
যখন অন্ধকার ঢুকে পড়ে
সন্ধ্যা জাগিয়ে তোলে পাহাড়ের ভেতরের
সুপ্ত প্রতিধ্বনিগুলো
সন্ধ্যা নিয়ে আসে সূর্যাস্তঘণ্টার শব্দ
বাতাসস্পৃষ্ট পাতার আওয়াজ
ড্রয়্যার টানার শব্দ
সন্ধ্যায় শুনি বাঁশ ফাটার আওয়াজ
পুরনো ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ
সন্ধ্যা নিয়ে আসে শহরতলীর দ্বিধা
যখন অন্ধকার ঢুকে পড়ে আমার
প্যান্টের ক্রস পকেটে
যখন ছোটখাটো প্রাত্যহিক অনুভবগুলো
চিরন্তনতার দিকে উঠে যেতে যায়!

বিয়েবাড়ি
বুদিয়া রঙের আলো, নিষ্প্রভ আলো
প্রতিজ্ঞা ও সংশয়ের মাঝখানে ঝুলে থাকে
ছোট ছোট মরিচ বাতি
তার ভেতর দিয়ে হেঁটে যায় বর, মিতবর
তার আগে নাট্যমঞ্চে সবাই খুলে ফেলে
যে যার মুখোশ,
তারা বড় তারার উন্নত স্তনের পাশে উদ্দাম নাচে
নাচ শেষে নাক ডোবায় খিচুড়ির প্লেটে।
বর-কনে চলে যায়
উৎসব শেষে হতভম্ব শিশুরা ছাদে ওঠে
তারার আলোর নিচে চুপচাপ বসে থাকে
বুদিয়া রঙের ছোট ছোট বাল্ব
ঝুলে থাকে তাদের মাথার ভেতর।

কী ঘটে ?
যখন উজ্জ্বল আলোসকল হঠাৎ নিভে যায়
আমাদের খড়কুটো বিশ্বাসগুলো স্ফীত হয়
অনেক ওপরে উঠে গ্যাসবেলুনের
ফেটে যাওয়ার আগে কী ঘটে যখন শহরের
সেরা ধনী লোকটিও বোঝে না
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মানে ?
অবহেলা তার সীমা ছাড়িয়ে গেলে
টানটান করে বাঁধা সুতা ছিঁড়ে যায়
যখন বহুতল ভবনের ছাদ থেকে
গলির খিস্তি-খেউড়ের ভেতর এসে পড়ে
অপ্রস্তুত চাঁদ, তখন কী হয়
নিঃসঙ্গ নগরপথিকের মাথার ভেতর ?

অন্যমনস্ক মুহূর্ত
শুকিয়ে আসা রক্ত, কালো রঙের
যুদ্ধদিনের বর্ধিষ্ণু উত্তেজনা
কোনও মাপ বা আকৃতি মনে নেই
খালি মনে আছে বিক্ষুব্ধ চিন্তার রাত
প্রায় নিভে আসা অগ্নিশিখা
বড় রাস্তায় থ্যাঁতলানো খরগোশ
মাথায় কোনও দুঃখ বা আহাজারি নেই
খালি মনে আছে হৃদয়ের শান্ত নির্দেশ

তখনও
পাইনগাছের সবুজ দীপ্তি ছড়িয়ে আছে
চারপাশে। গত সন্ধ্যার কুচক্রী বাতাস
বাঁকা করে দিয়ে গেছে ওদের ডালপালা।
এখন সকাল। এখন মিহি স্তব্ধতা
লেপ্টে আছে পাহাড়ের গায়ে
পতঙ্গের শব্দ আল্পনা এঁকে দিচ্ছে পাতার ওপর
আগামী সন্ধ্যায় এসব গাছপালা থেকে
ঝরে পড়বে কুয়াশার ফোঁটা
মনে হবে বৃষ্টি পড়ছে,
মনে পড়বে হেমন্তের বৃষ্টি আমাকে
আঘাত করেছিল নির্মল দিনের শুরুতে,
পাইন বনের শান্ত সবুজ দীপ্তি
ছড়ানো থাকবে চারপাশে, তখনও!
———————————-
সচিত্রকরণ : রজত