
সেই দিনগুলোতে
সেই কবে থেকে একই শহরে রয়েছি দুজন
সেই কবে থেকে কত কত মানুষ এখানে
খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে।
তোমার সঙ্গে তখন কতবার দেখা হতো
হয় তুমি অথবা আমি খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে এসেছি
তোমার পালকে লেগে থাকত রক্তের ছোপ
আমার ডানায় মাঝে মাঝে ঝড়ের ভ্রƒকুটি
দুজনেই টলতে টলতে আকাশে উড়তাম
আমিও জেনেছি এবং তুমিও
আমাদের হৃৎপিণ্ড ছাড়া আর কিছুই ছিল না
অগ্নিকাণ্ড
শুরুর দিনগুলোতে শেষের দিনগুলোর কথা
কখনও তুমি ভেবে দেখোনি
অথচ যে-কোনও শুরুর আগে
শেষের কথাগুলো ভেবে নিতে হয়
তুমি ঝাঁপ দিয়েছিলে আমার আগুনে
উস্কে দিয়েছিলে আরও কিছুটা
এই বরফের দেশে আমরা দুজনেই
প্রমিথিউসকে খুঁজছিলাম
কিন্তু শুরুর দিনগুলোতে শেষে কী ঘটতে পারে
তুমি ভেবে দেখোনি
আমরা আগুন খুঁজে পেলাম ঠিকই…
আমাদের হৃৎপিণ্ড নিভে গেল
— — —
শেকল
আমি জানতাম তোমার কিছু গোপন সম্পর্ক ছিল
ভালোবাসার ভেতরে এরকম কেউ কেউ থাকে
তুমি যতটা কাছে এসেছিলে
তারও চেয়ে অনেক দূরে চলে গেছো
দিনের শেষে সন্ধ্যা নামলে
খড়কুটো দিয়ে গড়া যে-ঘর থেকে একদিন ছুটে এসেছিলে
সে-ঘরে সবাই ফিরে যায়
নারীর এছাড়া কীই-বা করার থাকে
শেকলটা সঙ্গে নিয়েই তো সারা জীবন
তাকে চলতে হয়
— — —
শুরু
অনেক কি রাত হলো ?
চাঁদ একটি-দুটি পালক মাঠে ঝরিয়ে দিচ্ছে
শীষ তুলে মাঠের নুয়ে পড়া ধানের গাছ আর ইঁদুরেরা নীরবে শুনছে জ্যোৎস্নার অশ্রুত গান
স্থির
এখন।
এখানেই তারা থেকে যায়, নতুন চাঁদ
ডানা ঝাপটায়।
বৃক্ষের ভেতরে দীর্ঘাঙ্গী এক নারী তার মুখশ্রীর শান্ত ছায়া বুনে চলে
এই তো সে সম্পূর্ণ শরীরে বেরিয়ে এল
মিলিয়ে গেল বাতাসে।
আমি দাঁড়িয়ে আছি অনেক পুরানো একটা গাছের পাশে,
শ্বাস নিতেও ভয় হয়, সরে যেতেও ইচ্ছে হয় না
আমি শুধু শুনছি কালো কালো ফোঁটায় ফোঁটায়
জ্যোৎস্না ঝরে পড়ে
ধানের গাছগুলো অন্ধকারের দিকে ঢলে পড়ে
আমি ঢলে পড়ি আমার আঁধারে।
— — —
সেই সব গল্প
শরীর তোমার জুড়ে বসেছে জলের গূঢ় গল্পে
জীবনভর স্রোতস্বিনী মেয়েটি ছিল নৌকো
তুমি কি আমাকে ছুঁয়ে দেখেছিলে নাকি অন্য কাউকে ?
পৃষ্ঠা উল্টে যেতে যেতে দেখতে পাই
জঙ্ঘায় ফুটে ওঠা বিশীর্ণ সাদা জুঁই
আমাদের সম্পর্ক পাখির পালকের চেয়ে ছিল হালকা
যে খুলে দিতে পারত একটা দিগন্তে কিছুটা ময়ূর
সে আজ পেখমের মুদ্রা তুলে নেচে চলে
মরুভূমির বালিঝড় এসে লাগে চুলে ও চোখে
আমি যে অন্ধ হইনি তা ওই চক্ষুষ্মান দ্বিতীয় মেয়েটির জন্য
অন্ধকারেও সে দেখতে পায় হীরের মতো চোখের বিদ্যুৎ
কী যে কারুকার্যময় দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম
জীবনটা এরকমই কিছুদিন একটা কোনও গল্পের চরিত্র হয়ে ওঠো
তারপর একদিন গল্পটার সমাপ্তি টেনে লম্বা একটা ঘুম দাও
— — —
কফি
প্রত্যেক দিন ভোরে একই রকম ঘটছে
গাঢ় কালো কফিতে চুমুক দিতে দিতে
সে তার সাদা আর কালো খবরগুলো পড়ে।
ক্রিমে জিভ ডুবিয়ে খায়
কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওঠে
তিক্ত বিস্বাদে পূর্ণ হয়ে থাকে প্রতিটি সূর্যোদয়।
— — —
সচিত্রকরণ : নাজিব তারেক