আর্কাইভকবিতা

গুচ্ছকবিতা : জুনান নাশিত

উদ্গিরণ

আলো খুন হলো কাল!

অচেনা সেতুর নিচে

পড়ে ছিল তার লাশ

কেউ কি দেখেনি ?

চোখে ছিল তার বঞ্চনার তাপ

গভীর নীরবে ছড়িয়েছে, ধীরে

জনপদ থেকে জনপদে

সূর্যের ওপাড় থেকে নেমে আসে শঙ্কাগীত

বলে, নিভিয়ে দিয়েছো সব ?

তাই বুঝি ঘাটে ঘাটে ভিক্ষা মাগে

নগর নিমাই ?

আলো ছিল, আলো নেই

আলোর শরীর থেকে ওড়ে

লাভা আর ছাই।


প্রতিপ্রশ্ন

এখানে পাবে কি কিছু ?

বলো ?

এইবেলা ?

নগর কাঁপানো আর্তস্বর

কেঁপে কেঁপে চলে গেছে বহুদূর

নিশানা রঙিন হোক

আয়ু তার সাদাকালো

আমি বলি, এখানে এসো না তুমি

এখানে, স্বপ্ন-জঙ্ঘায় ভাসে আয়ত চোখের ক্রোধ।

শুভ সকাল

কাচের শহর

দেখে হাঁটো

গ্রামগুলো স্লেটে আঁকা

লালমুখ, স্মৃতিহীন

কালো পাখি উড়ে যায়

ডানাভাঙা

ভয় নেই

নিকোনো স্বপ্নের বীজ উপড়ে নিয়েছি

একা হাঁটে বিত্তহীন নীরবতা


মৃত্যুর কথা

বহুদিন ভাবিনি মৃত্যুর কথা

মৃত্যু যেন এক বরফঢাকা পাহাড়চূড়া

প্রতিফলিত দিনের শেষ আলো

ঈশ্বরের মায়া

হেডিস যেদিন পাতালের কথা ছড়ালো পৃথিবীজুড়ে

সেদিন থেকেই  মৃত্যুময় জীবনের ভিতে

স্বপ্নগুলো ফিরে ফিরে আসে।

প্রান্তিক ডানায় চেপে বৃত্তাকার দিন

কোথায় চলেছে ? কেউ কি জানে ?

শেষ রাতে পৃথিবী পৃথক হলে

প্রতিরোধ প্রতিকারে শুকাবে ঘাসের আলো।

লাল জমিনের ডাকে

রক্ত মাংস মন নিদ্রাহীন হবে

প্রলাপের মতো বকে যাবে কেউ

মরণ রে তুঁহু মম শ্যামসমান।


অশরীরী

এই জায়গায়

এখানেই আমি কাঁদি

এখানেই পাখিজন্মকালে

নদীরাও হেঁটে যায়

আগুন আগুন খেলে।

এখানেই কাঠবিড়ালির ছায়া

ভেঙে দেয়

সোনালু ফুলের ঝুল

কর্কশ ক্রোধের পিঠ

অজান্তেই ভারী হয়ে ওঠে

এখানে এখন

মৃত্যুহীন মুখোশের কাল

অবাধ পীড়ন

আড়াআড়ি সমাধির পাশে

আমার পায়ের ছাপ

অচেনা অজ্ঞাত অশরীরী

অনন্তের পথে মেশে।


শিশুরা

শিশুরা নিস্তব্ধ

শিশুরা অভুক্ত

হিমাঙ্কের নিচে

চাপা পড়ে আছে

কত শত গল্প তাহাদের

উদযাপনের চিহ্নগুলো

এখনও আছে

পথ থেকে পথে

তারা ঢাকা পড়ে গেছে

গোলা ও বারুদে

শিশুরা বিচ্ছিন্ন

শিশুরা উদ্বিগ্ন

ঘুম পাড়ানিয়া গানে

জল ভেঙে

যে হিমশীতল রাতেরা

রূপকথা হয়ে জড়াতো দু চোখ

সেও কতদিন হলো

জলপাই গাছের কোটরে

ভাঙা ডিমে তা দিয়েছে

যে হরবোলা পাখির তাপ

সে তো নিভে গেছে

তাই শিশুরা উদ্বাস্তু

বহুকাল ধরে

কেউ তো কোথাও নেই

একা বাড়ি, ভাঙা, বিধ্বস্ত নগরী

কোলাহলহীন গাজার আকাশে

সৌর সংসার অবাধে তছনছ হলো

অনন্ত দুর্ভোগ সাথে নিয়ে

কেবল শিশুরা জেগে থাকে

কিলবিলে চোখে দেখে

অনাহারী মৃত্যুদিন।


ফিসফাস

গভীরতা চাই, আরও বেশি নীরবতা

মুমূর্ষু মনন ঘেরাটোপে থাক

ঘন হোক নীল চোখ, ছড়ানো আসর

আর ছাইভস্ম কথা।

পতনের রেখা দীর্ঘ হোক

প্রতিবিম্বহীন সূর্য

মুছে দিক এথেনার যাবতীয় পাপ

নিভু নিভু সন্ধ্যাদীপে

আচমকা বাতাসের ঠোঁট

মুখর নরম হলে

দু চোখের সীমা থেকে উবে যাক

অনাত্মীয় অনন্তের

দানবীয় তাপ।


সীতায়ন

জটিল কোরো না সময়কে এত

কাছে যাও, দেখো

নীল নখরেও পাবে আরতির ঘ্রাণ

বদ্ধ জলাশয়ে ভাসে মেডুসার মুখ

শোক ভাঙো। খোলো, খুলে দাও চোখ

আবার জাগুক চন্দ্রাবতী

সীতায়ন লেখা হোক

ভেসে যাক ফুলেশ্বরী পাড়।


পাখি ও মানুষ

পাখিরাও তর্ক করে

জানো তো সে কথা ?

মানুষেরা শব্দহীন

থিতানো পাহাড়

নীরবতা

নিত্যদিন

পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে

ঝুলে থাকে

গোধূলি মগ্নতা

পাখি কি মানুষ হবে ?

নাকি মানুষেরা পাখি ?

মেডুসা নির্জন হলে

হাতে হাতে তুলে দিও

চিরবন্ধনের রাখি।

—————-

সচিত্রকরণ : রজত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button