আর্কাইভগল্প

গল্প : উচ্ছিন্ন নিসর্গ এক : অমর মিত্র

ন ’পাহাড়ি যাবেন ? যেতেই পারেন। রুট বলে দিতে হবে। ট্রেন, বাস, নদী। নদী পেরোবে বাসই। আর যদি গাড়ি থাকে তবে তো আর কোনও অসুবিধা নাই। আপনি গাড়ি নিয়েই কলকাতা থেকে ন’পাহাড়ি চলে যেতে পারবেন। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সোজা বর্ধমান, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ ধরে দামোদর নদ পেরিয়ে মেজিয়া  দিয়ে ন’পাহাড়ির পথে। একটি করে পাহাড় উঁকি দেবে, আর আপনার মনে পড়বে সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা। নয় পাহাড় নয়, অনেক পাহাড়। টিলা, জঙ্গল। ন’পাহাড়ি হয়ত ন’টি পাহাড় নিয়েই সেজেছিল। এখন তা কেমন আছে, তা দেখতেই তো যাওয়া। না তাও হয়ত নয়। আপনার একটি সুযোগ হয়েছে, আপনি ন’পাহাড়ি চলেছেন। যখন এসেছিলেন তখন আপনি বছর ত্রিশ। তারপর আরও পঁয়ত্রিশ বছর কেটে গেছে। আপনাকে বার্ধক্য ঘিরে নিয়েছে। একটু একটু করে বুড়ো হচ্ছেন। একটু একটু করে ক্লান্ত হচ্ছেন। ঘুমাতে ভালো লাগে। সব কাজেই আলস্য। কিন্তু ন’পাহাড়ির নাম আপনার ভিতরে চাঞ্চল্য এনেছে। আপনি চলেছেন সেখানে আবার। ন’পাহাড়ি এখন বিখ্যাত এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগেও ছিল, কিন্তু   তা নিয়ে কেউ ভাবেনি। কেউ চিনতই না এই জায়গাকে। প্রকৃতির এক কোণে পড়েছিল এই ঘুমন্ত রাজকুমারী। তাকে সোনার কাঠি দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে কোনও এক রাজপুত্র। রাজপুত্রটির নাম অজয়বাবু, এখানকার মান্যবর। তিনিই পরিকল্পনা করে ন’পাহাড়িকে সাজিয়েছেন। সাজিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সর্বত্র। আপনার যদি মেল ঠিকানা থাকে, আপনি নিশ্চয়ই মেল পেয়েছেন বিউটিফুল ন’পাহাড়ি থেকে। আপনার যদি হোয়াটসঅ্যাপ থাকে, আপনার কাছে বার্তা গেছে নিশ্চয়ই সুন্দরী ন’পাহাড়ি থেকে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে ন’পাহাড়ি ঘুরে যান নামে। তার মেম্বার করে নিয়েছে আপনাকে। কে আপনাকে যোগ করল আপনি খেয়াল করেননি। তারপর দেখলেন আশ্চর্য সব পাহাড়ের ছবি আসছে। উপত্যকার ছবি আসছে। একটি লেক দেখলেন। তার ধারে বাংলো। তারপর অনেক হোটেল। হোটেলের নানা রকম দাম। হোম স্টে। চমৎকার চমৎকার। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, একদিন জনৈক  ফুটফুটে সুন্দরী অমৃতা গুপ্ত লিখলেন, জানতামই না আমাদের কলকাতার কাছে এত সুন্দর এক জায়গা আছে।

তা পড়ে জনৈক তন্ময় মণ্ডল বললেন, সত্যি ভাবা যায় না, এ যেন আমাদের আরাকু ভ্যালি।

তখন অমৃতা গুপ্ত বললেন, না, আমাদের গ্রান্ড ক্যানিয়ন।

তন্ময় বললেন, গ্রান্ড ক্যানিয়ন আপনি দেখেছেন ?

বলব কেন ? রেগে গেলেন অমৃতা।

কোন দেশে বলুন তো ?

গুগুল করে জেনে নিন। অমৃতা বললেন।

তন্ময় বললেন, যা কিছুর মতো বলে দেওয়া যায় না, ন’পাহাড়ি আমাদের দেশের অংশ, তাকে বিদেশের সঙ্গে মেলাতে যাব কেন, এইটা দেশপ্রেম নয়।

আপনি আপনার দেশপ্রেম নিয়ে থাকুন, ন’পাহাড়ি না গিয়ে থাকলে দেখে আসুন।

তখন তন্ময় বললেন, আপনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ঘুরে আসুন, অবিশ্যি খরচা অনেক, নেটেই সব পেয়ে যাবেন, গিয়ে কী হবে।

