বাঁকবদলের গল্পের গতিপথ : উৎপল দত্ত

প্রচ্ছদ রচনা : শব্দঘর ২০২০ গল্পসংখ্যায় প্রকাশিত গল্পের বিশ্লেষণ
নিমিত্তমাত্র নান্দীপাঠ
শুধু কথাশিল্প নয়, শিল্পের অভিযাত্রায় কোনো সনাতন সিলমোহর আছে কী! সংশয় হতেই পারে। সংশয়ে দোলাচলের সুযোগ নেই। কোনো সিলমোহর নেই। সাহিত্য-সমালোচনা, বিশ্লেষণ, আলোক-সম্পাত, যা-ই হোক না কেন কেউ কোনো ক্ষেত্রেই কোনো সিলমোহর ঠুকে দেননি। চেষ্টাও করেননি।
কোন লেখাটি সম্পাদকের টেবিলে ছাড়পত্র পেয়ে ছাপাখানায় গেল, পাঠকপ্রিয়তা পেল. শিল্পোত্তীর্ণ হলো―তার নির্ণায়ক আপাতদৃষ্টিতে নেই। কখনও ছিলও না। তবে সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি স্বচ্ছতা থাকলে লেখকের সৃজনকর্ম পাঠকের হাতে আসা পর্যন্ত এক বা একাধিক নিয়ম ও প্রক্রিয়ার গাঁটছড়া পর্যবেক্ষণ করা যায়। এই পর্যবেক্ষণ ও শিল্প-বিচারের আপাত মানদন্ডটি আবার সময়ের সাথে বদলায়। সমাজমানস বদলায়, ব্যক্তির রুচিবোধ, শিল্পবোধ বদলায়। শিল্পও বাঁক বদল করে। রসবোধ ও শিল্পবোধ এই দুইয়ের যোগসাজশ ও দ্বন্দ্ব কতখানি আর সমন্বয় কতখানি তা খতিয়ে দেখতে গেলে গলদঘর্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সার্থক শিল্পকর্মের মধ্যে দুইয়ের সুষম মিশ্রণ দেখা গেছে।
‘কালোত্তীর্ণ’ কথাটির সাথে দু’টি মাত্রা চলে আসে। সময় ও সময়ের মানুষ। সমাজ, সংস্কৃতি বা আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো মানুষের যাপিতজীবন ও রুচিবোধের রূপান্তর ঘটাতে পারে কিন্তু তার অন্তর্গত মৌল আকাক্সক্ষা, বৃত্তি, স্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে নেভাতে পারে না। জীবন-সংলগ্ন, জীবন-ঘনিষ্ঠ লেখা বা শিল্প অস্থির সময়ের অনাকাক্সিক্ষত বানের জলে তলিয়ে গেলেও তা সময়ান্তরে চরার মতো জেগে ওঠে। ওই চরা যেন ভুবনচর।
চিরন্তন বলতে হয়তো আমরা তাই বুঝি। একজন সচেতন, সময়ের সাথে পরিপক্ব শিল্পী বা কথাশিল্পীর অন্তিম লক্ষ্য চিরন্তন চরায় নিজেকে দেখতে চাওয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও দেখতে চেয়েছিলেন, ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি -’ শিল্পীর পথযাত্রায় অনিঃশেষ আর্তি থাকে যা তার অগুণতি পদক্ষেপের ক্লান্তিকে শুষে নেয়।
শিল্পে দু’টি মতবাদ প্রচলিত। আর্ট ফর আর্টস সেক (Art for art’s sake), অন্যটি আর্ট ফর লাইফ সেক (Art for life’s sake)। প্রথমটি কলা-কৈবল্যবাদী মতবাদ হিসেবে প্রচলিত। The phrase expresses the belief held by many writers and artists, especially those associated with Aestheticism, that art needs no justification, that it need serve no political, didactic or other end. (Encyclopaedia Britannica) দ্বিতীয়টি জীবন-সন্নিহিত। সেখানে জীবনসংগ্রামের গাথা শিল্পের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে অণ্বেষণের কথা বলা হয়েছে। শব্দঘর, ২০২০ অক্টোবর- নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত গল্পগুচ্ছে এই দু’টি ধারাই যুগপৎ দৃশ্যমান।
আখ্যান নির্মাণে বির্মূতায়ন এবং পরাবাস্তবতা উঁকি দিয়ে গেছে। কম-বেশি প্রায় সকল গল্পেই লক্ষণটি দেখা যায়। এর একটি কারণ হতে পারে গল্পে সমসাময়িক বাস্তবতাকে ধারণ ও সেই পরিপ্রেক্ষিতেই চরিত্রের আদল নির্মাণ। সময়টা অস্থির। অস্থিরতায় অবয়ব মূর্ত হয়ে ওঠে না। আংশিক বিমূর্তায়ন ((Abstraction)) ও পরাবাস্তবতার (Surrealism) উপস্থিতি তাই স্বাভাবিক। এ ছাড়াও যা নজর কাড়ে তা হলো, লেখার শৈলী ও দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য।
নির্বিচারে কোনো লেখাই উপেক্ষা করা যায় না, সুযোগ নেই। উল্টো প্রতিশ্রুতির দিক থেকে তা সরব ও উচ্চকণ্ঠ। শব্দঘর অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যার অনন্যতা বা বিশিষ্টতার দিক থেকে এটা একটি প্রধান মাত্রা। কৃতিত্ব সম্পাদকের।
লেখক শূন্যচারী ব্রহ্মচারী নন। তার শেকড় মাটিতে। কল্পনার বিস্তার বহুদূর যায়। তার নিয়ন্ত্রণ রেখাও প্রয়োজনে সীমায়িত করেন তিনি। এর মধ্যেই আমরা গল্প পড়ি, লেখককেও পড়ি। এই আলোকেই কয়েকটি গল্পের আদল, নির্মাণ, করণকৌশল, ভাববস্তু আর আনুষঙ্গিক বিষয়-আশয় দেখে নেওয়া যাক। দেখার আগে কিছু অনিবার্য সীমাবদ্ধতার সরল স্বীকারোক্তি দেয়া শ্রেয়।
প্রকাশিত গল্পগুলো আরও নিবিড় পাঠ দাবি করে। সময়ের অপ্রতুলতা স্মরণে রাখতে হয়েছে। প্রতিক্রিয়া ক্ষেত্রবিশেষে সংক্ষিপ্ত হতে পারে।
