
বাড়ির তিন ভাইই ছিলেন সারেং। এই জন্য সারেং বাড়ি। বড়ভাই আমিনউদ্দিন বাংলা লিখতে পড়তে পারতেন। মেজো কফিলউদ্দিন তাও পারতেন না। তবু বড় ভাইয়ের কল্যাণে সারেং হয়েছিলেন। মালবাহী জাহাজ চালাতে চালাতে কোনও রকমে নাম দস্তখত করতে শিখেছিলেন। ছোট মন্তাজউদ্দিন ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন। সেই কারণে তাঁর বেশ অহঙ্কার ছিল। চালচলনে বেশ একটা দাম্ভিক ভাব। তবে বড় দুই ভাইয়ের তুলনায় তিনি তেমন সুপুরুষ ছিলেন না। উঁচু লম্বা ঠিক আছে। গায়ের রং ময়লার দিকে। স্বাস্থ্যও মোটামুটি। তবে আমিনউদ্দিন আর কফিলউদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত সুপুরুষ। ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা। গায়ের রং পাকা শবরি কলার মতো। চওড়া বুক। সরু কোমর। হাত-পা দেখলেই বোঝা যায় বলিষ্ঠতার অভাব নেই। মাথায় ঘন চুল। মুখে প্রাচীন আমলের পালের জাহাজে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া নাবিকদের মতো দাড়িগোঁফ। খাড়া নাক। ঠোঁট লালচে। চেহারা খুবই সুন্দর। সাদা ফতুয়া আর লুঙ্গি পরে, শীতকালে পায়ে পামশু আর কাঁধে আলোয়ান ফেলে বিয়েশাদি বা জেয়াফত খেতে গেলে লোকে অতিরিক্ত সম্মান করত। গ্রামের বিচার-সালিশেও বিশেষ মর্যাদা দিত। সারেং বাড়ি বলতেই এলাকার লোকের একটা সমীহের ভাব তৈরি হয়েছিল।
এসবের মূলে ছিলেন আমিনউদ্দিন সারেং। মা-বাবা বেঁচে থাকতেই চার বোনের দুজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে আমিনউদ্দিন বড়। তেমন জায়গা-সম্পত্তি বাবা রেখে যেতে পারেননি। পুরান বাড়িতে চাচাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হতো। বাড়িটা ছোট। তখনকার দিনে বিস্তর বাচ্চাকাচ্চা হত লোকের। ছেলেবুড়া, খোকাখুকি সব মিলিয়ে গিজগিজ করত সেই বাড়ি। আমিনউদ্দিন ছিলেন কর্মঠ মানুষ। মালবাহী জাহাজের খালাসি হয়ে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। তখন লোকে বলতো ‘কলিকাতা’। খালাসি থেকে সুকানি হলেন। কয়েক বছরের মধ্যে সারেং। বিস্তর কাঁচা পয়সা রোজগার করতেন। ভালো ঘরে বাকি দুই বোনের বিয়ে দিলেন। কফিল আর মন্তাজ যুবক হয়ে ওঠার পর সেই দুই ভাইকেও কাজ দিয়ে জাহাজে এনে তুললেন। পদ্ধতি ওই একই। খালাসি থেকে কালক্রমে সারেং। তারপর বিয়েশাদি, সংসার। জাহাজের কাজে সারা বছরই থাকতে হয় নদীতে আর বন্দরে। বছরে একবার মাসখানেকের ছুটি নিয়ে দেশে আসা। পরের বছর বাড়ি ফিরেই দেখেন স্ত্রীর কোলে শিশু। তিন ভাইয়েরই ঘর ভরে উঠছে কচিমুখের আগমনে। পুরান বাড়িতে আর থাকার জায়গা হয় না।
ততদিনে চকে মাঠে বিলে বিস্তর জমি কিনে ফেলেছেন আমিনউদ্দিন। তিনি পরিবারের কর্তা। ছোট দুই ভাইয়ের সঙ্গে মিলেমিশেই জায়গা-সম্পত্তি কিনতেন। তাঁর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তাঁর কথার ওপর কথা বলার ক্ষমতা নেই কারও।