অমৃতা তখন নিজেকে শান্ত করলেন, গ্রুপে লিখলেন, অবাঞ্ছিত লোক ঢুকে পড়েছে ‘ঘুরে যান ন’পাহাড়ি’ গ্রুপে, অ্যাডমিন দেখুন।

তন্ময় হাসির ইমোজি দিলেন। তারপর লিখলেন, কেউ অবাঞ্ছিত নয় আমার কাছে, সকলেই বাঞ্ছিত।

এই গ্রুপে আপনিও ছিলেন। আপনাকে কে যোগ করে দিয়েছিল তা মনে নেই। আজকাল সব কিছু মনে  রাখার দরকার পড়ে না। গ্রুপে থেকেও আপনি নিশ্চুপ। আপনি সব অনুসরণ করতেন। নিজে কোনও মন্তব্য করতেন না। অমৃতা গুপ্ত অনেক ছবি দিয়েছিলেন। হোটেলের বাগানে তিনি, পাহাড়ের নিচে তিনি, সূর্যাস্তের  সময়ে তিনি, জিন্স, শার্ট, শালোয়ার কামিজ, হাফ প্যান্ট টি শার্ট এই সমস্ত পোশাকে। লিখলেন, ন’পাহাড়ির জঙ্গলে হরিণ আছে, ময়ূর আছে, কত রকম পাখি কলকল করছে। চুপ করে বসে থাকতে খুব ভালো লাগে।

তখন আর একজন, তিনিও মহিলা, হাসিরাশি হালদার বললেন, পাখিরা ঘরে ফিরেও শান্তিতে থাকতে পারে না, ডি জে বাজিয়ে নাচ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।

একজন বললেন, সব সময় ডি জে বাজে না, কখনও কখনও বাজে। 

হাসিরাশি বললেন, তিনি প্রায় সব সময় শুনেছেন, প্রশাসনের এদিকটা দেখা উচিত।

অ্যাডমিন লিখলেন, কমপ্লেইন্ট সেন্ট টু বিডিও ন’পাহাড়ি।

একজন, তার নাম মলয় পাহাড়ি, বললেন, বিডিও কী করবে, থানায় পাঠানো দরকার, থানা ব্যবস্থা নিলে হতে  পারে কাজ।

হাসিরাশি বললেন, থানা কি জানে না, খুব জানে, ব্যবস্থা নেয় না।

মলয় বললেন, থানা নানা বিষয়ে ব্যস্ত থাকে, জানালে ব্যবস্থা নেবেই।

অমৃতা গুপ্ত ফোঁস করলেন, ডি জে সব জায়গায় বাজে, কলকাতা, বহরমপুর, চন্দননগর, কোথায় না, তাতে কী হয়েছে ?

হাসিরাশি বললেন, ঘুম হয়নি, সুবীর রায়ের হোম স্টের পাশেই রাত বারোটা পর্যন্ত ডি জে, সুবীর বললেন, শীতলা পূজা হচ্ছে।

সব সময় তো শীতলা পূজা হবে না।

আপনি সেই ন’পাহাড়ি যাবেন ভেবেছেন। ভাবনা আগে, তারপর তো যাওয়া। আপনি হোয়া গ্রুপে লেখেন, আমি ৭০ বছর ছুঁয়েছি গেল ফেব্রুয়ারি মাসে। আমি বলছি, ন’পাহাড়ি ঠিক কোন সময় যাওয়া আইডিয়াল, ওয়েদারের কথা বলছি। 

সেই সময় একজন, ঝিনুক চন্দ্র বললেন, ঐ ফেব্রুয়ারিতেই যাওয়া উচিত ছিল।

তাহলে পরের বছর ? জিজ্ঞেস করলেন আপনি।

হ্যাঁ, এইসব কথাবার্তা হয় রাত বাড়লে। এগারটার পর। তখন সকলের সব কাজ শেষ। ঘুমুতে যাওয়ার আগে কথা বলা। আপনি রাত জাগেন না। কিন্তু জাগতে হচ্ছে ন’পাহাড়ির কথায়। আপনি আপনার কথা লিখতে পারছেন না। আপনি তো আপনার যৌবনকালে ন’পাহাড়িতে পাক্কা তিন বছর ছিলেন। চাকরি করতে গিয়েছিলেন। তখন জায়গাটা খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু জেলার এক কোণে পড়ে থাকা এক জনপদ। সরকারি   কর্মচারীর পানিশমেন্ট পোস্টিং হিশেবে ন’পাহাড়িতে পাঠানো হতো। আপনি আপনার উপরওয়ালার সঙ্গে তর্ক  করে, তাঁর আদেশ অগ্রাহ্য করে ন’পাহাড়ি এসে পড়েছিলেন। পৌঁছানোর আগে মনে হয়েছিল বাঘের ডেরায় পাঠানো হচ্ছে আপনাকে। খুব মন খারাপ হয়েছিল। সেখানে যাওয়া যায়, ফেরা যায় না। ন’পাহাড়ি থেকেই বুড়ো হয়ে যাবেন আপনি। একজনের ক্ষেত্রে এমন নাকি ঘটেছিল। তিনি আর তাঁর শহরে ফেরেননি। ন’পাহাড়িতেই বদলি হয়ে তারপর কোথায় চলে গিয়েছিলেন কেউ জানে না। তাঁর পরিবারের খোঁজও পাওয়া  যায় না। মনে হয় এসব ছিল রটনা।

