অনুবাদ গল্পআর্কাইভবিশ্বসাহিত্য

অনুবাদ গল্প : শিখা

মূল : সুশিমা ইউকো

বাংলা অনুবাদ : মাজহার জীবন

সেই বিকেলে ডে-কেয়ার সেন্টার থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে আরেকটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চোখে পড়ল। জায়গাটা স্টেশন থেকে যে রাস্তা ধরে সব সময় আসি সে রাস্তায়। ভেতরে একটা চক্ষু ক্লিনিক। পুরাতন এবং নিচু দালান। এ ক্লিনিকে একসময় আমি নিয়মিত যেতাম। দালানটার প্রবেশমুখের পাশে কিছু পুষ্পস্তবক পড়ে আছে। দরজা খোলা। সাদা-কালো পর্দা ভেতরের দিকে সরে গেছে। ক্লিনিকের বাইরে ডাক্তারের কোনও এসিসটেন্ট বা নার্স আছে বলে মনে হলো না। হয়তো ডিউটির সময় পেরিয়ে গেছে। ক্লিনিকের মালিক একগুঁয়ে বৃদ্ধ ডাক্তার। মনে হয় তার কোনও এসিসটেন্ট কিংবা নার্স নাই। তেমন একটা রোগীও নাই হয়তো। চেম্বার ভরা ঔষধের বাক্স। মেঝে কিছুটা ঢালু। তারই অন্তেষ্টিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার নাও হতে পারে। ভেতরে গিয়ে আমার জিজ্ঞেস করতে মন চাইছে কিন্তু তা না করে উল্টো আমি বাইরেও এক মুহূর্তের জন্যও দাঁড়ালাম না।

আমাকে অনেক মৃত্যু দেখতে হয়েছে। আমার নিত্যদিনের চলার পথে ঠিক কতগুলো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখেছি তার সঠিক হিসেব আমার কাছে নাই এখন। এটা নিশ্চিত যে আমার দেখা মৃত্যুর সংখ্যা তেমন বেশি না হলেও, এই মুহূর্তে, আমি মন থেকে এই অনুভূতি ঝেড়ে ফেলতে পারছি না যে প্রতিটি বাঁকে মৃত্যু আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আর আমি এটা না ভেবে পারলাম না যে, দুনিয়ার এসব একের পর এক আলামত আমাকে কী বোঝাতে চাচ্ছে।

শীত আর বসন্তের সন্ধিক্ষণ এখন। বছরের এই সময়টাতে আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে না। কোনও কোনও দিন গরম থাকে। আর্দ্র বাতাস যা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বয়ে চলে। আবার কোনও কোনও দিন দু এক ইঞ্চি বরফেও ভরে যায়। এ সময়টাতে যারা অসুস্থ তাদের কথা বার্তা টালমাটাল হয়ে পড়ে। এটা এমন একটা সময় যখন অসুস্থ মানুষজন চিরদিনের জন্য পার হয়ে যায়। আমার এপার্টমেন্টটা পুরাতন বসতি এলাকায়। এখানে অনেক বয়স্ক মানুষের বাস। আমার মনে হয় এটাও অবশ্যই একটা কারণ এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু দেখার। সে বছরের স্থানীয় মৃত্যুর হারের সঙ্গে এ এলাকায় চলে আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। এমন হবেই বা কেন ? তবু, যখনি আমি আরেকটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখি, আমার মন সেটাকে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়, ওটাকে আমার মৃত্যুর দিকে নির্দেশ করে।

প্রথমটা ছিল ফুলের দোকানে। আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি তার থেকে রাস্তার সোজা উল্টোদিকে দোকানটা। দোকানের মালিক মারা যায়। দোকানের সামনে এলাকার সমিতির সাদা-কালো চাদোয়া টাঙানো হয়েছিল। বিরাট আকারে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অনেকগুলো ফুলের মালা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই দোকান খুলে দেয়া হয়েছিল। আমি আর আমার মেয়ে খেয়াল করলাম, মধ্যবয়সী এক মহিলা―বোঝাই যায় দোকান মালিকের মেয়ে―সে এখন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখের কিনারা লাল। যেন সে একটু আগেই কেঁদেছে।

এরপর ছিল একজন অবসর নেওয়া এক বৃদ্ধ নাপিত। আমাদের বিল্ডিংয়ের পাশেরটাতেই তার দোকানের উপর থাকত সে। দুদিন ধরে পথের ধারে ইজেল ভর দিয়ে রাখা ফুলের মালাগুলো পাশ কাটিয়ে আমরা যাতায়াত করতাম।

পরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আমার মেয়ের ডে-কেয়ার সেন্টারের কাছেই এক বাড়িতে। তখন আমি ভয় আর আতঙ্কের ঢেউয়ে ভাবলাম, ‘ঘটনা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে।’

কিন্তু তখনও আরও খবর আসার বাকি। কোবায়াশি। আমার আগের বস। তিনি মারা গেলেন অল্পদিনেই। বছরের দীর্ঘ সময় লিভার সিরোসিস নিয়ে হাসপাতালে কাটিয়েছেন তিনি। অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিলে সুজুই তার স্থলাভিষিক্ত হন। একদিন সকালে লাইব্রেরিতে গেলে এই খবরটা তিনি আমাকে দিলেন। সুজুই তার নিজের নামের সঙ্গে আমার নাম যোগ করে একটা শোকবার্তা খাম সঙ্গে নিয়ে সেদিন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন। সেদিন শেষ বিকেলে ফেরত এসে আমাকে জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছিল ছিমছাম আর সাদামাটা। কিন্তু কোবায়াশির ব্যক্তিগত জীবন ছিল জটিল এটা নিশ্চিত। দুজন মহিলা মিসেস কোবায়াশি হয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং সুজুই বুঝতে পারছিলেন না কাকে এবং কীভাবে এপ্রোচ করতে হবে।

এমনকি কোবায়াশির মৃত্যুও আমার ভেতর তেমন কোনও প্রভাব ফেলেনি―অন্তত তেমন কষ্ট পাইনি এটা বলাই যায়। বিস্ময় আর ভয়ের একটা মধ্যবর্তী স্তরে ছিলাম আমি। একের পর এক মৃত্যু দেখতে দেখতে এক ধরনের অস্পষ্ট উদ্দেশ্য অনুভব করতে শুরু করি আমি।

কিছু দিনের মধ্যে আরও অনেক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখলাম আমি।

ঠিক এ সময়ে আমি জ্বরে কাবু হয়ে গেলাম। অসুস্থ অনুভব করায় সকালে উঠে পড়লাম। বিকেল নাগাদ দেখলাম রান্নাঘরে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। আমার জ্বর ১০২ ডিগ্রির উপর উঠে গেল। আমি তাতামি রুমে [জাপানের ঐতিহ্যবাহী ঘর, যে ঘরের ফ্লোরে ম্যাট বিছানো থাকে] আমার পা কোটাটসু কম্বলের [জাপানে টেবিল এক ধরনের কম্বল দিয়ে মোড়ানো থাকে] ভেতর ঢুকিয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলাম, ‘মা অসুস্থ। এখন কোনও কাজই করতে পারব না আমি―ভাবছি এখন তোমার কি হবে। মিতচানতের বাড়ির কাউকে কি ডাকব আমি ? তার বাবা বা মা তোমাকে নিতে আসুক যাতে তুমি তাদের কাছে থাকতে পারো, যেমনটা তুমি সবসময় থাকো ?’

সপ্তাহে মোটামুটি একবার সে ডে-কেয়ার থেকে কোনও এক খেলার সাথীর সঙ্গে তাদের বাড়িতে রাত কাটায়। মিতচানের বাবা মা এ নিয়ে প্রথম দিকে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। সে সময় এটা ছিল আমার মেয়ের জন্য ব্রিদিং স্পেস। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটা আমার আর আমার মেয়ের কাছে নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। তালাকের বিষয়টি ফয়সালা করতে আমার স্বামী ফুজিনো তৃতীয়বারও কোনও সাড়া দেয়নি। ফোন কল এবং চিঠি পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মেয়ের প্রতি তার কোনও আগ্রহ নাই আর। আমার জীবন থেকে তার সকল চিহ্ন যেন মুছে গেছে। আমার ধারণা এ সময়টাকে কেউ হয়তো ঝামেলামুক্ত সময় বলতে পারে। কিন্তু আসলে আমি এক রকমের ভয়ের মাঝ দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মায়ের এই অস্থিরতার কারণে আমার তিন বছরের মেয়েটাকে প্রায় রাগ-ঝাল সহ্য করতে হয়।

প্রথম থেকেই সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাইরে রাত কাটাতে পছন্দ করে। আমার ভেতর যত উদ্বিগ্নতা কাজ করে। শহরের মাঝখানে কোনও এক জায়গায় আমি তাকে হারিয়ে ফেলেছি―এ স্বপ্ন দেখে বেশ কয়েকবার আমি যখন চোখে অশ্রু নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠি তখন আমার ভেতর চরম উদ্বিগ্নতা কাজ করে। এর মাঝেই যদিও আমার গভীর ঘুম হয় যখন আমি ওকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি―এমনকি যখন তাকে বলি, ‘কাল কি মিতচানের বাড়িতে যাবে ?’ সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সুর করে ও গাইতে শুরু করে, ‘কাল মিতচানের বাড়ি, কাল মিতচানের বাড়ি।’