তিন ভাইয়ের সংসারে মানুষ বাড়ছেই। বড় একটা বাড়ি এখন লাগেই। বাড়ির জন্য জমি কেনা হলো। এই অঞ্চলের বাড়িগুলো চক মাঠ থেকে সাত আট হাত, দশ হাত পর্যন্ত উঁচুতে তৈরি করা হয়। নিম্নাঞ্চল। বর্ষা থাকে প্রায় ছয় মাস। আর এত পানি! এত পানি! চক মাঠ ডুবিয়ে ওই অত উঁচু বাড়িগুলোতেও পানি উঠে যায়। সেজন্য বাড়ির ঘরগুলো হয় পাটাতন করা। শক্ত মোটা থামের ওপর কাঠের পাটাতন। ঘরে ওঠার জন্য থাকে কাঠের চার-পাঁচ ধাপের সিঁড়ি। বাড়ি বাঁধতে লাগে প্রচুর মাটি। সেই মাটির জন্য জমি লাগে। গৃহস্থলোক বাড়ি করার জন্য সেই হিসাবেই জমি কেনে। পুকুর কেটে মাটি তোলে। এক কাজে দুই কাজ। বাড়ি বাঁধা হলো, পুকুরও হলো। নাওয়া ধোয়ার কাজ তো হয়ই, মাছের অভাবও মেটে।
আমিনউদ্দিন সারেংও তাই করেছিলেন। সাত কানি জমি এক দাগে কিনে বিশাল একখানা পুকুর কাটলেন। পুকুরকাটা মাটিতে বাড়ি বাঁধলেন। তিন ভাইয়ের জন্য তোলা হলো তিনটি বিশাল বিশাল চৌচালা ঘর। প্রতিটি ঘরেই পাটাতন করা। নতুন ঢেউটিনের চালা চৈত্র মাসের রোদে নতুন পয়সার মতো চকচক করে। সমান তিন ভাগে ভাগ করা হলো বাড়ি। দক্ষিণের অংশ আমিনউদ্দিনের। পুব-উত্তরের অংশ কফিলের। আর পশ্চিম- উত্তরের অংশ মন্তাজের। উত্তর দিক দিয়ে বাড়িতে উঠতে হয়। সেখানে একটি বৈঠকখানা ঘর। এই ঘরের মালিক তিন ভাইই। এলাকায় বলে ‘বাংলাঘর’। সুন্দর সুন্দর রান্নাঘর আছে যার যার সীমানায়। ছেলেমেয়ের পড়ার ঘর আছে। বিশাল উঠোনটি জ্যোৎস্না রাতের মতো সাদা। পায়খানা ঘরগুলো যাঁর যাঁর সীমানার শেষ প্রান্তে। সেগুলোও দোচালা টিনের। কাঠের লম্বা সিঁড়ি দিয়ে পায়খানা ঘরে যেতে হয়। এসবই বনেদি বাড়ির চিহ্ন।
সারেং বাড়ি ততদিনে বনেদি হয়ে উঠেছে।
প্রত্যেক সারেংয়ের অংশেই গাছপালার বাগান। আম জাম তেঁতুল পেয়ারা বরই জাম্বুরার সঙ্গে নিম কদমের গাছ। গন্ধরাজ জবা মালতি বেলি ফুলের ঝাড়। পুকুরপাড় জুড়ে হিজল বরুনের গাছ। আমিনউদ্দিন সারেংয়ের বড় ঘরের দক্ষিণ দিকটায় প্রচুর আমের গাছ ছিল। পূর্ব দিকটায় রান্নাঘর। তার পিছনে গলাগলি করে আছে একজোড়া জামগাছ। পাতিলেবুর মতো বড় বড় জাম হতো। দক্ষিণের শেষ প্রান্তে ছোট আরেকখানা চৌচালা ঘর। পাটাতন করা। রান্নাঘরের দক্ষিণ পাশটায়ও ওরকম আরেকটা ঘর। সেই সব ঘরে বাড়ির বাঁধা কামলারা থাকে।
বড় সারেংয়ের ঘরে তখন এক মেয়ে আর মেজোজনের ঘরে এক মেয়ে এক ছেলে। ছোট জনের ঘরে বড় ছেলেটি মাত্র জন্মেছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে বড় দুই সারেংই বিপত্নীক হয়ে গেলেন। তখনকার দিনে সামান্য জ্বরজ্বারিতেও মানুষ মরত। দুই সারেংয়ের স্ত্রী সেভাবেই মারা গেলেন। দু’জনেই তখন জাহাজে। খবর পেতেও দেরি হলো। ছুটি নিয়ে বাড়ি এলেন। ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। তাদের গতি করতে হয়। সংসারে দেখভালের জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করা ছাড়া উপায় নেই। দুই ভাই তাই করলেন। দিনে দিনে দিন গেল।
