আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : রেহমান সিদ্দিক

মন্দাক্রান্তা                                                   

কম্বল সম্বল, মানে না তাতে শীত, দাও না গাও-ওম, গরম হই                               

শীতভোর শীতবোধ, কাঁপুনি দিল খুব, তাই তো চাই তাপ, আগুন কই ?    

চুল্লির অন্তর জ্বলেছে বহুকাল অগ্নি-আঁচ আর পোহাই রোদ                                  

টসটস হিমরস―মুড়িতে ঝোলা গুড়, চাও তো দিই ক্ষীর, চিতই, খই  

জলের মার্বেল

গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে জলের মার্বেল

কে যেন ভেতরে বসে ধাক্কা-মারে, অবুঝ আবেগ

কখনও ভাবের ঘোরে নিয়ন্ত্রণ হারায়, কী বেগ!

কষ্টের কোটরে থাকে গোল-গোল কাচের আপেল

খুঁজে-খুঁজে বের কর, কারা কাঁদে লুকিয়ে আড়ালে

তাদের নিকট থেকে পেয়ে যাবে দুহাত বাড়ালে

— — —-

আঁধারের কিছু মুদ্রা

একটি একটি করে সড়কের সবগুলো বাতি নিভে যাচ্ছে

ছুটে আসছে অন্ধকারের কঙ্কালগুলো নাচ দেখানোর জন্য

আমি রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না, কী করে যে ভূতের গলি যাব!

আজ সারারাত আমার ভিক্ষা-করা হবে না, কী খাব তবে ?

মাথায় টেনশন নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি সন্ধ্যা থেকে

অপেক্ষা করছি, যদি একটি-দুটি বাতি জ্বলে ওঠে হঠাৎ

হোক-না লাল কিংবা হলুদ রঙের, জ্বললেই হলো

কালোছড়ি হাতে আমি আশায় ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছি

সুযোগ বুঝে কঙ্কালদের সঙ্গে মিশে যাব নাচার জন্য

রাত শেষে আঁধারের কিছু মুদ্রা নিয়ে যদি বাড়ি ফেরা যায়!

— — —

থাই উপসাগরের দিকে

বঙ্গোপসাগরের

লোনা জলরাশি

               হঠাৎ উত্তাল

ঢেউগুলো

         ছোবল দিতে-দিতে

পুবে

     থাই উপসাগরের দিকে

                           ধায়…

আর শান্ত জলের ছোঁয়ায়

ধীরে-ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়

—- —- —–

ধরনা দিচ্ছি

ধরনা দিচ্ছি, হাত পাতছি

এর-ওর কাছে―

               আছে ?

ভালবাসার দুর্ভিক্ষ চলছে আজকাল

কেউ ধার দিতে চায় না

যার কাছে যতটুকু আছে

লুকিয়ে রাখছে

              ধরছে বায়না

তবু প্রতিদিন যাকেই কাছে পাচ্ছি

হাত বাড়িয়ে যাচ্ছি

অন্তহীন ঘুঙ্গরের ধ্বনি

মাঠের বিশাল মঞ্চে নাচের আসর                       

চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ঘুঙ্গরের ধ্বনি

জানলা দিয়ে অপলক চেয়ে আছি

কানে বাজে রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম…

মাতাল ঘুঙ্গর নিরন্তর বেজেই চলেছে                                                                                  

আমি চোখ সরাতে পারি না

কান খাড়া করে শুনি বিভোর বাজনা                  

চশমার কাচের ভেতর দিয়ে

মুদ্রাগুলো ধরবার বৃথাচেষ্টা করি বারবার

পরিদের পায়ে চুমু খেতে খেতে

ঘণ্টাগুলো বেজে চলেছে অবিশ্রাম

দেখতে-দেখতে চোখে ছানি পড়ে যায়

চারদিক ঘোলা হয়ে আসে 

আমি চেয়ে থাকি

কানে বাজে রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম…

— — —

আহা, কী নিষ্ঠুর কুহু ডাক

শীতদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বসন্ত

খিলখিল করে হাসছে

দক্ষিণের হাওয়ার সঙ্গে গল্পগুজব

পলাশ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের রাস্তায়

হাওয়া জানতে চাইল―

হলুদ রঙের শাড়ি পরে

বসন্ত কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে ?

বসন্ত উত্তর দিল না, মৃদু হাসল

দূরে

বনের গভীরে ডাকে কোকিল পাখিটা

আহা, কী নিষ্ঠুর কুহু ডাক!

শীতবৃন্ত থেকে বসন্তকে ছিঁড়ে নিয়ে যায়

— — —

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button