ধূমকেতু : আঁধারে অগ্নিসেতু : মোহিত কামাল

প্রচ্ছদ রচনা : নজরুলের ধূমকেতু আঁধারে অগ্নিসেতু
তখন পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল। সেই দুঃসময়ে সৌরমণ্ডলের ধূমকেতুর মতোই আবির্ভাব ঘটল নজরুলের অর্ধ-সপ্তাহিক পত্রিকা ধূমকেতু, শুক্রবার আর মঙ্গলবার প্রকাশিত হতো। পুরাণে বর্ণিত ধূমকেতু আর সৌরমণ্ডলের প্রাকৃতিক ধূমকেতুর মধ্যে পার্থক্য কী ? কেন নজরুল পত্রিকাটির নাম রেখেছিলেন ধূমকেতু ?
সৌরবিজ্ঞান আর পুরাণের আলোকে উত্তর খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই আলোচনার প্রথম পর্বে।
ধূমকেতু হলো ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ক্ষুদ্র বরফাবৃত সৌরজাগতিক বস্তুটি সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করার সময় দর্শনীয় কমার মতো একটা পাতলা, ক্ষণস্থায়ী বায়ুমণ্ডলের উদয় ঘটায় এবং কখনও লেজও প্রদর্শন করে। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের ওপর সূর্যের বিকিরণ ও সৌরবায়ুর প্রভাবের কারণে কমা-আকৃতিটা স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে সৌরমণ্ডলে। লেজও। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস হলো বরফ, ধুলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে কণিকার এক দুর্বল গুচ্ছ-সমাহার। প্রস্থে কয়েকশ মিটার থেকে দশ কি.মি. এবং লেজের দৈর্ঘ্যে কয়েকশ কোটি কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে।
একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েক শ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। যেমন হেল-বপ ধূমকেতু। ধারণা করা হয় স্বল্পকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি কুইপার বেল্ট থেকে যার অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে এবং দীর্ঘকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি ওরট মেঘ থেকে, যা সৌরজগতের বাইরে একটি বরফময় বস্তুর গোলাকার মেঘ। সৌরজগতের বড় গ্রহগুলো যেমন বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন অথবা সৌরজগতের খুব কাছ দিয়ে পরিক্রমণকারী নক্ষত্রের কারণে ওরট মেঘে যে মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে তাতে বস্তুগুলো সূর্যের দিকে ছুটে আসে এবং তখনি কমার উৎপত্তি হলে আমরা ধূমকেতু দেখতে পাই।
কমা ও লেজের উপস্থিতির কারণে ধূমকেতু উল্কা বা গ্রহাণু থেকে পৃথক। কিছু বিরল ধূমকেতু সূর্যের খুব নিকট দিয়ে বারবার পরিভ্রমণ করার কারণে উদ্বায়ী বরফ ও ধুলা হারিয়ে ছোট গ্রহাণুর মতো বস্তুতে পরিণত হয়।
কিছু ধূমকেতু নির্দিষ্ট সময় পরপর একই স্থানে ফিরে আসে। যেমন হ্যালির ধূমকেতু। সৌরবিজ্ঞান বিষয়ে উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত এসব তথ্যের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই এই মহাজাগতিক ধূমকেতুর নামে কেন পত্রিকার নাম রাখা হলো ? নামকরণে কী দর্শন এবং মনস্তত্ত্ব কাজ করেছিল নজরুলের মনোজগতে।