আমিনউদ্দিন কফিলউদ্দিন দুই ভাইয়েরই দ্বিতীয় স্ত্রীরা ছোটখাটো। গায়ের রং অপরিষ্কার। তবে দুজনেই মানুষ হিসেবে চমৎকার। মুখে হাসিটি লেগে আছে। বড়জনের স্ত্রীর নাম মরিয়ম বিবি। তিনি খুবই বুদ্ধিমতি, বিচক্ষণ নারী। বাংলা লিখতে পড়তে পারতেন। আর কোরআন শরিফ পড়া তো তখনকার মুসলমান বনেদি পরিবারগুলোতে বাধ্যতামূলক। সারেংদের স্ত্রীরা প্রত্যেকেই কোরান শরিফ পড়তে পারতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সারেংরাও পড়তেন। বাড়ির ছেলেমেয়েদের শিশু বয়সেই কায়দা সিপারা পড়ে আরবি অক্ষর চিনতে হত। ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ার সময়ই কোরান শরিফ পড়তে শিখে ফেলত।
বছর বছর সন্তান হতো মরিয়ম বিবির। সেই সন্তানদের অধিকাংশই, কেউ জন্মের আগে, কেউ জন্মের পর পাঁচ-সাত দিন বেঁচে থাকত। শেষ পর্যন্ত দুই মেয়ে আর এক ছেলে জীবিত ছিল। ছেলেটি আট বছর বয়সে মারা যায়। কফিলউদ্দিনের ঘরে জন্মাল দুই মেয়ে আর তিন ছেলে। ছোট মন্তাজের ছেলেমেয়েরা সবাই বেঁচে থাকল। সাত ছেলে আর এক মেয়ে। বাড়ি বেশ জমজমাট। আমিনউদ্দিনের বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল এই গ্রামেই। কফিলউদ্দিনের মেয়ের বিয়ে হলো দূর গ্রামে। বড় ছেলে মফিজ কানে কম শোনে। লেখাপড়াও শিখেনি। জমিজমা চাষবাস গরু বাছুর নিয়ে সংসারী হয়েছে। অত্যন্ত বদরাগী মানুষ। বাপ আর সৎ মাকেও মান্য করে না। মান্য করে বাড়ির একজন মানুষকে। আমিনউদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম বিবিকে। তাঁকে সে ডাকে ‘চাচিআম্মা’। চাচিআম্মা যা বলে তাই শোনে। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি মনোমালিন্য করে প্রায়ই না খেয়ে থাকত সে। একদিন-দুদিন কেটে যেত। তার রাগ কেউ ভাঙ্গাতে পারে না। বউটি তারপর কাঁদতে কাঁদতে এসে মরিয়ম বিবিকে ধরত। মফিজ হয়তো তখন গ্যাট হয়ে বসে আছে দাওয়ায়। মরিয়ম বিবি গিয়ে তার হাত ধরলেন। ‘আর রাগ কইরা থাকিস না বাজান। ল, ভাত খাইতে ল।’ আর কোনও কথা নাই। মফিজ গিয়ে খেতে বসত।
সারেং বাড়িতে জটিলতা তৈরি হলো আমিনউদ্দিন গত হওয়ার পর। জায়গা-সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বহুবার বিচার-সালিশ হলো। এক শরিক মানে তো আরেকজন মানে না। জমির আইল এক হাত এদিক-ওদিক নিয়ে ঝগড়াঝাটি বিচার-সালিশ বসে যায়। বসতবাড়ির অংশ নিয়েও একই কাণ্ড। অবস্থা কখনও কখনও এমন হয়, তিন শরিকের কেউ কারও মুখ দেখে না। কথাবার্তা বন্ধ। বাড়ির বাচ্চাকাচ্চারা পর্যন্ত চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করে না। কথাবার্তা বলে না। অন্যপাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে যায়। এরকম কিছুদিন চলার পর দেখা গেল কফিলউদ্দিন মন্তাজউদ্দিনের পরিবারের মধ্যে ভাব হয়ে গেছে। খুব খাতির দুই পরিবারে। আর তাদের শত্রু হয়ে গেছে আমিনউদ্দিনের পরিবার। তাঁর বিধবা স্ত্রী আর দুই মেয়ে।
