
ভুল ঠাটে গান্ধার
শিরীষ বনে মাতাল পাতার নাচ
উতল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরীয়
নদীর কাছে পৌঁছে যদি মেঘ
পারলে তাকে অতল আশিস দিও
আকাশ আমার জোর ফলাচ্ছে খরা
নদীর পানি মেলছে তপ্ত পাখা
কাতর নাওয়ের ভাঙা গলুইটিও
বোবা এখন…
সময় পেলে কুশলটুকু নিও
জীবন যেন নদীর নুলো ঢেউ
আছড়ে পড়ে চূর্ণ কাচের মতো
স্বপ্ন যেন ভুল-ঠাটে গান্ধার
অস্থি খুঁড়ে তামার কবচ খোঁজো

শ্লথগতি চরের কাছিম
আজ মাসের শেষ দিন; প্রিয়তমা আজ কি মাসের শেষ দিন ?
আমি খোঁড়াঘোড়া চড়ে গঞ্জে এসেছি
দেখি সব পথ গন্তব্যবিহীন।
আজ কি জীবনের শেষ দিন ?
এখন শ্রাবণকাল
এই কালে ঝর ঝর ঝরে যায় শাওনধারা―সবিরাম।
কিছুটা স্বপ্নের মতো কিছুটা পাখির মতো―অস্থির, বেগবান
তবে কি আমি সৃষ্টিছাড়া শ্লথগতি চরের কাছিম
ধারহীন কাস্তে কাটি বিশীর্ণ আমনের কাঠি
এখন ডোবার কাল
আমি তবে কোন জলে নামি ?
খ.
নামো নামো নামো হে সুতনু বৃষ্টি কান্নার বেগে নামো
ওঠো ওঠো হে শায়িত ক্রোধ পঞ্চশরবিদ্ধ এই বিছানা ছেড়ে
দু চোখ বন্ধ করে ছুট দাও জানালার ধারে; সেখানে একটি
হাত ভেসে থাকা রঙধনু যেন―আসে, কাছে আসে
ডাকে, তারপর হারায় আকাশে।
হারায়। বেশ জানি আকাশেতে হারায় তারারা। সে হাত
তারা কি তবে মূর্তিমান মেঘের চরায় ?
আমার কি আছে ভেলা যা নিয়ে জমিনে পৌঁছাই ?

যে যাকে ভালোবাসে
যে যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে চলে যাবে বনে
পাতার ছায়ার ভেতর হারাতে হারাতে গলুক সাগরের নুন
যে যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে হয়ে যাক সাগরে নিখোঁজ
যে যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে হাওয়ায় ভাসুক
যে যাকে ভালোবাসে তার কণ্ঠে সময়ের গান
শিস হয়ে, রাত হয়ে তীব্র তীর যেন
মরমে মোরগ সেজে ডাকে দুর্নিবার
যে যাকে ভালোবাসে নামে তার
পাখিও মাতাল।

সোনালি কুঠারের ঘাত-অভিঘাত
আমি একটি হিরণ¥য় সকালের ভেতর দিয়ে সাঁতরাতে
সাঁতরাতে … … শেষ অবধি কূলে পৌঁছাতে পারলাম না।
তবে কি আমি মহুয়ামত্ত উদাস প্রজাপতি আজকাল
বৃথা পর্যটনে অচেনা ভূগোলে ?
পেছন থেকে ‘সাগর, সাগর’ ডাক শুনতে পেয়ে
ফিরে চেয়েছি―যতটুকু সম্ভব তারচে ঢের ঢের
বাঁকা করে ঘাড় ঘুরিয়েছি―
এদিক সেদিক চারদিকে ঝলমলে হ্রদ আর
দ্বিধাপ্লুত জলে উদ্দাম মাছ আর বুকে তার সোনালি
কুঠারের ঘাত-অভিঘাত ছলকে ছলকে উঠছে।
আমি টলটলে চোখে অঙ্গুরীয় স্পর্শ করতে চাইলাম
তোমার শশকদৃষ্টি তক্ষুনি না-না ঝঙ্কারে
বেজে উঠল
আর আমি হিরণ¥য় সকালের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে
অজানা প্রান্তরে তাঁবু গাড়লাম।