ধূমকেতু পত্রিকার সময়কে যদি আমরা ব্র্যাকেট-বন্দি করি তাহলে দেখব ১১ আগস্ট ১৯২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি ১৯২৩ পর্যন্ত ছিল এর স্থায়িত্বকাল। খুবই স্বল্প সময়ের জন্য ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে উদিত হয়েছিল নজরুলের ধূমকেতু। অন্যদিকে সৌরমণ্ডলের ধূমকেতু কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েক হাজার বছর স্থায়িত্বকাল পেতে পারে। আর নজরুলের স্বল্প আয়ুর ধূমকেতুর গুরুত্ব, ঐতিহাসিক অবদান কিংবা প্রভাব এখনও প্রাসঙ্গিক, এখনও চলমান, চেতনায় চিরঞ্জীব। সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর, ঊনব্বই আর ২০২৪ জুলাইয়ের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে বলা যায়, নজরুল ওই সময়ের জন্য নয় কেবল, সর্বকালের জন্য প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ধূমকেতু এবং স্থির বিশ্বাস জন্মেছে আরও সহস্র বছর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে চির জাগরূক থাকবে।
প্রকৃতির ধূমকেতু নির্দিষ্ট সময় উদিত হয় আকাশে আর নজরুলের ধূমকেতুর প্রকাশনা মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস আয়ুষ্কাল পেয়ে বন্ধ হয়ে গেলেও এর বলিষ্ঠ স্বরের লয় নেই, ক্ষয় নেই। আঁধারে ডুবে থাকা মানুষের জন্য তিনি ধূমকেতুর মাধ্যমে নির্মাণ করেছিলেন অগ্নিসেতু, দুর্দিনের ওই দুর্গশিরে ঠিকই বিজয়কেতন উড়াতে পেরেছিলেন। এখনও তা প্রাসঙ্গিক।
সৌরজগতের ধূমকেতু বারবার সূর্যের কাছাকাছি ভ্রমণ করার কারণে উদ্বায়ু গ্যাস এবং ধুলাবালি মুক্ত হয়ে নক্ষত্রে পরিণত হয়। আর ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা দেখি তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সাহিত্যিকগণও নজরুলের পাশে ছিলেন নক্ষত্ররূপে। প্রথম সংখ্যা থেকে প্রকাশিত কবিগুরুর আশীর্বাদ-বাণীও সুদূরপ্রসারী স্থায়ী ব্যবহারিক প্রতিফলন উপহার দিয়েছে। প্রকাশনা শুরুর প্রথম দিকের কয়েকটি সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ-বাণী বারবার প্রকাশিত হয়। সবার আশীর্বাদ নিয়ে দুর্বিনীত ধূমকেতু স্বাধীনতার আকাশে নক্ষত্ররূপে প্রতিষ্ঠা পায়। ভারতবর্ষের আঁধারে ডুবে থাকা জনগণকে তো অবশ্যই, একই সঙ্গে তা যেন আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক আঁধার-সময়েও আলোর বাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও যে কোনও দুর্যোগে কিংবা বিরোধপূর্ণ রাজনীতির মাঠেও নজরুলের ধূমকেতু চিরঞ্জীব চেতনা নিয়ে দৃশ্যমান হবে, বলা যায়।
সৌরমণ্ডলের কিছু কিছু ধূমকেতু নির্দিষ্ট সময়ের পর আবার উদয় হয়। এদিকে পত্রিকা প্রকাশনার জগতেও ধূমকেতু নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। পূর্বের উদিত ধূমকেতুর কথা মাথায় রেখে প্রায় ১৯ বছর পর জেনেশুনে নজরুল আবার ধূমকেতু নামটি ব্যবহার করলেন। এ যেন হ্যালির ধূমকেতুর মতোই গুরুত্ববহ বা তার চেয়েও বেশি।
‘ধূমকেতুর উদয়ে অমঙ্গল সূচিত হয়। পৃথিবী যখন পাপাচারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, পৃথিবীর সব জীব তখন অসার সুখে উন্মত্ত হয় এবং অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে যখন বিশ্বনিয়ন্তার রোষানলের কটাক্ষরূপে ধূমকেতুর আবির্ভাব হয়। এবং প্রলয় বা বিপ্লবের কাল সমাগত তার ইঙ্গিত দেয়। সেইজন্য ধূমকেতুর আবির্ভাব অশুভ হলেও তার পরিণাম মঙ্গলপ্রদ। ভারতবর্ষ দীর্ঘকাল ধরে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে, বিপ্লবের সময়কাল এবার উপস্থিত। তারই সূচনা করবে ধূমকেতু।’ নজরুল গবেষক ও নজরুলবিষয়ক সাহিত্যবোদ্ধা বিনোদ ঘোষাল শাস্ত্রকারদের বয়ানের আলোকে যে-উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন তার ভেতর থেকে জানা যায় ধূমকেতু নামকরণে নজরুলের গোপন মনস্তাত্ত্বিক প্রণোদনার কথা। প্রথম দিকে ধূমকেতুর আবির্ভাবকে হুজুগে মনে হলেও প্রকাশনার সিদ্ধান্তের আড়ালে যে গভীর আর দীর্ঘ সময়ের ইচ্ছা-ভাবনা ও নজরুলের বিদ্রোহীসত্তার ছাপ ছিল তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে―মনি ঘোষের মেটকাফ প্রেসে ধূমকেতু ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়। সম্পাদকের অফিস ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক আফজল উল হক। কাগজ প্রকাশের তোড়জোড়ের সময় প্রচ্ছদের ডিজাইন করে দিলেন চারু রায়। প্রকাশনার আগে নজরুল প্রথম বিজ্ঞাপনটি লিখে আনন্দবাজার পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলেন। কৌতূহলসৃষ্টিকারী ছোট্ট কথামালাটি ছিল : ‘শীঘ্রই প্রলয়ংকর ধূমকেতু দেখা দিবে, হুঁশিয়ার হউন।’
প্রলয়ংকরী ঝড়ের আভাস দিয়ে এভাবে নজরুল জাতিকে সাবধান করেছেন সতর্ক হওয়ার জন্য। সেই ঝড় ছিল শব্দঝড়, শব্দের মাধ্যমে অন্তর-আত্মার ভেতর বিপ্লবকে উস্কে দেওয়ার ঝড়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক-মসনদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়ার ঝড়। সেই ‘হুশিয়ারি সংকেত’ কি কেবল সে যুগের পরাধীন ভারতবাসীর জন্য? নির্মম শোষক-শাসকদের জন্য ? এ রচনা লিখতে বসে প্রশ্ন জেগেছে মনে।
দুই
নজরুলের ধূমকেতু পত্রিকা আমার মস্তিষ্কে ছেলেবেলায়ই পত্রিকা-প্রকাশের এক মহান চারা রোপণ করে দিয়েছিল―বড় হয়ে লেখক ও সম্পাদক হওয়ার দুর্নিবার ইচ্ছার বীজটি অক্সিজেন আর আলো-বাতাস পেয়ে ধীরে ধীরে আরও শানিত হতে থাকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ নবাঙ্কুর কচি-কাঁচা মেলার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে। শিশুসাহিত্যিক ও শিশুসংগঠক কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার পরিচালক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই সম্পাদিত মাসিক কচি ও কাঁচা পত্রিকাটিও সেই সময়ের দুরন্ত ইচ্ছাটিকে আরও প্রাণিত করতে থাকে। তখন কি জানতাম সেই রোপিত গোপন-ইচ্ছা আর গোপন থাকবে না, রূপান্তরিত হবে শব্দঘর নামক মাসিক সাহিত্য পত্রিকায় ?
কেউ যদি জিজ্ঞেস করত বড় হয়ে কী হবে ?
উত্তরে নিঃসংকোচে বলে ফেলতাম তিনজনের কথা :
বলতাম নজরুল হব।
বলতাম রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই হব।
বলতাম স্যার জগদীশচন্দ্র বসু হব।
কেন আর কারুর মতো হওয়ার কথা ভাবা গেল না ?
উত্তরে বলতাম বিজ্ঞানী হব। লেখক হব। জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন বিজ্ঞানী ও লেখক। এজন্য তাঁর মতো হতে চাই। আর তিনি ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু, দেখতেও ছিলেন সুদর্শন। বলতাম তাঁর মতো সুদর্শন হব। রবীন্দ্রনাথেরও বন্ধু হব।
সুদর্শন হতে পারো, সম্ভাবনা আছে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বন্ধু কীভাবে হবে ?
