আর্কাইভগল্প

গল্প : ফাল্গুন রাঙ্গা তরঙ্গ : শুক্লা পঞ্চমী

আজ কৃষ্ণা একদশী। সারাদিন নির্জলা উপবাস থেকে কাহিল হয়ে পড়ল তরঙ্গবালা। তারপর আছে তান্নাপারা। কঞ্চির মত চিকন শরীরটাতে কতটা ধরে ? মাঝে মাঝে ধপাস করে বসে পড়ে মাটিতে। দিনশেষে পেটে আর মানছিল না। পাড়ার বউঝিদের সঙ্গে ডুয়ারে ডোঙা ভাসিয়ে তুলসীতলায় সন্ধ্যাবাতিটি জ্বালিয়ে খেতে বসে গেল। পাড়ার সবাই বলছিল, বিশেষ করে তার জ্ঞাতি ঘরের ভাস্তে বউ সুরমা, কিছুটা ধমকের সুরেই বলেছে―পিসিমা এইডাই কিন্তুক আফনের শেষ উবাশ। আফনে কার লাইগ্যা কিতা করইন। তিন কিল্লিত তো কেউ নাই!

এইডা কিতা কইলা বউ! তুমরা আছ না, তাছাড়া বংশের একটা মঙ্গল-অমঙ্গল আছে না। যেডা ফাইয়া আইছে। হেই কুন ছুডুবেলা থাইক্যা থাহি―নিয়ম ভাঙতে কি ভালা লাগে ?

সুরমা রেগে যায়।

গুষ্ঠি কিলাই আফনের মঙ্গল-অমঙ্গলের। শইলডার মইধ্যে আনিগাছি আছে ? যদি বিছনাত ফইরা যাইন―টাননেরও একটা মানুষ নাই।

তরঙ্গবালা সামনের বিশাল খালের দুপাটি দাঁতের হাসি দিয়ে বলে, তুমরা আছ না। আর যার লাইগ্যা এই একাদশী করি সেই পাঞ্চালী। কৃষ্ণা-দ্রৌপদী হে কিতা মিছা! হে ত জনমদুঃখী। আমার দুঃখডাও বুঝব। হে-ই ভালা রাখব।

সুরমা আরও ক্ষেপে যায়, আফনে চদর-বদর কথা রাউখ্যাইন। এই বারেই শেষ। এর ফরে উফাশ করলে বেকে মিইল্যা জাইত্যা ধইরা খাওয়াইয়া দিয়াম। মনে রাহইনযে। দিনশেষে খাওয়া, জলে ভিজানো সাবু আর দুটো জাতকলা। অবশ্য সপ্তাহ দুই ধরে গাইটাও ভাল পরিমাণ দুধ দিচ্ছে। মাঝখানে খাবারের অভাবে দুধ দেওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল। মাঝিপাড়ার অবিনাশ নিয়মিত হোগলা পাতা এনে দিচ্ছে। অবিনাশ বলছিল―পিসিমা হোগলা খাইলে দুধ দিব বেশি। ঠিকই কইছে অবিনাশ। তরঙ্গবালা খাচ্ছে আর একা একা বকবক করছে।

আফদডা। আমার কইলজাডা ফুইড়া খাইতে তুই হেই দ্যাশ থাইক্যা আইছছ। সাত কিল্লি থইয়া তুই কেরলাইগ্যা এই শ্মশানফুড়িডাত ফইড়া রইছছ। এই যে কইতাছি তুই যাগা, যাগা। কেডায় হুনে কার কতা। তুই কি এইনো বাতাস খাইয়া থাকবে ? আমর ফিন্ডি কচলানি না ফর্যন্ত তর শান্তি নাই, এইডা আমি বুঝি না মনো করছ!

সুনসান বাড়িটি কোনাপাড়ার শেষ মাথায়। বাড়িটির সীমানা কোনাপাড়ার শেষ ধরা হলেও, ঠিক পাড়ার মধ্যে পড়ে নাই। মাঝখানে ছোট্ট একটা খালের মতো ভাংতি পড়ে গেছে। সবাই তরঙ্গবালার বাড়িটিকে ভাংতি বাড়ি বলে। কেউ কেউ আবার ছিঁড়া বাড়িও বলে। অর্থাৎ পাড়া থেকে ছিটকে কিছুটা দূরে চলে গেছে। হাওরের বাড়ি শুকনার সময় যেমন―তেমন বর্ষাকালে খুব অসুবিধা। তরঙ্গবালা তখন একাতইশ্যা হয়ে যায়। পাড়ায় আসতে হলে নৌকা অথবা ভেলা ছাড়া আসতে পারে না। সত্যি সত্যি তখন দ্বীপের বাসিন্দা। খাবার জল নেওয়ার হলে ভাতিজার দিকের নাতি দীপককে চিৎকার করে ডাকে। তরঙ্গবালা সবার সহযোগিতা ও ভালবাসা পায়। বর্ষাকাল-হেমন্তকাল কোনও কালেই কোনও সমস্যা নাই তার।

