
কারা আসে
আসুক যত চিতা ভাইপার ভ্রষ্ট গুনিন, দূরাত্মারা
কবিতা ঘুরে দাঁড়াতে চায় প্রতীকে ও চিত্রকল্পে,
কবিতার ঘুম ভেঙে গেছে হরপ্পায়, ইনকা নগরীতে
কবিরা এখনও কমরেড, মশালের শিখায় লাল লিফলেট।
পুবাকাশে রক্তাভা নিভে নাই, জেনিনে শিখা ধিকি ধিকি
কোথায় আকাশ ? মেঘের ওপারে দিব্য কালো মেঘ।
দুধের ক্ষুধা ভীষণ ক্ষুধা, নবজাতক কাঁদছে একটানা
হতবাক কাক শকুনেরা খুঁজছে তৃষ্ণার জল
তবু ঝান্ডার রং ঝলসায়, জ্বলে লালের আভাসে
ঝোপে জঙ্গলে দেহাতি যুবক-যুবতী মরচে সাফ করে,
তীর-ধনুকের যুগ শেষ, ডোরাকাটা মুখোশে বন্দুক গর্জায়
স্লোগান উঠছে, চারদিকে ফুলবাগিচার চাষবাস।
পাহাড়ে সাহারায় দূর সমুদ্রের বুনো তটে, দ্বীপপুঞ্জে
পতাকা কিছু রয়ে গেছে তাঁবুর উঠানে, রাত্রি শেষ হয় হয়
নিষ্ফল গর্জন শেষে কাটা রাইফেল পতিত জলায়―
ফিল্ডগান ট্যাংকের বহর, তারপর ড্রোন মৃত্যুদূত
সাক্ষী থেকে যায় স্বাতী রোহিনী, যত নক্ষত্ররাজি।
দেখ দেখ কী উড়ছে ভোরের আকাশ জুড়ে
কারা আসে ? আদিপক্ষী নাকি দূর গ্যালাক্সির দূত …

দিব্য অন্তর্জালে
কেউ আর হাঁটে না আমাদের নিঝুম গ্রামে
ছায়া-গলির রাস্তায়, তবু একদিন ফিরে আসতে হয়
দ্যাখো না আমাকে
ধুঁকছি কী রকম খাদের কিনারে, গলির পাশটায়।
হাওয়ায় মিশে আছে যমদূত
কোথায় পালাব, ভালো আছ তুমি ফেসবুকে,
দেখছ না পার্বতী, চারদিকে কী ভীষণ
অমানিশা ? ফটকে এস না, ঐ যে ডাইনে
দেবুদার রক্তবমি গড়ায় জ্বর-জ্বলা মুখে।
মৃত্যু মেলেছে থাবা দিব্য অন্তর্জালে
প্লানচেটে সারি বেঁধে বুক চাপড়ায়, কাঁদে
লাইলি-মজনু শিরি-ফরহাদ রোমিও-জুলি।
মহাকাশের পর মহাকাশে এইসব বিলাপে
ইটিদেরও চোখ ভেজে; এই গ্রহে
ধমনীতে বিষ টেনে নরপতিরা রাতে মদমত্ত
ছুরিতে শান পড়ে। তরুণীর লাশ অচেনা হাওরে।
আলতামিরায় গুহাপ্রাচীরে
দিন বলি আর রাত্রি বলি, ক্ষয়ে বাঁচি
ভোরের বেলা নদীতে নিঃশব্দ কচুরির দাম
নাইয়রির মাঝিমাল্লারা কী গায় বুঝি না যে।
বাদুড়েরা ওড়ে সন্ধ্যার আকাশে, প্যাঁচারাও
ডাহুকের গলায় গত দিনের রক্ত
দিনভর বাগানে নিমফল, বাতাসে মধুমাছি।
শীতেরা পাখিরা আসছে দূরভূমি থেকে …
অরণ্য জাগে গহিনের কাদার ভিতর
রাত্রিতে ফের নক্ষত্রলীলা। পরাবাস্তব চেনা রাত্রিরা।
অন্ধকারে জ্বলে থাকে শিখা, দূরে ঘণ্টাধ্বনি
