
ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকে গ্রামবাসীর, যে বা যারা দেখে। সবার চোখে পড়েও না। এতটা ভোরে এই জল জংলা আর গ্রাম ঘেঁষে চলে যাওয়া অগভীর খালটির পাশে যাওয়ার তেমন প্রয়োজনই কারও পড়ে না। খাল ঘেঁষে হাইওয়ে রাস্তা। খোদ রাজধানীতে গিয়ে থেমেছে। দূর দূরান্ত থেকে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট গাড়িগুলোর রাজধানীতে যেতে হলে আর কোনও উপায় নেই বলে রাস্তা ধরে যায়। হাজার হাজার যাত্রী কারও হয়তো প্রয়োজনই পড়ে না লাগোয়া গ্রামটি এবং এর মানুষগুলোর কথা ভাবার।
এক জোড়া নর-নারী প্রতিদিন ভোরে রিকশা করে খাল জংলার দিকটায় আসে। এদিক-ওদিক কী জানি খোঁজাখুঁজি করে, আবার দিনের আলো ফুটবার আগে আগে চলে যায়। একদিন দুদিন, একজন দুজন। যাদের নেহাৎ প্রয়োজন আর বাধ্য হয়ে সাতসকালে হাইওয়েতে উঠতে হয়, তাদের চোখে পড়ে ব্যাপারটি। বেখাপ্পা, বেমানান আর বিস্ময়কর ঠেকলেও সবার তখন রাজধানীতে যাওয়ার তাড়া। তাড়া আছে বলেই না মাটি-সুড়কির পথ ধরে ভোরের আলোর আলস্য ঝেড়ে ফেলে বিছানা থেকে এই হাইওয়ে পর্যন্ত আসা। এক জোড়া অচেনা নর-নারীকে দেখে দেখে থেমে পড়লে তাদের জরুরি প্রয়োজন ব্যাহত হয়। ফলে কেউ দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে না। তবে মুখে মুখে মোটামুটি গ্রামের সবার জানা হয়ে যায় দুজন নর-নারী প্রতিদিন ভোরে এখানে এসে কী যেন খোঁজে। দিনের আলো ফুটলে সংসার আর জীবিকার ব্যস্ততায় সবাই বিষয়টি ভুলে যায়। গভীর রাতে আবার ঘুমাতে গেলে হয়তো করিমন বিবির মনে পড়ে, আজ সকালেও এরা এসেছিল, পাল পাড়ার নিতাই দেখেছে। স্বামী জমির আলির কাছে আলগোছে প্রশ্ন করে, আচ্ছা এরা কারা খবর পাইছেন কিছু ? প্রশ্নের গায়েই এমন গুরুত্বহীনতা লেগে থাকে যে উত্তর মোটেই জরুরি নয়। জমির আলির দুনিয়ার কাজ, আলুর দাম পড়ে গেছে, ক্ষেতের আলু বেচে হয়তো উৎপাদনের খরচই উঠবে না। মাথার উপর ঝুলে আছে এনজিওর কৃষি ঋণ। কী দিয়ে কী শোধ করবে ভেবে কূলকিনারা পায় না সে। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। এরা কারা খবর নেওয়ার সময় সুযোগ কই তার ? স্ত্রীকে একটা ধমক দেয়, চুপ কইরা ঘুমাও। দিগদারি কইরো না। মাইয়া লোকের কাম নাই, খালি আজাইরা চিন্তা। জমির আলির ধমকে প্রসঙ্গটি যেভাবে চাপা পড়ে যায়, অনেকের আলটপকা আলোচনাতে তেমনই গুরুত্বহীন হয়ে যায়।
যেমন ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা আব্দুল হাইয়েরও চোখে পড়ে এক জোড়া নর-নারী কী খোঁজাখুঁজি করছে। না এরা গ্রামের কেউ নয়। চিনে নাকি কেউ ? হাইওয়েতে উঠতে উঠতে আব্দুল হাইয়ের আসন্ন প্রয়োজনের ভিড়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য দৃশ্যটি হারিয়ে যায়।
সারারাত বমি করার পর ভোরের দিকে এম্বুলেন্সে করে আদম আলিকে ঢাকার ক্লিনিকের দিকে রওয়ানা হওয়ার সময় আদম আলিও ঝাপসা চোখে দেখে এক জোড়া নর-নারী কী যেন খোঁজে। উঁচু-নিচু স্পিড ব্রেকারে হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সে ভুলে যায় অচেনা নর-নারীর কথা। এভাবেই প্রতিদিন ভোরে এক জোড়া নর-নারীর ঘোরার উদ্দেশ্য অনুসন্ধানের কথা ভুলে যায় গ্রামবাসী।
২.