তরঙ্গবালার বিয়ে হয়েছিল নয় বছর বয়সে। বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসে এগার বছর বয়সে। ব্রাহ্মণের বিধবা। নিষ্ঠার সঙ্গে থাকতে হয়। বাবা রাধাচরণ ভট্টাচার্য্যি মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কারুর উপর যেন গলগ্রহ হয়ে না পড়ে, তিনি জীবিত থাকা অবস্থাতেই বাড়ি সম্পদ ভাগ করে দিয়ে যান। মেয়েকেও বাড়ি, কিছু জমিসহ দান করে যান। রাধাচরণ ভট্টচার্য্যরি চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে পাকিস্তান আমলেই চলে যায় ভারতে। ছোটছেলে বিহারীলাল ভট্টাচার্য্যি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পানির দামে জায়গাজমি বেচে একেবারে ভারতে চলে যায়। যাবার সময় দিদি তরঙ্গবালাকে হাতে-পায়ে ধরে বিহারীলাল ও তার স্ত্রী রাধিকা অনেক কাঁদাকাটি করেছে। তবু মন গলেনি তার। তার একটাই কথা―আমি মরলে কি কান্দাকাটি করনের কেউ আছে ? কার লাইগ্যা আমি ভিনদেশে যাইয়া থাকতাম। আমার বাফে যেডা দিয়া গেছে হেইডা লাইড়া-চাইড়া আমি জীবন পার কইরা দিয়াম।

ছোট ভাইÑভাইবউ কেউ রাজি করাতে পারে নাই। শ্যাষম্যাষ ভাতিজা-ভাতিজি দুটি পর্যন্ত পিসিমার পা ধরে কাদাঁকাটি করেছে।

তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হাওরের উপর দিয়েও পনপনাইয়া হেলিকপ্টার যায়। গ্রামের মানুষ যা ভেবেছিল তেমনটিতে আর চলছে না। আস্তে আস্তে পুটলা-পাটলি গুটিয়ে সবাই বর্ডারের দিকে রওয়ানা দিল। ভাতিজা দিগেন্দ্র ও তার বউ সুরমা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলে বেঁকে বসল। মহাবিপদ, জনমানব শূন্য হয়ে গেছে গাঁ। কিছুতেই তাকে রাজি করানো গেল না। এদিকে দীগেন্দ্রও নাছোড়বান্দা।

পিসিমা তুমারে না লইয়া আমি গাঁও ছাড়তাম না। তুমি কি চাও আমারে পাকিস্তানিরা মাইরা ফালাক ?

মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তরঙ্গবালা। তার স্বামী না থাকুক সন্তান না থাকুক একটা তো সংসার। গরু-বাছুরগুলো কোথায় রেখে যাবে ? বোবা প্রাণিগুলোর দিকে তাকালে চোখ সরাতে পারে না। হাউমাউ করে কেদেঁ ওঠে। শেষ পর্যন্ত তাকে বর্ডারের কাছে রঙছাতি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাধাচরণ ভট্টাচার্য্যরে এক শিষ্য ছিল ভবতোষ। তিনি নিজের দায়িত্বে গুরুবোনকে নিয়ে তার কাছে রেখেছিলেন। গরু-বাছুরগুলিকে রাখা হয়েছিল নিয়ামতপুরের অক্ষর সাধুর আশ্রমে। যুদ্ধ শেষে সবার আগে গ্রামে ফিরে এসেছিল তরঙ্গবালা। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলত― দমডা খেইচ্যা কয়ডা মাস থাকছি। বাফরে বাফ মানুষ ক্যামনে দ্যাশ থইয়া বিদেশ গিয়া থাহে!

