আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : হাসান হাফিজ

বাঁচাও আমারে

পঙ্খি যাওরে উইড়া তার কাছে

লইয়া আইস মনের খবর

জ্বলতে আছি চিতায় একেলা

কলার মান্দাসে আমি সুপ্ত লখিন্দর।

পঙ্খি, যাও, দেরি করলে চইলা যাইব দূরে

তারে আমি বানতে আর পারব না তো

চারুকেশী বন্দিশের সুরে

মনোব্যথা একলাএকলি ঝুরে

দিতাছে আমারে শাস্তি

বুঝতাছ না মনোঅন্তঃপুরে

পুইড়া সবই হইল ধু ধু ছাই

করুণ কিচ্ছার কোনও অন্ত নাই

পঙ্খি জলদি যাও

আল্লার দোহাই লাগে

পায়ে পড়ি আমারে বাঁচাও!!


শূন্যতালাঞ্ছনা ক্ষত পরাজয়

যতটুকু পাওয়া যায়

সিংহভাগই ত্বরিত হারায়

স্বপ্ন খোয়া যায়

সচ্ছলতা ঘাম শস্য বনজোছনা

অন্তর্হিত পলকে উধাও,

একা একা পড়ে থাকে গাঙপাড়

শরতের বৃষ্টিধোয়া আকাশআঙিনাঢেউ

পর বনে যায়

এক লহমায়

সুতরাং প্রাপ্তি বলতে স্থায়ী কিছু নাই

ঝরাপাতা মর্মরিত ঝিরিহাওয়া

তোমার নিঃশব্দ ক্ষত আমিও ছুঁয়েছি

একান্ত সে আমারও আহত সত্তা

যার ছিল সারবত্তা

তাকে কেন মূর্খতায় ধরে রাখতে চাই

যে থাকবার নয়

সে তো যাবে চিরতরে চলে

ঠেকানোর সাধ্য কারও নেই

চরাচরে আমার একক সঙ্গী

হয়ে থাকবে শূন্যতালাঞ্ছনা আর

ধু ধু পরাজয়…


বয়সের তেতো সত্য

মানুষ দেখে না মুখ আয়নায়।

কেন কেন ? ভয় পায়,

বার্ধক্য ক্রমেই করে সাম্রাজ্য বিস্তার

বড়ো হচ্ছে ত্বকের কুঞ্জন

পেশি আর শক্তপোক্ত নেই

চোখে ক্লান্তি, হৃদযন্ত্র ক্রমশ দুর্বল

এইসব নোনতাচিহ্ন প্রস্থানের ছাপ

আয়নায় কিছুমিছু ধরা পড়ে

অন্য সব উপসর্গ গোপনে বর্ধিত হয়

ডালপালা ছড়ায় অবাধে

বয়স এমনই সত্য, এমনই নির্মম

হতে পারত দয়াশীল একটু মানবিক

কিন্তু সে হওয়ার নয়

ক্রমেই থিতিয়ে আসে বর্ণচ্ছটা

আয়ুর অস্পর্ধা আর জয়োল্লাস দম

জীবনের ধারাক্রম চিরকাল হয়তো এরকম।


রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-১১

ক.

তোমার সান্নিধ্য পেতে

মনে মনে

রকেট গতিতে

ছুটে যাই মোকামে তোমার

চুম্বনে আশ্লেষে

আলুথালু বিপর্যস্ত করি

তোমার জীবনই ওতে

চরিতার্থ পবিত্র সুন্দর হয়ে ওঠে

উপলব্ধি তুমি কতটুকু

করতে পারো, বলো একবার।

খ.

জোর করে পেতে চাইনি তাই

অধরাই থেকে গেলে সমস্ত জীবন!

আধখানা পেয়ে খুশি

আধেক কখন গেছে কোথায় হারিয়ে

ভালোবাসতে পারতে যদি

এ জীবন বিফল হতো না!

গ.

অনুরক্ত জলরঙে

নিপাট তোমাকে

সাধ্যমতো আঁকতে চেয়েছি

সে অঙ্কন সম্পূর্ণ হলো না

জয়মালা দীর্ঘশ্বাসই পেল

ঘ.

পাষাণীর থাকত যদি মন

হয়তো কোনওদিন

দ্রবীভূত হতো!

কিন্তু যেটা নেই

তার জন্যে দুঃখের যাপন

কতটা যৌক্তিক ?

কত সমীচীন ?

তারপরও পাষাণের হাতছানি আছে

পাদদেশে চোরাবালি, ছুটছি তারই কাছে

কী পাব জানি না!

ঙ.

অনেক অনেক ভালোবাসা

অনেক অনেক আদর

দুইজনাকে টানলো কাছে

আবার কেন ছিটকে পড়ি দূরে

কেন কেন কেন ?


বিচ্ছেদ বন্দনা

সুপ্ত ছিল বীজ

ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হলো,

তারপর চারাগাছ, ডালপালা,

ফুল ফল বিস্তৃত প্রকট

বলছি বিচ্ছেদের কথা

মন্দ্রিত সে বীজ, আপাতনিরীহ

কিন্তু ওর ছোবল বিষের

প্রতিরোধ করা যায় না এমনই প্রবল

কিন্তু তোমরা এ সত্যও জেনো

বিচ্ছেদের বুকের মাঝেই

মিলনের তৃষ্ণা জেগে থাকে

অস্তিত্ব প্রবলতর, উপেক্ষার নয়!


শঙ্কা স্বপ্নসাধ

ফুল

স্বপ্নজ বাস্তবে তুমি প্রকৃতই ভুল!

ক্ষত

শুশ্রƒষা কিছুটা দিয়ো করুণাবশত

চাপ

ভালোবেসে হৃদয় জখমে সিক্ত পাপ

বোধ

ভালোবেসে নিঃস্ব হওয়া ঋণ পরিশোধ

সুর

ছিলাম সমীপবর্তী, ঠেলে দিলে দূর

ভয়

হারানোর শঙ্কা আছে জানো সুনিশ্চয়!

———————————

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button