ন’পাহাড়ির মতো অমন সুন্দর জায়গা হয় না। এক সময় আপনার মনে হয়েছিল জমি কিনে বাড়ি করে ওখানে থেকে যাবেন। তা হয়নি। ন’পাহাড়ি আপনাকে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছিল একটু একটু করে। কিন্তু আপনি তখন বিবাহিত। আপনার নিজের মতে সব হবে না। মিসেস গিয়ে বলেছিলেন, এসব জায়গায় বেড়াতে আসা যায়, কিন্তু চিরকালের মতো থাকা যায় না। তাই থাকেননি। মিসেস এখন বৃদ্ধা হয়েছেন। তাঁকে আপনি আপনার পরিকল্পনার কথা বলেননি। বলবেন সব ঠিক করে। মিসেস ক’দিনের জন্য ন’পাহাড়ি ঘুরে আসতে না করবেন না নিশ্চয়ই। তাঁর তো জায়গাটা ঘুরে আসার মতো মনে হয়েছিল। তিনি স্কুল টিচার ছিলেন, তাই ন’পাহাড়িতে বিশেষ থাকতে পারেননি। থাকতে চাননি। গরমের ছুটির সময়েও না। তখন ন’পাহাড়িতে খুব গরম। পশ্চিমি বাতাস আগুন নিয়ে বইতে থাকে সারাদিন। আর ছিল লোড শেডিং। দিনের বেলায় বাইরে বেরোনো যায় না। তবে যদি মেঘ ওঠে, মুহূর্তে তাপমাত্রা কমে যায়। সে ছিল বিরল মুহূর্ত। আপনার ভাগ্য ভালো, এমন বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন বেশ কয়েকবার। 

আচ্ছা আপনি জিজ্ঞেস করলেন কেন, কোন মাস ন’পাহাড়ি যাওয়া সব চেয়ে ভালো ? আপনি কি তিন বছরে তা বোঝেননি ? জানেন না ? জানেন, কিন্তু এখন তো ন’পাহাড়ি বদলে গেছে। ভারজিন ল্যান্ড দেখেছিলেন আপনি। ঘুমিয়ে আছে যেন। নিস্তরঙ্গ, এক জনপদ। পাহাড়গুলি দাঁড়িয়ে আছে, অচল, গম্ভীর। জঙ্গল চুপ করে আছে। মানুষজন ন’পাহাড়ি ছেড়ে বাইরে যায় না বড় একটা। কে যেন বলেছিল, বাইরে গেলে ভয় করে। আসানসোলে এত গাড়ি, বার্নপুরে কারখানার ধুঁয়ো, কত মানুষ, হারিয়ে যাওয়ার ভয় হয়। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, বলাই নামের এক যুবক বলেছিল, যারা ন’পাহাড়ি ছেড়ে বাইরে গেছে, তারা আর ফেরেনি। এই যে আপনি চলে যাবেন, আর কোনওদিন ফিরবেন না জানি। কেউ ফেরেনি। আসলে সকলেই এই জায়গা ছেড়ে যেতে চায়। কিন্তু অনেকেই যেতে পারে না। না পেরে থেকে যায়। বলে এমন জায়গা হয় না। শোনা যায় ন’পাহাড়ির সব মানুষই নাকি বহিরাগত। সকলেই কোনও না কোনও কাজে এসে এখানে রয়ে গেছে। কিন্তু এই কথাও কথার কথা। ন’পাহাড়ির ভূমিপুত্র তো আছেই। তাদেরও কেউ কেউ বাইরে গিয়ে আর ফেরেনি। এমনি চলাচল চলতেই থাকে।

ফেব্রুয়ারিতেও ন’পাহাড়িতে খুব ঠান্ডা থাকে। মার্চের অর্ধেক অবধি ঠান্ডা থাকে। শীতকাল ভ্রমণের পক্ষে ভালো। তাই হয়ত ঝিনুক চন্দ্র ফেব্রুয়ারির কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সময়টা ছিল বিমর্ষতার। খুব মন খারাপ লাগত। তাড়াতাড়ি দিনের আলো ফুরিয়ে যেত। যত রাত, পাথর ঠান্ডা হতে হতে বরফ। সকালে কত সময় থাকত সেই ভাব। রোদ উঠলে আস্তে আস্তে সেই ঠান্ডা চলে যেত। অমৃতা গুপ্ত ঘুমোননি তখনও, বললেন, গরমটা এনজয় করা যায়।

