পুরস্কার


এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০
পেলেন হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ
সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার পেয়েছেন প্রবীণ কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। তরুণ সাহিত্যশ্রেণিতে এ পুরস্কার পেয়েছেন গল্পকার নাহিদা নাহিদ। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। ক্রেস্ট, সনদপত্রের পাশাপাশি হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা যথাক্রমে পাঁচ লাখ ও এক লাখ টাকা পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন বিচারকমণ্ডলীর প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিচারকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন সদ্যপ্রয়াত কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং কথাশিল্পী হরিশংকর জলদাস। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হুমায়ূনকে আমরা শুধুই একভাবে দেখার চেষ্টা করি। তাকে নিয়ে সত্যিকার অর্থে বিচার বিশ্লেষণ এখনও হয়নি। কেএম খালিদ বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সবচেয়ে বড় দিক হল―তাঁর বই শেষ না করে ওঠা যায় না।

যুক্তরাজ্যে ‘আর্ট ইন দ্য কমিউনিটি পুরস্কার’ পেলেন কবি শামীম আজাদ
যুক্তরাজ্যে ‘আর্ট ইন দ্য কমিউনিটি পুরস্কার’ পেলেন কবি শামীম আজাদ। শিল্প-সাহিত্যের কল্যাণকর কাজে অনুদান দেওয়ার বড় প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ন্যাশনাল লটারি’ তাকে এ সম্মাননা দিয়েছে। পুরো যুক্তরাজ্য থেকে তালিকাভুক্ত ছয় হাজার জনের মধ্যে থেকে ১৩ জনকে বিশেষ এ সম্মাননার জন্য চূড়ান্ত করা হয়। তাদের মধ্যে কবি শামীম আজাদ অন্যতম। দেশ-বিদেশে নানা অনলাইন অনুষ্ঠানে মননশীলতার চর্চা ও নবতর পদ্ধতিতে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় নিরলস কাজ করার জন্য তাঁকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। সম্মাননার অংশ হিসেবে নির্বাচিত ১৩ জনের স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র মাসব্যাপী প্রদর্শন করবে ব্রিটেনের বৃহৎ আটটি আর্ট গ্যালারি ও প্রতিষ্ঠান। আটটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও এ প্রদর্শনী চলবে। গ্যালারি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘দ্য ন্যাশনাল পোর্ট্টেট গ্যালারি’, লন্ডন, ‘দ্য ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ওয়েলস’, কার্ডিফ, ‘দ্য ম্যাক, বেলফাস্ট, আইকেওএন গ্যালারি বার্মিংহাম’, সামারহল, ‘এডিনবরা টাই পব, রেক্সহাম, রোথিন ক্রাফট সেন্টার রোথিন ওয়েলস, দ্য ফটোগ্রাফারস গ্যালারি’, লন্ডন এবং ‘ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট’। এই বিশিষ্টজনদের পোট্রেটগুলো তুলেছেন ব্রিটেনের বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফার ক্রিস ফ্লয়েড। কবি শামীম আজাদ ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন।

তালাশ উপন্যাসের জন্য ‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন শাহীন আখতার
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার তালাশ উপন্যাসের জন্য ‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে ২৯ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়া লিটারেচার ফেস্টিভাল’র শেষ দিন এ পুরস্কার ঘোষিত হয়। অতিমারির কারণে এ সাহিত্য উৎসব এ বছর অফলাইন ও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।এতে এশিয়ার ২৯ জন লেখক অংশ নেন, যার মধ্যে ম্যান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক হান কাংসহ কোরিয়ার ১৯ জন লেখক ছিলেন। এ নিয়ে তৃতীয়বার অনুষ্ঠিত এশিয়া লিটারেচার ফেস্টিভালের অন্যতম আয়োজন হচ্ছে ‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান। পুরস্কারটি প্রদান করা হয় এশিয়ান লেখকদের, যারা দেশীয় ভাষায় লিখে থাকেন। ২০১৭ সাল থেকে চালু হওয়া এ পুরস্কারটি প্রথম পেয়েছেন মঙ্গোলিয়ার কবি মি. ইউরিয়ানখাই ডামডিনসুরেন, দ্বিতীয়বারের অর্জনকারী ভিয়েতনামের লেখক মি. বাউ নিন। এবারে পেয়েছেন বাংলাদেশের লেখিকা শাহীন আখতার।
এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড-এর অর্থমূল্য ১৭ হাজার ৫শত ইউএস ডলার। শাহীন আখতার বাংলাসাহিত্যে অবদানস্বরূপ ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর ময়ূর সিংহাসন উপন্যাসের জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার ও আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার পেয়েছেন। অসুখী দিন উপন্যাসের জন্য ২০১৯-এ পেয়েছেন জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। পেয়েছেন কলকাতার আনন্দবাজর গ্রুপের টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দ থেকে ‘সাহিত্যে সেরা বাঙালি’ সম্মাননা। তাঁর তালাশ উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে ২০০৪ সালে। একই বছরে প্রথম আলো বর্ষসেরা বই হিসেবে তালাশ পুরস্কৃত হয়। ২০১১ সালে দ্য সার্চ নামে তালাশ-এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে দিল্লিস্থ প্রকাশনা হাউজ জুবান। তালাশ কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন প্রফেসর সিং হি জন, বইটি কোরিয়া থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। শাহীন আখতার গল্প উপন্যাস লেখার পাশাপাশি কয়েকটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালে, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার হারং গ্রামে।

বুকার পুরস্কার ২০২০ পাচ্ছেন মারিকা রিনভেল্ড
২০২০ সালের বুকার পুরস্কার জিতেছেন ২৯ বছর বয়সী ডাচ্ নারী মারিকা লুকাস রিনভেল্ড। মাতৃভাষায় লেখা উপন্যাস দ্য ডিসকমফর্ট অব ইভিনিং-এর জন্য তিনি সাহিত্যের এই পুরস্কার জিতলেন। প্রথম ডাচ্ ঔপন্যাসিক হিসেবে বুকার পুরস্কার পাচ্ছেন রিনভেল্ড। তাঁর বইটি ইংরেজিতে ভাষান্তর করেছেন মাইকেল হাচিসন নামের এক অনুবাদক। এই পুরস্কারের ভাগীদার তিনিও। দ্য ডিসকমফর্ট অব ইভিনিং উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে ১০ বছরের বালিকা জশ। ভাই ম্যাথিস আইস স্কেটিংয়ে নিয়ে যায়নি বলে জশ তার ওপর রাগ করে। রীতিমতো মৃত্যুর অভিশাপ দেয়। তার কথা ফলেও যায়। সেই দিনই মৃত্যু হয় ম্যাথিসের। ঘটনার অভিঘাতে পঙ্গু হয়ে যায় তাদের মা-বাবা। গোটা উপন্যাসটি আবর্তিত হয় ম্যাথিসের মৃত্যু-পরবর্তী বিষাদ ও মানসিক টানাপড়েন ঘিরে। ঔপন্যাসিক রিনভেল্ড একটি ডেইরি ফার্মে চাকরি করেন। নিজেও অল্প বয়সে ভাইকে হারিয়েছেন। সেই বিষাদের ছায়ায়ই এই উপন্যাস নির্মিত। বিচারকদের প্রধান টেড হডকিনসন বলেন, ‘ব্যতিক্রমী বিষয়, অবিশ্বাস্য প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই উপন্যাস আমাদের এই রিক্ত বাস্তব থেকে ক্রমেই অনতিক্রম্য সময়রেখায় নিয়ে যায়।’
গ্রন্থনা : রেজাউল হোসেন