রাত-বিরাতে একাই বের হয় শাবনাজ। খোলা বাড়ির পেছন দিকটার শেষ মাথায় এ মাথা ও মাথা গ্রামে সবাই সবাইরে চিনে। বাড়ির শেষ মাথায় বাঁশঝাড়ের ঝোঁপ। সেখানে বাঁশবেতের বেড়া আর টিন মিলেমিশে একটা ছাপড়া। পেছনের দরজা খুললেই ছাপড়ায় যাওয়া যায়। সেখানে যেতে আবার কাউকে সাথে নেওয়া লাগে নাকি। প্রতিদিন ভোরে একবার সেখানে যাওয়া নিত্যকর্ম তার। অথচ আজ সেখান থেকেই মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় শাবনাজকে।
শাবনাজ প্রথমটায় বুঝে উঠতে পারে না ঠিক কী হতে যাচ্ছে। মুখ চেপে ধরলে সে বুঝতে পারে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। প্রাণপণে চিৎকার করতে চায় সে। কেউ কণ্ঠনালি চেপে ধরে। দুজন দুপাশ থেকে দুই পা আর দুজন দুপাশ থেকে দুই হাত ধরে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে শাবনাজকে নিয়ে এমন দ্রুত গতিতে হাঁটে যা দৌড়ের নামান্তর। কেউ একজন চোখ দুটো বেঁধে দেয় শক্ত করে। কেউ মুখ বেঁধে দেয়। শাবনাজ আর কিচ্ছু দেখতে পায় না। না ওকে নিয়ে যাওয়ার গন্তব্য, না লোকগুলোর চেহারা। লোকগুলো শাবনাজকে নিয়ে দৌড়ায়।
ঝোঁপ জংলা খালের পাশে ঝপাৎ করে ফেলে ওকে যেন আবর্জনার বস্তা। একজন টেনে ছেঁড়ে পরনের জামা। নখের আঁচড়ে জ্বালা করে বুক-বাহু-পেট। প্রচণ্ড যন্ত্রণা। একদিন নাগা মরিচ ছিঁড়ে যে যন্ত্রণায় সারাদিন কেঁদেছিল সে, তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা। আরেকজন জোর করে খুলতে থাকে ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট। প্রাণপণে আটকাতে চায় শাবনাজ। মা শিখিয়েছে সেই কোন বয়সে, লজ্জা। সবার সামনে প্যান্ট খুলতে হয় না, বদলাতে হয় না। তখন থেকেই দরজা বন্ধ করে প্যান্ট পরে শাবনাজ। আজ এরা লজ্জা খুলে দিচ্ছে কেন, বুঝতে পারে না শাবনাজ। বাঁধা চোখ, বাঁধা মুখে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। কী করছে এরা ? এরা কতজন ? চোখ বাঁধার আগে দেখেছিল চারজন। এখনও কি চারজনই আছে ? ফিসফিসিয়ে কথা বলছে এরা, চারজন নয় মনে হচ্ছে বেশি হবে আরও। কী বলছে এরা। ভাবনা শেষ হবার আগেই কেউ একজন ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর। অসহ্য কষ্টে কঁকিয়ে উঠে শাবনাজ। ওর কষ্ট ওর ভেতর থেকে মুখ পর্যন্ত পৌঁছায় না, তার আগেই দ্বিগুণ ব্যাথা নিয়ে ঢুকে যায় বুক পেরিয়ে পেটে, পেট থেকে যোনিতে। আলো না ফোটা অস্ফুট ভোরে কারে দেখেছিলো শাবনাজ ? পুব পাড়ার দোলন ভাই না ? একদম তার মতো দেখতে। কী যন্ত্রণা কী যন্ত্রণা। আর কিছু মনে নেই শাবনাজের। মৃত্যুর মতো অচেতনতা গ্রাস করে শাবনাজকে।
যখন নিজেকে আবার চেতনে আবিষ্কার করে নিচের দিক তখন অসাড়, নাড়াতে পারছে না। যেন গ্রামের শেষ মাথায় বটগাছের নিচে পড়ে থাকা বিশালাকার পাথর দুটি বেঁধে দিয়েছে কেউ। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা। নড়বার শক্তি নেই। কেউ নেই আশেপাশে। কতক্ষণ শুয়ে আছে ও এখানে ? জানে না শাবনাজ। মা কি খুঁজছে তাকে ? মায়ের প্রিয় নায়িকার নাম শাবনাজ। মা কি ঘরে না পেয়ে চিৎকার করে ডাকছে তাকে ? শাবনাজ… শাবনাজ…। মা কি জানে শাবনাজ এখানে পড়ে আছে ? মা কি খুঁজতে খুঁজতে এই ঝোঁপ অবধি আসবে ? এদিকে তো মায়ের কোনও কাজ নেই।
কোমল একটা হাত হঠাৎ মাথায় বরফ ছোঁয়ায়। কে ? চোখের বাঁধন খুলে দেয় সে। হাতের বাঁধন, মুখের বাঁধন। শাবনাজ দেখে ফুটফুটে এক মেয়ে, তারই বয়সী, ধবধবে সাদা, লালচে-সোনালি চুল, পিঙল রঙের চোখ। কে মেয়েটি ? তাকেও কি শাবনাজের মতোই কেউ তুলে এনেছে এই খাল-জংলার পাড়ে ? মেয়েটির সারা গায়ে রক্ত। সোনালি চুলে চট বেঁধে আছে রক্ত। প্রচণ্ড কষ্টকে কণ্ঠে জমা রেখে শাবনাজ জানতে চায়, কে তুমি ? মেয়েটি থমকে যায়। খুব করে মনে করার চেষ্টা করে যেন। কে সে ? মনে করতে পারে না। কেবল মনে করতে পারে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ, রক্ত, ছিন্নভিন্ন কতগুলো দেহ…। নিরুত্তর মেয়েটি অসহায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শাবনাজের দিকে।
কোথায় যাচ্ছো তুমি ? অনেক কষ্টে উচ্চারণ করতে পারে শাবনাজ আবার। মেয়েটি এবার ঠিক এক মূহূর্ত দেরি না করে উত্তর দিতে পারে। আমি ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছি। আমি ঈশ্বরকে সব বলে দেব। এই রক্তের কথা, মৃত্যুর কথা। তুমি যাবে আমার সাথে ?
৩.