১.এই বিশ্লেষণ সুুনির্দিষ্ট কোন দিকনির্দেশনা নয়, গল্পের বৈশিষ্ট্য ও অভিনব উপাদানকে সুচিহ্নিত ও সুনির্দিষ্ট করে দেখানোর প্রচেষ্টা মাত্র।
২. পরিসর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
৩. গল্পের বিষয়বস্তু, আখ্যান বা কাহিনির বিস্তার, নির্মাণ-শৈলী, পরিপ্রেক্ষিত, চরিত্র সংগঠন ও বৈচিত্র্যের মধ্যে লক্ষণীয় উপাদানকে উপজীব্য ও আলোকপাত করা হয়েছে।
জাহিদ হায়দার
নিমজ্জিত
‘গাছের পাতার ছায়ার নিচে, ছায়াও গরম, বসে পাতি কাক হাঁপাচ্ছে।’ প্রথম নজর ছিনতাই করে বাক্য গঠনের সৌন্দর্য। একটি বাক্য। সরল-সোজা। প্যারেন্থিসিস আছে। তা শ্রমনিষ্ঠায় হোক অথবা পরিশীলনপটুতায় হোক গল্পেরা পরিবেশে-প্রতিবেশ নির্মাণ সংহত ও সম্পূর্ণ করে। কথাশিল্পী তার গল্পের পটভূমি ক্ষিপ্রতায় পাকাপোক্ত করেন। তারও আগে গল্পটি শুরু হয়েছিল পূর্ণাঙ্গ বাক্য ব্যবহার না করে। শব্দ অথবা শব্দবন্ধ দিয়ে। পরিবেশকে পরিপক্ব হাতে নির্মাণের জন্য তা মোক্ষম নান্দনিক অস্ত্র। ‘কোনো মেয়ে এই দ্বিতীয়কে কখনও বলেনি, কৃষ্ণের গায়ের রঙ ছিল তোমার মতো। বলেনি, এসো ধরো হাত, ওই যে তমাল’। সোজাসাপটা গদ্যের মধ্যে হঠাৎ এক পসলা কাব্যগন্ধী ঝলকানি। গল্প নয় শুধু, নির্মাণশৈলী এবং ভাষার সৌন্দর্য ও প্রবহমানতা আছে। পাঠক একটি ছোট গল্পের মধ্যে নারকোলের খোল খুলে শাঁস খেতে পছন্দ করবেন না। গল্পের গর্ভের আখ্যান তাকে টানে না। ন্যারেটিভকে পরিমিত গহনা পরিয়ে সারবস্তুকে সচল করার কৌশলটি একজন কথা সাহিত্যিকের অনিবার্য ও নিজস্ব দক্ষতা। পাঠক শুধু গল্পের ভ্রুণ পড়ে না, তার শরীরকেও পড়ে। গল্পের আখ্যানকে অতিক্রম করে গেছে তার নির্মাণশৈলী। না খামতি নয়। একটি গল্পকে তার যাবতীয় শাখা প্রশাখা নিয়ে পল্লবিত হতে হবে, তা কেউ ধরে বেঁধে দেয়নি। জাহিদ হায়দারের আঁচড়ে গল্পকে না পড়ে গল্প কী করে নির্মাণ করতে হয় তা পড়লে লাভের অঙ্ক ভারী হতে পারে। সেই অর্থে, কাহিনি, দর্শন ও উপলব্ধি নির্মিতির কৌলিণ্য-কুশলতার মধ্যে নিমজ্জিত। এই নিমজ্জন অন্য জলবিন্দু চলকে দেয়। এই নিমজ্জন অন্য ভুবন থেকে পাঠককে এক পলকে আনন্দযাত্রার মতো ঘুরিয়ে আনতে পারে।
‘স্বচ্ছ কাচের ওপর জমছে ঘামাচির মতো জল কণা।’ সম্পাদকের পাঠানো ‘সুরঞ্জনা’-র ইলাস্ট্রেশন কবি দ্বিতীয় আসাদের পছন্দের পরিধির মধ্যে পড়েনি। সুরঞ্জনা-র ইলাস্ট্রেশনের বিবরণটি মস্তিষ্কে বয়ে বেড়ানো কবিতা, অন্যরকম গদ্য বা কাব্যগন্ধী গদ্যের মতো। তার একছোপ তুলে না দিলে মনের মধ্যে খামতি থাকে, একটু ব্যথার নখের আঁচড় পড়ে। জাহিদ হায়দার লিখছেন, ‘লম্বা গলার দু’পাশ থেকে হালকা সবুজ দড়ির মতো পাকানো ওড়না অসুখি স্তনের ওপর ঝুলছে। বিভাজনের বিন্দুতে আটকে আছে খয়েরি কাঠের ছোট হার্ট… গ্রীবার কিছু অংশের নিস্তব্ধতা দৃশ্যমান… মনে হতে পারে গোধূলিসন্ধিতে আকাশের-আকাশের গভীরের দিকে চলে যাচ্ছে সুরঞ্জনা।’ এই ইলাস্ট্রেশনের ইম্পেপ্রেশন থেকে ‘সুরঞ্জনা’ এবং জীবনান্দকে পাঠক খুঁজে পেতে পারে জাহিদ হায়দারের মধ্যে, তাঁর ছোটগল্পের মধ্যে। পাঠক গল্পের ভেতর কবির মনের অন্ধিসন্ধি, অলিগলিতে হারিয়ে যেতে পারেন, গন্তব্য জেনেও। ‘প্রেমিকমাত্রেই অপরিণত’ আলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের উল্লেখ হঠাৎ থামিয়ে দেয়। কারণ এই লেখা চলাকালীন সময়ে কবি আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রয়াত হয়েছেন। কবি কী সত্যি দূরদৃষ্টি নিয়ে অলৌকিক দৌড়-ঝাঁপ করে। নিশ্চয়ই করে। কবি স্বপ্নদ্রষ্টা। কবি ভিসিয়নারি (Visonary) দুই আসাদ চরিত্রের দ্বান্দ্বিক সংলাপে গড়ে ওঠা গল্প একটি অনিবার্য প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়, কবি কী স্বগতোক্তি করছেন, নাকি তার প্রতিবিম্ব নির্মাণ করে তার সঙ্গে কথা বলছেন, যেখানে খসে পড়বে হৃদয়ের ম্লান ও ভারী পাথরগুলো। আর এসবই ধরা পড়েছে কবিতায় নয় একটি গল্পের চিন্ময় চিলেকোঠায়। দুটি চরিত্র, প্রথম আসাদ ও দ্বিতীয় আসাদ। দু’জনের নামের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথম আসাদ কবি, প্রাবন্ধিক। তিনি সম্পাদকের নির্দেশে জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশলীনা’ কবিতার ওপর প্রবন্ধ লিখতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন আগন্তুক দ্বিতীয় আসাদের উপস্থিতি, কবিতার জন্য, প্রেমের জন্য, শ্যামলীর জন্য। শ্যামলী তার নাম যাকে দ্বিতীয় আসাদ ভালোবাসে, প্রথম আসাদের কবিতাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। কারণ সে কবি নয়, সে কবিতা পড়ে কিন্তু কবিতা লেখে না। তার প্রেমকে বাঁচাতে প্রথম আসাদের কাছে আসে। কবিতা ভিক্ষা চায়। ‘আকাশলীনা’ দু’জনের কাছেই প্রেমিকদের জন্য নিষ্ঠুরতম কবিতা হিসেবে চিহ্নিত হয়। সংলাপের মধ্যে দুপুর ফুরিয়ে যায়। প্রবন্ধ লেখা হয় না। অথবা প্রচ্ছায়ার সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যেই প্রবন্ধ মুখ দেখিয়ে যায়। দ্বিতীয় আসাদ চলে যাওয়ার আগে অথবা প্রচ্ছায়া অন্তর্হিত হওয়ার আগে বলে যায়, ‘যাচ্ছি। আমি কিন্তু মিথ্যা না’। ‘আসাদ হাঁটছে। হাঁটছে। কবির চোখ থেকে অপসৃয়মান হচ্ছে না।’ কেন হচ্ছে না? দুপুরের তাপন শেষে বিকেলের রোদে, যে রোদ তখনও গরম, জানিয়ে দেয় ওই প্রচ্ছায়া কবির দ্বিতীয় সত্তা। গল্প ও কবিতার মিশ্র করণকৌশলে নির্মিত জাহিদ হায়দার এর গল্প ‘নিমজ্জন’ এভাবে ধরা দেয়।
শাহাব আহমেদ
ছাই-রং ভোর
ছাই-রং ভোর এগোয় ছত্রভঙ্গ শায়িত মাথার দৃশ্যকল্প নিয়ে, করোনাকালের পরিপ্রেক্ষিতে। ‘করোনার ২৩তম দিনে’, যখন ‘প্রতিটি মানুষ ডিপ্রেশনের তলানিতে শিং মাছের মতো’। উপমাটি মনকাড়া। গল্পটি স্বল্প পরিসরে আবছায়ায় একটি শক্তপোক্ত সংবাদের হলদেটে খাম ঝরাপাতার ব্যথার মতো হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়। গল্পের প্রথম কথাগুলো পরিণতির কালে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। ‘আকাশের সব তারা নেভেনি, কিছু গেছে, কিছু যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, চাঁদ ছিল না।’ গল্পের প্রস্তুতি পর্বটি এখানে সার্থকতা পেয়ে যায়। মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত নিকোলকে ফোকাসে রেখে বৃত্তাকারে ঘুরে আসে গল্পটি। লক্ষ করার মতো বাক্যটা, ‘চাঁদ ছিল না’। অথচ নিকোল চন্দ্রগ্রস্ত। মুড সুইয়িং থেকে ডিপ্রেশন। করোনার চক্রে তা আরও জটিল হয়ে ওঠে, গল্পটিও ভিন্নমাত্রা পায়। করোনাকাল গল্পের পটভূমি হলেও নিকোলের মনোরোগ বা বিষাদ এবং আত্মহননের প্রবৃত্তির পেছনের কারণটা ক্রমশ গল্পের ধারাবাহিকতায় উন্মোচিত হয়। কাহিনি বর্ণনে সংঘাত এড়িয়ে মসৃণতার পেলব দেওয়া যেমন সুচারু তেমন দক্ষতারও পরিচয় দেয়। টানটান গদ্য স্বচ্ছন্দে টানে, পথের নুড়ি পাশ কাটিয়ে যায় বা প্রশ্রয় পায় না। ‘মুক্তি ও মৃত্যু অনেক সময় একার্থক হয়। ওর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে কি-না বলা মুশকিল।’ মুশকিল মোটেই নয়। এই মুক্তির অর্থবহতা উন্মোচিত হয় গল্পের শেষে কথাশিল্পীর অনায়াসলব্ধ দক্ষতায়। নিকোল অসুস্থ, তার অসুস্থতা সম্পর্কেও সে সচেতন। সে সংবেদনশীল। মুড সুইয়িং এর ওষুধ খেয়ে সে অন্য মানুষ হতে চায় না। নিকোল চরিত্রের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে কথাশিল্পী স্ববিরোধিতা অতিক্রম করে সফলতার সঙ্গেই যোগসূত্র নির্মাণ করেছেন। পাঠকের পক্ষে নিকোল চরিত্রটি বুঝতে যেমন সহজ হয় তেমন নিকোলের বিরুদ্ধ পরিবেশ, ব্যক্তি নিক ও অনুষঙ্গের প্রতি গোপন ক্ষোভ জন্ম নেয়। অথচ গল্পটি মৃদুভাষ্যেই লেখা। ‘ইওর ডটার শট হারসেল্ফ’ এই হৃদয় ছত্রভঙ্গ করা সংবাদের আড়ালে ব্যক্তিমানুষ আছে, সমাজের শৈথিল্যও আছে। কতিপয় বাক্য, যা একটু আেেগও ছিল নীরব, পরিণতিপর্বে ধ্বনিময় হয়ে ওঠে, ‘আকাশের সব তারা নেভেনি, কিছু গেছে, কিছু যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
মোজাম্মেল হক নিয়োগী
মাতৃত্ব
‘মাতৃত্ব’ গল্পটি যে কারণে মনোযোগ কেড়ে নেয়, পাঠের ক্ষেত্রে সুখানুভব তৈরি করে তা হলো কথাসাহিত্যিকের হেয়ালি বর্জন। জীবন যেমন তেমন করে গল্প বলেছেন কথাসাহিত্যিক। আনকোরা ভাবনা ও আবিলতামুক্ত গল্পটি পড়ার ক্ষেত্রে মনোযোগ সরে যেতে দেয় না, কেন্দ্রে টানে, ক্রমশ টেনে নেয় চৌম্বকীয় শক্তিতে। মোজাম্মেল হক নিয়োগীর গল্প পাঠের ক্ষেত্রে পাঠক এখানে নিশ্চয়ই একমত হবেন। এর বিপরীত কোণও আছে। পাঠকের মন জীবনের প্রাত্যহিক ও অনিবার্য উপাদানের সাথে সন্নিহিত থাকতে হবে গল্পটি পড়ে ওঠার আগে। মাতৃত্বের দ্যোতনা কখন, কেমন করে এলো তা অনুসন্ধান করতে গল্পের সুতো অনুসরণ করার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে পাঠকের। অন্তÍত এখানে কথাসাহিত্যিক আপস করেননি। ক্রমাগত তিনি কাহিনি বিস্তারের প্রশ্নে জীবন সংলগ্ন থেকেছেন। মসলা বাঁটার শব্দ আর তাই নিয়ে ওপর তলা-নিচতলার মানুষদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রতীকী এবং এক পর্যায়ে তা শ্রেণি সংগ্রামের দ্যোতনা নিয়ে আসে। নাগরিক জীবনের চালচিত্রে একটি ভবনের কয়েকতলার মানুষদের মধ্যে প্রতিদিনের জীবন প্রতিফলিত। কোনো ফাঁক-ফোকর রাখতে চাননি কথাসাহিত্যিক। কিছুটা রাশ টেনে ধরলে, বিস্তার কমালে, খুব ক্ষতি হতো না বলে মনে হয়। কিছু সংলাপ আমাদের নাগরিক ও লোকায়ত জীবনের উঠোনে নিঃশ্বাস ফেলে যায়। যেমন টুনি। ‘আমার নাম টুনি। শয়তানের মুনি। বাতাসের মধ্যে ধানের চারা বুনি। কাজের মেয়ে দেইক্যা এত সোজা মনে করছ ? হি হি হি। হি হি হি।’ তারপর ছাদ থেকে কুড়িয়ে ময়লা হাতে নিয়ে টুনি অধিকারী কায়সারের একটা জামায় একটু লাগিয়ে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে আসে। এই টুনি চরিত্র আমাদের পরিচিত। তাকে বুঝতে কষ্ট হয় না। এখানে হিউমারও আছে সমাজ-বাস্তবতাও আছে। এই টুনিও পরিবর্তিত হয়, যখন মিজান মধ্যপ্রাচ্যের ফ্যামিলি ভিসা শ্রমে-ঘামে কনফার্ম করে। এই সময়ের ব্যবধানের মধ্যে রাহেলার মনে মাতৃত্বের স্ফূরণ ঘটে। অঙ্কুরিত হয়। দ্বন্দ্ব-সংঘাতহীন জীবনের ভিসাকে প্রত্যাখ্যান করে সে। গল্পটি দীর্ঘ। অনুপুঙ্খ ডিটেলস ব্যবহারের কারণেই তা দীর্ঘ। জীবন-বিমুখ নয় বলেই এই জীবনের অনিবার্য উপাদানের সঙ্গে নিজের জীবনকে মিলিয়ে দেখলে পাঠক উপস্থিত হবেন মানবিকতা, মন, মনের পরিবর্তনের সূত্র ও সবশেষে মাতৃদুগ্ধের অমৃত ও অপ্রতিরোধ্য শক্তির কাছে।
মঈনুস সুলতান
পঞ্চমুখ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
উন্মুক্ত জীবন দর্শন। বিষয়বস্তুর নির্বাচন অভিনব। মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে গল্পের উৎস সন্ধান জীবন ও সমাজ-জীবনের গাঢ় অনুধ্যানের ফসল, সন্দেহ নেই। অর্বাচীন নয় লক্ষ্যহীন নয়। লক্ষ্য করার মতো, প্রকাশিত গল্পটি লেখক যেন মুখেই আউড়ে যাচ্ছেন, পাঠক কোলঘেঁষে শুনছেন অথবা পড়ছেন গল্পটি। এ রকম অভিজ্ঞতা হতেই পারে কথাসাহিত্যিক মাইনুস সুলতানের গল্প পড়ে। ভাষারীতি এর অন্যতম কারণ বলে অনুমান করা যায় এবং তা লেখকের নিজস্ব। গল্পের শুরুতেই স্বাক্ষর আছে। ‘পঞ্চমুখ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার মুখ দেখায়, ‘মিষ্টির দোকানটার পেছন দিকে আছে পর্দা দেওয়া দুটি টেবিল। চেয়ার টেবিলের মানও খারাপ না। কারেন্ট থাকলে ফরফরিয়ে ঘোরে সিলিং ফ্যান।’ মিষ্টির দোকান দেখা হয়ে গেল। ঠিক তার পরেই, ‘এ মুহূর্তে ফ্যানের তলায় বুন্দিয়ার প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছেন সুরেশ দেব। ক্যাসেট প্লেয়ারে উদাত্ত বিবাগি স্বরে বাজছে রামপ্রসাদী।’ সুরেশ বাবুর চরিত্র একটি বাক্যে অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে গেল। ‘ভোরবিহানে সুরুয কেবলমাত্র উঠি-উঠি করছিল’ এই ভাষারীতি পাঠকের কাছে আকুল হাত বাড়িয়ে দেয়। সুর্যোদয়ের একটু আগে, এ রকমও বলতে পারতেন লেখক। বলেননি। ‘ভোরবিহানের…’ আবেদনের ধারে কাছে যায় না ‘সূর্যোদয়ের একটু আগে’ কথাটি। তারপরই নজরে পড়ে, গল্পের গতিময় গোল্লাছুট। সেখানে অবগুণ্ঠন নিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ আর মিশে গেছে শ্যামাসঙ্গীতের আবেদনের সাথে। এই সংশ্লেষণ সচেতন ও অনুরাগী পাঠকদের জাদুমুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। একটি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে দেখা যায় সমগ্র নুরপাশা গ্রামকে। চরিত্রের বৈচিত্র্য, সমাজের পরস্পর বিরোধী উপাদান, সংস্কৃতির সংঘাত, ব্যক্তির মতাদর্শের ভিন্নতা নির্বিরোধী দৃশ্যকল্প নিয়ে ঘুরপাক খায়, ছড়িয়ে যায় আবার কেন্দ্রীভূত হয় ‘পঞ্চমুখ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ এ। কথাশিল্পীর শক্তিমত্তার ওপর আস্থা তৈরি হয়। সমীহ জাগে।
কুলদা রায়
যে সুচিত্রা সেন কিডন্যাপ হয়েছিলেন
‘স্বপন যদি মধুর এমন হোক না কল্পনা তারে জাগিয়ো না’
গল্পের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে কথাশিল্পী কুলদা রায় একটি পরিচিত, জনপ্রিয় ও আবেদনময় গানের দুই লাইন লিখে দিলেন। গল্পের ঘোর কাটছিল না। এই গানই যেন জানিয়ে দিল, ঘোরেই থাকো। আরও তলিয়ে যাও, মধুর সন্ধানে। রহস্যভেদ করে কী লাভ। প্রসাদগুণই পাঠকের উপযুক্ত প্রাপ্তি। পাঠকের প্রতিক্রিয়া যদি এ রকম হয়, তাতে ক্ষতি নেই। প্রথমে মনে হয়েছিল নিরীক্ষাধর্মী রহস্যময় গল্প। না, তা হয় না। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বন্দিনী কমলা’ গল্পের কথাটিও মনে এসেছিল। শেষপর্যন্ত তাও মেলেনি। এ সময়ের গল্প, তারাশঙ্করে গল্পে হাত-পা গুটিয়ে জরাগ্রস্ত হয়ে বসে থাকার কথাটা নয়। লেজেন্ড, উপকথা, ইতিহাস, বাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা কোনোকিছু দিয়েই এর সুর-তাল-লয় স্পর্শ করা গেল না। শুধু আনন্দ-আবেগে, রহস্যের বাতাবরণে চরকি-নাচন নাচতে নাচতে পড়ে ওঠা গেল। শুধু ভালো লাগা। নির্মল আনন্দ। অন্যরকম আনন্দ। পাঠকের কাছে ব্যাখ্যাতীত মনে হতেই পারে, তা হোক। বেঁচে থাক গল্পের প্রসাদগুণ। অসাধারণ ভাষারীতি, পরিমিতি বোধ, লাগসই শব্দচয়নকে হাতিয়ার করে স্বপ্ন-জাগরণের মধ্য দিয়ে পাঠক টেনে নিয়ে গেলেন কথাশিল্পী কুলদা রায়। গল্পের গতিতে ভাসতে ভাসতে হাতের মুঠোয় বা বুকের মধ্যে যা জমাট বা জারিত হয় তা লেখকের নৈপুণ্যে নির্মিত আনন্দ, রহস্য আর বিস্ময়। রস-পিপাসু মনের জন্য সুন্দর খোরাক।
সিদ্ধার্থ সিংহ
তসবির
টানটান উত্তেজনায় মোড়ানো রহস্য-গল্প। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। প্রথমে মনে হতে পারে, রহস্য-গল্পের চিরাচরিত পথ ধরেই গল্পটি চলমান। তা নয়। রহস্য-গল্পে পুরাতন ইমারত বা একজন অন্যরকম, অদ্ভুত বৃদ্ধ থাকতেই পারে। এই সরল সমীকরণের মধ্যে গল্পটি পড়ে না। কথাশিল্পী সিদ্ধার্থ সিংহ এখানে অনন্য। সিদ্ধার্থ সিংহ চেনাপথ ধরেননি। অনুমান করতে গেল শতাব্দী-প্রাচীন ইমারতের বিভাজনে আটকা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। রবীন্দ্রনাথের ক্ষুদিত পাষাণের কথা মনে আসতে পারে। শেষে ভুলের খানাখন্দে পড়তে হবে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে আসতে পারে। সেখানেও সাদৃশ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। গল্পটি নতুন যা এ সময়ের পাঠকের আবেদনকে ছুঁতে পারে। গল্পটি নিজগুণেই শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ছবির ফ্রেমের স্তর বা পুরোনো ইটের খাঁজে-ভাঁজে রহস্য। রহস্যকে নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ করলেন সিদ্ধার্থ সিংহ। পাঠকদের অনুভূতি এ রকমই হবার কথা। ‘তসবির’ নামটা গল্পের সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত, গল্পের ধমনী মনে হতে পারে। আঁটোসাঁটো। টেনেহেঁচড়ে আলাদা করার উপায় নেই। একটি ভিন্ন উপলব্ধিও অঙ্কুরিত হয়। রহস্য-গল্পে ‘তসবির’ শব্দটার ভিন্ন ব্যঞ্জনা খুঁজে পাওয়া যায়। ছবি। ছবি নিয়েই গল্প। ছবি প্রতিফলনের ধারণাকে সামনে নিয়ে আসে। ছবিতে নিজেকে দেখে ওঠা যায়। এর মধ্যে পাঠক একটি দর্শনের দূরাভাষ পেতে পারেন। সে কথা থাক। আদতে ‘তসবির’ একটি দুর্দান্ত রহস্য-গল্প। পড়তে পড়তে পাঠকের অবিশ্বাসের ক্ষমতা লুপ্ত হওয়ার কথা, টিকে থাকে বিশ্বাস। হয়তো এটাই সম্মোহন।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী
বেগম সাহেবা
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা চালাচালি হয়েছে প্রচুর। এখনও হচ্ছে। জাতীয়তা, অঙ্গীভূতকরণ নিয়ে চাপ, জনবহুল বাংলাদেশের সংকট এবং এর সমান্তরালে আরও প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে বিস্তর। তা হোক, কথাসাহিত্যে তাকে উন্মোচন করার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলদা। আলোচিত, প্রশ্নবিদ্ধ, স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে মূলত একটি মুখ্য চরিত্রের চোখ দিয়ে দূরবিনের মতো কিছু বিষয়-আশয় ধরা পড়েছে বিশ্বজিৎ চৌধুরীর গল্পে। যে উপাদান ও অনুষঙ্গের ওপর গল্পটি আলো ফেলে তা নতুন, চর্বিতচর্বণ নয়। সমকালীন বিষয়কে উপজীব্য করে অনালোচিত অথচ অনিবার্য বৈলক্ষণ্যকে কেন্দ্রে রেখে বিশ্বজিৎ চৌধুরীর গল্পটি পল্লবিত হয়। স্তরে স্তরে ভাঁজ খুলে বেগম সাহেবার। স্তরে স্তরে ভাঁজ খুলে, নৃতাত্ত্বিক ও সামাজিক সংলগ্নতার প্রশ্নে জীবন-বাস্তবতা কী করে বদলে যায়। গল্প বলার শৈলী, ভাষারীতির আকর্ষণ, গল্পের চোরাস্রোতের টান পাঠককে একগুচ্ছ নতুন চিন্তা বা উপলব্ধির বৃত্তে এনে দাঁড় করিয়ে দিতেই পারে। নাফ নদী পেরিয়ে ছখিনা ‘বেগম সাহেবা’ হয়ে যায়। বেগম সাহেবা হয়ে ওঠার পেছনে যে গল্পটি তা বর্তমান সময়ের অনাকাক্সিক্ষত অসুখ কমলালেবুর খোসা খোলার মতো খুলে দেখিয়েছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী। কমলালেবুটি মোটেই রঙে-বর্ণে-গন্ধে উদ্ভাসিত নয়, কীটে দংশিত। গল্পের শুরু, বিকাশ ও পরিণতি জ্যামিতির সম্পাদ্যের মতোই পরিমার্জিত, পরিমিত ও সুসংহত।
আকিমুন রহমান
আত্মজীবনীরই মতো
