আবার পড়ি : মনজুরে মওলার কবিতা : মনজুরে মওলা

জলের ভেতর
আমি জানি, সব সিন্ধু পার হ’য়ে তুমি চ’লে যাবে।
ঢেউয়ের ওপর দিয়ে চ’লে যাবে ঢেউয়ের মতন;
ঢেউয়ের আড়াল হ’য়ে চলে যাবে আলোর মতন;
ঢেউয়ের গভীর জুড়ে দুলে উঠবে সমুদ্রের মতো।
সমস্ত আকাশজুড়ে হাতুড়ির শব্দ জেগে ওঠে
যেন ভেঙে যাচ্ছে নীল, যেন হীরা, সব রত্নরাজি
মুহূর্তে হারালো দ্যুতি, টুকরো হ’য়ে গেল।
জানি, কিন্তু মানি না কখনও।
তোমার চুলের মধ্যে আলো হ’য়ে বেঁচে থাকতে চাই;
তোমার হাতের মধ্যে সৌভাগ্য-তারকা হ’তে চাই;
তোমার দৃষ্টির মধ্যে মেঘের অতীত মেঘ
বৃষ্টির অতীত বৃষ্টি
স্বপ্নের অতীত স্বপ্ন
ফুটে থাকতে চাই।
আমি জানি, তুমি চ’লে যাবে।
সব সিন্ধু প’ড়ে থাকবে, যেন এই বুকের ভেতর
নারকেল গাছ আছে, পাতায় শিশুরা আছে,
একাত্তুর গুলি করছে পাতার ভেতর।
তুমি কি তোমার রঙ, চেয়ে-দেখা, ইজেল ও তুলি
সঙ্গে নিয়ে যাবে ?
তোমার বুকের মধ্যে বারুদের মতো আমি জ্বলে উঠতে চাই;
বিস্ফোরণে ভেঙে যাক ঘরবাড়ি, বাঁধ টুকরো হোক;
প্রবল বন্যায় নদী কেড়ে নিক গ্রাম।
আমি জানি, ভুল ঘরে চ’লে যাবে তুমি।
সমস্ত আকাশজুড়ে জেগে সৌভাগ্যের চিহ্ন হবো আমি
ঘরের ভেতর আমি একমাত্র ঘর,
জলের ভেতর একা পিপাসার অফুরন্ত জল।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
বিজ্ঞাপন
রাসেল স্কোয়ারে দেখি একদিন, দেয়ালে
লেখা : এলিয়ট কাজ করতেন এখানে।
কবিকেও কাজ করতে হয়! (কে না জানে,
মুখ ধুতে হয়, ফেনা ঘষতে হয় গালে।)
তাকে একা খুঁজে ফিরেছেনভিভিয়েন।
‘ফিরে এসো’, দিয়েছেন বিজ্ঞাপনএই
দরোজার নিচে চাবি রাখা তো আছেই!
থিয়েটার থেকে কবি পালিয়ে গেলেন।
বাড়িগুলো ভেঙে যায়, অন্য বাড়ি ওঠে।
দেবতা তো ওই, ওই বাদামি যে নদী
মানুষ কখনও তাকে না-ই ভুলতো যদি!
আটকানো বাগানে, দ্যাখো, গোলাপই তো ফোটে।
কবির তো পালাবার কোনো পথ নেই।
দেখা দেন ভিভিয়েন পালাতে গেলেই।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

প্রার্থনার রাত
তোমাদের সবার আঙুলে একটা একটা ফুল ফুটেছে।
বিষণ্ন গাঢ়, অথবা উজ্জ্বল, অথবা নিঃসঙ্গ
একটা একটা গন্ধ ঐ তার সিংহাসনের দিকে
দুলতে দুলতে শূন্যে।
তোমাদের রক্ত বদলে যাচ্ছে।
তোমাদের সবার আঙুলে একটা একটা ফুল ফুটেছে।
অথচ একজনের সমস্ত শরীর যেন কেমন
মর্মরের শাদা হয়ে গেল। গন্ধ বেরোল
যুগল স্মৃতির সমস্ত গা থেকে।
চোখের তারা দুটি রাজ্যলোভী মানুষের মতো
পাগল হয়ে মাতাল হয়ে
অন্ধকারের দিকে ছুটে চললো।
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়লো নিষ্পাপ আকাশ থেকে।
সে তার পাত্র বাড়িয়ে দিল না।
বৃষ্টির দয়াকে ধরে রাখতে চাইল না।
সে জানে রক্তের দয়া বৃষ্টির দয়া নয়।
সে জানে তার বুক ঈপ্সিত পদ্মের সরোবর নয়।
আঙুলগুলো বাঁকা হয়ে, শক্ত হয়ে, ঘাড় কাত করে আছে
জেদী, আহ্লাদী রাজপুত্রের শহরগ্রাম পুড়িয়ে দেবার মতো।
তোমাদের সবার আঙুলে একটা ফুল ফুটেছে,
শূন্য হাত সে তাকিয়ে রইলো।
সচিত্রকরণ : নাজিব তারেক