ভাষা-গবেষণা ধারাবাহিক : শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু : মানবর্দ্ধন পাল

পনেরোতম পর্ব
[প্রাচীন ভারতীয় আলঙ্কারিকরা শব্দকে ‘ব্রহ্ম’ জ্ঞান করেছেন―শব্দ যেন ঈশ্বরতুল্য। পাশ্চাত্যের মালার্মেসহ নন্দনতাত্ত্বিক কাব্য-সমালোচকদেরও বিশ্বাস, শব্দই কবিতা। যা-ই হোক, শব্দের মাহাত্ম্য বহুবর্ণিল ও বহুমাত্রিক। বাংলা ভাষার বৃহদায়তন অভিধানগুলোর পাতায় দৃষ্টি দিলেই তা প্রতিভাত হয়। আগুনের যেমন আছে অসংখ্য গুণ, তেমনই ভাষার প্রায় প্রতিটি শব্দেরও আছে অজস্র অর্থের সম্ভার। কালস্রোতে ও জীবনের প্রয়োজনে জীবন্ত ভাষায় আসে নতুন শব্দ, তা বিবর্তিতও হয়। পুরনো শব্দ অচল মুদ্রার মতো ব্যবহার-অযোগ্য হয়ে মণি-কাঞ্চনরূপে ঠাঁই নেয় অভিধানের সিন্দুকে।বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সমুদ্রসম―মধুসূদনের ভাষায় : ‘ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’। বৈঠকি মেজাজে, সরস আড্ডার ভঙ্গিতে লেখা এই ‘শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু’। ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক―সবকিছু মিলিয়ে শব্দের ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্য-সৌগন্ধ এবং অন্তর্গত আনন্দধারার ছিটেফোঁটা ভাষিক রূপ এই ‘শব্দবিন্দু আনন্দসিন্ধু’ ধারাবাহিক।]
বাস
আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি,
তুমি অবসরমত বাসিয়ো।
নিশিদিন হেথায় বসে আছি,
তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো।
―রবীন্দ্রনাথ
সঙ্গীতবোদ্ধারা বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান বাণীপ্রধান। বাণীর মধ্যে সুর সংযোজিত হলে তা সঙ্গীত হয়ে ওঠে। গানের বাণী কখনও সুরকে অতিক্রম করে যায়, কখনও সুর বাণীকে। রবীন্দ্রনাথের গানে সুর ও বাণী এমন অবিভাজ্য যে, তা সদলবলে শব্দতালে কানের ভেতর দিয়ে একসঙ্গে মর্মে পৌঁছে। তবু গানের বাণীই আমাকে আকর্ষণ করে প্রথম। তাই অবসরে তাঁর গান যখন শুনি তখন গানের কথার দিকে কান রাখি। সুরের ব্যাকরণ, তানের মর্ম, তালের ছান্দিকতা, লয়ের লহরি, কোমল-নিখাদের কারুকাজ না-বুঝলেও সেই সুরে মন মজে। দুর্ভাবনাহীন এক অনন্ত ভাবলোকে পৌঁছে যায় মন। তবু বাণীর ঝংকারে আমার কান থাকে সজাগ। যখন শুনি তোমার বাস কোথা যে পথিক কিংবা ভালো যদি বাস সখা, কান বাস শব্দটিতে সজাগ হয়। মনের মধ্যে লাফিয়ে ওঠে শব্দবোধ! আরে, এখানে দুই বাস তো এক নয়―অর্থেও নয়, উচ্চারণেও নয়! প্রথমটি অবস্থান বা বসবাস অর্থে―ব্যঞ্জনান্ত উচ্চারণ বাশ্। দ্বিতীয়টি ভালোবাসা অর্থে―স্বরান্ত উচ্চারণ বাশো। যখন বলি, মলিন বাস, তখন পরিধেয় বস্ত্র বোঝায়। আর যখন কেউ বলেন, একালের সর্ষের তেলে নাকজ্বলা ঝাঁঝ আছে কিন্তু সর্ষের বাস নেই।―এই বাক্যে বাস গন্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একজন বললেন, এখানে তো লোকাল বাস ছাড়া বিরতিহীন বাস থামে না! এ বাক্যের বাস, সবাই বোঝেন, ইংরেজি শব্দ―মোটরযান অর্থে। এর উচ্চারণ একটু আলাদা―বাস্। একই শব্দ, একই বানান―হয়তো উচ্চারণ ভিন্ন―অথচ বাক্যভেদে কী বিচিত্র অর্থ ও ভাব প্রকাশক! একই শব্দের অন্তরে নিহিত থাকে কত বহুমাত্রিক অর্থের বৈচিত্র্য! কোনও শব্দ যখন থাকে নিঃসঙ্গ, তার আশেপাশে থাকে না কোনও শব্দবন্ধু বা আত্মীয় পদ, তখন ওই বিশেষ শব্দটির সঠিক অর্থ বোঝা সহজ নয়!