আপনি কোন মাসে গিয়েছিলেন ? জিজ্ঞেস করলেন সেই হাসিরাশি হালদার।

অমৃতা বললেন, সেপ্টেম্বরে।

তন্ময় মণ্ডল জিজ্ঞেস করলেন, আশ্বিনে না ভাদ্র মাসে।

অমৃতা বললেন, অত জানি না।

তখন হাসিরাশি বললেন, একটা উৎসব হয় ভাদ্রসংক্রান্তির আগের রাতে, ভাদু বন্দনা, ভাদু গান।

অমৃতা বললেন, তাই, কোন তারিখে ?

জানেন না, সেপ্টেম্বরের ১৭-য় ভাদ্রসংক্রান্তি।

অমৃতা বললেন, বিশ্বকর্মা পূজা।

ওখানে ভাদু উৎসব, মনসা পূজা।

অমৃতা চুপ করে থাকলেন। তারপর অদৃশ্য হলেন। আপনিও এবার ঘুমাবেন। আপনি জানেন আপনার সেই বসবাসের সময় ন’পাহাড়ি যাওয়া কত কষ্টের ছিল। একটা বাস যাতায়াত করত দুর্গাপুর থেকে ন’পাহাড়ি। শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণ। লঝঝড়ে বাস ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে চলত, যেন নামকীর্তন করতে করতে চলেছে। একটু ছুটেই দাঁড়াত লোক তুলবে বলে। অসংখ্য স্টপেজ। সেই বাস অচল হলে ন’পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত সভ্যতা  থেকে। তখন ট্রেকার, ট্যাক্সি এসব কিছুই ছিল না ন’পাহাড়িতে। শ্রী গৌরাঙ্গ বাসও মাঝেমধ্যে অচল হয়ে বিশ্রাম নিত। কন্ডাক্টর, ড্রাইভার, হেল্পার বিকেলে ন’পাহাড়ি বাজারে আড্ডা মারত। সারাদিন তারা বাস সারাই করত ন’পাহাড়ি পুরুলিয়া রোডের ধারে। তারপর একদিন চোঙা ফুঁকে দিত হেল্পার ফকির। শ্রী গৌরাঙ্গ বাস চালু হইল। আগামী কাল সক্কাল ছয় ঘটিকা পনের মিনিট অন্তে বাস আবার দুর্গাপুর যাত্রা শুরু করিবে-এ এ এ-ক। বাস এল। বাসের গায়ে রঙের পোঁচ পড়েছে। ইঞ্জিনে তেল পড়েছে। আপনি সেই সকালের বাসে কলকাতা ফিরেছিলেন ভায়া দুর্গাপুর। বাসের চলন বলন সেই আগের মতোই ছিল। সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে ছুটছিল  সে এক হেঁপো বুড়োর মতো। এরপর একটি নতুন বাস এল দুর্গাপুর পুরুলিয়া ভায়া ন’পাহাড়ি। বাসের নাম বাবলি। কে বাবলি, না বাস মালিকের মেয়ের নাম। সেই মেয়ে বেঁচে আছে না নেই, তা নিয়ে জল্পনা চলত ন’পাহাড়ির মানুষের ভিতর। কেউ বলে আছে। কলকাতায় থাকে। কেউ বলে নেই, অকালে চলে যাওয়ায় বাবা তার নাম  লিখে রেখেছে বাসের গায়ে। কেউ বলে সে বালিকা, কেউ বলে সে যুবতী, অতীব সুন্দরী। বাবলি বাসটি যেমন ছিল আরামদায়ক, তেমনি ছিল তার গতি। কন্ডাক্টর ড্রাইভারের ইউনিফরম ছিল। ভাড়া বেশি ছিল। কন্ডাকটরের নিজস্ব সিট ছিল জানালার ধারে। সেই সিটে কেউ বসলে উঠে যেতে হতো। এক্সপ্রেস বাস সব স্টপেজে দাঁড়াত না। শুধু ন’পাহাড়িতে দাঁড়িয়ে দশ মিনিট বিশ্রাম। সেই সময় নিতাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সন্দেশ রসগোল্লা নিমকি গজা খুব বিক্রি হয়ে যেত। বাসের প্যাসেঞ্জাররা হামলে পড়ত ন’পাহাড়ির সন্দেশ আর প্যাড়া লেডিকেনি রসগোল্লা খেতে। আচমকা একদিন সেই বাস পুরুলিয়া থেকে এল না। সকলে অপেক্ষা করতে লাগল। বাবলি বাবলি করতে লাগল। কিন্তু বাবলি আর আসে না। কী হলো। কদিন বাদে খবর এল।  