বলতাম রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ পড়ে ফেলেছি। তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি শব্দ আমার বন্ধু হয়ে গেছে। বন্ধু হয়ে মাথায় ঘোরাফেরা করে। আমার সঙ্গে কথা বলে। তো, ওপারে চলে গেলে কি কেউ বন্ধু হতে পারে না, তাঁর বন্ধু হওয়া যায় না ? শিশুতোষ প্রশ্ন শুনে কেউ কেউ হো হো করে হাসতেন।
তবে এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘দোয়া করলাম বড় হয়ে লেখক হবি, বিজ্ঞানী হবি’। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের বাংলা শিক্ষক আলী আকসার স্যার।
তো, নজরুল হতে চাও কেন ? কেন হতে চাও রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ?
নজরুলের ধূমকেতুর মতো পত্রিকা প্রকাশ করব। সম্পাদক হব। সাহিত্যিক হব। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের মতোও সম্পাদক আর শিশুসাহিত্যিক হব, বড় হয়ে শিশুদের অন্তরে সাহিত্যের আলো ছড়িয়ে দেব, আমাদের অন্তরকে তিনি যেভাবে আলোকিত করেছেন, সেভাবে।
অর্থাৎ সাহিত্যিক ও সম্পাদক হওয়ার গোপন বাসনা ছেলেবেলা থেকেই লালন করছি।
ওদের মতো যোগ্যতা আছে তোমার ? এত বড় বড় ভাবনা কি সফল হবে ?
আমার কাজ সফল হওয়া নয়। ওঁদের পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া আর তাঁদের শনাক্ত করেছে আমার মস্তিষ্ক। ইচ্ছাকৃতভাবে তো করিনি। হয় সফল হব অথবা ব্যর্থ। পথ খুঁজে পেতে হবে তো, অসুবিধা কোথায় ?
শোনো, নজরুল ছিলেন জন্মগতভাবে মেধাবী। স্বতঃস্ফূর্ত মেধাবী। মাত্র ২২-২৩ বছর ছিল তাঁর সাহিত্যিকজীবন। এই অল্প-জীবনে কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, অনুবাদ, নাটক-নাটিকা ইত্যাদি রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে তিনি নিয়ে গেছেন শিখর হিমাদ্রির উচ্চতায়, হিমালয় চূড়ায়। তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা কোরো না। লাভ হবে না। সময় নষ্ট হবে। ববং চোখ-কান খোলা রেখে পড়োশোনা কর। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছায় এগিয়ে চলো।
না। উল্লিখিত এসব সৃষ্টিই নজরুলের চূড়ান্ত বা শেষ কোনও অর্জন নয়, তাঁর অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হলো ধূমকেতু পত্রিকার প্রকাশও। আর চিকিৎসক হলে কি সম্পাদক হওয়া যাবে না ? এমন কোনও বিধিনিষেধ কি আছে ? লেখক হওয়াও যাবে না ? বনফুল চিকিৎসক ছিলেন না ? সমারসেট মম কিংবা নীহারঞ্জন গুপ্ত ?
নানা সমালোচনা আর কটাক্ষের জবাবে বলেই, ধূমকেতুর প্রকাশকালে নজরুলকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ছন্দগাথা বাণী পাঠিয়েছিলেন, তা আবৃত্তি করে শুনিয়ে দিতাম।
প্রথম কয়েকটি সংখ্যার প্রথম পাতার শীর্ষে ওই বাণী লেখা থাকত। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ ওই সময়ের অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এমনকি অমৃতবাজার পত্রিকা ধূমকেতুর আবির্ভাবকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান। ধূমকেতু প্রকাশের গুরুত্ব কি কম নজরুলের জীবনে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতালগ্নে ?
কী বলো! স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতা থেকেও ধূমকেতু গুরুত্বপূর্ণ ?
