
নদনদী ভাইবোন
২১
আগামীর সব ভোট আমি পুনর্ভবাকে দেব
ঢেউবোধে কেন যতিচিহ্ন দিলে
শামুকেরা বালির উঠোনে মৌলিকতাহীন
নদী পরে না মুখোশ
ডাকাতেরা
তার রজঃস্বলা রাতে
পালা ক’রে
পালা ক’রে
বালাম নৌকার হৃদি রক্তে ভিজে যায়
২২
চলো সাম্পান
গতির বিধান বলো
ভি-উপত্যকায়
পর্যটনে যাব
বিজয়ী-চিহ্নে দেখেছি
স্বার্থময় ব্যর্থতা
পাথরে জলের ক্ষয়ধ্বনি
সঙ্গী আমাদের
পার্বত্য-প্রবাহে
ক্ষত-বিক্ষত শান্তিকথা ধায়

২৩
আমি তেমন মুত্তাকিন নই
যমুনা কি সঙ্গে যাবে
বেহেশতের চল্লিশ তারকা হোটেলে
পদতলে বয়ে যাবে নদী
কী নামে ডাকব তাকে
পানীয় উত্তম
সঙ্গে উদ্ভিন্ন যৌবনা
ওই জলে পদ্মসূর্য
বাংলার রৌদ্রগন্ধ
পাড়ে পাড়ে কৃষিদিন নেই
কী রঙের বৃষ্টি হবে
রাধার সঙ্গে ভেসে যাব
অপেক্ষার কোন নৌকায়
আমি তেমন মুত্তাকিন নই
যাবো না সেখানে
২৪
সেই জন দেশহীন
নদী নেই যার
জলের অশ্রু-দাগ পাড়ের ভাঙনে
বলে কষ্টকথা
অনুভূতিভাব
নদীপুর কোনও গ্রাম নয়
অধিক প্লাবন
সিন্ধুতীরে আর্যাবর্ত অন্য আলাপ
পড়শিদের নেই সংহতি
জলাবর্তে কে নয় তৃষ্ণার দাসদাসী
উড়ছে গাঙচিল
মাছেরা কোনদিকে যায়
নদীতটে মলয়বাতাস
ইলিশের রূপসত্য দিন
জয়ন্তী-হৃদয়ে যদি কেউ ফেলে থুতু
বলুন নিজের অপমান

২৫
ঢেউভাষা
তরঙ্গকথা
নদীজাত মীন
অপমানিত দেশকালে
নদীর শাসন নিয়ে
আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টে তর্ক তুলতে হবে
বন্দুক ব্যবসায়ীরা ভেটো দিতে পারে
আমরা জলের রাখাল
পোশাক পরা নগরকিষান
কতটুকু শাসিত হলে নদী
আমরা সভ্যতার মানব
জ্যামিতির সংসদ ভেঙে পড়ে
২৬
কেমন পড়শি গো
কেবল নিজের প্রয়োজনে হাসো
বিনিদ্র বৃষ্টিপাতে
তুমি নীতিহীন
খুলে দাও বাঁধের ধৈর্যসহন
যদি ডুবে মরি জলের চিতায়
কার সাথে কথা বলবে তুমি

২৭
আমরা কাটিগঙ্গা
এবং জোয়ার
হেতুর রূপকে খুঁজি মুখ
পুনঃসংজ্ঞায়িত প্রেম কৃত্রিম
পলিজ শাখায়
ঢেউ সঙ্গধ্বনি খোঁজে
আটক জলেরা বাঁচিতে ইচ্ছুক
দূরতর শূন্যে মঙ্গলগ্রহের মৃত নদী
দেখেছিল সব
আজও দেখিনি
শান্তিস্রোতের অতল
নদীর চলিষ্ণু ছায়া
২৮
কথা বললে
মনে হতে পারে
রাজনৈতিক জাল
হয়তো
ভরা কাটাল
মরা কাটাল
নদীচিহ্নে বসে আছে ভাইফোঁটা চাঁদ
দাঁড়ালে সঙ্গে তোমার
হয়তো একদিন
সিটি কর্পোরেশনকে
স্বপ্নকর দিতে হবে
প্রকৃত কাটাল যদি বুঝি
নিঃশ^াসে শান্তিমলয়
প্রকৃত হবার আগে
ঢেউয়ের আরশি হাতে নাও
নদীতীর ধরে চলা
মানুষের তৃষ্ণা-কথা সভ্যতার

