আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : কামরুল হাসান

চড়ুই

প্রাণ নিয়ে সেও তো পালায়, ঐ দৈত্য তাকেও খুঁজে ফেরে,

অস্থিরমতি তাকে বলা যেতে পারে, চঞ্চলতা দিয়ে তবু পারে না স্থির

ওই থাবা থেকে নিজেকে বাঁচাতে!

ঐ পাতা আস্ত রসুইঘর শর্করার, বৃক্ষের প্রাণরসায়ন নিয়ে সে ওড়ে

আলোর ফোটনকণা জাদু জানে, কী আশ্চর্য জল থেকে চিনি!

ঘূর্ণায়মান ঐ পালকের সহস্র রঙিন বিভাসে

অযুত আলোর কণা গড়িয়ে পড়ে হেসে।

স্বাতী নক্ষত্র এর চেয়ে বড় কিছু নয়, আর সে তো স্থির,

পাখিটির চঞ্চলতা নিয়ে সব ফুল বিপন্ন রয়েছে

উষ্ণতাপ্রিয় মানুষের কাছ থেকে উষ্ণতার মর্ম বুঝেছে

গূঢ়ার্থে যত ঘুলঘুলি

অন্ধগলির পাশে বিপুল তৃষ্ণা নিয়ে জেগে থাকা তমিস্রার রীতি!

——————–

রুদ্ধ দুঃখের স্রোত

তোমার পুরনো প্রেম অধিস্তর ভেঙে জেগে উঠবে না তো ?

এসব ভূগর্ভস্থ বৈদিক স্তরে বহু শতাব্দীর জল জমে আছে

তোমার বৈদিক প্রেম ভূগর্ভের ভর ভেঙে আসবে না তো ?

হারানো দিনের যত ছবি মহাকাশের রাডার স্টেশনে

জড়ো হচ্ছে পরিযায়ী পাখির মতন, সেসব উদ্বাস্তু পাখি

সাইবেরিয়ায় শীত নেমে এলে উষ্ণপ্রস্রবণে ফিরে যাবে না তো ?

তখন বিলাপ লুকানো হবে দায়, তখন উদ্গিরিত লাভার মতো

রুদ্ধ এক দুঃখের স্রোত নিয়ে তোমার সজ্জিত শহর ডোবাবে।

———————–

ঘুঙুর পায়ে শিপ্রা ক্যাথেরিন

সন্ধ্যাবেলায় পড়ন্ত রঙিন                               দেখা হলো শিপ্রা ক্যাথারিন