তার সঙ্গে আমিও যাব বললে সে উত্তেজিত হয়ে উত্তর দেয়, ‘তুমিও চলো আমার সঙ্গে, মামনি। আমার একসঙ্গে ডিনার করবো তাহলে।’ এটা শুনে আমার মনে হলো তার নাচের সময় যেন আমার গানে কণ্ঠ মেলানোর মতো।

যখন দেখলাম আমার জ্বর ১০২ ডিগ্রি এবং অন্তত একদিন কোনও কামকাজ করতে পারব না, আমি স্বাভাবিকভাবেই মিতচানের পরিবারের কথা ভাবলাম। আমার মা কাছেই থাকে কিন্তু আমি তাকে জানতে দেব না। আমার সঙ্গে ফুজিনোর সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে আমি তাও তাকে বলিনি। আমি চেয়েছি আমার মা জানুক আমাদের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে এবং আমি আর আমার মেয়ে ঠিকমতো বেড়ে উঠছি। মায়ের প্রতি আমার আচরণ, ফুজিনোর প্রতি আমার আচরণের মতোই।

‘ঠিক আছে, আমি মিতচানের বাড়ি যাব না, তোমার সঙ্গেই থাকব। তুমি অসুস্থ, তাই না মামনি ?’

‘মিতচেনের বাড়ি’ শব্দটা বলার সঙ্গে আজ তার মুখ উৎফুল্ল দেখালো না। অবাক হয়ে আমি তাকে জোরাজুরি করলাম, ‘ঠিক বলছ তো ? আমি মনে হয় কাল তোমাকে ডে-কেয়ারে নিয়ে যেতে পারবো না। তোমাকে সারা দিন তাই বাড়িতেই থাকা লাগতে পারে।’

‘আমার কিছু হবে না। মামনি তুমি অসুস্থ ?’ ও আমার দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্নটা আবার করল। তাকে দেখে মনে হলো এই আইডিয়া তার মনে ধরেছে। আমি মাথা নাড়লাম, তার হাতটা ধরে আমার কপালে রাখলাম।

‘গরম। তুমি সত্যিই অসুস্থ।’ তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। সে আমার গাল, ঠোঁট এবং হাত স্পর্শ করল। তার ভাবভঙ্গিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা লক্ষ করা গেল।

আমি উঠলাম এবং তাকে কিছু রুটি আর দুধ এবং ঠান্ডা সস দিলাম। তারপর দুইটা ম্যাট পাতানো রুমটাতে এসে ফুটনে [নিচু কাঠের সোফা কাম বেড] এলিয়ে পড়লাম। এবং বুঝতে পারার আগেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

কপালে এক টুকরো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পানিপট্টি দেওয়ার জন্য রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। আমার মেয়ে এখনও বাইরের পরিপাটি কাপড় পরা। কম্বলের উপর কুঁকড়ে ঘুমিয়ে আছে। বাতি জ্বলছে এবং টিভি চলছে।

পরের দিন আমি সারা দিন বাড়িতে কাটালাম। ঝিমালাম। তোয়ালে দিয়ে সে আমার মুখ মুছিয়ে দিল। জ্বর মাপল। আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এল। আমার মুখে সে পানি ঢালল আর তাতামির ওপর গ্লাস রাখল। সেও টিভি দেখল এবং তার মাথা আমার হাতের উপর রেখে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ঘুম দিল। আমরা একসঙ্গে চালের জাউ আর টুকটাক খাবার খেলাম। সে রাতে তারও জ্বর এল ১০৪ ডিগ্রির কাছাকাছি। এবার আমার পালা তাকে ভেজা তোয়ালে দিয়ে গলা আর বুক মোছা।

পরের দিন সকালে, আমার নিজের জ্বর কমে প্রায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চলে এল। আমি তাকে আমার পেছনে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি আমাদের দুজনকেই ওষুধ দিলেন। আমি জানি আমার অন্তত দুধ আর ডিম কেনার জন্য থামা উচিত কিন্তু আমরা সোজা ঘরে চলে এলাম। আমাদের জন্য নির্ধারিত ওষুধ সেবন করে আমার শুতে চলে গেলাম।