শ্রী গৌরাঙ্গর কন্ডাক্টর বলল, সে বাস অন্য পথে চলছে, পুরুল্যা থেকে রাঁচি, নাইট সার্ভিস। এই পথে লোকে ভাড়া দেয় না। ভাড়া নিয়ে গোলমাল করে। ঝগড়া করে। বাবলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিতাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কপাল পুড়ল। শেষে মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বন্ধ করে, চপের দোকান হলো। আলুর চপ, বেগুনি, ফুলুরি, পিঁয়াজি ইত্যাদি তেলের কড়ায় ছোটাছুটি করতে লাগল, ফুটতে লাগল। মটুকবনি থেকে চপ ফুলুরির সেরা কারিগর সুরেন পাঁজি এল। মিষ্টান্নর কারিগর নয়ন ঘোষ বিদায় নিয়ে জেলা সদরে চলে গেল কাজের সন্ধানে। বলে গেল, এ কেমন জায়গা, সন্দেশ রসগোল্লার দাম নেই, সবেই ফুলুরি পিঁয়াজি। বাবলির আবির্ভাব, বাবলির অন্তর্ধান, সবই আপনার ন’পাহাড়ি বসবাসের সময় ঘটেছিল। বাবলির চলে যাওয়ার পর ন’পাহাড়ির মানুষজন যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল। কেন না বাবলি কোনওদিন আগে এসে যেত, কোনওদিন লেট করত। যেদিন আগে এসে যেত, সেদিন কতজন যে বাস মিস করত। পরিবার নিয়ে এসে শুনত বাবলি চলে গেছে। আর শ্রী গৌরাঙ্গও তো সকালে বেরিয়ে গেছে। তখন ভ্যান রিকশায় চেপে পুরুলিয়া হাইওয়ে গিয়ে অপেক্ষা করা যদি কোনও বাস আসে পুরুলিয়া বর্ধমান ভায়া বাঁকুড়া রুটে। সকলে যখন শুনল বাবলি আর আসবে না, তারা বলল, ‘এই ভালো, গোরাঙ্গয় যাব আর গোরাঙ্গয় ফিরব, বাস মিস নেই, ভাড়া বেশি নেই, দরকারে ভাড়া বাকি  রাখা যায়, মাসকাবারি করা যায়। সব চেয়ে খুশি হয়েছিল সুদাম সামন্ত বলে এক মাস্টার। সে এখানকার মানুষ, কিন্তু মাস্টারি মহিজোড় নামে এক গ্রামে। বাবলি বাসে সে দারুণ যেত। দারুন আসত। সময় নষ্ট হতো না। সে ছিল সম্পাদক। তার পত্রিকার নাম ছিল ন’পাহাড়ি সমাচার। যখন শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণে যেত, তার ভাড়া লাগত না। বিনিময়ে নিজের পত্রিকা ন’পাহাড়ি সমাচার-এ পিছনের পাতা জুড়ে শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণের মালিক তারাপদ সাহা ও তার বাসের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করত। প্রতি সংখ্যায় বিজ্ঞাপন থাকত। তাতে তার খাতির হয়েছিল খুব। খাজনা মকুব যেমনে হয়, ভাড়া মকুব। বাস মালিক বলেছিল, যতবার ইচ্ছে যাতায়াত করতে পারেন শিক্ষক মশায়। শিক্ষক জাতির গর্ব তা তিনি নিজ কর্মে প্রমাণ করিয়াছেন।