৩০
হে বিদেশি
রাষ্ট্রীয় কাজে এসে
কী কাজ কতটা করো
আংশিক জানি
সারা দিন নদীভ্রমণ
অনেক তরঙ্গকোষে মৃদু মৃদু হাসি
সাঁতরায় মানুষ
গরু ও মহিষের সঙ্গে গোসল করে রাখাল
বাসনকোসন মাজে সহজ নারীরা
পালহীন নৌকায় কেউ-বা ব্যস্ত পারাপারে
রংভরা ছবি তোলো
পাঠাও তোমার প্রেমিকপ্রেমিকা-সকাশে
অনুমান করতে পারি
কী আলাপ লেখ
নদীর রাধিকা রূপে
তোমার পূর্বপুরুষ
রেখে গেছে বালি
৩১
নতুন সন্ধ্যায়
কপোতাক্ষে ভাসে ‘মেঘনাদবধ’ চাঁদ
জলপুলিশের সঙ্গে
বেদেদের রহস্য হাসি
ঝাঁপির সাপ ঈষৎ নড়ে ওঠে
আমাকে দেখে
পুলিশ আর তরঙ্গসুখী বেদে
ঘাটের খরচ-কথা তোলে
‘আপনে জানেন
এই নদে
কবি মাইকেল কত সাঁতার দিছে একদিন’
চোখ ছিল ঢেউয়ে ডোবা নৃত্যমান চাঁদে
বেদিনীর সেলফোন বাজে
জলের কল্লোল আমাদের রসচিত্র করে
সাপের হিসহিস শুনি

৩২
চিত্রার ঘাটে আবার
জলপুলিশের সঙ্গে দেখা হলো
‘বুঝলেন
বঙ্কিম ওই বাড়িতে থাকতেন,
সুলতানের বাড়িতে বড় বড় কালসাপ ছিল
ছোবল মারেনি কোনওদিন
মনে হয় সাপও ভালোবাসা আর ছবি আঁকা বোঝে’
রাত্রির টহলে সে নিজের কথন
ভাটি আর জোয়ারের স্বরে
নদী তার সঙ্গে গূঢ়কথা বলে
প্রশ্নের উজান শুনে
জলপুলিশ রূপ দ্যাখে বহমানতার
শ্যালো নৌকার ইঞ্জিনশব্দে
কথার পরন ডুবে যায়
‘আজ রাতে আমার সাথে ডিউটি করেন
জানবেন চিত্রা কার কথা কয়’
৩৩
কোনও কথা নয়
মোবাইল বন্ধ করো
নিঃশব্দে বসো
রাত্রির আকাশ
নক্ষত্রের রাষ্ট্রপুঞ্জ
অপেক্ষায় অধীর
বাতাসেরা এখন মলয়প্রবাহ
শ্রবণের সত্য রাখো জলের গভীরে
শুনতে পাচ্ছো
হালদায় মাছেরা ডিম পাড়ছে

