
নস্টালজিয়া
উড়ে যাও আলো
অন্য কোনও সরসী সন্ধ্যায়
সুরভিত কামনায় তীব্র অভিলাষে
দূর থেকে দূরের বিন্দুতে
তখন হয়তো কেউ কেউ
খুব একা নিভৃত সঙ্গীতে
এঁকে চলেছে বৃষ্টির মুখচ্ছবি
আরও দূরে দেখা যায় বৃষ্টি আঁকা ধ্রুবতারা
বৃষ্টিতে ভিজছে শ্যামলিমা
বৃষ্টিতে ভিজছে গোধূলি-আকাশ,
ব্যালকনি―লাইলাক
নক্ষত্রের কোণে কোণে হচ্ছে তীব্র বৃষ্টিপাত
ভিজে ভিজে সিগালেরা
ফিরে আসে আর চলে যায় অলকায়
সেই বিষণ্ন সন্ধ্যায়
অথচ আমরা কিন্তু দ্যাখো
একসাথে ভিজিনি কখনওই কোনও কালে…

পালামৌ
ব্রহ্মাণ্ডের কোনও এক প্রাচীন বোহেমিয়ান
মাঠে নিঃসঙ্গ দ্বীপভূমি হয়ে
জেগে আছে অখণ্ড ঘাসের প্রতিরূপ
এক টুকরো পালামৌ যেন,
গহিনে ছড়ানো মৌয়া গাছের ছায়াতলে
কোল নারীর চঞ্চল নৃত্য, হাসিঠাট্টা
সেখান থেকেই ফোঁটায় ফোঁটায়
ঝরে পড়ে কোমল মহুয়া…
দূরে বহুদূরে রূপসী মানুষী হয়ে
ধীরে বয়ে যায় কোয়েল নদীর উজাগর স্রোত
আর স্নিগ্ধ শিশির অর্গল ভেঙে শয়ে শয়ে
মৌমাছির বিচিত্র গুঞ্জন দিকে দিকে শোনা যায়;
কোথা থেকে আসে
এতো আলো, ওই ডানা অস্থির বাতাসে,
অচেনা সুর অচেনা গন্ধে ভেসে গেছে
সুখস্মৃতি পূর্বজন্মের সঙ্গত,
ফেলে আসা পল্লবশোভিত গ্রাম
ঝরা মেঘ, গভীর রাতের তুমুল বর্ষাতে
পথ চলা কত যে বিপদ
প্রতিবার তবু গাঢ় মধুদিনে
দীপ্ত পায়ে হেঁটে যাই জলপাই বনে;
আর বসে থাকি খুব একা চন্দ্রিমার রাতে
ঘরছাড়া সেই কোল মেয়েটির
মতো দীর্ঘ প্রতীক্ষায়…

জীবনশৈলী
কত রাত তবু জেগে থাকি একা!
প্রতি রোমকূপে বেজে ওঠে পরমায়ুবোধ,
বঞ্চনার নিশিডাক
ঘুম আসে, ঘুম চলে যায়
অনন্ত নিদ্রার দিকে গীতধ্বনি সন্ধ্যা নামায়,
প্রচ্ছদে দেখি আলোছায়া,
অনুপ্রাসে মর্মরিত বাজে আত্মলীন!
তবু ভাবি পড়ে থাকি তবে
আঁধার সেতুর নিসর্গতার সীমায়
এই আত্মসাৎ ঘুমের মুদ্রায়
প্রগাঢ় হোলির রাত এসে
আচম্বিতে শুভ্রপুষ্প ছুড়ে দেয়
উদ্ভিদজন্মের তীব্র মাতাল বেলায়,
ঠোঁটে করে বয়ে আনে সুষুপ্তির
অচেনা কার্পাসরেণু,
কোলাহলহীন নির্জন তাঁবুর মতো
তামাটে গহ্বরে শুয়ে থেকে দেখি
স্বর্ণরেণু, বাতাসে ওড়ায় কত মধুরিমা স্মৃতি,
স্বপ্ন ও ঊর্মি-উজল স্পর্শভূমি,
যাতে লেখা থাকে
জীবনশৈলীর এক বিমূর্ত কবিতা …

ছায়া
আলোর বিভ্রম আঙিনায়
আনমনে কিছুটা রং ঝরে গেলে
সোনার বুদবুদ হয়ে ওঠে রঙধনু
পাতাদের শিরায় শিরায় জেগে ওঠে স্বেদ!
হয়তোবা তখন কবিতার বিকেল
ছেড়ে চলে গেছে
সারি সারি পাখিদের মিছিল….
জল ঝরে ঝরে ক্লান্ত বিবর্ণ কোনও রাতে
ঠোঁটের উত্তাপ যখন ফুরিয়ে যায়
সময় তখন কর্কশ পাথর বইতো কিছু নয়!
———————-
সচিত্রকরণ : রজত