কিন্তু এই শর্ত দিতে গিয়ে শিক্ষক সুদাম সামন্তকে প্রত্যাখ্যান করে বাবলি ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস। কন্ডাক্টর আর হেল্পার বলে ওসব চলবেনি, আমাদের পিকচার ছাপা হলেও ধার-বাকি চলবেনি। সে বলত তোমার মালিকের ছবি দাও, দেখো কেমন বিজ্ঞাপন যায়, তোমাদের সেল বেড়ে যাবে।

কী করে বাড়বে ? চোয়াড়ে হেল্পার, গলায় চেন, হাতে বালা, মুখে বিড়ি, জিজ্ঞেস করেছিল।

হিসেব করে দ্যাখো বাড়ে কি না, এই যে নেল পালিশ, শেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপন দ্যায় কাগজে, কেন দেয়, না সেল বাড়বে বলে। 

ধুর, আমাদের মালিক ওসবের ধার ধারে না, ভাড়া বের করেন, এ লাইনের মানুষ ছাড়া বে লাইনের মানুষ তো  এই বাসে চড়তে আসবে না, টাকা বের করেন।

এমনি তর্কাতর্কি চলত। বাস থেকে নামতেই দেবে না কন্ডাক্টর। আগে ভাড়া দাও, তারপর নামা হবে। মাস্টার  হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল। বাবলি বন্ধ হয়ে যেতে মাস্টার বলেছিল, সে তার পত্রিকায় বাবলির বিরুদ্ধে লিখে বন্ধ করে দিয়েছে তার চলন। সংবাদপত্রের অসীম ক্ষমতা। বেশি ভাড়া নিচ্ছিল। কন্ডাক্টর হেল্পার ড্রাইভারের ব্যবহার খারাপ। আবার সে ফিরল শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণে। তারাপদ সাহা, পরিবহণ মালিক প্রথম মাসে দু পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন আদায় করেছিল। নত মস্তকে তা মেনে নিয়েছিল শিক্ষক সুদাম সামন্ত। 

আপনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখলেন, ন’পাহাড়ির বাস সার্ভিস কেমন ?

রাত হয়েছিল অনেক, কোনও জবাব পেলেন না। আপনি তবু লিখলেন, ন’পাহাড়ির মিষ্টান্ন ভালো না তেলে ভাজা ভালো ?

সবশেষে লিখলেন, ন’পাহাড়ি সমাচার কি এখনও প্রকাশিত হয়, শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণ এখনও চলে, সেই হেল্পার কন্ডাক্টর কি এখনও আছে, শিক্ষক সুদাম এখনও ফ্রিতে যাতায়াত করেন ?

এইসব লিখে আপনি ঘুমাতে যাবেন। ঘুম আর আসে না। কত রাত অবধি জেগে থাকলেন। একটা লোকের কথা মনে পড়ল, তার নাম মহাদেব দলুই। শীতের সময় ভিসিপি আর টিভি সেট নিয়ে গ্রামে গ্রামে সিনেমা দেখিয়ে বেড়াত। তখন ভিডিও ক্যাসেটের যুগ। আপনি আপনার ভাড়ার বাড়িতে সেই মহাদেবকে ডেকেছিলেন। কী সিনেমা আছে বলো। মহাদেব লিস্ট ফেলে দিয়েছিল। হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি, প্রেমের সিনেমা, ভক্তিমূলক সিনেমা, অ্যাডাল্ট সিনেমা, করমুক্ত সিনেমা, অ্যাডভেঞ্চার… সব আছে। আপনি দেখলেন, প্রসেনজিৎ বিজয়েতা অভিনীত উদ্ভ্রান্ত প্রেম। কী দেখেছিলেন মনে নেই এখন। ইচ্ছে ছিল ব্লু লেগুন সিনেমাটি দ্যাখেন। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেননি। বললেই হতো। না বলার কোনও কারণ এখন আপনি দেখতে পান না। এখন সেই সব কি আর আছে ? ভ্যান রিকশায় করে টিভি সেট ভিসিপি নিয়ে সিনেমা, ভালোমন্দ সিনেমা হবে―বলে কেউ কি হেঁকে যায় ? মহাদেব দলুই, এইচ এস। তারপরে আর পড়া হয়নি। চাকরিবাকরিও হয়নি। ঘুমের ভিতরে ন’পাহাড়ি ভেসে আসার কথা ছিল। এসে ছিলও হয়ত। ঘুম ভাঙতে তা ভুলে গেলেন। স্বপ্নের কথা সব মনে থাকে না।

দুই

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তর কিংবা পালটা প্রশ্ন এল বিকেল নাগাদ। এত সময় আপনি চুপ করে আছেন। গ্রুপে কেউ কেউ ন’পাহাড়ির একটি হোটেলের কথা বলল। হোটেলের নাম হিল ভিউ থ্রি স্টার। জায়গাটি কোথায় তা তিনি বুঝতে পারলেন না। হোটেলের ব্যালকনি থেকে সানরাইজ দেখার সুবন্দোবস্ত আছে। আর একটি হোটেলের ছবি দেখলেন, হোটেল সানসেট থ্রি স্টার। সেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখবার  সুবন্দোবস্ত রয়েছে। জঙ্গল সাফারিতে প্রচুর হনুমান, বনবিড়াল, ময়ূর এবং পাখি দেখার সুবন্দোবস্ত আছে। ভাগ্য থাকিলে ব্যাঘ্র দর্শন হইতে পারে। নীল গাই, বনকুকুর এসবও দেখা যেতে পারে। আর হাতি। পাহাড়  থেকে হাতিরা নেমে আসে। হাতিরা অবশ্য খুব ভয়ের হয়ে উঠেছে। হাতি তাড়ানোর জন্য হুলো পার্টি হয়েছে। সারা রাত ক্যানেস্তারা বাজিয়ে হাতিগুলোকে দূরে পাঠিয়ে দেয়। ডিজে বাজানোও হয় হাতি তাড়াতে। আপনি অবাক হচ্ছেন। আপনার মনে পড়ছে শুধু ময়ূরের কথা। এত বছরে এত সব ঘটে গেছে ? এত বন্যপ্রাণি এসে গেছে ভ্রমণকারীর মনোরঞ্জনের জন্য ?