৩৪
কেন যতিচিহ্ন দাও আমার সত্তায়
আমি হৃদয় সূর্যপ্রতিম
সব ফলাফল জানে ভাঙা পাড়
কার জাহাজে বারুদ আগে যাবে
গেছে
যাচ্ছে
যুদ্ধ
কত শব ছিল বাঙালি নদীতে
হত্যাবিলাস
কত শব গাজার প্রান্তরে
জলেরা সহ্য করে জলের ক্ষরণ
মৃত নদী
সময়ের জলরূপ
৩৬
আমরা খরস্রোত
বালিবোধ
নদীকদম্ব
আর বাউলের গান
তুমি পদ্মার মৌসুম
ব্রহ্মপুত্র আমি
আমরা দ্বৈমাতৃক
শস্য নেবে কে
অতি দখলের সংঘাত
শরকির দিন
বল্লমের রাত
জলের হৃদয়ে এসো
এসো পাড়ের পরান
৩৭
বলো নদীদূত
বলো অন্তঃসলিল বাহিনী
খরাজ্বলা দিনে
কৃষিসত্যপাশে চাই ফসলের সাধ
আমার নিবাস
পাথরের মেট্রোপলিটনে
জলরক্ত হাতে
আমি নদীভবহীন।
সন্তানসন্ততি
কথা বলে
তৃষ্ণা
তৃষ্ণা
রায়ভাটি জানে
সভ্যতার কৃষি জেগে ছিল নদীর প্রহরে
বলো নদীদূত
নদীরয় কবে আসবে ফিরে
একদা গয়না ভেসেছিল তরঙ্গে আমার
নাবিক আর মাঝির দূরত্ব কুশিয়ারা জানে
৩৮
হাঁটছি অনেক বছরের পর
অনেক অববাহিকায়
মুকুলেশ^রী জিজ্ঞাসা করে
ঢেউয়ের সিঁড়িতে কি
রাত্রির প্রথম ছায়া কাঁপে
পাড়ের গ্রীবায় মুখ ঘষে আর্ত জলস্বর
একাত্তরে ভেসে গেছে আমাদের বোন আর ভাই
মাতৃজিজ্ঞাসা দুশ্চিন্তাময়
কষ্ট
মানবের কণ্ঠে তড়পায়
অপর হতে ঢেউয়ে হাত রাখি
৩৯
তুমি কি পুড়ে যাও চৈত্রজলে
কালীগঙ্গা খোঁজে মেঘ
বর্ষা কতদূর
ময়ূরপঙ্খী চরের কিনারে একা
তোমার সাঁতার কোন পাড়ে
মাটির খরায়
তুমি দেবে সেচ
কাশবন শাদা উছিলায়
দোদুল্যমান আড়ালের ছায়া দিয়ে বলে
তুমি কি লবঙ্গবতী শারদীয় জোসনায়
পটল নৌকাখানি বাঁধা আছে তীরে
হেমন্তের ডাকাতিয়া
সুবোধ ধ্বনিতে বলে
যদি নষ্ট হও
হাত দাও শস্যনালীজলে
আন্ধারমানিক
পারঘাটা থেকে কুয়াশা সরাও
আসবে মানুষ
খুব শীত
কিশোরের জালে নেই সোনালি বোয়াল
নদীজলসম্পন্নশস্যপালিত দেশে
অপমান
অপরাধ
আর লুণ্ঠন জায়মান
নদীর বসন্ত
বর্ষাঋতুর চুম্বন
ইলশা-নৌকায় সারারাত লণ্ঠন জ্বলে
ঢেউয়ে ছায়ামায়া চোখমুখ
৪০
কর্ণঝোরা সঙ্গ দাও
প্রকৃত সন্ন্যাসিনী
নগর দেখায় ভয়
স্থিতি ভাঙে আলোর পচনে
আমিও সন্ন্যাস নেব
পেছনে মায়ারঞ্জন
নদী ফেরায় না ঢেউআঁখি
শতবর্ষ যায়
তোমার সঙ্গ পেতে হাঁটছে পথিক
১৬ শ্রাবণ,২০২৮
৪১
স্টাচু অব লিবার্টি
গাধার পিঠ থেকে নেমে হাতির পিঠে
হাতির পিঠ থেকে নেমে গাধার পিঠে
চতুর কৌশলে ওঠে আর নামে
গাজায় কতটা হত্যা হলে
যুদ্ধব্যবসা শান্তি শান্তি সংগীত
ধলেশ^রীর কাছে
শান্তিরূপের সন্ধানে
হাডসন ঢেউপত্র পাঠায়
ইছামতীর খবর পাচ্ছে না বলে
পদ্মার কাছে
টেমসের ঢেউয়ের কালিতে
রানি পত্র লেখে
আমার উপনিবেশে
নদীটা বেঁচে আছে নাকি
বুড়ো জাতিসঙ্ঘ
ঝুলন্ত থুতনিতে লালা মোছে
তোতলায়
বিবৃতি পড়ে
নদীরা মানুষ আর ধমনি পৃথিবীর
হে চন্দনা
নীলনদ
হে নীলকমল
টাইগ্রিস
উজ্জয়িনী
আগামীতে তোমাদের শান্তিসম্মেলনে
নদীর মানবতার কথা হবে
শান্তি চায় নদী
পরাশক্তি ভেটো দেয়

পুনশ্চ :
ভি-উপত্যকা : নদীর পার্বত্যপ্রবাহে স্রোতের বেগ প্রবল থাকে বলে তলদেশে ক্ষয়কার্য অধিক হয়ে থাকে। এজন্য পার্বত্য প্রবাহে নদীর উপত্যকা ইংরেজি ‘ঠ’ আকৃতির হয়ে থাকে। একে ভি-উপত্যকা বলে।
নদীপুর : নদী-জলোচ্ছ্বাস, নদী-প্লাবন। বন্যা।
কাটিগঙ্গা : কৃত্রিম কাটাখাল।
নদীকদম্ব : নদীসমূহ।
অন্তঃসলিল বাহিনী : যে নদী বালি-পাথরের মধ্য দিয়ে অদৃশ্যভাবে নিজের জলস্রোত প্রবাহিত করে।
রায়ভাটি : নদীর বাঁকের কোলে অল্প স্রোত।
দ্বৈমাতৃক : নদীর জলের ওপর নির্ভরশীল। যে দেশের শস্যোৎপত্তি নদীর জলের ওপর নির্ভর করে। যে দেশের অধিকাংশ শস্যক্ষেত্র নদজিলে প্লাবিত। নদী যার মায়ের মতো অর্থাৎ কেবল যে দেশ লালিত পালিত।
নদীরয় : নদীপ্রবাহ।
পারঘাটা : যে নদীর ঘাটে নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ ইত্যাদি পারাপারের জন্য আসা-যাওয়া করে।
সূত্র : বাংলাদেশের নদীকোষ : ড. অশোক বিশ্বাস
———————-
সচিত্রকরণ : রজত