এর পরের দিন তার জ্বরও পড়ে যেতে শুরু করে অবশেষে। কিন্তু তার ডায়রিয়া হয়ে যায়। ডায়রিয়া হলে সবসময় তার কয়েক দফা অসুস্থতা শুরু হয়ে যায়। ওকে একটা বড় সাইজের ন্যাপি পরালাম; তারপরও তার বিছানা এবং শরীরের নিচের দিকের অপরিচ্ছন্নতা থেকে রেহাই পেলাম না। ঘরটা অস্বাভাবিক আরামদায়ক যেন আমাদের নিজেদের উষ্ণতা আর গন্ধে ভরে আছে। ন্যাপিগুলো পরিষ্কার করে পেছনে ফিরতে গিয়ে একটা স্টুপারের উপর পড়ে গেলাম। মনে হচ্ছে জ্বর ভাবটা রয়ে গেছে এখনও। এরপর খেয়াল করলাম আজ শনিবার―আগামীকালও আমার বন্ধ। ফলে ছুটির অনুমতি নেওয়া লাগবে না। গতকাল থেকেই ফ্রিজে কিছু নাই। বিকেলে মেয়ে যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন বাজার সারলাম। দুধ, ডিম আর সব্জির সঙ্গে কলা কিনলাম। আমার মনে পড়ল ও যখন একেবারে ছোট ছিল তখন কলা ছিলে চামচের মাথায় নিয়ে তার মুখে পুরে দিতাম। এখন মনে নাই সেই সময় ওর কত বয়স ছিল।

তিন দিন পর সেই রাতে প্রথম রান্নাঘর থেকে গরম পানি নিয়ে দুজনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলাম। প্রথমে আমি আমার মেয়ের মুখ, গলা এবং হাত স্পঞ্জ করলাম তারপর তার বুক ও পিঠ। শুড়শুড়িতে অস্বাভাবিকভাবে শরীর মোচড়াচ্ছিল বলে তাকে বাম হাতে চেপে ধরে তার নিচের অংশে স্পঞ্জ করে দিলাম। পানি পরিবর্তন করে, আমি আমার উপরের অংশের কাপড় খুলে ফেললাম। আমার ঘাড় এবং হাতে গরম দোয়ালে দিয়ে স্পঞ্জ করতে লাগলাম। সে তাকিয়ে দেখছিল। যখন আমার বুকের কাছে স্পঞ্জ শুরু করলাম তখন আমার কাছে এল সে। ভয়ে ভয়ে আমার স্তনের বোঁটায় স্পর্শ করল। আমি থামলাম এবং তার হাতের চলাচল খেয়াল করলাম। সে একটা বোঁটাতে খামচি দিল আর সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়ল। অপ্রস্তুত সুড়সুড়িতে আমি আগেই কুঁজো হয়ে গেছিলাম। আমার স্তন দুটো হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম।

সে হাসতে হাসতে ফুটনে গড়াগড়ি করতে লাগল। তারপর মুখ তুলে বলল, ‘আরেকবার আমি কি করতে পারি ?’

সামান্য দ্বিধার পর আমি মাথা নাড়ালাম। সে তার আঙ্গুলের মধ্যে আমার বোঁটা নিল। এবার ধরে রাখল এবং শক্ত করে চাপ দিল এবং মুচড়াতে লাগল।

‘উফ! সাবধান, তুমি তো ছিঁড়ে ফেলবে!’

আমি তার হাত সরিয়ে দিলাম। ব্যথার বদলে মজাই পেলাম। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুবয়সে তার স্তন চোষা একই ধরনের মজা আমার ভেতর খেলে যেত। যা দারুণ আনন্দময় এক শিহরণ।

‘ব্যথা লাগছে ?’ আমার বোঁটার দিকে অস্বস্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে জিজ্ঞাসা করল।

‘তা তো বটেই। যদি তুমি ওদের ছিঁড়ে ফেল আর নতুন করে গজাবে না।’

আমি দ্রুত পায়জামার উপর দিকটা পরে ফেললাম। আমার ভাল লাগার আকস্মিক চমক সে যাতে বুঝতে না পারে।

‘অবশ্যই আসবে,’ সে বলল, ‘তারা অবশ্যই ফেরত আসবে।’

‘কোনও সম্ভাবনা নাই। এমনকি দুধও আর বের হবে না।’

‘সব চলে গেছে ?’