তরঙ্গবালার ইচ্ছের জয় হয়েছে। বেশিদিন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারেনি কিন্তু এই আফদডা আইয়া কপালে নতুন করে ভাঁজ ফেলেছে। সকাল, দুপুর, রাত খালি দুশ্চিন্তা, এতদিন কোনও চিন্তা ছিল তার! আধাভাঙ্গা টিনের দোচালা ঘরটির জায়গায় জায়গায় সুপারির খোল দিয়ে তালি দেওয়া। দৈন্য সুস্পষ্ট ছাপ, তবু যেন সুখের যাপন। কোনও কিছু নিয়ে বিকার নেই। এক সময় মানুষে খলবল করা বাড়িটা এখন নীরবতার পাটি বিছিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তরঙ্গবালা! এত বছর কেউ খোঁজ-খবর নেয় নাই। তিন ভাইয়ের একটা বোন। কেউ একটা চিঠি পর্যন্ত দেয় নাই। আর এখন ছেলেকে পার্ঠিয়ে দিয়েছে একা একা! ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগছে না।

বিকাল থেকেই উত্তুরে বাতাস বইছে। শেষ শীতের রুক্ষতাকে যেন ধুইয়ে মুছে দিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গা বেড়ায় ফাঁক- ফোকর দিয়ে শো শো বাতাস ঘরে ঢুকছে। কুপি বাতিটার শিষ বাতাসের সঙ্গে ফতফত করে জ্বলছে। তরঙ্গবালা বকবক করেই যাচ্ছে।

আইজ তিনডা দিন ধইরা কইতাছি বাজারো যা বাজারো যা, ঘরো কেরাছিন নাই। অহন দেখবামনে ক্যামনে আইয়া ভাতটি গিলছ।

এর মধ্যে পুষি বিড়ালটা মিঁউ মিঁউ করে তার পাতের চারপাশে চক্কর দিচ্ছে।―আইজ মিঁউ মিঁউ কইরা লাভ নাই। সাগুদানা আফনের গলাত রুচতনা। আফদডা ঘরে আইয়ুক ভাত দিবনে।

কিছুক্ষণ নীরব থেকে আবার বকে যাচ্ছে―ধুর যাগা, একলা একলা কারে কইতাছি। শয়তানডা কিছুইত শুনতাছে না।

গোয়ালঘর থেকে বাছুরের হাম্বা হাম্বা ডাক। তরঙ্গবালা তাড়াতাড়ি করে শেষ গ্রাসটা মুখে দিয়ে থালার মধ্যে জল ঢেলে দেয়। এক ঢোক জল মুখের ভেতর কুলকুচি করে গিলে ফেলে। বাছুরটা তার  নোযোগ পেতে জোরে জোরে হাম্বা হাম্বা করেই যাচ্ছে। সেও জোরে জোরে বাছুরের উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছে―

একটু ছবুর কর না। সারা দিনেই ত লাইগ্যা থাহি পিছনে। দুইল্লা খাইতেও দিবি না। বাছুরটিও যেন তার বাধ্যগত, কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেল। তরঙ্গবালা দরজা খুলে কুপি নিয়ে গোয়ালঘরের দিকে যেই না রওয়ানা দিল অমনি ফত করে বাতিটা নিবে গেল। তার বিরক্তি আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

যা: অহন! মাইলডা আইজ আর আইত না। অন্ধকারের মধ্যে হাতড়িয়ে তাড়িয়ে দিয়াশলাই বের করে আবার বাতি ধরাল। যে জোরে বাতাস বইছে এতে বাতি নিয়ে গোয়ালঘর পর্যন্ত যেতে পারবে না। বিপরীত পরিস্থিতিতে চলা তরঙ্গবালার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। দ্বিতীয় পরিকল্পনা সব সময় তৈরি থাকে। কেরোসিন না থাকার কারণে হারিকেন জ্বালানোও সম্ভব হয়নি। তরঙ্গবালা বাঁশের খুচি বের করে। কুপিবাতিটা এর ভেতর ঢুকিয়ে বাতাসের আড়াল করে নিয়ে যায়।

বাছুরটা হাম্বা হাম্বা করে থেমে গেল। মনে মনে ভাবে, বাছুরের আর দোষ কী। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। এখনও দোয়ানোর নাম নাই। সকাল-সন্ধ্যা দুবার দোয়ানো, দেরি করলে বাছুরটার শরীর হালকা হয়ে যাবে। আর এই দুধটার জোরেই তরঙ্গবালার শরীর টিকে আছে। আর ভাতিজা, সেও তো দুধই খায়। তরঙ্গবালাকে দেখে মা-বেটা দুজনেই পাগল। পারে তো দড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। তরঙ্গবালা চুচু শব্দ করে থামাতে চেষ্টা করে। গায়ে মাথায় হাত বুলায়। মা-বেটার অস্থিরতায় তার ভীষণ মায়া লাগে। সব কিছু পারলেও গাই দোয়াতে পারে না তরঙ্গবালা। মাতৃত্বের কষ্ট মার থেকেও যে মা হয়নি সে আরও বেশি অনুভব করে। বাচ্চাটকে বেঁধে রেখে দুধ কেড়ে নেওয়া নিষ্ঠুরের মত মনে হয়। ছোটবেলা কতবার যে বাছুরের দড়ি খুলে দিয়েছে। বাছুরটা যখন পাগলের মতো ছুটে গিয়ে মায়ের দুধ খেত তখন বিস্মিতের মতো তাকিয়ে থাকত। কী অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে ঝুলন্ত বাটগুলিতে।