তুলনা চলবে না। ধূমকেতুর জায়গায় ধূমকেতু, ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জায়গায় বিদ্রোহী। প্রতিটা ক্ষেত্রেই নজরুল শিখর হিমাদ্রির নজরুল। তবে পরাধীন ভারতবর্ষে অসচেতন কিংবা অচেতন জনগোষ্ঠীর মনেও বিদ্রোহের উত্তাল স্রোত জাগিয়ে তুলেছিল পত্রিকাটি। ১৯২১ সালে প্রকাশিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতো অন্ধকারে ডুবে থাকা জনগোষ্ঠীর বুকে দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল ধূমকেতুও, ১৯২২ সালের আগস্টে, প্রকাশকাল থেকেই।
বিশ্বকবির আশীর্বাদ আর আঁধারে অগ্নিসেতু বাঁধার আহ্বান যথার্থই ছিল। নজরুলও সফল হয়েছিলেন। এই পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ রাজনৈতিক কবিতাটি প্রকাশিত হয়। সেটি জবরদখলকারী ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তাঁর যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়। গ্রেফতারের পর কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। এই নজরুলের ভেতর থেকে জেগে ওঠে আরেক নজরুল। দুরন্ত সময়ে দুর্বিনীত মনের টানে তিনি লিখে ফেলেছিলেন ‘ভাঙার গান’―কারার ঐ লৌহ কপাট…। এই গান/কবিতা কি কম গুরুত্বপূর্ণ ? ধূমকেতু কি রাজনৈতিক দলিল হিসেবে, ব্রিটিশ-শাসন পতনের ঐতিহাসিক চার্টার হিসেবে কোনও অংশে কম ?
তিন
হ্যাঁ, নজরুল ঠিকই ধূমকেতুর মাধ্যমে আঁধারগহ্বরে ডুবে থাকা অর্ধচেতন-অচেতন ভারতবাসীর জন্য অগ্নিসেতু নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। ওই সেতুর ইট-সিমেন্ট-রস-উপাদান ছিল ‘শব্দ’। শব্দ-জোয়ারে রাজনীতির মাঠে আছড়ে পড়েছিল স্বাধীনতার আত্মবিশ্বাসী সেøাগান। প্রবল প্রতাপশালী সেই ঢেউ ছড়িয়ে গিয়েছিল সমগ্র ভারতবর্ষে। জাতির পিঠে চেপে থাকা পরাধীনতার জগদ্দল পাথর সরানো এবং অমঙ্গলনাশক হিসেবে ধূমকেতুর উদয় হয়েছিল বিশ্বনিয়ন্ত্রকের রোষানলের কটাক্ষরূপে; বিপ্লব আবির্ভাবেরও সতর্ক ঘণ্টাা বাজিয়ে দিয়েছিল রাজনীতির সংক্ষুব্ধ মাঠে। সেই ঘণ্টা এখনও প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষের বুকে আগুন জ্বালিয়ে এখনও ঘণ্টা বাজায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, ‘ভাঙার গান’ এবং ধূমকেতুর অগ্নিসেতু বিশ্ববাসীর সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয় সেই যুগের। সংযোগ ঘটিয়ে দেবে ভবিষ্যতের বৈষম্যময় আর কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধেও, বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্তর-আত্মার সঙ্গে। ‘নজরুল’ কিংবা ধূমকেতু―এই সমার্থক শব্দ দুটো কেবল সেকালের নয়; সর্বকালের! ১৯২২ সালে আগস্টের ১১ তারিখ যাত্রা শুরু করে, ১৯২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল ধূমকেতুর সর্বশেষ সংস্করণ। মাত্র ৩২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। সময়ের হিসেবে প্রকাশিত পত্রিকাটির আয়ু অতি স্বল্প সংখ্যাও কম। নজরুলের সাহিত্যিক জীবনও অল্প সময়ের। নজরুলের স্বল্প-সাহিত্যক জীবন আর স্বল্পআয়ুর বত্রিশ সংখ্যা ধূমকেতু পত্রিকার মধ্যে এক ঐতিহাসিক দার্শনিক সংযোগ ঘটে গেছে। সেই সংযোগের মধ্য দিয়ে যে বিপুল আর শক্তিময় আলোর বিকিরণ ঘটে চলেছে তা সময়কে জয় করে কালোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, আমাদের সময়ে চলে এসেছে। ভবিষ্যতেও সে আলোর বিকিরণ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে, বিশ্বাস জন্মেছে।
ধূমকেতুকে আর স্বল্প আয়ুর ধূমকেতু বলা যায় ?