এবার বাস শব্দটির বুৎপত্তি ও অর্থবৈচিত্র্য অভিধানের আশ্রয় নিয়ে ব্যাখ্যা ও বিস্তৃত করা যেতে পারে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ-এ বাস শব্দটির সাতটি ভুক্তি আছে :
* বাস = সংস্কৃত শব্দ। বিশেষ্য পদ। √বাস + অ = বাস। গন্ধ, সৌরভ, সুগন্ধ, সুরভী, নানা সুগন্ধি দ্রব্যের চূর্ণ। ভাণ্ডের গায় মদ্য চোয়ায়, মিঠা মিঠা বাস। (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।
* বাস = সংস্কৃত কৃদন্ত পদ। √বস্ + অ = বাস। গৃহ, আশ্রয়, বসতিস্থল, আবাস, বাসা, ঘর, ভবন, মন্দির, সদন ইত্যাদি। বাসনা, বাসর শব্দদুটির উৎসও বাস থেকে। যে থাকে যার হৃদয়বাসে, সেকি বাসে বাস করে! (প্রাচীন বাংলা গান)। বরকন্যা বাসে নিল। (মানিক গাঙ্গুলি বিরচিত শ্রীধর্ম্মমঙ্গল)। আমা দেখি বাসসজ্জা হৈলা। (ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর)।
* বাস = সংস্কৃত শব্দ। বিশেষ্য পদ। √বস্ + অ = বাস। বস্ত্র, কাপড়, পরিচ্ছদ, আচ্ছাদন, বসন ইত্যাদি। ধনি! মম ভক্ত কৃত্তিবাস, করে বাসনা পীতবাস, বাস নাহি পরে। (দাশরথি রায়ের পাঁচালী)। এখানে তিনটি বাসই বস্ত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস। (জসীমউদ্দীন)।
* বাস = সংস্কৃত শব্দ। বিশেষ্য পদ। গন্ধ, সুগন্ধ, সুবাস, খুশবু, চন্দন ইত্যাদি। নিভৃত ঘরে ধূপের বাস। (রবীন্দ্রনাথ)। ধনের পাইয়া বাস আসিতে বীরের পাশ। (কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)।
* বাস = সংস্কৃত ক্রিয়ার মূল বা ধাতু √বশ্ থেকে সৃষ্ট। নামধাতু (ভালো বাসাবাসি)। ইচ্ছা করো, বাসনা করো, স্পৃহা করো―ভালোবাসো। চাওয়া, বাঞ্ছনা, অভিলাষ ইত্যাদি অর্থও প্রকাশ করে। তাছাড়া ভালোবাসা থেকে বাসি, বাসো, বাসে, বাসেন, বাসিস, বেসে, বাসিয়া, বাসিল, বেসেছে, বেসেছি, বেসেছিল ইত্যাদি রূপে কাল ও পুরুষভেদে প্রয়োগ হয়। প্রাচীন বাংলায় বোধ করা, অনুভব করা, প্রাপ্ত হওয়া, মনে করা, পছন্দ করা, আত্মীয় ভাবা ইত্যাদি অর্থেও প্রয়োগ হতো। সেখানে লক্ষ করা যায়, বাসসি, বাসিঅ, বাসয়ে ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ। তবে একালে প্রেম, ভালোবাসা, প্রীতি, স্নেহ, মমতা ইত্যাদি অর্থেই শব্দটি প্রয়োগ হয়।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধান-এ বলেন, ভালোবাসা অর্থে বানানটি ‘বাসা’র পরিবর্তে বাশা লেখা উচিত। তাঁর মতে, বাশা হওয়া উচিত ছিল কিন্তু ব্যবহারে ‘বাসা’। এর কারণ হিসেবে তাঁর যৌক্তিক ধারণা, যেহেতু সংস্কৃত √বশ্ ধাতু থেকে এবং মূলত বশীভূত অর্থে ‘ভালোবাসা’ শব্দটি কার্যকর সেহেতু ‘বাশা’ সিদ্ধ। (পৃ. ১৫৫৪)।