‘অবোধগম্য গোলমাল’ শব্দবন্ধের (Phrase) ব্যবহার প্রায় গল্পের শুরুতেই। পরাবাস্তবতার মুখ এখানেই উঁকিঝুঁকি দেয়। মুখ দেখিয়ে গেছে সে গল্পের শুরুতেই। তাহলে প্রস্তুতি নিতে হবে প্রায় একটি পরাবাস্তব, স্বপ্ন-কল্পনায় জড়ানো- মোড়ানো, গল্পের পাঠ নিতে যাচ্ছেন পাঠক। অধরা অনুভূতি যা এই ধারাটি ছাড়া সরলরৈখিক ন্যাারেটিভ বা আখ্যানে ধরা যায় না। স্মৃতি-স্বপ্ন-কল্পনায় ডুবে যেতে যেতে তাকে পড়তে হয়। কথাসাহিত্যিক আকিমুন রহমান কথা গল্পের শুরুতেই তা জানিয়ে দেন। অভিধানে সুরিয়ালিজমের সংজ্ঞাটি এ রকম, …art form in which an artist or writer combines unrelated images or events in a very strange and dreamlike way. আপাত বিচ্ছিন্ন, রিরোধী বা অসংলগ্ন দৃশ্যকল্প বা ঘটনাকে স্বপ্নচারিতার মধ্যে সুসংবদ্ধ সংলগ্নতা দেওয়া। যখন অনুভূতিকে নিয়মিত বর্র্ণনায় আখ্যানে উপস্থাপন করা যায় না কথাশিল্পীকে তখন স্বপ্নময়তা গ্রন্থিত করতে হয়। ‘আমি যে-কথাটি বলতে যাচ্ছি আমি জানি, সেটা একদম গল্পের মতো শোনাবে। তেমনি যে শোনাবে সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত! কথাটা শুনতে শুনতে মনে হতে থাকবে, এটা একটা বেশ অন্যরকম গল্প।’ শুরুতেই কথাশিল্পীর স্বীকারোক্তি। পাঠককে অবহিত করা। প্রস্তুত করা। অন্যরকম গল্প। সচেতন মনের প্রচলিত যুক্তিবোধের মাপকাঠি দিয়ে নয়, অনুভূতিকে যথাসম্ভব উসকে দিয়ে পাঠক আকিমুন নাহারের গল্পকে আলিঙ্গন করতে পারেন। স্বপ্নময়তার সঞ্জীবনী স্বাদ আরেকবার তারিয়ে তারিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
নাসিমা আনিস
নামজারি
বিস্ফোরক। থ্রিচিয়ার্স টু নাসিমা আনিস। পড়ার সময় যে অনভূতি হয়েছিল, পাঠকদের একই অনুভূতি হবে, ধারণা করা যায়। জিতে যাওয়ার গল্প। ছিঁচকাদুনে পরাজয়ের গল্প নয়। ভাষারীতিও অনন্য। অনন্য বলতেই হয়, সময়ের যে অভিক্ষেপ গল্পে উঠে এসেছে তাকে এই ভাষাতেই নির্মাণ করতে হয়, এ রকম মনে হতেই পারে পাঠকদের। একখণ্ড ভূমির নামজারি গল্প বলার উছিলায় কথাশিল্পী তার কাহিনিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এই সময়ের যাবতীয় অন্ধকার কুঠরিতে। অনেক অপ্রত্যাশিত শাখা প্রশাখায় ‘নামজারি’ প্রাণের পরাকাষ্ঠা বা এই সময়ের মহীরুহ হয়ে উঠেছে। তার ছায়ায় জীবনের ক্লান্তি ঘোচাতে সকল পাঠকই আসতে পারেন। কারণ অভিজ্ঞতাটি সকলের। গল্পের শেষে আছে আরেক চমক। ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা ছিল নিলুফার চরিত্রটি। দ্বন্দ্ব সংঘাতে অসুস্থ প্রফেসর স্বামীকে নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার কথা ছিল। নাসিমা খানম গল্পের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন। সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, যূথবদ্ধ হতে হয়। ‘হাল ছাড়লে হবে না তো নিলু, ওরা লক্ষ হলে আমরা তো কোটি কোটি। স্বামী স্ত্রী এক হলে কোটি কোটি হয়, তাই না! মনে হয়, এ আরেক সান্টিয়াগোর স্বপ্ন।
ফয়জুল ইসলাম
ডিসেম্বর কুড়ি
মুক্তিযুদ্ধের গল্প। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের রক্তাক্ত ডায়েরি। ভস্মের স্তূপ। ছাইগাদায় কলেজ শিক্ষক আবুল ফাত্তাহ ও তার স্ত্রী গুলনার বানুর অভিজ্ঞতা ও সংলাপ থেকে পড়া যায় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। সরল বর্ণনায় উঠে এসেছে ইতিহাস। গল্পের গহিনে ইতিহাস অথবা ইতিহাস থেকে ছেঁকে তোলা গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প যা রক্তের অক্ষরে লেখা। কথাশিল্পী ফয়জুল ইসলাম ‘ডিসেম্বর কুড়ি’ গল্পে একদিনের পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরেছেন বিজয়ের আনন্দ যা আগুন, ছাই, লাশ, ব্যথা, হারানো ও সমবেদনার সূত্রে গ্রন্থিত। স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ার অভিযোগ বা অনুযোগ বাঙালির প্রতি আছে। ফয়জুল ইসলামের গল্প মুক্তিযুদ্ধকে বিস্মৃতির আবর্জনামুক্ত করে টাটকা ইতিহাসের মতো চোখের সামনে তুলে ধরে। এ গল্পের আবেদন, দেখ আমাকে, প্রতিদিন দেখ, এ তোমার অস্তিত্বের বয়ান, পরিচয়ের কষ্টার্জিত উপার্জন।
মাহবুবুর রহমান
হোসনার পারলৌকিক একটি রাত্রি