নজরুলের সাহিত্যিক জীবনকে আর অল্পজীবনের সাহিত্যকাল বলা যায় ?
ক্ষুদ্র কালে বসে তিনি মহাকালের ঝান্ডা উঁচিয়ে দিয়েছেন। সেটা বিশ্বসাহিত্যেও উড়তে থাকবে। ভালো অনুবাদ হলে তা বিশ্ববাসীর জন্য গৌরবের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও বিশ্বাস।
তাঁর এক বছরের কারাদণ্ড হয়। এই গ্রেফতার ও কারাদণ্ড নজরুলের ভেতরের বিদ্রোহীসত্তাকে আরও বিপুল পারমাণবিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ১৯২১ সালে লেখা তাঁর ‘বিদ্রোহী কবিতার সেই মনঃশক্তির আরও ব্যাপক উদ্ভাস এবং সাহসের বিপুল বিস্ফোরণ দেখতে পাই। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দি হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি দিয়েছিলেন চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে। তাঁর ওই কাব্যছন্দময় গদ্যের জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। কারাদণ্ড দেওয়ার পর তাকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি তখন রাজবিদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত। নজরুলের একদিকে ছিল রাজার মুকুট, রাজদণ্ড, রাজার পক্ষে নিয়োজিত বেতনভোগী কর্মচারী আর অন্যদিকে ছিল ধূমকেতুর শিখা, সত্য আর ন্যায়দণ্ড।
নজরুলের মতে, ‘রাজার পেছনে ক্ষুদ্র আমার পেছনে রুদ্র। রাজার পক্ষে যিনি, তার লক্ষ্য স্বার্থ, লাভ অর্থ; আমার পক্ষে যিনি তার লক্ষ্য সত্য লাভ পরমানন্দ।’
বিদ্রোহী কবি আরও বলেন, ‘রাজার বাণী বুদ্বুদ, আমার বাণী সীমাহারা সমুদ্র।’
তিনি মনে করেন, ‘সত্য স্বয়ংপ্রকাশ। তাকে কোনো রক্ত-আঁখি রাজদণ্ড নিরোধ করতে পারে না।’
তিনি আরও মনে করতেন, ‘আমি সেই চিরন্তন স্বয়ম্-প্রকাশের বীণা যে-বীণায় চির-সত্যের বাণী ধ্বনিত হয়েছিল।’
তাঁর বিদ্রোহীসত্তার ভেতর থেকে জোরালো ঘোষণার উদ্গিরণ ঘটে :
‘আমি মরব, রাজাও মরবে, কেননা আমার মতন অনেক রাজবিদ্রোহী মরেছে, আবার এমনি অভিযোগ আনয়নকারী বহু রাজাও মরেছে, কিন্তু কোনো কালে কোনো কারণে সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হয়নি―তার বাণী মরেনি। সে আজো তেমনি করে নিজেকে প্রকাশ করছে এবং চিরকাল ধরে করবে। আমার এই শাসন-নিরুদ্ধ বাণী আবার অন্যের কণ্ঠে ফুটে উঠবে। আমার হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সেই বাঁশির সুরের মৃত্যু হবে না।’
*(সূত্র: নজরুল সমগ্র, ত্রয়োদশ খণ্ড, প্রকাশক নজরুল ইনস্টিটিউট, প্রথম সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০২১, পৃষ্ঠা : ৫৫-৫৬)
এই হলো আমাদের নজরুল, বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এই হলো নজরুলের ধূমকেতুর আলোকশিখা। সেই প্রজ্বলিত শিখা এখনও আন্দোলন-সংগ্রামে সমানতালে প্রাসঙ্গিক, শব্দ আর ছন্দের তালে বৈষম্যবিরোধী আলোর উদ্ভাস ঘটায়। শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আপন জয়গাথা ঘোষণা করে।
চার
ধূমকেতু ও শব্দঘর প্রসঙ্গ