* বাস = ইংরেজি শব্দ ইঁং থেকে আগত লিপ্যন্তর বা প্রতিবর্ণীকরণ। যাত্রীবহনকারী ইঞ্জিনচালিত গাড়ি, মোটরগাড়ি। যাহারা বাসে আসিবেন তাহাদের নিকট হইতে গাড়ীভাড়া লওয়া হইবে। (প্রবাসী, শ্রাবণ, ১৩৩৩)।
* বাস (ব্যস) = থামার নির্দেশ বা অনুরোধ করা। পর্যাপ্ত হয়েছে, যথেষ্ট, এবার রাখো, আর নয় ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক। মেয়ে মানুষের পড়াশুনোয় কাজ কি ?―রাঁদ, বাড়, খাও,―ব্যস। (লীলাবতী)। যথেষ্ট হয়েছে, বাস বাস, আর লাগবে না। (বর্তমান লেখক)।
এবার বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু করে প্রাচীন, মধ্য ও অন্ত্যমধ্যযুগে বহুবিধ অর্থে বাস শব্দের প্রয়োগ-সম্পর্কিত কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা যায় :
* মহাসুহ বাসিঅ। ( মনে করে অর্থে, দোহাকোষ, পৃ. ১১০)।
* চারি বাসে গড়িল রেঁ দিয়াঁ চঞ্চালী। (বাঁশ অর্থে, ৫০ নং চর্যা, ১২০০)।
* নেত বাস উহাড়ন দিআঁ। (বস্ত্র অর্থে, বড়ু চণ্ডীদাস, ১৪৫০)।
* বাসিত ফুলে রাধা বান্ধসি কেশ। (সুগন্ধি অর্থে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, ১৪৫০)।
* এ বোল বুলিতেঁ কাহ্নাঞিঁ মুখে লাজ বাস। (অনুভব করা অর্থে, ঐ)।
* কতএ রাঘব রাএ ঘরনী/ কতএ লঙ্কাপুর বাস। (বসবাস অর্থে, বিদ্যাপতি, ১৪৬০)।
* বলিয়াত গেল দেবি আপনার বাস। (গৃহ অর্থে, মালাধর বসু, ১৫০০)।
* নন্দনকাননে বাস সুখে থাক বারমাস। (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ১৬০০)।
* এহীমতে কতদিন বঞ্চিলেক বাস। (কবীন্দ্র পরমেশ্বর, ১৬৮৯)।
* যুবতী বুড়ায় নাঞি বাসে। (বাসনা করে অর্থে, ঐ)।
* যে শ্যাম নাগর গুণের সাগর কেমনে বাসিব পর। ( ভাবা অর্থে, ঐ)।
* তথাপি রাধারে পরাণ অধিক বাসে। (ভালোবাসা অর্থে, চণ্ডীমঙ্গল)।
* পার হইয়া না দেব কড়ি তোমার মনে বাসে। (বোধ হওয়া অর্থে, মনসা মঙ্গল)।
* এই হেতু মানসেতে ভীত বাসি বড়। (ভীত হওয়া অর্থে, মঙ্গলচণ্ডী পাঞ্চালিকা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ)।
ভালোবাসার বিপরীত শব্দ―ঘৃণা বা ভালো না-বাসা। কিন্তু ইদানীং কেউ কেউ ভালোবাসার বিপরীত শব্দ হিসেবে মন্দবাসা ব্যবহার করছেন। অভিধানকার হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অপপ্রয়োগ বিবেচনা করলেও মধ্যযুগের সাহিত্যে এর প্রয়োগ লক্ষ করা যায় : ভাবে উমা মাগ্ তোমা মন্দ বাসে কেন। (শিবায়ন, বঙ্গবাসী,১৩১০)। তাই ভাল না-বাসা বা অপছন্দ অর্থে মন্দবাসা শব্দটি তো মন্দ নয়!
আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে অভিধানভুক্ত প্রায় সকল অর্থেই বাস শব্দটির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। উনিশ শতকের প্রারম্ভের লেখক রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের রচনা ও সূচনালগ্নের পত্রপত্রিকায়ও এর প্রয়োগ দেখা যায়। আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক উনিশ শতকের প্রথম পর্বের লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে একালের শামসুর রাহমান এবং পরবর্তী লেখকদের রচনায় এর প্রমাণ লক্ষ্যযোগ্য। কালানুক্রমিক তেমন কয়েকটি উদাহরণ চয়িত হলো :
* পুরবাসিনীরা সকলে আসিয়া জয়ধ্বনি করিতে প্রবর্ত্ত। (রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, ১৮০৫)।
* বাসস্থল জানাইয়ে, কিশোরী চলিল নিজবাসে। (ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৮২৫)।
* এ অট্টালিকা সাধারণ কোন সাহেবলোকের বাসস্থান না হইবেক। (সমাচার দর্পন পত্রিকা, ১৮৩০)।
* ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়াদির বাসোপযোগী বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। (অক্ষয়কুমার দত্ত, ১৮৪৫)।
* অনঙ্গমঞ্জরীর বাসগৃহে উপস্থিত হইয়া দেখিল, সে প্রাণত্যাগ করিয়াছে। (বিদ্যাসাগর, ১৮৪৭)।
* দণ্ডধার কীট কুণ্ড বাসিনি। (দীনবন্ধু মিত্র, ১৮৬৬)।
* সোনার ফুলে কি বিষম পোকারই বাসস্থান দিয়াছ! (মাইকেল, ১৮৭৩)।
* কলিকাতাই তাহার বাসযোগ্য। (বঙ্কিমচন্দ্র, ১৮৮৪)।
* একত্র ভ্রমণ, একত্র বাসনিবন্ধন উভয়েরই মনে সবিশেষ সরল প্রণয় জন্মিয়াছে। (মীর মশাররফ হোসেন, ১৮৮৫)।
* লাজমুক্ত বাসমুক্ত দুটি নগ্ন প্রাণে। (রবীন্দ্রনাথ, ১৮৮৬)।
* আমার সেই আজন্ম পরিচিত, বাৎসল্যের বাসমন্দির সহসা শূন্যে পরিণত হইল। (জগদীশচন্দ্র বসু, ১৮৯৫)।
*… পয়লা আষাঢ়ের দিন বিকেলে খুব মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে। বাস। (সমাপ্তি অর্থে ধ্বন্যাত্মক অব্যয়, রবীন্দ্রনাথ, ১৮৯২)।
* বাসে-ভরা ফুল, রসে-ভরা ফল। (নজরুল ইসলাম, ১৯২৬)।
* জলকষ্ট পথকষ্ট বাসকষ্ট দূর হয়। (রবীন্দ্রনাথ, ১৯৩২)।
* এই বাতাসে ফুলের বাসে মুখখানি তার পড়ে মনে। (রবীন্দ্রনাথ)।
* আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, তুমি অবসর মত বাসিয়ো। (ঐ)।
* আমারে যখন ভাল সে না বাসে, পায়ে ধরিলেও বাসিবে না সে। (ঐ)।