‘হ্যাঁ । তুমি অনেক অনেক খেতে, যদিও―’

‘আমি একটু চাই।’

আমার মেয়ের চোখ আবার জ্বলজ্বল করে উঠল।

‘না পাবে না। তোমাকে আগেই তো বলেছি সব শেষ হয়ে গেছে।’

আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং পালিয়ে গিয়ে হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে গেলাম। কিন্তু যখনই বাতি বন্ধ করে আমরা বিছানায় এলাম সে আমার স্তনের কাছে আবার এসে এমন কণ্ঠে বলল যাতে হাসি এসে যায়, ‘আমি তো ছোট্ট―’

‘তাই তো। তুমি এখনও ন্যাপি পরো।’

‘উহু উহু, উহু উহু।’

আমার হাসি চলে এল। ‘সেই বাচ্চাটি মজার সুরে কাঁদে। বেড়ালের মতো, আমার মনে হয়।’ দম বন্ধ করা হাসি দিয়ে সে বলতে থাকল, ‘উহু উহু, আমার পেটে ক্ষুধা।’

‘সে কি, তাহলে সেই ছোট্ট মেয়েটা কথাও বলতে পারে ?’

‘উহু উহু। মা বোকা।’

‘এই যে এই যে, এই নাও। ঠিক আছে, আচ্ছা এই নাও।’

বড় একটা আলিঙ্গন করে ওকে আমার দিকে তুলে নিলাম। আমার জামার উপরের অংশ তুলে স্তন খুলে দিলাম এবং তার মুখ আমার বোঁটায় চেপে ধরলাম। স্তনের আশপাশে কিছু সময়ের জন্য সে তার মুখ রাখল। কিন্তু তারপর লাজুক হাসি হাসতে লাগল এবং মুখ সরিয়ে নিল। একইভাবে আমার স্তনে রাখা তার গাল সরিয়ে নিল এবং আমার পোশাকের উপরের দিকের প্রান্ত চুষতে লাগল। শিশুকাল থেকেই সে কোনও কাপড় না চুষে ঘুমাতে পারে না।

দিনের শেষের দিকে আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম।

কয়েক ডজন লোকের সঙ্গে আমি স্কুল বা ফ্যাক্টরি থেকে আউটিং বা পিকনিকে গেছি। মনে হচ্ছে তারা আমার প্রাইমারি স্কুলের সহপাঠী। কিন্তু তারা বড় হয়ে গেছে এবং তাদের চেহারা বড়দের মতো।

একটা অফিস বিল্ডিংয়ের ম্যাটমেটে বাদামি রঙের সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে কোনও কিছুর জন্য আমাদের অপেক্ষা করানো হচ্ছে। কেউ কেউ বুদ্বুদ উঠা পানীয় পান করেছে, আবার কেউ বাথরুমে যাওয়ার বাহানা করছে। এবার আমার সুযোগ ভেবে আমি আমার জামাকাপড় পরিবর্তন করতে শুরু করলাম।

পরের ঘটনা যা ঘটল তাতে আমি বুঝলাম সবাই হতাশ হয়ে হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেও আমার নিচের দিকে তাকালাম। আমার ডান দিকের স্তনের পাশ দিয়ে আমি কেবল দেখতে পেলাম আমার আন্ডারওয়ার দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বাসের ফাঁক দিয়ে আমার ডান স্তন দেখা যাচ্ছে হতবিহ্বল হয়ে আমি তা ঢাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না।

একটা কণ্ঠ বকুনির স্বরে বলল, ‘এসব কী করছ তুমি ? লজ্জা করে না!’ তারপর মন্তব্যের কোরাস ছড়িয়ে পড়ল, ‘কাপড় পরো। এখনই!’ ‘এটা বিকৃতি।’ ‘কি অস্বস্তিকর।’ ‘এ রকম জায়গায় এমনটি করে!’ ‘এত আনমনা!’, ‘মেয়েটা এত হতভাগা।’

বোকা হয়ে আমি মন খারাপ করে চিন্তা করছিলাম তারাই ঠিক। কেন আমি একটু নির্জন জায়গা খুঁজে বের করলাম না ? আমি কেবল ভেবেছিলাম কেউ না তাকাতেই আমার পোশাক পরিবর্তন করে ফেলব কিন্তু এটা আমি কী করছিলাম ?