হাওয়ার চুলে অল্প উড়ছিল                            শীতের পাখির গন্ধভরা তৃণ

চলচ্ছবির উড়ন্ত সব মুখ                একটি মুখের গন্ধভরা লীন

জলাশয়ের বাড়ন্ত ঘাস হাসে                         ভ্রমর যদি ঘুঙুর পরে আসে

রাত্রি আসে দীর্ঘ হুতাশনে                              জীবন বাজে নিদ্রাহীন গানে

হাওরজুড়ে হাওয়ার আর্তনাদ                       কান্না তোলে দীর্ঘদিনের নাদ

তবু  তো সেই পড়ন্ত উড্ডীন                         ঘুঙুর পায়ে শিপ্রা ক্যাথারিন।                        

——————-

রাশিচক্র

মিথুন রাশির কন্যারে ভালোবেসেছিলাম

মকরের প্রতি তার ছিল দয়া-মায়া

কেবল ছিল না প্রেম, ভালোবাসা

মিথুন ভালোবেসেছিল সিংহের জাতক

কিন্তু অবশেষে বিয়ে করল এক মেষকে

বৃশ্চিকের দংশনে আধমরা করত মেষ

প্রায়শই বৃষের শিঙ তুলে আসত তেড়ে

ফলত মিথুনের সংসার তুলকালাম কর্কট

তুলা সহ্য হলো না তার, ধনু সহ্য হলো।

মিথুনের ঘরে আজ মীন খেলা করে

মীনের নেমেছে জলে সমুদ্র ধনুর

সিংহেরা বনে আজও করে হরিণ শিকার

আজও মিথুনের ঘরে ঘরে যুগল বিস্তার

কুম্ভের দেশ নয়, তবু এক কুম্ভকর্ণ বৃষ

অশেষ তুলার দেশে নিদ্রামগ্ন মেষ।

—————–

কিশোরের সমস্ত সঞ্চয়

চামেলি তোমাকে নয়, ভালোবাসি প্রতিমার রূপ

তুমিই প্রথম ঘড়া, তুমি তাতে নিমীলিত ধূপ

মেধাও অধিষ্ঠিত ঐ নম্র আঁখিজলে চুপ

চামেলি তোমার কাছে মননের অধিগত কূপ।

তুমি রূপার্থে সিঁড়ি উচ্চাশায় প্রতিমাকে ছুঁতে

মর্ত্যরে আঙুলে শত দৈবপ্রেম তীব্রতর মাতে

সীমা ও অসীমের মাঙ্গলিক মৌন ঘড়াতে

কেমন কেটেছে দিন সময়ের সুতীব্র করাতে।

চামেলি তোমাকে নয়, ভালোবাসি তীব্রতর সুখ

তুমিই প্রথম অভিজ্ঞান, অভিসন্দর্শের মুখ

রূপ অধিষ্ঠিত হলে মেধা বহু দূরে সরে যায়

চামেলি তোমার কাছে কিশোরের সমস্ত সঞ্চয়!

—————-

প্রেমহীন কালে

কস্তুরী একদা তোমার সাথে কথা হবে দিনে রাতে

রাতে ও দিনে ঐ কস্তুরীঘ্রাণের সাথে মিশে থেকে

এখন এই সুলক্ষণার সাথে কথা বলি, কেননা

এর কথা ফুরাবে এক্ষুনি লক্ষণ ভালো নয় বলে

সুজাতার মুখখানি কাঁদো কাঁদো নিষ্কম্প বিভ্রমে

সে আরও মর্মবেদনার ছাপ রেখে যাবে প্রাণে

এখন মুখর হয়ে আছ নীরবতা ব্যগ্র জল হাতে

অতিরিক্ত অভিনীত হতে ধরা পড়ে তুল্য শরীর

কেননা অভ্যাসবশত খুলে যায় জানালা কপাট

অতিরিক্ত মুখোমুখি হতে গিয়ে লোকলজ্জা ঘাট

ভেঙে পড়ে, প্রণয় প্রতিষ্ঠিত নয়, হয় দীর্ঘ ব্যায়াম।

——————

উপস্থাপনাহেতু

উপস্থাপনাহেতু হেরে গেছি খুব

তুমি সুস্থ মুখ চেয়েছিলে

চেয়েছিলে পাখিদের গাণিতিক বিকাশ

দ্রুত উড্ডয়ন

এখন অসুস্থতাহেতু সুস্থ শরীরও সারে না।

মুগ্ধ বাতায়নের কাছ থেকে সরে

মুদ্রার নৃত্য দেখেছিলে

উপস্থাপনাহেতু জীবন ব্যর্থ হলো

তুমি নন্দনের মানুষ দেখনি।

এখন অহঙ্কার নিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে

অতিউচ্চ পর্বতমালা দাঁড়িয়ে রয়েছে

কবিকে জানাতে কুর্নিশ!

———————-

বানানো কবিতার পাশে

বানানো কবিতার পাশে নীল পারিজাতের আকাশ ফুটেছে

শব্দদের তালাচাবি বন্ধ করে রেখে দাও টাকশালে

শব্দেরা ভৃত্য নাকি, নাকি নগদ মুদ্রায় কেনা প্রমোদিনী

ইচ্ছেমতা উপগত হবে এই বানানো মিলনে

কোনও প্রেম নেই, দূরে কোথাও টঙ্কার ওঙ্কার

শোনা যায়, রতিরঞ্জিত প্রণোদনা মেকি ও কৃত্রিম।

বানানো কবিতাগুলো গোলগাল, প্লাস্টিকের  ফোলানো বেলুন

নগ্ন মেনিকিনের মতো কামনাময়, প্রাণহীন মূর্তি করুণ!

——————-

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button