যতদূর মনে পড়ছে ২০১১-১২ সালের ঘটনা। কাঁটাবনে কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ‘মধ্যমা’ নামে সমৃদ্ধ একটি বই বিপণনের আউটলেটে প্রায় যাওয়া-আসা করি। ভালো ভালো বই সেখানে পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশের নানা ম্যাগাজিনও। একদিন গিয়ে নজরুলকে নিয়ে লেখা কী কী বই আছে খোঁজ করা শুরু করলাম। গোপন ইচ্ছা হলো নজরুলের দুরন্ত শৈশবকাল নিয়ে কিশোর উপন্যাস লিখব। তাঁর সাহিত্যিকজীবন আর সৈনিকজীবন নিয়েও। আরেকটা হলো ধূমকেতুর কোনও পুরোনো সংখ্যা কিংবা ধূমকেতু নিয়ে লেখা কোনও বই সংগ্রহ করব। প্রথম আশাটা পূর্ণ হলো। বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ করা গেল। পাঠ করা শুরু করলাম। এরপরের ফলাফল হলো কয়েক বছরের মধ্যেই লিখে ফেললাম দুখু, দুখু দ্বিতীয় খণ্ড এবং অখণ্ড দুরন্ত দুখু। নজরুলের ছেলেবেলা নিয়ে তিনটি কিশোর উপন্যাস প্রকাশিত হয়ে গেল। ব্যাপক সাড়াও পেয়ে গেলাম। মন ভরে না। পরবর্তী সময়ে লিখে ফেললাম বিদ্রোহী কবিতার মনস্তত্ত্ব, নন-ফিকশন গ্রন্থটিও।
নিজের ছেলেবেলার সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছাটা ঘুরপাক খেতেই থাকল মাথায়।
একদিন সেই তরুণ বিক্রেতা বলল, ‘স্যার আপনাকে দেখি প্রায় বই খোঁজ করেন, সাহিত্য পত্রিকাও। আপনার বইপ্রীতি আর পত্রিকাপ্রীতি দেখে মনে হচ্ছে একটি পত্রিকা আপনি নিজেই বের করতে পারবেন।’
স্তব্ধ হয়ে তার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই বললাম না। তবে নজরুল কিংবা রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের মতো সম্পাদক হওয়ার ছেলেবেলায় লালিত স্বপ্নটা আঁচমকা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। জানি এ প্রসঙ্গে বাসায় আলাপ করতে গেলে বাধা পাব। কারণ এমনিতে প্রফেশনাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে কাঁধে এবং লেখালেখি করতে গিয়ে ভয়ংকর রকম চাপে থাকি। নানা ধরনের অনুষ্ঠান, সামাজিক কিংবা পারিবারিক, কৌশলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, এড়িয়ে যেতে হয়। আর কুড়িয়ে পাওয়া সময়টুক ব্যবহার করি নিজের লেখাজোখায়। এ সময় পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা বাসায় প্রকাশ করলে নিশ্চিত বাতিল হয়ে যাবে ভেবে চুপ হয়ে গেলাম।
ছেলেটি বলল, ‘স্যার, কোনও ভালো বই এবং ম্যাগাজিন এলে আমি আপনার বাসায় দিয়ে আসব, আপনাকে আসতে হবে না যানজট পেরিয়ে।’ আনন্দিত হয়ে গেলাম। ঠিক ঠিকই বাছাইকৃত বই এবং ম্যাগাজিন বাসায় নিয়ে আসতে লাগল ছেলেটি। ক্রমে আমার সাহিত্যপরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠল সে। প্রার্থীদের ফুঁসলিয়ে আশেপাশের লোকজন যেমন নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেয়, কোনও কোনও প্রার্থী যেমন প্রলুব্ধ হয়ে কিংবা পটে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যায়, আমিও কথা দিয়ে ফেললাম তাকে। ইয়েস। রাজি হয়ে গেলাম।