‘দেড়শ বছর ধরে মাতবরের খালটি কেওড়ার জলে পা ডুবিয়ে শুয়ে আছে… খালটির প্রলম্বিত গ্রীবা যেখানে ডান দিকে মোড় নিয়েছে সেখানে সেই বরাবর একটি নারকেল গাছের সাঁকো।’ বাক্যের বুনোট, ভাষার ব্যবহার, বাক্যগঠন রীতির পরিবর্তন প্রথমেই সচকিত করে, জানিয়ে দেয় এই গল্পের পাঠ কী করে নিতে হবে। পাঠক তার মনোজাগতিক প্রস্তুতি শুরুতেই নিতে পারেন গল্পের আরও গভীরে যাওয়ার আগে। এই পরিবর্তন, রূপান্তর, নিরীক্ষা বা গল্পের প্রয়োজনেই ভাষাশৈলী উপযোগী করে নেওয়ার দক্ষতা কথাশিল্পীকে চিনিয়ে দেয়। জানিয়ে দেয়। তার একটু পরেই খালটি ডানে মোড় নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে বিস্তীর্ণ জলাভূমির ভেতর মাথা গুঁজে দীর্ঘ ঘুমে নিমজ্জিত।’ কথাশিল্পী বিলম্বিত, ক্রমশ বিকশিত চারু সৌন্দের্যের ভাষারীতি পড়া আর কাহিনি পড়া বা অনুসন্ধান করা―এই দুই সিদ্ধান্ত দোলাচল সৃষ্টি করতেই পারে। দুই দিকই সুন্দর, আখ্যান ও আখ্যানকে ভাষায় প্রকাশের রীতি ও করণকৌশল যা লেখকের একান্তই নিজস্ব। ‘হোসনার পারলৌকিক একটি রাত্রি’ নামাঙ্কিত গল্পের পাঠ নেওয়ার সময় কথাশিল্পী মাহবুবুর রহমানের ‘গল্প বলার কৌশলটি’ সমান্তরালে পড়ে গেলে পাঠক গল্পের গুপ্ত রস উন্মোচন করতে পারেন। খালটি থাকে। মাতবর বাড়ি থাকে। আজন্ম কেওড়া জলের ধারায়, হোসনার পারলৌকিক অভিজ্ঞতার অন্তর্জাল নির্মাণের আগে ইহজাগতিক সংবেদ, সংকেত ও অভিজ্ঞতাকে কথাশিল্পী তার নিজস্ব বিমূর্ত বুনোটে সংশ্লেষ করে দিয়ে যান। পাঠকের কাছে এ অভিজ্ঞতা অনন্য ও অসাধারণ মনে হতে পারে।
পাপড়ি রহমান
বনভূমি ও ঝিরির সংহরণ
বনবিহারে সে। মনোবিহারে সে। কথাশিল্পীর ভাষায় ‘জঙ্গলবিহার’। আর ঝিরি নদী। এবং বাঘরোল। বাঘরোল কী বা কে? জন না জন্তু! পাঠক নিজেকে খুলে, মেলে ধরে আবিষ্কার করতে পারেন। নিজের চৈ চৈ চৈতন্যের কাছে হা-পিত্যেশ করে জানতে চাইতে পারেন। বাঘরোল এক অর্থে গল্পের অবিচ্ছিন্ন বিমূর্ত রূপক। বাঘরোল অবচেতন মন চেতন মনের অনিবার্য সেতুবন্ধ। ক্ষত আর বিক্ষেপ, যার আদল ধরেও ধরা যায় না, বাঘরোল চরিত্রের অসংলগ্ন আচরণের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হয়। সমাজ- বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষত-বিক্ষত ব্যক্তিমনের ছায়া-কায়া, রসায়ন এবং অভিক্ষেপ ক্রমশ প্রকাশতি হয়েছে বাঘরোল চরিত্রের আদলে। ঝিরি নদীতে স্নিগ্ধ স্নানের যে তৃষ্ণা থাকে তার পরিসমাপ্তি নিমজ্জনে। ‘আমি মনে মনে এই ভেবে এসেছি―বাবু যেন সেই অধরা কবিতাগুলোকে ধরে ফেলতে পারে। একজন কবির জন্য সবচাইতে দুঃখজনক ঘটনা―হারানো কবিতাদের ফিরে না আসা।’ ভালোবাসা, প্রেম বা প্রেমজ অনুভূতিকে যদি প্রজাপতির রূপকে ধরা যায় তাহলে কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান প্রজাপতি ও প্রজাপতি সংহারের গল্প বলেছেন। বাঁকবদলের গল্পের স্মারক-চিহ্ন এখানেও। গল্প বলার আগে নিজস্ব ভাষাটি শব্দ-বাক্য ও নির্মাণ শৈলীসহ নির্ধারণ করে নিয়েছে। সোজা কথায় যে ভাষায়, যে রকম কথনে গল্পটা গল্প হয়ে ওঠে। ‘ওই ব্যাটা, এত ভাব ধরস ক্যান? ভাব ধরলে নিজের রাস্তা মাপ। তোর মতো চুনোপুঁটি কবি এই বঙ্গদেশের সবখানেই দাঁত কেলিয়ে আছে। এমন ভাব করিস ব্যাটা যেন তুই কবি কালিদাস।’ এ সময়ের গল্প।’ এ সময়ের ভাষারীতি ও শব্দচয়ন। এভাবে না বললে হয়তো এ গল্পটা বলাও যেত না। এ সময়ের আচরণ, ধ্বনি, চলন ও তার প্রতিক্রিয়াকে ব্যাখ্যাও করা যেত না। একই গল্পে ভাষা আবার বদলে যায়। ‘আহা! কী মনোরম এই বনভূমি। সন্ধ্যের
বিষণ্নতা যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। দিনের আলো ফিকে হতে শুরু করলেই বৃক্ষেরা কেমন অসহায় বোধ করা শুরু করে… বৃক্ষদের কাছে রাত্তির মানেই বিষাদের স্বরলিপি। এ রকম আছে। বিস্তর আছে। কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমানের গল্প বনভূমির বৈচিত্র্য, ব্যাপ্তি, অনুসন্ধানও বহুস্বরে বিস্তৃত।
ইমতিয়ার শামীম
৩০১৯
গল্পের কথা থাক। পরে গল্পের বুনিয়াদি বিস্ফার দেখা যাবে। আগে তার নান্দীপাঠ শোনা যাক, ‘মনে রাখা আর জানতে পারার মানে তার সঙ্গে বসবাস করা, তাকে বিন্দু বিন্দু রক্তের মধ্যে জিইয়ে রাখা, তার অনুপস্থিতির ফুলগুলো ফুটে উঠতে দেখা। স্পর্শ করতে ভুলে গিয়ে, আতপ্ত নিঃশ্বাস ছড়িয়ে তুলে নিতে ভুলে গিয়ে মানুষ কেবল অপলক অতৃপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকে,―এতই অতৃপ্ত অবিশ্বাস্য সুন্দর সেই সব ফুল।’ এখানে আনন্দ ও উপলব্ধির ঢেউ তরঙ্গ মনের উপকূলে সজোরে আছড়ে পড়ার কথা। একটি গল্পে পাঠকের আকাক্সক্ষা কী বা কতটা! সুখপাঠ যদি হয়, তা বিষয় নির্বাচনে হতে পারে, নির্মাণের কৌশল ও কুশলে হতে পারে দর্শন-সংবাদ বা উপলব্ধিতে সাড়া-নাড়া দেওয়ার প্রশ্নেও হতে পারে। শুধুমাত্র আখ্যানের নিপাট বিছানায় গড়াগড়ি করেও হতে পারে। কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম এর গল্প পড়ার আগে পাঠক এ বিষয়টা মাথায় রেখে শুরু করতে পারেন। আরেক বাঁক বদলের গল্প। একটা নদী যেমন নগর-বাজার জঙ্গল হয়ে রয়ে যায়, লোকালয় হয়ে যায়, যেতে যেতে চিহ্ন রেখে যায়, স্মৃতিচিহ্ন বয়েও নিয়ে যায় তেমন করে কী কৌশলে একটি গল্পের জন্ম হলো! ইমতিয়ার শামীমের গল্প থেকে এ অনুভূতি আর উপলব্ধি পাঠক সঞ্চয় করতে পারেন। আমি জানি না, শহরটা মারা গেছে কিনা, শহরটাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা; তবে নদীটা বোধ হয় জানে আর জানে বলেই যে কোনো দিন ফুঁসে উঠবে’, লেখকের প্রতীতি। পাঠকও এই প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হতে পারেন।