বাছুরটির সঙ্গে রীতিমত ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় তরঙ্গবালার। কোনওভাবেই আটকে রাখতে পারছিল না। তাকে দেখে আরও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তরঙ্গবালা আবার বকবক শুরু করে।

দেখবামনে আইজ তুই কি দিয়া ভাতটি গিলছ। হঠৎ কান খাড়া করে। মধুর সুর ভেসে আসছে। খুব চেনা গলা।

তরা কে যাবি পাড়ে, পার করো দুঃখিনী রাধারে।

তরঙ্গবালা গোয়ালঘর থেকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে।

ও মোহন্ত, বাবা একটু শুইন্যা যা-না। আমি খুব বিফদে ফড়ছি রে বাপ।

মোহন্ত গলা খাঁকারি দিয়ে সাড়া দেয়।

কী অইছে পিসিমা, অমল অহনো বাড়িত আয়ে নাই ?

আরে না বেডা। হেই যে সূর্য হেলনের আগে বাড়িত থাইক্যা বাইর অইছিন অহনো আওনের নাম নাই। আইজগা গরুডি ফর্যন্ত পালান থাইক্যা আনে নাই।

মোহন্ত গানের গলা নামিয়ে গুণগুণ করে বাকি পদগুলো গাইতে গাইতে গোয়ালঘরের দিকে যায়।

গাই দোয়াইতে অইব পিসিমা ?

হ-রে বেডা। এইডা খাইব কী দিয়া, কিছুইত ঘরে নাই। আইজ আমার একাদশী আছিন। কিছু রান্ধি নাই।

ওহ, পিসিমা, আফনে অহনো একাদশী করইন ? আফনেরে না মানা করলাম। হেইদিন না অত বড় অসুখটাত থাইক্যা উঠলাইন। গোপীরঞ্জন ডাক্তার কিন্তু কইছে নিয়ম না মানলে অপারেশন করাইতে অইব। তহন খুব ভালা অইব। কার লাইগ্যা করইন এইতা ?

ধুর বেডা তিন কাল গিয়া এক কালো ঠেকছে অহন এইতা ভাইব্যা লাভ আছে ?

এইতা ভাইব্যা লাভ নাই ঠিকই, কিন্তু যতদিন পরানডা আছে ততদিন ত ভাবনেই লাগে।

গাই দোয়াইতে দোয়াইতে বেশ জমে উঠল গল্প। সমান্য দুধ দোয়ানো গেল। গাইটার খুব চোরা বুদ্ধি, উলোন টেনে ধরে দোয়ানোর সময়। শক্ত করে রাখে বাট। বাছুরটাও বড় হয়েছে। দু’টানেই শেষ করে দেয় বাটের দুধ। মোহন্ত বলে, পিসিমা গাইডা বিরাট চালাক। দুধ দিল না বেশি, যতটুকু ফাইছি দুইজনের অইয়া যাইব।

গাইয়ের আর দুষ কি বাপ। দুইবেলা খিরাই। চুরামি ত করবই। মানুষ যদি নিজে না খাইয়া সন্তানরে খাওয়ায় গরুও ত মা। তার সন্তানের লাইগ্যা মায়া করবই। ছাইড়া দে বাপ।

মোহন্ত গাই দোয়ানোর শেষে গরুগুলিকে সুন্দর করে বেঁধে রাখে। তরঙ্গবালা মোহন্তকে ডেকে তার ঘরে বসায়। তাকে বলে, হে রে মোহন্ত। এই যে ছেড়াডা ইন্ডিয়া থাইক্যা আইল। মা, বাফ, ভাই-বইন বেকেরে ফালাইয়া, তার উদ্দেশ্যডা কি তুই জানস ? আর বিহারী-রাধিকারই বা আক্কেলপছন্দ কেমত―তারা ছেড়াডারে একলা ছাইড়া দিল ? এমত একটা সোমত্ত পোলা। পাসপুট ভিসা কিচ্ছু নাই। কি আছে এইনো তুই ফইরা রইছছ ছয় মাস ধইরা।

পিসিমা আফনে কিন্তু খুব বেশি চিন্তা করইন। অমল অনেক বুদ্ধিমান ছেড়া। দেহুইনযে হে ঠিকঠাক মতই চলব।