তারপরে কাহিনি আরও লম্বা। আরও সংগ্রামমুখর। আরও অনেকের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল শব্দঘর। ঘরের জেনারেলও সম্মতি জানাল। নিজেই প্রকাশকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। আমার সাহিত্যসত্তা আর সম্পাদকসত্তাটা কয়েক ধাপ উঁচুতে উঠে গেল।
সেই তরুণটির নাম সঞ্জয় গাইন। শব্দঘর-এর প্রধান কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ্যতা এবং সততার সঙ্গে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে। আমার সঙ্গে যুক্ত হলো এক সময় বিচিত্রার কিংবদন্তি সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরীর সাবেক সহকর্মী সিনিয়র গ্রাফিকস ডিজাইনার মো. রেজাউল হোসেনসহ আরও অনেক প্রাজ্ঞজন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শব্দঘর-এর জন্মলগ্নে মনে পড়ে যায় নজরুলের ধূমকেতুর প্রথম উদয়ের কথা―“রাতের ভালে অলক্ষণের তিলক-রেখার মতোই ধূমকেতুর প্রথম উদয় হয়। তখন নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের সক্রিয় ধুলোট-উৎসব পুরা-মাত্রায় জমিয়া উঠিয়াছে। কারাগারে লোক আর ধরে না, ধরা দিতে গেলে পুলিশ ধরে না―‘বন্দে মাতরম’, ‘মহাত্মা গান্ধী কি জয়’ রব আকাশে-বাতাসে আর ধরে না। মার খাইয়া পিঠ শিলা হইয়া গিয়াছে, মারিয়া মারিয়া পুলিশের হাতে খিল ধরিয়া গিয়াছে, মার খাইবার সে কি অদম্য উৎসাহ! পুলিশের পায়ে ধরিলেও সে আজ মারে না; পলাইয়া যায়।” (সূত্র: ঐ, পৃষ্ঠা ১৫০)
বোঝাই যায় একটি বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির অন্ধকার জগতে আলোর ঢল ছড়িয়েছিল ধূমকেতু।
সে সময় যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সেখান থেকে ধূমকেতুর যে বিদ্রোহী পতাকার উড্ডীন, তার সঙ্গে শব্দঘর-এর তুলনা করা উচিত নয়, বেমানান, বেয়াদবি। তবু যদি বলতে হয়, বলা যায়, অনুপ্রেরণার প্রেক্ষাপট একদম বিপরীত। তার তুলনাও চলে না। শান্ত-সৌম্য আবহের ভেতর দিয়ে শব্দঘর পত্রিকা প্রকাশ শুরু হলেও সংকট, জটিলতা, মনস্তাত্ত্বিক চাপ অস্বীকার করার উপায় নেই। শুরু থেকে নানা বাধা পেরিয়ে এখন শব্দঘর এক যুগের যাত্রা শুরু করল। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশ-বিদেশের গুণী লেখক-পাঠকগণ। আড়ালের কিছু সংখ্যক সহযোগী মানুষও। সবার ভালোবাসার শব্দঘর দ্বাদশ বর্ষ শুরু করেছে। অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এই সফলতার পেছনে লুকানো আছে সম্পাদকের সম্পাদক হওয়া বা হয়ে ওঠার গোপন প্রণোদনার বিষয়টি।
স্বীকার করতেই হবে ‘সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি’―এই শাশ্বত বাণীটিকে শব্দঘর সৃষ্টিতে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি ধূমকেতু এবং কিশোর সাহিত্য পত্রিকা মাসিক কচি ও কাঁচার প্রণোদনার কথা। ধূমকেতু যেমন আমাদের আঁধার জগতে অগ্নিসেতু নির্মাণ করে দিয়েছিল, শব্দঘরও তেমনি সাহিত্যপ্রেমীদের অন্তরে সাহিত্যের যুগসেতু নির্মাণ করে দেবে, এটাই চাওয়া, প্রাণের চাওয়া।
লেখক : সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমি ফেলো