টানটান ধনুকের ছিলা
ক চুমুকে নিঃশেষ হবে তুমি ?
তারপর কাছে এসে ডাক দেবে টানটান ধনুকের ছিলা
ক চুমুকে শূন্য হবে লীন হবে স্বপ্নালু আসমান
আমি দূর থেকে রাতভর নিশিজাগা পাখিদের
হৃৎস্পন্দন গুনছি
হরিৎশয্যায় শুয়ে দিনমান উল্কাপুচ্ছ খুঁজে মরছি
তুমি ক চুমুকে উড়ে যাবে বাহারি রুমাল

পাখিসব করে রব
পাখিসব করে রব আমার কাননে
আমি বঁধু বন্ধআঁখি আলোর ভুবনে
পাখিসব করে রব শয়ানে স্বপনে
ক.
মাছ ধরছি। শান্ত স্থির জলার ভেতর স্বপ্নের
চাঁই পেতে সময়ের মাছ ধরছি। রুপোলি, সোনালি
ডোরাকাটা বাঘমাছ; এত্ত এত্ত সব জীয়ন্ত অধ্যায়
জীবনের খাড়ি ধরে এগোতে এগোতে
কোথায় যে গেছি… …
তবু না মাছ না জলা পিছু ছাড়ছে না
মাছ ধরি মাছ ছাড়ি―মাছ আমায় ছাড়ে না
খ.
ভোর হতে না হতেই পিঁপড়ের দল পথে নামে।
পিঁপড়েরা হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে যায়
ওরা কি তা জানে!
পিঁপড়েরা হাঁটে। মাঝে মধ্যে মরে―পাদপিষ্ট
হতে থাকে ব্যতিব্যস্ত শহুরে সড়কে।
সহগামী যারা―তারা থামে এবং তারপর … …
তারপর খানিক বিরতি নিয়ে আবারও হাঁটা
ধুলোমাখা পায়ে―
কোথায় গন্তব্য তার পিঁপড়ে কি তা জানে
অদ্ভুত নিয়তি তার পথে ও খোড়লে
গ.
হায় কাব্যময়ী আমার কি হবে ঠাঁই সুন্দরের
বিরাট ভুবনে ? যেখানে সাগরের উষ্ণ বুকে
স্বপ্নের ডুবুচর বয়া হয়ে ভাসে
সেখানে পাখিও রাখাল দ্যুতিময় সুবর্ণ উদ্যানে;
আমার কি ভিন্নমতি ফেরাই গতি অন্য পথে
ঘ.
জলেরা জলের মানুষ জলজ বিকেলে―
অস্থিহীন স্থিতি নিয়ে কালের বিবরে
ঘুরছে কেন যে একা দল বেঁধে পাখির প্রকারে
সে কি জানে নদীবেশে অপূর্ণ ছায়া
হানছে কপাটে

উদ্বিগ্ন জোঁক নড়েচড়ে
লুকিয়ে কে থাকে ?
জমে থাকা কচুরিপানার ফাঁকে উদ্বিগ্ন জোঁক নড়েচড়ে
সুশান্ত শোবার ঘরে দুলতে থাকে পীতাভ বেলুন
আমি কী দূর্বাচাষি আদ্যন্ত ঘাস বুনছি
হায় মন্দভাগ্য পাখি! কার কপালে কী যে লেখা
তা কে-ই জানে
তবু ঘড়ার ভেতরে নড়ে বয়েসি কাছিম
আর বিকেলের দহলিজে
শীতল চাহনি মেলে মোটা সোনাব্যাঙ পস্তায়
তবে
লুকানো কী থাকে ?
————————
সচিত্রকরণ : রজত