* বাস কন্ডাক্টার ও বাস ড্রাইভারের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে। (মাহেনও, ১৯৪৯)।
*… বাসভূমির… রাষ্ট্রকার্য, আইন আদালতের কার্য সে প্রদেশের ভাষায় চলবে। (হাসান হাফিজুর রহমান, ১৯৫৩)।
* কোনও বাস তেলের গন্ধ নয়, ওর চুলের নিজস্ব গন্ধ। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ১৯৭০)।
* কখনও চমকে উঠি দেখে কাউকে নির্জন বাসস্টপে। (শামসুর রাহমান, ১৯৭২)।
এই বাস শব্দটি কে কী অর্থে প্রয়োগ করছেন, তা সহসা বুঝে ওঠা মশকিল! ‘ভালোবাসা’ নাকি ‘ভালো বাসা’র প্রতি আকর্ষণ, তা-ও বাক্যে শব্দপ্রয়োগের ধরন দেখে এবং ভেবে বুঝতে হবে। সুবাস মানে সুগন্ধ, সুন্দর পরিধেয় বস্ত্র বা দৃষ্টিনন্দন বাসস্থানও বোঝাতে পারে। কিন্তু ধন্ধে পড়তে হয়, যখন দেখি কেউ ছাত্রছাত্রীদের বাসস্থান অর্থে প্রয়োগ করেন―ছাত্রবাস ও ছাত্রীবাস। এমন অর্থে সিদ্ধ কিনা জানি না। বাংলা ভাষার কোনও অভিধানে এমন অর্থ দেখিনি। তবে অভিধানভুক্ত না-হলে কোনও শব্দ অশুদ্ধ তা বলা যায় না। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের বাসস্থান হিসেবে আমরা জানি প্রচল শব্দ―ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস। ছাত্রাবাস সন্ধিযুক্ত বা সমাসবদ্ধ শব্দ। ছাত্র + আবাস = ছাত্রাবাস অথবা সমাসের নিয়মে ষষ্ঠী বা নিমিত্তার্থে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস। এই দুই নিয়মে ব্যাসবাক্য হতে পারে―ছাত্রদের আবাস এবং ছাত্রদের জন্য আবাস। একই নিয়মে ছাত্রীনিবাসও। এর ব্যাসবাক্য হতে পারে―ছাত্রীদের নিবাস এবং ছাত্রীদের জন্য নিবাস। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বসবাসের স্থান অর্থে ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস না-লিখে আমরা যদি লিখি ছাত্রবাস ও ছাত্রীবাস তবে কি ভয়াবহ অর্থবিভ্রাট ঘটে না ? তাহলে কি ছাত্রছাত্রীদের পরিধেয় বস্ত্রাদি বোঝায় না ? যেমন বহির্বাস বলতে আমরা বুঝি শার্ট-প্যান্ট, লুঙ্গি-পাজামা-পাঞ্জাবি বা শাড়ি-ব্লাউজ-কামিজ ইত্যাদি। আর অন্তর্বাস বলতে বুঝি গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, পেটিকোট, কাঁচুলি ইত্যাদি। তাই ছাত্রবাস ও ছাত্রীবাস শব্দদুটির যথাযথ অর্থনির্ণয় ও প্রয়োগ-সিদ্ধতার বিষয়টি ভাষাবিদরা ভেবে দেখবেন।
[চলবে]সচিত্রকরণ : ধ্রুব এষ