এরকম চলেছে বহু বছর। ততদিনে পরিবারের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। কফিলউদ্দিনের দ্বিতীয় ঘরের বড় মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলের মধ্যে বড়টি বিয়ের উপযুক্ত। মন্তাজের বড় ছেলে খুলনায় থেকে লেখাপড়া করে। ফাঁকে ফাঁকে চাকরিও করে। আমিনউদ্দিনের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়েটির ঘরে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। স্বামীর সঙ্গে সে থাকে ঢাকায়। একা এতজন ছেলেমেয়ে সামলাতে পারে না বলে মেজ আর সেজ ছেলে দুটিকে গ্রামে মায়ের কাছে রেখেছে। ছেলে দুটো নানি বলতে অজ্ঞান। তাদের নাম নীলু আর বিলু। নীলু ক্লাস টুতে পড়ে গ্রামের স্কুলেই। বিলু এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি। সে একটু রোগা, দুর্বল। নানি হচ্ছে তার জান। নানিও এমন, বিলু যেন তাঁর নাতি নয়, যেন তারই গর্ভে জন্মেছে। ছেলে।
এক শীতের রাতের ঘটনা। পৌষ মাস। তখনকার পৌষ মাস মানে ভয়ংকর শীত। গ্রামের লোকে বলে, ‘পৌষের শীত মইষের গায়’। অর্থাৎ পৌষ মাসের শীত এমন, বনের ভয়ংকর মোষকেও কাবু করে ফেলে। সারেং বাড়ির তিন শরিকের কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। শেষ বিবাদটা হয়েছে বাড়ির সীমানা নিয়ে। বহুবার বহুভাবে মিটে যাওয়ার পরও কফিলউদ্দিন দাবি তুলেছেন, তার রান্নাঘরের পিছন দিকটায় আরও হাত দুয়েক জমি তিনি পাবেন। আর মরিয়ম বিবির দাবি, কফিলউদ্দিনের রান্নাঘরের অনেকটাই পড়েছে তাঁর সীমানায়। অন্যদিকে বারবাড়ির দিককার ওরকম হাত দুয়েক জমি নিয়ে কফিলউদ্দিনের সঙ্গে বিরোধ মন্তাজউদ্দিনের। আরেক দিকে মরিয়ম বিবির বড় ঘরের পশ্চিম দিককার কোনায় যে একজোড়া আমগাছ, বহুবার ভাগ-বাটোয়ারা করার পরও তাদের ভাগেই পড়েছে, সেই গাছ দুটোর একটি নিজেদের বলে দাবি করেছেন মন্তাজউদ্দিন। এইভাবে তিন শরিকই হয়ে গেছে তিন শরিকের শত্রু। কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। শুধু মফিজ আর তার ছেলেরা মরিয়ম বিবির কাছে আসে। বউ আসে। তারা কোনও দলাদলির মধ্যে নেই।
এরকম পরিস্থিতিতে ঘটল ঘটনা।
মধ্যরাতে ঘুম ভাঙল কফিলউদ্দিনের। বয়স দিগন্তে ঢলেছে। রক্তে শীতলতা। দু খানা কাঁথার ওপর পুরনো মোটা লেপ চাপিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। বয়স বাড়লে ঘুম কমে যায় বা হালকা হয়ে আসে। কফিলউদ্দিনের এখন সেই অবস্থা। পাটাতন ঘর পুরনো হয়েছে। বেড়ার ফুটাফাটা দিয়ে চোরের মতো ঢোকে শীত। হাড়মাংস কাঁপিয়ে দেয়। আগাপাশতলা ঢেকে শুয়েছিলেন তিনি। ঘুমের ভিতর থেকেই যেন শব্দটা পেয়েছিলেন। ঘুম ভাঙ্গার পর লেপ কাঁথার তলা থেকে মুখ বের করে বালিশ থেকে মাথাটা সামান্য তুললেন। কান খাড়া করলেন। তারপর স্ত্রীকে ডাকলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের বড় ছেলেটির নাম নজু। স্ত্রীকে তিনি ডাকেন ‘নজুর মা’ বলে। ‘ও নজুর মা, নজুর মা। হুনছো, ও নজুর মা।’
নজুর মা-ও কাঁথার ওপর লেপ চাপিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। ডাকের ফাঁকে ফাঁকে তাকে ধাক্কাও দিচ্ছিলেন কফিলউদ্দিন। কচ্ছপ যেমন শরীরের ভিতর মুখ লুকিয়ে রাখে, অবস্থা বুঝে মুখ বের করে, মহিলা সেভাবে মুখ বের করলেন। ‘কী হইছে ? রাইত দোফরে ডাকাডাকি করতাছেন ? বুড়াকালে ডাকনের কী হইছে ?’
‘আরে না না, ওইসব না। এমুন কইরা কাশে কে ?’
‘কো, কে কাশে ?’
‘ওই যে হোনো। ছোড পোলাপানের কাশি। খালি কাশতাছে, থামনের নাম নাই। কে কাশে এমনে ?’