আমার আন্ডারওয়ার আর ব্লাউজে জট পাকিয়ে গেল। এবং আমি বলতে পারবো না তখন আমার পোশাক কোথায় এবং আর কোথায় আমি মুখ লুকাবো। পোশাক পরিবর্তন করার আগে মনে হয় আমি আমার সব খুলে ফেলেছিলাম। যতই আমি ঢাকতে চাইছিলাম ততই আমার ডান স্তন বের হয়ে যেতে থাকল। আমার মনে হলো আমি কেবল সবাইকে হতাশই করিনি বরং নিজেকে কান্নার পাত্র করে ফেললাম।

একটা লোক আমাকে পেছন থেকে উৎসাহব্যঞ্জক ধাক্কা দিল, ‘এখনও অনেক সময় আছে, বোকা, কেন টয়লেটে যাচ্ছ না ? আমি তোমার সঙ্গে যাচ্ছি।’ কাঁপা কাঁপা পায়ে আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম।

সেখানে কেউ ছিল না । আমার সঙ্গের ছেলেটা ওয়াশবেসিনের জায়গায় একটা চেয়ার খুঁজে পেল। পেছন ফিরে সেই চেয়ারে বসে পড়ল। ‘জলদি সারো। এখানে কেউ নাই। তুমি ঠিক আছ।’

ছেলেটা আমার পুরাতন ক্লাসমেট। ওর নাম ভুলে গেছি। কিন্তু তার চেহারা খুবই পরিচিত। পেছন দিক থেকে সে শিশুকালে যেমনটি ছিল তাকে তার বড় ভার্শন দেখতে লাগছিল।

‘ঠিক আছে।’ নির্জন জায়গা পেয়ে স্বস্তি পেয়ে আমি নগ্ন হতে শুরু করলাম। আমাকে কোমরের উপরের দিকে নগ্ন হতে হবে। তাই আমি ভাবলাম তাকে কিছু একটা বলা দরকার। তাই ছেলেটাকে বললাম, ‘তাকাবে না।’

সে হেসে উঠল। ‘আমার কোনও আগ্রহ নাই।’

‘না, আমি তা বলিনি।’

নিশ্চিত হয়ে আমি কোমর পর্যন্ত কাপড় খুলে ফেললাম এবং আমার ব্লাউজ থেকে আন্ডারওয়ার আলাদা করতে লাগলাম। ছেলেটার ঘাড়ে আমার হাত লেগে গেল। তার ত্বক খুবই মসৃণ। এখন তাকে ভালমত দেখে বুঝলাম তার গায়েও কিছু নাই। যদিও সে পুরোদস্তুর যুবক কিন্তু তার পিঠ মোটাসোটা শিশুর মত মসৃন। যতবার আমি নড়াচড়া করি, আমার হাত কিংবা পিঠ কিংবা স্তনের বোঁটা তার গায়ের সঙ্গে ঘষা লাগতে লাগল। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখি। ঘটনার পরিক্রমায় আমি বিহ্ববল বোধ করি। আমাদের ত্বক ছাড়া আমার সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। দুজনের সেই ত্বক আভায় ভরে যেতে লাগল। যদিও ভয়ে চিৎকার দেয়ার মতো অবস্থা, আমি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতায় হারিয়ে গেলাম…

সকালে উঠে খেয়াল করলাম আমার বোঁটায় এখনও একটু ক্ষত আছে। আমার মেয়ে আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে। আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম এ কারণে যে মৃত্যুর পরম্পরা আমার কাছে আবার ফেরত আসছে।

লাইব্রেরিতে আমার কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলাম। তিন মাস পর প্রথম ফুজিনোর একটা কল পেলাম। পাশের একটা কফির দোকানে তার সঙ্গে দেখা হলো।

সে জানতে চাইল আমি কেমন আছি। আমি বললাম খুব ভালো আছি।

‘তুমি তালাক চাইছ, তাই তো ?’ সে বলতে থাকে, ‘ব্যাপারটা ফয়সালার জন্য তুমি পারিবারিক আদালতে যেতে চাইছ ?’

আমি মাথা নাড়ালাম।

‘যথেষ্ট হয়েছে―যদি তুমি সত্যিই তালাক চাও, তাহলে সেটা করেই এ সম্পর্কের সমাপ্তি হোক। আমি কেবল ভাবি এটা লজ্জাকর যে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের মতো আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করিনি। ঠিক এক বছর আগে আমরা পৃথক হয়ে গেছিলাম―আমার যথেষ্ট হয়েছে। আমি শেষ হয়ে গেছি।’