মাহবুবা হোসেইন
কোলাজ: কঙ্কাল-কলম-ব্রিফকেস
জীবনের আরেক আক্রান্ত অধ্যায়। তার উন্মোচন। তার খোলস-খোলা। কোলাজ। তিনটি আপাত বিপরীত বা সঙ্গতিবিহীন বিষয়ের কোলাজ। আর কোলাজ তাই, যা বিপরীত বিষয়-আশয়কে সংঘবদ্ধ করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। খণ্ডিত কোনো অংশকে ব্যাখ্যার আওতায় আনা যায় না। কিন্তু এ গল্পের চলন ভিন্ন। বাড়তি কিছু আছে। তিনটি ভিন্ন গল্পের প্রতিটা সম্পূর্ণ গল্প। আবার ত্রয়ী মিলে আরেকটা সম্পূর্ণ গল্প, যেখানে বোধের পুকুর কানায় কানায় ভরে যায়। জীবনের আক্রান্ত বা সংক্রমিত অধ্যায় ‘কঙ্কাল’। মৃত্যু নিয়ে কারবার, সুনির্দিষ্ট করে বললে কঙ্কালের ব্যাপারি। আসলাম, মহব্বত আর কুব্বত। কঙ্কাল ওদের পণ্য। পণ্যের মান, দরদাম নিয়ে সংলাপ। সংলাপে তরতর করে গল্প এগিয়ে যায় শেষ হয় আয়রনি বা পরিহাস দিয়ে। একদিন আসলাম নিজেই লাশ হয়ে যায়। কুব্বত, বুদ্ধিতে খাটো, কথাশিল্পীর ভাষায় ‘গাধাবুদ্ধি’। গাধাবুুদ্ধি কুব্বত ব্যবসা বুঝে গেছে, তার কাছে আসলামের লাশ এখন পণ্য। কঙ্কাল হওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে সে ঠাহর করতে পারে না হাড়গোড় ভাঙা আসলামের কঙ্কালের মান আর দরদাম কত হতে পারে। তার আগে প্রসঙ্গক্রমে গাধার গল্প এসেছে। লোকায়ত গল্পের গন্ধমাখা গাধার গল্প অবিচ্ছেদ্য মনে হয়। লেখকের রসবোধ মিশ্রিত ভাষায়, তখন সঙ্গে থাকা বিরবলের মতো বুদ্ধিমান কুব্বতও হিসেব করে উঠতে পারে না, লরির নিচে চাপা পড়া হাড্ডি ভাঙা আসলাম কোন মানের কঙ্কাল। উদ্বেগ গল্পে না থাকলেও মাথার মধ্যে ঘনীভূত হয়, গাধা, গাধাবুদ্ধি, কঙ্কালের জমাটি ব্যবসা এই সময়ের সমাজের কঙ্কালসার চেহারা দেখিয়ে দিচ্ছেন না তো! পাঠক কলম ও ব্রিফকেসের দিকে অগ্রসর হতে পারেন। একটি সুবর্ণ ফ্রেমে বন্দি ত্রয়ী-গল্পের কোলাজ কেমন করে সমাজ ও সমাজ-আশ্রিত এই সময়ের জীবনপ্রবাহকে শুধু উন্মোচন নয়, উলঙ্গ করে।
শেষ হলো না
স্বল্পায়তনে বড় আ্যখ্যানকে ধরা ও অতিৃপ্তিবোধ রেখে নিরকার হয়ে যাওয়া―ছোটগল্পের এই প্রসাদগুণ প্রায় সব গল্পেই কমবেশি পাওয়া যায়। গবেষণাগারে কাটাছেঁড়া করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উপস্থাপনও লক্ষ্যনীয়। তবে তা স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়েছে। আরোপিত নয়। একই ভাষা যেহেতু একাধিক অঞ্চল বা ভূগোলে ছড়িয়ে গেছে, গল্পের বিষয়বস্তু, আখ্যান বা কাহিনির বিস্তার, নির্মাণ-শৈলী, পরিপ্রেক্ষিত, চরিত্র সংগঠনের মধ্যে ও বৈচিত্র্যে এসেছে। ‘শব্দঘর’, অক্টোবর সংখ্যার গুরুত্ব সম্ভবত এখানেই―বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আজ কোন রূপে দেয় দেখা! সৃজনশীল মানসে আলোড়িত ও ভাঙচুর হয়ে তা কেমন করে মুখ দেখায়!
আ্যডগার অ্যালেন পো বা এইচ জি ওয়েলস ছোটগল্পের ব্যাপ্তি, পরিসর বা আয়তনকে সীমারেখা টেনে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। গী দ্য মোপাসাঁর ‘দ্যা ডায়ামন্ড নেকলেস’ আজও ছোটগল্পের মানদন্ড হতে পারে। তারপরও ছোটগল্প ছটফট করছে, নিজেকে ভাঙছে আবার রূপ বদল করে গড়ে উঠছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে বাংলা ছোটগল্পের বীজ একই সঙ্গে উপ্ত ও পল্লবিত হয়েছে। ছোটগল্পের জনক, পূবসুরী পূরোধা- ব্যক্তিত্বদের সমীহ করেই বলা যায়, ছোটগল্পের মুক্তা একই ঝিনুকের খোলসের মধ্যে নেই। সময়ের পরিবর্তনে রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তিজীবনে ও ব্যক্তিমননে পরিবর্তন এসেছে। ভ’গোল বদলে গেছে। বদলে গেছে মানুষের মনের মানচিত্র। জীবনের চালচিত্র। এই বদল রেখাপাত করেছে সৃজনশীল মনে। ছোটগল্প তাই বাঁক-বদল করছে। বদল বা পরিবর্তনের মৌল উপদানগুলি খুঁজেপেতে দেখানোর অল্প-স্বল্প চেষ্টা এখানে। তাও ওই ছোটগল্পের মতোই ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। ‘অন্তরে অতৃপ্তি’ থাকতেই পারে, তবুও ‘সাঙ্গ’ করতে হয়।
লেখক : কবি, কথাশিল্পী,
অনুবাদক ও কলামিস্ট,
ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।