আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : তুষার কবির

তাঁবু ও তীর্থ

এই জঙ্গলের আরও একটু ভিতরে যাও; ছেঁড়া পাতা আর ভাঙা ডালপালা পড়ে থাকা সরু রাস্তা ধরে, ময়ূরীর মনোলগ ভেসে আসা পথ ছেড়ে, দূর থেকে দেখতে পাওয়া ডাকিনীর ডাকবাক্স ঝুলে থাকা কুটিরের পাশে, হরিয়ালের হাড়গোড়ের চূর্ণ পড়ে থাকা ঝোপের আড়ালে, টিয়াডাক কোটরের পালক ছড়ানো রাস্তা ধরে, পাহাড়ি কিশোরী যে পথে হেঁটে যায় তার পড়ে থাকা ঘাসের ঘুঙুরে, ডানা ঝাপটানো বনডাহুকীর ডাগর গ্রীবায়, শিস কেটে হেঁটে যাওয়া নগ্ন বনদেবীর ডেরার কিছুটা দূরে, ডেরার পেছনে ভাসা সরোবরে যাতে বনদেবী সেরে নেয় নিত্যস্নান, তার ঠিক পেছনেই সুনসান বাঁধা আছে এক তাঁবু!

এই তাঁবুর ভেতরেই আজ নেমে আসবে সব সুর, কথা, গান—হাওয়ায় হাওয়ায় বয়ে যাবে জগতের প্রেম অভিজ্ঞান!


রতি ও আরতি

ধূলির প্রলেপে ভেজা

এই সন্ধ্যা!

শব্দ থেকে শব্দে

গান থেকে গানে

উঠে আসে

গোধূলি আরতি!

ঠোঁট থেকে ঠোঁটে

বুক থেকে বুকে

জেগে ওঠে

কামনা মালতি!

জানি, তোমার পা আজ

আলতা লেপানো—

তার ভেতরে লুকোনো আছে

শুধু রক্তপাত!

যতই গহিনে যাবে রাত

খুলে যাবে ভাঁজ—

জমাট গোঙানি ছিঁড়ে

বয়ে যাবে

কান্নাচেরা রতির প্রপাত!


প্রেম ও প্ররোচনা

ফেনা আর ক্যাফেইন ছড়ানো এ রেস্তোরাঁয়

মুখোমুখি তুমি আমি;

যেন সামনে সাজানো আছে এক দাবাবাক্স—

কেউই বুঝে উঠতে পারছি না

শেষ চাল হবে কোন ছকে!

বোতলের ছিপি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে স্রোত;

রেস্তোরাঁয় বেজে যাচ্ছে

ভুলে ভরা ভায়োলিন!

আচমকা তোমার চিবুকে

ফুটে উঠল মৃদুু ঘাম;

তোমার আঙুলগুলো এগিয়ে এল

ছুঁয়ে দিল আমার বিবশ আঙুলগুলো—

মাঝরাত শেষ হওয়ার ঠিক আগে এ রেস্তোরাঁয়

শীতল গেলাস জুড়ে ভেসে উঠল

ওম ভরা রক্ত প্ররোচনা!


নদীভাষ্য

এ শহরের বণিকেরা জেনে গেছে

মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে

সব কিছুরই বিকিকিনি চলে—

বনদেবীর বিকিনিও খুলে আনা যায় সহজেই;

ছিঁড়ে আনা যায়

আকাশের ভাঁজপত্র,

এমনকি চাইলে খুবলে আনা যায়

নদীরও হৃৎপিণ্ড!

আর তাই আমাদের নদীগুলো সব

বীর্য ও বর্জ্যে ঠাসা

প্রত্ন জলাশয়!

তাদের বিবশ জরায়ুতে জেগে ওঠে

ধাতব সুডোল ইমারত—

ডেনিমের কারখানা

ঝা চকচকে রিয়েল এস্টেট!

এ শহরের নদীগুলো

শুধু মাঝরাতে কাঁদে;

ঢেউগুলো যেন সব সাদামাটা জলের নামতা—

এ শহরের নদীগুলো

শুধু দুঃখ পেলে জাগে;

তীরগুলো যেন সব হেরেমের বাতিল বনিতা!


টংঘর কবিতা-১

এই শীত রাতে

কুয়াশার হিমবাক্স চিরে

খুঁজে ফিরি আমি এক অলীক আশ্রম!

পুরনো টংঘর পার হয়ে

খড়ের চূড়ার নিচে জড়ো হয়

ঝরা পাতা শৈত্য হিম ধোঁয়াশা বিভ্রম!

টংঘর কবিতা-২

টংঘর থেকেই আমি

বাজিয়ে চলেছি আজ সাইরেন—

টংঘর থেকেই আমি

গুঁড়িয়ে দিচ্ছি দ্যাখো ইউক্রেন!

স্বপ্নরা আছড়ে পড়ে

গ্লোবাল ভিলেজে ঝরে স্নো রেইন—

মুদ্রা ছাড়া প্রেম যেন

মাথা ছাড়া এক মাইগ্রেন!

টংঘর থেকেই আমি

উড়িয়ে দিচ্ছি দ্যাখো ইউক্রেন!

টংঘর থেকেই আমি

হুইসেল দিচ্ছি আজ শেষ ট্রেন!

——————-

সচিত্রকরণ : নাজিব তারেক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button