অপলক দৃষ্টিতে আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হতভম্ব হয়ে গেলাম। অস্পষ্টভাবে আমি এই সম্ভাবনার সমাপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছিলাম যে, এখনও ফুজিনোর সঙ্গে আমার বিয়ের সম্পর্কটা টিকে থাকতে পারে। যদিও তাকে বিশ্বাস না করতে নিজেকে বোঝাতাম। সে একেক সময় একেক মেজাজের মানুষ। কিন্তু তার সেই দিন আরও কিছু বলার ছিল, ‘এটা আমার জন্য খুব খারাপ। সবচেয়ে খারাপ একটা বিষয় আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। তারপরও আমিই যেহেতু ছেড়ে গিয়েছি তাই কোনও অভিযোগ করব না―আমাদের ছোট্ট সোনামনিটাকে আদর যত্নে রেখ। অন্য এক সময় তালাকের বিষয়াবলি ঠিক করা যাবে। চিন্তা কোরো না মেয়ে তোমার জিম্মায় থাকবে। আমি তার জন্য তো কিছুই করিনি―’ তির্যক হাসি দিয়ে তার জ্যাকেটের বুক পকেট থেকে একটা পেপার বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। এটি হলো শরৎকালে আমার পাঠানো ডিভোর্স ফর্ম। আমি আগেই আমার অংশ পূরণ করে দিয়েছিলাম। এখন ফুজিনোর অংশটুকুও পুরণ করা এবং তার সিলও যুক্ত করা আছে। সাক্ষীর অংশ এখনও খালি আছে। ‘তুমি এটা ফাইল কোরো,’ সে বলল, ‘তোমার কাছে এটা রেখে যাচ্ছি।’

‘কিন্তু―তুমি কি নিশ্চিত ?’

শুধু এই তুচ্ছ শব্দগুলো আমার মুখ থেকে বের হলো। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটল। আমি কাগজ থেকে আমার চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। এর মধ্যে আমার শরীরের চেতনা হারিয়ে ফেললাম।

‘আমি কি নিশ্চিত ? এটাই তো তুমি চেয়েছিলে ? তুমি যা চেয়েছ আমি সেটাই করেছি, ব্যস।’

‘ধন্যবাদ―’

পুরোপুরি বুঝে উঠার আগেই আমি আমার মাথা নোয়ালাম। একই প্রশ্ন আমি তাকে বারবার করতে চাচ্ছিলাম, সে কি নিশ্চিত যে আমরা একটা বড় ভুল করে ফেলেছি ? আমি অবশ্য সব সময় তালাক দিতে চেয়েছি, যদিও সে সব ইচ্ছা চেহারায় ফুটে উঠেছে, আমার একটা আর্জি তার কাছে থেকেই গেছে এবং চিৎকার করে বলতে চেয়েছি, ‘আমাদের হয়তো ভুল ছিল―আমরা কি এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারি না ?’ যদিও আমি কেবল তার সামনে মাথা নিচু করে একটা ঘোরের মধ্যে বসেছিলাম।

চলে যাওয়ার আগে ফুজিনো বোঝানোর চেষ্টা করছিল, সে আমার কাছ থেকে নেওয়া টাকা এই সময় শোধ দিতে পারবে না। যখন তার পক্ষে সম্ভব হবে তখন মেয়ের ভরণপোষণের টাকা দিতে চায় কিন্তু তা এখন তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। সিনেমা তৈরি এবং ছোট একটা থিয়েটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন বাদ দিয়ে সে কাউকে হতাশ করতে চায় না। চলে যাবার জন্য সে উঠে দাঁড়াল।

‘তোমার অফিসের সময় ডাকার জন্য দুঃখিত।’

‘আরে না, আমি দুঃখিত যে―’ আমি আমতা আমতা করে আরেকবার মাথা নিচু করে বললাম।

সে আমাদের কফির বিল পরিশোধ করল এবং আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।

আসলেই কি এমনটা ঘটল ? আমি কিছুক্ষণ ঠায় বসে থাকলাম। নড়তে পারছিলাম না। আমি এখন নিশ্চিত হয়ে গেছি যা হারাতে চলেছি তার মাত্রা ব্যাপক। গত বছর পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্পর্ক যতটুকুই ছিল, সেই তো আমার কাছে অন্য যে কোনও জনের থেকে কাছের মানুষ ছিল। একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে চাইতাম। আমি আশা করতাম সে অন্তত বুঝতে পারুক যে আমার তার প্রতি কোনও ঘৃণা বা তিক্ততা নাই। আমি যতটুকু জানি সেও হয়তো সেভাবেই ভাবতো। আমি শুধু এটুকুই চিন্তা করতাম যে সম্ভবত এমন একটা বন্ধন আছে যা দু পক্ষকেই বিশ্বাস করতে হবে কিন্তু তা উভয় পক্ষ কেবলই ঘৃণা করেছে। আমি আর ফুজিনো উভয়ই রক্তমাংসের মানুষ যারা কেউই চায় না তাদের জীবন শেষ হয়ে যাক।