শব্দটা নজুর মা-ও শুনলেন। তিনিও চিন্তিত হলেন। ‘ঠিকই কইছেন। ছোড পোলাপানের কাশি। মনে হয় ভাবিছাবের ঘর থিকা আইতাছে। নীলু না, মনে হয় বিলু কাশতাছে। এমুন কাশি ক্যান কাশতাছে পোলাডা ?’
‘বড়ই চিন্তার কথা। ওডো তো।’
‘আমি উডুম ক্যা ? তাগো লগে আমগ কী সমন্ধ ? আপনেগ তো মুক দেহাদেহিও বন্ধ। তয় আবার উঠতে চান ক্যা ?’
কফিলউদ্দিন উঠে বসলেন। কঠিন গলায় বললেন, ‘যা কই হেইডা হোনো। ওডো তাড়াতাড়ি।’
দরজা খুলে পাশের কামরায় এলেন তিনি। তিন ছেলে শুয়ে আছে পাশাপাশি। নজুকে ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন। ‘ওই নজু ওঠ, ওঠ। তাড়াতাড়ি ওঠ।’
বাপকে যমের মতো ভয় পায় ছেলেরা। নজু ধড়ফড় করে উঠে বসল। ‘কী হইছে বাবা ?’
‘ভাবিছাবের ছোড নাতিডা কাশতাছে। ওই যে হোন, থামেই না। শিশু বাচ্চা এমুন কাশবো ক্যা ? মনে হয় কাশতে কাশতে মইরা যাইতাছে। তাড়াতাড়ি ওঠ।’
নজুও তার মায়ের মতো বলতে চাইল, কফিলউদ্দিন পাত্তা দিলেন না। তিনি ততক্ষণে চাদর জড়িয়েছেন গায়ে। নজুকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি হারিকেন ধরা। বাইর হ আমার লগে।’
কফিলউদ্দিনের আচরণে মা ছেলে দুজনেই অবাক। সদ্য যুবক হয়ে ওঠা অন্য দুটো ছেলেও উঠে বসেছে। নজু হারিকেন জ্বাললো। কফিলউদ্দিন বললেন, ‘ল বাইর হই। তর মন্তাজকাকারে ডাক।’
‘আমি ডাকলে কাকায় উঠব ? তারে ডাইকা কী করবেন ?’
‘একটা বাচ্চার মরণদশা, যত শত্রুতাই থাক তার পাশে গিয়া খাড়াইতে হইব। শিশু বাচ্চার লগে আবার শত্রুতা কী ? থাক তর ডাকনের কাম নাই। আমিই ডাকতাছি।’
কুয়াশায় এমন অবস্থা উঠানের, কিছুই চোখে দেখা যায় না। তার ওপর অন্ধকার। কালো অন্ধকার আর সাদা কুয়াশা মাখামাখি হয়ে কঠিন একটা শামিয়ানা তৈরি হয়েছে। সেই শামিয়ানায় ঢাকা পড়েছে ঘরদুয়ার, উঠান পালান। শিশির ঝরছে মিহি বৃষ্টির মতো। মাটি ভিজে স্যাঁতসেঁতে। ঘরের ঢেউটিনের চালা বেয়ে পরিশ্রমী মানুষের ঘামের মতো ফোটায় ফোটায় পড়ছে শিশির। এসবের কিছুই তোয়াক্কা করলেন না কফিলউদ্দিন। মন্তাজউদ্দিনের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে উচ্চস্বরে ডাকলেন, ‘মন্তাজ, ওই মন্তাজ। ওঠ, তাড়াতাড়ি ওঠ।’
সেই শিশুর কাশি তখনও অবিরাম চলছে। যেন কাশতে কাশতে নেতিয়ে পড়ছে সে। এখন আর গলায় জোর নেই। গলা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কাশির জায়গায় এখন চলছে এক ধরনের গোঙানি।
দু-তিন বার দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরই ভিতর থেকে মন্তাজের গলা ভেসে এল, ‘কে ? কেডা ?’
‘আমি মাইজ্জাদাদা। তাড়াতাড়ি ওঠ।’
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুললেন মন্তাজ। তার স্ত্রী ছেলেরাও উঠল। এত রাতে উদ্বিগ্ন ভাইকে দেখে মন্তাজ হতভম্ব! তাদের যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ, কথাবার্তা বন্ধ মুহূর্তে ভুলে গেলেন। দিশেহারা গলায় বললেন, ‘কী হইছে মাইজ্জাদা ? এত রাইত্রে, এই শীতের মইদ্যে বাইর হইছেন ?’
‘ভাবিছাবের ছোড নাতিডা কাশতে কাশতে মইরা যাইতাছে। হোনতাছস না ?’