 তরঙ্গবালা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কের লাইগ্যা যে চিন্তা করি বাবা, হেইডা কেউরে বুঝাইতে ফারি না। আমার মাথার মইধ্যে একটা যন্ত্রণা লাগে। আমিও কি আর ভালোমতে চলতে ফারি। ঘরডা ভাঙছে ঠিক করন লাগে। এইবার গোয়াইলঘরডা ঠিক না করলে গরুডি বিষ্টিতে কষ্ট ফাইব।

ও পিসিমা আফনের বনেলা চিকিৎসা কেমত চলতাছে। এইডা ত আফনের একটা ভালা রোজগার।

এইতাও আইজকাইল তেমন চলে না রে বাফ। অহন কত রকম ওষুধ বাইর অইছে। আর বন-বাদার কি আর আছে ? ওষুধ যে বানাইতাম উপাদানইত ফাইনা। রাজেন্দ্ররার পরা বাড়িডাত কতরকম গাছ-গাছরা আছিন। বেইচ্যা দিছে।

ও পিসিমা, এই বাড়িডা ত মনমোহন কিনছে নাহ ?

হ।

মোহন্ত হেসে হেসে বলে।

শালা মাঝির বেডা ভালাই পইসা বানাইছে।

হ শুনলাম। চৌচালা বাড়ি করব। পাককা ঘর। চল্লিশ হাত লাম্বা।

তরঙ্গবালা দুঃখ করে, বেকটি গাছ কাইট্যা শ্যাষ করছে। গ্রামডার মইধ্যে একটামাত্র অর্জুন গাছ আছিন। কত কইরা কইছি―ও মনমোহন এই গাছটা কাডিছ না বাফ। একটা কুনাতেই ত ফইরা রইছে থাহুক না। নয়া ফইসার গরম রে মোহন্ত। কই মাছের লাহান খালি কান্তায়।

হ, পিসিমা। কলি যুগ আ-ঘাটই ঘাট অয়।

হ, যাউকগ্যা। তর বাফ কেমত আছে ক ? কতদিন দেহা অয়না। চলাফিরা করত ফারে ? আর তর মা ? কতদিন আয়ে না।

আছে গুরুদেবের কৃপায়। দুইজনেই সাধুর পথ ধরছে। মাছ, মাংস, পিঁয়াইজ, রসুন সব বাদ।

তরুঙ্গবালা অবাক হয়।

কছ কি ? তর বাফ মাংস ছাড়ছে! কিতা কইতাম মোহন্ত, মাইনষের বুঝি এই রহমোই পরিবর্তন অয় রে ?

কেরে পিসিমা, বাবা কিতা করছে ?

থাউকগ্যা তর জাইন্যা লাভ নাই।

না-না পিসিমা আফনে খুইল্যা কউহাইন। আমি কেউর লগে কিছু কইতাম না।

হাহা করে হাসতে থাকে তরঙ্গবালা। এ যেন হাসির লহরী, কিছুতেই থামে না। কত বছর এভাবে হাসে না। হাসতে হাসতে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তরঙ্গবালার, তবু হাসি থামে না। মোহন্ত পিসিমার এমন হাসির অর্থ কিছুই বুঝল না। শিশুর অবোধ চাহনির মত চিকন ছিপছিপে চেহারার মানুষটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল। সদা খটখটে গলা আর ধারালো স্বরের মানুষটি যে প্রাণখোলা হাসতে পারে নিজের চোখে না দেখলে মোহন্ত বিশ্বাসই করত না। তরঙ্গবালার খিটখিটে ব্যবহারের জন্য গাঁয়ের অনেকেই পছন্দ করে না। অথচ মানুষটি কারুর বিপদে-আপদে ঘরে বসে থাকতে পারে না। এই তো সেদিন রমেশের ছেলে অরুণ কলেরায় পড়ল। পিসিমার সেই কী অস্থিরতা। সারারাত ধরে তার সেবা করল। কত রকম বনেলা ওষুধ কুটাকুটি করে তৈয়ার করল, নিজের হাতে খাওয়াল ? সেই উপকারের কথা কি গ্রামবাসী ভুলে যাবে ? মোহন্ত নাছোড়বান্দার মত আবার জিজ্ঞেস করে, ও পিসিমা কইলাইন না যে ? বাবা কী করছিল ?

হঠাৎ হাসি থামিয়ে চুপ হয়ে যায়। কুপি বাতিটা হাতে নিয়ে তেল পরীক্ষা করে দেখে ঠনঠন করছে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলে, না রে মোহন্ত কুপিডাতও তেল নাই। রাইতাটা ক্যামনে চলতাম ক-ত দেহি ?