সারারাত ঘুম আসেনি। না শায়লার, না রেহানের না, না ঈশানের। ছুটি কাটানোর অবকাশ আনন্দ আর ফেরার পর একঘেয়ে দৈনন্দিনতার আগাম বিরক্তিতে তিনজনেরই তিনরকম মন খারাপ ছিল।
ডলফিন মোড় থেকে নয়টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস ছাড়তে ছাড়তে সাড়ে দশটা বেজে যায়। অদ্ভুত বাসের ভেতরটা। এরকম বাসে কখনও উঠেনি রেহান। কয়দিনই বা বাসে চড়েছে ওরা। ঢাকা থেকে বাড়ি যায় বছরে একবার। কোরবানি ঈদের সময়। ট্রেনই সহজতর।
বলতে গেলে এই প্রথম বাসে চড়া। রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে যে বাস দেখে মোটেই তেমন নয় বাসের ভেতরটা। আলাদা বিছানা, সবার আলাদা আলাদা। সাদা ধবধবে চাদর বালিশ। ঠান্ডা এসির বাতাস শীত ধরিয়ে দেয়। কম্বলও আছে গায়ে দেওয়ার। এমন বাসে প্রথম উঠা শায়লার।
শায়লার বিষণ্ন লাগে। গিয়েই সেই রান্নাবান্না গেরস্থালির জীবন। সকালে রুটির সাথে আজ ডিম নেই তো একটু চিনি দিয়ে দাও। চিনি দিয়ে রুটি খেতে একদম পছন্দ করে না ঈশান। রাতে রান্নার মাছ নেই তো আলুভর্তা করে ফেলো একটুখানি, কী আর করা! শুকনো আলুভর্তা দিয়ে মোটেই ভাত খেতে পারে না ঈশান। আবার মুখোমুখি হতে যাওয়া অভ্যস্ত এই বিরূপ অভিজ্ঞতাগুলোর কথা ভেবে শায়লার মনে হয় জীবনটা যদি কক্সবাজারের এই কয়টা দিনের মতো নির্ভার আর আনন্দময় হতো। কী জানি হয়তো বাকি দিনগুলো এমন ক্লান্ত বিরক্তিকর আর অসহনীয় বলেই এই দুয়েকটা দিন এত আনন্দের হলো।
রেহানেরও মনে হয় সকালে অফিসে গিয়ে সেই একঘেয়ে কম্পিউটার টেপা। বসের ধাতানি। একশোটা ভুল ধরে চাকরি খেয়ে ফেলার আতঙ্ক। জীবন কেন যে এমন কঠিন। স্কুলের গণিত পরীক্ষার তিন ঘন্টার মতো। সময় চলে যায়, ফলাফল মেলে না।
ঈশানের মনটাও বিষণ্ন। আবার হোমওয়ার্ক, সকাল-বিকাল স্কুল…।
কী আনন্দেই না গেল কয়টা দিন। হোটেলের ধবধবে সাদা বিছানা। সকালে হোটেলের ডাইনিং-এ যত ইচ্ছা নাস্তা। পাউরুটি, ডিম, কলা, খিচুড়ি, পরোটা, মাংস, ফল, স্যুপ। কী নেই। সব খাওয়াও যায় না।
এই কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতিও কম নয়। কত সঞ্চয়। কত মাস ধরে। ঈশানের ইচ্ছাতেই সবকিছু। প্রায়ই স্কুলে শুনে আসে বন্ধুরা যায়। শেষমেশ কতবার পরিকল্পনা করে, কতবার পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে, হিসাব নিকাশ মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত চলেই আসল এবার। টাকায় টান পড়ে যদি একটা সোনার আংটি লুকিয়ে বিক্রি করে এসেছে সোনার দোকানে পাশের বাসার শাহনাজ ভাবীকে নিয়ে। সঞ্চয়ের টাকা রেহানের হাতে তুলে দিয়ে এই টাকাটা রেহানের অজ্ঞাতে ব্যাগে নিয়েছিল শায়লা। ভাগ্যিস নিয়ে ছিল। ঈশানের লইট্টা ফ্রাই, ঘোড়ায় চড়া, মেরিন ড্রাইভ ধরে হিমছড়ি যাওয়া কত শখ যে পূরণ করা গেছে। রেহান অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল কেবল। হোটেল আর আসা-যাওয়ার খরচের বাইরে বাড়তি যে আরেকটা সমুদ্র সৈকতের খরচ থাকতে পারে আর শায়লা জাদুমন্ত্রে সেটা পূরণও করে ফেলতে পারে ভাবেইনি রেহান। গিয়ে হয়তো জেরা করবে, টাকাটা কোথায় পেল শায়লা। বিয়ের সময় ছোট চাচার দেওয়া উপহারের আংটিটা বিক্রি করে দিয়েছে, সত্যিটাই বলবে শায়লা। একটা মিথ্যে বলে আরও দশটা মিথ্যে জোড়া দেওয়া একদম পারে না শায়লা। দরকারই বা কী ? ছেলের সুখের জন্য, ছেলের আনন্দের বিনিময়েই না নিজেদের জীবনের আনন্দ।
৪.