মন্তাজ বললেন, ‘হ হোনতাছি তো। ওই যে কাশতাছে।’
‘ল যাই ওই ঘরে। নাতিডার কী হইল দেহি। এমতে কাশতে কাশতে তো মইরা যাইব।’
‘আমগো তো ডাক দেয় নাই!’
‘আমরা কথাবার্তা কই না, ডাকলে যামু কি না এই চিন্তা কইরা মনে হয় ডাকে নাই। অহন এই হগল চিন্তা করার টাইম নাই। বাইর হ।’
দু-তিন মিনিটের মধ্যে দুই পরিবারের সবাই এসে ঢুকল মরিয়ম বিবির ঘরে। মফিজও এসেছে তার ছেলেদের নিয়ে। পৌষ মাসের মধ্যরাতে বাড়ির সব মানুষ এক ঘরে।
মরিয়ম বিবির ঘরে দুটো হারিকেন জ্বলছে। পুরনো খাটে বসে তিনি বিলুকে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। বিলু কাশতে কাশতে নেতিয়ে পড়েছে। এখনও সমানে কেশে যাচ্ছে। মরিয়ম বিবির এক পাশে বসে আছে নীলু। ভাইয়ের অবস্থা দেখে সে আতঙ্কিত। মরিয়ম বিবি অঝোর ধারায় কাঁদছেন। বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে নাতির বুকে ফুঁ দিচ্ছেন। কাজের ঝি পারু ছোট একটা বাটিতে সরিষার তেল আর আদার কুচি মালসার আগুনে গরম করছে। একটু একটু গরম তেল নিয়ে কাঁথায় জড়িয়ে রাখা বিলুর শরীর থেকে কাঁথা সরিয়ে তার বুকে মালিশ করে দিচ্ছে। তাতে কোনও কাজ হচ্ছে না।
কফিলউদ্দিন দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পর পারু গিয়েই দরজা খুলেছিল। মুহূর্তে ঘরভরা মানুষ দেখে সে তো সাহস পেলোই, নীলুও অনেকখানি ভরসা পেলো। সবচাইতে বড় ভরসা পেলেন মরিয়ম বিবি। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে তিনি দুই দেবরের দিকে তাকালেন। দেবরের ছেলেদের দিকে তাকালেন, নাতিদের দিকে তাকালেন। অসহায় গলায় বললেন, ‘আমার নাতিডা মনে হয় বাঁচব না। কাশতে কাশতেই মইরা যাইব।’
কফিলউদ্দিন ঝুঁকে পড়ে বিলুর মুখটা দেখলেন। বিরাট ভরসা দেওয়ার গলায় মরিয়ম বিবিকে বললেন, ‘কিচ্ছু হইব না নাতির। আপনে চিন্তা কইরেন না ভাবিসাব। অহনই ডাক্তার আনাইতাছি।’
কফিলউদ্দিন নজুর দিকে তাকালেন। ‘ওই নজু, তোরা দুই দলে ভাগ হ। একদল দৌড়াইয়া যা সীতরামপুর। হরিপদ ডাক্তাররে লইয়া আয়। আমার কথা কবি। আমার নাতির এই অবস্থার কথা কবি। যা দৌড় দে। টর্চলাইট হারিকেন লইয়া যা।’
তারপর তিনি তাকালেন মফিজের দিকে। ‘মফিজ, তোরা তিনজন যা হিন্দুপাড়ায়। নিখিল ডাক্তাররে লইয়া আয়। যা দৌড় দে। তয় বেবাকতেই শীতের কাপড়-চোপড় পইরা যা। বেদম শীত পড়ছে। যা দৌড় দে। দৌড়াইয়া যাবি, দৌড়াইয়া আবি।’
মুহূর্তে দুই দল দুই দিকে রওনা দিল। মরিয়ম বিবির ঘরে তখন কফিলউদ্দিন আর মন্তাজউদ্দিন। তাঁদের স্ত্রীরা আছেন। দুই জা বসেছেন মরিয়ম বিবির দুই পাশে। দুজনেই পালা করে গরম তেল ডলছেন বিলুর বুকে। মরিয়ম বিবি তখনও কাঁদছেন আর দোয়া পড়ছেন।
আধঘণ্টার মধ্যে চলে এলেন নিখিল ডাক্তার। তিনি গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার। তবু হাতযশ খারাপ না। বিলুর দিকে তাকিয়ে আর তার কাশির শব্দ শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন। বিলুর হাত ধরে নাড়ি দেখলেন। স্টেথিসকোপ বুকে লাগিয়ে বুক পরীক্ষা করলেন।
উদ্বিগ্ন কণ্ঠে মন্তাজউদ্দিন জানতে চাইলেন, ‘কী বুজতাছো ডাক্তার ? নাতির কী হইছে ?’
