আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : শিহাব শাহরিয়ার

ফটোজেনিক

ঘুমন্ত বিড়ালের একটি চেহারা থাকে

তাকে কেউ বলে না তোমার মুখ এত সুন্দর!

অথচ ফটোজেনিক হওয়ার জন্য তোমার যত চেষ্টা

নদীপাড়ের ঘাসকে বললাম, সোনা পাখির সংজ্ঞা জানো ?

বিশুষ্ক চোখে সে তাকালো আমার দিকে!

আমি বিড়ালমুখ, খেয়ামুখ, ঘাসমুখ বিবেচনায় নিলাম

নদীকে বললাম, কীভাবে পার হবো তোমার জল-তরঙ্গ ?

নদী বলল, খেয়া’ই তোমাকে দেখিয়ে দেবে জলের প্রতিটি সিঁড়ি

তখন খেয়াকে বললাম, তোমার জানালার কাছি আসি

ফর্সা হাত বাড়িয়ে জানালো, এদিকে আসা মানা, আমি চুপ থাকি

তারপর থেকে আমি আত্মহননে নেমেছি

তোমার ফটোজেনিক চেহারা 

আমার আত্মহননকে দীর্ঘস্থায়ী করছে…

—————

চোখ সরিয়ে নাও

অবশেষে তোমার নিঃশ্বাসে টের পেলাম

নদীরা কীভাবে গর্ভবতী হয় ?

আমি বরাবরই উত্তর দিক পছন্দ করি

উত্তরে সাইবেরিয়া ও সিরাজগঞ্জ

তবু গঞ্জে যেতে পারিনি

কারণ তুমি চাওনি যমুনা অতিক্রম করি

আবারও যেতে চাইলে তোমার পা দাঁড়িয়ে যায়,

হাতও শক্ত হয়, বলতো―

আমি কী করে তোমার কাছে যাব ?

তাহলে তুমি চোখ সরিয়ে নাও

—————–

ছায়াঘুম

আমার ছায়াকেও আমি বিশ্বাস করি না

শরীর কেটে লবণ লাগিয়ে আমাকে

রোদে দাঁড় করিয়ে রাখলেও না

কেউ কি বলতে পারবেন গুন্টার গ্রাস

ঢাকা ভ্রমণকালে কী কী ভেবেছিলেন ?

আমিও যে কখন কী ভাবি

তা কারও জানার কথা নয়

কিম্বা আমার বন্ধুরা

যারা আমার বড় বড় শত্রু

তারা আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ কি চিন্তা করে ?

তা কি আমি জুতা পরার সময় বুঝতে পারি ?

তুমি যদি রোদের ভেতর চিলের ছায়া দেখো

আমি তবে হত্যার ভিতর খুঁজব ছুরির রং

শত্রু আর ছুরি একই খেয়ায় ভেসেছে ঘুমশহরে

অথচ আমাকেই শুধু ক্ষতি করো হে পানসিওয়ালা ?

মনে রেখো কোনও ছায়ায় শত্রু থাকে

অথবা শত্রুরা ছায়া খোঁজে

আমার ছায়া সাড়ে তিন ফুট হলে

তোমার ছায়া লাল ফিতার সমান

কারণ তুমি চেনো শত্রু আমি চিনি ছায়া

——————

খড়মের খোঁচায় ক্ষয় হয় উঠান

রঙিন পাতাবাহারের ছোঁয়ায় ঘরগুলো শূন্য হলো

এভাবে পূর্বপুরুষদের খড়মের খোঁচায় ক্ষয় হয়েছে উঠান

আমি ডেনফোর্থের ফুটপাথে হাঁটি একা

গন্ধ পাই সিলেটের সমস্ত সুপারি বাগানের

সুইসবেকারির পা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য যুবক

পশ্চিমপ্রত্যাশী এই যুবকেরা বোঝে না ভিটামাটি

খোঁজে না খড়ম ও উঠানের রৌদ্রস্নাত চিহ্ন

শূন্য সব শূন্য এবং শূন্যতার ভেতর জলীয় বাষ্প

——————-

পাষাণী পর্দা

আর কতটুকু অনুরোধ জানালে

তুমি বাঁশের কঞ্চির মতো বাঁকা হবে ?

আর কত শত বার তাকালে

তুমি বাঁকা পথ ছেড়ে কাছে আসবে ?

সমুদ্র-নাভির দূরত্ব তুমি জেনে গেছ

বলে একাকী উড়ছ পাখিস্বর নিয়ে

উড়বে আরও কিছু দিন আলোর মতো

তারপর সন্ধ্যা মোকাবিলা করার ধৈর্য হারিয়ে

তুমি আশ্রয় নেবে বুকের ভিতর

তখন সেতু ভাঙবে, শব্দেরা মরে যাবে

আমি শুয়ে যাব অনন্ত শিশির-সাদায়

তখন পাষাণী পর্দায় রেখে দিও ফর্সা আঙুল

——————

দুপুর খুঁজি

দ্বৈত দুপুরে বাস করতে করতে

হিমেল অন্ধকারে ঢুকে পেলাম

এত দূর এসে গেছি বলে বাইরে থেকে

হাত গুটিয়ে নিলাম

আসলে তুমি নারী নও বিশ্বাসঘাতিনী

শব্দটি তোমার জন্যেই অভিধানে যুক্ত হয়েছে

বাফেলোর রোদ তোমার মতই কাবু করল

তোমার পতনের শব্দে আমার রাত গভীর হলো

দুপুর একটি প্রতিশব্দ

মেহগনি গাছের মতো

ছায়া থেকে সরে গেছে গঞ্জ

——————

মুক্ত

মুগ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে যন্ত্রণারা হেঁটে গেছে

এই নদী পার শূন্যে উড়ছে হাহাকার ও নিদ্রায়

বহুজাতিক বাতাসে মাত্র কয়েক দিন বাস করতে এসে

তোমার ধাক্কা খেলাম, তুমি ডিনারের মর্যাদা বোঝ না

সবকিছু ভাসিয়ে দেওয়া যায় সুলিখিনি ?

আমি তো বাজারজাত কোনও দ্রব্য না ?

জীবনের পাখা শালিখের পাখা নয়

আমি মেঘের পাখায় উড়তে চেয়েছিলাম

——————-

ব্লক

কেউ কি কবর পর্যন্ত ব্লক করে দেয় ?

অথচ দ্বিচারিণী স্বভাব নিয়েই তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে

মেসেঞ্জার বন্ধ করলেও ঋতুস্রাব বন্ধ করতে পারোনি

হয়তো বুঝতে চাও না চোখ রাঙানিরও একটা সীমা আছে

পাতাল রেলের অন্ধকার আমি মেনে নিয়েছি

তাই দেখতে পাই পলাশপুরের মাথা ও শ্রাবণীর চোখ

হিউস্টনবাসী শ্রাবণী আমার পাঠশালার বন্ধু

তোমার মতোই তথাকথিত ফর্সা মানিক পড়োনি যারা

শশী ও কুসুমের কথা চিন্তা করে মুছে দিয়েছি ব্লক

কবরের কাছে গিয়ে নিশ্চয়ই তুমি বলবে :

‘আমার ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, এ দহন আমাকে দিও না…’

—————–

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button