মোহন্ত অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। তরঙ্গবালার কথায় সাড়া দেয় না। ঝিঁঝি পোকার গানের মহড়া সারা বাড়িটাকে জাগ্রত করে তুলছে। নীরবতার এটাও একটা ভাষা। মোহন্ত ভাবতে থাকে, এক সময় এই বাড়িটা কত জমজমাট ছিল। রাধাচরণ ভট্টাচার্য শৌখিন মানুষ ছিলেন। শীত আসলেই নানা রকম কর্মকাণ্ডে গমগম করত বাড়িটা। কীর্তন, পালাগান, যাত্রাপালা দিনের পর দিন চলতে থাকত । গ্রামের ছেলেদের নিয়ে একটা দল করতে চেয়েছিলেন। বিহারী জেঠাও চেষ্টা করেছিল। হঠাৎ করে কী হয়ে গেল জেঠার, যে বাড়ি-জমি সব বেঁচে চলে যেতে হল! পিসিমার কথা কেউ ভাবল না। বেশ ক বছর ধরে মোহন্ত একটা গানের দল সাজিয়েছে। সবে মাত্র চারিদিকে নাম ছড়াতে শুরু করেছে। সবাই বলে মোহন্তর বাঁশির মত গলা। তরঙ্গবালা জিজ্ঞেস করে

তর গানের দলের খবর কি মোহন্ত ? এইবার নাকি বায়না ধরবি ?

হ পিসিমা। কান্দাপাড়া একটা বায়না ফাইছি। চেয়ারম্যানের নাতির অন্নপ্রাশন। বিরাট আয়োজন করতাছে। পালা গানও দিব।

খুব ভালা। কুন ফালাডা গাইবি ?

তারা কইছে নৌকাবিলাস করতে।

তরঙ্গবালা পান-সুপারির বাটাটা নিয়ে এসে বসতেই কুপিবাতিটা ধুপ করে নিবে গেল। মোহন্তকে বসতে বলে ভেতর থেকে মুচিবতিটা আনতে গেল। আনতে আনতে বলল, এইডা আর কতক্ষণ জ্বলব কে জানে। তরে একটা পান খাওয়াইতাম।

আমার লাইগ্যা অস্থির অইন না যে পিসিমা। আমি কি পরের ছেড়া। একজাত নাই বা অইলাম। তরঙ্গবালা বাধা দিয়ে বলে

কিতা যে কছ। জাত আবার কিতা রে। সব মানুষ এক।

মোহন্ত হাসতে হাসতে বলে, এই কথা কইন না যে পিসিমা। আফনে অহনো শুদ্রের ঘরে ফানি পর্যন্ত খাইন না। আমরা বুঝি না নাহ জাতের টান টানুইন। তরঙ্গবালা মোহন্তকে বসিয়ে রেখেই দুধ জ্বাল দিতে যায়। বাঁশের কঞ্চি চুলার ভেতর টেনে দেয়। পটপট করে ফুটছে গাঁটগুলো। আবরও বিড়বিড় করে―

কিরম তর আককলডা। অতডা রাইত অইছে, অহনো বাড়িত আইলে না। কত কইরা কইলাম এইডা তরার কলিকাতা শহর না। এইডা হাওর। ডাকাইতের দ্যাশ। এইনো য্যামনে খুশি এমনে চলন যায় না। আইজ বাড়িত আইয়া ল। তর একদিন কি আমার একদিন।

২.

তরঙ্গবালার বকবকানি শুনে মোহন্ত জিজ্ঞেস করে।

ও পিসিমা আফনে অহনো বকতাছুইন ?

বকতাম না কিতা করতাম ক। মুচি বাতিও নিভ্যা যাইব, আফদডা ভাতটি খাইব ক্যামনে।

আফনে বকউইন না যে। চাঁননি পশর আছে উডানো যাইয়া খাইয়ালাইব। অমল খুব ভালা ছেড়া।

ধুর বেডা ভালা। বাদাইম্যার সেরা। বাপ-মা ভাই-বইন বেকতারে থইয়া আইয়া ফরছে। তার নাহি হেই দ্যাশো ভাল্লাগে না। এইহানো কি জমিদারিডা আছে যে, তুই বইয়া বইয়া খাইতে!

জন্মভিডা পিসিমা। সংগ্রামের সময় ত চোখটি ফুইট্যাই যুদ্ধ দেখছে। সোনার বাংলাডা ত দ্যাহে নাই। হেইনো তার ভাল্লাগে। আমারে কইছে।

তরঙ্গবালা রান্নাঘরের দরজাটা টান দিয়ে দৌড়ে আসে তার ঘরে। দরজার সামনে পিঁড়ি পেতে বসা মোহন্তর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিতা কয় হে ? তার মনডাত কিতা চায়। কিছু খুইল্যা কইছে ? আমি কিছু জিগাইলে খালি কয়―তুমি আমারে তাড়াইয়া দিতে চাও কেরে। আমি কি আর সাধে তাড়াইয়া দিতে চাই। ভয় লাগে ভয়।

কিয়ের ভয় পিসিমা ?