বিকেলে অমৃতা গুপ্ত লিখলেন, গাড়ি নিয়ে যাবেন, গাড়ি নিয়ে ফিরবেন, পরিবহণ কী দরকার ?

আমার দরকার আছে।

তন্ময় মণ্ডল এতক্ষণে হাজির, বলল, ধর্মতলা থেকে বাস পাবেন, সকলের কি গাড়ি থাকে ?

রিটায়ার করলে সকলে এখন গাড়ি কেনে। অমৃতা বলল।

কত লোক রিটায়ার করে না, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে খেতে হয়। তন্ময় বলল।

উফ, তাদের কথা হচ্ছে না ?

তন্ময় জিজ্ঞেস করল, কাদের কথা হচ্ছে ?

অমৃতা চুপ। তখন আপনি জিজ্ঞেস করলেন, ভিসিপি আর টিভি ভ্যানে চাপিয়ে…।

কীসব বলেন আপনি ? অমৃতা মন্তব্য করল, কোন যুগের কথা বলছেন ?

ন’পাহাড়ি সমাচারের কথা কেউ বললেন না। আপনি লিখলেন।

তন্ময় অমৃতার কথা টেনে নিয়ে বলল, ভুল বলেছেন নাকি, ওখানে অমন হয়, তা না হলে আর ন’পাহাড়ি মনোরম হলো কিসে ?

কী হয় ? জিজ্ঞেস করল অমৃতা।

তন্ময় মণ্ডল বলল, আমি দেখেছি সিনেমা, বিজয়েতা আর প্রসেনজিৎ, উ™£ান্ত প্রেম।

যত্ত আজেবাজে কথা, আপনাদের রেস্ট্রিক্ট করা দরকার, ন’পাহাড়ি কি তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে পড়ে আছে যে ভিসিপি দিয়ে সিনেমা দেখবেন, এখন মোবাইলে সিনেমা, হোটেলের ঘরে ঘরে ৩৬ ইঞ্চি টিভি স্ক্রিন, স্মার্ট টিভি। 

তার জন্য খরচা করে অতদূর যেতে হবে কেন ? তন্ময় বলল, এসব শহরেই আছে ঘরেই আছে। 

আপনি যান, গিয়ে দেখুন ন’পাহাড়ি ইজ সো বিউটিফুল। অমৃতা বলল, পাহাড় দিয়ে ঘেরা ।

মনে হচ্ছে আপনি আর কোথাও যাননি। তন্ময় লিখল। সঙ্গে হা হা হাসির ইমোজি।

আপনি বাজে কথা বলবেন না, আমি সারা ভারত ঘুরেছি। অমৃতা বলল।

কুণ্ডু এক্সপ্রেস ?

ফালতু বকবক করবেন না।

আপনি তমালি নদী দেখেছেন ?

ওখানে কোনও নদী আছে বলে শুনিনি। 

ওখানে হবে কেন, এই ভারতে। হাসির ইমোজি দিয়ে লিখল তন্ময়, ন’পাহাড়ির পাশেই মধুগ্রাম, মধুগ্রাম পার হয়ে তমালি নদী।

আপনি আপনার কথাকে টেনে নিয়ে উত্তর চাইলেন, শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণ আছে কি না। আপনার কথায় দুজনেই নীরব। আপনি জানতে চাইলেন বাবলি ট্রান্সপোর্ট ফিরে এসেছে কি না। আবার হোয়াটসঅ্যাপ নীরব। একজন বলল, তার নাম সুজয় সামন্ত, বলল, আমি এখন আমেরিকায় থাকি, মোরেনো ভ্যালি, জায়গাটাকে আমি মনে মনে ন’পাহাড়ি বলি, তবে ক’দিন আর বলতে পারব জানি না, কেননা আমার ভাই গোটা একটা  পাহাড় লিজ নিয়ে নিয়েছে ন’পাহাড়িতে।

হোটেল বানাবে ?

না পাহাড় ভাঙবে, পাথর পাঠাবে চারদিকে, ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, আমি সুদাম সামন্তর ছেলে, আমাদের পত্রিকা ছিল ন’পাহাড়ি সমাচার।

সুদামবাবু আছেন ?

না, চলে গেলেন গেল বছর।

ভিসিপি টিভি নিয়ে ঘুরত যে সেই রাবন দরিপা আছে ?

না, রাঁচি চলে গেছে।

ইস্কুলের হেড মাস্টার ?