কফিলউদ্দিন বললেন, ‘বিরাট ঠান্ডা যে লাগছে এইডা বুজতাছি আমরা। অন্য কিছু হইছে কি না কও ?’
সারেংদেরকে খুবই সমীহ করেন নিখিল। ভয়ও পান। কারণ তাঁরা প্রভাব প্রতিপত্তিশালী। তাঁদের নাতির প্রকৃত অবস্থাটা নিখিল বুঝে গেছে। আমতা গলায় বলল, ‘অবস্থডা ভালো দেখতাছি না দাদারা, বুকে ঠান্ডা জইমা গেছে। আমার মনে হইতাছে নিমুনিয়া।’
শুনে আঁতকে উঠলেন মরিয়ম বিবি। ‘কন কী ? নিমুনিয়া ?’
কফিলউদ্দিন আশ্বস্তের গলায় বললেন, ‘নিমুনিয়ারও তো চিকিৎসা আছে। ঘাবড়াইয়েন না ভাবিসাব, নাতির আল্লাহর রহমতে কিচ্ছু হইব না।’
মন্তাজউদ্দিন দিলেন আরও বড় ভরসা। ‘নিমুনিয়ার ইনজেকশান দিলেই কাশি কইমা যাইবো। তয় একলগে দুইডা ইনজেকশান দিতে হইবো। নিখিল, নিমুনিয়ার ইনজেকশান দেও। দেরি কইরো না।’
নিখিল কাঁচমাচু অসহায় গলায় বললেন, ‘আমার কাছে নিমুনিয়ার ইনজেকশান নাই। আমি গরিবগুরবার ডাক্তার। এত দামি ইনজেকশান রাখি না।’
কফিলউদ্দিন রেগে গেলেন। ‘কোন ঘোড়ার ডিমের ডাক্তার তুমি ? নিমুনিয়ার ইনজেকশন থাকে না তোমার কাছে ?’
মন্তাজউদ্দিন বললেন, ‘কোনও একটা ওষুধ খাওয়াইয়া দেও নিখিল, যেই ওষুধে কাশিটা কমব। এই ফাঁকে হরিপদ ডাক্তার আইসা পড়ব। তার কাছে নিমুনিয়ার ইনজেকশান অবশ্যই থাকব। নজুরা তো তারে বিলুর অবস্থার কথা কইবই। সে এলএমএফ পাস করা ডাক্তার। রোগীর কথা শুইনাই বুজব, কী হইছে ?’
বিলুর অবস্থা তখন আগের চেয়েও খারাপ। বেদম কাশির ফাঁকে ফাঁকে মরণপথের যাত্রীর মতো হাঁপাচ্ছে। ছোট্ট বুকখানি হাঁপড়ের মতো ওঠানামা করছে। জড়ানো কাঁথার ওপর দিয়েও সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
মরিয়ম বিবি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘হরিপদ ডাক্তার আসনের আগেই না আমার নাতিডা মইরা যায়!’
কফিলউদ্দিন, মন্তাজউদ্দিন একসঙ্গে তাঁকে প্রবোধ দিলেন। তাঁদের স্ত্রীরাও দিলেন। ‘আমরা বেবাকতে দোয়া করতাছি। কিছু হইব না বিলুর। আল্লাহয় রহম করব।’
পাশে বসা নীলুও তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হরিপদ ডাক্তার এসে ঢুকলেন। মধ্যবয়সী মানুষ। একটু মোটার দিকে শরীর। গায়ে তিন চারটা শীতের পোশাকের ওপর মোটা আলোয়ান চাপিয়েছেন। মাথায় উলের মোটা টুপি। টুপিতে কানও ঢাকা পড়েছে। পায়ে উলের মোটা মোজা আর পামশু। তাঁর ডাক্তারি ব্যাগ নজুর হাতে।
হরিপদ ডাক্তারও স্টেথিসকোপ দিয়ে বিলুর বুক পরীক্ষা করলেন। নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘রোগী দেইখা তুমি কী বুজছো নিখিল ?’