জানিনা বাফ। আমার এই বয়সে মাথাত কুনু বুঝা নিতাম চাই না। বাপ-মার কতা জিগাইলে কয় ভালা আছে। আমার মনো অয় এ কিছু লুকায়। আমারে কয় না।

হ্যাঁ পিসিমা বিষয়ডা চিন্তার। আমিও তারে জিগাইছিলাম কিছু কয় না। খালি কয় খুব কষ্ট। ও পিসিমা আফনেরে ত কওয়া অয় নাই। হে ত আমার গানের দলো যুগ দিছে। গলা বিরাট সুন্দর। আমি কইছি রির্হাসেলে যাইতে। তাইলে মনো অয় হেইখানো গেছে। পিসিমা আমি উডি।

আর একটু ব বাফ। আমার শইলডা কাহিল অইয়া আইতাছে।

মোহন্ত সাহস দিয়ে বলে, কেরে পিসিমা ভয় কিয়ের ?

তরঙ্গবালা ফিসফিস করে বলে, হে তো পাসপুট ভিসা কিছু কইরা আয়ে নাই। চুরাই পথে আইছে।

মোহন্ত হাসতে হাসতে বলে, ও, এইবায় ম্যালা মানুষ আইয়ে। আফনে খালি খালি ভয় পাইন নাযে। লাগলে যাওনের সময় আমি পাড় কইরা দিয়া আইয়ামনে।

তরঙ্গবালা কাকুতি মিনতি করে মোহন্তকে, ও, বাফ। তুই আমার আগের জন্মের বাফ আছলি। আমার এই উপকারডা কর না। হে যাউকগা। ছয় মাস পার অইয়া গেছে। মা-বাপের বুকটা কিতা কইতাছে, বিহারী অনেক নরম মানুষ, হেরে আমি চিনি। আর একটা কথা শুইন্যা হেই যে মনডা আমার খারাফ অইছে।

চমকে ওঠে মোহন্ত। তরঙ্গবালার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, কী কথা পিসিমা ?

তরঙ্গবালার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ে। অবশের মত বলে, বিহারীডা হেই দ্যাশে যাইয়া খুব কষ্টে পইড়া যায়। চাইরডা ফোলাফান লইয়া চলত ফারে না। এক সময় ফেরি কইরা খেলনা-পাতি বেইচ্যা ফর্যন্ত চলছে। তাও ফারে না। অভাব-অনটনে একটা ফোলাফানও ভালা কইরা মানুষ করত ফারে নাই।

মোহন্ত বিস্মিত হয়, কইন কি পিসিমা। অত্তো দুর্দশা আর আফনে অমলরে ফাডাইয়া দিতে চাইতাছইন? আফনে মরলে এই সম্পত্তি খাইব কেডা ? না না পিসিমা অমল এই দ্যাশে থাহুক। আমি হের সব ব্যবস্থা কইরা দিয়াম। লাগলে চেয়ারম্যানকে কইয়া নাগরিকও বানাইয়া দিয়াম।

কথায় কথায় কখন মুচবাতিটা নিবে গেছে খেয়াল নেই দুজনের। অন্ধকার ঘরে একটা শূন্যতা ঘূর্ণির মত পাক খেতে থাকে।

অন্ধকারের যে একটা গতি আছে তা আগে কখনও টের পায়নি মোহন্ত। কোথা থেকে এত মিশমিশে কালো পরিবেশটাকে ছমছম করে তুলল। পাহাড়ের আদল ঘেষে আসা শিরশির বাতাস বরফের মত শীতল করে দিল। মোহন্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অন্ধকারে তরঙ্গবালার না দেখা মুখটা তাকে আরও বেশি মায়াবী করে তোলে। মোহন্তের কৃষ্ণভক্তি মন বারবার কালো জগতের সৃষ্টির কথাই ভাবে।

তরঙ্গবালা ঠোঁট কাপাঁনো গলায় বলে, ও মোহন্ত ঘুমাইয়া গেছছ ?