না নেই, তিনি তো বছর দশ মারা গেছেন, আচমকা হার্ট অ্যাট্যাক, সময় দেননি, তাঁর বাড়ির সামনে সাতদিন ধরে ইংলিশ ফেস্টিভ্যাল হচ্ছিল, ডি জে বেজেই যাচ্ছিল।

ডি জে, আমি ঠিক বলেছি। হাসিরাশি হালদারের আবির্ভাব হলো, ডি জে-র জন্য আমি চলে এসেছি, পাহাড় কাঁপিয়ে দেয়।

অমৃতা গুপ্ত লিখলেন, তা নয়, ডি জে বাজিয়ে হাতি তাড়ানো হয়।

হাসিরাশি বললেন, না, ডিজে বাজিয়ে পাহাড় ভাঙা হয়।

তখন আপনি আবার সুজয়কে লিখলেন, দেখা হবে, ইংলিশের টিচার নীলরতন দত্ত কেমন আছেন ?

তার ছেলেটি মারা গেল ফুসফুসের ক্যানসারে, একমাত্র ছেলে, তিনি ন’পাহাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন, আর আসবেন না বলেছেন। 

শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণ কী হলো ?

আপনি জানেন না, ভয়ানক দুর্ঘটনা হয়েছিল, রাস্তা থেকে পাহাড়ের খাদে, ১৯ জন মারা গিয়েছিল।

সুদামবাবু  কি ঐ দুর্ঘটনায় ?

না, বাবা দিন দিন বিমর্ষ হতে লাগলেন, আমার ভাই অজয় সামন্ত তখন পাহাড় লিজ নিয়ে ভাঙতে আরম্ভ করেছে, হোটেল বানিয়েছে একটা, সেই হোটেলে মেয়েছেলে আনা হয় আশপাশের গ্রাম থেকে, তাতে টুরিস্ট  বেশি আসে। সুজয় বলল, বাবা মন খারাপ করে করে মারা গেলেন।

আপনি লিখলেন, ন’পাহাড়ির পাহাড়গুলো ভাঙছে।

চার-পাঁচটা পাহাড় ভ্যানিশ হয়ে গেছে। সুজয় বলল।

তখন অমৃতা রায় বলল, সব মিথ্যে, সব পাহাড় আছে, আমি গুনে দেখেছি।

সুজয় বলল, না, পাহাড়ের সংখ্যা কত ছিল কেউ জানে না, নয় হতে পারে, নিরানব্বই হতে পারে।

আপনি আমেরিকায় থাকেন, দেশের নিন্দা করছেন।

আমি কাজে এসেছি পাঁচ বছরের জন্য, ফিরে যাব।

ন’পাহাড়ি সম্পর্কে যা বললেন কোনওটাই ঠিক নয়। অমৃতা বলল।

তন্ময় মণ্ডল একটি ছবি দিল। ডিজে মিউজিক, বুলডোজার, পাহাড়, ডিনামাইটে বিস্ফোরণ, পাহাড় লুটিয়ে পড়ছে। অমৃতা গুপ্ত আর কথা বলল না। অদৃশ্য হলো। তন্ময় লিখল, তবু এসে ঘুরে যান ন’পাহাড়ি, এখানে কী হচ্ছে জানুন, সব জায়গায় তা ছড়িয়ে দিন। 

আপনি ন’পাহাড়ি চলেছেন। জিপিএস অন করেছেন আপনার মোবাইলের। গুগল আপনাকে পথ দেখাচ্ছে। আপনি সেই বালিভাসা দামোদর পার হয়েছেন। এবার সোজা ন’পাহাড়ি। একটি দুটি করে পাহাড় ফুটে উঠবে দিগন্তে। আপনি দিগন্তে চেয়ে আছেন। ধু ধু রাস্তা। এই রাস্তায় শ্রী গৌরাঙ্গ পরিবহণ, বাবলি ট্রান্সপোর্ট যাতায়াত করত কি ? সব ভুলে গেছেন আপনি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন বাম দিকে মস্ত খাদ। ডান দিকে ক্রমে উঠে গেছে ন্যাড়া পাহাড়ের রূপ। কিন্তু তার সমস্ত দেহ ক্ষত-বিক্ষত। খোঁদলে, কৃষ্ণগহ্বরে ভরা। আপনি ক্রমে ন’পাহাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। যেতে যেতে ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু ঘুমুতে পারছেন না। মন খারাপ হতে আরম্ভ করল, কিন্তু চেষ্টা করছেন আনন্দের ভাব আনতে। আপনার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েছেন ক্লান্তিকর উচ্ছিন্ন নিসর্গ দেখতে দেখতে। আপনারা কি এই ন’পাহাড়িতে ফিরছেন, এই ফেরা চিরকালের ? এরপর আর কোথাও যাওয়া হয় না, তাই। ন’পাহাড়ি তবু বেঁচে থাকুক। এমনি বেঁচে থাকুক।

সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ  

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button