আহা, ভুলপথে গিয়ে কারা ডোবে জলের ধন্দে
ঝড়-ভূমিকম্প শেষে ইট-সুড়কি খুঁজে নিতে যাই।
ধ্বংস¯ূÍপের ভিতরে কে কতকাল বাঁচতে পারে
জাগো ফেরার স্বপ্ন, ফিরে আসো মৌটুসিরা
ঘোর অন্ধকারে গুহার মমি চোখ মেলেছে।
একে একে সকলে ফেরে, ভোর থেকে মধ্যরাত্রি
আলতামিরায় গুহাপ্রাচীরে নতুন বাইসন
ঘাসবনের পাথরে জেগে উঠেছে শিলালিপি
ফিরে আসে গুপ্তভাষা, হারানো গন্ধ, ফিকে মুখ।
ভোরের রঙিন মহুয়া
পাথর না হই, নদী না হই, মেঘই হব
পাখি হতে বাধা কোথায়, উড়ে উড়েই
কাটবে বেলা দেশান্তরে ঘুরে ঘুরে
গুহার ভিতর সন্ত হব,
ভাতগন্ধ মুছে ফেলে এক বস্ত্রে বেরিয়ে গিয়ে
সরাইখানায়, শিরীষতলায়
ভাব-সঙ্গিনীর সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে
নতুন জন্ম হয় কিনা হয় দেখতে চাই।
তার আগে যে বাঁচতে হবে
লঙ্গরখানার পঙ্্ক্তিভোজে বসতে হবে,
এ কি এমন কঠিন কিছু তোমার কিংবা আমার জন্য
পাহাড় কিংবা অরণ্যানী সুনিশ্চিত হবে ধন্য,
গুহাজীবন শেষ হলে পর যখন দুজন
ঘুমাতে যাব ঘাসের শয্যায় রাতদুপুরে,
ফুলশয্যা তৈরি তখন, পাখির কূজন
মিশতে থাকে ভাবসঙ্গিনীর ধুম নূপুরে।
ভোর থেকেই ভোরের রঙিন মহুয়া খাই।
অরণ্য শাসন করে বনসাই
চূড়ায় উড়ছে নিশান, খঞ্জেরা স্বপ্ন থেকে
লাফিয়ে উঠে জল চায়,
আনো আঁজলা আঁজলা ঠান্ডা পানি
জানালার ওপারে নিপুণ ডাকিনী অলীক জ্যোৎস্নায়
ছেঁকে নিয়ে গোবি মরুভূমি, মরু সাহারা
সাইমুম ছুটেছে, যাযাবর দিশাহারা।
ভুলে যাই আমি জন্মান্ধ, ঝলকায় বিদ্যুৎ
খঞ্জ কীভাবে পৌঁছে যায় অন্নপূর্ণার শিখরে ?
কিলিমাঞ্জারো জুড়ে আছে কবরের সারি
অনেকেই প্রেতের গলা টিপে ধরে, আমিও পারি।
পারি না যদিও। মৃত্যুর থাবা তুড়ি মেরে উড়িয়ে
বৃদ্ধ শেরপার সাথে মিতালি পাতিয়ে
যাত্রা শুরু করি কুয়াশার ভিতর দূর নিরুদ্দেশে।
ব্যাকপ্যাকে পানির বোতল, অক্সিজেন, কাঁধে গাঁইতি
মিছিল উঠছেই গিরিপথে অশরীরীদের দেশে।
ভুলে গেছি কবে, আমি যে খঞ্জ
রাস্তা ছিলো কাঁকরে কাঁটায় ভরা গঞ্জ থেকে গঞ্জ
বুঝিনি বেড়াবার নেশা থেকে যায় অস্থিমজ্জায়
অরণ্য শাসন করে বনসাই, আমাজন হারায়।
স্বপ্নভুকেদের নির্বাণ নীরব আত্মহত্যায়
বনসাই ঠিক বাঁচে, ছায়াপথে আঁকা ওর পরমা
বনগহনে ঘোর তমসার ধাঁধায় ফুটেছে চন্দ্রমা।
——————–
সচিত্রকরণ : রজত