এই চিন্তায় আমার আরও মনোবল ভেঙ্গে পড়ল।

এ সময়ে আবহাওয়া সব সময় গরম থাকছে।

একদিন গভীর রাত্রে প্রচণ্ড শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিল্ডিং কেঁপে উঠল। আমার মেয়েও জেগে গেল। কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগল। আমার হৃৎপিণ্ড খুব জোরে জোরে উঠানামা করছিল। কারণ আমরা ছাদের খোলা জায়গায় উঠে গিয়েছিলাম কী ঘটেছে তা দেখার জন্য। রাস্তা ভালো করে দেখলাম। কোনও কিছুই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কিন্তু আমি দেখলাম এখানে-সেখানে মানুষজন জানালা থেকে হেলে আছে, তার মানে এটা পরিষ্কার যে আমিই একমাত্র ব্যক্তি না যে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।

ভয়ে মেয়ে কেঁদেই যাচ্ছিল। তাই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আমি আবার কী হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করলাম। কীসের কারণে নিচে এই আওয়াজ হলো ? হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলকানিসহ একটা শক যেন আমাদের শরীরের উপর দিয়ে বিল্ডিংয়ে আঘাত করল। আমি চোখ বন্ধ করলাম। অপ্রস্তুত অবস্থায় মাথা নিচু করলাম। আবার কী হলো তা বোঝার চেষ্টা করলাম। রাতে আরও জোরে শব্দ ঘুমের মাঝে পেলাম। সঙ্গে দেখলাম আকাশ লাল হয়ে গেছে। কী ঘটছে সে বিষয়ে আমার এখনও কোনও ধারণা নাই। কিন্তু লালাভ বর্ণের সৌন্দর্য যা ছড়িয়ে আছে এবং তা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। তা দেখে যেন আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

আরেকটা বিস্ফোরণ হলো। রাতের আকাশ নতুন লাল আভায় ভরে গেল। এর মাঝে আমার ভয় চলে গেছে। পুরো আকাশ জুড়ে সূর্যাস্তের মতো আভা। দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। আর ডান দিকে জীবন্ত বস্তুর মতো আলো ঝলসে উঠছে। এ সময় তার চারপাশের আকাশে দ্বিতীয় বিস্ফোরণের দীর্ঘ আভা ছড়িয়ে পড়ছে। আকাশের আলোয় রাস্তাও লাল হয়ে গেছে।

এর পর চতুর্থ এবং পঞ্চম বিস্ফোরণ হলো। কিছুটা অল্প শব্দের। তারপর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। যদিও আলোর ঝলকানি জটিল ও সৌন্দর্যে ভরে গেল।

‘কান্নাকাটি না করে, যদি দেখি কেমন হয় ? এরকম মনোরম আকাশ আমি আগে কখনও দেখিনি। দারুণ সুন্দর।’

আমার মেয়ের মুখ আকাশের দিকে তুলে ধরলাম।

‘আহ, মামনি―’ যদিও সে আমার উপর এখনও হেলে আছে, সে হা করে দেখছে। তার গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে লাল আলোয় প্রতিফলিত হচ্ছে। যখন বিস্ফোরণের আওয়াজ মিইয়ে যাচ্ছে তখন বিস্ফোরণের উৎস থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে রঙও ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমরা অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আর নতুন কোনও বিস্ফোরণ হলো না এবং আকাশ আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে গেল। আকাশের প্রকৃত রঙে ফেরত আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। আমরা দু জনই কাঁপছিলাম।

পরের দিনে পত্রিকার পাতায় পড়লাম আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে স্বতঃস্ফূর্ত রাসায়নিক সংযোগের কারণে ছোট একটা রাসায়নিক কারখানা বিস্ফোরিত হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ নিহত-আহত হয়েছে।

আমার কাছে মনে হলো সে রাতে আকাশের আভা সম্ভবত আশপাশের ঘটে যাওয়া মৃত্যু বিষয়ে শেষ সংকেত।

সে রাতে মানুষ মারা গিয়েছিল―মুহূর্তেই তারা মারা গিয়েছিল এটা নিয়ে আমার সন্দেহ নাই। আমার মনে হয়েছিল, আমি অবশেষে বুঝতে পেরেছি মৃত্যুর এই মিছিল আমাকে কী বোঝাতে চেয়েছে। তাপ এবং শক্তির আলো। আমার শরীর পুরোপুরি তাপ এবং শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েছে। গত রাতে আকাশে লাল আলোর আভায় আমি নিজেকে পরিবর্তন করে শেষ-না-হওয়া মৃত্যু-ভাবনা ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button