে ডালে লাল হয়ে

বসন্তের দিনে।

বসন্ত আসছে, জেসমিন।

…………………….

টোকন ঠাকুর

ফিলিস্তিন

দুনিয়ার মানচিত্র থেকে

মুছে ফেলা যায় ফিলিস্তিন!

আমার বুকের মধ্যে জেগে থাকে

নতুন ভূখণ্ড―

ভূখণ্ডের নাম ফিলিস্তিন

আমারই বুকের মধ্যে

জমা হচ্ছে অনাগত দিন

ক্রমশ ভারি হয় রক্তের ঋণ―

আমার দু চোখ জুড়ে

ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন

………………………..

তুষার কবির

চূড়া

কংলাক পাহাড়চূড়ায়

এই টংঘর―

ভোরের আলোর রেখা

দেখা দিতেই

মেঘের মাস্তুল ছিঁড়ে

এখানে আছড়ে পড়ে

হাওয়া হরিৎ গান!

পাখিদের সারগাম

বেজে ওঠে সাজেকের

ছড়ানো পাহাড়ে―

দূরের কিন্নরী চিরে

জেগে ওঠে

তাঁবুর ভেতরে থাকা প্রাণ!

…………………………..

সৈকত হাবিব

একদিন, দূর মহাশূন্যে

কোনও একদিন, একদিন নিশ্চয়ই, উড়বে তুমি দূর দূর মহাশূন্যে

যাবে কোনও অন্য বিশ্বলোকে, সজ্ঞানে, মৃত্যুকে তুচ্ছ করে

তোমার এই পৃথিবীশিকড় দিয়েছে তোমাকে এমন মগজ

দিয়েছে এত বোধ, জ্ঞান, স্বপ্ন, আত্মবৈভব

এবং                             মনোডানা

তুমি আর তোমার সীমানা জানো না…

কিন্তু আজও তুমি হত্যার বিকল্প কোনও কানুন চেনো না

……………………

শরাফত হোসেন

নম্র বিনয়ী হও

কতো কঠিন সময় পার করেছেন মহানবী

কথার শব্দ-চয়নে কখনও ছিলেন-না কঠিন

ধৈর্যের পরাকাষ্ঠায় সদ্ব্যবহারে বাজান বীণ

সততার মর্মমূলে দাঁড়ানো প্রাণ,―মহান কবি!

যুদ্ধ বিগ্রহের পরে তিনি থাকেন সহজ শান্ত

কুয়াশা-ভরা-মনটি ভেসে ওঠেনি সুন্দর মুখে

কন্ঠে সাহসী বাণীতে সবাইকে রেখেছেন সুখে

শরীরে হোলেও মনে কখনও হননি রণক্লান্ত!

পরাস্ত বন্দীর প্রতি নবীজি ছিলেন নমনীয়

কাক নয় কোকিলের সুকন্ঠে করেন বাক্যালাপ

রূঢ় স্বরে মিথ্যাচারে কখনও করেনি অপলাপ

সাহাবাদের বলেন অসুস্থ বন্দীর খোঁজ নিয়ো!

সঙ্গী-সাথীরে-বলেন তোমরা নম্র বিনয়ী হও

সৃষ্টিরসেরা মানুষ হ’য়ে সৌহার্দে সৌজন্যে রও!

…………………………..

সিরাজুল হক সিরাজ

দাজ্জাল

ঘৃণিত দাজ্জাল রক্তখোর চোখ

অজস্র ফোরাত জ্বলন্ত শিরায়

পৃথিবী দেখেনি এমন দুর্মুখ

বেজন্মা হাঙর নীল দরিয়ায়

জঘন্য পিশাচ মৃত্যুপুরী আনে

অসভ্য ইহুদি কী দেখাতে চাও

আগুন দিয়েছো মনুষ্যবাগানে

একদা তুমিও হবে যে উধাও

খোদার কসম পাবে না আঁচান

প্রকৃতি জানে না ক্ষমার জোয়ার

দ্রুতই জাগবে মানবিক চাঁন

ভেঙেচুরে যাবে খুনির দুয়ার

গাজায় উড়বে আবাবিল পাখি

রোদ ও জোছনা হবে মাখামাখি

……………………….