নিখিল কোনও রকমে বলল, ‘আমার মনে হইছে দাদা, নিমুনিয়া।’
‘ঠিকই মনে হইছে তোমার।’
বিলুকে পর পর দুটো ইনজেকশান দিলেন হরিপদ ডাক্তার। তরল একটা ওষুধও খাওয়ালেন। চেয়ার নিয়ে তিনি বসেছিলেন রোগীর মুখোমুখি। সেভাবেই বসে রইলেন। কফিলউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দেরি হইলে বিপদ হইত। এখন ভগবানের দয়ায় ঠিক হইয়া যাইব। তয় সাতদিন রোজ দুইডা কইরা ইনজেকশান দিতে হইব। তিনবেলায় ওষুধ খাওয়াইতে হইব। নাতিরে সাবধানে রাখতে হইবো যেন নতুন কইরা ঠান্ডা না লাগে।’
তখনকার দিনের ডাক্তাররা আজকালকার মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই রোগ ধরে ফেলতেন। গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার নিখিলও বিলুর রোগটা ধরতে পেরেছিলেন। হরিপদ তো পারলেনই। এমনকী মন্তাজউদ্দিন তাঁর সাধারণ জ্ঞান দিয়ে বুঝেছিলেন, বাচ্চাটির নিউমোনিয়া।
পাঁচদিনের মাথায় বিলু পুরোপুরি সেরে উঠল। সেই ফাঁকে বাড়ির তিন শরিকের মধ্যে সম্পর্কটা একেবারেই স্বাভাবিক হয়েছে। এ ওর ঘরে যাচ্ছে-আসছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করছে। প্রতিদিনই কফিলউদ্দিন আর মন্তাজউদ্দিন এসে বিলুর খবর নিচ্ছে। মরিয়ম বিবির সঙ্গে গল্প করছে। গুড়মুড়ি খাচ্ছে। চা খাচ্ছে। তামাক টানার অভ্যাস আছে দুই ভাইয়েরই। মরিয়ম বিবির ঘরে নলের হুকা আছে। চকচকে পিতলের হুকা। পারু তামাক সাজিয়ে দেয় সেই হুকায়। তাঁরা এক ভাই তামাক খেয়ে আরেক ভাইকে নল এগিয়ে দেন। ভারী সুখী আনন্দময় পরিবেশ।
কয়েকদিন পরের কথা।
বিকেলবেলা বাড়ির শিশু-কিশোররা উঠানে খেলছে। বিলুও আছে তাদের সঙ্গে। ঘরের দাওয়ায় বসে দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে আছেন কফিলউদ্দিন। তাঁর হাতে হুকা। হুকা টানতে টানতে মনে মনে বললেন, ‘আহা রে, কত তুচ্ছ কারণে মনোমালিন্য সারেং বাড়ির তিন শরিকের। কত সামান্য কারণে ঝগড়াঝাটি করি আমরা। একজন আরেকজনের মুখ দেখতে চাই না। কথাবার্তা সব বন্ধ। আবার আপনজনের বিপদে মুহূর্তে সব বিরোধ ভুলে যাই। একত্রে হয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। কেমন মানুষ আমরা ? এইসব না করলে কী হয় ? বড় ভাই শিখিয়েছিলেন, হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে তেমন কোনও কাজ হয় না। শত্রুকে বড়জোর একটা খোঁচা দেওয়া যায়। আর পাঁচ আঙ্গুল একত্র করে মুঠি পাকালে ঘুষি দিয়ে শত্রুকে কুপোকাত করা যায়। এজন্য আপন মানুষদের উচিত সবসময় একত্রে থাকা। আমরা অতি সামান্য কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। থাকতে হবে একত্রে। বড় ভাই চল গেছেন। এখন আমিই বাড়ির বড়। এখন থেকে এই নীতিতেই চলব আমি।’
বিকেলবেলা কখনও কখনও গুড়মুড়ি খান কফিলউদ্দিন। তারপর এককাপ চা। নজুর মা একসাজি মুড়ি দিয়ে গেলেন। সঙ্গে বড় একডেলা গুড়। খেতে খেতে উঠোনে খেলতে থাকা বিলুকে ডাকলেন কফিলউদ্দিন। কোলে বসিয়ে নাতিকে গুড়মুড়ি খাওয়াতে লাগলেন। নিজে একমুঠ মুড়ি মুখে দেন, এক কামড় গুড় খান। বিলুকেও ঠিক সেভাবে খাওয়াতে লাগলেন। শিশুটির শরীরের উত্তাপে তাঁর মনে হলো এই উত্তাপের কোনও তুলনা হয় না। এই উত্তাপ হচ্ছে হৃদয়ের উত্তাপ। সম্পর্কের উত্তাপ। এই উত্তাপের মধ্যেই থাকতে হয় মানুষকে। নয়তো সে আর মানুষ হয় কী করে!
সচিত্রকরণ : শিকদার সৈকত