না পিসিমা। আমি যাই। কাইল আইয়ামনে। দেহি অমলরে পাই কি না।

হ, বাপ তারে ফাইলে অহনেই পাডাইয়া দেইছ। একটু কেরাছির ব্যবস্থা না করলে রাইতটা অন্ধকারেই কাডানি লাগব।

আইজ আর তেল ফাইতাইন না পিসিমা। হারাধন রিকার বাজারো গেছে গা। কত রাইতে আইয়ে ঠিক আছে। আফনে শুইয়া ফরইন।

মোহন্ত চলে গেলে ক্লান্ত শরীরটাকে আর টেনে ধরতে পারে না তরঙ্গবালা। সারাদিনের তান্নায় মনেই থাকে না তারও যে বয়স নব্বই ধরে ধরে।

হঠাৎ করেই পরিবেশটা কেমন যেন গুমট হয়ে গেল। অমলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনাপাড়া, মাইজপাড়া, তেলিপাড়া, রানাগা, বাসাউরা, কাউরাজান, রিকা, গোবিন্দপুর, বড়ইউন্দ, তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কী করে হাওয়া হয়ে গেল ছেলেটি। তরঙ্গবালার শান্ত শীতল বাড়িটি সরগরম হয়ে উঠল। সবার মনের ভেতর জমা হতে থাকল বিস্ময় ও আতঙ্ক। ভাতিজা বউ সুরমা সকাল থেকে পিসি শাশুড়ির বাড়ির দায়িত্ব নিয়েছে। লোকজনকে ঠেলে বাড়ি থেকে সরাতে হিমশিম খাচ্ছে। তরঙ্গবালা বিছানা নিয়েছে। চোখের জলে বালিশ ভিজে একাকার। সবার মুখে এক কথা, কী অইল ছেড়াডার।

আস্তে আস্তে তরঙ্গবালা দানা-পানি ছাড়ল। শত্তুরডা তার মনের ভেতর ঘা মেরে কোচটা বিঁধিয়ে রেখে চলে গেছে। এই ক্ষত কি কেউ সারাতে পারবে ? দিনকে দিন বিছানায় লেগে গেল। এর মধ্যে কে যেন এসে খবর দিল। সেদিন বর্ডারে খুব গরম চলছিল। ভীষণ রকম গোলাগুলি শোনা গিয়েছিল। চোরাকারবারি ধরা পড়েছে। দুই-একটা নাকি মরেও গেছে। তরঙ্গবালার কানে এইসব কথা শরের মত বেঁধে। সে এখন ভীষ্মের শরশয্যায়। সমস্ত শরীর ক্ষতবিক্ষত। কেন এসেছিল ছেলেটি ? একটা মায়ার মধ্যে আবদ্ধ করে আবার চড়ুইয়ের মত চলে গেল। এই শূন্য বুকটা কোনও দিন কি ভরার ছিল না ?

কোথা দিয়ে দিন যায় রাত যায় টের পায় না তরঙ্গবালা। গরুগুলি হাম্বা হাম্বা করে ডেকে থেমে যায়। ভাতিজা বউ তিনবেলা করে এসে খাবার দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকায়। সুরমাকে জিজ্ঞেস করে, শত্তুরডা কি আইছে ?

সুরমা মুখ টিপে কাঁদে। ও পিসিমা আফনে নাওয়া-খাওয়া ছাইড়া দিছইন, আমরা কি আফনের কেউ নাহ ? কুনখানের কুন ছেড়ার লাইগ্যা আফনে মইরা যাইবাইন ?

গলা কাঁপতে কাঁপতে তরঙ্গবালা বলে, এইডা যে আমাকে ফাঁকি দিব হেইডা আমি ভাবি নাই বউ। খালি খালি আমার মায়া জ¦ালাইয়া দিয়া গেছে। নিবায় নাই।

ফাল্গুনের দোল পূর্ণিমায় সন্ধ্যায় জেগে উঠেছে কোনাপাড়া। বিশ্বম্বর বাবুর বাড়ি বিরাট বেদি। বেড়ার ঘরের আগুনে পুড়তে দেওয়া হয়েছে ক্ষেতের বেগুন। ছেলে-মেয়েরা হইচই করে খাচ্ছে। তরঙ্গবালার চোখে হোলির আবির। ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

সুরমা চিৎকার করে ডাকছে সবাইকে, তুমরা কেডা কই আছো গো দেইখ্যা যাও পিসিমা কেমন জানি করতাছে।

হঠাৎ সুরমা টের পায় উস্কো-খুস্কো চুলের এক ছায়া ঘরের ভেতর ঢুকছে। পিসিমা চোখ উল্টে বলছে―

ও বউমা, দেখো এই যে বংশের বাত্তি আইছে। হারিকেনডা বাড়াইয়া দেও। তুলসীতলাডা দেখাইয়া দেও সইন্ধ্যাবাতিডা দেউক।

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button