নিলয় রফিক

ধোঁয়ায় উড়ছে দেহ আমার স্বজন

পবিত্র শেকড়ের বুকে আগুনের ফণা

সুগন্ধি বাগানে আজ রক্তের কাফন

জোড়াহাত প্রার্থনায় অঝোরে রোদন

ধোঁয়ায় উড়ছে দেহ আমার স্বজন

অসভ্য নেতানিয়াহু নিষ্ঠুর খাদক

শব্দের শিরায় গাথা ঘৃণিত ময়লা

থুথু দিচ্ছে পৃথিবীর সুন্দর মানুষ

প্রকৃতির আদালতে পালাবে কোথায় ?

ফিলিস্তিনের শান্তিবোমা মানবিক আলো

ভাঙ্গাহৃদয় বিরহে দ্রোহের একতা

তরঙ্গের উন্মাদনা ইলহামের ঘ্রাণ

জয়ের পথে স্বদেশ, পাখির জীবন।

………………………..

সাইয়িদ মঞ্জু

যাপনের ধ্বনি

আমার কোথাও

আর কোনো সিঁড়ি নেই

এই মাঘ শেষে প্রচণ্ড শীতের পূর্ববাস

জানি—

অভিমানী বর্ষা ঠিক খুঁজে নেবে, কোনো এক

নদীর বুকে আশ্রয়

এমনি বসন্ত জনমভর কি থাকে!

কী-সুন্দর সিঁড়ি ওঠে যা-ও ছুঁয়ে দেখ আসমান

মনে রেখো দেখা হবে একদিন আগরবাতির ঘ্রাণে

কার আগে কে কিনবো বাড়ি মাটির শহর

এটুকু জানি না শুধু সুনিশ্চিত…

……………………….

মেহনাজ মুস্তারিন

অপেক্ষার পথ ধরে হেঁটে চলি

একটানা অপেক্ষার গন্ধ মস্তিষ্কের শিরায়

ধূপ-ধোঁয়ার মতো জ্বলছে, আড়ালে দেখি,

মা-বাবার ছবির পাশে তোর ছবি, আপনা দোলায় দুলছে!

আমি অপলক তাকিয়ে থাকি―

বাবা-মা তো আর ফিরবে না! কেন যে চলে যায়! 

কেন যে আর ফেরে না!

কিন্তু তুই? তোর ছবিটা কী যেন বলতে চায়, ঠোঁট ফাঁক করে

সেই যে চারপাশ অন্ধকার নামিয়ে চলে গেলি―

এরপর কত শত বাতি জ্বালিয়েছি,

নিভিয়েছি, আবারও জ্বালিয়েছি। অমানিশা কাটে না।

মুছেছি চোখের জল, কতবার, তারপর হেসে উঠেছি! ভয়ংকর হাড় কাঁপানো কোনও শব্দে

কখন যে সকাল হয়, কখন যে রাত নেমে আসে!

প্রদীপের আলোয় চকচক করে তোর চোখ, মুখজুড়ে শিশু হাসি! 

আবদার যতো ঝরে পড়ে রক্তাক্ত শার্টের বোতামের কিনারে!

তোর বারবি ডল চোখ ভাসিয়ে বর্ষা আনে!

আমি আর শূন্যতা ভিজতে থাকি, ভিজতে থাকি…!

তখনো তোর শিল্পরূপের ধোঁয়া-ধোঁয়া আর্তি  বিড়বিড় করে বলে,

কাঞ্চনমাখা রোদ্দুরে নস্যি রঙের মালিন্যে আমি ফিরবো দেখো,

আমি ফিরবো! নিয়ন্ত্রণরেখার সীমানা ভেদ করে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে আমি ফিরবো

পোড়ামাটি ছিন্নভিন্ন পতাকার স্বীকৃতি হাতে অনিন্দ্য সংলাপে আমি ফিরবো

চোখ খোলা রেখো, তোমরা চোখ খোলা রেখো।

…………………………

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button