শাবনাজ নিখোঁজ। দশ বছর বয়সের বাচ্চা শাবনাজ নিখোঁজ। হৈ চৈ পুরো গ্রামে। কখন কোথায় কীভাবে কেউ বলতে পারে না। শাবনাজের মা নিশ্চিত করে রাতে পরস্তাব সুঁচ রাজকুমারীর গল্প শুনতে শুনতে পাশেই ঘুমিয়ে ছিল সে। কোথায় গেল ? শত রকম ধারণা ডালপালা মেলে নানামুখী আলোচনায়। কেউ বলে জিনে তুলে নিয়ে গেছে। কাছের দরগায় মানত করে শাবনাজের মা। ওঝা আসে, বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়ে অশুভ আত্মা। হাপিস করে দিয়েছে মেয়েটাকে। কেউ কেউ এমন ফিসফিসও করে, বয়স কম হলে কী হবে! ডাঙর হইছিল দেখতে। দেখ কোন নাগরের হাত ধরে ভাগছে…।
সব কানে নিয়ে কিছু গিলে হজম করে, কিছু উগড়ে দিয়ে শাবনাজের বাবা থানায় ডায়েরি করে।
৫.
ভোরের দিকে চোখটা লেগে এসেছিল প্রায়।
আধো ঘুম আধো তন্দ্রায় চারদিকে হৈচৈ। মানুষ। চিৎকার। খালে কাদা পানিতে খাড়া ঢুকে আছে বাসটা শিকারির লক্ষ্যভ্রষ্ট তীরের মতো। বাসের ভেতর থেকে টেনেটুনে বের করে ছিল সম্মিলিত হৈচৈ।
হাসপাতালে প্রায় এক মাস। দুজন। শায়লা আর রেহান। ঈশানকে খুঁজে পায়নি কেউ। শায়লা পায়নি, রেহান পায়নি, উপস্থিত জনতা পায়নি। পুলিশ পায়নি….।
বাড়ি ফিরে বিপন্ন বিষণ্ন উদভ্রান্ত জীবন দুজনের। প্রতিদিন নিয়ম করে খালের পাড়ে যায় দুজন। নিশ্চয়ই ঈশান আছে। নিশ্চয়ই আছে। ও কি কর্পূরের মতো হাওয়া হতে পারে ? পারে কি একটা জলজ্যান্ত মানুষ অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে!
৬.
খালের পাড় থেকেই উদ্ধার করে আনে মেয়েটিকে। ঈশান। ঈশানই তো। ঈশানকে পাওয়া গেছে অবশেষে। দুজনের মুখ সন্তান ফিরে পাবার আনন্দে ঝলমল করে। একজন অপরজনকে বলে, বলেছিলাম না, পাবই আমরা ঈশানকে। দেখলে তো…
ভোর রাতে ঘুম ভেঙে ভীষণ খিদে পায় জিনিয়ার। আহারে খিদে।
শায়লা দ্রুত উঠে হরলিক্স বানায়। বিস্কুট, কেইক।
শাবনাজ দুধ-চিঁড়া খেতে চায়। চিড়ে তো ঘরে নেই। ভোররাতে রেহান যখন চিঁড়ে কেনার জন্য বাইরে যায় তখন শাবনাজের মনে হয় ভাগ্যিস সেই সোনালি চুলের মেয়েটার সাঙ্গে যায়নি তখন। গেলে এই ঈশ্বরের দেখা সে পেত কী করে!
সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ



